বাড়িওয়ালার ছেলে পর্ব-০৫

0
766

#বাড়িওয়ালার ছেলে
– ফাহিমা ফাইজা
#পর্ব ৫

আদনান অনেক পরে উত্তর দিল। সে আমার কাছে আবদার করল নীল রঙ এর শাড়ি পরতে।
আমি বললাম,“ কেন?”
– আচ্ছা না চাইলে থাক। জোর করব না।
– না, আমি কি বলেছি যে পরব না। মানে কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি?
– শাড়ি পরতে বুঝি অনুষ্ঠান লাগে? তুমি তো দেখছি একদমই আনরো’মান্টিক।
– আমি আনরো’মান্টিক? কি বলেন?
– হ্যা, একদম রোবট।
– আচ্ছা, কিভাবে রোমা’ন্টিক হতে হয় আপনিকি একটু শিখাবেন?
– আমি কে যে শিখাব?
– আপনি কে আবার? আপনি বাড়িওয়ালার ছেলে!
আদনান জোরে হেসে ফেলল। সাথে আমিও হাসলাম। দুজনে অনেকক্ষণ হাসলাম। এরপর আমি বললাম,
– আচ্ছা, বাড়িওয়ালার ছেলে, এবার একটু বলবেন কাল আমি নীল শাড়ি কেন পরব?
– আগে পরোতো, তারপর নিজেই টের পাবে।
– আচ্ছা, ঠিকয়াছে। গুড নাইট।
– ফোন কা’টতে ইচ্ছা করছে না আয়শা। আরেকটু থাকো,প্লিজ?
– কাল কথা বলব,আজ অনেক বলেছি। বাই।
– বাই,আর আমার কথার উত্তরটা দিও কিন্তু।
– কোন উত্তর? ও বুঝেছি,সময় হলেই পাবেন।
– আর কত অপেক্ষা করব?
– ভালোবা’সার আরেক নাম তো অপেক্ষা ই। তাই না?
– হাহ,আর ভাল্লাগে না। আচ্ছা রাখো তাহলে। গুড নাইট।
– ওকে। গুড নাইট।

.
পরের দিন রাফাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম আজ আদনানের জন্মদিন। এজন্যই হয় তো ও আমাকে নীল শাড়ি পরতে বলেছে। তো কথামত বিকেলে আমি নীল শাড়ি পরলাম। সাজতে আমার কোনোদিনও ভালো লাগে না। কিন্তু রাফা আর এশা জোর করে আমাকে সাজিয়ে দিল। সাজানোর মধ্যেই আদনান গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। শায়লা বারান্দা থেকে বলল এক মিনিট লাগবে আর। কিন্তু এক মিনিটের কথা বললেও আদনান বেচারাকে ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। আমিতো ভেবেছিলাম ও রে’গে যাবে। কিন্তু বের হয়ে দেখি সে কোনো বিরক্তি ছাড়াই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি বললাম, আপনি একটুও বিরক্ত হননি?
– না, বিরক্ত কেন হবো? তুমিই তো বলেছো ভালো’বাসার আরেক নাম অপেক্ষা।
– বলেছিলাম বুঝি?
– হ্যা, ভুলে গেলে?
– না ভুলব কেন!
– আয়শা!.
– হু বলেন?
– তোমাকে পুরো অপ্সরার মত লাগছে!
– পাম দিচ্ছেন?
– না তো।
আমি এতক্ষণ খেয়াল করিনি। কিন্তু এখন যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দেখি আদনানের গেট আপ পুরো চেঞ্জ। এই প্রথম তাকে পাঞ্জাবি পরতে দেখলাম। মাথার এলোমেলো বড় চুল ছোট করা। আর হাতে আমার বলা এক গুচ্ছ গোলাপও আছে। মানে সব কিছু মিলিয়ে সম্পুর্ণ নতুন এক আদনান। আমি মাথা নিচু করে লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বললাম,“ আপনাকে তো চেনাই যাচ্ছে না! ”
– কেন আগের আদনানকে মিস করছো নাকি?
– ইস মোটেও না!
– আচ্ছা চল। যাই এখন।
– কই যাবেন?
– যেদিকে দু চোখ যায়।
– ওহ যা বলব, হ্যাপি বার্থডে!
– আহ,তুমি কিভাবে জানলে?
– রাফা বলল,ফেসবুকে নাকি দেখেছে।
– ফেসবুকের টা তো ফেকও হতে পারে তাই না।
– না ফেক না আমি জানি।
– কিভাবে বুঝলে?
– আপনার জন্মদিন বলেই আমাকে শাড়ি পরতে বলেছেন।
– তুমি মেয়ে ভারী বুদ্ধিমতি!
– হয়েছে এত পাম দিলে আমি তো উড়ে যাব। তখন আর খুযে পাবেন না!
– আচ্ছা চল এখন।
– আচ্ছা গাড়িতে না উঠে আমরা রিকশায় উঠি?
– আচ্ছা, চল তাহলে।

আদনান আর আমি পুরো শহর রিকশায় ঘুরলাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা,চটপটি আর চা খেলাম। যেমনটা উপন্যাসের নায়ক নায়িকারা করে। আমি সত্যি এত খুশি কখনো এর আগে হইনি যতটা আজ হয়েছি। আমার সুপ্ত অনুভূতি ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে হতে এক অজানা অনুভূতিতে পরিণত হচ্ছে। তাহলে এই অজানা অনুভূতি কি ভালো’ বাসা? আমি কি তাহলে আদনানকে ভালো’বেসে ফেলেছি? কিন্তু আমি আবার একই ভুল করছি নাতো। না, আমার মনে হয় না আমি এবার কোনো ভুল করছি। কারণ ইউসুফ আর আদনানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। ইউসুফ কখনো আমাকে সময় দিত না। এমনকি আমার কথা শোনারও সময় তার ছিল না। এর কারণও অবশ্য আছে। ইউসুফের সাথে সম্পর্কের প্রথম থেকেই ও শুধু আমাকে খারা’প নজরে দেখত। আমার সাথে সবসময় খারা’প সম্পর্ক স্থাপন করতে চেষ্টা করত। কিন্তু আমি কখনো তা হতে দেইনি। কিন্তু আদননের মধ্যে আমি এমন কিছুই দেখিনি। তবুও ভয় হচ্ছিলো মনের কথা বলতে, ওকে ভালো’বাসতে। কথায় আছে না ঘর পো’ড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমার একই অবস্থা।

সন্ধ্যার দিকে আমরা রেস্টুরেন্টে গেলাম কেক কা’টার জন্য। আমি বললাম তার কেক কা’টার জন্য শুধু আমি একা কেন। আর কেউ নেই আসে নি কেন। সে উত্তরে বলল যে প্রতিবারই তো সব বন্ধুরা থাকে এবার না হয় আমিই একা থাকি। আমি ব্যাগে করে একটা ছোট্ট গিফট এনেছিলাম ওর জন্য। গিফট টা বের করে দিতেই আদনান আমার দিকে অনেকক্ষণ এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর জিজ্ঞেস করে
– কি আছে এতে?
– খুলেই দেখেন।
আমি ওর জন্য একটা হাত ঘড়ি এনেছিলাম। আসলে আমি এর আগে কখনো কোনো ছেলেকে গিফট দেইনি। ইউসুফের জন্য একটা শার্ট কিনেছিলাম কিন্তু সে তার জন্মদিনে কোথাও যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি যে ওর ফ্যামিলির সাথে হয়ত পালন করেছিল। যাই হোক পুরনো কথা ঝেড়ে ফেলে আমি আদনানের কথা ভাবতে লাগলাম যে যদি ওর ঘড়িটা না পছন্দ হয়? ভাবতে ভাবতে দেখি আদনানের ঘড়িটা অলরেডি হাতেও পরা হয়ে গিয়েছে। সে মুচকি হেসে বলল, “ এই বেপরোয়া ছেলের জন্য ঘড়িই ঠিক আছে। ”
– হুম সেটা ভেবেই দিয়েছি। যাতে সময়কে একটু মূল্যায়ন করেন।
– আয়শা, তুমি আমাকে আর আপনি করে ডেকো না,প্লিজ। মনে হয় আমি একদম বুড়ো হয়ে গেছি!
আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,“ কেন আপনি জানেন না মেয়েরা তাদের পছন্দের মানুষকে আপনি করে ডাকতে ভালো’বাসে।
নিজের অজান্তেই এই কথা বলে ভারী লজ্জায় পড়ে গেলাম আমি। তাই তার মুখের দিকে না তাকিয়েই পিছনে চলে যেতে লাগলাম। তখনই সে আমার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। আমি তখনো তার দিকে তাকাইনি। আদনান হালকা গলায় বলল,“ কি বললে তুমি? আবার বললতো? ”
আমিও হালকা গলায় আমতা আমতা করে বললাম,
– কই… কিছু.. নাতো।
– আমাকে ভালো’বাসো?
– জানি না,
– আয়শা সত্যি করে বলো,ভালো’বাসো?
আমি চোখ বন্ধ করে খুব কষ্টে বললাম,“ হ্যা, ভালো’বাসি! আপনাকে অনেক ভালো’বাসি ”
– আমি কি যা শুনছি তা সত্যি শুনছি? তুমি সত্যিই আমাকে ভালোব’াসো?
– ভালো’বাসতে বাধ্য করেছেন। কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিন কখনো আমার সাথে বেঈ’মানি করবেন না। কখনো আমার হাত ছাড়বেন না।
আদনান আমার হাতে চু’মু খেয়ে দু হাত ধরে বলল,“ কথা দিচ্ছি সারাজীবন পাশে থাকব। এই যে হাত ধরেছি আর কখনো তোমার এই হাত ছাড়ব না! প্রমিস!”
আমি আদনানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ওকে জ’ড়িয়ে ধরলাম।
.

“তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে
তোমার ঝাউয়ের দোলে….
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখ রাতের গান। ”
আজ আমাদের কলেজে রবীন্দ্র জয়ন্তির অনুষ্ঠান ছিল। তাই আমি এই গানটা গেয়েছিলাম। গানের ভিডিও আদনানকে পাঠিয়ে দিলাম। আদনান রিপ্লাই করল,“ আমাকে আলাদা করে একটু শুনিও। তুমি গান গাইতে পারো জানতাম না।”
আমি রিপ্লাই দিতে যাব তখনই একটা অজ্ঞাত প্রোফাইল থেকে আমার ফোনে কিছু মেসেজ আসতে শুরু করে। আমি ঢুকে দেখি আদনান আর আমার কয়েকটি ছবি। ছবিতে আমি আদনানকে জ’ড়িয়ে ধরে আছি। আরেকটাতে আদনান আমার হাতে চু’মু খাচ্ছে সেটার ছবি। আমি এসব দেখে আকাশ থেকে পড়ি। কে তুলল এসব ছবি। দেরি না করে আদনান কে ফোন করি। আদনান নাকি জানে কে এসব করেছে। আদনান বলল…
(চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে