বাড়িওয়ালার ছেলে পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1107

#বাড়িওয়ালার ছেলে
– ফাহিমা ফাইজা
#পর্ব ১০ (অন্তিম পর্ব)

কারণ ওখানে আমার সব স্কুল ফ্রেন্ডরা আছে। আর তাছাড়া আমি আমার কাজিনদের মধ্যে সবার বড় মেয়ে। তাই সকলেরই ইচ্ছা ধুমধাম করে আমার বিয়ে দেওয়ার। কথামতো তাইই হলো। ধুমধাম করে আমার আর আদনানের বিয়ে হলো। আমি এখনো ভাবি যে ছেলেটাকে আমি খারা’প মনে করতাম,সেই আসলে কতটা ভালো’বাসতে জানে। আর যাকে সমাজের তথাকথিত ভদ্র মানুষ মনে হয়েছিল সে আসলে একটা ফ্র’ড ছাড়া কিছুই না। এরকম মুখোশধারি বহু মানুষ আমাদের আশে পাশে ঘুরে বেড়ায়। যাদের আমরা চিনতে পারি না। এজন্য কোনো মানুষকে ভালো’বাসতে হলে, বিশ্বাস কর‍তে হলে হৃদয় থেকে অনুভব করতে হয়, নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় এবং সবসময় বাস্তব মেনে চলতে হয়। আমি আরও একটা জিনিস শিখেছি। সেটা হচ্ছে যেকোনো বিপদে ফ্যামিলিই সব। তারা আমাদের ভালো চায়,কখনো খারা’প চায় না। হয়ত তারা সন্তানের পছন্দ মাঝে মধ্যে মেনে নেন না। কিন্তু তাদেরকে বুঝিয়ে বললে এবং নিজের সমস্যার কথা শেয়ার করলে তারা অবশ্যই বুঝবে। সব কিছু মিলিয়ে সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়!
.

বিয়ের পর আমি আর আদনান তিনটা বসন্ত পার করে ফেললাম। আমি ডাক্তার হয়েছি বেশিদিন হয়নি। এর মধ্যেই রোগীরা আমাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে। বিশেষ করে টিনেজার মেয়েরা। তাদের ধারণা আমার ব্যবহার নাকি খুবই ভালো। যা ডাক্তারদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। আদনানের কথা রাখতে আমি হিমাটোলজি অর্থাৎ রক্তের ডাক্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মহান আল্লাহ আমার সেই আশা পূরণ করেছেন। তাই আমি আমার স্বপ্নের পথে চলছি আর চেষ্টা করছি আদনানের কথা রাখতে। আমি আদনানকে কথা দিয়েছিলাম আমার কোনো রোগীকে আমি তার মায়ের মত অবস্থা হতে দেব না। কিন্তু আদনানের মা তো তার অসুখ লুকিয়ে রেখেছিলেন। এজন্য আমি আরেকটা উদ্যোগ নিয়েছি। স্কুল-কলেজে নানা সেমিনার হয়, সেখানে আমাকে প্রায়শই ইনভাইট করা হয়; বিশেষত গার্লস স্কুলে। সেখানে আমি সকলকে রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। আর এটাও বলি যে যেকোনো পরিস্থিতি হোক না নিজের রোগ বা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা কখনো লুকিয়ে না রাখতে। ছোট খাটো হোক বা বড় কিছু, সবসময় নিজের বাবা-মায়ের কাছে বা স্বামি বা সন্তানের কাছে শেয়ার করতে হবে। এছাড়াও ইউটিউবেও আমি এ বিষয়ে নানা সচেতনতামূলক কন্টেন্ট শেয়ার করা শুরু করেছি। মোট কথা আদনানের জন্য হলেও আমাকে এসব করতে হবে। কারণ ও আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। আমার দু:সময়ে আদনানই কাছে ছিল। তাই আমারও উচিত আদনানের জন্য কিছু করা। ওর অনেক আশা আমাকে নিয়ে। প্রথমত আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন, দ্বিতীয়ত ওর স্বপ্ন; সবই আমাকে ঘিরে। তাই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোর জন্য যদি আমাকে আমার জীবনও স্যাক্রি’ফাইস করতে হয় আমি করব।

তো আমাদের জীবন ভালোই চলছিল। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এক শ্রাবণ মেঘের দিন আদনান হস্পিটালে একটি হাই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অ’জ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে করে নিয়ে আসে। মেয়েটি স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায়ই ছিল। আমি আর নার্স দেরি না করে মেয়েটির হুশ ফিরবার ব্যাবস্থা করি। আধ ঘন্টা পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে। আদনানকে ওর কথা জিজ্ঞেস করলে বলল,
– আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম। একটা দোকানে ঢুকে তোমার জন্য বেলী ফুলের মালা কিনছিলাম। তখন এই মেয়েটা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিল। আর তখনই ও জ্ঞান হারায় আর আমি দেরি না করে ওকে তোমার কাছে নিয়ে আসি।

আমি বললাম,“ মেয়েটার বাবা-মাকে জানিয়েছো?”
– হ্যা, ওর আইডি কার্ড থেকে নাম্বার নিয়েছি। এতক্ষণে তো চলে আসার কথা।

আদনানের কথা শেষ না হতেই দেখলাম একজন মহিলা পা’গলের মত কাদতে কাদতে আসছেন আর পিছনে বোধ হয় তার স্বামী আসছিলেন। আমাকে তার স্বামী জিজ্ঞেস করলেন, “ ম্যাম আপনি কি ডক্টর আয়শা?”
– জ্বি, আমি। আপনারা কি ফারহা রহমানকে খুজছেন? ( যে মেয়েটি অজ্ঞান হয়েছিল তার নাম)

মহিলাটি আমার হাত ধরে কান্নারত অবস্থায় বলল,
“ হ্যা, আমরা তাকেই খুজছি! ম্যাম আমার মেয়ের কি হয়েছে? ”
– দেখুন আপনি শান্ত হন। আপনার মেয়ে আল্লাহর রহমতে এখন সুস্থ আছে। ওর জ্ঞান ফিরেছে।

মেয়ের মা দ্রুত কেবিনে ঢুকে গেলেন। আসলে সন্তানের কিছু হলে মায়েদের হুশ থাকেনা। দেখলাম মেয়ের বাবা আদনান কে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। আর বিনিময়ে আদনান মুচকি হেসে বলছে,“ আরে এটা তো আমাদের দায়িত্ব। ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে!”

আমি শুধু আদনানের দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। ইচ্ছা করছিল এই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলতে তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য, আমি বিজয়ী প্রে’মিকা!তোমার পরিণিতা হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।

মেয়েটার ব্লা’ড টেস্ট করছিলাম। কিন্তু রিপোর্টে যা পেলাম তা আশা করিনি। কি বলব মেয়েটাকে? মেয়ের মাকে কি করে বলব,কিভাবে সামাল দেব এত কিছু। আমার মাথা ব্যাথা করতে শুরু করল। কিন্তু কি আর করার তাদের তো বলতেই হবে। তাই মেয়েটার কেবিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু দরজায় পা রাখা মাত্র মেয়েটি যখন আমার চোখের দিকে তাকালো আমি আর পা বাড়াতে পারলাম না। আমি পিছিয়ে গেলাম। মেয়েটি বলল,“ আম্মু, ডক্টর এসেছে।”
মেয়ের মা আমার দিকে দ্রুত এসে জিজ্ঞেস করল তার মেয়ের কি হয়েছে। আমি বলতে চেয়েও পারলাম না। কিন্তু আমি তো ডাক্তার,আমাকে তো বলতেই হবে।তাই ছোট নি:শ্বাস ছেড়ে বললাম, “ আপনার… মেয়ের…ব্লা’ড.. ক্যা’ন্সার ধরা পড়েছে।”

আমার কথা শোনা মাত্র মেয়ের মা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। মেয়েটি হয়ত উত্তে’জিত হয়ে এসে তার মাকে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই নার্স তাকে ধরে বসে। আর ওকে শান্তনা দেয় তোমার মায়ের কিছু হয়নি, তুমি শুয়ে থাকো। কিন্তু মেয়েটি কথা শুনতে চায় না। তাই আমি বললাম, “ তুমি খেয়াল করনি হয়ত। তোমার হাতে স্যালাইন দেওয়া। তুমি চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মত শুয়ে থাকো। আমি তোমার মাকে সুস্থ করে দিব। তারপর এসে তোমার সাথে কথা বলছি। ”
মেয়েটা আমার কথায় কিছূটা শান্ত হলো। সে এখনো জানে না তার কি হয়েছে এবং তার মা কেনই বা অজ্ঞান হয়ে গেল।

রাতে আদনানের কো’লে মাথা রেখে আমি কাদতে লাগলাম। বললাম,
– জানো, যখন মেয়ের মাকে বলছিলাম যে তার মেয়ের ব্লা’ড ক্যা’ন্সার হয়েছে তখন মনে হচ্ছিলো আমার পায়ের নিচে কিচ্ছু নেই। আমি হয়ত কোনো অতল সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছি।
– আমি জানি তোমার মনের অবস্থা কেমন। তুমি সবেমাত্র ডক্টর হয়েছো। এই মেয়েটাই তোমার প্রথম সিরিয়াস রোগী। এজন্য এরকম লাগছে। কিন্তু ভেঙে পড়লে তো চলবে না আয়শা। তোমাকে ওকে সুস্থ করতেই হবে। আর এরকম আরও কত রোগী আসবে।মানিয়ে নিতে হবে না?
– জানো, মেয়েটার ডাক নাম কি?
– কি?
– আয়শা। মেয়েটাকে দেখার পর থেকে ওর প্রতি মায়া জমে গিয়েছে।
– তোমার নামের সাথে মিলে গেল দেখছি।
– হ্যা, ও তাইই বলছিল যে ডক্টর ম্যাম দেখুন আপনার আর আমার নাম সেম।
– তুমি চিন্তা কর না। কেমোথেরাপি কি শুরু করবে?
– আমি চাচ্ছিলাম ওকে রাশেদ স্যারের কাছে রেফার্ট করতে। আমি কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না, যাতে মেয়েটা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।
– হ্যা, তুমি তো নতুন। রাশেদ স্যারই ওর ট্রিটমেন্ট করুক। তুমিও সাথে থাকো।
– হ্যা, ঠিক বলেছো। আমি ওর চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকব। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

মেয়েটার ফ্যামিলি মধ্যবিত্ত। কেমোথেরাপির মত ব্যায়বহুল চিকিৎসা করার মত সাধ্য নেই তাদের। তাই মেয়েটার চিকিৎসা বাবদ যত খরচ হলো তার প্রায় অর্ধেকই আদনান আর আমি দিয়েছি৷ বাকিটা ওর বাবা-মা আর আত্মীয়রা দিয়েছে। আত্মীয় বলতে হাতে গোনা কয়জন। আয়শার বাবা আমাকে কাদতে কাদতে বলেছিলেন বি’পদ আসলে মানুষ চেনা যায় ডাক্তার ম্যাম। যতদিন চিকিৎসা চলল আমি ততদিন রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারলাম না। মেয়েটা কি বাচবে,বোনমেরু ম্যাচ করবে তো? যদি ওর কিছু হয় আমি আদনানকে কি জবাব দিব? আমি যে ওকে কথা দিয়েছিলাম আমি আমার কোনো রোগীকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে দিব না। যদি আমি কথা না রাখতে পারি? আমার এই দু’শ্চিন্তা আমি প্রকাশ না করলেও আদনান বুঝত। ও আমাকে শান্তনা দিত,বলত আল্লাহ যাকে নিয়ে যাবেন তাকে নিবেনই। আমাদের কোনো হাত নেই। আদনানের কথা শুনে আমি স্বস্তি অনুভব করতাম। আসলেই এ মানুষটা আমার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ উপহার।
আমি আয়শার সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি হয়ে যাই। ও যেসব কথা হয়ত ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকেও বলে নি তা আমার কাছে বলে দিত। একদিন আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“ তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও আয়শা?”
– ম্যাম, আগে তো আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সিদ্ধান্ত পালটে ফেলেছি।
– তাই, কি সিদ্ধান্ত?
– আমি আপনার মত ডাক্তার হতে চাই।

আমি চোখের পানি আটকে রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। জানি না, তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।

.
কেমোথেরাপি শেষ। কিন্তু সমস্যা হলো বোনমেরু নিয়ে। জানতে পারলাম মেয়েটার একটা বড় বোন আছে। আমি আর রাশেদ স্যার দুজনেই বললাম তার বড় বোনের বোনমেরু নিলে সবচেয়ে ভালো হবে। কিন্তু তার বাবা রাজি হলেন না। আয়শার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম তার বড় বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে তার বাবা তাকে সহ্য করতে পারেন না। অবশেষে অনেক অনুরোধ আর বোঝানোর পর আয়শার বাবা রাজি হলেন। বহু বছর পর তারা তাদের মেয়েকে ফোন করল। দুদিন পর তার বড় বোন এসে পড়ল। আমি তার বড় বোনকে দেখে আকাশ থেকে পড়লাম। কারণ তার বড় বোন আর কেউ নয় ;জারা মানে ইউসুফের স্ত্রী। বোনের জন্য সুদূর কানাডা থেকে ছুটে এসেছে সে। আয়শা আর তার মা তাকে দেখে খুব খুশি হলেও, তার বাবা তেমন খুশি নন। জারা হাসপাতালে একাই এসেছে। আমি এক ফা’কে বললাম,“ আপনার ছেলেকে নিয়ে আসেননি? নাতিকে দেখাবেন না?”
সে একবুক শ্বাস ছেড়ে বলল,“ তারা আমাকে এখানে ডেকেছে তাদের ছোট মেয়েকে বাচানোর জন্য,আমার ছেলেকে দেখার জন্য না।”
আমি কিছুটা রা’গ হয়েই বললাম, “ এটা কি ধরণের কথা? ”
জারা চোখ মুছতে মুছতে বলল, “ ভ’য় হচ্ছে, আমি যে অপর’াধ করেছি তারা তা ক্ষমা করবে কিনা জানিনা।”

আমি আর কথা বাড়াই না। কারণ এমনিতেই তার ছোট বোনকে নিয়ে টেনশনে রয়েছি আজ কয়েক মাস। এদিকে সব কিছু রেডি। ট্রান্সপ্লান্টের দিন চলে আসলো। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে আয়শা আমাকে বলল,“ ম্যাম আমি কি আবার সুস্থ হয়ে যাব? ”

আমি মুচকি হেসে বললাম,“ ইনশাআল্লাহ! ”

আমিও অবশ্য ওটিতে ঢোকার আগে আদনানকে বলছিলাম,
– আদনান, দুই আয়শার জন্য দোয়া কর। তারা দুজনেই যেন সফল হতে পারে!
– ফি আমানিল্লাহ। আয়শা সুস্থ হয়ে যাবে,তুমি চিন্তা কর না।

বাইরে আদনান আর আয়শার বাবা মা অপেক্ষা করছিল। তারা জানে না কি হতে যাচ্ছে, তারা কিসের জন্য প্রস্তুত হবে? সুখবর শোনার জন্য নাকি দু’খের ক’ড়াল ছায়া নেমে আসবে তাদের জীবনে? কি হবে? কি হবে? ঘড়ির কা’টা তার নিয়ম অনুযায়ী চলছে, চলছে তো চলছেই। কিন্তু আয়শা? ওর জীবনের কা’টা? চলবে তো নাকি চিরকালের মত স্তব্ধ হয়ে যাবে? না, স্তব্ধ হয়নি তো। আয়শার ঘড়ির কা’টা চলতে শুরু করল আবার নতুন করে! আমি আর রাশেদ স্যার আরও দু তিনজন ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে আসলো। চারিদিকের পিন পতন নীরবতা ভাংলো। আয়শার বাবা- মা কে রাশেদ স্যার বললেন,
“ মহান আল্লাহর অশেষ রহমত। অপারেশন সাক্সেসফুল হয়েছে। ”

আয়শার বাবা মা কাদতে কাদতে শুকরিয়া আদায় করে। আমিও কাদতে কাদতে আদনানের বুকের মধ্যে চোখের অশ্রু লুকিয়ে ফেলি। অনেক জোরে কাদতে ইচ্ছা হলো, পারলাম না। আদনান বলল,
– আরে পা’গল মেয়ে! কি হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আয়শাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। তুমি এখন কাদছো কেন?
– আমি তোমার কথা রাখতে পেরেছি আদনান?

আদনানের চোখ লাল হয়ে গেল, ও কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল
– পেরেছো, প্রিয়তমা। পেরেছো…

আমি আর কিছু বলতে পারি না। আদনানও পারে না। দুজনেই শুধু অঝোরে অশ্রু ঝরাতে থাকি।

রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলাম আমরা দুজনেই। আমি মোনাজাত শেষ করে আদনানকে বললাম, “ কি বললে আল্লাহর কাছে?”
– বললাম, হে আল্লাহ তুমি আমার মাকে জানিয়ে দিও আমি যা করতে পারিনি তা আমার প্রিয়তমা স্ত্রী পেরেছে।
– কে বলেছে তুমি পারোনি। তুমি সাহায্য না করলে তো মেয়েটার পরিবার কেমোথেরাপির টাকাই জোগাড় করতে পারত না। আর তাছাড়া তুমি আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছো যা কেউ দেয়নি। মেয়েটাকেও সাহস দিয়েছো, ওর পাশে থেকেছো।
আদনান মুচকি হেসে বলল, “ জানি না কত টুকু পেরেছি। কতটুকু সাহায্য করতে পেরেছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি সারাজীবন আমি এভাবে অসহায় মানুষের পাশে থাকব। আমার জীবন দিয়ে হলেও থাকব। তুমি শুধু পাশে থেকো আয়শা!

আমি আদনানের হাত ধরে বললাম,
“ কথা দিলাম সারাজীবন পাশে থাকব। তোমার জন্য যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, তবে আমি তাইই করব। বুঝলে বাড়িওয়ালার ছেলে?”

আদনান জোরে হেসে দিয়ে বলল, “ বুঝলাম, বুঝলাম! আমিও কথা দিলাম এই বাড়িওয়ালার ছেলে তোমার পাশে থাকবে আজীবন! ”

_____সমাপ্ত_____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে