#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-২৭+২৮
সমুদ্র সৈকতে সাদা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রমণী। শীতল বাতাসে শাড়ীর আঁচল বাধাহীন হয়ে উড়ছে। তাজ মুচকি হেসে পেছনে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলো সেই রমণীর দিকে।
তুমি সবসময় সাদা কেনো পড়ো মুসকান ?
হকচকিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে তাজকে দেখে আবার সামনে তাকলো তিতির, সাদা আমার বাবার প্রিয় রং ছিলো। সাদা রংটা আমার সাথে থাকলে মনে হয় বাবাও আমার সাথেই আছে।
তাজ এবার সামনে তাকালো, বাবাকে খুব ভালোবাসতে বুঝি ?
পানি এলো তিতিরের চোখে, হুম।
তাজ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, চলো সামনে হাঁটি।
তাজের কথায় তিতির সম্মতি জানিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
হাঁটতে হাঁটতে তিতির বললো, আপনার তো শুটিং আছে স্যার।
তাজ বিরক্ত বোধ করলো, এতো কাজ কাজ করে আর ভালো লাগে না। এই মুভির হিরোইন মিস রোমানা খুব গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। এমন মেয়ের সাথে কাজ করতে হচ্ছে, ভেবেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। কন্ট্রাক্ট করায় কিছু বলতেও পারছি না, লাস্ট মুহূর্তে এসে হিরোইন কেনো চেঞ্জ করলো বুঝতে পারছি না।
তাজের কথায় তিতির আড়ালে মুচকি হাসলো, রোমানা ম্যাম তো খুব ভালো অভিনয় করে।
তাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিতিরের দিকে, তুমি রোমানাকে ম্যাম কেনো বলছো ?
উনি আপনার কো-অ্যাক্টর। আপনি যেহেতু আমার স্যার তাহলে উনি তো ম্যামই হবেন।
আমি তোমার স্যার হলেও আমার আশেপাশের কেউ তোমার স্যার বা ম্যাম নয়। কথাটা আজ ভালো করে শুনে নাও আর কখনো যেনো এদের স্যার বা ম্যাম বলতে না শুনি।
তিতির মাথা নাড়িয়ে বললো, ওকে স্যার।
তাজ মুচকি হেসে বললো, গুড।
আবার কিছুটা সময় নিরবতায় পাশাপাশি হাঁটতে লাগলে হঠাৎ তাজ বললো, বুঝলে মুসকান তোমার হাসবেন্ড অনেক লাকি হবে।
তাজের কথায় লজ্জায় লাল হলো তিতিরের মুখ, কেনো স্যার ?
তাজ একটু শব্দ করে হেসে বললো, এই যে তুমি কথা কম বলো তাতে তোমাদের ঝগড়া হবে কম। মেয়েদের ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদার স্বভাব, সেটাও তোমার নেই। তোমার পিছনে তোমার হাজবেন্ডকে মেকআপ খরচ করতে হবে না, গাদা গাদা শপিং করতে হবে না। উফফ আমার এসব ভাবতেই তোমার ফিউচার হাসবেন্ডের উপর হিংসা হচ্ছে।
তাজের কথা শুনে তিতির লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
তাজ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো, একি মুসকান তুমি তো দেখি লজ্জা লাল নীল হয়ে যাচ্ছো।
তাজ কথা শেষ করে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। তিতির মাথা নিচু করে লজ্জায় মুচকি হাসছে, তাজ দেখতে পেলো না সেই হাসি। দেখতে পেলে হয়তো বলতো তোমার মুসকান নাম সার্থক। হঠাৎ পায়ের নিচে কিছু তীক্ষ্ণ অনুভব করলে তিতির আউচ বলে উঠে।
তাজ ব্যস্ত গলায় বললো, কী হলো মুসকান ?
স্যার, পায়ে কিছু ফুটলো মনে হয়।
তাজ হাঁটু গেড়ে বসলো তিতিরের সামনে, কোথায় দেখি ?
তিতির ছিটকে একটু পিছিয়ে গেলো, কী করছেন স্যার ?
তাজ গম্ভীর গলায় বললো, দেখাও বলছি।
তাজ সবসময় হাসিখুশি থাকে তাই তার গম্ভীর গলায় ভয় পায় তিতির। কথা না বাড়িয়ে শাড়ি একটু উঁচু করে পা দেখালো।
তাজ কিছু না ভেবে তিতিরের পা নিজের হাঁটুর উপর নিলো। তিতির কেঁপে উঠলো তাজের স্পর্শে, নিজের ব্যালেন্স রাখতে তাজের কাঁধে হাত রাখলো।
তাজ কণ্ঠের গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো, তুমি খালি পায়ে সমুদ্র সৈকত কেনো এসেছো তিতির ? জানো না সৈকতে অনেক মরা শামুক থাকে। এখন গেলো তো পা কেটে।
তাজ যখন ভালো মুডে থাকে তিতিরকে তখন মুসকান বলে ডাকে আর যখন রেগে থাকে তখন তিতির বলে। তাই তিতির বুঝতে পারলো তাজ রেগে গেছে।
আমতা আমতা করে বললো, আসলে স্যার সমুদ্র সৈকতে বালির উপর খালি পায়ে হাঁটতে ইচ্ছে করছিলো।
তাজ নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে তিতিরের পায়ে বেঁধে দিলো, নাও এবার হয়েছে ইচ্ছে পূরণ। এখন চলো ডক্টরের কাছে, শামুক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আছে কিনা কে জানে।
তিতির কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ব্যাথা করছে খুব কিন্তু তাজের ভয়ে মুখে বলতেও পারছে না। নিজের বোকামির উপর নিজের রাগ হলো। তিতির যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত তখনই তাজ তিতিরকে কোলে তুলে নিলো।
চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তিতিরের, কী করছেন স্যার ?
অনেকটা কেটেছে হাঁটতে পারবে না আর যদি শামুক ভেঙে ভেতরে ঢুকে থাকে তাহলে হাঁটলে আরো ভেতরে চলে যাবে।
তাজ হয়তো দায়িত্ববোধ থেকে এসব করছে তবু তিতির লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার ৷ শেষে কিনা স্যারের কোলে উঠতে হলো তাকে।
তাজ বললো, এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি। একজন অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করছি মানুষ কিছু মনে করবে না।
স্যার এভাবে আমাকে আর আপনাকে একসাথে কেউ দেখলে মুখোরোচক নিউজ বানাবে।
কেনো আমাকে চেনা যাচ্ছে বুঝি ?
এতক্ষণে তিতিরের খেয়াল হল তাজ একটা হুডি পড়েছে আর মুখে মাস্ক লাগানো। সে চিনলেও অন্যকারো চেনার উপায় নেই তাজকে।
তাজ ভ্রু নাচিয়ে বললো, আমি তোমার মতো মাথামোটা নই মিস রোবট।
তাজ তিতিরকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে ডক্টর দেখে বললো শামুক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আছে। তাজ পাশে দাঁড়িয়ে রইলো আর ডক্টর শামুক বের করার জন্য তুলো দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করছে। ভাঙা অংশ বের করতে গেলে তিতির চোখমুখ কুঁচকে তাজের হাত খামচে ধরে। তিতিরের হাতে লম্বা লম্বা নখ রাখা না থাকলেও যেটুকু আছে তাজের হাতে ডেবে গেলো। তিতিরকে কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করলো তাজ। ড্রেসিং শেষে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পর তাজের হাতের দিকে খেয়াল গেলো তিতিরের।
ভয়ে আঁতকে উঠল, আম সরি স্যার। আমি বুঝতে পারিনি।
তাজ মুচকি হেসে বললো, ইট’স ওকে। তোমার এখনও ব্যাথা করছে ?
তিতির মাথা নাড়িয়ে বুঝালো করছে না ব্যাথা। আসলে তাজের হাত দেখে তিতির নিজের ব্যাথার কথা ভুলে গেছে। তাজ ডক্টরের থেকে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিলো নিজের হাতে। বাকি সময় তিতির আর স্বাভাবিক হতে পারলো না। বারবার চোখ চলে যেত তাজের হাতের দিকে আর ভয়ে জড়সড় হয়ে যেত।
৩১.
মাথায় কোমল হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো তাজের। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো তার মাথার কাছে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে।
তাজকে তাকাতে দেখে বললো, তুমি এখানে ঘুমিয়ে আছো কেনো বাবা ?
তাজ খেয়াল করে দেখলো সে তিতিরের কবরের উপর ঘুমিয়ে আছে। কাঁদতে কাঁদতে তখন এলোমেলো পায়ে এখানে এসে শুয়ে পড়েছিলো। কখন ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতে পারেনি। ঘুমের মাঝে চোখে ভাসছিল তিতিরের সাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত। তাজ উঠে এলো সেখান থেকে। ধ্রুবকে কোলে তুলে নিলো।
তুমি এখানে এসেছো কেনো বাবা ? সামনে পুকুর যদি কোনোভাবে পড়ে যেতে।
আমি তো সুইমিং জানি বাবা। আমি আর পাপা কতবার সুইমিং কম্পিটিশন করেছি তুমি জানো ? পাপা সবসময় হেরে যায়।
কথাটা শেষ করে ধ্রুব খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। তাজ মুগ্ধ হয়ে দেখছে সেই হাসি। তিতিরের হাসিমুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাজের, হয়তো তিতিরের হাসিও এমন নির্মল ছিলো। তাজ ধ্রুবকে বুকে জড়িয়ে মাথায় চুমু খেলো। তাকালো হাতের ডায়েরির দিকে। এখনো অনেকটা পড়া বাকি থেকে গেছে। পুরোটা পড়তে হবে তাকে।
তাজ পুকুরের এপাশে সেই সিঁড়ির কাছে এসে ধ্রুবকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো, বাবা তুমি মাম্মামের সাথে খেলো গিয়ে।
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো, আমি তো মাম্মামের সাথে লুকোচুরি খেলছি। আমি এখানে লুকিয়ে আছি মাম্মামকে বলো না কিন্তু।
ধ্রুবর হাসি দেখে তাজের ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠলো। তাজের হাসি কান্না সব এখন এই নিষ্পাপ মুখেই নিবদ্ধ।
এই তো পেয়ে গেছি ধ্রুবকে। এবার আমি লুকাবো তুমি খুঁজবে।
তাজ আর ধ্রুব সামনে তাকিয়ে দেখলো পাখি দাঁড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে আর এসব বলছে। ধ্রুব ধরা পরে গিয়ে গাল ফুলালো। তবে কিছু না বলে পাখির সাথে চলে গেলো। তাজ সেদিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে ডায়েরি খুললো আবার।
আমার জীবনের সুখের সময়কাল বরাবরই খুব কম হয়। বেশ তো কাটছিলো আপনার সাথে আমার দিনগুলো। তখন চাকরির প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেছে। আপনার কেবিনে সোফায় বসে কাজ করছিলাম আমি। তখনই কেউ নক করলো দরজায়৷ আপনার মনে আছে সেইদিনের কথা ?
আপনি বললেন, কাম ইন।
ঝড়ের বেগে কেউ প্রবেশ করে জাপ্টে ধরলো আপনাকে। আমার হাত থেকে ফাইল পরে গেলো। সেটা কে ছিলো মনে আছে ? মৌ আপু ছিলো সেটা। গত দেড় বছর ধরে আমার একটু একটু করে সাজানো ভালোবাসা একটা দমকা হাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে গেলো। গত দেড় বছরে আপনি মৌ আপুর নামটা পর্যন্ত বলেননি আমাকে। আপনার বুকে মৌ আপু আর আমি সামনে বসে দেখছি আপনাদের। উফফ সে কী নিদারুণ কষ্ট। বুকের ভেতর যেনো কেউ কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি জানো তাজ ? আমার ফোনটাও ঠিকমতো রিসিভ করো না তুমি।
আপনি নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন মৌ আপুকে, মৌ ব্যস্ত থাকি আমি। তুই দেশে ফিরলি কবে ?
এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি।
এতক্ষণে মৌ আপুর নজর পরে আমার দিকে, টলমলে চোখে আমি তখন তাকিয়ে আছি আপনাদের দিকে।
এটাই তো তিতির, তাই না তাজ ? এই মেয়েটার কথাই তো বলতে ফোনে। ভারি মিষ্টি তো দেখতে মেয়েটা।
আপনি আমার কথা মৌ আপুকে বলতেন সেটা শুনে অবাক হওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি। আমি তো যন্ত্রণায় ছটফট করতে ব্যস্ত।
আপু এগিয়ে এলেন আমার দিকে, হাই আমি মৌমিতা রহমান তাজের ফিয়ন্সে।
আপনি কপাল কুঁচকে তাকালেন আপুর দিকে, মৌ আমি কিন্তু এখনো মত দেইনি।
আপু মুচকি হেসে বললো, আজ বা কাল তোমার এই মৌকেই বিয়ে করতে হবে।
এটাই শোনার বাকি ছিলো। কতটা কষ্টে নিজের চোখের পানি আঁটকে রেখেছিলাম সেটা হয়তো আমি জানি আর জানে আমার উপরওয়ালা। আমি আপুর সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে বের হয়ে আসি আপনার কেবিন থেকে। ওয়াশরুমে গিয়ে কষ্টগুলো মুক্ত করে দেই চোখের পানিতে। তারপরের দিনগুলো বদলে গেলো। আমি আবার হাসতে ভুলে গেলাম। নিজেকে বুঝাতে লাগলাম আপনার পাশে মৌ আপুর মতো কাউকেই মানায়, আমার মতো কোনো এতিমকে নয়। তবু খুব কষ্ট হতো আপনার পাশে আপুকে দেখে। যে আমি আপনার পাশে হিরোইন সহ্য করতে পারতাম না, যেখানে জানতাম সব সাজানো সেখানে আপুকে মানতে হতো সবটা সত্যি জেনেও।
আপনাদের বিয়ের পাঁচদিন আগে জানতে পারি বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে। প্রথমে একটু কষ্ট হয়েছিলো, ততদিনে নিজেকে অনেকটা সামলে নিলেও প্রথম ভালোবাসা তো তবু কষ্ট হয়েছিলো। নিজেকে সামলে নিলাম, ততদিনে এটুকু বুঝেছি মৌ আপুও আপনাকে ভালোবাসে। মানুষ হিসাবেও অনেক ভালো, আপনার জন্য পারফেক্ট। আপনি তো আমার না ছুঁয়া স্বপ্ন তাই হাসিমুখে মেনে নিলাম সবটা। কিন্তু কী নিষ্ঠুর আপনি, আমাকে সাথে নিয়ে গেলেন বিয়ের শপিং করতে। আমাকে কষ্ট দিয়ে বুঝি আপনার আনন্দ হচ্ছিল। আমিও কষ্ট গিলে স্বাভাবিক থাকার নাটক করে যাচ্ছিলাম। আপনি যে মৌ আপুকেও ভালোবাসতেন না, ততদিনে সেটাও বুঝে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি আপনি যতটা যত্নশীল ছিলেন আপুর প্রতি তো তাও ছিলেন না। আপনি সত্যি ভালোবাসতে জানেন না কিন্তু আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারেন। আপনি কী সুন্দর একটা হলুদের শাড়ি কিনে দিলেন আমাকে, আপনার হলুদে পড়ে যাওয়ার জন্য। আচ্ছা হৃদয় পোড়ার গন্ধ আপনি একটুও পাননি।
ডায়েরি বন্ধ করলো তাজ। এসব পড়তে তার কষ্ট হচ্ছে, প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। অনুভব করতে পারছে সেই প্রতিটা মুহূর্ত।
সেদিন শপিংয়ে গিয়ে তাজেরও কষ্ট হচ্ছিল অজানা কারণে। মৌকে রেখে বারবার মন চলে যাচ্ছিল তিতিরের দিকে। মনে হচ্ছিল সে মৌকে নয় তিতিরকে চায় নিজের জীবনে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে শাসিয়ে বললো তিতিরের তার সাথে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তিতিরকে নিজের জীবনে জড়ালে এই সমাজ কী বলবে ? সবাই বলবে সুপারস্টার তাজওয়ার খান তাজ নিজের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কে বিয়ে করেছে। তার ক্যারিয়ারের জন্য সেটা ভালো কিছু হত না। হ্যাঁ তাজ নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে স্বার্থপর হয়েছিলো সেদিন। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে নিজের মনকে পাথর তৈরি করেছিলো। সে চেয়েছিল তিতির তার বিয়েতে না আসুক। আসলে হয়তো শেষমেশ নিজেকে সামলে রাখতে পারবে না। আবার শাড়িটা দেখে মনে হয়েছিলো কেমন লাগবে তিতিরকে সাদার পরিবর্তে এই হলুদ সবুজ কম্বিনেশনের শাড়িটাতে। শাড়িটাতে তিতিরকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। নিজের অনুভূতিতে এলোমেলো হয়েছিল তাজ সেদিন। যতবার তিতিরের কথা মনে পড়েছে নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে মনটাকে দমিয়ে রেখেছে।
তাজ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবার ডায়েরি খোলে পড়তে লাগলো।
প্রায়দিন আপনি আমাকে আমার বাসার সামনে নামিয়ে দিতেন। কিন্তু শপিং শেষে আপনি আমাকে একটা ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে মৌ আপুর সাথে চলে গেলেন। আপনি একবার পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পেলেন ভেজা চোখে তাকানো তিতিরকে। তখন মনে হয়েছিলো এর থেকে বোধহয় মৃত্যু যন্ত্রণা কম হবে। পরক্ষণে চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার অবুঝ বোনুটার মুখ। আমাকে যে বাঁচতে হবে, মরে গিয়েও বাঁচতে হবে। আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটা জীবন। নিজেকে সামলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভাবলাম আপনার বিয়ের জন্য অফিশিয়াল কাজের চাপ কম। বোনুকে কয়েকদিন অনেক সময় দিতে পারবো। এসব ভেবে নিজেকে শান্ত করেছিলাম।
মানুষ যা ভাবে সবসময় সেটা হয় না। নিয়তি হয়তো অন্যরকম ছিলো। বাসায় গিয়ে দেখলাম আমার প্রাণভোমরা নেই। কাউকে কল দেওয়ার আগেই আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। রায়হান চৌধুরী নিয়ে গেছে আমার বোনুকে। তার কথামতো কাজ না করলে প্রায় ষোল বছর যাকে বুকে আগলে বড় করেছি তার ছোট ছোট টুকরো করে আমাকে উপহার দিবে। বিশ্বাস করুন সেদিন যদি আমার বোনুর জীবনের ঝুঁকি না থেকে আমার জীবনটা কেউ চাইতো তবু আপনার ক্ষতি করার কথা ভাবতাম না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপনার ক্ষতি আটকাতাম। কিন্তু এক ভালোবাসার জন্য আরেক ভালোবাসার কোরবানি দিতে পারিনি আমি। তাই রায়হান চৌধুরীর হাতের পুতুল হয়ে চলে গেলাম আপনার চরম ক্ষতি করতে। আপনি সবসময় আমাকে রোবট বলতেন। সেদিন সত্যি রোবটে পরিণত হয়েছিলাম আমি। কিন্তু সে রাতে আপনার হিংস্র আচরণ আমি মেনে নিতে পারিনি মন থেকে। দু’বছরের আগলে রাখা ভালোবাসার মানুষের থেকে কোনো মেয়ে এমন হিংস্রতা মেনে নিতে পারবে না। আপনি আমায় ধ*র্ষ*ণ করেছিলেন তাজ, ধ*র্ষ*ণ। তার জন্য আপনাকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না। অন্যভাবেও শাস্তি দিতে পারতেন, মারধর করতে পারতেন। তবে আপনার অন্যায় মেনে নিতে না পারলেও আপনাকে ঘৃণা করতে পারিনি। বরং আপনি আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করলেন। আপনার মনে যেদিন থেকে আমার প্রতি ঘৃণা জমা হতে শুরু করেছে, সেই ঘৃণা আমার আসক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ কারণ ঘৃণা আর ভালোবাসা দু’টো জিনিসই মানুষ মনের গভীরে জায়গা দেয়। ভালোবাসা যতটা গভীর হয় ঘৃণা তার থেকেও বেশি গভীর হয়। আপনার মনে আমার জায়গা হয়েছে, হোক না ঘৃণা হিসাবে তবু আমি খুশি। আপনার ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাই আপনার ঘৃণাই কবুল। আপনার ঘৃণা বারবার দেখতে চাওয়া আমার আসক্তিতে পরিণত হয়। আপনার ঘৃণা এই বিষাক্তফুলের আসক্তি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই আসক্তি থেকে মুক্তি পাইনি আমি।
আপনার ভাষ্যমতে আমি একটা বিষাক্তফুল আপনার জীবনে। আপনার জীবন থেকে শুধু কেড়ে নিয়েছি, কিছু দিতে পারিনি। আজ আবারও একটা জিনিস কেড়ে নিলাম আপনার থেকে। আপনার শান্তির ঘুম, আপনি আমাকে ধ*র্ষ*ণ করেছিলেন। এই একটা বাক্য আজ থেকে আপনাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না। তাহিয়ান খান ধ্রুব আপনার ছেলে, আমাদের ছেলে। ওর দিকে তাকালে আপনি শান্তির শ্বাস নিতে পারবেন না। কারণ আপনার সেই হিংস্রতার ফল ধ্রুব। আপনি যতবার ওর দিকে তাকাবেন আপনার মনে পড়বে আমার প্রতি করা আপনার হিংস্রতা। আপনার হয়তো আক্রোশ হয়েছে আমি কেনো আপনাকে ধ্রুবর কথা জানায়নি। এটা কী সত্যি জানানোর মতো বিষয় ছিলো ? ধ্রুব যদি আপনার আমার ভালোবাসার ফল হত তাহলে আপনি জানার অধিকার রাখতেন। ধ্রুবর অস্তিত্ব সম্পর্কে যখন আমি জানতে পারি তখন আপনার মনে আমার জন্য আকাশ সমান ঘৃণা। কে জানে ধ্রুবকে মেনে নিতেন কিনা ? হয়তো তাকেও ঘৃণা করতেন। সেটা একজন মা হয়ে কীভাবে হতে দিতাম আমি ? পৃথিবীর সবাই আমাকে ঘৃণা করুক আমি হাসিমুখে মেনে নিবো কিন্তু আমার অনাগত সন্তানকে তারই পিতা ঘৃণা করবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আপনার জীবনের বিষাক্তফুল ছিলাম আমি এরপর হয়তো আমার সন্তান হতো। সারাজীবন আপনার মনে হতো এই সন্তান আপনার সুখের জীবনের বাঁধা। সেটা মা হয়ে কীভাবে মেনে নিতাম আমি ? কথাগুলো লিখতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। ভাগ্য ভালো মুখে বলতে হয়নি। আমি চাইনি আমি কিংবা আমার সন্তান আপনার সুখের বাধা হোক। কিন্তু আজ যখন ধ্রুবকে ফেরত চাইছেন। নিশ্চয়ই আপনার স্ত্রী ধ্রুবকে মেনে নিতে রাজি হয়েছে। তাই আপনাকে ফেরাবো না আমি। ধ্রুবর আঠারো বছর পূরণ হলে সে সব জানবে। তখন একমাত্র ও চাইলেই আপনি ওকে ফিরে পাবেন তার আগে নয়। এই অধিকারও আপনার থেকে কেড়ে নিলাম আমি। আমি সত্যি আপনার জীবনের বিষাক্তফুল আর এই বিষাক্তফুলের আসক্তি আপনি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনাতে আসক্ত ছিলাম আমি। ভালোবাসি তাজ, আমার ভালোবাসাও বিষাক্ত তাই শুধু কষ্টই পাবেন আমার থেকে। বিষে শান্তি খোঁজা যে বোকামি, অনেক বড় বোকামি, বিষ কেবল কষ্ট দিতে জানে।
ডায়েরির শেষ পাতায়ও তিতির তাজের জীবনের বিষাক্তফুল প্রমাণিত হল। তাজের চোখের কোণ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। তাজ তিতিরের ডায়েরি শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখলো।
তোমার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিলাম মুসকান। তবে সে রাতে প্রথমদিকে রাগে হিংস্রতায় তোমাকে কাছে টেনে নিলেও পরে ভালোবেসেই আপন করেছিলাম। ঘোরের মাঝে রাগ, প্রতিশোধ সব ভুলে গিয়েছিলাম। সেটা হয়তো তুমি উপলব্ধি করতে পারোনি যেমন আমি নিজের কাছে স্বীকার করতে পারিনি সেদিন। তোমাকে আমি ভালোবাসি সেটা স্বীকার করতে চাইনি তাই এটাও মানতে পারিনি আমি তোমাকে ভালোবেসে আপন করেছিলাম। গত ছয়টা বছর আমি অনুতাপের আগুনে পুড়েছি। এই কষ্ট নিয়ে আরো তেরো বছর ধরে অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি হয়তো ভেবেছো মৌকে বিয়ে করে সুখের সংসার করছি আমি। কিন্তু মুসকান তুমি ভুল, তুমি ভুল।
৩২.
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে রায়হান। হাতে মৌয়ের হ্যাপি ফ্যামিলির ছবি। শান মৌয়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরে আছে আর মৌ নিজের কোলের শায়িনীকে।
রায়হান মুখের ধোঁয়া ছবিটার উপরে ছাড়লো, সবার জীবন এলোমেলো করে দিয়ে তুই সুখের সংসার করছিস এটা কীভাবে মেনে নেই বল তো মৌ ? তুই আদৌও তাজকে ভালোবাসতি তো ? যদি ভালোবেসে থাকিস তবে এতো সহজে অন্যের সংসার কীভাবে করছিস ? আমি তো পারিনি তোকে ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন সাজাতে। তাজ বলে তুই আমার ভালোবাসা নয় বরং জেদ। তবে তুই যদি নিজের ভালোবাসা ভুলে অন্যের সাথে সুখের সংসার করতে পারিস তবে আমি কেনো নিজের জেদ ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন সাজাতে পারলাম না। হিসাব টা কিছুতেই মিলাতে পারি না রে মৌমাছি। তবে এবার হিসাব মিলবে, তুই মিলাবি।
ফোনের রিংটোনের শব্দে খানিকটা বিরক্ত হলো রায়হান তবু রিসিভ করলো, বল রকি।
স্যার মেয়েটা আয়ার কাছে থাকে ম্যাম হসপিটালে চলে যাওয়ার পর।
রকি আমি শুধু মেয়েটাকে আমার সামনে চাই। সেটা তুই কীভাবে করবি আমি জানি না।
রায়হান ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার সিগারেটে টান দিতে ব্যস্ত। জেল থেকে পালিয়েছে রায়হান। সারা শহরের পুলিশ তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজছে। রায়হান হসপিটালে ভর্তি ছিলো, সেখান থেকেই পালিয়েছে।
মৌ নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে বের হয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
আজ সকাল থেকে মেয়েটা কিছুতেই ছাড়তে চাইছিলো না। তাকে শান্ত করে বের হতে লেইট হয়ে গেছে মৌয়ের। শান রাতে ইমারজেন্সি হসপিটালে গেছে বাসায় ফিরেনি আর। দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে যাবে, শায়িনী ততক্ষণ রেখার কাছেই থাকবে। রেখা মেয়েটা অনেক আগে থেকেই শানদের গ্রামের বাড়িতে থাকতো শানের বাবা-মার সাথে। শান বিয়ের পর মৌকে নিয়ে বাসায় উঠলে শানের মা রেখাকে শানের বাসায় রেখে গেছে মৌয়ের সাহায্যের জন্য। রেখাকে অনেক ভরসা করে সবাই, তাই শায়িনীকে রেখার কাছে রেখে নিশ্চিন্তে থাকে মৌ। হসপিটালে পৌঁছে মৌ জানতে পারলো শান ওটিতে আছে, সেটা শেষ করে বাসায় চলে যাবে আবার বিকেলে হসপিটাল আসবে। মৌ নিজের চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখতে লাগলো।
রেখা শায়িনীকে নিয়ে খেলছে, মৌ চলে গেলে শায়িনীকে নিয়ে থাকা ছাড়া তার আর কোনো কাজ থাকে না। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে রেখা ভাবলো শান এসেছে।
কিছু না ভেবে দরজা খোলে দেখলো অচেনা লোক, কে আপনি ?
অচেনা ব্যক্তি রেখার কোলে শায়িনীর দিকে তাকালো, এটা কী ডক্টর মৌ আর ডক্টর শানের বাসা ?
লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না রেখার তাই ভয়ে ভয়ে বললো, হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে ?
লোকটা আর কিছু না বলে রেখার মুখে কিছু স্প্রে করে দিলো। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো রেখা। কোলে থাকা শায়িনীর বাঁধন আলগা হতে লাগলো।
ড্রয়িংরুমে খেলছে ধ্রুব আর তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাজ। আর মাত্র কিছুটা সময়, দুপুরের ফ্লাইটে সবাইকে নিয়ে লন্ডন ব্যাক করছে আহান। তাজ ধ্রুবকে দেখে নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে। তাজ কী করতে চাইছে বোঝার উপায় নেই। আহানকে সে একবারও বলেনি ধ্রুবকে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে কিংবা এটাও বলেনি বাংলাদেশে থেকে যেতে। সে তিতিরের শাস্তি মেনে নিয়েছে। তবে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে। মনে মনে সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা একমাত্র সেই জানে।
ফোনের আওয়াজে হুঁশ ফিরলো তাজের। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো সবুজের নাম্বার। সবুজকে তাজ সাত দিনের ছুটি দিয়েছে। যদিও সবুজ যেতে চায়নি তবু জোর করে পাঠিয়েছে তাজ। তাজ নিজের ছেলে সাথে থেকেছে গত পাঁচদিন আর সবুজকে তার ছেলের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
কল রিসিভ করলো তাজে, হ্যাঁ বলো সবুজ।
সবুজ অস্থির গলায় বললো, স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
তাজের কপালে ভাজ পড়লো, কী হয়েছে ?
স্যার রায়হান চৌধুরী অসুস্থ ছিলো তাই তাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু হসপিটাল থেকে পালিয়ে গেছে সে।
তাজ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো, হোয়াট ?
সবুজ ভয়ে ঢোক গিললো, জী স্যার।
আমি আজই ঢাকায় ফিরছি ফ্লাইটে, তুমিও দ্রুত চলে এসো।
কল কেটে ফোন পকেটে রেখে দিলো তাজ। রায়হান আবার কোন ধ্বংসের খেলায় মেতেছে ভাবতেই ভয় হলো তাজের। তাজ তাকালো ধ্রুবর দিকে, তিতিরকে সে নিজের জীবনে ধরে রাখতে পারেনি কিন্তু ধ্রুবকে সে কিছুই হতে দিবে না।
পানির গ্লাস হাতে ড্রয়িংরুমে এসে তাজকে চিন্তিত দেখে আহান বললো, কী হয়েছে তাজ ভাইয়া ?
তাজ গম্ভীর আওয়াজে বললো, রায়হান জেল থেকে পালিয়েছে।
আহানের হাতে থাকা কাঁচের গ্লাস ফ্লোরে পরে ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেলো ঝন ঝন আওয়াজ তুলে, হোয়াট ?
তাজ বললো, তুমি দ্রুত সবাইকে নিয়ে লন্ডন ফিরে যাও। আমি চাই না রায়হান আর কারো কোনো ক্ষতি করুক।
না ভাইয়া, আমি এবার আর পালাবো না। ভেবেছিলাম রায়হান চৌধুরীর মুখোমুখি আর কোনোদিন হবো না। কিন্তু এবার আমাকে তার মুখোমুখি হতে হবে, তার কাছে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।
আহানের গলা গম্ভীর শুনালো। তাজ একবার আহানের দিকে তাকিয়ে আবার ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব ভাঙা কাঁচের দিকে তাকিয়ে আছে আর তার দিকে তাজ, আহানের দৃষ্টি।
চলবে,,,,