#বাঁধিব_তোমায়_বিরহ_ডোরে
#শেষপর্ব_১১
#রিয়া_জান্নাত
চৈত্র মাসের সকাল, ঊষা কাটতে না কাটতে ফুরফুরে হয়ে গেছে। ইশমাম দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। কিছুক্ষণ আগে চোখটা লেগে গেছিলো। কিন্তু রাহার চিৎকারে আবার উঠে পড়ে। কিছুতেই রাহাকে সামলাতে পারছেনা ইশমাম। কত চেষ্টা করেও ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াতে পারে নাই। ডায়পার চেঞ্জ, একটুপর পর দুধের জন্য কান্নাকাটি কিছুতেই সামলাতে পারছেনা রাহাকে। আবার রাহার শরীরে ১০২° ডিগ্রি জ্বর উঠে গেছে। ইশমাম এবার কেঁদে ফেলে, কারণ সে রাহার বাবা হতে পারলেও কখনো মা হতে পারবেনা। সার্থপরের মতো ইনিয়াকে ব্যবহার করতেও পারবেনা আর। ইনিয়ার দিকে তাকায়।
“ আর কত ঘুমাবেন আপনি? আপনি ছাড়া আমার রাহা ‘ মা ‘ হীন। ”
এমন সময় ঘড়িতে টাইম দেখে ইশমাম । টাইম দেখে অবাক হয়ে যায়। ডক্টর বলেছিলো ঘুমের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ১০ ঘন্টা পর ইনিয়া একাই উঠবে। তাহলে এখনো উঠছেনা কেনো? ইশমাম রাহাকে ইনিয়ার কাছে শুইয়ে দিয়ে নার্সের কাছে যায়।
“ শুনেন সিস্টার! ইনিয়ার ঘুম ভাঙছে না কেনো? অলরেডি ১০ ঘন্টা হয়ে গেছে। আপনারা তাকে শান্ত করার জন্য এই স্যালাইন দিলেন। কিন্তু ইনিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে কেনো? প্লিজ ইনিয়াকে একটু দেখেন। “
ইশমামের কথা শুনে সিস্টার ইনিয়ার রুমে আসে। এসে দেখতে পায় ইনিয়া বাবুকে দুধ দিচ্ছে। সিস্টারকে দেখা মাত্রই বলে উঠে,,
“ সিস্টার আমি এখানে কেনো? রাহার বাবা কই? রাহার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ডায়পার চেঞ্জ করেনি। একদিনে আমার মেয়েটার শরীরের এমন হাল কেনো? ”
“ মা ছাড়া কি বাচ্চা সুস্থ থাকে? আপনার বাচ্চা গত ১২ ঘন্টা যাবত কোনোকিছু খায়নি। কিছুতেই এই ফিডার মুখে নেয়নি। আর জ্বর মেবি গতকাল ঠান্ডা লেগে বাঁধিয়েছে। মা সুস্থ, ইন শা আল্লাহ বেবি দ্রুত ভালো হবে। আচ্ছা আমি আসছি। ”
রাহাকে আদর করে বলে মা খুব জ্বালিয়েছ বাবাকে। বাবা পঁচা তোমার যত্ন নিতে পারেনি। রাহা দুধ খাচ্ছে আর উহুম উহুম করছে।
ইশমাম এতক্ষণ যাবত সবশুনে কেঁদে ফেলে। ইনিয়ার হাত ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এতোকিছু জানতাম না। আমার সত্যিই শোনা উচিত ছিলো আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া কাহিনী। আমি বড়ই স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম। ইনিয়ার বামহাত দুহাতের তালুতে মুষ্টিবদ্ধ করে ফ্লোরে বসে কাঁদতে থাকে।
ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,
“ আমাকে রাহার কাছ থেকে দূরে পাঠাবেন না। আমি রাহাকে ভালোবেসে ফেলছি। রাহাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। রাহাকে আমি বুকের দুধ পান করিয়েছে। রাহাকে আমি নিজের মেয়ের মতনই রাখবো। একদিন আমি ছিলাম না বলে কত অযত্ন হয়েছে মেয়েটার। আমি চাইনা রাহা অযত্নে বেড়ে উঠুক। রাহার যখন ছয়মাস বয়স হবে তখন আমি দূরে চলে যাব। এখন কোথাও পাঠাবেন না। ”
ইনিয়ার এসব কথা শুনে ইশমাম নিজেকে হালকা করে। জানেন এই কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে আপনাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু পারছিনা, আপনি রাহাকে মেয়ের মতো ভালোবেসেছেন। আমি পারবোনা মেয়ের থেকে তার আম্মাকে সরিয়ে দিতে। আপনি ছাড়া রাহাকে আমি মানুষ ও করতে পারবো না। মনের মধ্যে থেকে একটা ভারী পাথর সরে গেলো। সত্যি আপনি যাবেন নাতো?
“ রাহা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। আমি ইতিম মেয়ে যেভাবে বড় হয়েছি চাইনা রাহা সেভাবে বড় হোক। আমি রাহার মায়ের দায়িত্ব পালন করতে চাই।আর ততদিনে বাঁচার জন্য নতুন পথ খুঁজতে চাই। ”
এইকথাগুলো শুনে ইশমাম নিজেকে শক্ত করে। ভরসা পায় কিছুটা। এরপরে ইনিয়াকে বলে আমিও আপনাকে ভালো রাখতে চাই। জানি কোনোদিন প্রিয়ার জায়গা দিতে পারবো কিনা? তবুও আপনাকে স্বার্থপরের মতো প্রপোজাল দিতে চাই। প্লিজ রাগ করবেন না।
“ হ্যা বলুন ”
“ আমি আপনাকে পারমেনেন্ট রাহার আম্মু বানাতে চাই। থাকতে পারবেন বাকীটা জীবন ইশমাম মির্জার স্ত্রী হয়ে থাকতে। ইশমাম মির্জার মেয়ের জন্য, রাহার আম্মু হয়ে প্লিজ! প্লিজ! ”
এই কথাগুলো শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ইনিয়া। ইনিয়া ইশমামের মুষ্টি থেকে হাত সরিয়ে বলে,,
“ আপনি পাগল হয়েছেন? দ্বিতীয়বার এসব কথা শুনতে চাইনা। ”
“ ইশমাম বুঝতে পারে এই সময়ে আসলেই তার এই কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। কিন্তু ইশমাম মনেমনে বলে যে মহিলা আমার মেয়েকে নিজের আপন মেয়ে ভাবতে পারে। তাকে বাকিটা জীবন আমি সুখী রাখবো। স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না জানি। কিন্তু নিশ্চয়তা দিব। প্রিয়া তুমি আমাকে দুচরিত্রবান ভাবিও না আবার। ”
“ ইনিয়া মনেমনে বলে মি.মির্জা এসব বললেন কেনো? ওনি কি সত্যি মন থেকে এই কথা বললো? কিন্তু আমি জুনায়েদের জায়গা তাকে দিব কি করে? জুনায়েদ পারলেও আমি যে পারবো না। কারণ আমি জুনায়েদকে বড্ড ভালোবাসি। ”
____
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে বসে আছে জুনায়েদ। টেবিলের সামনে মোমবাতি জ্বলছে। জুনায়েদ ইনিয়ার একখানা ছবি দেখে চোখের জ্বল ফেলছে। অতীতের স্মৃতি চারা দিয়ে যাচ্ছে জুনায়েদের মাথায়। অতীতের দিনগুলি মনে পড়তেই জুনায়েদের চোখে অশ্রুকণা গালবেয়ে টপাটপ পড়ছে। ঘরে কোনো আলো নেই, জুনায়েদকে দেখতে আবছা অবয়ব মনে হচ্ছে। জুনায়েদ ছবিখানাকে জিজ্ঞেস করে,,,
“ হয়তো আর বেশি সময় নেই আমি। তোমাকে খোঁজার কমতি রাখিনি। আজ পয়তাল্লিশ দিন হয়ে গেলো তুমি আমার কাছে নাই। অবশ্য আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু মরার আগে যদি তোমার হাসিমুখ খানা একবার দেখিতে পারতাম। জীবনডা বোধহয় সার্থক হতো। মরেও শান্তি পেতাম। ”
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো, জুনায়েদ রুমের সুইচ অন করলো। আলোর মধ্যে জুনায়েদের চেহেরা দেখে পাঠকগণ কেঁদে ফেলবেন। জুনায়েদের মুখ শুঁকে গিয়েছে। শরীরের গড়ন একদম হালকা,পাতলা। দেখে মনে হবে কতশত বছর মনে কোনো খাবার খায়না। জুনায়েদ আস্তেধীরে নিচে এসে সদর দরজা খুলে দিলো। পাঁচজন লোক কালো কাপড় মুখে বেধে রিভলবার তাক করে জুনায়েদের মাথায়। জুনায়েদ ভয়ে আঁতকে উঠে। জিজ্ঞেস করে,,
“ কি চাই আপনাদের? আপনারা মাথায় রিভলবার ধরেছেন কেনো? ”
“ পাঁচজন লোকের মধ্যে প্রধান একজন লোক সম্পত্তির উইল পেপার বের করে বলে প্রাণের মায়া থাকলে এই পেপারে সাইন করেন। ”
“ এটাতে কি লেখা আছে আমি সাক্ষর করবো ক্যান? ”
“ আপনার যাবতীয় স্থাবর _ অস্থাবর সম্পত্তির মালকিন হবে নিমু রহমান। ”
“ কি? ওর এতোবড় সাহস? আমাকে বন্দুক তাক করে সাইন আদায় করবে। কিন্তু, ও তো জেলখানায়। তাহলে আপনারা তার কাজ করতে আসলেন কেনো? ”
“ আমরা টাকার বিনিময়ে কাজ করি। কে কোথাও থাকলো তা দেখার বিষয় আমাদের না। জীবনের মায়া থাকলে সাইন করে দেন। ”
জুনায়েদ মুচকি হাসি দেয়। কতদিন বা আছি আমি। মৃত্যু লোককে দুদিন আগে মারবেন এটাইতো। তো মারেন। আমার জীবন গেলেও আমি এই উইলপেপারে সাক্ষর করবো না।
গুন্ডা গুলো বলে ভালো কথায় কাজ হবেনা। এই লাঠি আন লাঠিচার্জ করলে একাই সাক্ষর করবে। এই কথা শোনামাত্রই দুইজন লোক মোটা লাঠি নিয়ে ধেয়ে আসে জুনায়েদ কে মারতে। জুনায়েদ তা দেখে শেষ হাসি দেয় চোখবুঁজে। আর অনুভব করে ইনিয়াকে। দ্রুত চোখ খুলে ফেলে জুনায়েদ। এবং আসলেই ইনিয়াকে তাকে এসে হোল্ড করছে। জড়িয়ে ধরে বলছে ওকে মারবেন না। কোথায় সাইন লাগবে বলে দিন আমি সাইন করে দিব।
গুন্ডাগুলো বলে এই হিরোইন কোথায় থেকে আসলো। যাক ভালোই হয়েছে। এই ম্যাডাম আপনার নায়ককে বলুন এখানে সাইন করতে।
জুনায়েদ ইনিয়ার হাগপেয়ে শরীরে অনেক শক্তি পায়। হাত দিয়ে রিভলবার তাক করা লোককে ঘুষি মারে। এরপরে সমস্ত গুন্ডাকে ধরে উত্তম মাধ্যম মার দেওয়া শুরু করে। এসব দৃশ্য দেখে ইশমাম রাহাকে ইনিয়ার কোলে দিয়ে সেও ফাইট করা শুরু করে। এক পর্যায়ে গুন্ডারা আধমরা হয়ে যায়। এরপরে জুনায়েদ জিজ্ঞেস করে নিমু তোদের কত টাকা দিয়েছে।
“ তিন লক্ষ্য টাকা ”
“ যা আমি তোদের পাঁচ লক্ষ্য টাকা দিলাম। এইবলে পকেট থেকে চেক সাইন করে গুন্ডাদের মুখে ছুড়ে মারে। ”
“ গুন্ডারা চেক নিয়ে দৌড় দেয়। ”
জুনায়েদ ক্লান্ত শরীরে যেয়ে ইনিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে কোথায় গিয়েছিলা তুমি? কত খুজেছি তোমাকে আমি পাইনি? অথচ আজ পয়তাল্লিশ দিনপর আমার কাছে আসলে।
ইনিয়া ইশমামের হাতে রাহাকে দিয়ে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরে। ইশমামের এই দৃশ্য দেখে কিছুটা কষ্ট হয়। বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠে। কেনো এমন করে উঠলো ইশমাম বুঝতে পারলো না।
” কি হাল করেছো নিজের? শরীরের একটুও যত্ন নাও নি কেনো? এমন শুকিয়ে যেয়ে মুখ কালো করে ফেলছো ক্যান? আমিতো এরকম জুনায়েদকে রেখে যায়নি। ”
” জুনায়েদ ইনিয়ার গালদুটি দু-হাত দিয়ে ধরে বলে অবশেষে তুমি এলে। আমার ভালোবাসার চিহ্ন কই ইনিয়া। আমাদের বাচ্চা কই? ”
জুনায়েদের এমন প্রশ্নে ইনিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ইশমাম তা দেখে জুনায়েদকে বলে রাহাকে কোলে নিন। রাহাকে কোলে নিতে যায় জুনায়েদ। কিন্তু কোলে আর নিতে পারেনা। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ ফ্লোরে পড়ে যায়। ইনিয়া দ্রুত জুনায়েদের মাথা নিজের দুই উরুতে রাখে।
“ কি হলো জুনায়েদ তোমার? ইশমাম আপনি প্লিজ একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন না? ”
“ হ্যা হ্যা ডাকছি বলে ফোন বের করে করে ইশমাম। ”
জুনায়েদের কথা বলতে কষ্ট হয়। তবুও শেষবারের মতো কথাগুলো গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে।
“ ডক্টর ডেকে লাভ নেই ইনিয়া। আমার হাতে সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমি চলে যাচ্ছি। ইনিয়া ওনাকে ডাকোনা একটু। ”
“ তুমি চুপ থাকো জুনায়েদ। আমি সব জানি, বাবা আমাকে খুজে বের করে, সব বলছে আজ। তাই সব জেনে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি এভাবে চলে যেতে পারোনা। ”
ইশমাম জুনায়েদের কাছে আসে। জুনায়েদের প্রচুর কাশী হতে থাকে তবুও ইশমামকে বলে আমি বুঝতে পেরেছি,ইনিয়া এতদিন আপনার কাছে ছিলো। আমিতো চলে যাচ্ছি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে। আমায় একটা সাহায্য করবেন?
“ কি সাহায্য? বলেন। ”
“ আমার ইনিয়ার দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার ইনিয়া। আপনি প্লিজ! তার জীবনে দ্বিতীয় বসন্ত হয়ে আসিয়েন। ”
ইনিয়া হায় আল্লাহ বলে চিৎকার করে। ইশমাম কে বলে আপনি এখানে বসে থাকবেন না অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন না প্লিজ। আমার ভালোবাসার মানুষ অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি আর কষ্ট দিতে পারবো না। কেনো এতো অভিমানী হলাম। বুঝলাম না কেনো আপনাকে। ইনিয়ার দুচোখ ভর্তি পানি। আর মুখে আজাহারি ভাব।
জুনায়েদ প্রিয়তার এমন মুখ দেখতে পারলো না। দুহাতের তালু উঁচু করে চোখ মুছে দিলো। এরপরে চোখ উল্টিয়ে ফেললো। ইশমাম রাহাকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে দ্রুত এক গ্লাস পানি এনে জুনায়েদ মুখে ধরলো। জুনায়েদ পানিটুকু খেয়ে শুধু লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
ইনিয়া চিৎকারে সারা গ্রামের লোক জড়ো হয়ে গেলো। সবাই এসে শান্তনা দেওয়া শুরু করলো। সবমিলিয়ে কিছুক্ষণ পর জুনায়েদকে দাফন করে বাড়িতে ফিরলো গ্রামের সকল লোক। ইনিয়া পাথরের মতো হয়ে গেছে। রাহাকে কোলে দিলো ইশমাম কিন্তু ইনিয়া আর স্বাভাবিক হতে পারলো না।
____
জুনায়েদ মারা যাওয়ার তিনমাস কেটে গেলো। ইনিয়ার শোক কাটাইতে তিনমাস লেগে যায়। রাহা ততদিনে অনেক বড় হয়ে যায়। ইশমাম প্রতিটা মূহুর্তে ইনিয়াকে সঙ্গ দিয়েছে। অবশেষে আফজাল সাহেবের চেষ্টায় ফাইনালি ইশমাম ও ইনিয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো আজ।
বাসরঘরে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছে ইনিয়া। ইশমাম সন্তপর্ণে রুমে ঢুকলো। কারণ রাহার ঘুম অনেক কাঁচা। কিছুর আওয়াজ পেলেই ভেঙ্গে যায়। ইনিয়া ইশমামকে দেখে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। ইশমাম ইনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,,
“ আমাকে স্বামী হিসাবে মানবেন তো? ”
“ ইনিয়া শুধু ইশমামকে দেখে আর কিছু বলেনা। ”
“ ইশমাম এই প্রথম ইনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে দুটি ভাঙ্গা হৃদয় আজ মিলিত হোক, অতীতের গ্লানি নিপাত যাক। আমি তোমাকে ভালোবাসি ইনিয়া। জীবন আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়, আবার সুযোগ দেয়। প্লিজ অতীত নিয়ে না ভেবে সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। ”
“ ইশমামের কথায় ইনিয়া সায় দেয়না। কারন ইনিয়া জুনায়েদের জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করেনি। কিন্তু নিষ্ঠুর ভাগ্য কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায়। ইনিয়া চুপ থাকে। ”
“ ইশমাম ইনিয়ার চুপ থাকা দেখে বলে, আমিও প্রিয়ার জায়গায় কখনো কাউকে কল্পনা করিনি ইনিয়া। কিন্তু আমাদের এই বাচ্চার জন্য আমাদের তো এক হতেই হতো ইনিয়া। আপনার সঙ্গে কাটানো প্রায় ছয়মাসে অনেক ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। কিন্তু এতো খারাপ সময়ে মাধ্যমে কবে যে আপনার জন্য এতো টান হলো বুঝলাম না। ”
“ ইনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে দুটি ভাঙ্গা হৃদয় কে জুড়ে দিলো রাহা। আপনাকে আমাকে বিরহ ডোরে বেঁধে রাখলো। ”
“ ইশমাম ইনিয়ার কপালে চুমু দেয়। বিয়ে যেহেতু করেই ফেলছি স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করবো। ইশমাম ইনিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুবে এমন সময় রাহা উঠে পড়ে। কাঁদতে থাকে, ইনিয়া ইশমামকে সরিয়ে দিয়ে বলে ওদিকে যান। বাবুর ক্ষুধা লাগছে। ”
ইশমাম মুখ গোমড়া করে ওদিকে যেয়ে শুয়ে পড়ে। আর ইনিয়া মুচকি মুচকি হাসি দেয় ইশমামের মুখ দেখে।
___ সমাপ্ত ___
বিশেষ নোটঃ-
[ যারা গল্পটা শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়েছেন। তারা আজকে নীরব পাঠক হয়ে থাকবেন না। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। গল্পটা পড়তে পড়তে কারো কি মনে হয়েছে? আমি গল্প পাকিয়ে ফেলেছি! যদি মনে হয় তাহলে বলবেন কোথায় কোথায় খারাপ লাগছে। আর একটা ভালোমন্দ রিভিউ চাই। ভূল থাকলে নিজেকে শোধরাইতে চাই। ]