বালিকা বধূ পর্ব-০৫

0
1052

#বালিকা_বধূ
[পর্ব -৫]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

সালমা বেগম ভাবতে থাকে কি ভাবে নাঈমা আর রাকিবকে আটকানো যায়। শুয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে। তার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি চলে আসে। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে নাঈমা আর রাকিব চুপচাপ হয়ে আছে কেউ কারোর সাথে কথা বলছেনা। হঠাৎ করে নাঈমা রাকিবকে বলল — একটা কথা ছিলো!

— বলো কি কথা?

–আপনি কি কখনো কারোর সাথে প্রেম করে ছিলেন? কাওকে কি কখনো ভালোবেসেছিলেন?

— হুম, একটা মেয়েকে আমি খুব ভালো বাসতাম। কিন্তু জানিনা কি কারণে মেয়েটা আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে অন্য কাওকে বিয়ে করে ফেলে।

— আপনাদের গল্পটা শুনতে চাই শোনাবেন আমাকে?

— আজ না অন্যদিন এখন অনেক রাত হইছে ঘুমাও।

— আমার ঘুম আসছেনা। আপনার গল্প শুনবো শোনান প্লিজ।

— ওকে, তাহলে শোনো।

তারপর রাকিব নাঈমাকে তার অতীতের ঘটনা বলতে শুরু করে।

— আমি অনেক আগে থেকে একটা মেয়ে কে পছন্দ করতাম। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলো। আমি সব সময় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু মেয়েটাকে বলার মতো সাহস পেতাম না। আমি মেয়েটার পিছনে ঘুরঘুর করতাম। মেয়েটাকে সব সময় আমি ফলো করতাম। একদিন হুট করে মেয়েটাকে প্রপোজ করে ফেললাম। মেয়েটাও রাজি হয়ে গেলো। আমাদের রিলেশন খুব ভালোই চলছিলো। মেয়েটাও আমাকে অনেক ভালোবাসতো। খুবা ভালো ভাবেই আমাদের দিন কেটে যাচ্ছিলো। আর আমি এই দিকে আমদের দুজনের পড়াশোনা শেষ। আমি চাকরির জন্য অনেক যায়গায় ইন্টারভিউ দিতে থাকি। এই দিকে আমাদের রিলেশনের এক বছর কেটে যায়। আমাদের রিলেশনের কথা আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ জানতোনা। হঠাৎ একদিন লামিয়া আমাকে এসে বলল – (লামিয়া রাকিবের এক্স গার্লফ্রেন্ড এর নাম)

লামিয়া রাকিবের কাছে এসে বলল — রাকিব বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে আমি কি করব বলো? আমি বার বার বাবাকে না করে দিচ্ছি। এই অব্দি অনেক ছেলে আমাকে দেখতে এসেছে আমি একবার এক কথা বলে বিয়ে ভেঙে দিচ্ছি। এই ভাবে আর কতো? তুমি একটা কিছু কোরো প্লিজ।

— আমি এখন কি করব বলতে পারো? আমিতো এখনো বেকার। অনেক যায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছি কিন্তু কিছুতেই আমার চাকরি হচ্ছেনা। প্লিজ আমাকে আরো কিছুদিন সময় দাও।

— আমি তো সময় দিতে পারবো কিন্তু আমার বাবাকে আমি কি বলব? নাহলে তুমি তোমার বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসো।

— আমি এখন কি ভাবে যাবো? আমি গিয়ে তোমার বাবাকে বলব আমি বেকার, আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই? এসব বলবো নাকি? তারপর আমার এসব কথা শুনে তোমার বাবা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিবে?

— আমি এতো কিছু জানিনা রাকিব। তুমি যা করবে তাড়াতাড়ি করবে। আমাদের হাতে সময় খুব কম।

— আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়।

তারপর লামিয়া আর কিছু না বলে তার বাসায় চলে গেলো। একটু পরে আমি আমার বাসায় চলে গেলাম। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম। বালিশের উপরে মাথা রাখতেই লামিয়ার কথা মনে পড়ে গেল। শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম কি করব আমি? এখন আমার কি করা উচিৎ! এক দিকে নিজের ভালোবাসার মানুষের কথাও কাওকে বলতে পারছিনা। কোন মুখে বলব আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি তাকে আমি বিয়ে করতে চাই! যেখানে আমার খাওয়া দাওয়ার সব কিছু আমার পরিবার দেখে সেখানে আমি আরেক জনের কথা কি ভাবে বলি? কিছুই ভালো লাগছেনা আমার। এসব ভাবতে ভাবতে দেখি লামিয়া কল দিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত একটা বাজে। এসময় লামিয়া আবার কল কেনো দিল! এসব ভাবতেই কল কেটে গেলো। আবার কল দিল লামিয়া। আমি আর দেরি না করে কল রিসিভ করলাম।

লামিয়ার কল রিসিভ করতেই লামিয়া কান্না বেজা গলায় বলে উঠলো — রাকিব কিছু একটা করো প্লিজ না হলে আমার আর কিছুই করার থাকবেনা।

— কান্না করছো কেন কি হইছে তোমার?

— আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে, আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে।

লামিয়ার মুখে এমন কথা শুনে যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। বুকের ভিতর টা চিনচিন করে উঠছে।

— চুপ হয়ে আছো কেন? আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাওকে নিজের স্বামী বলে মেনে নিতে পারব না।

— আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। কাল বিকালে একটু দেখা করবে প্লিজ?

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— এখন রাখলাম কান্না করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।

— আচ্ছা।

তারপর ফোন রেখে দিলাম। আমার চোখের পানি টলমল করছে। আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। এতো দিন চেষ্টা করার পরেও আমি একটা চাকরি যোগাড় করতে পারিনি। আমার ভাগ্য টা এতো খারাপ হবে ভাবিনি আমি। ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছিনা। কিছুতেই চোখে ঘুম আসছেনা। লামিয়ার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে।
রাতটা কি ভাবে কেটে গেলো বুঝতে পারিনি। পরের দিন লামিয়ার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম। দেখি লামিয়া আমার আগে এসে বসে আছে। লামিয়াকে দেখে আমার খুব খারাপ লেগে উঠলো। মেয়েটির চোখ পুরো ফুলে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা সারারাত কান্না করে কাটিয়ে দিয়েছে। লামিয়ার কাছে যেতেই লামিয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

আমি লামিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকলাম — লামিয়া প্লিজ এই ভাবে কান্না করোনা। সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ে তো ঠিক হয়েছে মাত্র বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি। আমাদের হাতে ৫ দিন সময় আছে।

— এই ৫ দিনে তুমি কি করবে শুনি?

— দেখি কি করতে পারি। কিছু একটাতো করতে হবে আমাকে। তুমি এখন বাসায় চলে যাও আমি তোমাকে রাতে কল দিয়ে বলব সব কিছুই।

— ঠিক আছে কিন্তু যা করবে খুব তাড়াতাড়ি করবে।

— হুম।

তারপর লামিয়া তার বাসায় চলে যায়। আমিও আমার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় যেতে যেতে ভাবলাম আম্মুকে সব কিছুই বলব। কারণ আমার আম্মু আমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি আমার আম্মু আমাকে ঠিক বুঝবে। তারপর আমি বাসায় গিয়ে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আম্মুকে গিয়ে বললাম — আম্মু তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।

— কি কথা বল!

— আম্মু আমি কাল থেকে আব্বুর সাথে ব্যবসা করবো।

— কি ব্যাপার রাকিব? যাকে এতো করে বলেও দোকানে ফাটানো যায়না আর তাত মুখেই এমন কথ্য?

— আম্মু তোমাকে আমার আরো কিছু কথা বলার আছে।

তারপর আমি আম্মুকে লামিয়ার কথা সব বললাম। লামিয়ার বিয়ে ঠিক হইছে ওই সব ও বললাম। আম্মু আমার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। কারণ আমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা কারো সাথে কখনো মিশতে পারিনি। আমার সব শুধুই ছেলে ফ্রেন্ড ছিলো কখনো আমার কোনো মেয়ে বন্ধু ছিলনা। কারণ আমার আম্মু আমকে সব সময় বয় স্কুলে পড়াশোনা করিয়েছে। যাইহোক গল্পে ফিরে আশি।

আম্মু বলল — মেয়ে টাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসিস।

আম্মুর কথা শুনে আমি অনেক খুশি হয়ে গেলাম। আমি জানতাম আম্মু আমকাএ বুঝতে পারবে। রাতে লামিয়াকে কথাটা বললাম। লামিয়া ও অনেক খুশি হয়ে গেলো। বুঝতে পারেনি এটাই আমার জীবনের শেষ খুশি।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে