বসন্তের আগমনে পর্ব-১৩

0
981

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান বাড়িতে এসে সোফায় বসে বসে কি জানি ভাবছে!আয়েশা বেগম এসে আরহানের পাশে বসে বললো,

“কি এতো ভাবছিস তুই আরহান?”

“সবকিছুতে কেমন জানি খটকা লাগছে আম্মু।আচ্ছা আম্মু তোমরা কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”

আয়েশা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“কি আবার লুকাবো তোর থেকে!”

“না কিছু নাহ্।”

আরহান আর কিছু না বলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।আয়েশা বেগম আরহানের গালের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।দেখলো আরহানের গালে হালকা হলুদ লেগে আছে।আয়েশা বেগম মৃদু হাসলেন।আয়েশা বেগম মনে মনে বললেন,

“যাক আমার আর চিন্তা নেই।”

সন্ধ্যাবেলা,

আরিশা আলভিকে নিয়ে নেচে নেমে দেখলো আয়েশা বেগম বসে আছেন।আরিশা আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু ভাইয়া কই?”

আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে আরহান বললো,

“এই তো আমি।”

আরিশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান দাঁড়িয়ে আছে।আরহানকে দেখে আরিশা অবাক হয়ে বললো,

“বাহ্ ভাইয়া তো দেখছি পাঞ্জাবি পড়েছে।”

“হুম মিস.বকবকানির বিয়ে।এতো রিকুয়েষ্ট করলো পাঞ্জাবি না পড়লে হয়!”

আয়েশা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা এখন চলো তাহলে।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“হ্যাঁ চলো।”

আয়েশা বেগম আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আরহান আজকে তুই ড্রাইভ করবি নাহ্।”

“কেনো আম্মু?”

“আমি বললাম তাই।আজকে ড্রাইভার ড্রাইভ করে আমাদের নিয়ে যাবে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণের মধ্যে আরহানরা ঈশাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলো।আরহান গাড়ি থেকে নামতেই সারা বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।এইসব দেখে আরহান বেশ অবাক হলো।আরহান আস্তে করে আরিশাকে জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা আমি আমরা আসার পরে সবাই বর এসেছে,বর এসেছে বলছে কেনো?”

“তুই বর বলেই তো সবাই বর এসেছে বলছে।”

আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“হোয়াট?কি বলছিস তুই এইসব?”

“যা শুনেছিস তাই বলেছি।এখন বেশি কথা না বলে চল।”

আরিশা আরহানকে জোর করে নিয়ে গিয়ে কাজির পাশে বসালো।আরহান কিছু বলতে গেলে আয়েশা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আরহান রাগে ফুসছে।রাগের কারণে হাত মুথো করে বসে।আরহান মনে মনে বললো,

“এরা নাহলে আমার সাথে এমন করলো।কিন্তু ঈশা?ও তো আমাকে জানাতে পারতো!”

আরহান আর ঈশার বিয়ে হয়ে গেলো।বিয়ে শেষ হতেই আরহান বসা থেকে উঠে সোজা গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসলো।আরহানের কান্ডে সবাই অবাক হয়ে গেলো।সবচেয়ে বেশি অবাক হলো ঈশা।ঈশা মনে মনে বললো,

“কি হলো?উনি এভাবে উঠে চলে গেলেন কেনো!”

ঈশার মুখের চিন্তার ছাপ দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“মা চিন্তা করো না।ওর একটু কাজ আছে তো তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেছে।”

“না আন্টি আর মিথ্যা বলবেন নাহ্ প্লিজ।আপনারা কিছু একটা লুকিয়েছেন।আমাকে সত্যিটা বলুন।”

আয়েশা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।ঈশা আয়েশা বেগমের হাত ধরে বললো,

“প্লিজ বলুন আন্টি।”

“আরহান এই বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানতো নাহ্।আমরা তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আরহান সবটা জানে।আসলে আরহান বিয়ে করতে চায় না।তাই এভাবে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিলো নাহ্।”

ঈশা অবাক হয়ে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়েশা বেগম ঈশার হাত শক্ত করে ধরে বললো,

“আমাকে মাফ করে দিয়ো মা!”

ঈশা মৃদু হেসে বললো,

“কি বলেন এইসব আন্টি!আমি আপনার বিষয়টা বুঝতে পারতেছি।একবার যখন বিয়েটা হয়ে গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই।যা কপালে আছে তাই হবে ”

ঈশা কথাটা বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো।




আরহান তার রুমে এসে চুপচাপ বসে আছে।রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।আরহান বুঝতে পারলো কারা এসেছে!

আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো রুবি খালা দরজা খুলে দিয়েছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা দাঁড়িয়ে আছে।আলভি আরিশার কোলে।তবে ঈশা না দেখে আরহান কিছুটা অবাক হলো।আরহান আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতে।”

আয়েশা বেগম আরহানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“দেখ বাবা ঈশা মেয়েটা অনেক ভালো।আলভিকে কত ভালোবাসে!ও তোর জন্য একদম পারফেক্ট।আর ওর কোনো দোষ নেই।”

আয়েশা বেগমকে থামিয়ে আরহান বললো,

“থাক আম্মু উনার নামে আর সাফাই গাওয়া লাগবে নাহ্।উনি তো জানতো বিয়ের কথাটা।উনি আমাকে জানাতে পারতো তো!”

“ঈশা ভাবির কোনো দোষ নেই ভাইয়া।”

আরিশার কথা শুনে আরহান আরিশার দিকে তাকালো।

“কি বললি তুই?বিয়ে হতে না হতেই ভাবি বানিয়ে ফেললি!”

“ভাবিকে তো ভাবিই ডাকবো।আর ভাবির সত্যিই দোষ নেই।আমরা বলেছিলাম তুই এই বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানতি।আর তুই এই বিয়েতে রাজি।তার কারণেই ঈশা ভাবি রাজি হয়েছে।আর সেদিন ভাবির যখন সন্দেহ হয়েছে তখন আমি বলেছিলাম তুই ভাবির সাথে মজা করতেছিস।তাই ভাবিও বললো তাহলে আমিও মজা করে যাই।”

“তার মানে আসল কালপিট তুই?”

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“ও আম্মু দেখো তোমার ছেলে কি বলে!এর জন্যই কারো ভালো করতে নেই।”

“থাক তোর এতো ভালো করতে হবে নাহ্।তা তোমাদের গুণবতী বউমা কই?”

“ঈশা ভাবি আসেনি?”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“তুই না আনতে গেলে ঈশা আসবে নাহ্।”

আরহান বিরক্তি নিয়ে বললো,

“বাহ্ সব যখন তোমরাই করলে তা উনাকে নিয়েও তো আসতে পারতে!”

“ভাবি না আসলে আমরা কিভাবে আনবো?”

“আচ্ছা ছুটকি তুই গিয়ে আলভিকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়।আমি গাড়ি বের করতেছি।বিয়ের পরে বউ যদি শ্বশুরবাড়ি না আসে তাহলে এটা আমাদের বাড়িই বদনাম।সো আমি আর তুই উনাকে আনতে যাবো!”

আরহানের কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশার মুখে হাসি ফুটলো।আরিশা দৌড় দিয়ে আলভিকে রুমে নিয়ে গেলো।আলভিকে রেখে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“চল ভাইয়া।”

“তুই তো মনে হচ্ছে স্পিডবোট হয়ে গেছিস!”

“তুই ভাবিকে আনতে যাবি শুনে আমি স্পিডবোটই হয়ে গেছি।”

আরহান আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো।আরিশা আরহানের পাশে বসে বললো,

“দেখেশুনে গাড়ি চালাবি।”

“তোর এতো জ্ঞান দিতে হবে না।”

আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।ঈশাদের বাড়িতে কলিংবেল বাজাইতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।ঈশা আরহানকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।আরহান যে আসবে সে কখনো ভাবেনি।আরিশা পিছন থেকে বললো,

“হাই ভাবি!”

ঈশা আরিশার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“দরজাতেই দাঁড়া করিয়ে রাখবেন নাকি ভিতরে যেতেও বলবেন!”

ঈশা জিহ্বায় কামড় দিয়ে দরজা থেকে সরে গিয়ে বললো,

“ভিতরে আসুন।”

আরহান আর আরিশা ভিতরে গিয়ে বসলো।মাসুমা বেগম বললো,

“তোমরা দুজন এতো রাতে?”

আরহান বললো,

“বিয়ের দিন নতুন বউ বাড়িতে না গেলে তো আর ভালো দেখায় না।সেই জন্যই আমরা ঈশাকে নিতে আসলাম।”

হাফিজ সাহেব বললেন,

“বাবা বিয়ের সময় তুমি অনেক রেগে গিয়েছিলে না?”

“আঙ্কেল আগের কথা বাদ দিন।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“মেক-আপ তো দেখছি সব উঠিয়ে ফেলেছেন।যান গিয়ে রেডি হয়ে আসুন।বাড়িতে যেতে হবে তো।নতুন বউ এভাবে গেলে কেমন দেখায়!”

ঈশা কিছু না বলে মুখ ভেঙচি দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আরহান মাসুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আন্টি আমার একটু ঈশার সাথে কথা আছে।আমি কি একটু উনার রুমে যেতে পারি?”

“হ্যাঁ বাবা।যাবে না কেনো?ও তো তোমার বিয়ে করা বউ।”

আরহান কিছু না বলে মুচকি হেসে ঈশার রুমে গেলো।ঈশার রুমের দরজায় নক করতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।আরহানকে দেখে ঈশা বললো,

“আপনি এখানে?”

“আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”

“ভিতরে আসুন।”

ঈশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজছে আরহান ঈশার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।

“আপনি নাকি কি যেন বলবেন!”

ঈশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।

“হ্যাঁ বলবো তো!”

আরহান এটুকু বলে ঈশাকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আরহান এহেন কাজে ঈশা চমকে গেলো।তার হাত থেকে ঝুমকো জোড়া পড়ে গেলো।ঈশা বললো,

“কি করছেন আপনি?”

আরহান চুপ করে ঈশার চুলে নাক গুঁজে আছে।আরহান কিছুক্ষণ পড়ে ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আমি আসলে অনেক আগেই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।সেটা আমি আগে বুঝিনি তবে আপনার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনার পরে থেকে আমার কেমন জানি লাগতো।আর এই দুই-তিন দিন তো শুধু আপনার কথাই মাথায় ঘুরতো।”

“যদি ভালোবেসে ফেলেন তাহলে আজকে ওভাবে বিয়ে শেষ হতে উঠে চলে গেলেন কেনো?”

“দেখুন আরে না দেখো!নিজের বিয়ে করা বউকে কি কারণে আপনি বলবো এখন থেকে তুমি করেই বলবো।আসলে আমি তো কিছু জানতাম না।সবটা হুট করে হয়েছে।তাই রিয়েক্ট করে ফেলছি।বিশেষ করে তুমি সবটা জেনেও আমাকে বলোনি এতে আরো রাগ হয়েছিলো।কিন্তু আম্মু আমাকে সবটা জানিয়েছে।তারপরেই রাগ কন্ট্রোল হয়েছে।”

ঈশা আরহানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমার সাথে রাগ দেখালে খবর আছে মি.অভদ্র।”

আরহান মুচকি হেসে ঈশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ওকে মিস উপ্স মিসেস.বকবকানি।”

দুজনে একসাথে হেসে দিলো।

#চলবে…………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে