বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
1424

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
অন্তিম পর্ব
#লেখনিতেঃনুসরাত

মেন্টাল এসাইলামে আছে ২ বছর হয়ে আসলো আরাফের।ওদের সবার সুন্দর জীবনটা বিষিয়ে গেছে।না মায়ার পরিবারের কেউ ভালো আছে আর না আরাফের।আহানতো চাচ্চুর জন্য পাগলপ্রায়।ওর চাচ্চু কোথায়?ওকে দেখতে আসেনা কেনো?ওর সাথে দুষ্টামি করেনা কেনো?এরকম হাজারো প্রশ্ন করে থাকে আর সবাই উত্তর দেয় “এসে পড়বে খুব শীঘ্রই” কিন্তু তারাও জানে না আদৌ আরাফ কখনো ভালো হবে কিনা?

৩ বছর আগে মায়ার এক্সিডেন্টের পর মায়াকে আরাফ কোলে উঠিয়ে নিয়ে হাসপাতালে আসে।বাকিরাও আসে ওর সাথে তাদের মনে হাজারো প্রশ্ন।মায়া আর আরাফের মাঝের সম্পর্কটা ঠিক কি রকম?অহনা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা।তাই শুরু থেকে এই পর্যন্ত সবকিছু বলে দেয় সবাইকে।আর সবাই ই আরাফকে দোষী মেনে যাচ্ছে।আরাফ যে কেনো এটা করেছে কেউ ই তা জানতে চাচ্ছেনা।এমনকি আরাফের নিজের পরিবার ও ওর বিপক্ষে।মায়ার মা ভেঙে পড়েছেন মেয়ের এমন অবস্থা দেখে।মায়ার মা কে সামলাচ্ছেন আরাফের মা।আর বাকিরা দাঁড়িয়ে আছেন নয়তো বসে আছেন চিন্তিত মুখে।আরাফ হাসপাতালের ভিতরে আইসিইউ কেবিনের বাইরে একটা চেয়ারে মাথাটা নিচু করে দুই হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে বসে আছে।চেহেরা বিধ্বস্ত আর কষ্টের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।ওর নিজের প্রতি ই রাগ হচ্ছে কেনো মায়াকে আগেই সবটা বলে দিলোনা।তাহলে না এই বিয়ে ঠিক হতো না ওর মায়াপরীর আজ এই অবস্থা হতো।

অহনা আর মিরা রাগে ফেটে যাচ্ছে।ওরা আরাফকেই সবকিছুর জন্য দোষী ভাবছে।দুজনের ই আরাফ এখন দুই চোখের বিষ।মায়ান রেগে আছে আরাফের প্রতি পারেনা ওকে এখন ই খুন করে ফেলবে আজ বুঝতে পারছে ওর জন্যই ওর বোনু এতগুলা বছর ডিপ্রেশনে ছিলো আর বদলে গেছে আর আজও মায়ার এই অবস্থার জন্য আরাফ ই দায়ী।কিন্তু মায়ার জন্য চিন্তিত হয়ে আছে তাই আরাফকে কিছু বলছেনা।

ডাক্তার বেরিয়ে আসেন।সবাই ডাক্তারকে বেরোতে দেখে জিজ্ঞেস করে মায়ার কি অবস্থা তিনি বলেন,

“রোগীর অবস্থা খুব ই ক্রিটিকাল।তার শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝড়ে গেছে।আমরা রক্তের ব্যবস্থা করছি।রক্ত দেয়ার পর ই যা বলার বলতে পারবো।আপনারা যেকোনো নিউজ শুনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।” বলেই চলে যেতে নেন আর আরাফ তার কলার ধরে রেগে আগুন হয়ে বলে,

“যেকোনো নিউজ মানে?তুই ডাক্তার হয়েছিস কি জন্য?আমার মায়াকে তোকে বাঁচাতেই হবে।নাহলে আমি তোকে খুন করে ফেলবো”

আরাফকে সারাফ আর মায়ান এসে ছাড়িয়ে নেয়।ডাক্তার কেবিনে ঢুকার আগে অহনা আর মিরা তাকে পার্সোনালী ডেকে নিয়ে যায় অন্য এক রুমে আর অনেকক্ষণ কথা বলে তারপর আসে।
ডাক্তার রক্ত নিয়ে ভিতরে যান।আর প্রায় ২ ঘন্টা পর বেরিয়ে এসে মুখটা গম্ভীর করে বলেন,

“সরি।শি ইজ নো মোর।”

আরাফ এটা শুনে ডাক্তারকে মারতে যায় আর ওর ভাই ওকে আটকিয়ে নেয়।আরাফ তারপর সেখানেই বসে পড়ে আর চুপ হয়ে যায়।ছেলেরাতো আর চাইলেই কাদতে পারেনা।প্রকৃতিতে যে এই নিয়ম টা নেই।মায়ান নিজেকে সামলাতে না পেরে এলোপাথাড়ি আরাফকে মারতে থাকে।আরাফের কোনো হুশ নেই ও চুপটি করে আছে।সারাফ আর রিশান মিলেও মায়ানকে আটকাতে পারছেনা।আরাফের মা হুহু করে কেদে দেন ছেলেকে এভাবে মারতে দেখে।আর বারবার বলেন, “আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও” কিন্তু মায়ানের মনে একটুও দয়া হয়না।বোন হারানোর বেদনায় মায়ান পাথর হয়ে গেছে।আর অন্যদিকে মায়ার মা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বার বার কেদে যাচ্ছেন সশব্দে। মায়ার বাবা চুপ হয়ে আছেন।

আরাফকে মারার পর আরাফ যখন সেন্সলেস হয়ে যায় তখন মায়ান আরাফকে ছাড়ে আর ডাক্তাররা ওকে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন।তারপর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় আর শুইয়ে রাখা হয়।

অন্যদিকে মায়াকে জানাজা দিয়ে এসে পড়ে মায়ান, ওর বাবা, সারাফ,সারাফের বাবা আর রিশান।কান্নার এক রোল পড়ে যায় মায়াদের বাসায়।

পরেরদিন সকালে উঠেই আরাফ মায়াকে খুজে কিন্তু পায়না।এরপর থেকে আরাফের পাগলামিগুলা বেড়ে যায়।সবকিছু ভাঙচুর করতে থাকে।পরিবারের কাউকেও চিনেনা।বাচ্চাদের মতো আচরণ করে আর প্রায় প্রায় মায়াপরী বলে চিল্লিয়ে উঠে।সহজ ভাষায় ভারসাম্যহীন একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হয় যাকে সচরাচর কথ্য ভাষায় “পাগল” উপাধি দেয়া হয়।

ইশা এমন একটা পাগলের সাথে কখনোই জীবন কাটাতে পারবেনা বলে দেয়।আর বিয়েটা হয়না।

১ বছর যাবৎ আরাফকে বাসায় বন্দী করে রাখা হয় কিন্তু এরপর ই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আরাফকে মানসিক হাসপাতালে রেখে আসবে।আর তাই করা হয়।বিগত দুই বছর ধরে আরাফ পাবনাতেই আছে।

অহনা অনেকটা ভেঙে পড়ে মায়াকে ছাড়া।ওর পাশে এসে দাঁড়ায় রিশান।মায়ার মৃত্যুর এক বছর পর ই অহনা আর রিশানের বিয়ে হয়।তার এক বছর পরেই অহনা আর রিশানের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়।অহনা মায়ার সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখে মিহা।

আজ প্রায় ২ বছর পর দেবরকে দেখতে যাচ্ছে মিরা সাথে করে আহানকেও নিয়ে আসে।আহানের এখন ৭ বছর বয়স।তখন ছিলো ৪ বছর। ওর সাথে অহনা, আর ওর ১ বছর বয়সী মেয়ে মিহাও আসে।মিহাকে কোলে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে অহনা।আর আহানকে নিয়ে আরাফকে যেই রুমে রাখা হয়েছে তার জানালায় দাঁড়িয়ে আছে মিরা।

আরাফের পরনে আকাশি রঙের ঢিলেঢালা ফতুয়া আর পায়জামা।চুলগুলো উষ্কোশুষ্কো।চোখে চশমা।চেহেরা মলিন হয়ে গেছে।শুকিয়ে গেছে আরাফ।চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।আর বাচ্চাদের মতো দাত বের করে হাসছে তো আবার একটু পরেই মুখটা মলিন করে কাদছে।এসব দেখে আহান মিরাকে জিজ্ঞেস করে,

“আম্মু কি হয়েছে চাচ্চুর?এরকম করছে কেনো?আর রোগীদের পোশাকে কেনো?”

“তোমার চাচ্চু এখন পাগল হয়ে গেছে।পাগল বুঝোতো?”

“হ্যা আম্মু বুঝি কিন্তু আমার চাচ্চুতো ভালো ছিলো।এরকম কেনো হলো?আমি চাচ্চুর কাছে যাবো” কান্না করতে করতে বলে।

“না বাবা যাওয়া যাবেনা।চাচ্চু তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে।আর তোমার মিষ্টি আন্টি মারা গেছে জানোনা?”

“হুম” মুখটা মলিন করে বলে।

“তোমার চাচ্চু আর তোমার মিষ্টি আন্টি একে অপরকে ভালোবাসতো।কিন্তু তারা এক হতে পারেনা।তোমার মিষ্টি আন্টির মৃত্যুর খবর শুনে তোমার চাচ্চু ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।আর তারপর পাগলের মতো আচরণ করে।তারপর আমরা চাচ্চুকে এখানে রাখি। মানসিক হাসপাতালে।যাতে করে তোমার চাচ্চু ভালো হয়ে যায়।”

“আমার চাচ্চু!” কান্না করে দেয় আহান।

মিরা যদিও আরাফকে এখন দেখতে পারেনা।কিন্তু নিজের ছেলের সামনে আরাফকে খারাপ বানাতে চায়না।চায়না ওর ছেলেটাও আরাফের মতো হোক।তাই যতটুকু জানানো প্রয়োজন ঠিক ততোটুকুই জানায়।

আহানের কান্না দেখে অহনা মিহাকে কোলে নিয়ে জানালার সামনে আসে।অহনা আর মিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আরাফের দিকে তাকায় আর ওর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আর হেসে অহনা বলে,

“ইউ ডিজার্ভ দিস মি.আরাফ চৌধুরী!”

মিরাও হেসে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ইয়েস। দিস ইজ কল্ড কার্মা!”

ছোট্ট আহান কিছুই বুঝতে পারেনা।এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি বুঝবে কিভাবে?ওর চাচ্চুর এই অবস্থা আর উনারা হাসছে?আহান কিছুই বুঝতে পারেনা কেনো হাসছে দুজন।

সমাপ্ত…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে