#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৯
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারের মুখে আবার সেই নামটা শুনে অবাক হয়।সেই মেয়েটিও মা*রপিট থামিয়ে সালমা আক্তারের দিকে তাকায়।সেই মুহুর্তে গু*ন্ডারা মেয়েটির মাথায় আঘাত করে।মেয়েটি মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।সালমা আক্তার আরো জোরে চিৎকার করে বলেন,
-“স্বর্ণা ওঠ।”
স্বর্ণা উঠে দাঁড়ায় তারপর সব গু*ণ্ডাদের মে*রে কচুকা*টা করে।স্বর্ণার এই রকম মা*রপিটের স্টাইল দেখে বৃষ্টি তো খুবই ইমপ্রেস হয়।সাথে তার মনে এটাও প্রশ্ন জাগে তার শাশুড়ী মেয়েটাকে স্বর্ণা নামে ডাকল কেন? তাহলে এটাই কি তার ননদ স্বর্ণা?
স্বর্ণা গু*ণ্ডাদের শায়ে*স্তা করে ফিরে যেতে ধরছিল।সালমা আক্তার দৌড়ে চলে যায় স্বর্ণার কাছে।গিয়ে বলেন,
-“তুই কেমন আছিস স্বর্ণা? আজ কতদিন পর তোকে দেখলাম।কতটা শুকিয়ে গেছিস।নিজের যত্ন নিসনা? কোথায় আছিস এখন? আমার কথা কি তোর মনে পড়েনা?”
স্বর্ণা সালমা আক্তারকে দেখে অপরিচিত হওয়ার ভান করে বলে,
-“আপনি কে আর আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি তো আপনাকে চিনি না।”
-“এমন করছিস কেন আমার সাথে? আজ কতদিন পর তোকে দেখলাম।একটু দুচোখ ভরে দেখে নিতে দে।মায়ের উপর এত রাগ কেন তোর?”
-“আপনার উপর রাগ করতে যাবো কেন? রাগ করার জন্য একটা সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।এই পৃথিবীর সবার সাথে তো সম্পর্ক চুকিয়েই নিয়েছি।”
শেষের কথাটা চাপা স্বরে বলে স্বর্ণা চলে যায় নিজের গন্তব্যে।সালমা আক্তার ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।বৃষ্টি তার কাছে এসে বলে,
-“এই কি আপনার মেয়ে বৃষ্টি? ও আপনার সাথে এরকম ব্যবহার করল কেন যেন আপনাকে চেনেই না?”
-“আমার বোধহয় বুঝতে ভুল হয়েছে।চলো এখন।”
সালমা আক্তার যে মিথ্যা বলছেন বৃষ্টি খুব সহজেই সেটা বুঝে যায়।কিন্তু সে এটাও বুঝতে পারে তিনি তাকে সত্যটা বলতে চান না।তাই আর অযথা কোন প্রশ্ন করে না বৃষ্টি।তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে স্বর্ণার ব্যাপারে সব সত্য সে জেনেই ছাড়বে।
___________________
বৃষ্টি সোফায় বসে কি যেন ভাবছিল আর গান শুনছিল।সূর্য রুমে চলে আসে আর বৃষ্টিকে এভাবে দেখে স্থির দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টি সূর্যকে এভাবে নাকি থাকতে দেখে থতমত খেয়ে বলে,
-“এভাবে কি দেখছেন আপনি? আমার প্রেমে টেমে পড়লেন না-কি?”
সূর্য টালবাহানা করে বলে,
-“আপনার প্রেমে পড়ব আমি? এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে।”
-“আমারও আপনার প্রেমিকা হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।বাই দা ওয়ে আমি একটা ব্যাপারে জানতে চাই,,,,”
-“স্বর্ণা ছাড়া অন্য যেকনো ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেন।”
বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলেই দেয়,
-“আমি আপনার সাথে কথাই বলতে চাইনা।আপনি আসলে কোন কাজেরই না।”
সূর্যর ফোনে হঠাৎ কল আছে।সূর্য অদ্ভুতভাবে বৃষ্টির দিকে তাকায়।সূর্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি আন্দাজ করে ফেলে নিশ্চয়ই প্রিয়া কল করেছে।বৃষ্টি তাই রুম থেকে চলে যেতে ধরে।সূর্য তাকে আটকে বলে,
-“আপনি দাঁড়ান আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”
বৃষ্টি দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় সূর্যর দিকে।সূর্য ফোনটা রিসিভ করে বলে,
-“হ্যাঁ প্রিয়া বলো।”
-“সূর্য আমরা কতদিন থেকে ঘুরতে যাইনা।চলো না আজ আমরা কোথাও ঘুরতে যাই।”
-“আমি এখন ব্যস্ত আছি।”
-“আমার কাছেই তোমার যত ব্যস্ততা।ধুর আমি রাখছি।”
প্রিয়া ফোনটা কে*টে দিতেই সূর্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ঘুরতে যাবেন আমার সাথে?”
সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টির তো নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।বৃষ্টি সূর্যর কপালে হাত দিয়া বলে,
-“আপনি ঠিক আছেন তো? নাকি আমার কানটাই খারাপ হয়ে গেছে।সূর্য ইসলাম আমাকে বলছে ঘুরতে যাওয়ার কথা।”
-“কেন আমি কি খুব ভুল বলে ফেললাম?”
-“না ভুল বলেল নি।বরং একটা অসম্ভব কথা বলেছেন।আমার কোন ইচ্ছে নেই আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়ার।ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হলে আপনি নিজের গার্লফ্রেন্ড প্রিয়াকে নিয়ে যান।”
-“আমি তো আপনার কথা মতো আপনার বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম।এখন আমি একটা কথা বলছি আর আপনি শুনবেন না!”
সূর্যর কথাটা ছিল আবেগঘন এবং অভিমানী।যা বৃষ্টির অবাক হওয়ার পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি করে।বৃষ্টি কিছুক্ষণ থেকে তারপর বলে,
-“আপনি মোটেই জাননি আমায় ফন্দি করে আপনাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল।”
-“আপনি কি চান আমিও একইভাবে ফন্দি করে আপনাকে নিয়ে যাই?”
বৃষ্টি বুঝতে পারে সূর্য আজ যে করেই হোক তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেই।তাই আর বেশি কথা না বলে চুপচাপ রাজি হয়ে যায়।
সূর্য বৃষ্টিকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে যায়।চারিপাশে অনেক মানুষের সমাহার।তন্মধ্যে অনেক দম্পতি,প্রেমিক-প্রেমিকার মেলা।সবার মধ্যে সূর্যর পাশাপাশি হাটতে বৃষ্টির অস্বস্তি লাগছিল।বৃষ্টির অস্বস্তিটা আরো বাড়ানোর জন্যই যেন সূর্য তার হাতটা ধরে হাটতে থাকে।বৃষ্টি চোখ বড়বড় করে সূর্যর দিকে তাকায়।
লোকটা আজ হঠাৎ এরকম অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছে বৃষ্টির তা বোধগম্য হচ্ছে না।বৃষ্টি মিনমিনে স্বরে বলে,
-“কি করছেন আমার হাত ছাড়ুন সবাই দেখছে।”
সূর্য বৃষ্টির কথা শুনে তার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলে,
-“ছাড়ার জন্য তো হাতটা ধরিনি।”
বৃষ্টি আর কিছু বলে না চুপচাপ সূর্যর সাথে হেটে আশেপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে থাকে।আর কিছুক্ষণ পরেই সূর্যাস্ত হবে।সূর্য বৃষ্টিকে বলে,
-“আমার খুব ইচ্ছে জানেন একদিন কুয়াকাটায় গিয়ে সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত দেখা।”
বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে,
-“কেন আপনি কখনো কুয়াকাটায় যাননি?”
-“একা একা কিভাবে যাব? যাওয়ার জন্য কোন সঙ্গী তো ছিলনা।”
-“কেন প্রিয়া তো ছিলই।”
বৃষ্টির মুখে প্রিয়ার নাম শুনে সূর্যর চেহারায় যেন গ্রহণ লাগে।বৃষ্টি সূর্যর চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
-“কি হলো লোকটার? কাল অব্দি তো প্রেমিকা প্রেমিকা করত।আজ তাহলে হঠাৎ আমার পেছনে এভাবে ঘুরছে কেন? ব্যাপারটা তো সুবিধার লাগছে না।”
-“সবসময় যা চোখে দেখা যায় সেটা সত্য হয়না।সত্যটা হয়তো মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যায়না।”
সূর্যর এই কথাটার কোন মানে খুঁজে পায়না বৃষ্টি।এরমধ্যে বৃষ্টির চোখ যায় রাস্তার বিপরীত দিকে।একটি মেয়ে দাড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।মেয়েটা আর কেউ নয় স্বর্ণা।স্বর্ণাকে দেখে বৃষ্টি দৌড়ে ছুটে যায় রাস্তার বিপরীত পাশে।
স্বর্ণার কাছে গিয়ে বৃষ্টি বলে,
-“তুমি স্বর্ণা তাইনা?”
স্বর্ণা বৃষ্টিকে বেশ কড়াভাবে বলে,
-“হ্যাঁ আমি স্বর্ণা।এর থেকে বেশি কিছু জানার চেষ্টা করবেন না।আমি কিন্তু ভদ্রলোক নই।তাই কখন কি করে ফেলি তার কোন গ্যারান্টি নেই।”
সূর্যও বৃষ্টির পিছু পিছু চলে আসে।সূর্যকে দেখে স্বর্ণা রাগী কন্ঠে বলে,
-“নিজের স্ত্রীকে সামলে রাখুন।আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমি তো নিজেকে নিয়ে খুব ভালোই আছি।আমার কারো প্রয়োজন নেই।নিজের পরিচয় আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই যেন মনে পড়ে।অতীত আমায় ভালো থাকতে দেয়না।”
সূর্য স্বর্ণাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“আপনার অতীত আর আপনাকে কষ্ট দেবে না।আপনি চলে যান নিজের রাস্তায়।আপনাকে আমরা কেউ আর নিজেদের সাথে জড়াতে চাইবোনা।”
স্বর্ণা চলে যেতে নেয়।তখন সূর্য পেছন থেকে চাপা গলায় বলে,
-“ভালো থাকিস বোন।”
সূর্যর কথাটা শুনে স্বর্ণা ঘুরে সূর্যর দিকে তাকায়।চোখের ভাষাতেই যেন কথা বলে দুইজন।স্বর্ণার খুব ইচ্ছে করছিল ঠিক আগের মতো ছুটে এসে নিজের ভাইকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সে এখন আর কোন পিছুটান রাখতে চায়না।তাই নিজের অবাধ্য মনকে বাধ্য করে চলে যায় নিজের গন্তব্যে।
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১০
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সূর্যর দিকে তাকায়।সূর্যর চোখে জল।বৃষ্টির ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগে না।বোনকে এত ভালোবাসলে তাকে এভাবে চলে যেতে দিচ্ছে কেন সূর্য? এই কথাই বৃষ্টির মাথায় আসেনা।
বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের এখন ফিরে যাওয়া উচিৎ।”
-“আচ্ছা চলুন।”
বৃষ্টি আর সূর্য একসাথে গাড়িতে উঠে রওনা দেয়।রাস্তায় জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়।আর তখনই আকাশ গ*র্জে ওঠে।বৃষ্টি বলে,
-“আমার তো মনে হচ্ছে একটু পর বৃষ্টি হবে।কি ভালো যে লাগছে।কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না।”
-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে যদি আপনি বৃষ্টিতে ভেজেন তাহলে শরীর খারাপ করবে।”
-“এই যে শুনুন আমার নাম বৃষ্টি।বৃষ্টির দিনে আমার জন্ম হয়েছে জন্য আমার বাবা আমার এই নাম রেখেছে।ছোটবেলা থেকে আমি বৃষ্টি ভালোবাসি।বৃষ্টিতে ভিজলে আমার কিছু হয়না।”
তন্মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।বৃষ্টি গাড়ির কাচ নামিয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে নেয়।তারপর আর থাকতে না পেরে সূর্যকে বলে,
-“আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দিন আমি ভিজতে চাই।”
সূর্য তাই করে৷বৃষ্টি গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।আজ যেন তার খুবই ভালো লাগছিল এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে।কিছুক্ষণ পর সূর্য ছাতা মাথায় তার কাছে এসে বলে,
-“অনেক হয়েছে এবার চলুন।আরো ভিজলে শরীর খারাপ করবে কিন্তু।”
-“আমায় আর একটু থাকতে দিন না।”
-“ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি।”
বৃষ্টি অভিমানী সুরে বলে,
-“আচ্ছা চলুন আমিও যাচ্ছি।বিয়ে করাটাই ভুল হয়েছে একটু শান্তিতে বৃষ্টিতে ভিজতেও পারবোনা।”
বৃষ্টি গাড়িতে ওঠার পর সূর্য তার দিকে নিজের রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-“এই নিন মাথাটা মুছে নিন।”
-“রুমাল দিয়ে আবার কেউ মাথা মোছে না-কি?”
-“এই রুমালটা একেবারে পরিস্কার আছে।মাথা মুছে নিন নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।”
বৃষ্টি সূর্যর থেকে রুমাল নিয়ে মাথা মুছে নেয়।
___________________
বাড়িতে ফিরে বৃষ্টি সবার আগে আরশিকে ফোন করে।ফোন রিসিভ করে আরশির খোঁজ খবর নেয়।আরশি একপর্যায়ে প্রশ্ন করে,
-“ঐ বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?”
-“সবাই ঠিক আছে।”
-“সোহেল কি এখনো বাড়িতে ফেরেনি।”
আরশির মুখে সোহেলের নাম শুনে বৃষ্টি খুবই রেগে যায়।রেগে গিয়ে বলে,
-“যেই লোকটা তোমায় এত কষ্ট দিল তুমি তার কথা জিজ্ঞাসা করছ!”
আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“কাউকে ভালোবাসলে এত সহজে তাকে ভোলা যায়না তা সে যতই কষ্ট দিক।আমিও তো সোহেলকে ভালোবেসে ছিলাম।আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা আমি আর সোহেলের কথা ভাবব না।কাল থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা ভাবছি।আবার নতুন করে নিজের জীবনটা শুরু করব।”
-“দ্যাটস গ্রেট।গুড লাক।”
বৃষ্টি ফোনটা কে*টে দেয়।হঠাৎ তার শরীর কেমন জানি লাগছিল।মাথায় অল্প করে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিল আর ঠাণ্ডাও লাগছিল।সাথে অল্প অল্প কাশি।বৃষ্টি বুঝতে পারে তখন ওভাবে বৃষ্টির পানিতে ভেজার কারণেই এমন হয়েছে।এমনিতেই অসময়ের বৃষ্টি,তার উপর সন্ধ্যাবেলায় এভাবে ভেজার কারণে এই অবস্থা।বৃষ্টির নিজের সিদ্ধান্তের উপরই রাগ হয়।কি দরকার ছিল এভাবে ভেজার? কিন্তু সেই বা কি করতে পারে বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি।
হঠাৎ সূর্য বৃষ্টির কপালে হাত দিয়ে বলে,
-“কপাল গরম মনে হচ্ছে।জ্বর আসার সম্ভাবনা প্রবল।আমি আগেই বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করেছিলাম।”
সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টি বিস্ময়ের চোখে তার দিকে তাকায়।সূর্যর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আরে না।কিছু হবে না আমার।”
-“না হলেই ভালো।”
সূর্যকে কিছু হবে না বলে দিলেও বৃষ্টি বুঝতে পারছিল তার শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না।মাথা ব্যাথায় কাহিল হয়ে বৃষ্টি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির অবস্থাও খারাপ হয়।বৃষ্টির পুরো শরীর জ্বরে গরম হয়ে যায়।সূর্য বিচলিত হয়ে থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখে ১০৩° জ্বর।
সূর্য বৃষ্টির এমন খামখেয়ালিপনার জন্য বিরক্ত হয়ে বলে,
-“নিজের খেয়াল রাখতে তো একদমই পারেন না।তখন কত করে বললাম বৃষ্টিতে ভিজবেন না শুনলেন আমার কথা? এখন দেখলেন তো কি হলো।”
বৃষ্টি জ্বরের ঘোরেই বলে,
-“আপনি আমায় নিয়ে চিন্তা করবেন না।”
-“আপনি চুপ থাকলেই ভালো হবে।এই অবস্থায় আপনার খেয়াল রাখার মতো আমি ছাড়া আর কে আছে? আপনি দাড়ান আমি আসছি।”
সূর্য প্যারাসিটামল এনে বৃষ্টিকে খাইয়ে দেয়।তারপর তার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।ওষুধ তো খেয়েছি আমি ঠিক হয়ে যাব।”
-“চুপ আর একটা কথাও বলবেন না।”
-“আমাকে একটা কথা বলতে পারবেন প্লিজ? এই কথা না জানলে আমার জ্বর ঠিক হবে না।”
-“আপনি নিশ্চয়ই স্বর্ণার ব্যাপারেই জানতে চাইবেন।”
-“জ্বি, বলুন না।”
-“স্বর্ণা আমার খুব আদরের বোন ছিল।সবসময় হাসিখুশি থাকত,খুব চঞ্চলও ছিল কিন্তু সাথে ও যথেষ্ট ভদ্রও ছিল।ওর মধ্যে চঞ্চলতা থাকলেও কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি,সবার সাথে মিশেছে।ওর আচরণ খুব ভালো ছিল।তারপর না জানি কি এমন হয়ে গেল আমার চেনা পরিচিত বোনটা বদলে গেল।ও নে*শা করতে শুরু করল, একবার আ*ত্ম*হ*ত্যা*র চেষ্টাও” করেছিল।আমরা কারণ জানতে চাইলে ও চুপ থেকেছে।একপর্যায়ে বাবা বিরক্ত হয়ে ওকে রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেয়।স্বর্ণা সেখানেও বেশিদিন থাকে না পালিয়ে আসে বাড়িতে।এখানে এসে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো,কাউকে সহ্য করতো না।আর সবথেকে বড় অঘটনটা ঘটেছিল সেদিন….”
-“কি হলো থেমে গেলেন কেন?”
-“স্বর্ণা ঘরে অন্য একটা ছেলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ছিল।আমরা প্রথমে সবাই ভেবেছিলাম ছেলেটাই স্বর্ণার উপর জো*র জ*ব*র*দস্তি করেছে কিন্তু স্বর্ণা নিজেই জানায় ও ইচ্ছে করেই সব করেছে।আব্বু সেদিন খুব রেগে যায়।সবার সামনে স্বর্ণাকে মে*রে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আর বলে, এই মেয়ের সাথে আমাদের কারো কোন সম্পর্ক থাকবেনা।আজ থেকে আমাদের সবার কাছে ও মৃ*ত।”
সূর্যর কথাগুলো শুনে বৃষ্টির খুবই খারাপ লাগে।মাত্র দুবারই সে স্বর্ণা নামক মেয়েটিকে দেখেছে।তাকে দেখে তো খারাপ মনে হয়নি।বরং তার চোখে মুখে অদ্ভুত একটা মায়া আছে।তাকে দেখেই বোঝা যায় সে অনেক দুঃখ পুষে রেখেছে নিজের মনে।
সূর্য আচমকা বলে,
-“তবে আমার মনে হয় স্বর্ণা নিজে থেকে কিছুই করেনি।ওকে কোনভাবে বাধ্য করা হয়েছে বা ফাসানো হয়েছে।কিন্তু আমি আজ অব্দি এর আসল কারণ বের করতে পারিনি।স্বর্ণাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও সে চুপ থাকে।”
সূর্য খেয়াল করে বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়েছে।সূর্য ঘুমন্ত বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তারপর তার গায়ে ভালো করে কম্বল জড়িয়ে জলপট্টি দিতে থাকে।
________
সকালে ঘুম ভাঙলে বৃষ্টি দেখতে পায় সূর্য তার পাশেই বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।কাল রাতের সমস্ত কথা বৃষ্টির মনে পড়ে।সূর্য তাহলে সারারাত বৃষ্টির খেয়াল রেখেছে।কিন্তু সূর্য তো বৃষ্টিকে পছন্দই করে না।তাহলে কেন হঠাৎ এমনভাবে তার যত্ন নিল।বৃষ্টি এসব হিসাব কিছুতেই মিলাতে পারছে না।সাথে স্বর্ণার চিন্তাও তার মাথায় যোগ হয়েছে।
এরমাঝে বৃষ্টির ফোন বেজে ওঠে।ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে বরকত হোসেন বলেন,
-“তুই ঠিক আছিস তো বৃষ্টি?”
বৃষ্টি তার বাবার কথায় অবাক হয়।সে তো নিজের অসুস্থতার ব্যাপারে তার বাবাকে কিছু জানায় নি।তাহলে সূর্য কি কিছু বলেছে? বৃষ্টি তার বাবাকে বলে,
-“আমি একদম ঠিক আছি আব্বু।তুমি কেমন আছ?”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আসলে তোকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম তো তাই কেমন একটা লাগছিল।তুই ভালো থাকিস বৃষ্টি।আমি চাই তুই সবসময় সুখী থাকিস।”
বাবার কথা শুনে বৃষ্টির চোখে জল চলে আসে।বাবারা তো এমনই।কেমন করে জানি তারা সন্তানের ভালো খারাপ অবস্থা সম্পর্কে জেনে যান।হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা থেকে।
কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে বৃষ্টি ড্রয়িং রুমে যায়।ড্রয়িং রুমে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে বৃষ্টি চমকে যায়।
(চলবে)