বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৪

0
1062

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৪
#লেখনিতেঃনুসরাত

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা জিনিসের সম্মুখীন হতে হবে জানা ছিলোনা আরাফের!কিন্তু ওর মা ওর সাথে এমন টা কেনো করলেন?সবকিছুর উত্তর আরাফের চাই ই চাই।

কিছুক্ষণ আগে আরাফের ভাবি এসে আরাফকে ডেকে দিয়ে বলে গেছে আরাফকে দেখতে ওর মায়ের বান্ধুবী আর তার পরিবারের সাথে মেয়েও এসেছে আরাফ যেনো রেডি হয়ে নিচে আসে।এসব শুনেই আরাফের মেজাজ চড়ে গেছে।রাগে কপালের রগ ফুলে আছে। কোনোরকমে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রাতের পরা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরেই নিচে চলে এসেছে।

আরাফকে এইভাবে দেখে ওর মায়ের ভীষণ রাগ হয় কিন্তু বান্ধুবীর সামনে কিছু বলতেও পারছেন না।আর আরাফের ভাবিতো হেসে কুটিকুটি।আরাফের ভাবি জানে মায়ার কথা।তার দেবর মায়াকে কতটা ভালোবাসে। আরাফ সবকিছুই ওর ভাবির সাথে শেয়ার করে একদম বন্ধুর মতো সেই ধারাতেই আরাফের ভাবি মিরা তার দেবরের পাগলামি আর ওদের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জানে কিন্তু কেনো বিচ্ছেদ হয়েছিলো তা জানেনা।আর এয়ো জানে যে আরাফ আর বিয়ে করতে চায়না তাইতো বিগত ৬ বছর যাবৎ বিয়ের ব্যাপারে ওর মা বললে এড়িয়ে চলে আর না করে দেয় কিন্তু এইবার তো ডাইরেক্ট মেয়ের পরিবার নিয়ে বাড়িতে হাজির করিয়েছে।না জানি তার দেবর কোন জোয়ালামুখি ফাটায়!এসব ভেবেই চিন্তা হচ্ছে মিরার।

আরাফ চুপচাপ এসে সোফাতে বসে পড়ে মিরার পাশে কেনোনা ও চায়না বাইরের মানু্ষের সামনে কোনো সিন ক্রিয়েট করতে।দেবরের এতো শান্ত ব্যবহার হজম হচ্ছেনা মিরার।তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরাফকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে,

“কি দেবর সাহেব?তোমার ঐ মস্তিষ্কে কোন অদ্ভুত পরিকল্পনা চলছে?”

“শুধু মেহমানদের যেতে দাও ভাবি তারপর দেখো আমি কি করি।মাকে আমি ডাইরেক্ট বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবোনা তারপরও এরকম টা মায়ের কেনো করতে হলো।আই নিড আন্সার!” আস্তে আস্তে দাতে দাত চেপে বলে।

“আচ্ছা আচ্ছা দেবর সাহেব ঠিক আছে এখন শান্ত হও”

আর এদিকেতো আরাফকে দেখতে আসা আরাফের মায়ের বান্ধুবীর মেয়ে ইশা আরাফের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

লম্বা ও হলুদ ফর্সা দেহের গড়ন।চুলগুলা সিল্কি কপালের এক পাশে পড়ে আছে।চোখে গোল কালো স্টিলের ফ্রেমের চশমা। চোয়ালের উপরের দিকে গজদাঁত। হাসলে!সে কি সুন্দর দেখায়!যেকোনো মেয়ে এই হাসি দেখলে পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু আরাফ সচরাচর হাসে না আর ৬ বছর যাবৎ তো হাসেইনা।

শরীরে সাদা শর্ট হাতার টি শার্ট, কালো ট্রাউজার আর পায়ে স্লিপার্স পরে দৌড়াতে দৌড়াতে নামছিলো সাথে ওর সিল্কি চুলগুলো উড়ছিলো। ইশা তৎক্ষনাৎ ক্রাশ খেলো।তাও যেমন তেমন না বড়সড় ক্রাশ!ওর তো ওকে বিয়ে করতেই হবে।অনেক শুনেছে ওর বড় বোনের মুখে সাহানা আন্টির দুই ছেলেই দেখতে অসম্ভব সুন্দর।ওর বোন নিশা আরাফের ভাই সারাফকে পছন্দ করতো কিন্তু সারাফ প্রেম করে মিরাকে বিয়ে করে ফেলে যার জন্য নিশার মা নিশার কথা সাহানা চৌধুরীকে বলতে পারেননি কিন্তু ছোট মেয়ের জন্য উনার ছোট ছেলের কথাতো চালাতেই পারেন যেহেতু ছোট ছেলের কেউ পছন্দের নেই।কিন্তু তারা কি আর জানে আরাফ মারাত্মকভাবে পাগল মায়ার জন্য?আর নিশা এয়ো বলেছে সারাফের থেকে আরাফ বেশি ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম আর চশমাতে অসম্ভব কিউট লাগে।ওর বিয়ে না হলে আরাফকেই বিয়ে করতো!এসব শুনেই ইশার আরাফকে দেখতে ইচ্ছা করতো আজ দেখে যেনো পাগল ই হয়ে গেছে।বেক্কলের মতো হা করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

ইশাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে মিরা।আর আরাফকে পেটে গুতা মেরে বলছে,

“দেখুন দেখুন দ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাশিং আরাফ চৌধুরীর দিকে বেক্কলের মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে নয়না আন্টির ছোট মেয়ে ইশা!অবশ্য চাইবে নাইবা কেন?সবসময়ের মতো মেয়েদের নাম্বার ওয়ান ক্রাশ কে যে দেখলো।কিন্তু আমার দেবরজিতো কাউকে পাত্তাই দেয়না!” আস্তে আস্তে হাসতে হাসতে বলে।

“ভাবি!” আস্তে বিরক্তির সুরে।

আরাফের মা সবার উদ্দেশ্যে বলা শুরু করেন,
“আমি আর নয়না স্কুল লাইফ থেকে ফ্রেন্ডস বলতে গেলে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ডস।ছোট থেকেই আমরা বলে আসতাম তোর ছেলে হলে বা মেয়ে হলে আমার মেয়ে বা ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।আর দেখো সেটাই হয়েছে।আমার দুটো ছেলে আর ওর দুটো মেয়ে।যদিও আমার দুই ছেলেই ওর মেয়েদের থেকে বড়।কিন্তু আমার বড় ছেলে সারাফের আগে থেকে মিরাকে পছন্দ ছিলো বিধায় আমরা এগোইনি।আবার নিশার ও বিয়ে হয়ে গেছে নাহলে আরাফের সাথেই ওর বিয়ে দিতাম কিন্তু পরে একদিন ইশার কথা ভাবলাম।যেই ভাবা সেই কাজ।আর আমি আজ ইশাকে আংটি পরাতে ওদের সবাইকে ডেকেছি।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছিনা আরাফ।যা বলার পরে বলবে।”

এসব শুনে আরাফের মাথায় রক্ত উঠে যায়।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।আর এদিকে আরাফের মা ইশাকে আংটি পরিয়ে পাকা কথা দিয়ে দেয়।আগামী শুক্রবার ই এঙ্গেজমেন্ট আর তার ২ দিন পর হলুদ আর ৩ দিন পর কাবিন করে রাখবে আর ইশার গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে আসবে।আরাফ তখন ই উঠে হনহনিয়ে চলে যায় আর এসেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে ঘুষি মারে আর চুড়চুড় করে আয়না ভেঙে যায়।হাত দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।এমন বিকট আওয়াজে মিরা আর ওর শাশুড়ি উপরে আরাফের রুমে আসেন।

অন্যদিকে মায়ারা ডাইনীং টেবিলে বসে খাচ্ছিলো।এই এক সময় যখন সবাই একত্রিত হয়।তাই মায়ান বলা শুরু করে,

“বাবা- মা তোমাদের মনে আছে?আমার কলেজ লাইফ ফ্রেন্ড আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মিরার কথা?প্রায় প্রায় যে বাসায় আসতো আর আমাদের মায়ুর সাথে সবসময় থাকতো?”

“হ্যা ভাইয়ু মিরাপুর কি হয়েছে?আবার ও বেবি হবে নাকি?” উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে।

এতবছর পর বোনকে এতটা উচ্ছ্বাসিত দেখে খুশি হয়। আর ভাবে হয়তো এই অনুষ্ঠান গুলায় গেলে ওর মন ভালো হবে তাই সবাইকে যাওয়ার জন্য রাজি করাবেই।

“আরে না।ওর দেবরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।আগামী শুক্রবার ই এঙ্গেজমেন্ট তার ২ দিন পর হলুদ আর তার ৩ দিন পর ই বিয়ে।বিয়ে বলতে কাবিন করে রাখবে আরকি।তো মিরা আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে স্পেশালি মায়ুকে।আরও বলেছে মায়ু না গেলে ও নিজে এসে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে।” হাসতে হাসতে বলে মায়ান।

“তার দরকার পড়বেনা ভাইয়ু আমি অবশ্যই যাবো।কতবছর হলো আপুকে দেখিনা।আর আপুর বেবিটাও হয়তো বড় হয়েছে।ওকেও দেখিনি কখনো দেখা হয়ে যাবে গেলে।প্লিজ প্লিজ না করোনা।আর অহনাকেও নিয়ে যাবো প্লিজ আপুকে বলো”

“আচ্ছা বলে দিবো”, খুশি হয়ে।

মেয়েকে এত খুশি দেখে মায়ার মা-বাবাও রাজি হয়ে যান যাওয়ার জন্য।

এদিকে মায়াও জানেনা ওর মিরা আপুই ওর আরফুর বেস্ট ভাবি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড যার কথা সবসময় আরাফ মায়াকে বলতো।আর না মিরা জানে ওর বেস্টু মায়ানের বোন মায়ুই ওর দেবরের মায়াপরী।কে জানতো এরকম ঝড় ওদের জীবনে আসবে?কি হবে মায়ার আর আরাফের বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসার পরিণতি?
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে