#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
৬.
আরিন্তা নিজেকে এই কঠিন লজ্জার হাত থেকে বাঁচতেই মৃদু কন্ঠে ডেকে উঠল,
“মিশু ভাই।”
ডাক শুনেই সুবর্ণা লাফিয়ে উঠল। মিশকাত-ও দৃষ্টি ফিরিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সুবর্ণার হাত থেকে নিজের ফোনটা ছোঁ মে’রে কেড়ে নিয়ে রাগত স্বরে বলল,
“তুই আমার ফোন ঘাঁটছিস কোন সাহসে?”
সুবর্ণা বলল,
“আপু ছবি তুলবে। মায়ের ফোনের ক্যামেরা তো ভালো না। তাই তোমারটা চাইতে এসেছে।”
“এই চাওয়ার নমুনা?”
“তুমি ওয়াশরুমে ছিলে, ফোনটা সামনে পড়ে ছিল বলে লক খোলার চেষ্টা করছিলাম।”
“ফের আমার ফোন ধরলে খবর আছে তোর। আর ও এমন ভূ’ত সেজে বসে আছে কেন রাত-বিরেতে?”
আরিন্তাকে ইশারা করে প্রশ্নটা করল মিশকাত।
আরিন্তা কপাল কুঁচকাল। যার জন্য করি চুরি, সে-ই বলে চোর! শুধুমাত্র মিশকাতের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সে লজ্জা-শরম জলাঞ্জলি দিয়ে খালার কাছ থেকে সবকিছু চেয়ে এনে এত কষ্ট করে বউ সাজল, অথচ সেই ব্যক্তিই এখন তাকে ভূ’ত বলছে? সুবর্ণা বলল,
“ভূত মানে কী? আপুকে কী সুন্দর লাগছে, দেখেছ তুমি?”
আরিন্তা দুপা এগিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমাকে ভূ’তের মতো লাগলে তোমার বউকে লাগবে পে’ত্নীর মতো।”
মিশকাত দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“সন্দেহ নেই, আমার বউ-ও তো তোর মতোই এভাবে সাজবে। শত হলেও তোরা মেকআপ সুন্দরী জাতি।”
সুবর্ণা বলল,
“বাজে না বকে ফোনটা দাও, আপুকে ছবি তুলে দিই।”
“তোর হাতে আমার ফোন দিবো, মাথা খারাপ আমার? তোর মডেলকে প্রস্তুত কর, আমি ছবি তুলে দিচ্ছি।”
সুবর্ণা নাকচ করে বলল,
“না, তুমি সুন্দর করে তুলতে পারবে না। আমাকে দাও।”
“আমি না পারলে তুই পারবি? এসেছে আমাকে ফটোগ্রাফী শেখাতে। তুললে তোল, না তুললে ভাগ এখান থেকে।”
সুবর্ণা বিরক্ত মুখে বলল,
“কিছুক্ষণের জন্য ফোনটা দিলে কী আমরা তোমার ফোন খেয়ে ফেলব?”
“খেতেও পারিস। তোদের মতো রা’ক্ষসীদের দিয়ে বিশ্বাস নেই। শুধু ফোন কেন, তোরা আমার মতো আস্ত মানুষ-ও গিলে ফেলতে পারিস।”
সুবর্ণা আরিন্তার দিকে তাকাল। আরিন্তা বলল,
“আচ্ছা তুলুক। দেখি কত সুন্দর করে তুলে দেয়।”
আরিন্তা এগিয়ে গিয়ে ভালোভাবে দাঁড়িয়ে বলল,
“নাও, তোলো।”
মিশকাত ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি তুলল। তারপর বলল,
“বিছানায় উঠে বোস। বসে পোজ দিলে সুন্দর ছবি উঠবে।”
সুবর্ণা-ও বলল,
“হ্যাঁ আপু, ওপরে উঠে বসো।”
আরিন্তা বিছানার কাছে এগিয়ে গেলে সুবর্ণা তার হাত ধরে বিছানায় উঠতে সাহায্য করল। তারপর আরিন্তাকে বিছানার মাঝ বরাবর বসিয়ে শাড়িটা সুন্দর করে মেলে দিলো। মিশকাত সুবর্ণাকে বলল,
“তুই নাম।”
সুবর্ণা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। মিশকাত পরপর কয়েকটা ছবি তুলে বলল,
“একভাবেই বসে আছিস কেন? পোজ দে। পোজ না দিলে কী ছবি তুলব?”
আরিন্তা পোজ কী দিবে? মিশকাত ছবি তোলার বাহানায় যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তাতেই তার পোজের বারোটা বেজে গেছে। কেন জানি তার অস্বস্তি লাগছে। তার অস্বস্তিটা ধরতে পেরে মিশকাত সুবর্ণাকে বলল,
“তোর রুমে না আর্টিফিসিয়াল ফুল আছে? ওগুলো নিয়ে আয় তো।”
বুদ্ধিটা সুবর্ণার পছন্দ হলো। সে সঙ্গে-সঙ্গে ছুটল ফুল আনতে। সুবর্ণা যেতেই মিশকাত ধপাস করে বিছানায় উঠে বসল। মুখোমুখি বসে আরিন্তার চোখের দিকে তাকাতেই আরিন্তা চোখ নামিয়ে নিল। মিশকাত ডান হাতের তর্জনী আঙুল আরিন্তার থুতনিতে ঠেকিয়ে মুখ তুলে মুগ্ধ কন্ঠে বলল,
“মা শা আল্লাহ্। আমার ঘরে এই সুন্দর ফুলটা আজীবন ফুটে থাকুক।”
আরিন্তা মিনমিনে কন্ঠে বলল,
“দয়া করে তুমি এভাবে তাকিয়ে থেকো না।”
“কেন?”
“তুমি বুঝতে পারছো না আমার লজ্জা লাগছে?”
মিশকাত হেসে বলল,
“বরের সামনে কিসের লজ্জা বউ?”
মিশকাতের মুখে ‘বউ’ ডাকটা আরিন্তার কানে কী যে মধুর লাগল! আরিন্তা লাজুক হাসল। বলল,
“বর হতে অনেক দেরী।”
“যেদিনই হই, বরটা তো আমিই হব।”
আরিন্তা বলল,
“তবে এইমাত্র যেভাবে বউ ডাকলে, সেভাবে আরেকবার ডাকো তো।”
মিশকাত ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“কেন? আজই বউ হতে ইচ্ছা করছে?”
“আহা! বলো না।”
মিশকাত হাসিমুখে ডাকল,
“ও পোনি বউ।”
আরিন্তা প্রশস্ত হাসল। মিশকাত তার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল,
“এই পোনি, চল বিয়ে করে ফেলি।”
আরিন্তা বলল,
“সময় আসুক।”
“কবে আসবে সেই সময়?”
সুবর্ণার আগমনের কারণে আরিন্তার উত্তরটা আর মিশকাতের পাওয়া হলো না। সুবর্ণা নিজের রুম থেকে আর্টিফিসিয়াল ফুল এনেছে। ফুলগুলো সে আরিন্তার হাতে দিলো। সুবর্ণা আর মিশকাত মিলে আরিন্তাকে বিভিন্ন পোজ দেখিয়ে দিলো। আরিন্তা সেভাবে-সেভাবে পোজ দিয়ে ছবি তুলল। সুবর্ণা আফসোসের সুরে বলল,
“ইশ্! আপুকে এত্ত সুন্দর লাগছে। এখন যদি তার ভবিষ্যৎ বরটা এখানে থাকত। তাহলে কাপল পিক-ও তোলা হয়ে যেত।”
মিশকাত আরিন্তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। তারপর সুবর্ণাকে বলল,
“ভালোই খাটাচ্ছিস, এক গ্লাস পানি খাওয়া তো সুবর্ণা।”
সুবর্ণা টেবিলের কাছে গিয়ে দেখল পানির বোতল খালি। মিশকাত যে নিজেই পানির বোতল খালি করে রেখেছিল, সে খবর কেউ জানল না। সুবর্ণা বোতল নিয়ে আবার গেল পানি আনতে। মিশকাত সঙ্গে-সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে আরিন্তার পাশে বসল। আরিন্তা চমকে উঠে বলল,
“কী হলো?”
মিশকাত সেলফি ক্যামেরা অন করে এক হাতে আরিন্তার বিপরীত বাহু আগলে ধরে বলল,
“চোখের সামনে নতুন বউ একা বসে ছবি তুলছে, তা কি কোনো প্রকৃত প্রেমিক মানতে পারে? কাপল পিক তোলা অত্যাবশ্যক।”
আরিন্তা মুচকি হেসে ভ্রুকুটি করে বলল,
“শখ আর মেটে না?”
“না, চল বিয়ে করি।”
“তাহলেই সব শখ মিটে যাবে?”
“জীবনে শখের কি শেষ আছে রে পোনি? তোকে ঘিরে আমার শখ তো আজীবন থাকবে।”
আরিন্তা মিশকাতের পেটে কনুইয়ের গুঁতো মে’রে তাড়া দিলো,
“তাড়াতাড়ি ক্লিক করবে, না সুবর্ণা আসার অপেক্ষায় আছো?”
মিশকাত সঙ্গে-সঙ্গে ক্লিক করল। পরপর দুটো ছবি তুলল। একটা চোখে চোখ রেখে, আরেকটা আরিন্তা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকার সময় মিশকাত তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার মুহুর্তে। দুজনের মুখেই মিষ্টি হাসি। দুটো ছবি তুলতেই আরিন্তা মিশকাতকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“হয়েছে, আর তুলতে হবে না। এই দুটোই তুমি সারাদিন দেখো। মায়ের ফোনে তো আর এই ছবি নেওয়া যাবে না।”
সুবর্ণা পানি নিয়ে এলে মিশকাত পানি খেয়ে আবারো আরিন্তার কয়েকটা ছবি তুলল। এবারে ছবি তুলল বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। আরিন্তা মিশকাতকে বারবার করে বলে দিলো,
“মনে করে কিন্তু ছবিগুলো মায়ের ফোনে পাঠিয়ে দিবে।”
মিশকাত বলল,
“কিসের ছবি? আমাকে কিছু না দিলে কোনো ছবি দেওয়া হবে না। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়।”
“কয়েকটা ছবির জন্য তুমি ঘু’ষ চাইছো? ছিহ্!”
“ঘুষ মানে কী? বল কষ্টের ফল। এই যে আঁকাবাঁকা হয়ে শ’খানেক ছবি তুললি। এসব তুলতে আমার কষ্ট হয়নি?”
আরিন্তা সে কথা পাত্তা না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আর কিছুই পাবে না তুমি। ছবি এক সময় দিবেই।”
•
দুদিন পর কুরবানি ইদ। আরিন্তাদের বাড়ি মেহমানে ভরপুর। তার ছোটো চাচার বাড়ি তাদের বাড়ির সাথেই। ইদ এলেই তার বিবাহিত চাচাতো ভাই-বোনেরা গ্রামের বাড়ি চলে আসে। সাথে আছে আরিন্তার বড়ো ফুপুর পরিবার। তারা-ও দুটো ইদে-ই সদর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসার চেষ্টা করেন। তিন ভাই-বোন মিলে প্রতিবার কুরবানি দেন। ইদ এলেই আরিন্তাদের বাড়িতে খুশির আমেজ বয়ে আনে ছোটো চাচা আর বড়ো ফুপুর পরিবার। এবারেও তাই হয়েছে। ইদের দুদিন আগেই সবাই গ্রামের বাড়িতে হাজির। আরিন্তার চাচাতো, ফুপাতো ভাই-বোনের সংখ্যা সব মিলিয়ে দশ জন। এই দশ জন যে কদিন একত্রিত থাকে, সে কদিন বাড়িটা কিছুতেই শান্ত থাকে না। সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। এবার সবাই একত্র হয়ে কেউ বিশ্রাম নেওয়ার কথাও ভাবেনি। কবে, কখন, কী করবে, না করবে তার পরিকল্পনা করতে বসে গেছে। তারা এসেছে বিকালে। তারপর অর্ধেক রাত পর্যন্ত গল্প, আড্ডাতেই কা’টিয়ে দিয়েছে। ঘুমাতে গিয়েছে রাত দুইটার দিকে। পরদিন অর্থাৎ ইদের আগেরদিন তাদের আরও হৈ-হুল্লোড় করে দিন পার হয়েছে। সারাদিন সবাই মিলে বাড়িতে এটা-ওটা করেছে। নারকেল গাছ থেকে ডাব পেড়ে খেয়েছে, আম গাছ থেকে পাকা আম পেড়ে খেয়েছে, মেরিনার হাতে বানানো বিভিন্ন আচার খেয়েছে। আরিন্তাদের বাড়ির পেছনের দিকে ঘাট বাঁধানো একটা বড়ো পুকুর আছে। দুপুরবেলা সেই পুকুরে সবাই মিলে ঘন্টা দুয়েক সাঁতার কে’টেছে। দুপুরে জম্পেশ খাওয়া-দাওয়া সেরে বিকালে গ্রাম ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছে। তাদের যেন আজই ইদ। পাশাপাশি গ্রামে থাকার সুবাদে মিশকাত আর সুবর্ণার সাথেও আরিন্তার চাচাতো-ফুপাতো ভাই-বোনদের ভালোই সখ্যতা আছে। ছোটোবেলা থেকেই খালার বাড়ি এলে তাদের সাথে মেলামেশা হত মিশকাত, সুবর্ণার। এবার এসে হতেই তারা মিশকাতকে বারবার ফোন করেছে সুবর্ণাকে নিয়ে আসতে। কিন্তু মিশকাত এটা-ওটা কাজের বাহানায় এড়িয়ে চলেছে। তাই গ্রাম ঘুরতে বেরিয়ে সবাই হুট করে ঠিক করল মিশকাতের বাড়ি যাবে তাদের না জানিয়ে। যেই ভাবা সেই কাজ। দল বেঁধে হাঁটতে-হাঁটতে চলে গেল পাশের গ্রামে। তারপর উপস্থিত হলো মিশকাতের বাড়ি। এক দল মেহমান দেখে আয়েশা খাতুন অবাক হলেন। খুশিও হয়েছেন অবশ্য। সবাইকে ডেকে নিয়ে ঘরে বসিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আপ্যায়নে। মিশকাত তখন কলপাড়ে গোসল করছিল। একদল ছেলে-মেয়েদের কথাবার্তার আওয়াজ তার কানে গিয়েছে। বুঝতেও বাকি নেই এই দল কোত্থেকে এসেছে। গোসল সেরে সে যখন হাত দিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে-ঝাড়তে ঘরে ঢুকেছে, তখন তার পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি। ঘরে ঢুকেই তাকে একদল মানুষের কড়া দৃষ্টিতে পড়তে হলো। সে চাইল মৃদু হেসে কুশল বিনিময় করতে, কিন্তু তারা শুরু করল জেরা। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের চাপে সে গতকাল থেকে এই পর্যন্ত আরিন্তাদের বাড়ি যেতে পারেনি, এটাই সবার প্রশ্ন। সুবর্ণা শুনে বলে বসল,
“গুরুত্বপূর্ণ কাজ আবার কী? ভাইয়া তো গতকাল থেকে বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই বসে আছে।”
এ কথা শুনে বেঁধে গেল একেকজনের নানান অভিমানি কথা। তারা এখন মিশকাত আর সুবর্ণাকে সাথে নিয়ে তবেই যাবে। মায়ের আগমনের সু্যোগে মিশকাত কোনোমতে সবার হাত থেকে ছাড় পেয়ে ঘরে ছুটল। আয়েশা খাতুনকে বেশি কিছু করতে দেয়নি আরিন্তার কাজিনমহল। গরমের কারণে তারা কেবল এক গ্লাস করে ঠান্ডা শরবত খেতেই রাজি হয়েছে। আর কিছু খেতে চায় না বলে আয়েশা খাতুন বলেকয়ে তাদের জন্য গাছ থেকে পাড়া লিচু এনে দিয়েছেন। মিশকাত গিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে থাকায় আরিন্তা নিজেই দরজার কাছে গিয়ে হাঁকডাক শুরু করল। মিশকাতের জন্য রাখা শরবত নিয়ে এসেছে সে। মিশকাত দরজাটা অর্ধেক খুলে গম্ভীর মুখে বলল,
“কী সমস্যা?”
আরিন্তা বলল,
“এতক্ষণ লাগে রেডি হতে? তোমার শরবত এনেছি, নাও।”
মিশকাত আরিন্তার হাতের শরবতের গ্লাসের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“আমি বলেছি শরবত খাব? সর সামনে থেকে।”
আরিন্তা ভ্রুকুটি করল। মিশকাতের মুখোভাব লক্ষ্য করে বলল,
“কী হয়েছে? এটুকু সময়ের মধ্যে আবার মাথায় বাড়ি মা’রল কে?”
“তোকে আমি সরতে বলেছি, সর। আজাইরা ক্যাঁচাল করিস না এখন।”
আরিন্তা কিছু বলতে চাইলেও বেশি কথা বাড়াতে পারল না। কারণ তার গোটা কাজিনমহল এখানে উপস্থিত। সে শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে ধরে বলল,
“আচ্ছা, এটা খেয়ে নাও।”
মিশকাত বলল,
“খাব না।”
“খেতে কী সমস্যা?”
“যেতে বলেছি না তোকে?”
আরিন্তা মুখ কালো করে বলল,
“খাবে না তুমি?”
“না।”
“সত্যি খাবে না?”
“মিথ্যার কী আছে?”
“ঠিক আছে, খেয়ো না। আমি নিজেই খেতে জানি।”
আরিন্তা এক নিমেষেই গ্লাসের সবটুকু শরবত ঢকঢক করে গলাধঃকরণ করে ফেলল। মিশকাত শুধু তাকিয়ে রইল। কিছু বলল না। এসব কাণ্ড তার কাছে স্বাভাবিক। আরিন্তা-ও ফাঁকা গ্লাস নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চলে গেল।
মিশকাত আর সুবর্ণাকে নিয়ে তাদের গ্রামটা একটু ঘুরে সবাই আবার আরিন্তাদের বাড়ি ফিরে এসেছে। সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুরু হলো মেহেদি পরার আয়োজন। যারা ভালো মেহেদি পরাতে পারে তারা একে-একে সবাইকে মেহেদি পরিয়ে দিচ্ছে। আরিন্তা কখনোই ভালো মেহেদি ডিজাইন পারে না। তবু সে একেকজনের হাতে মেহেদি পরানোর জন্য জোরাজুরি করছে। মেয়েরা কেউই তার কাছে মেহেদি পরতে রাজি হয়নি। তারা সুন্দর ডিজাইন চায়। বাচ্চাগুলোকে পটিয়ে আরিন্তা তাদের ছোটো-ছোটো হাতে ইচ্ছামতো আঁকিবুঁকি করে চলল। আঁকাবাঁকা ফুল, লতাপাতা আর পাখির ছবি এঁকে বাচ্চাদের মন জয় করার চেষ্টা চলছে তার। বাচ্চারা-ও এসবেই খুশি। তাদের ধারণা আরিন্তা-ই এখানে সেরা মেহেদি আর্টিস্ট। মেহেদি পরার আয়োজনে বাদ পড়েছে ছেলেরা। তারা কেউ মেহেদি পরতে রাজি ছিল না। কোনোমতেই তাদের রাজি করানো যায়নি। দু-একজনকে শুধু জোর-টোর করে তাদের বউ বা প্রেমিকার নামের প্রথম অক্ষর সেঁটে দেওয়া হয়েছে হাতের তালুতে। এতে-ও বাদ পড়ে রইল মিশকাত। কারণ এখনো পর্যন্ত সবাই তাকে সিঙ্গেল বলেই জানে।
চলবে, ইন শা আল্লাহ্।