বালিকা বধূ পর্ব-০১

0
2101

#বালিকা_বধূ
[সূচনা পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

পিরিয়ড অবস্থায় বিয়ের সাজে বসে আছে তেরো বছরে ছোট্ট বালিকা নাঈমা। হঠাৎ করেই তার পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলো। নাঈমা পিরিয়ডের অসহ্য যন্ত্রণায় পেটে হাত দিয়ে কাতরাতে থাকে। নাঈমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে। মেয়েটা কাওকে কিছু বলতেও পারছেনা। নাঈমা এমন অবস্থা দেখে তার মা শিউলি বেগম এগিয়ে আসে। শিউলি বেগম নাঈমার মাথায় হাত রেখে বলল — মা কি হয়েছে তোর?

নাঈমার সামনে সবাই বসে আছে তাই নাঈমা কোনো উত্তর না দিয়ে তার ঠোঁট দিয়ে নিজের ঠোঁট চাপ দিয়ে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করে। ব্যপার টা শিউলি বেগম কিছুটা বুঝতে পারে। সে নাঈমাকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়।

ঘরে নিয়ে শিউলি বেগম নাঈমাকে বলল — কিরে তোর কি কিছু হয়েছে নাকি?

তখন নাঈমা বলল — মা আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। পেটে অসহ্য ব্যাথা করছে। আমি এই ভাবে বিয়ে করতে পারবোনা। তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো।

শিউলি বেগম বুঝতে পারে ব্যপার টা কিন্তু তার তো কিছুই করার নাই। সে চাইলেও বিয়েটা ভেঙে দিতে পারেনা। হটাৎ করে শোনা যায় বর এসেছে। বর এসেছে কথাটা শুনে নাঈমা আঁতকে উঠল। তার মনের ভিতরে ভয় ঢুকে গেলো। নাঈমা কান্না করতে করতে তার মাকে বলল – মা তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও প্লিজ। আমি এই অবস্থায় বিয়ে করতে পারবোনা।

তখনই ঘরে চলে আসে নাঈমার বাবা মিজান সাহেব। মিজান সাহেব ঘরে এসে দেখে নাঈমা কান্না করছে। তখন মিজান সাহেব নাঈমার দিকে এগিয়ে আসে আর বলতে থাকে — মারে মেয়েদের আসল ঠিকানা হলো তার শ্বশুর বাড়ি। সব মেয়েদের এটা মেনে নিতে হয়।

মিজান সাহেব আসল ঘটনা টা বুঝতে পারেনি। নাঈমা তার বাবাকে কিছু বলতেও পারছেনা। বাবাকে সে করে বলবে তার কি হয়েছে। তখন শিউলি বেগম মিজান সাহেবকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো আর তাকে সব কিছুই খুলে বলল। মিজান সাহেব এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু কি করা যায় সে বুঝতে পারছেনা। মিজান সাহেব অনেক্ষন চেয়ারের উপরে বসে থেকে ভাবতে থাকে। আর যদি এখন বিয়েও ভেঙে দেয় তাহলে তো আর কেউ নাঈমাকে বিয়েও করবেনা। সবাই ভাববে নাঈমার কোনো সমস্যা আছে। আর নানাজন নানান কথা বলবে। তাই মিজান সাহেব সব চিন্তা বাদ দিয়ে তার স্ত্রীকে বলল — তোমার মেয়েকে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলো।

এই কথা বলে মিজান সাহেব চলে গেলো। শিউলি বেগম তার স্বামীর এমন ব্যবহার দেখে মোটেও অবাক হলোনা কারণ সে জানে। মিজান সাহেব যেটা বলে সেটাই করে। তারপর শিউলি বেগম নাঈমার রুমে চলে যায়।

অন্য দিকে দেখা যায়। নাঈমার হবু স্বামী রাকিব বরযাত্রী নিয়ে নাঈমা দের বাসায় চলে আসছে। মিজান সাহেব সবাইকে এনে পেন্ডেলের ভিতরে বসালো। রাকিব এই বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। এক কথা বলতে গেলে তাকে জোর জড়বস্তু করেই বিয়ে করানো হচ্ছে। রাকিবের বাবা-মা জোরে করেই তাকে বিয়ে দিচ্ছে। মিজান সাহেব সবার সাথে কথা বলে পরিচয় হয়ে নিল।

এই দিকে নাঈমা মা তার রুমে এসে দেখে নাঈমা বসে আছে। নাঈমা তার মাকে দেখে বলল — মা বাবা কি বলল? বিয়েটা কি ভেঙে দিয়েছেন?

শিউলি বেগম বলল — না মা, তোর বাবকে তো চিনিস তিনি এক কথার মানুষ। যা কিছু হয়ে যাক তিনি তার কথার নড়চড় হতে দিবেনা।

— মা, তোমার কেন এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দিতে চাইছ? আমি কি তোমাদের কাছে অনেক বোজা হয়ে গিয়েছি? আনার তো এখন পড়াশোনা করার বয়স আমি এই বয়সে কি ভাবে একটা সংসার সামলাবো? বাবা কে বলোনা বিয়ে টা ভেঙে দিতে আমি এই বিয়ে করতে চাই না মা। আবার এই দিকে আনার এই অবস্থা। আমি কি ভাবে এসব অন্য একটা লোক কে বলব মা? তুমি কিছু একটা করো প্লিজ।

— আমি আর কিবা করতে পারি? চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷

— মা একটা কাজ করো আমাকে তোমরা গলা টিপে মেরে পেলো। আমার আর এসব ভালো লাগছে না।আমি বুঝতে পারছি তোমারা আমাকে তাড়াতে চাইছ তাইনা? আমি বিয়ের পরে কি ভাবে একটা অচেনা মানুষকে এই সব বলব? তারউপর ওনার পুরো অধিকার আছে আমার উপর। যদিও আমারও আছে তার প্রতি। তবুও সে যদি চায় আমি কি না করতে পারবো। সে তো আর একটা মেয়ের এই অসহ্যনীয় যন্ত্রণার কথা টা বুঝতে পারবে না। সে তো নিজের ক্ষুদা টা নিবারন করবে। এতে যে আমার জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাবে মা৷ এমনিতেই আমার বয়স অনেক কম। আমি কি ভাবে এতো কিছু সামলে নেবো?

হঠাৎ করে শিউলি বেগমকে ডাক দিলেন তার স্বামী। সে উঠে চলে গেলো। একা একা রুমের মধ্যে বসে থাকে নাঈমা। মেয়েটা অঝোরে কান্না করতে থাকে। নাঈমা বুঝে গিয়েছে তার এই বিয়ে আর আটকানো সম্ভব না। তাকে এই অল্পবয়সে স্বামীর সংসার করতে হবে। শিউলি বেগম মিজান সাহেবের কাছে গিয়ে বলল — মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করছে। এমনি তেই মেয়েটির বয়স অনেক কম আবার এখন এই অবস্থা।

— কিছু করার নেই। বরপক্ষ চলে আসছে। কাওকে কোনো কিছু বুঝতে দেওয়া যাবেনা। মেয়েকে রেডি করে নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি। বরপক্ষ অপেক্ষা করে বসে আছে। সময় নষ্ট করে লাভ নেই যাও নাঈমাকে নিয়ে আসো।

এই কথা বলতে বলে মিজান সাহেব চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে নাঈমাকে নিয়ে পেন্ডেলের ভিতরে চলে আসলো। নাঈমাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ছোট্ট মেয়েটাকে অসাধারণ সুন্দরী লাগছে।নাঈমাকে এনে রাকিবের পাশে বসানো হলো। পিরিয়ডের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে বসে আছে। একটু পর পর পেটে হাত দিচ্ছে নাঈমা। তারপর ইসলামিক নিয়মে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের সব কাজ শেষ করে এখন কোণে বিদায় করার সময় হয়ে গিয়েছে। নাঈমা তা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

শিউলি বেগম তার মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল — মা কান্না করিস না। আমাদের কথা মনে পড়লেই চলে আসিস। এটাই তো নিয়ম, সব মেয়েদের বিয়ের পরে আসল ঠিকানা হলো তার স্বামীর বাড়ি। আমিও তো আগে অন্য বাড়ির মেয়ে ছিলাম। দেখবি কিছুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর মিজান সাহেব নাঈমাকে রাকিবের হাতে তুলে দিয়ে বলল — বাবা নাঈমা আমার এক মাত্র মেয়ে। তুমি ওঁকে দেখে রেখো।

এই কথা বলতে বলতে মিজান সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। নাঈমা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে নাঈমাকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি দিকে রওনা দিল। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে রাকিবের বাড়িতে পৌছে গেলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। গাড়ি রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই কিন্তু রাকিব এখনো বাসর ঘরে আসেনি। একটা রুমে মধ্যে একা একা বসে আছে নাঈমা। প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো নাঈমাকে বাসর ঘরে এনে বসিয়ে রেখেছে। কিন্তু রাকিবের আশার কোনো নাম নেই। এই দিকে নাঈমার মনে ভিতরে অজানা ভয় আর পিরিয়ডের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বসে আছে। শরীর টাও ভালো লাগছে না। মনে এতটা আশঙ্কা থাকতো না। যদি না শরীর টা ভালো থাকতো। আতঙ্ক টা ক্ষনে ক্ষনে বেড়েই চলেছে। অচেনা একজন মানুষ। তার উপর ওনার পুরো অধিকার আছে আমার উপর। সে যদি চায় আমি কি না করতে পারবো। সে তো আর একটা মেয়ের এই অসহ্যনীয় যন্ত্রণার কথা টা বুঝতে পারবে না। সে তো নিজের ক্ষুদা টা নিবারন করবে। এতে যে আমার জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাবে। এসব ভাবতে নাঈমার ভয় যেনো বেড়েই যাচ্ছে। হঠাৎ করে কারোর আশার শব্দ শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না রাকিব আসছে। দরজার শব্দ শুনেই নাঈমার বুকের ভিতর কেঁপে উঠলো। ভয়ে তার পুরো শরীর কাপতে থাকে। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করলো রাকিব।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে