বিবাহ বন্ধন পর্ব-১৫+১৬

0
779

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৫
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সূর্যর অপেক্ষায় ঘরে বসেছিল।সূর্যর থেকে অনেক কথা যে তার জানার আছে।এরমধ্যে চিৎকারের শব্দ শুনে ড্রয়িংরুমে চলে আসে বৃষ্টি।

প্রিয়া আশেপাশের অনেক মানুষকে জড়ো করে বাড়িতে এনেছে।বৃষ্টি বুঝতে পারে প্রিয়া কি চায়।

আলামিন ইসলাম এবং সালমা আক্তারও সেখানেই ছিলেন।কিছু প্রতিবেশী তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আমরা তো আপনাদের যথেষ্ট ভালো মানুষ বলেই জানতাম।এখন আমরা এসব কি শুনছি? আপনারা বাড়ির বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন?”

আলামিন ইসলাম তাদের কথা শুনে খুব রেগে যান।তিনি বলেন,
-“আপনারা কিছু না জেনে এমন কথা বলতে পারেন না।তাছাড়া এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার তাই আপনাদের নাক গলানোর কোন এখতিয়ার নেই।”

প্রিয়া ঢং করে বলে,
-“আপনারা দেখছেন তো আমি গরীব ঘরের মেয়ে, সাথে অনাথ জন্য এনারা আমায় মেনে নিচ্ছে না।অনেক আগে থেকেই সোহেলের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।এনারা সেটা জানতে পেরে জোরপূর্বক আরশির সাথে সোহেলের বিয়ে দিয়ে দেয়।আরশির সাথে সোহেল সুখী ছিলনা, তাছাড়া আরশি মেয়েটার চরিত্রও বেশি ভালো ছিলনা।কিন্তু সে সোহেলার মায়ের বোনের মেয়ে ছিল জন্য তাকে কেউ কিছু বলত না।একসময় সোহেল আর সহ্য করতে না পেরে আরশিকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।তারপর আমায় বিয়ে করে কিন্তু এনারা এখন আমাদের মেনে নিচ্ছে না।”

বৃষ্টি প্রিয়ার কথা শুনে তালি দেয়।সে বলে,
-“তুমি সত্যিই খুব ভালো গল্প বানাতে পারো।”

-“কিন্তু আমার থেকে ভালো না”(মনে মনে বলে বৃষ্টি)

বৃষ্টি আলামিন ইসলামের কাছে গিয়ে বলেন,
-“আপনি প্রিয়াকে আর সোহেল ভাইয়াকে বাড়িতে আসতে দিন।নাহলে ওরা আরো অনেক ঝামেলা করবে।”

-“কিন্তু…ওরা যদি কোন গড়বড় করে?”

-“আমি আছি।আমি ওদের দেখে নেব।কিছু করতে পারবে না ওরা।”
______________
আলামিন ইসলামের অনুমতির জন্য সোহেল আর প্রিয়া বাড়িতে থাকতে পারে।এদিকে বৃষ্টির মনে এখনো অনেক প্রশ্ন।হঠাৎ প্রিয়া বৃষ্টির রুমে চলে আসে।প্রিয়াকে দেখে বৃষ্টির মেজাজ বিগড়ে যায়।প্রিয়া মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি আমাকে নিজের শত্রু ভাবতে পারো কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই।আমার এই বাড়িতে আসার মূল কারণ অন্য একজনের উপর প্রতিশোধ নেওয়া।”

বৃষ্টি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কার উপর প্রতিশোধ নিতে চাও তুমি? সূর্যর উপর?”

-“সূর্যর সাথেও আমার কোন শত্রুতা নেই।ও আমার কাছে কেবল দাবার গুটি ছিল।ওকে দিয়ে তো চেকমেট করতে পারলাম না তাই সোহেলকে ব্যবহার করলাম।সোহেল কিন্তু তোমার উপর রেগে আছে।যেকোন সময় তোমার ক্ষতি করে দিতে পারে।তাই তুমি ওর থেকে সাবধানে থেকো।”

-“বললেনা তো যে তোমার আসল শত্রু কে।”

-“আমার আসল শত্রু হলো সেইজন যাকে তুমি এই বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছ।”

-“স্বর্ণা?? ওর সাথে তোমার কিসের শত্রুতা।”

প্রিয়া বাঁকা হেসে বলে,
-“সেটা তোমার ননদিনীকেই জিজ্ঞাসা করো।তবে তোমায় আমি সাবধান করে দিচ্ছি।আমার প্রতিশোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমি কিন্তু তোমাকে শে*ষ করে দেব।”

প্রিয়ার হুমকিতে বৃষ্টি ভয় পায়না।প্রিয়ার চোখে চোখ রেখেই বলে,
-“জানিনা স্বর্ণার সাথে তোমার কিসের শত্রুতা।তবে শত্রুতার কারণ যাই হোক আমি তোমাকে স্বর্ণার কোন ক্ষতি করতে দেব না।”

প্রিয়া আর কোন কথা না বলে চলে যায়।বৃষ্টি প্রিয়ার বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।প্রিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল তাকে যতটা খারাপ ভেবেছে ততটা খারাপ প্রিয়া নয়।কোন কারণে হয়তো সে এমন হয়ে গেছে।

কিন্তু স্বর্ণাও যে কোন অন্যায় কিছু করে নি সেটাও বৃষ্টি নিশ্চিত।তাহলে কি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে? বৃষ্টিকে আজ সব উত্তরই পেতে হবে।
___________
রাতে সূর্য অফিস থেকে ফিরে আসে।বৃষ্টি যেন চাতক পাখির মতো সূর্যের অপেক্ষায় ছিল।সূর্য আসতেই বৃষ্টি প্রস্তুত হয় তার প্রশ্নের ডালি নিয়ে।

সূর্য বুঝতে পারে বৃষ্টির মনোভাব।তাই সে বলে,
-“আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমার সব ডাউট ক্লিয়ার করে দেব।আর জাস্ট একটু অপেক্ষা করো।”

সূর্যর কথা শুনে বৃষ্টি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।সূর্য তাকে তুমি করে বলছে এটা তার হজম হয়না।

-“আপনি আমাকে তুমি করে বললেন কেন?”(বৃষ্টি)

সূর্য মুচকি হেসে বলে,
-“স্ত্রীকে তো ‘তুমি’ করেই বলা উচিৎ তাইনা?”

কথাটা বলে সূর্য চলে যায় ফ্রেশ হতে।বৃষ্টির যেন আর সময় যাচ্ছিল না।এমনিতেই সূর্যর ব্যবহারে সে অবাকের চরম শিরায় উত্তীর্ণ হয়েছে তার উপর না জানি আজ সূর্যর কাছ থেকে গোপন কথা শুনে আরো কত অবাক হতে হবে।

সূর্য ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে।বৃষ্টিও সোফায় বসে পড়ে।সূর্য বলতে শুরু করে,
-“প্রিয়া,স্বর্ণার ব্যাপারগুলো তোমার কাছে মিস্ট্রি মনে হয় তাইতো? আজ আমি এই রহস্য সম্পর্কে যতটুকু জানি সব তোমায় বলব।প্রথমে আসি স্বর্ণার কথায় আমি আগেই তোমায় বলেছিলাম স্বর্ণা হঠাৎ করে বদলে যেতে শুরু করে।আমার কেন জানি মনে হতে থাকে যে স্বর্ণার এই বদল তার নিজের ইচ্ছায় হয়নি।কেউ তাকে উস্কানি দিয়ে এমন কাজ করাচ্ছে, কিংবা বাধ্য করছে।আমি খেয়াল করি স্বর্ণা প্রতিরাতে কারো সাথে কথা বলত।কি বলত জানি না কিন্তু কথা বলার সময় অনেক কান্নাকাটি করত,আকুতি-মিনুতি করত।মনে হতো ও যেন ক্ষমা চাইছে।আমার মনে হতে থাকে ফোনেই কেউ প্রিয়াকে এই ব্যাপারে জোর করত।তাই আমি এই ব্যাপারে খোঁজ খবর নেই যে কার সাথে স্বর্ণা কথা বলতো।”

-“তারপর কি হলো? আপনি কি জানতে পেরেছিলেন কিছু?”

-“অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলাম।তবে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল স্বর্ণাকে ততদিনে বাবা এই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল।তুমি জানো স্বর্ণাকে কে এসব করতে উস্কানি দিত?”

বৃষ্টি বলে ওঠে,
-“আমি যদি খুব ভুল না করে থাকি তাহলে….প্রিয়া!”

-“হুম ঠিক বলেছ তুমি।প্রিয়াই এসব করেছে।আমার এক বন্ধু পুলিশে কাজ করে তার সাহায্যেই আমি স্বর্ণার কল রেকর্ড বের করে প্রিয়ার সব ডিটেইলস বের করি।তখন থেকেই আমি প্রিয়ার খোঁজ করতে থাকি শুধু এটা জানার জন্য যে কেন সে আমার বোনটার সাথে এমন করল, আর আমার বোনই বা কেন ওর কথায় উঠবস করছিল।কিন্তু এইক্ষেত্রেও দেরি হয়ে গিয়েছিল প্রিয়া ততদিনে বাইরে কোথাও চলে গিয়েছিল কিন্তু আমি ওর খোঁজ চালিয়ে যাই।এভাবে দুই বছর চলে যায় আজ থেকে পাঁচমাস আগে আমি বইমেলায় প্রিয়াকে দেখতে পাই।আমার বন্ধুর থেকে প্রিয়ার ছবি পেয়েছিলাম তাই খুব সহজেই ওকে চিনতে পারি।এরপর থেকে প্রিয়ার পিছু নিতে থাকি এবং একসময় তাকে মিথ্যা প্রেমের জালে ফাসিয়ে নেই।আমি অপেক্ষায় ছিলাম কবে প্রিয়ার থেকে সব জানতে পারব।কিন্তু তার আগেই তোমার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে গেল।”

বৃষ্টির কাছে এতক্ষণে সবকিছু পরিস্কার হয়।কিন্তু এখন সূর্যর মতো তার মনেও একই প্রশ্ন যে, প্রিয়া স্বর্ণার সাথে এমনটা কেন করল।তাই সে সূর্যকে বলে,
-“আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আমরা সব জানতে পারব।আমার মনে হয় স্বর্ণা সবকিছু জানে।ওর থেকেই আমাদের সবকিছু জানতে হবে।”

-“তোমাকে একটা কথা বলো বৃষ্টি? তুমি আমার উপর রাগ করে নেই তো? এতদিন আমি শুধু তোমার সাথে নাটক করেছি কারণ প্রিয়াকে আমার দরকার ছিল।তোমাকেও কিছু বলতে পারিনি তুমি কি রিয়্যাক্ট করো সেটা ভেবে।তাই তোমার সাথে এতদিন এমন ব্যবহার করেছি।কিন্তু তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে না নেওয়ার কোন কারণ নেই।”

সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টি লজ্জা পায়।বৃষ্টি বলে,
-“হয়েছে আর তেল মা*রতে হবে না।আপনি এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।আমিও ঘুমাতে যাচ্ছি।”

-“কোথায় ঘুমাবে তুমি?”

-“বিছানায়।”

-“আমি তোমার সাথে ঘুমাতে পারি।”

-“ইয়ে…মানে পারেন।”

-“আচ্ছা থাক আজ নাহয় আমি আলাদাই থাকলাম।তুমি একটু স্বাভাবিক হয়ে নাও।আমাদের সম্পর্ক কিন্তু এখন স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতোই হওয়া দরকার।”

বৃষ্টি বিছানায় শুয়ে পড়ে।আর ভাবতে থাকে,
-“সূর্য সত্যিই পাকা খেলোয়াড়।কিন্তু আমি কি কখনো মন থেকে ওনাকে মেনে নিতে পারব? দাদি বলত বিবাহবন্ধন হলো একটি পবিত্র বন্ধন।এই বন্ধনে জড়িয়ে গেলে নাকি মায়া ভালোবাসা আপনা-আপনি হয়ে যায়।তাহলে কি আমরাও এরকম ভাবনায় জড়িয়ে পড়ব!”

কথাটা ভাবতেই বৃষ্টির সারা গায়ে রোমাঞ্চকর শিহরণ বয়স যায়।বৃষ্টি এসব ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রিয়া আর স্বর্ণার কথা ভাবতে থাকে।তাদের ব্যাপারে জেনে সব কিছু ঠিক করতেই হবে।
(চলবে)

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৬
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি স্বর্ণার মুখোমুখি বসে আসে।আজ সকাল সকাল সে স্বর্ণার কাছে এসেছে তার কাছ থেকে সকল সত্য জানার জন্য।

স্বর্ণা বৃষ্টিকে বলে,
-“কি এমন জানতে চাও তুমি বৃষ্টি ভাবি যার কারণে এত সকাল সকাল আমার কাছে এসেছ।”

-“তুমি কি প্রিয়াকে চেন?”

-“না চিনি না।”

-“সত্য করে বলো।আমার থেকে কিছু লুকাবে না।”

-“আমি সত্যিই প্রিয়া নামের মেয়েটাকে চিনি না তবে তার গলাটা অনেক চেনা চেনা লাগে।”

-“প্রিয়াই সেই মেয়ে যে তোমাকে ফোন করত।যার উস্কানিতে তুমি নিজের ক্ষ*তি করেছ।”

-“কি! প্রিয়া সিরাজের বোন!”

স্বর্ণার কথাটা শুনে বৃষ্টি খুবই অবাক হয়।সূর্য এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।সে ভেতরে এসে স্বর্ণাকে প্রশ্ন করে,
-“সিরাজ কে? আর প্রিয়ার সাথে তোর কিসের শত্রুতা? কেন প্রিয়া তোকে নিজের ক্ষতি করতে উস্কানি দিল? আর তুইও বা কেন ওর কথায় নিজের ক্ষতি করলি?”

স্বর্ণা তার অতীতের ভয়াবহ স্মৃতিত কথা মনে করে।এসব ভাবতেই তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।স্বর্ণা অস্ফুটস্বরে বলে,
-“সব আমার দো*ষ।আমি সিরাজের সাথে অন্যায় করেছি।আমার জন্যই সিরাজ…সিরাজের সাথে যা হয়েছে সবকিছুর জন্য আমি দায়ী।”

সূর্য হতবিহ্বল হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছিল বল আমাদের।”

স্বর্ণা বলতে থাকে তার অতীতের ঘটনাগুলো।

~~~~~~অতীত সমাচার~~~~~~~~~
স্বর্ণা প্রতিদিনের মতোই লাইব্রেরিতে এসে উপস্থিত হয়েছে।উদ্দ্যেশ্য একটাই সেটা হলো তার মনের মানুষের থেকে চিঠি পাওয়া।স্বর্ণা তখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।পড়াশোনায় সে কখনোই সেরকম মনযোগী ছিলনা।ভার্সিটিতে এসে বেশিরভাগ সময় লাইব্রেরিতেই পড়ে থাকত।আর এই লাইব্রেরিতেই স্বর্ণার জীবনে প্রেমের হাওয়া লাগে।

প্রতিদিন লাইব্রেরির বইয়ের ভাজে স্বর্ণা একটি করে চিঠি পেত।যেখানে কেউ তার মনের মাধুরি মিশিয়ে স্বর্ণাকে নিজের মনের কথা জানাতো।স্বর্ণাও সেই চিঠিগুলো খুব মনযোগ দিয়ে পড়ত এবং নিজের অজান্তেই চিঠিগুলোর প্রেমে পড়ে যায় সে।প্রতিদিন লাইব্রেরিতে এসে স্বর্ণা চিঠির জন্যই অপেক্ষা করত।একদিন চিঠি না পেলে সে উদাস হয়ে যেত।

ধীরে ধীরে চিঠি প্রেরক মানুষটার প্রতি স্বর্ণার মনে ভালো লাগার জন্ম নেয়।যা একসময় ভালোবাসায় পরিবর্তিত হয়।

স্বর্ণা তার বন্ধুবান্ধবদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করে।তখন তারা সবাই স্বর্ণাকে পরামর্শ দেয়,
-“তুই খোঁজ নিয়ে দেখ কে তোকে এভাবে চিঠি দেয়।তুই বরং একটা কাজ কর এবার তুইও একটা লিখি লিখে লোকটির পরিচয় জানতে চা।”

স্বর্ণার এই বুদ্ধিটা খুব ভালো লাগে।তাই স্বর্ণা তার বন্ধুদের কথা অনুযায়ীই কাজ করে।

এরপর টানা দুইদিন স্বর্ণার কাছে কোন চিঠি আসে না।স্বর্ণা অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে যায়।একসময় তার মনে হয় স্বর্ণা পরিচয় জানতে চেয়েছে বলেই হয়তো চিঠি প্রেরক চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।স্বর্ণার মন বিষন্ন হয়ে যায়।

তৃতীয় দিনের দিন স্বর্ণা লাইব্রেরিতে গিয়ে বইটা খুলে তার কাঙখিত চিঠি পেয়ে যায়।স্বর্ণা হন্তদন্ত হয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে।চিঠিটায় খুব সুন্দরভাবে লেখা,
“আমাকে জানার খুব আগ্রহ না আপনার স্বর্ণালী পরি।তাহলে শুনুন আমার পরিচয়:-আমি হলাম সেই হাওয়া যে আপনার মনে দোলা দিয়ে যেতে চাই, আমি বলাম সেই পাপড়ি যে ফুলগুলের মতো আপনাকে আগলে রাখতে চাই, আমি হলাম সেই পানি যে আপনার তৃষ্ণা হতে চাই।সর্বোপরি আমি আপনার ভালোবাসা হতে চাই।দেবেন তো আমায় সেই সুযোগ?
ইতি,
আপনার প্রেমপ্রার্থী রাজ।”

চিঠিটা পড়ে স্বর্ণার মনে অনুভূতিগুলো আরো জোরে উঁকি দিতে শুরু করে।স্বর্ণার খুব করে চিঠির প্রেরককে দেখতে ইচ্ছে করে।

তাই সে তার বান্ধবীদের রাজ নামক ছেলেটার কথা জানায়।স্বর্ণার এক বান্ধবী মেঘলা বলে,
-“আমাদের ভার্সিটিতে রাজ তো শুধু একজনই আছে।ঐ যে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফেমাস গিটারিস্ট আছে না রাজ চৌধুরী।একদম চকলেট বয়, যেমন সুন্দর গানের গলা তেমনি সুন্দর দেখতে।সেই নিশ্চয়ই তোকে চিঠিগুলো দিচ্ছে।”

স্বর্ণা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
-“কিন্তু রাজ তো অনেক ফেমাস সে আমার মতো মেয়েকে কেন পছন্দ করবে? আর যদিওবা পছন্দ করেই তাহলে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি দিচ্ছিল কেন? সামনে এসেও তো বলতে পারতো নিজের ভালো লাগার কথা।”

মেঘলা কিছুটা ভেবে বলে,
-“হয়তো সরাসরি তোকে বলতে সংকোচ হচ্ছিল..তাই।যাইহোক এসব ভেবে আর লাভ নেই।যদি ছেলেটা এই ভার্সিটির হয় তাহলে সে রাজই হবে।এই ভার্সিটিতে রাজ নামে শুধু ঐ একজনই আছে।তাই যদি ছেলেটা এই ভার্সিটির হয় তাহলে রাজ চৌধুরীই হবে।”

স্বর্ণা মেঘলার বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।তাহলে কি রাজ চৌধুরী নামের ছেলেটাই তাকে পছন্দ করে? স্বর্ণা ছেলেটাকে কয়েকবার দেখেছে।যতবারই দেখেছে রাজ তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে এবং তার মুখে ছিল মিষ্টি হাসি।

তাই মেঘলার বলার কথাটা সত্য হলেও হতে পারে।স্বর্ণার একবার মনে হলো রাজ চৌধুরীর সাথে কথা বলা দরকার।কিন্তু যদি তার ধারণা ভুল হয় এই কারণেই সে সাহস পাচ্ছে না রাজ চৌধুরীর সামনে যাওয়ার।

এদিকে ভার্সিটির মাঝে রাজের বন্ধুরা খুব সুন্দরভাবে ডেকোরেট করছিল।উদ্দ্যেশ্য একটাই আজ রাজ তার পছন্দের মেয়েটিকে নিজের মনের কথা জানাবে।ভার্সিটিতে একটি মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে রাজ।

লুকিয়ে লুকিয়ে কতবার মেয়েটিকে দেখেছে সে।আজ প্রপোজ করার সাহস জুগিয়েছে তার বন্ধুরা।রাজ তার বুকপকেট থেকে স্বর্ণার একটা ছবি বের করে বলে,
-“জানি না তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে না।যদি নাও করো তার পরেও আমি তোমাকে ভালোবাসব।”

স্বর্ণা আনমনে হাটছিল আর রাজের কথাই ভাবছিল।তন্মধ্যে রাজ হাতে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে এসে হাটু গেড়ে বসে তার সামনে।স্বর্ণা অবাক হয়ে রাজের দিকে তাকায়।রাজ বুকে সাহসের সঞ্চার করে একগাল হেসে বলে,
-“I Love You Sorna. I love you a lot. Please accept my proposal. I need your love”(আমি তোমাকে ভালোবাসি স্বর্ণা।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।দয়া করে আমার প্রস্তাবটা মেনে নাও।আমার তোমার ভালোবাসার প্রয়োজন।)

স্বর্ণা কি করবে বা বলবে সেটা বুঝতে পারছিল না।স্বর্ণা এবার শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় যে রাজই তাকে চিঠিগুলো দিত।তাই আর বেশি না ভেবে রাজের হাত থেকে ফুলটি নিয়ে বলে,
-“করলাম আপনার ভালোবাসা গ্রহণ।”

রাজ মুচকি হেসে সবার সামনে স্বর্ণাকে জড়িয়ে ধরে।স্বর্ণা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল সিরাজ সিদ্দিকী।কষ্টে দুঃখে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসছিল।স্বর্ণাকে কতদিন থেকে সে ভালোবাসে।সেই তো স্বর্ণাকে চিঠিগুলো দিত।কিন্তু আজ সিরাজ ভেবে স্বর্ণা তাকে ভালোবাসেনা।নিজের মনের দুঃখ সব সে ফোনকলে নিজের বোন প্রিয়ার সাথে শেয়ার করে।সব শুনে প্রিয়া বলে,
-“তুই ঐ মেয়েটাকে ভুলে যা ভাইয়া।”

সিরাজ একবুক কষ্ট নিয়ে বলে,
-“আমি স্বর্ণাকে খুব ভালোবাসি রে।ওর যায়গা আর কাউকে দিতে পারব না।”

ভুলটা অবশ্য এখানে সিরাজেরই ছিল।সিরাজকে বেশিরভাগ মানুষ সিরাজ নামেই চেনে।শুধু তার কিছু কাছের বন্ধুবান্ধব তাকে রাজ নামে ডাকে।সিরাজ একটু বোকাসোকা,ইন্ট্রোভার্ট টাইপের ছেলে।সে কারো সাথে সেভাবে মিশতে পারে না,কথা বলতে পারে না।তাই স্বর্ণার প্রতি তার ভালোলাগার কথাগুলোও নিজের মুখে বলতে পারেনি।চিঠি প্রদানের মাধ্যমে নিজের অনুভূতিগুলো জানিয়েছে।

এভাবে দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায়।সিরাজের অবস্থা মানসিকভাবে আরো খারাপ হয়ে যায়।স্বর্ণাকে না পাওয়ার কষ্ট ভোলার জন্য সে নেশাকে আপন করে নেয়।সারাদিন বা*রে পড়ে থাকত।তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।তার এইসব পরিবর্তনের কথা জানতে পেরে প্রিয়া খুব কষ্ট পায়, স্বর্ণার উপর তার অনেক রাগও হয়।

অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে প্রিয়া,তারপর ভাই আর মাকে নিয়েই তার সংসার।সিরাজ খুবই দায়িত্ববান ছেলে।মা-বোনকে অনেক ভালো ভাবে আগলে রেখেছে সে।তার এমন পরিবর্তন তাই প্রিয়া মেনে নিতে পারে না।

এদিকে স্বর্ণা কথায় কথায় রাজের সাথে চিঠির ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলে।স্বর্ণার মুখে চিঠির কথা শুনে রাজ অবাক হয়ে বলে,
-“কিসের চিঠির কথা বলছ তুমি? আমি তো তোমাকে কখনো কোন চিঠি দেইনি।”

রাজের কথাটা শুনে যে স্বর্ণার মাথায় বিনা মেঘে বর্জ্যপাত হয়।স্বর্ণা বুঝতে পারে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে।

আসল রাজকে খোঁজার জন্য সে হন্তদন্ত হয়ে লাইব্রেরির দিকে ছুটতে থাকে।স্বর্ণা তখন রাজের সাথে লাইব্রেরির বিপরীত রোর্ডের একটি পার্কে ছিল।লাইব্রেরির উদ্দ্যেশ্যে যাওয়ার সময় স্বর্ণা বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পারাপার করছিল তখন হঠাৎ একটি গাড়ি তার দিকে এগিয়ে আসে।মুহূর্তেই সিরাজ ছুটে এসে স্বর্ণাকে ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কিন্তু সে নিজে গাড়ি*চা*পা পড়ে।স্বর্ণা সেই মুহুর্তে অজ্ঞান হয়ে যায়।ঘটনাস্থলেই সিরাজের মৃত্যু হয়।স্বর্ণা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারে না।

সিরাজের মৃত্যুর খবর শুনে তার মা হার্ট অ্যাটাক করে এবং মারা যান।নিজের মা ভাইকে এভাবে হারিয়ে প্রিয়া একেবারে দিশেহারা হয়ে যায়।

তখনই প্রিয়া প্রতিজ্ঞা করে স্বর্ণার উপর সে প্রতি*শো*ধ নেবেই।
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে