‘বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, তুই একটা কিছু কর, নইলে কিন্তু আমি বাঁচবো না আকাশ’ কথাগুলো বলে, কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সাদিয়া।
আকাশ বললো, ‘আমার আর কি করার আছে, তোমার বাবা আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে নারাজ, তুমিও পালিয়ে যেতে রাজি না, এখন কল্পনায় তোমাকে নিয়ে নাচ-গান করা ছাড়া আমার আর কোনো গতি নাই সুন্দরী।’
সাদিয়া অভিমানি শুরে বললো, ‘ও তাইলে তোমার কিছুই করার নাই, বলার নাই-না?’
– করার নাই, বলার আছে।
– কি বলার আছে শুনি ,
– সুন্দরী, তোমার পিতা নিজের হাতে তোমাকে আমার হাতে তুলে না দিলেও, দরকার নাই।
– মানে!
– মানে হলো, আমি নিজেই তোমাকে আমার হাতে তুলে নেব সুন্দরী।
আকাশের এই কথায় সাদিয়া না হেসে থাকতে পারলো না। আকাশকে জড়িয়ে ধরে সাদিয়া বললো, ‘তোর এই দুষ্টুমি গুলো, আরও সক্ত করে আমাকে বেঁধে দিয়েছে তোর জীবনের সাথে, আমার আর কিছুই চাইনা পৃথিবীতে; যদি তুই পাশে থাকিস আজীবন।’
আকাশ বললো, ‘তুই পাশে এলেই তো অন্য জনকে বিদায় করতে পারি।’
– মানে ?
– মানে কোলবালিশ, ঐ প্রাণহীন কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরে আর ঘুম আসেনা রে, তোর জন্য মনটা খালি বাকুম বাকুম করে।
সাদিয়া আকাশের নাক চেপে দিয়ে বললো, ‘আহ’হারে, দুঃখের আউ-আউ, ওসব কথা বাদ, এখন কি করবি তাই ভাব।
– কি আর করবো, আর একবার ‘মা’কে তোদের বাড়িতে সম্বন্ধের জন্য পাঠাবো।
– যদি বাবা রাজি না হয়।
– সমস্যা কী, মন্টু আছেনা।
– মানে, মন্টু কে ? কোথায় আবার মন্টু ?
– আছে আছে, সবসময় পকেটে নিয়াই ঘুরি, কখন আবার তোকে নিয়ে চম্পট দিতে হয়।
– ওহ, একটু বুঝিয়ে বলনা,
– ওরে পাগলী, মন্টু মানে টাকা, সবসময়ই পকেটে নিয়া ঘুরি, এইটা আমাগো পালিয়ে যাবার খাতে বরাদ্দ।
– কিন্তু, পালিয়ে গেলে তো……..
আকাশ একটানে সাদিয়াকে বুকে নিয়ে, কপালে ভালোবাসার পরশ মিশ্রিত একটা চুমু খেয়ে বললো, ‘সুন্দরী, পালিয়ে গেলে হয়তো তোমার বাবা প্রচণ্ড রাগ করবে; কিন্তু দু-বছর পরে যখন ফুটফুটে একটি শিশু লইয়া তোমার আব্বুর সামনে দাড়াইবা, তখন দেখবা নাতির সাথে আমাদেরকে’ও হাসিমুখে বরণ করিয়া লইবে; এত্তো বাংলা সিনেমা দ্যাখো, তার পরেও এইগুলা শিখানো লাগে ক্যান!’
সাদিয়া ভীষণ লজ্জা পেয়ে, নিজেকে আকাশের বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত করে নিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে বললো, ‘ছিঃ, কি লজ্জার কথা, কইতে সরম’ও লাগে’না একটু।’
– ও গড, যা হইতে পারবে, তা কইতে দোষ কি।
– চুপ করো তো, কি সব আবোল তাবোল বলছো।
– ক্যান, তুমি কি সিওর দিয়া কইতে পারো যে আমাদের গৃহ আলোকিত কইরা কয়েকটা বাচ্চা আসিবেনা।
– চুপ করো তো, বিয়ের খবর নাই, বাচ্চা নিয়ে টানাটানি।
– আরে, অগ্রিম প্ল্যান করতাছি, বিয়ের পরে যেন অত ভাবতে না হয়।
‘আমি গেলাম’ বলে সাদিয়া পা বাড়াতেই পেছন থেকে আকাশ ডেকে বললো, ‘এই-যে মিস, এদিকে আসো, তোমাকে দিয়া রাখি একটি কিস; বলা তো যায়না, তোমার পিতা যদি তোমাকে আবার অন্যের হাতে সম্প্রদান করিয়া ফ্যালে; তখন তো আফসোস করিয়া মরিতে হইবে।’
সাদিয়া মুচকি হেসে চলে গেল।
বিকেলে একটি চিঠি লিখিয়া, সন্ধ্যার পরে নিজে চিঠিটা লইয়া হাজির হইলো সাদিয়ার বাড়ির সামনে।
বাড়ির ভেতরের আবহাওয়া উপলব্ধি করার জন্যে, উঁকি মারছে আকাশ।
পেছন থেকে একটি হাত এসে আকাশের কাঁধ চেপে ধরলো।
‘ভুত ভুত’ বলে আকাশ চিৎকার করে উঠতেই, হাতের বাহক বললো, ‘এই হারামজাদা, আমি ভূত না, সাদিয়ার বাবা; তুই নিজেই তো ভূতের মতো আমার বাড়িতে চক্কর মারছিস।’
– আসলে বিষয় হইছে কী কাকা, এই পথে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ মনে হইলো আপনার বাড়ির ভেতরে চোর ঢুকছে, তাই উকি মেরে শিওর হচ্ছিলাম।
– ও আচ্ছা, তোর কী মনে হয়, আমি ফিডার খাই, আমাকে যা বুঝাবি, আমি তাই বুঝবো।
– ছিঃ ছিঃ কাকা, আপনের কি আর ফিডার খাবার বয়স আছে, কয়দিন পরে মাইয়া বিয়ে দেবেন, ফিডার তো খাবে আপনার নাতি-পুতি।
– শোন, তোরে যেন আর কোনদিন আমার মেয়ের পিছে ঘুর-ঘুর করতে না দেহি, তাইলে কিন্তু সুর-সুর কইরা টাইনা, তুইলা ফালামু তোর পিঠের ছাল।
– কাকা, হবু আত্মীয়র সাথে কথা ক্যানো বলেন এতো ঝাল। সাদিয়া তো আর আপনার একার মাইয়া না, না-কী ?
– মানে ?
– ইয়ে মানে থুক্কু, মানে সে আপনার কন্যা হইলেও, কারো না কারো তো স্ত্রী’ও হইবে নাকি। সেই হিসেবে, পিতা হবার কারণে আপনার ৬০%অধিকার, বাকি ৪০% তো সাদিয়ার স্বামীর।
– বেত্তুমিজ তুই খারা, হিসাব তোর পিঠের উপরে করমু এখন।
সাদিয়ার বাবা লাঠি নিয়ে আকাশকে তাড়া করতেই; ৫০০ কি: মি: বেগে আকাশ দৌড়ে পালাতে লাগলো।
পরদিন সকালে সাদিয়া এসে দেখল; আকাশ পা টেনে টেনে হাটছে, আবার গামছা দিয়ে মুখ বাধা। সাদিয়া কাছে এসে বললো, ‘এ কী, পা টেনে টেনে হাটছিস যে।’
– ভাগ্য ভালো, সেই জন্যই এখনও পা দুইটা আছে, তোর বাপের দৌড়ানি খাইয়া, হঠাৎ গোবরে পা পিছলে কয়েকটা উল্টি হজম কইরা, অবশেষে আহত পা দুইটা নিয়া বাড়ি ফিরতে হইছে।
– গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে রাখছিশ ক্যানো তবে, দাঁত গুলো’ও আহত হইছে বুঝি।
– খুবই মজা নিচ্ছিশ তাইনা, যে হবু জামাইকে তার হবু শ্বশুর লাঠি নিয়া তাড়া করে; সেই জামাই মুখ দ্যাখায় ক্যামনে সমাজে। সেই জন্যই এই মুখ ঢাইকা রাখছি।
সাদিয়া মুখ চেপেধরে খিলখিল করে হাসছে। তাই দেখে আকাশ বললো, ‘কিরে মুখ চাইপা হাসছিস যে, সকালে দাত মাজিস নাই।’
সাদিয়া হাসতে হাসতে বললো, ‘তুই থাম তো, সারাক্ষণ শুধুই ফাইজলামি।’
– হুম, সেটা কী সাধে করি আমি। তোর মুখে ঐ হাসিটুকু দেখার জন্যই তো এত্তো কথা বলি আমি।
– সুধু হাসি’ই দেখবি, আর কিছু দেখবি না।
– ছিঃ-ছিঃ-ছিঃ, এইসব ন্যাকেট কথা বলো ক্যানো সাদিয়া।
– ন্যাকেট কথা মানে, আমি তো বলছি, কাছ থেকে আমার সুখ দুঃখ, এগুলো দেখবি না; খালি উল্লাপাল্টা চিন্তা। গালের উপরে দেবো একটা।
– কী, একখান চুম্মা ।
– না, একখান থাপ্পড়।
দুজনার কথা চলছে, এমন সময় সাদিয়ার বাবা এসে সাদিয়াকে বললো, ‘ওঠ, বাড়িতে চল সাদিয়া, বিকেলে তোর বিয়ে।’
‘ঘটনাটা তো, “ওঠ ছেরি তোর বিয়া” টাইপের হইয়া গ্যালো কাকা; এই খানে দুইটা নিষ্পাপ প্রেমিক হৃদয়ের মতামত তো আপনার জানা উচিত তাইনা।’ কথাগুলো বলে আকাশ একটু দূরে সরে গিয়ে দাড়ালো।
সাদিয়ার বাবা বললো, ‘এইখানে আমার মতামত’ই যথেষ্ট।’
– না, না, কাকা, স্বাধীন দেশে আপনি একাই ব্যাক্তিগত ভাবে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করিবেন, এটা তো হইতে পারেনা।
– পাকা পাকা কথা বাদ দিয়ে, বাড়িতে গিয়ে তৈরী হ।
– ক্যানো কাকা, বিষ খেয়ে জীবনটা ঢিসমিস করার জন্য। মানে আত্মহত্তা করার জন্য ।
– বিকেলে সাদিয়ার কী একলার বিয়ে হবে গাধা।
– তো আমি কী সাদিয়ার বিয়েতে নাস্তা সেমাই পরিবেষণ করবো।
– না, কবুল বলে সাদিয়াকে বরণ করবি।
এই কথা শুনে, আকাশ দৌড়ে এসে সাদিয়ার বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে উঠে দাড়িয়ে বললো, ‘Thank u আব্বু, আপনার এই ঋণ, সোধ হবেনা কোনো দিন, প্রথমে আমি ভিড়মি খাইতে চেয়েও খাইনাই, আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো তাই।’
‘হইছে-হইছে’ বলে সাদিয়ার বাবা চলে গেলো। সাদিয়া আকাশকে বললো, ‘এইভাবে কথা বলতে লজ্জা করেনা?’
– লজ্জা কিসের সুন্দরী, প্রেম ভালোবাসার কথা তো পবিত্র।
– তাই বলে বাবার সামনে।
– হুম, বাবা, কাকা, হোক, আর মিশা সওদাগর হোক, ভালোবাসা জিনিষটা সবার ভেতরেই আছে।
– বুঝছি, বুঝছি।
– কী ?
– তুমি আসলেই মারাত্মক প্রেমিক।
গল্পঃ মারাত্মক প্রেমিক।
আবির হোসেন।