বাড়িওয়ালার ছেলে পর্ব-০৬

0
786

#বাড়িওয়ালার ছেলে
– ফাহিমা ফাইজা
#পর্ব ৬

দেরি না করে আদনান কে ফোন করি। আদনান নাকি জানে কে এসব করেছে। আদনান বলল, “ এই শহরে তো একজনই আছে যে তোমার ক্ষ’তি করতে চায়। সেই এই কাজ করেছে।”
আমি ভ্রু কুচকে ভ’য় মিশ্রিত কণ্ঠে বললাম,“ মানে.. কে.. আদনান? কে করেছে এসব?”
– কে আর ইউসুফ করেছে।
– কিন্তু ও এমন কেন করবে?
– তোমাকে তো বলা হয়নি। আমার জন্মদিনের দিন তোমাকে যখন বাসায় ড্রপ করে দিয়ে এসে ফিরছিলাম তখন ইউসুফের সাথে আমার দেখা হয়।
– তাই, ও কি বলেছিল আপনাকে?
– আমাকে বলে যে তোমাকে যেন আমি ভুলে যাই,নাহলে নাকি ওর থেকে খা’রাপ আর কেউ হবে না।
– কি বলছেন এসব, আমাকে আগে কেন বলেননি?
– আরে ধুর, ওইসব কাও’য়ার্ড দের আমি ভয় পাইনাকি? ও বলল আর হয়ে গেল। তুমি একদম টেনশন করো না। ও কি করবে,তোমার আর আমার ছবি ভাইরাল করবে,নাকি তোমার আব্বু আম্মুর কাছে পাঠাবে,এইতো? এর বেশি কিছু ও কি করবে?
আমি ভয়ে কান্না করে দিলাম। আর বললাম,
– সেটাই তো সমস্যা,আব্বু আম্মু জানতে পারলে তো…
– কি করবে? তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে? ঠিকয়াছে দিক বিয়ে,আমি করব বিয়ে তোমাকে।
– সত্যি,আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
– হ্যা, সত্যি।
– কিন্তু যদি আব্বু আম্মু রাজি না হয়?
– কেন রাজি হবে না বল?
– জানি না, আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না!
– আচ্ছা তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে দেখেছো আমি কি ওর কথায় একটুও পাত্তা দিয়েছি?
– আচ্ছা আপনি আমার সাথে এখনি দেখা করুন।
– আচ্ছা ঠিকয়াছে। তুমি কলেজের সামনেই থাকো।
– ওকে
আমি কপালে হাত বুলাতে বুলাতে কলেজের বাইরে আসি। আদনানও কিছুক্ষণের ভিতরে চলে আসে। ওর সাথে অনেকক্ষণ রিকশায় ঘুরাঘুরি করলাম। ও অনেক বুঝালো আমাকে। তারপর একটু মন হালকা লাগল। রাতে বাসায় ফিরলে শায়লা বলল, “ কিরে তুই ও আজকাল দেরি করে ফিরিস দেখছি।”
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম,“ কি করব বল এতদিন আদনান আমার পিছু ছাড়ত নাম আর এখন আমাকেই ছাড়ে না!”
– হাহাহা, কথাটা জোস লাগল। তোকে এত মন ম’রা লাগছে কেন?
আমি শায়লাকে সব কিছু খুলে বললাম। সব শুনে শায়লাও আদনানের মত খুব বেশি সিরিয়াস হলো না। তাতে বুঝলাম আমি একটু বেশিই সেন’সিটিভ। যা ভাবছিলাম শায়লাও তাই বলল, “ দোস্ত, এত সেনসি’টিভ হলে জীবন চলবে না। ”
আমি খুবই ক্লান্ত ছিলাম তাই শায়লাকে কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে যাই। শায়লা পিছন থেকে কিছু বলছিল কিন্তু আমি অমনোযোগী থাকায় কিছু শুনতে পাইনি। তাই পিছনে ফিরে বললাম ফ্রেশ হয়ে তারপর কথা বলব।

খাবার খাওয়ার সময় আব্বু ফোন করল। আমি বুঝতে পারলাম আব্বু কিসের জন্য ফোন করেছে। শায়লা আমাকে ফোন ধরতে ইশারা করল। আমি চোখ বন্ধ করে ফোন রিসিভ করলাম। আমি কিছু বলার আগেই আব্বু ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল,
– তোকে কি এসব করতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল?
আমি শায়লার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বারান্দায় চলে গেলাম। বুঝতে পারলাম শায়লাও আমার পিছু আসতে লাগল। রাফা আর এশা টেবিলে বসেই একে অপরকে প্রশ্ন করতে লাগল যে কি হয়েছে, আমার কোনো সমস্যা হল কিনা।
আব্বু আবারো জিজ্ঞেস করল, “ কি হলো উত্তর দে?”
আমি ছোট নি:শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক ভাবেই বলার চেষ্টা করলাম, “ আব্বু তুমি কি বলছো… আমি বুঝতে পারছি… না.. ”
এবার আব্বু ধ’ম’কের স্বরে বলল, “ বুঝতে পারছিস না মানে? তুই ঢাকা শহরে এসব কি করে বেড়াচ্ছিস! অনলাইনে তোর ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। আমার কলিগরা, আমার আত্মীয়-স্বজন, তোর চাচা চাচিরা যা নয় তাই বলছে! আর তুই বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না!”
এই প্রথম আমি আব্বুর মুখ থেকে এভাবে কথা শুনলাম। এর আগে কখনো আব্বু আমাকে কিচ্ছু বলেনি। বরং আম্মু আমাকে ব’কা দিলে,আব্বু আমার পক্ষে কথা বলত। আমি যেকোনো দুষ্টুমি করলে আব্বু সবসময় আমার পক্ষেই থাকত। কিন্তু আজ আব্বুর কি হলো! আমি তাহলে সত্যিই খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি? আমি আব্বুকে কোনো জবাব দিতে পারলাম না। পাশ থেকে শোনা যাচ্ছিল আম্মু বলছে,
“ আহা,মেয়েটার সাথে এত জোরে কেন কথা বলছো?”
আব্বু গ’র্জে উঠে বলল,“ তো কিভাবে কথা বলব তোমার মেয়ের সাথে? ”
আব্বু আমাকে আবারো বলল,“ তোর লেখাপড়া করতে হবে না। তুই বাড়ি চলে আয়। তোকে ভরসা করে ঢাকা পাঠিয়েছিলাম লেখাপড়ার জন্য,এসব করার জন্য না।”
আমি এবারো কোনো কথা বলতে পারলাম না। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনতে লাগলাম। হঠাৎই বুঝতে পারি আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে। আব্বু কথাগুলো বলেই ফোন কে’টে দিল। আম্মু অবশ্য কথা বলার জন্য,অনেকবার ফোন চেয়েছিল। কিন্তু আব্বু দেয়নি। আমার হাত থেকে শায়লা ফোন নিয়ে রুমে রেখে আসে। ফিরে এসে আমাকে জ’ড়িয়ে ধরে। আমি ওর কাধে মাথা রেখে কান্না করি। কিন্তু এ কান্নার শব্দ হয় না। মানুষ যখন অনেক বেশি কষ্ট পায় তখন সে কষ্টাকে লুকিয়ে রাখতে চায়। এজন্য হয়ত এ কষ্টের কান্নায় শব্দ হয় না। চোখ শুধু নীরবে জল ফেলে।

.
পরের দিন কলেজে যাওয়ার সময় আম্মু ফোন করে। আম্মু ফোন করে অনেক কান্না করে। আর বলে,
– তোর বাবার যে খুব ইচ্ছে ছিল তোকে নিজের পছন্দ মত ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিবে। কিন্তু তুই এমন কেন করলি?
আমি অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো কেউ আমার গলাটা টি’পে রেখেছে। আম্মু আরও অনেক কিছু হয়ত বলত। কিন্তু আমার উত্তর না পেয়ে আর কিছু বলল না। শেষে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“ তোর বাবা পরশু ঢাকা যাচ্ছে তোর সাথে দেখা করতে। তার নাকি পরিচিত একটা ছেলে আছে। সবে মাত্র ডাক্তার হয়েছে।
এবার আমি বেশ হতাশ স্বরে বললাম,“ আম্মু আমার সামনে পরীক্ষা থার্ড ইয়ারের। এসময় বিয়ে…”
– প্রে’ম করার সময় মনে ছিল না? আমি কিছু জানি না যা করার তোর বাবা করবে।
বলেই আম্মু ফোন কে’টে দিল। আমি কপালে দুহাত দিয়ে খাটে বসে পড়লাম। শায়লা পাশ থেকে আম্মুর কথা শুনছিল। শায়লা আমাকে বলল,
“ আয়শা তুই আদনানকে এসব বল। এখন ও ই সব করবে।”
আমি শায়লার হাত ধরে বললাম,
– আমার অনেক টেনশন হচ্ছে শায়লা। যদি আদনান আমাকে বিয়ে না করে? যদি ইউসুফ এর মত আমাকে ধো’কা দেয়? আমি তখন আর বাচব নারে!”
– ধুর পাগ’লি। বোকা নাকি তুই। আমার বিশ্বাস আদনান এমন কিছুই করবে না। আর ও তো এসব জানেই। তুই শুধু তোর বিয়ের কথাটা বল।
– আচ্ছা চল। দেখা যাক কি হয়।

আজ একটুও ক্লাসে মন বসল না। সামনে পরীক্ষা আর আমি একটুও মন দিতে পারছি না। কি যে হবে আল্লাহই জানেন। কলেজ শেষ করে আদনানের সাথে দেখা করলাম। ওকে সব খুলে বলার পর যেন হেসে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিল। আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম ও আবার উলটা পালটা কিছু বলবে নাতো! আমি রা’গ হয়ে বললাম, “ আপনি হাসছেন? আর আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না”
– কেন? পরীক্ষার টেনশনে? বিয়ে হয়ে গেলে তো পড়ায় মন দিতে পারবে না এজন্য?
আমি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
– দেখুন, আমার মনে হয় না কোনো ডাক্তার ছেলে একটা মেডিকেলের ছাত্রীকে পরীক্ষার মধ্যে বিয়ে করবে। বিয়েটা যদি হয় তবে পরীক্ষার পরেই হবে।
– তাহলে তোমার এত টেনশন কিসের শুনি?
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে রা’গী স্বরে আদনানকে বলি,“উফ, আপনি বুঝেন না?”
– না আমি বুঝি না।
– আমি আপনাকে ভালো’ বাসি। অনেক বেশি ভালো’বাসি! আপনাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব! অন্য ছেলেকে বিয়ে করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না।
আদনান মুচকি হেসে বলল,“ এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম আয়শা! আমিও তোমাকে ভালো’বাসি। তুমি রিলাক্সে পরীক্ষার পড়া পড়। তোমার আব্বু পরশু আসবে তো? আসতে দাও। আমি দেখছি”
আদনান কথা শেষ করতেই দেখলাম পিছনে একটা পরিচিত গাড়ি এসে দাড়ালো। হ্যা এটা আর কেউ না ইউসুফ। গাড়ি থেকে নেমে ও আমাদের দিকে এগুতে লাগল। আদনান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ ওই দেখ চলে এসেছে! খেলা তো এবার জমবে!”
– মানে কি?
আমার কথার উত্তর না দিয়েই আদনান ক্ষি’প্রগতিতে ইউসুফের দিকে চলে গেল। ইউসুফ কিছু বলার আগেই আদনান ওর কলার ধ’রে বলল,“ বিয়ে হয়েছে তাতে তোর হয় না? অবিবাহিত মেয়ের সাথে ফি’ল্ডিং মারিস? ”
ইউসুফ বা’কা হেসে বলল,“ তোদের ছবি ভাই’রাল করে দিয়েছি দেখিসনি? তুই চাইলে আরও খেল আমি দেখাতে পারি।”
– ভাই’রাল করেছিস খুব ভালো করেছিস। তুই আরও আমাদের পথ সোজা করে দিলি। এতদিন আয়শাকে পটি’য়েছি এখন ওর বাবার পালা। তুই কি ভেবেছিস তোর মত কা’পুরুষ আমি? যে টাইম পাস করে ছেড়ে দেব? আমি ওকে বিয়ে করব। আমার চিরসাথী করে নিব।
ইউসুফ আমার চোখের পলকে আদনানকে জোরে ঘু’সি মারে। আর চিৎকার করে বলে,
“ তুই ওকে বিয়ে কর‍তে পারবি না! আমি এ হতে দেবনা!”
আদনানের মুখ থেকে রক্ত পড়ছিল। আমি দৌড়ে গিয়ে আদনানকে ধরি। আদনানকে ধরে রাখা যাচ্ছিলো না। ও ইউসুফকে মা’রবেই। আমি অনেক কষ্টে ওকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাকে সরিয়ে ও আবারো ইউসুফের কলার ধরে বলল,
– কেন, কেন বিয়ে হতে দিবি না? তুই কি চাস? ঘরে বউ বাচ্চা রেখে বাইরে এসে এসব করিস লজ্জা করে না!
বলেই আদনান ইউসুফের পেটে হাটু দিয়ে মা’রতে থাকে। আমি আদনানকে পিছন থেকে আটকানোর চেষ্টা করি। আমি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ওকে বলি,
– প্লিজ আপনি এমন করবেন না! আমার খুব ভয় হচ্ছে! প্লিজ থামেন!
আমার কথা শুনে আদনান ইউসুফকে ধা’ক্কা মে’রে ফেলে দিল। ইউসুফ নিজেকে সামলে বলল,“ তোর এ প্রতিশোধ আমি নেবই আদনান! তুই আমাকে এখনো চিনিস নাই! ”
আদনানও জোরে চে’চিয়ে বলল…..

(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে