#বাবুই_পাখির_বাসা।
#পর্বঃ-০২
থানার পরিবেশ এখন থমথমে অবস্থা, সবাই একটু যেন নড়েচড়ে বসছেন। যে মেয়েটির জন্য আমার এ অবস্থা সেই মেয়েও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভদ্রমহিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে যেন মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
– আমার মনে হচ্ছে যে আমি সবার মনের মধ্যে সত্য কথাটা গেঁথে দিতে পেরেছি। তাই বললামঃ- বিশ্বাস না হলে আপনি আমার সাথে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যেতে পারেন। আমি গতকাল অফিসে ডিউটি করে বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি। আপনারা চাইলে সবকিছু খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন শুধু শুধু আদালতের দিকে নিবেন না।
– মহিলা বললেন, বাসের টিকিট আছে?
– হ্যাঁ আছে, আমি পকেট থেকে টিকিট বের করে তার হাতে দিলাম। টিকিট বের করার সময় দেখলাম আরেকটা কাগজ আছে সেখানে কিন্তু যতটুকু মনে পরে যে সেই কাগজ আমার না। মহিলা টিকিট চেক করেছেন আর আমি সেই কাগজের দিকে তাকিয়ে পড়ার চেষ্টা করছি। বেশি কিছু লেখা নেই, সেখানে লেখা আছেঃ-
“তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই নেমে যাবার সময় তোমাকে ডেকে বিরক্ত করলাম না। সুপারভাইজারকে বলে দিচ্ছি সে তোমাকে কুড়িল বিশ্বরোড নামিয়ে দেবো। যে পাখিটা তোমাকে বাবুই বলে ডাকে সেই পাখিটা আগামীকাল অপারেশনের পরে কেমন আছে সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম। আমার নাম্বার রেখে দিচ্ছি তুমি কল দিও। ”
বুঝতে পারছি এটা গতকাল বাসের মধ্যে পাশের সিটে বসা সেই আঙ্কেলের চিরকুট। আমি সম্মুখে তাকিয়ে দেখি পুলিশ দুজন এগিয়ে এসে তালা খুলে দিচ্ছে, তারমানে আমি মুক্তি পাচ্ছি। একজন পুলিশ আমার দিকে আমার মোবাইল এগিয়ে দিল, আমার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন তারা। মোবাইল অন করে সাথে সাথে কল দিলাম পাখির নাম্বারে কল রিসিভ করলো ওর বোন।
– হ্যালো সজীব? কোই তুমি? তোমার নাম্বার বন্ধ কেন ভাই?
– আপু আমি থানায় আছি, গতকাল রাতে একটা ছোট্ট ঝামেলা হয়ে গেছে। আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো, অপারেশন কি শুরু হয়ে গেছে?
– নাহহ, ফজরের কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ করে পাখি বমি করা শুরু করে। প্রচুর অসুস্থ হয়ে গেছে তখন, তারপর কর্তব্যরত ডাক্তার যিনি ছিলেন তিনি ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে। আর একটা স্যালাইন লাগানো হয়েছে, পাখি সেই থেকে এখনো ঘুমাচ্ছে। আর বড় ডাক্তার অপারেশনের সময় পরিবর্তন করে আজকে বিকেলে দিয়েছে।
– ওহহ আলহামদুলিল্লাহ, আমি একটু পরে পৌঁছে যাবো আপু, এর মধ্যে যদি পাখির ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে বলবেন যে আমি বাইরে আছি। পুলিশের ঝামেলার কারণে সময় মতো পৌঁছাতে পারিনি সেই কথা বলার দরকার নেই।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসো।
– ঠিক আছে আপু।
আমার সাথে একজন পুলিশ, সেই মেয়ে ও মহিলা যাচ্ছে হাসপাতালে। পুলিশের গাড়িতে করে আমরা চলছিলাম তবে সবাই চুপচাপ, নীরব।
★★
পাখির ঘুম ভেঙেছে সাড়ে এগারোটার পরে, আমি তখন ওর কেবিনের মধ্যে ছিলাম। পাখির মা-বাবা বোন দুলাভাই আর তিনটা বান্ধবী আছে এখানে। এরা কেউ আমার পরিচিত নয়, কিন্তু পাখির মায়ের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকবার। আর ওর বোনের সাথে আগে দুদিন বলেছিলাম আর গত রাতে যেটুকু বললাম সেটুকুই।
আমি পাখির সাথে দেখা করে সামান্য কিছু কথা বলে খাবার খাওয়ার কথা বলে উঠে গেলাম। এখন এখানে বেশি কথা বলা ঠিক না, ওর আত্মীয় স্বজন অনেকে আছে। পাখির করা পাগলামি তারা হয়তো প্রশ্রয় দিবে না, আর এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবে না তাই সরে গেলাম। পেটের মধ্যে সত্যি সত্যি খুব ক্ষুধা পাচ্ছে কিন্তু তেমন কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।
পৌনে দুটোর দিকে হঠাৎ বৃষ্টি কল দিল, তার সেই পুরনো নাম্বার আজও ব্যবহার করে। এই নাম্বারেই কল দিয়ে আমি মাঝে মাঝে আমার মেয়ের খবর নিতাম। কিন্তু বৃষ্টি একদিন বললো যে সে সময় করে আমাকে কল দিয়ে জানাবে। আমি যেন হুটহাট করে কল দিয়ে না ফেলি তাহলে নাকি ওর সমস্যা হয়।
– রিসিভ করে কিছু না বলে চুপ করে আছি, বৃষ্টি ওপাশ থেকে বললোঃ- কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
– আছি মোটামুটি, হঠাৎ করে ঢাকা কেন?
– আসতে পারি না?
– তা পারো কিন্তু তুমি তো চট্টগ্রাম থেকে কোন কাজ ছাড়া আসার মানুষ নয়।
– হ্যাঁ কাজেই এসেছি।
– অনেক রোগা হয়ে গেছো, ওজন কত?
– ৬১ কেজি।
– আমি যখন ছিলাম তখন ৭৫ এর বেশি ছিল।
– সময়ের সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায় বৃষ্টি, স্নিগ্ধা কেমন আছে?
– দেখলে তো গতকাল, খুব ভালো আছে।
– এখন কি করে?
– ওর বাবার সঙ্গে ঘুমাচ্ছে।
– কার সঙ্গে?
– কিছু না বাদ দাও, তুমি কি কাজে এসেছো?
– এক বন্ধুর অপারেশন আজকে তাই তাকে দেখার জন্য এসেছি, তুমি চিনবে না।
– তোমার সব বন্ধুকে আমি চিনতাম কিন্তু এখন চিনবো না মানে? কে সে?
– তার নাম পাখি, তবে আমাকে পছন্দও করে।
– ওহ্হ আচ্ছা, তাহলে এতদিন পরে…!
– তেমন কিছু না, সে আমাকে ভালবাসে কিন্তু আমি তো সেই আগের মতো।
এরপর বৃষ্টির কাছে পাখির সাথে পরিচয়ের পরের সবকিছু বললাম। বৃষ্টি আসলে এমনই, কৌতূহল খুব বেশি তার, তাই সে যেভাবে প্রশ্ন করেছে আমিও সেই ভাবে জবাব দিলাম।
– সব শুনে বৃষ্টি বললো, মেয়েটা তোমাকে সত্যি সত্যি অনেক ভালবাসে সজীব। তুমি তাকে কষ্ট না দিয়ে আপন করে নাও তাহলে সুখী হবে।
– তুমিও তো আমাকে প্রচুর ভালবাসতে কিন্তু কোই? তোমাকে নিয়ে কি সুখী হতে পেরেছি?
– সবাই তো আমার মত খারাপ নাও হতে পারে।
– তাহলে কি চাও তুমি?
– আমি চাই, ওই মেয়ে সুস্থ হবার পরে তুমি তাকে বিয়ে করে নতুন করে জীবন শুরু করো। তোমার যে জীবন আমি তছনছ করে দিছি সেটা গোছানোর জন্য তাকে নিয়ে আসো। তোমরা দুজন সত্যি সত্যি অনেক সুখে শান্তিতে থাকবে এটা আমার বিশ্বাস। হয়তো প্রকৃতি তোমার আমার জীবনে সুখ লিখে দেয় নাই নাহলে তখন কেন বা তোমাকে হাঠাৎ করে ডিভোর্স দিলাম বলো?
– তুমি আমার বিয়ের জন্য দোয়া করিও না বৃষ্টি, কারণ সত্যি সত্যি যদি আমি পাখিকে বিয়ে করি তাহলে কিন্তু আমার মেয়ে আমি আমার কাছে নিয়ে আসবো। তখন পাখি হবে তার মা আর আমি তো তার আসল বাবা আছিই। সহ্য করতে পারবে তো সেদিন?
বাকি কথা শুনতে পাওয়ার আগেই মোবাইল কান থেকে নামিয়ে নিতে বাধ্য হলাম। কারণ পাখির বোন আমার সামনে দ্রুত হেঁটে এসে দাড়ালেন, তিনি মনে হয় সামান্য হাঁপাচ্ছেন।
– আপু বললো, তুমি একটু তাড়াতাড়ি কেবিনে আসো সজীব।
চলবে….
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।