#বালির_সংসার
পর্ব-১৬
.
সমুদ্রের তীরে বালি দিয়ে বানানো ছোট্ট একটা ঘর৷
হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢেউ কিংবা বাতাসে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
অর্থির চোখের সামনে শুধু তাই ভেসে উঠছিলো।
সে মনে করেছিলো, ভালোবাসা, যত্ন, ত্যাগ দিয়ে এই সংসার কে বাচাবে। হোক না ঘর বালির! তাতে কি? ভালোবাসা তো সব পারে।
ইট, কাঠ, সিমেন্ট দিয়ে শুধু ঘর হয়। সংসার তো হয় না।
কিন্তু সংসার ও যে বালির হয় আজ সে বুঝতে পারছে৷
হাতে হাতে গড়ে তোলা তার এই বালির সংসার নিশি নামক ঝড়ো হাওয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
.
( আশা করছি নামের অর্থ খুজে পেয়েছেন। যাদের গল্পের নাম নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো)
.
.
রুপের সাথে নিশির সম্পর্ক অনেক বছরের। কথা ছিলো নিশির পর পর রুপ কানাডা চলে যাবে। সব ঠিক ছিলো। যাওয়ার পনেরো দিন আগে বাবা মা মারা যায়৷ তারপর নিজের জন্যে অর্থির এমন অবস্থা দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। অর্থির দায়িত্ব নিলো।
সম্পর্ক ধীরেধীরে ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়েছিলো। কিন্তু নিশির ফিরে আসা যেনো ধমকা হাওয়া মতো।
নিশিও যে খুব কাছের।
কেনো যেনো আজ কাল অর্থি কে চিন্তা করতে পারে না। মাথায় ঝিরিঝিরি ব্যথা হয়।
কিন্তু নিশির পরশে সব ভুলে যায়।
সাফল্য তো নিশির। আফটার অল কানাডা থেকে মেডিসিন নিয়ে এত কিছু পড়ে এসে সে যদি নিজের কাছের মানুষকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে না পারতো তবে এত লেখা পড়া করে কি লাভ?
রুপ কে সে পেয়েছে। হোক না নেশার ঘোরেই, হোক না অবচেতন মনেই তবুও তো কেড়ে নিয়েছে।
কারণ নিশি জানে রুপ সজ্ঞানে অর্থি কে ছাড়বে না। কিন্তু তার রুপ কে সে কাউকে দিবে না।
.
.
সারাদিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলো আয়ান! কাল পাগলীটার জন্ম দিন। ঘড়িতে কাটায় কাটায় দশটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।
বেশি কিছু নেয়নি। stargazer ফুল,কিছু চকলেট আর ছোট ছোট পুতুল। এগুলো দিলেই বোন খুশি৷ Stargazer বলতে তো পাগল। এই ফুল দেখলে মুখে হাসি ফুটবেই৷
মেয়েটা কয়েকদিনে কেমন হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে অর্থির প্রিয় চিজ কেক সাথে স্পেশাল বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় ঢুকে আয়ান।
সারাদিন বোনের খেয়াল রাখতে পারেনি। সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেই চলে গেছে।
দুপুরের দিকে মন টা খুব ছটফট করছিলো কিন্তু এক্সাম ছিলো তাই আসতে বা কল দিতে পারেনি।
অর্থির রুমে গিয়ে দেখে অর্থি নেই।
হয়তো ঘুমের মধ্যে আদিত্যদার রুমে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে না পেয়ে বেশ ভয় পায়।
সারা বাসায় নেই।
চিৎকার করে ডাকলেই মা বলে নিজের বাসায় গেছে।
মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় আয়ানের।
– তোমার মাথা ঠিক আছে? তুমি কোন আক্কেলে আপু কে যেতে দিছো? একটা দিন সামলাতে পারলা না? আল্লাহ জানে আমার বোন কেমন আছে! ওর কিছু হইলে তোমারে ছাড়বো না।
.
আয়ান দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে কিছু একটা নিয়ে বের হয়ে যায়। আয়ানের হঠাৎ এমন রেগে যাওয়া দেখে মা বেশ চমকে উঠে।
গাড়ি নিয়ে অর্থির বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান গেট খুলে দেয়৷
ওর কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে অর্থি কে খুজতে থাকে। আত্নায় যেনো পানি নেই।
বেডরুমের দিকে যেতে দেখে অর্থি পড়ে আছে। রক্ত জমাট বেধে গেছে৷ চোখ খুলছে না।
ভয় হয় আয়ানের।
কিছু না বলেই উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে আসে। দারোয়ান চাচা শুধু দেখছিলো।
.
আধ ঘন্টা পর অর্থির জন্ম দিন। কতই না পাগলামো করতো। আদিত্যর ফোনের গ্যালারি তে শুধু ওর ছবি। সেই পিচ্চি অর্থি, আবদার গুলো বড্ড পোড়ায়। কেনো সেদিন আদিত্য একটু ধৈর্য্য ধরলো না? সে কেনো ভুলে গিয়েছিলো যা দেখা হয় সব সত্যি না।
এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্যর ফোনে কল আসে আয়ানের।
– আদিত্য দা! নরমাল এক্সিডেন্ট হলে যা যা মেডিসিন প্রয়োজন সেসব নিয়ে প্লিজ বাসায় আসো।
.
আয়ানের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই কেটে যায়।
আচ্ছা অর্থির কিছু হয়নি তো?
.
.
অর্থির রুমে ঢুকে আদিত্যর পিলে চমকে উঠে।
মাথায় কাটা দাগ, গালে কেটেছে। বাম হাতের কনুইয়ে কাচের টুকরো গেথে আছে। নাকের ভিতরে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। হাটুর অংশে সালোয়ার রক্তে লাল আরো পুরো শরীরে মারের দাগ৷ অজ্ঞান হয়ে আছে।
আয়ান আদিত্য দুজনে মিলে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে শুয়িয়ে দিলো। আদিত্য ডান হাতে ধরে বসেছিলো। বা হাতে স্যালাইন চলছে৷
ঘড়ির কাটায় বারোটা।
ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত অর্থির কপালে চুমু দিয়ে উইশ করলো
– শুভ জন্মদিন আমার পিচ্চি আপু৷ দেখিস তোর এই ছোট ভাই তোর সব কষ্ট দূর করে দিবে।
.
.
চলবে।
Sabiya moon