#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৬
#লেখনিতেঃনুসরাত
মায়ার জীবন টাই কেনো এমন হলো?কেনো এতটা ভালোবাসার পরেও আরাফ কে পেলোনা?ওর ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো?এসব ভাবতে ভাবতেই মায়া বাসায় ওর রুমে এসে ধপ করে বসে পড়ে।ওর সাথে অহনাও আসে।মায়াকে এই সময় একা রাখা ঠিক হবেনা।মায়া অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।অহনা কিছুই বলছেনা অনেক্ক্ষণ যাবৎ কিন্তু আর সহ্য করতে পারছেনা তাই ওকে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে,
“কার জন্য কাদছিস মায়ু?ঐ প্রতারকটার জন্য?যে তোকে ভালোই বাসেনি?ভালোবাসলে কি তোকে এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে এখন বিয়ে করছে?করছেতো করছে আবার দাওয়াত ও দিয়েছে কতটা নিচু মস্তিষ্কের হলে এমনটা করতে পারে তুই বুঝতে পারছিস?”
“প্লিজ আর কিছু বলিস না আমি সহ্য করতে পারছিনা।আমার আরফু অন্য কারো হয়ে যাবে আমি এটা মেনে নিতে পারছিনা আমি আর যাবোনা ঐ বিয়েতে” হেচকি তুলতে তুলতে বলে।
“হ্যা যেতে হবেনা।কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবি?”
“জানিনা কিন্তু আমি এসব সহ্য করতে পারবোনা একদম ই না”
“ঠিক আছে তাহলে কয়দিনের জন্য আমার বাসায় চলে আয়”
“আমি আজ আর এখন ই যাবো।”
“চল”
মায়া মায়ানকে বলে কিন্তু মায়ান আপত্তি করে কেনোনা মায়ান ভাবে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে ওর বোনটা ভালো থাকবে কিন্তু ভাই কি আর জানে?ওর বোনের সর্বনাশ এই বিয়েতেই হচ্ছে?ওর বোনের মনটা যে আরেক দফা ভেঙে যাচ্ছে?কিছুতেই মায়ান কে রাজি করানো গেলোনা তাই ওদের যেতেই হবে হলুদেও আর বিয়েতেও।কিন্তু মায়া কি পারবে আরাফকে ইশার হতে দেখতে?যাকে নিয়ে শতশত স্বপ্ন বুনেছে পারবে সেই স্বপ্নগুলা ভেঙে দিতে?ভুলে যেতে আরাফকে?যাকে বিচ্ছেদের পরেও ভুলতে পারেনি তাকে এখন পারবে ভুলতে?
২ দিন পর আজ হলুদে আসে ওরা কিন্তু মায়া অসুস্থতার বাহানা দিয়ে বাসায় ই থেকে যায় কেনোনা এসব অনুষ্ঠান আর সবকিছুই ওরা কল্পনা করতো নিজেদেরকে নিয়ে।মায়ার এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে যে মায়ার জায়গাটা আরাফ অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছে।খুব অভিমান করেছে ওর আরফুর প্রতি।
ভালোভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।আরাফ তো অন্য কিছুই ভেবে রেখেছে।কিছুতেই বিয়েটা ও করবেনা।দরকার পড়লে এই দেশ ছেড়ে দিবে নয়তো শহর ছেড়ে দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে যেখানে কেউ ওকে খুজে পাবেনা।মায়ের জন্য নিজেকে এমন একটা সম্পর্কে বাধতে পারবেনা যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আরাফ পারবেনা মায়ার জায়গা অন্য কাউকে দিতে হোক সেটা আপোষে বা সমঝোতাতে।বিয়ের দিন ই আরাফ চলে যাবে।
আলাকের সাথে সব প্ল্যানিং করে ফেলেছে।
আরাফের বিয়ের একদিন আগের কথা,
রিশান বসে আছে সারাফের সাথে ওর অফিসে।সারাফ আর রিশান এক ই অফিসে কাজ করে আর সেই সুবাদেই ওদের বন্ধুত্ব। সারাফ জানে রিশান অহনাকে ভালোবাসে কিন্তু মেয়েটা ওকে ভালোবাসেনা।তাই আজ ওকে পরামর্শ দিতেই এসেছে যদিও আগেও দিয়েছে কিন্তু রিশান শুনেনি।
চেয়ার টেনে রিশানের কাছে এসে বসে বলতে শুরু করে সারাফ,
“দেখ ভাই যে তোকে ভালোই বাসেনা তার পিছনে কেনো পড়ে আছিস?”
“ও আমাকে ভালোবাসতে চায় কিন্তু ওর বান্ধুবীর এক্স ওর বান্ধুবীকে ধোকা দিয়েছে তাই ছেলেদের বিশ্বাস করতে পারছেনা”
“তুই কিভাবে জানিস ও তোকে ভালোবাসে?”
“ওর চোখ দেখলেই বুঝি ভালোবাসেনা কিন্তু বাসতে চায় কিন্তু চাইলেও পারেনা।আমি বুঝতে পারছিনা কিভাবে বিশ্বাস করাবো।আমি ঐ শালাকে একবার পাই তারপর মজা বুঝাবো মেয়েদের মন ভাঙার!” রেগে গিয়ে বলে রিশান।
“এক কাজ করতে পারিস।ডাইরেক্ট ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দে।তুইতো ভালো ফ্যামিলি বিলোং করিস ওর ফ্যামিলি না করবেনা।আর মেয়ের ও তো স্টাডি শেষ জব করছে অবশ্যই বিয়ের কথা বলছে কিন্তু ও করছেনা কারণ টা নিশ্চয়ই তুই?”
“কি জানি।দেখি ট্রাই করে।আরাফের বিয়েটা যাক তারপর আমার বিয়েও খেতে পারবি” হাসতে হাসতে বলে।
“আচ্ছা তাহলে কাল এসে পড়িস সবার আগেই।সবকিছুর দেখাশোনা আমাদের ই করতে হবে”
“আচ্ছা”
বিছানায় শুয়ে আছে মায়া।ভাবছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু।কত সুন্দর ছিলো ওদের সম্পর্কটা।ওদের সম্পর্কের ২ বছরের মাথায় এসে আরাফের থেকে বিচ্ছেদ হতে হয়েছে মায়াকে।সবকিছুই ওর দোষে হয়েছে।যদি এতটা বাচ্চামো না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না।মনে করছে ওদের সম্পর্কের ১ বছরের দিনটার কথা।কতোইনা সেলিব্রেশন করেছে আরাফ ওকে নিয়ে আর সারপ্রাইজ ও দিয়েছে।যেই ছেলেটা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো কেনো ওকে ছেড়ে দিলো?যেই ছেলে কখনো ওর উপর একবারের জন্য ও চিল্লায়নি এমনকি উচু আওয়াজ এ কথাও বলেনি সে তাকে কিভাবে এতগুলা অপমান করলো?এতবছর এসব ভাবেনি কিন্তু এখন মায়া ভাবছে।ওর জানতেই হবে কি কারণ ছিলো যার জন্য আরাফের ওকে ছাড়তে হলো।আর কেউ জানুক না জানুক মায়া জানতো ওর আরফু ওর মায়াপরীকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।তাই ঠিক করে নেয় আগামীকাল বিয়ের আগেই সবকিছু আবার ও জিজ্ঞেস করবে আর এইবার আরাফের ওকে জবাব দিতেই হবে তার জন্য মায়ার যা করার করবে।ওর আরফুকে ও অন্য কারোর হতে দিবেনা আর হতে চাইলে ও অনেক দূরে চলে যাবে।তারপর উঠে বারান্দায় যায় গিয়ে দোলনায় বসে চাঁদ দেখতে থাকে।এই চাঁদের আলোয় কতই না স্বপ্ন বুনেছে দুইজন।
তারপর ভাবতে থাকে ওদের সম্পর্কের ১ বছরের মাথায় আরাফ সারপ্রাইজ দেয়ার দিন মায়াকে কত বুঝালো কিন্তু মায়া ওর একটা কথাও শুনলোনা।সেদিন আরাফ কেক কাটার পর বাকিদের বাইরে যেতে বলে শুধু দুজন রেস্টুরেন্টের ছাদে ক্যান্ডেলাইট ডিনার করতে যায়।ছাদে গিয়ে চেয়ারে বসার পর আরাফ মায়ার হাত ধরে বলে,
“মায়ু তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই যা আমি বিগত ৩/৪ মাস ধরে ভাবছি বলবো কিন্তু বলা হচ্ছেনা” আস্তে সুরে।
“হ্যা আরফু বলো”
“আচ্ছা মায়ু তুমি ই দেখো তুমি যে একদিন দেখা না করলে এভাবে ধমকি দাও এমনকি দুই তিনবার হাত পা ও কেটেছো এগুলা কি ঠিক হচ্ছে?তুমি কি জানোনা আমি তোমার একটু কষ্ট সহ্য করতে পারিনা?সেই জায়গায় তুমি নিজের শরীরকে আঘাত দিচ্ছো তাতে আমার ও কষ্ট হয় তুমি কি তা বুঝোনা?” মায়াভরা চাহনী দিয়ে বলে।
“বুঝিতো কিন্তু তুমিতো জানো আমি তোমাকে একটা দিন না দেখলে থাকতে পারিনা।ছটফট করি” মাথাটা নিচু করে বলে।
“কিন্তু আমি তো ব্যস্ত ও থাকতে পারি তাইনা?হয়তো অফিসে আমার অনেক কাজ পড়ে যেতে পারে নয়তো বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাই।”
“না তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সময় দিতে পারোনা!” রেগে গিয়ে বলে।
“রাগছো কেনো মায়াপরী।ওরাও তো আমার লাইফের একটা অংশ তাইনা?ওদের সাথে আমি মাসে ১ বার দেখা করি কিন্তু এখন তাও পারছিনা অফিসে এত কাজ।কিন্তু তোমার সাথেতো প্রতিদিন ই করি।একটা দিন না করলে কি খুব খারাপ হয়ে যায়?”
“তোমার ফ্রেন্ডরা একবার আড্ডায় বসলে আর তোমাকে ছাড়তে চায়না।একদম রাতে আসো আর আমার সাথে কথাও বলোনা ঐদিন।আর তুমিতো জানো আমি কতটা রাগী!তাই রাগ হয় আর অমন করে ফেলি।তোমার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা।”
“আমাকে তুমি না বুঝলে কে বুঝবে বলো?আর আমাদের বিয়ের পর তো সারাদিন ই আমি তোমার কাছে থাকবো তখন মন ভরে দেখতে পারবেনা?”
“হুম পারবো”
“আচ্ছা তুমি যে বলো বোনদের সাথে কথা বলতেনা।ওরা যদি সেধে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছি এতটুকুও কি আমি বলতে পারিনা ‘হুম ভালো আছি’?”
“না পারোনা!”
“আচ্ছা ঠিক আছে এটা বাদ দাও।এটা বলো যে তুমি যে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে আগের মতো কথা বলোনা ওরা কি এটা ভাবেনা যে তুমি বয়ফ্রেন্ড পেয়ে ফ্রেন্ডদের ভুলে যাচ্ছো?ওদের ও তো তোমার টাইম দেয়া উচিত তাইনা?”
“মাঝেমধ্যে বলিতো কথা।”
“আমি যেই মায়াকে চিনি সে ছিলো আড্ডা প্রিয়।তুমি কেনো বদলে যাচ্ছো?তোমার জীবনেতো শুধু আমি ই নেই তোমার বান্ধুবীরাও আছে মায়ু তারপর তোমার ফ্যামিলি।তোমার ভাইয়ু কেনো উনাদের সাথে বাজে বিহেভ করো? আমার সাথে রাগ করে কেনো উনাদের কষ্ট দাও?এটাই কি উনারা ডিজার্ভ করে?আমার সাথে কিছু হলে ভাত খাওনা।উনারা বললে উলটো রেগে যাও।কেনো জান?উনারাতো তোমার ভালোই চায় তাইনা?”
“চায়তো!কিন্তু আমার রাগ হলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনাতো”, মাথাটা নিচু করে বলে।
“দেখো মায়া আমি তোমাকে সবসময় বলে এসেছি আমাদের জীবনে শুধু বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী ই সবকিছু না।আর বিশেষ করে মেয়েদের দায়িত্ব অনেক।এই যেমন ধরো একটা মেয়ে একজন মা,বোন,স্ত্রী,মেয়ে,বান্ধুবী এবং আরো অনেক কিছু। তার মধ্যে সবচাইতে মধুর সম্পর্ক চারটা আর তা হলো মা,বোন,স্ত্রী আর মেয়ে হওয়া।আমি ই শুধু তোমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য না মায়াপরী!তোমার ক্যারিয়ারের কথাও কি ভাবছোনা?তোমার না স্বপ্ন তুমি শিক্ষিকা হয়ে সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াবে?এভাবে আমাকে নিয়ে পড়ে থাকলে তা কি করে হবে বলো?”
“আমার আর কিছু চাইনা শুধু তোমাকে চাই”
“কি বুঝালাম তোমাকে এতক্ষণ আমি?দেখো এভাবে জীবন চলেনা।আমার কথাগুলা ভেবে দেখো”
“আচ্ছা দেখবো” খামখেয়ালিভাবে বলে।
আরাফের এত বুঝানোর পরেও মায়া ঐরকম ই করতে থাকে এমনকি আগের চেয়ে আরো বেশি পাগলামি।আরাফকে একদম না ই করে দিয়েছে বন্ধুদের সাথে যেতে।বোনেরা জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে চলতে।সবসময় ওকেই সময় দিতে।ডেইলি ৩/৪ ঘন্টা করে কথা বলতে।ডেইলি দেখা করতে।আর ফ্যামিলির প্রতি বাজে ব্যবহার বেড়েই চলছিলো মায়ার।আর কিছু হলেই নিজের শরীরের ক্ষতি করতো।তারপর থেকে আরো ৬ মাস পর্যন্ত আরাফ প্রতিদিন মায়াকে বুঝাতো ওর এসব করা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু মায়া বুঝতোইনা উলটো আরাফের সাথে রাগ করতো, ওর সাথে বাজে ব্যবহার করতো, চিল্লাতো।আরাফ সবকিছুই সহ্য করে নিতো কিচ্ছু বলতোনা।কিন্তু পরে হঠাৎ করে আরাফ বদলে গেলো।ওর সাথে খুব কম কথা বলতো।৩/৪ ঘন্টার বদলে ৩/৪ মিনিট বলতো।দেখা করা বাদ ই দিয়ে দিয়েছিলো।মায়া হাত পা কাটতো তাতেও কোনো প্রভাব পড়তোনা।একপ্রকার এড়িয়ে চলতো মায়াকে।তারপর দুইবছরের মাথায় একদিন দেখা করে ওকে অপমান করে ছেড়ে দেয়।তারপর সব জায়গা থেকে ব্লক দিয়ে দেয়।শহর ছেড়ে দেয়।বন্ধুদের বলে মায়াকে ব্লক দিতে।আর তারপর আর যোগাযোগ করেনা।
মায়া নিজের ভুল আজ বুঝতে পারছে।কি কি করেছে।কতবড় বড় ভুল করেই যাচ্ছিলো।এত বুঝানোর পরও বুঝতে পারলোনা।কথায় আছে “থাকতে মূল্য দিতে জানিনা যখন না থাকে তখন বুঝি” মায়ার সাথেও তেমন টাই হয়েছে।আরাফের থাকাকালীন বুঝেনি এখন আরাফ অন্য কারো হচ্ছে এখন বুঝতে পারছে ওর ভুল হয়েছে।কিন্তু যাকে এতো ভালোবাসতো এমনকি মায়া ওর সাথে বাজে ব্যবহার করলেও এক ফোটা টু শব্দ করতোনা সেই মায়াকে ওর মায়াপরীকে কিভাবে এত অপমান করলো?আর কেনোই বা ছেড়ে দিলো?এখন যে মায়ার জানতেই হবে!ভাবতে ভাবতেই দোলনায় ই ঘুমিয়ে পড়ে মায়া।
আজ মায়া সাজবে।হ্যা ওর আরফুর জন্য সাজবে।ঠিক সেইভাবে যেইভাবে আরফুর পছন্দ ছিলো।মায়া আজ পরেছে সেই নীল শাড়িটা যেটা আরাফ ওকে গিফট করেছিলো।আরাফের দেওয়া কাচের নীল চুড়ি পরেছে।চুল গুলো খোলা রেখেছে।ঠোটে গোলাপ কালার লিপস্টিক।চোখে গাঢ় টানা টানা কাজল।অহনা ওকে দেখে হা হয়ে গেছে।এ ও কাকে দেখছে।মেয়েটাকে আজও হালকা একটু সাজলে পরীদের মতো লাগে?অহনা কখনো মায়াকে সাজতে দেখেনি।আরো অবাক হচ্ছে আরাফের প্রিয় সাজে নিজেকে সাজিয়েছে বলে।তাই জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
“তুই এই সাজে?”
“হ্যা রে।অনেক ভেবেছি।আমার আরাফকে আমি অন্য কারো হতে দিতে পারবোনা।আমার জানতেই হবে এতো ভালোবাসতো আমায় কিন্তু কেনো ছাড়লো?নিশ্চয়ই বড় কোনো কারণ আছে!”
“তুই আবার ও পাগলামি করছিস মায়া।ও তোকে ভালোবাসেনা।”
“বাসে”
“তাহলে বিয়ে কেনো করছে?”
“জানিনা।সব প্রশ্নের উত্তর নিতেই যাচ্ছি।”
“যা ভালো মনে করিস”
মায়াকে এইভাবে সাজতে দেখে মায়ান আর ওর বাবা-মা খুব অবাক হন সাথে খুশিও।মায়ান জানতো ওর আগের বোনটাকে ফিরে পাবে এই অনুষ্ঠানে গেলে আর তাই হলো।
ওরা সেন্টারে এসে উপস্থিত হয়।সবার নজর ই এখন মায়ার উপর।সেই মহিলাটাও মায়াকে দেখে অবাক হন আর সেদিনের কটুক্তির জন্য অপরাধবোধ করেন।সব ছেলেরা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।একজন তো এসে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছে সিংগেল কিনা।আরাফ স্টেজে বরবেশে বসে ছিলো।মায়াকে এভাবে দেখে কয়েকদফা ক্রাশ খায়।কতগুলো বছর পর ওর মায়াপরীকে ওর প্রিয় সাজে দেখলো।কিন্তু রাগ ও হচ্ছে ওর উপর।এত সুন্দর হওয়ার প্রয়োজন টাই বা কি ছিলো ছেলেরা চোখ দিয়েই পারেনা গিলে খাচ্ছে।রাগে স্টেজ থেকে উঠে গজগজ করতে করতে ওর রুমে গিয়ে বসে।আলাক ওকে এভাবে রাগতে দেখে ওর পিছু যায়।দেখে আরাফ কপালে হাত দিয়ে আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে রাগ কমাতে।কিন্তু কিছুতেই কমছেনা।
“কি হয়েছে এভাবে আসলি কেনো?আর কিভাবে পালাবি কিছু ভেবেছিস?” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে আলাক।
“সেসব বাদ দে।মেয়েটাকে দেখেছিস?আবার ও ঐ সাজে এসেছে যেভাবে দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।পরীরাও এত সুন্দর হয়না যতটা ও সুন্দর।কিভাবে ছেলেগুলা ওর দিকে তাকিয়েছিলো!” দাতে দাত চেপে বলে।
“মায়া ভাবি?”
“হ্যা”
মায়া আরাফকে এভাবে আসতে দেখে ওর পিছু আসে আর ওর মনে জেগে উঠা প্রশ্নগুলা করার জন্যই মূলত পিছনে আসা।দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ে আর শুনতে থাকে আলাক বলছে,
“মায়া ভাবি?”
“হ্যা”
“দেখ ভাই এমনিতেই তুই ভাবিকে অযথা কারনে ছেড়েছিস এখন তোর জ্বলছে কেনো? ” ভ্রু কুচকে।
“আমি ওকে ভালোবাসি তাই জ্বলছে।আর অযথা কারণ বলছিস?তুই তো সব জানিস!”
“হ্যা আমি জানি।মায়া ভাবীর পাগলামি বেড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তুই বুঝাতে পারতিনা?”
“ওকে কম বুঝিয়েছিলাম আমি?”
“তা ঠিক আছে কিন্তু ”
“আমি ওর জীবনে থাকলে ও পাগলামিগুলা করতেই থাকতো এতে করে ওর দুনিয়াটা সংকুচিত হয়ে যেতো।নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতোনা।ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস দের গুরুত্ব বুঝতোনা।আমার সাথে যা করেছে তাতে আমার কোনো আফসোস ছিলোনা।ওর প্রতি কোনো রাগ ছিলোনা আমার সাথে বাজে বিহেভ করেছে বলে।কিন্তু নিজের শরীরের ক্ষতি এসব আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।আর আমি থাকলে ও এমন ই করতো আর নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারতোনা।ওকে সুন্দর একটা লাইফ দেয়ার জন্যই আমি ওর জীবন থেকে সরে এসেছি।নাহলে ও কখনো লাইফে আগে বাড়তে পারতোনা।কিন্তু নিজের এ অবস্থা করবে ভাবিনি।”
মায়া এসব শুনে অনেক খুশি হয়।ওর আরফু ওকে ভালোবাসে আর মায়ার ভালোর জন্য ই ওকে ছেড়ে দিয়েছিলো।তাই আজ এ বিয়ে ভেঙে দিতে বলবে।তাই রুমে যেতে নেয় আর শুনে,
“কিন্তু আন্টির কি হবে তুই ভেবেছিস?”
“কি আর হবে?”
“যদি আবার ও বিষ খায়?”
“খেলে আমি কি করতে পারি?”
“আন্টির কিছু হয়ে গেলে?”
“আমি চাইনা মায়ের কিছু হোক।আর মায়া হয়তো আমাকে ঘৃণা করে।তাই বিয়েটা করতেই হবে। এমনটা…” আরো কিছু বলার আগেই দরজায় ধাক্কার আওয়াজ আসে আর দেখে মায়া দৌড়িয়ে চলে যাচ্ছে।আরাফ আরো বলতে নেয় “এমনটা করার নাটক করে পালাতে হবে” কিন্তু তার আগেই মায়া দৌড়িয়ে চলে যায়।
“ওহ শিট না জানি কি শুনেছে!”
আরাফ এটা বলেই মায়ার পিছনে দৌড় দেয়।আর বারবার বলছে “মায়ু দাড়াও।আমার কথাটা শুনো!” কিন্তু মায়া শুনছেই না।ও ভাবছে আরাফ আর ওর হবেনা।তাই এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। ওর বিয়েটা ও দেখতে পারবেনা।পারবেনা আরাফকে অন্য কারোর হতে দিতে।দৌড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।মায়ার পিছনে আরাফ দৌড়াচ্ছে আর আরাফের পিছনে আলাক এটা দেখে বাকি সবাই অবাক। তারাও ওদের পিছু আসে।
মায়া রাস্তায় দৌড়িয়ে যেতে নেয় আর একটা প্রাইভেট কার ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মায়ার নিথর দেহটা পড়ে থাকে রাস্তার মাঝে।রক্তাক্ত শরীরে শাড়িটা ভিজে যাচ্ছে।রাস্তায় রক্তের ছড়াছড়ি!এমন একটা দৃশ্য দেখে আরাফের পৃথিবীটাই থমকে যায়।লোক জড়োসড়ো হচ্ছে মায়ার চারদিকে।আর বাকিরাও এমন একটা দৃশ্য দেখে থমকে যান।
To be continued…