#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৩
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টির কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়।বৃষ্টির পাশে স্বর্ণাকে দেখে সবাই বেশ খানিকটা অবাক হয়।স্বর্ণার তো ভয় লাগছিল সবাইকে এভাবে দেখে।বৃষ্টি স্বর্ণার হাত শক্ত করে ধরে তাকে মনোবল দেয়।
আলামিন ইসলাম স্বর্ণাকে দেখে যে খুশি হননি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।সালমা আক্তার নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেন না।এতদিন পর নিজের মেয়েকে বাড়িতে আসতে দেখে ছুটে আসেন স্বর্ণার কাছে।ছুটে এসে স্বর্ণাকে নিজের বুকে টেনে নেন।এতদিন পর নিজের মায়ের বুকে মাথা রেখে অদ্ভুত রকমের তৃপ্তি অনুভব করে স্বর্ণা।সূর্যও এগিয়ে এসে স্বর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরশির সাথেও স্বর্ণা খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।সেও এতদিন পর স্বর্ণাকে দেখে খুব খুশি হয়।শুধুমাত্র একজন মানুষ যেন স্বর্ণার আগমনে খুশি নন।
আলামিন ইসলাম রেগে নিজের রুমের দিকে হাটা নেন তখন বৃষ্টি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আলামিন ইসলাম বলেন,
-“আমাকে আটকিও না বৃষ্টি।আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।”
-“স্বর্ণার থেকে এরকম মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন আপনি? যেই মানুষটা আমার বাবার মৃত্যুর পর আমাকে এভাবে আগলে রেখেছে, নিজের মেয়ের প্রতি সে এতো উদাসীন কেন?”
বৃষ্টির মুখে এরকম কথা শুনে আলামিন ইসলাম বলেন,
-“কারণ ওকে আমি মেয়ে হিসেবে মানি না।যেই মেয়ে আমার সম্মানের কথা ভাবে নি তার কথা আমি কেন ভাবব?”
বৃষ্টি বুঝতে পারে আলামিন ইসলাম খুব রেগে আছে।তার রাগ ভাঙানো এত সহজ হবে না।তাই বৃষ্টি স্বর্ণাকে বলে,
-“তোমাকেই কিন্তু সব ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে হবে স্বর্ণা।কারণ ভুলটা তোমারই ছিল।তুমি সবাইকে বাধ্য করেছ তোমাকে পর করে দিতে।”
বৃষ্টির এহেন কথা শুনে স্বর্ণা মাথা নিচু করে।সে নিজেও জানে সব ভুল তার।কিন্তু স্বর্ণাই বা কি করতে পারত? সে তো নিরুপায় ছিল।স্বর্ণাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে বৃষ্টি তাকে ধমক দিয়ে বলে,
-“এভাবে চুপ থেকোনা স্বর্ণা।আজ তোমাকে মুখ খুলতেই হবে।এতবছর নিজের মধ্যে লুকানো কথাগুলো সবাইকে আজ বলতেই হবে।আমি জানি এসব কথা লুকিয়ে রেখে তুমিও মনে মনে অনেক কষ্ট লালন করেছ।কিন্তু তুমি একবার ভেবে দেখো এখানে সবাই তোমার আপনজন।তাদের থেকে কথা লুকিয়ে লাভ কি? তুমি নিজের কষ্টটা সবার সাথে ভাগ করে নাও।”
স্বর্ণা এবার ডুকরে কেঁদে দেয়।তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আলামিন ইসলামও আজ আর নিজের ইগো বজায় রাখতে পারেন না।ছুটে যান নিজের আদরের মেয়ের কাছে।ছোট থেকে মেয়েকে কত আদরে মানুষ করেছেন তিনি,তার কোন আবদারই অপূর্ণ রাখেন নি।সেই মেয়ের চোখের জল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
-“তুই কাঁদিস না স্বর্ণা।এই দেখ আমি তোর বাবা তোর পাশেই আছি।তুই বল মা তোর কি সমস্যা হয়েছিল।”
-“আমি…আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি বাবা।আমার জন্য একজনের জীবন শেষ হয়ে গেছে।আমি নিজেকে কোনদিন সামলাতে পারব না।আমি শাস্তির যোগ্য কেবল।তোমরা আমাকে শাস্তি দাও।আমি সব শাস্তি মাতা পেতে নেব।”
আলামিন ইসলাম স্বর্ণাকে শক্ত করে আগলে ধরেন।নিজের মেয়েকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখে বাবা হিসেবে আজ নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হচ্ছে তার।
স্বর্ণা বলতে থাকে,
-“আমি সত্যি বলছি আব্বু আমি নিজে থেকে বিপথে চলে যাইনি।আমার মানসিক অবস্থা একসময় এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল, অপরাধবোধ,অনুশোচনা আমাকে এই পথে নিয়ে গিয়েছিল।আর যেই ছেলেটাকে দেখেছিলে আমার রুমে সেও আমার সাথে জোর জবরদস্তি করেছিল।আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম।কি করবো বলো নিজের জীবনের প্রতি খুব উদাসীন হয়ে গিয়েছিলাম।নিজেকেই নিজে ঘৃণা করতাম।আ*ত্ম*হ*ত্যা মহাপাপ জন্য আমি শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি।নাহলে….”
-“কি এমন হয়েছিল যে তুই নিজেকে এতটা ঘৃণা করতে শুরু করেছিস? কিসের অপরাধবোধ ছিল তোর?”
স্বর্ণা নিশ্চুপ থাকে।সূর্য হঠাৎ বলে,
-“তুমি ওকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না আব্বু।আমি চাইনা ওর পুরানো ক্ষতটা আবার তাজা হয়ে উঠুক।”
-“তুই কি এই বিষয়ে কিছু জানিস? তাহলে বল আমাদের।”
-“হুম জানি।সঠিক সময় হলে স্বর্ণা নিজেই তোমাদের সব বলবে।এখন ওকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।কতদিন পর আমার বোনটা আবার বাড়িতে ফিরল।”
-“তুই কিভাবে জানিস ভাইয়া?”(স্বর্ণা)
-“সব বলব।আগে তুই যা আরাম কর।আম্মু তুমি ওকে ওর রুমে নিয়ে যাও।বৃষ্টিকে সকালে ঐ রুমটা পরিস্কার করতে দেখেই আমি সব বুঝে গিয়েছিলাম।”
বৃষ্টি আরচোখে সূর্যর দিকে তাকায়।সূর্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকায় তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।সূর্য মুচকি হাসে, বৃষ্টি চোখ সরিয়ে নেয়।
________
স্বর্ণা চুপচাপ তার রুমে বসে ছিল।বৃষ্টি তার রুমে আসে সাথে আরশিও আসে।স্বর্ণা আরশিকে দেখে বলে,
-“কেমন আছ ভাবি? সোহেল ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না।”
আরশি মলিন হেসে বলে,
-“তোমার ভাইয়ার খবর আমি জানি না।আর আমি এখন তোমার ভাবিও নই।তুমি হয়তো জানো না আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
-“এই কয়বছরে কত কি বদলে গেছে।আসলেই মানুষের জীবনে কখন কি হয় বলা যায়না।”
আরশি বলে,
-“তোমার সাথে দেখা করার জন্যই এই বাড়িতে এসেছি এখন আমি যাই।”
বৃষ্টি আরশিকে বলে,
-“লাঞ্চ করে নাহয় যেও।এখন আমরা সবাই মিলে একটু গল্পগুজব করি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।আর একটা কথা বৃষ্টি তুমি একটু তোমার শ্বশুরকে বলে দিও তিনি যেন সোহেলকে বাড়িতে ফিরে আসতে বলে।আমার জন্য শুধু শুধু কেন এই বাড়ির ছেলে বাইরে থাকবে।যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।স্বর্ণাও এখন ফিরে এসেছে।সোহেল ফিরে আসলেই তোমাদের পরিবারটা পরিপূর্ণ হবে।”
-“সোহেল একদিন ঠিকই নিজের ভুল বুঝতে পারবে দেখো।”
সালমা আক্তারের কথায় আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“ও নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আমার জীবনে আমি আর ওর জীবনে কখনো ফিরবো না।”
বৃষ্টি বুঝতে পারে এসব কথা আরশির ভালো লাগছে না।তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
-“স্বর্ণা তুমি নাকি পড়াশোনা সম্পূর্ণ করোনি।এতদিন কি করেছ তাহলে?”
স্বর্ণার মুখটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করে,
-“নিজের প্রতি অবহেলা আর অবজ্ঞায় আমি নিজের লাইফটাই শে*ষ করে দিয়েছি।এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি অনেকদিন ফুটপাতে কাটাই।এরপর আমি বুঝতে পারি সমাজে টিকে থাকতে হলে আমায় প্রতিবাদী হতে হবে।তাই আমি প্রতিবাদি রূপ ধারণ করি।আগে থেকে মা*রপিট জানতাম।তবে এরপর আমি পেপার বিক্রির কাজ করতে থাকি।সেটা দিয়েই কোনরকম চলি।”
স্বর্ণার এতো দুঃখে ভড়া জীবনের গল্প শুনে সবাই খুব কষ্ট পায়।সালমা আক্তার বলতে থাকেন,
-“এই কয়েকবছর তুই এত কষ্টে থাকলি অথচ আমি…মা হিসেবে সত্যিই আমি ব্যর্থ।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস।”
-“না আম্মু তুমি এসব কি বলছ? তোমার কোন দো*ষ নেই সবকিছু তো আমার ভাগ্য।আমি নিজেই যেটা বেছে নিয়েছি।”
-“তোর কিসের এত অপরাধবোধ ছিল বলনা রে স্বর্ণা।”
-“আম্মু আসলে…”
হঠাৎ সোহেলের গলার আওয়াজ সবার কানে আসে।সালমা আক্তার তো বুঝতেই পারেন না সোহেল কেন আবার ফিরে এলো।
আরশিও সোহেলের কন্ঠ শুনে অস্বস্তিবোধ করে।বৃষ্টি ইশারা করে তাকে সামলাতে পারে।আরশিও বৃষ্টিকে ইশারা করে বলে সে ঠিক আছে।
বৃষ্টি বলে,
-“চলুন তো নিচে গিয়ে দেখি কি হয়েছে।”
সবাই নিচে চলে যায়।সবাইকে দেখে সোহেল খুশি হয়।কিন্তু আরশিকে দেখা মাত্রই সে রেগে যায়।স্বর্ণাকে দেখে বলে,
-“তুই এতদিন পর তাহলে ফিরে এলি।যাইহোক তোর নতুন ভাবির সাথে পরিচয় হয়ে নে।”
সোহেলের কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই খুবই অবাক হয়।আরশি তো ভাবতেই পারছে না কিছু।ডিভোর্সের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সোহেল যে এভাবে আবার বিয়ে করে নেবে সেটা সে ভাবতেই পারেনি।
সোহেলের নতুন বউও বাড়িতে প্রবেশ করে।যাকে দেখে বৃষ্টি আরো বেশি অবাক হয়ে যায়।
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৪(বোনাস পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সোহেলের নতুন বউকে দেখে অবাক হয়ে যায়।কারণ সে আর কেউ নয় প্রিয়া!
বৃষ্টি অস্ফুটস্বরে বলে,
-“প্রিয়া তুমি…তুমি সোহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছ!”
প্রিয়া হাসিমুখে বলে,
-“জ্বি, এখন থেকে আমি তোমার বড় জা।তুমি তো আমাকে নিজের স্বামীর থেকে দূর করার জন্য পরিকল্পনা করেই সব করেছ।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।”
প্রিয়ার কথাটা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে যায়।সে প্রিয়াকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
-“এসব কি বাজে কথা বলছ?”
সোহেল বলে,
-“ও তো ঠিকই বলছে তুমি সব জেনেও কেন না জানার ভান করছো? তুমি তো সব জানতে সবকিছু তো তোমার পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে।”
সালমা আক্তার বৃষ্টির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলেন,
-“এই মেয়েটা কে বৃষ্টি? আর সোহেল যা বলছে তা কি সত্যি?”
-“না মা আপনি বিশ্বাস করুন ওনারা যা বলছেন তা মিথ্যা।”
প্রিয়া গগণবিহারী হাসি হেসে বলে,
-“তুমি তো সত্যি খুব ভালো অভিনয় করতে পারো।তোমার বর কি জানে তোমার এরকম অভিনয় দক্ষতার কথা।”
আরশি বৃষ্টিকে বলে,
-“আমি যা শুনছি তা কি ঠিক বৃষ্টি?”
-“না বিশ্বাস করো এসব মিথ্যা।”
বৃষ্টির কথাটা শেষ হওয়া মাত্র তার গালে থা*প্পড় এসে পড়ে।থা*প্পড়টা আর কেউ নয় প্রিয়া মে*রেছে।বৃষ্টি রক্তিমচোখে তার দিকে তাকায়।
আরশি প্রিয়াকে স*জোরে একটা থা*প্পড় মা*রে যাতে প্রিয়া দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে।আরশিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সে খুব রেগে গেছে।আরশি প্রিয়াকে বলে,
-“কোন সাহসে তুই বৃষ্টির গায়ে হাত তুললি? শ*য়তান মেয়ে, অন্যের সংসার ন*ষ্ট করাই তোদের কাজ।তোদের মতো মেয়েকে তো ঝা*টাপেটা করা উচিৎ।তুই কি ভাবলি বৃষ্টির নামে যা খুশি বলবি আর আমরা বিশ্বাস করে নেব।”
-“আমার কথা বিশ্বাস না করলে কিন্তু নিজের প্রাক্তন স্বামীর কথা তো বিশ্বাস করবেন।”
-“এই লোকটাকে বিশ্বাস করব আমি? হাহ, যে নিজের ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে,যার নিজের চরিত্রই ভালো না সে আবার আমাকে বৃষ্টির ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট দেবে।বৃষ্টিকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।ও যে এমন একটা কাজ করবেনা সেটা আমি জানি।”
সোহেল প্রিয়াকে টেনে তোলে।তারপর আরশিকে বলে,
-“তোমার সাহস কি করে হলো আমার স্ত্রীকে ধা*ক্কা দেওয়ার? আর তুমি এই বাড়িতে কি করছ? সেদিন তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলে যে আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও,আমার জীবনে আর ফিরবে না।এখন আবার নির্লজ্জের মতো আমার বাড়িতে আসতে লজ্জা করল না?”
-“আমি এই বাড়িতে আসতে চায়নি।স্বর্ণার সাথে দেখা করার জন্যই শুধুমাত্র এসেছি।এসে যে এমন কিছু দেখব ভাবিও নি।তুমি খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছ।নিজের নতুন বউকে নিয়ে সুন্দর করে সংসার করো।”
কথাগুলো বেশ স্বাভাবিকভাবে বললেও আরশির অন্তরের ব্যাথাটা সে লুকিয়েই রেখেছিল অনেক কষ্টে।যত যাই হোক, আরশি তো সোহেলকে ভালোবাসত।সোহেলকে ভালোবাসার বিনিময়ে যদিওবা কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায়নি সে কিন্তু তাই বলে, ডিভোর্সের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই যে সোহেল আবার বিয়ে করে ফেলবে এটা সে কোনভাবেই ভাবতে পারেনি।
প্রিয়া উঠে দাড়িয়ে আরশিকে বলে,
-“তুমি এখন ভালোয় ভালোয় এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।নাহলে আমি কিন্তু থা*প্পড়ের প্রতিশোধটা নেব।”
আরশি এত অপমান আর সহ্য করতে পারেনা।সালমা আক্তার বলেন,
-“এই বাড়িতে কে থাকবে আর কে থাকবেনা সেটা নিশ্চয়ই তুমি ঠিক করে দেবে না? তুমি এই বাড়িতে থাকবে কি না সেটারই কোন ঠিক নেই।আগে আমার স্বামীকে আসতে দাও।তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন তোমাদের সাথে কি হবে।”
সালমা আক্তারের কথাটা শুনে সোহেল আর প্রিয়া দুজনের মুখই চুপসে যায়।সূর্য তখনই বাড়িতে চলে আসে আর এভাবে প্রিয়াকে বউবেশে তার ভাইয়ের পাশে দেখে চমকে যায়।
সূর্যকে দেখে প্রিয়া মুচকি হেসে বলে,
-“হ্যালো ডিয়ার সূর্য।দেখো তুমি তো আমায় আর বউ করে আনলাম না তাই তোমার বড় ভাইয়ের বউ হয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করলাম।এখন আমি তোমার ভাবি।”
প্রিয়ার কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে সূর্য নিজের রুমের দিকে যায়।বৃষ্টিও যায় তার পিছুপিছু।আরশিও আর এসব সহ্য হচ্ছিল না তাই সেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
_____________
সূর্য বৃষ্টিকে তার পিছু পিছু আসতে দেখে পিছনে ফিরে বিরক্তির সুরে বলে,
-“আমার মন মেজাজ এমনিও ভালো নেই।এখন আপনি প্লিজ আর প্রশ্ন করে আমায় আর জ্বা*লাবেন না।”
বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-“নিজেকে গার্লফ্রেন্ডকে ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছেন? দো*ষ তো আপনারই আপনি তো প্রিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।তাই প্রিয়া এরকম একটা কাজ করে প্রতিশোধ নিল।”
-“আপনি নিজেকে কি খুব স্মার্ট মনে করেন বৃষ্টি? আপনি স্মার্ট নন ওভারস্মার্ট।আর আপনার এই ওভারস্মার্টনেসের কারণেই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না।”
-“সহজ করে বুঝিয়ে বলুন তাহলেই বুঝতে পারব।”
-“আমি সত্যি এখন খুব ক্লান্ত পরে কথা বলি।”
কথাটা বলে সূর্য নিজের রুমে চলে যায়।বৃষ্টি দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে, তাহলে কি সে এতদিন ধরে যা ভেবে আসলো সব মিথ্যা? সব সমীকরণ খালি বদলে যাচ্ছে।বৃষ্টির তো এখন পুরো ব্যাপারটা অংকের থেকেও কঠিন মনে হচ্ছে।সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা।সবার মধ্যেই কত রহস্য।
সূর্যকে কে তো সে প্রথম থেকেই বোকাসোকা,অর্কমার ঢেকি মনে করেছে।এখন তো তার মনে হয় সূর্য অনেক বড় খেলোয়াড়।
___________
প্রিয়া আর সোহেল ড্রয়িংরুমে বসে ছিল।সোহেল সমানে পায়চারি করছিল।প্রিয়া সোহেলকে বলে,
-“আপনার বাবা এসে কি আমাদের সব পরিকল্পনা ন*ষ্ট করে দেবে নাকি?”
-“তুমি কোন টেনশন করো না।সবকিছু আমাদের প্ল্যান অনুযায়ীই হবে।ঐ বৃষ্টিকে শায়েস্তা করার জন্যই তো আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।ওর জন্যই আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে, আমি জানি ও বাবাকে উস্কানি দিয়েছে এই ব্যাপারে।আর তোমাকেও তো সূর্যর থেকে ঐ আলাদা করেছে।আমাদের দুজনের লক্ষ্যই এক যা হলো বৃষ্টির উপর প্রতিশোধ নেওয়া।”
প্রিয়া সোহেলের কথা শুনে হাসে।কারণ সোহেল তো আর জানে না প্রিয়ার আসল উদ্দ্যেশ্য অন্যকিছু।আর প্রিয়ার এই বাড়িতে আসার মূল্য উদ্দ্যেশ্য তো বৃষ্টি নয়, ইন ফ্যাক্ট বৃষ্টির সাথে তার এমন কোন শত্রুতাও নেই যার জন্য সে প্রতিশোধ নিতে চাইবে।তার আসল উদ্দ্যেশ্য তো অন্যকিছু।অন্য একজনকে শায়েস্তা দেওয়ার জন্যই তো সে এই বাড়িতে এসেছে।
আলামিন ইসলাম বাজার সেরে বাড়িতে ফিরে আসেন।আজ অনেকদিন পর স্বর্ণা ফিরে এসেছে জন্যই তিনি স্বর্ণার পছন্দের সব কিছু এনেছেন বাজার থেকে।বাড়িতে এসে যে এমন কিছু দেখতে হবে সেটা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি।
ড্রয়িংরুমে সোহেলকে দেখে তিনি যতটা রেগে দেন তার রাগ আরো বেড়ে যায় সোহেলের সাথে বধূবেশে একটি মেয়েকে দেখে।
সোহেল প্রিয়াকে নিয়ে আলামিন ইসলামের সামনে এসে বলেন,
-“আব্বু ও আমার স্ত্রী প্রিয়া।আমরা আজই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।প্রিয়া তুমি আব্বুকে সালাম করো।”
প্রিয়া সালাম করতে চাইলে আলামিন ইসলাম সরে দাড়ান।তিনি সোহেলকে বলেন,
-“তোমার সাহস কিভাবে হলো এই বাড়িতে ফিরে আসার? তাও আবার নতুন বউ নিয়ে ফিরে এলে।আমি তোমাকে বলেছিলাম নিজেকে শুধরে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে আর তুমিতো দেখছি নিজেকে আরো বিগড়ে ফিরে এসেছ।তোমার কোন যায়গা হবে না এই বাড়িতে।তুমি এক্ষুনি নিজের বউকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।”
-“আব্বু তুমি এমন করতে পারো না।আমি তোমার ছেলে, আর ও আমার বিবাহিতা স্ত্রী আমাদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই বাড়িতে থাকার।”
-“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ বাড়িটা আমার নামে।আমার বাড়িতে কাকে রাখব না রাখব সেটাও আমার সিদ্ধান্ত।ভালোয় ভালোয় বলছি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।নাহলে…..”
-“নাহলে কি করবেন? বের করে দেবেন আমাদের? ভুলে যাবেন না আমি আপনার পুত্রবধূ।”(প্রিয়া)
-“তোমাকে কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তুমি কেমন মেয়ে।আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা ভালো চাইলে সসম্মানে এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”
প্রিয়া বলে,
-“ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।কিন্তু কথা দিচ্ছি খুব শীঘ্রই আপনি নিজেই আমাদের ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হবেন।”
(চলবে)