#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১১
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি প্রিয়াকে ড্রয়িংরুমে দেখে ভীষণ অবাক হয়।প্রিয়া বৃষ্টিকে দেখে কেঁদে ফেলে।বৃষ্টি এই কান্নার কোন মানে খুঁজে পায়না।প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-“তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার জন্য সূর্যর সাথে আমার সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেল।সূর্য তোমাকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেল।কেন এলে আমাদের মাঝে কেন?”
সূর্যও ততক্ষণে সেখানে চলে আসে।সূর্য প্রিয়াকে তার বাড়িতে দেখে ভড়কে যায়।প্রিয়া সূর্যকে দেখে তার কাছে গিয়ে কলার ধরে বলে,
-“তুমি কেন আমায় এভাবে ঠকালে? আমি তো ভালোবেসেছিলাম তোমায়।আমি কাল যখন তোমায় ঘুরতে নিয়ে যেতে বললাম তখন আমাকে নিয়ে গেলেনা অথচ নিজের বউকে নিয়ে ঘুরতে গেলে।”
-“তুমি কি করে জানলে এসব?”
-“কি করে জেনেছি সেটা বড় কথা নয় আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না?”
-“না বাসিনা।আমি কখনো তোমায় ভালোবাসি নি।”
-“তাহলে এতগুলো দিন কি আমার সাথে মিথ্যা নাটক করেছ?”
-“হুম।সব আমার নাটক ছিল।আমি শুধু তোমার সাথে টাইম পাস করেছি।”
প্রিয়া সূর্যর কথা শুনে কাঁদতে থাকে।বৃষ্টিও এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।সে সূর্যকে বলে,
-“আপনাকে দেখে আমার প্রচণ্ড ঘৃণা করছে।একটা মেয়েকে ভালোবাসার জালে ফাসিয়ে এখন তাকে এভাবে ছেড়ে দিচ্ছেন।আপনিও দেখছি আপনার ভাইয়ের মতো।”
-“আপনি যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কথা বলবেন না।”
-“আর কি জানার বাকি আছে? আপনি একটা মেয়ের সাথে অবিচার করছেন।আমি তো সেটা মেনে নিতে পারব না।আমি খুব শীঘ্রই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।তারপর আপনি প্রিয়াকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবেন।আমি কোন মেয়ের দুঃখের কারণ হয়ে থাকতে পারবো না।”
-“আপনি আমার জীবনে না এলেও আমি কখনো প্রিয়াকে আপন করে নিতাম না।এর থেকে বেশি কিছু আমি আর বলতে পারবো না।প্রিয়া, তুমি আর সিনক্রিয়েট না করে ভালোয় ভালোয় এই বাড়ি থেকে চলে যাও।আমার বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল আজ তাদের ফেরার কথা।আমি চাইনা তাদের সাথে তোমার দেখা হোক।”
প্রিয়া আর কোন কথা না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায়।দরজার কাছে গিয়ে সে থেমে গিয়ে সূর্যর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তুমি আমার সাথে যা করলে তার রিভেঞ্জ আমি নিয়েই ছাড়ব।তৈরি থেকে সূর্য ইসলাম নিজের ধ্বং*স দেখার জন্য।”
________________
বৃষ্টি ফোনে তার চেনা একজন উকিলের সাথে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলছিল।আজ যা হলো তারপর বৃষ্টির আর কোন ইচ্ছে নেই সূর্যর সাথে সংসার করার।
বৃষ্টি তার পাসপোর্ট ভিসাও তৈরি করার ব্যবস্থা করে রেখেছে।সূর্য হঠাৎ তার রুমে চলে আসে।সূর্য বৃষ্টিকে কিছু বলতে চাইছিল কিন্ত সূর্যর সাথে কথা বলতেও বৃষ্টি রাজি নয় তাই সে রুম থেকে চলে যায়।সূর্য ভাবতে থাকে,
-“যেদিন আপনি সত্যটা জানবেন সেদিন বুঝতে পারবেন আমি ঠিক ছিলাম নাকি ভুল।”
বৃষ্টি সোজা ছাদে চলে আসে।এই ছাদে তার অনেক ভয়ানক একটা অতীত লুকিয়ে আছে।তাইতো ছাদে তেমন একটা আসেনা বৃষ্টি।তার উপর এখন সন্ধ্যাবেলা।নেহাতই সূর্যর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছিল না তাই সে ছাদে চলে এলো।ছাদে আসলেই যে বৃষ্টির তার ভয়ানক অতীতের কথা মনে পড়ে যায়।
কিছুক্ষণ ছাদে থাকার পর বৃষ্টির কানে কারো কন্ঠ ভেসে আসে।বৃষ্টি আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায়না।কিছুক্ষণের মাঝেই নিজের অতীতে হারিয়ে যায় বৃষ্টি।
~~~~~~~~অতীত~~~~~~~~~~~
-“বৃষ্টি খেয়ে নে বলছি।এত কম করে খেলে যে শুকিয়ে যাবি।”
নিজের মায়ের মুখে এরকম কথা শুনে ৮ বছরের দুরন্ত স্বভাবের বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-“আমি আর খেতে পারব না আম্মু।আমার পেট ভরে গেছে।”
-“আচ্ছা তুই খেয়ে নে আমি খুব সুন্দর একটা গল্প শোনাচ্ছি।”
-“হ্যাঁ বলো।”
বৃষ্টির মা তাকে গল্প শোনাতে শোনাতে ভাত খাইয়ে দিতে থাকে।ভাত খাওয়া শেষ করার পর বৃষ্টির মা তাকে বলে,
-“এত বড় হয়েছিস তবু কত কি করে তোকে খাওয়াতে হয়।আমি না থাকলে তোকে কে এভাবে ভাত খাইয়ে দেবে বলতো?”
বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি থাকবেনা কেন আম্মু? তুমি তো সবসময় আমার কাছে থাকবে।আমাকে এভাবেই খাইয়ে দেবে।”
-“আচ্ছা তুই থাক।আমি ছাদে যাচ্ছি কাপড় শুকোতে দিয়েছি সেগুলো আনতে হবে তো।কাল আমরা গ্রামের বাড়িতে যাব।তোর দাদা খুব অসুস্থ তোকে দেখতে চেয়েছে।”
-“আমিও যাব তোমার সাথে আম্মু।প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে চল।কিন্তু ছাদে গিয়ে আবার লাফালাফি শুরু করিস না।”
বৃষ্টি তার মায়ের সাথে ছাদে চলে যায়।বৃষ্টির মা ছাদে কাপড় তুলতে ব্যস্ত ছিল।তখন বৃষ্টি ছাদে ছোটাছুটি করছিল।ছুটতে ছুটতে সে একেবারে ছাদের কিনারায় চলে যায়।বৃষ্টির মা তখন খেয়াল করে বৃষ্টি একেবারে ছাদের কিনারায় চলে গেছে।
বৃষ্টির মা দৌড়ে ছুটে আসে তাকে বাঁচানোর জন্য।বৃষ্টি তো থেমে গিয়ে বেঁচে যায় কিন্তু বৃষ্টির মা ছুটে এসে ছাদের কিনারায় আসার পর হঠাৎ তার পা পিছলে যায়।যার ফলে বৃষ্টির মা ছাদ থেকে পড়ে যায়।বৃষ্টি জোরে চিৎকার করে বলে,
-“আম্মু….”
এরপর বৃষ্টি নিচে ছুটে যায়।বৃষ্টির বাবা বাড়িতেই ছিলেন বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বরকত হোসেনকে সব বলেন।বরকত হোসেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বৃষ্টির মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বৃষ্টির মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তার বলে,
-“ওনার অবস্থা বেশি ভালো না।”
বৃষ্টি কাঁদতে থাকে।বরকত হোসেন মেয়েকে সামলাতে থাকেন।একজন নার্স হঠাৎ ছুটে এসে বলে,
-“পেসেন্টের অবস্থা খুব খারাপ।মাথায় আঘাতটা খুব বেশি সিরিয়াস।উনি ওনার পরিবারের লোকেদের সাথে দেখা করতে চাইছেন।”
বরকত হোসেন আর বৃষ্টি ছুটে যায়।তাদেরকে দেখে বৃষ্টির মা যেন খুব তৃপ্তি পান।অনেক কথা বলতে চেয়েও পারেন না।কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।
বৃষ্টি সেদিন খুব কেঁদেছিল।তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিল,
-“তুমি আমাদের ছেড়ে যেওনা আম্মু।তুমি না থাকলে কে আমায় খাইয়ে দেবে,কে আমায় পড়াশোনা করার জন্য বকবে? আব্বু যখন আমায় মা*রতে আসবে তখন আমি কার আঁচলে মাথা লুকাবো? প্লিজ আম্মু তুমি ফিরে এসো।”
সেদিন বরকত হোসেন তার ছোট্ট মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন।সেদিনই তিনি তার মৃত স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন কখনো তার মেয়ের কোন অযত্ন হতে দেবেন না।তাইতো মানুষের এতকিছু বলার পরেও দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি।বৃষ্টিকে খুব আদরে মানুষ করেছে।তার গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দেননি।
~~~~~~~বর্তমান~~~~~~~~
অতীতের এসব ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে বৃষ্টি কান্নায় ভেঙে পড়ে।
-“তুমি ফিরে এসো না আম্মু।আজও আমি প্রতি পদে পদে তোমার অভাব বোধ করি।আমাকে আগলে রাখার মতো কেউ যে নেই আম্মু।”
হঠাৎ মাথায় কারো হাতের অস্তিত্ব অনুভব করে বৃষ্টি।মাথাটা উপরে করতেই দেখে সালমা আক্তার বৃষ্টির মাথায় হাত দিয়ে রেখেছেন।তিনি বলেন,
-“এভাবে কাঁদছো কেন আমি আছিনা? আমি তো তোমার আরেক মা।আল্লাহ তোমার এক মাকে তোমার থেকে দূর করে দিয়েছে তো কি হয়েছে আমাকে তো পাঠিয়েছেন।”
বৃষ্টি সালমা আক্তারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।সালমা আক্তার বৃষ্টিকে বলেন,
-“আমি জানি আপনজন হারানোর কষ্টটা কি।আমার নিজের মেয়েও তো আমার থেকে দূরে আছে কতদিন।আমি চাইলেও কখনো তার কাছে যেতে পারব না।তাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে পারব না।।”
-“মা…”
-“কি বললে তুমি?”
-“ভুল করে বলে ফেলেছি শাশুমা।”
-“ভুল কি পাগল মেয়ে? আমাকে এখন থেকে মাই বলো।আল্লাহ তো আমার এক মেয়েকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছে।তুমি নাহয় আজ থেকে আমার মেয়ে।”
বৃষ্টি মনে মনে বলে,
-“আপনি আজ আমাকে নিজের মেয়ের যায়গা দিলেন।তবে আমি যে বেশিদিন আপনার কাছে থাকতে পারবো না।কিন্তু আমি আজ আপনাকে কথা দিচ্ছি এখান থেকে যাওয়ার আগে যে করেই হোক আপনার মেয়েকে আপনার কোলে ফিরিয়ে দিয়ে যাব।এটা বৃষ্টির প্রতিজ্ঞা ”
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১২
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারকে ঘরে রেখে এসে ভালোভাবে চিন্তা করে দেখে স্বর্ণা বোধহয় মিরপুরের আশেপাশে থাকে।কারণ প্রথমবার মিরপুরেই তাদের দেখা হয়েছিল।এখন যে করেই হোক তাকে স্বর্ণার ঠিকানা জোগাড় করতে হবে।বৃষ্টির মনে পড়ে যায় চিত্রার কথা।চিত্রা এইসব কাজে একেবারে ওস্তাদ।ভার্সিটিতে সবার ক্রাশ,বয়ফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ডের খোঁজ কত সহজেই বের করে দিয়েছে।বৃষ্টি ভাবে স্বর্ণার ব্যাপারে চিত্রার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
__________
বৃষ্টি অনেকদিন পর চিত্রাকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করলে চিত্রা বলে,
-“এতদিন পর হঠাৎ আজ আমার কথা মনে পড়ল?”
-“আজও মনে পড়তো না একটা দরকারের জন্যই ফোন করেছি।”
-“আচ্ছা বল কি দরকার।”
-“তুই আমাকে একজনের খোঁজ জোগাড় করে দিতে পারবি?”
-“কার?”
-“আমার ননদ স্বর্ণার।ও মনে হয় মিরপুরের আশেপাশে কোথাও থাকে। তুই মিরপুরে একটু খোঁজ নিয়ে দেখিস।”
-“আচ্ছা আমি দেখছি তোর কাছে কোন ছবি থাকলে পাঠিয়ে দে।”
-“আমি ছবি এঁকে দিচ্ছি।”
বৃষ্টি স্বর্ণার মুখটা মনে করে তার ছবি আঁকে।তারপর ফোনে ছবি তুলে নিয়ে চিত্রাকে পাঠিয়ে দেয়।
চিত্রাও মিরপুরে চলে যায় স্বর্ণার খোঁজে।
_________
বৃষ্টির আজ মনটা কেমন করছিল তাই সে তার বাড়িতে চলে আসে।বাড়িতে বসে আরশির সাথে গল্প করছিল বৃষ্টি।মর্জিনা বেগম ইদানিং বৃষ্টির সাথে তেমন কথা বলেন না।বৃষ্টি বুঝতে পারে সূর্যর সাথে তার এরকম ব্যাপারটা তার দাদি মেনে নিতে পারছে না।কিন্তু সেই বা কি করতে পারে।
আরশি বৃষ্টিকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে,
-“সূর্যর সাথে তোমার সংসার কেমন যাচ্ছে? তোমরা সুখী তো?”
বৃষ্টি মলিন হাসে।তারপর বলে,
-“এই পৃথিবীতে কেউই সুখী নয়।সুখ যে এখন খুবই দূর্লভ।”
আরশি বৃষ্টির কথা শুনে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে।সে বৃষ্টিকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই বরকত হোসেন চলে আসেন।
বরকত হোসেন এসে বৃষ্টিকে বলেন,
-“চল বৃষ্টি আমরা খেতে যাই।আরশি তুমিও এসো।”
খাবার টেবিলে বসে বরকত হোসেনের বুকে হঠাৎ ব্যাথা ওঠে।বৃষ্টি খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়।বরকত হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার এসে বলেন,
-“ওনার হার্ড এট্যাক হয়েছে অবস্থা বেশি ভালো না।আমরা কোন আশা দিতে পারছি না।”
বৃষ্টি তার বাবার এইরকম অবস্থায় নিজেকে সামলাতে পারে না।আরশিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।বরকত হোসেনের এইরকম অবস্থার খবর পেয়ে সূর্য হাসপাতালে চলে আসে।সূর্য এসে বরকত হোসেনের অবস্থার খোঁজ খবর নেয়।
বৃষ্টি আল্লাহকে ডাকতে থাকে।তিনি যেন তার বাবাকে সুস্থ করে দেন।এমনিতেই ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছে।এখন বাবাকে হারালে সে অনাথ হয়ে যাবে।সূর্য বৃষ্টিকে শান্তনা দেওয়ার জন্য তার কাধে হাত রাখে।বৃষ্টি হাতটা সরিয়ে নেয়।সূর্য বুঝতে পারে বৃষ্টি এখনো তার উপর রাগ করে আছে।
সারাটা দিন এভাবে চলে যায়।রাত ৮ টার দিকে একজন ডাক্তার এসে বলে,
-“আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম ওনাকে বাঁচানোর।কিন্তু সবকিছু আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।সরি আমরা মিস্টার বরকত হোসেনকে বাঁচাতে পারিনি।”
বাবার মৃত্যুর খবরে বৃষ্টি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।বৃষ্টি শোকে পাথর হয়ে যায়।মর্জিনা বেগম নিজের ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আহাজারি করতে থাকেন।বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর আব্বু,আব্বু বলে ছুটে যায় তার বাবার কাছে।হাসপাতালের বেডে তার নিথর দেহ পড়ে ছিল।
বৃষ্টির শোকে সূর্যেরও কষ্ট হচ্ছিল।তার ইচ্ছে করছিল বৃষ্টির সব দুঃখ দূর করে দিতে।কিন্তু সেও তো অপারগ ছিল।
_______________
বরকত হোসেনের জানাযার পর দাফন সম্পন্ন হয়।মর্জিনা বেগম এখনো কেঁদেই চলেছেন।অন্যদিকে বৃষ্টি এখনো নিশ্চুপ।কোন কথা বলছে না সে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা সে বুঝতেই পারল না।এক নিমেষেই তার পুরো পৃথিবী বদলে গেল।বাবা না থাকলে যে পুরো পৃথিবীই অন্ধকার।ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর বাবাই তো তার সব ছিল।তাই বাবার মৃত্যুটা কোনভাবেই সে মেনে নিতে পারছে না।
সালমা আক্তার বৃষ্টিকে বলেন,
-“আর কতক্ষণ চুপ থাকবে? কিছু তো বলো।তোমার বাবা আর নেই কাঁদবেনা তুমি?”
বৃষ্টি কোন কথাই বলে না।কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ডুকরে কেঁদে ওঠে।
-“আমার আব্বু কেন আমায় একা রেখে চলে গেল? আম্মু তো অনেক আগেই চলে গেছে এখন আব্বুও।আমাকে কে আগলে রাখবে এখন?”
আলামিন ইসলাম এসে বলেন,
-“আমরা আছি তো।আমরা তোমাকে আগলে রাখব।”
বৃষ্টি শুধু কেঁদেই চলে।আলামিন ইসলাম আরশিকে বলে,
-“চলো আরশি তুমি এখন আমার বাড়িতে গিয়ে থাকবে।সোহেল তো এখন আর ওখানে থাকেনা তাই…”
-“মাফ করবেন কিন্তু আমি সেটা পারব না।ঐ বাড়িতে আমি আর ফিরতে পারব না।আমি ভার্সিটির হোস্টেলে গিয়ে থাকব নাহয়।কিন্তু দাদি কোথায় থাকবে?”
আরশির কথায় বৃষ্টির তার দাদির কথা মনে পড়ে।আরশি তো ঠিকই বলেছে।বাবার শোকে আরশির এতক্ষণ তার দাদির কথায় মাথায় আসেনি।আলামিন ইসলাম বলেন,
-“উনি নাহয় আমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবেন।”
মর্জিনা বেগম সেখানে এসে বলেন,
-“আমি এই বাড়িতেই থাকতে চাই।এই বাড়িতেই আমার ছেলের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।আমার স্বামীও এই বাড়িতেই মা*রা গেছেন।তাই আমিও আমৃত্যু এই বাড়িতে থাকতে চাই।”
বৃষ্টি বলে,
-“দাদি তোমার খেয়াল রাখবে কে?”
-“আমি নাহয় একটা কাজের লোক রেখে দেব।আর তাছাড়া আরশি তো আছেই।”
___________
দেখতে দেখতে সময় চলে যায়।বৃষ্টির বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ হয়ে গেছে।বৃষ্টি এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।চিত্রা বৃষ্টিকে ফোন করে বলে,
-“তুই এখন কেমন আছিস রে?”
-“আগের থেকে কিছুটা ভালো।”
-“নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর।আঙ্কেল তোকে খারাপ থাকতে দেখলে অনেক কষ্ট পাবেন।যাইহোক তুই স্বর্ণা৷ নামের মেয়েটার খোঁজ করছিলি না? আমি আজ তার খোঁজ পেয়েছি।মেয়েটার ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
বৃষ্টি খবরটা শুনে খুশি হয়।সে আলামিন ইসলাম আর সালমা আক্তারের কাছে গিয়ে বলেন,
-“আজ আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
আলামিন ইসলাম জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি সারপ্রাইজ?”
-“সেটা সারপ্রাইজ পেলেই বুঝতে পারবেন।”
____________
বৃষ্টি চিত্রার যাওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পায় অনেকজন লোক মিলে স্বর্ণাকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে।বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,
-“কি হয়েছে এখানে? আপনারা একটা মেয়ের সাথে এরকম ব্যবহার করছেন কেন?”
একজন লোক বাঁজখাই গলায় বলেন,
-“এই মেয়ে অনেকদিন থেকে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকে কিন্তু ঠিকঠাক ভাড়া মেটায় না।এই মেয়েকে বাড়িতে রাখব কেন?”
-“আচ্ছা বলুন কত টাকা”
-“১০ হাজার টাকা।”
বৃষ্টি তার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা বের করে দিয়ে বলে,
-“এই নিন।”
স্বর্ণা রেগে বলে,
-“আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।”
-“তুমি একদম বেশি কথা বলবে না।আমি কিন্তু তোমার ভাবি হই।আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।”
-“এই পৃথিবীর কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।”
-“তুমি একদম আর এরকম ফালতু কথা বলবে না।সম্পর্ক এত ফেলনা নয় যে তুমি চাইলেই তুলে দিতে পারবে।কার উপর এত রাগ দেখাচ্ছ তুমি? সেই মায়ের উপর যে তোমাকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরেছে, নাকি সেই বাবার উপর যে নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমায় মানুষ করেছে।”
-“তুমি আমার ব্যাপারে কিছু জানোনা তাই এরকম বলছো।”
-“সবকিছু জানলেও এই একই কথা বলতাম।বাবা-মার মূল্য কি সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝি।অনেক আগেই নিজের মাকে হারিয়েছি কিছুদিন আগে বাবাকেও হারালাম।তাই তোমায় বলছি সময় থাকতে সব ঠিক করে নাও।নাহলে হয়তো পরে আফসোস করতে হবে।”
-“কিন্তু আমার পরিবারের মানুষ কি আমায় মেনে নেবে? তারা তো আমায় বের করে দিয়েছে।”
-“এখন এত অভিমান নিয়ে থেকোনা।একবার ফিরে গিয়ে তো দেখো তারা তোমায় আপন করে নেয় কি-না।”
স্বর্ণা আর কিছু বলার আগেই বৃষ্টি স্বর্ণার হাত ধরে নিয়ে আসে।তারপর গাড়িতে তুলে।
গাড়িতে করে স্বর্ণাকে তার বাড়ির সামনে নিয়ে আসে বৃষ্টি।স্বর্ণা অনেক দ্বিধাদ্বন্দে ছিল কিন্তু বৃষ্টি তাকে আশ্বাস দেয়।
বৃষ্টির ভরসায় স্বর্ণা ভিতরে যায়।বৃষ্টি বাড়িতে ঢুকে দেখে তার কথায় আলামিন,সালমা আক্তার,সূর্য সবাই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত।আরশিও এসেছে।বৃষ্টি সবার সামনে এসে বলে,
-“দেখুন আমি কাকে নিয়ে এসেছি।আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ।”
(চলবে)