#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_5_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
লেখা গুলো একটা ছোট বাচ্চার হবে বুঝা যাচ্ছে। রুমের ভিতরেই বা কি আছে?
বর্ষাকে এই ভাবে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আকাশ বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে
‘ কি হলো বর্ষা দাঁড়িয়ে গেলে কেন?
বর্ষা একটু চিন্তিত মুখে আকাশের দিকে নরম একটা হাসি ফুটিয়ে
‘ কিছু না।
আকাশ বর্ষার এক হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে আরেক হাতে বর্ষার কাধে ধরে বর্ষাকে নিয়ে যায় তার রুমে৷ বর্ষা রুমে ঢুকেই কিঞ্চিৎ অবাক হয় আকাশের রুম দেখে। বেডের মাথার কাছে দেয়ালে বিশাল বড় এক ফ্রেমে বর্ষার ছবি আবদ্ধ করা। হাস্যজ্জল প্রানবন্তর সেই ছবি। বর্ষা অবাক হলো ছবিটা দেখে। আকাশের কাছ থেকে বর্ষা এমন কিছু আশা করা দূরের কথা ভাবাই হয়নি কখনো । বর্ষা বড় ফ্রেম থেকে চোখ দুটো সরিয়ে পাশের দেয়ালে তাকিয়ে দেখে ওখানেও বর্ষা আর আকাশের ছবি ছোট ছোট ফ্রেমে। আকাশের প্রতি এখন দুটানা আরো বেড়ে গেছে।
‘ বর্ষা তুমি রেস্ট নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
বর্ষা এর আগে কখনো এ বাড়িতে আসেনি আজকেই প্রথম। তাই সব কিছু ঘুরে দেখার কৌতূহল আর আগ্রহের সীমানা নেই। বর্ষা দেখতে দেখতে আবার ওই রুমের সামনে চলে যায় যেখানে বর্ষা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। কি সুন্দর স্পষ্ট করে লেখা ” এই রুমে কেউ প্রবেশ করবেন না”। বর্ষা একবার হাত দিয়ে লেখা গুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে যখনি রুমের দরজা খুলতে যাবে তখনি বর্ষার হাত ধরে হেচকা টানে ফেলে দেয় আকাশ। পড়ে গিয়ে কপালে চোট পায় বর্ষা।
‘ তোমার সাহস কি করে হয় বর্ষা এই রুমের দরজা খোলার? তুমি দেখতে পাওনি এখানে কি লেখা? ( হুংকার করে) নূন্যতম কমনসেন্স নেই তোমার?
বর্ষা ব্যাথায় কান্না করছে। এমনিতেও বর্ষার শরীরে তেমন শক্তি নেই আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো। তাই কিছু না বলে বর্ষা ওখানেই পড়ে রইলো। আকাশ নিজেকে কন্ট্রোল করে বর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।
বর্ষাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে
‘ আমি বলেছিলাম রেস্ট নিতে ওখানে কিসের জন্য গেলে তুমি? আর দরজায় কি লেখা ছিল দেখোনি? তারপরও কেন গেলে দরজা খুলতে?
‘ কেন কি আছে ওই রুমে? যার জন্য আমি যেতে পারবো না?
আকাশ আর কিছু না বলে ফাস্ট এইড বক্স এনে বর্ষার কপালে মলম লাগিয়ে দিয়ে।
‘ সব কিছু এতো বেশি বুঝো কেন?
বর্ষা কান্না করছে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে। আকাশের রহস্য সে বুঝতে পারছে না। আবার তার মায়াজালে তাকে আটকিয়ে ও ফেলেছে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে বর্ষা।
আকাশ বর্ষাকে এমন কান্না করতে দেখে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে। বর্ষার কাধে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে চুমু দিতেই বর্ষা কেঁপে উঠে আঁকড়ে ধরে আকাশকে। আকাশ বর্ষাকে বুকে নিয়ে শুতেই ঘুমিয়ে যায় গতকাল ভালো করে না ঘুমানোর ফলে।
কিছুক্ষণ পরেই বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। আকাশের বুকেই এখনো বর্ষা। আকাশ দু’হাতে শক্ত করে এখানো ধরে আছে বর্ষাকে। কিছু মুহুর্ত এই ভাবে শুয়ে থেকে আকাশের হাত সরিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে যায় বর্ষা। ফ্রেশ হয়ে এসে আকাশের পাশে বসে আকাশকে দেখছে গভীর ভাবে। ঘুমন্ত অবস্থায় কোন মায়াপুরির মায়ার রাজার মতো লাগছে আকাশকে। আকাশের এতো রুপ কেন আকাশের মতোই। কখনো মেঘ, কখনো রোদ, আবার কখনো গর্জন করে উঠে।
মায়া নিচে যেতেই দেখে আকাশের আব্বু আশিক যুবায়ের বসে আছে। উনার হাতে কিছু কাচামরিচ সেগুলোর বোটা ছাড়াচ্ছে। বর্ষা নিচে নেমে আশিক সাহেব কে সালাম করলো। আশিক সাহেব বর্ষার মাথায় হাত দিয়ে
‘ জানিস মা আজকে খুব ভালো লাগছ। আজকে আমার ঘরে একটা মেয়ে এসেছে। যার অভাব ছিলো এতোদিন খুব। দেখ তোর শাশুড়ী মা আমাকে দিয়ে রোজ এই সব কাজ করায়। একটা মেয়ে থাকলে তো আর আমার এসব করতে হতো না।
বর্ষা মুচকি হেসে
‘ বাবা দিন আমি করে দিচ্ছি।
‘ না এখন কিছু করতে হবে না তোর, তুই অসুস্থ এখন। আমার পাশে বসে বসে দেখ কি ভাবে মরিচের বোটা ছাড়িয়ে ফ্রিজে রাখতে হয় হাহাহা।
বর্ষা কথা না বাড়িয়ে মনিরা বেগমের কাছে গিয়ে
‘ মা আমি কি হেল্প করবো বলুন।
মনিরা বেগম চোখ উল্টে কপাল কুচকে বর্ষার দিকে তাকিয়ে
‘ তোর কিছু করতে হবে না তুই রেস্ট নে গিয়ে, না হয় তোর শশুরের সাথে বসে গল্প কর।
বর্ষা হতাশ গলাই আচ্ছা বলে বেড়িয়ে এলো কিচেন থেকে।
.
.
.
সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো তখনি নাইম সাহেব আর তনিমা এসে হাজির ।
নাইম সাহেবকে দেখে বর্ষা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম বাবার কাছ থেকে সে দূরে থাকছে। এর আগে কখনো বাড়ি ছেড়ে বর্ষা থাকেনি। নাইম সাহেব আশিক যুবায়েরকে উদ্দেশ্য করে
‘ ভাই সাহেব এর আগে মেয়েকে ছাড়া থাকিনি তো ওর জন্য মনটা কেমন ছটফট করছিলো আর তনিমা ও কান্না করছিলো তাই চলে আসলাম বর্ষাকে দেখতে।
আশিক যুবায়ের বসা থেকে উঠে
‘ ভাই সাহেব এখন এটা আপনারও বাড়ি যখন ইচ্ছে মেয়েকে দেখতে চলে আসবেন।
তনিমা বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে
‘ আপু আজকে কি ভাবে থাকবো আমি? একা রুমে আমার ভয় লাগে।
তনিমার কথা শুনে বর্ষার চোখে পানি আসলেও সবাই হেসে নাজেহাল অবস্থা । তনিমা লজ্জায় বর্ষাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়াতেই আফিফ তনিমার কাছে এসে মুখটা তনিমার কানের কাছে নিয়ে
‘ বেয়াইন সাহেব আপনি বললে রাতে আমি আপনার রুমে থাকতে পারি।
তনিমা আগ্নিলাল দৃষ্টি দিতেই আফিফ তনিমার দিকে তাকিয়ে ডুব গিলে
‘ মানে আপনার রুমের সামনে পাহাড়া দিতে পারি।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তনিমা আর নাইম সাহেব সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রস্থান করলো। আকাশ খেয়েই রুমে চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। বর্ষা বসে সবার সাথে গল্প করছে। নাইম সাহেব আর তনিমার জন্য মনটা খারাপ লাগছে বেশ। গল্প করা শেষে সবাই বর্ষাকে উপরে আকাশের রুমে পাঠিয়ে দিলো৷
বর্ষা রুমে প্রবেশ করেই বেশ আশ্চর্য হলো। আকাশ রুমটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে ফুল আর বেলুন দিয়ে। বর্ষা সারা রুমে চোখ বুলাতেই আকাশ এসে সামনে হাজির হয়। বর্ষার কনিষ্ঠা আঙুলে নিজের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসে আকাশ। বেডের উপর থেকে গাড় কালো খয়েরি একটা শাড়ী দিয়ে
‘ এই শাড়ীটা তোমায় অনেক মানাবে। অনেক খুঁজে এই শাড়ী তোমার জন্য কিনে এনেছি।
বর্ষার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না এটা আকাশ। আকাশকে এমন রোমান্টিক হতে কখনো দেখেনি বর্ষা। শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিলেই আকাশ বর্ষার হাত ধরে
‘ উমহু কোথাও যাবে না তুমি। আমি পড়িয়ে দিবো।
বর্ষা আরেকদফা অবাক হলো আকাশের কথা শোনে। আজকে আকাশের কি হলো ভাবছে। মাথায় কোথাও আঘাত পায়নি তো আবার?
আকাশ শাড়ীটা বর্ষার হাত থেকে নিয়ে আস্তে আস্তে ভাজ খুলতে থাকে
‘ ব্লাউজ আর পেটিকোট ও পড়িয়ে দিব?
বর্ষা চোখ বড় বড় করে ফেলে কি বলে এই গুলো এই ছেলে? সত্যিই আজকে কিছু হয়েছে উনার। বর্ষা দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। না হয় সত্যিই উনি ব্লাউজ পেটিকোট পড়িয়ে দিবে।
বর্ষা ওড়না দিয়ে পুরো শরীর আবরণ করে আস্তে আস্তে আকাশের কাছে এসে থামে। আকাশ মুচকি হেসে শাড়ী পড়ানো শুরু করে৷
বর্ষা চোখ নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেই সাথে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস। অনুভব করছে আকাশের ছোঁয়া। আকাশ শাড়ী পড়িয়ে
‘ এবার তাকিয়ে দেখো কি অপরুপ রুপ নিয়ে জন্মিয়েছো তুমি।
বর্ষা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নিজেকে দেখার জন্য। বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তো ( মনে মনে) এতো সুন্দর করে কোন ছেলে শাড়ী পড়াতে পারে জানা ছিলো না। আকাশ বর্ষার গলাই ছোট একটা চেইন পড়িয়ে দিলো সাথে একটা রকেট আছে যাতে এ,বি লেখা। বর্ষা রকেটটা কে ছুয়ে দিলো পরম যত্নে।
আকাশ বর্ষার চুল গুলো পিঠ থেকে সরিয়ে তার ঠোট গুলো পিঠে গভীর ভাবে বসিয়ে দিতেই বর্ষা চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে। মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ গতিতে রক্ত চলাচল করছে। বর্ষা আকাশের দিকে ফিরে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে উঠে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
রাত তিনটা বাজে বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। বর্ষা পাশে তাকিয়ে দেখে আকাশ পাশে নেই। ঘুম জড়ানো চোখে আকাশ বলে ডাক দেয় কিন্তু আকাশের কোন সারাশব্দ নেই।
বর্ষা হঠাৎ করে লাফ দিয়ে উঠে। ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে আকাশ নেই। বেল্কুনিতে ও নেই। বর্ষা দরজা খুলে উপরে থেকেই নিচে তাকিয়ে দেখে আকাশ ড্রয়িংরুমেও নেই। আস্তে আস্তে নিচে নামতে নিলেই বর্ষা ওই রুমের সামনে থেমে যায় যেখানে আকাশ যেতে মানা করেছিলো। ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। আর এই শব্দ আকাশের…………
চলবে………..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।