বসন্তের আগমনে পর্ব-০৬

0
1027

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৬

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান’ আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“আচ্ছা আজকে তাহলে আসি।আর আপনার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়।তাই আর কিছু বললাম নাহ্।চর শুনেন এরপরে কাউকে থাপ্পড় দেওয়ার আগে হাত কাপড় বেঁধে নিবেন।”

আরহান কথাটা বলে চলে গেলো।ঈশা আরহানের কথা শুনে মুচকি হাসলো।ঈশা বান্ধবীদের সাথে ঘোরাঘুরি শেষ করে বাড়িতে গেলো।বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে।মাসুমা বেগম এসে ঈশা পাশে বসে বললো,

“আয়েশা আপা কল করেছিলো।”

“তা তো ভালো কথা।কি বললো আন্টি?”

“উনি একটা প্রস্তাব দিয়েছেন।”

ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“প্রস্তাব?”

“হ্যাঁ।”

“কিসের প্রস্তাব?”

“আরহানের সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব।”

ঈশা চমকে গিয়ে বললো,

“কি বলছো আম্মু?আমি ওই অভদ্রকে বিয়ে করবো!তবে এখন ভদ্র হয়ে গেছে।তাও আমি উনাকে বিয়ে করবো নাহ্।”

“দেখ আয়েশা আপা তোকে অনেক পছন্দ করছেন।”

“আন্টি পছন্দ করলে তো হবে না।আরহান সাহেবেরও একটা মত আছে।আর তার চেয়ে বড় কথা আমি ওই লোককে বিয়ে করবো নাহ্।”

“আরে আরহান রাজি তো।”

“মানে?”

“হ্যাঁ ও রাজি।এখন তুই রাজি হলেই হয়।”

ঈশা রাগে ফুসছে।মনে মনে বললো,

“এর জন্যই মি.অভদ্র আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করলো!ওই লোকের সাথে আর কোনো কথাই নাই আমার।”

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে মাসুমা বেগম বললেন,

“কি রে চুপ হয়ে গেলি কেনো?কিছু তো বল।”

“আম্মু তুমি আর আব্বু কি রাজি?”

“হ্যাঁ।তোর বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।উনি আজকেই আসবেন।তোর আব্বু আর আমি দুজনেই রাজি।”

“তাহলে আমি আর কি বলবো!আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি তোমাদের পছন্দেই বিয়ে করবো।সো আমিও রাজি।”

মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে চলে গেলেন।মাসুমা বেগম ঈশার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

“মেয়েটাকে তো মিথ্যা বললাম যে আরহান এই বিয়েতে রাজি।আসলে তো আরহান বিয়ের কথা কিছু জানেই নাহ্।আল্লাহ জানে কি হবে!”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

“শেষমেশ ওই অভদ্রটাকে বিয়ে করতে হবে!যাক ব্যাপার নাহ্।আমার আলভি বাচ্চু তো আছে।”

“ঈশা কথাটা বলে হাসি দিলো।




আরহান বাড়িতে আলভির সাথে ফুটবল খেলতেছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা বসে বসে গল্প করতেছে।

” আম্মু ভাইয়াকে না জানিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে!যদি ঈশা আপুর সাথে খারাপ বিয়েইভ করে।তুমি তো জানোই ভাইয়া কেমন বদরাগী।”

“এখন এমন।বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি বুঝে শুনেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।পারলে ঈশাই পারবে এই বদরাগী ছেলেকে ঠিক করতে।”

“তুমি যা ভালো বুঝো।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে আয়েশা বেগমের পাশে এসে বসলো।

“তোমরা মা-মেয়ে কি নিয়ে আলোচনা করছো?”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“এই তো আমার বিয়ে নিয়ে।তুই তো আর বিয়ে করবি নাহ্।তাই ভাবলাম আমিই বিয়েটা করে ফেলি।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“তোর মতো পেত্নীকে কেউ বিয়ে করবে নাহ্।”

“হ্যাঁ নিজে তো মনে হয় নায়ক।”

আরহান কিছু না বলে হাসলো।আয়েশা বেগম আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সামনে একটা বিয়ের দাওয়াত পেতে পারিস।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কার বিয়ে আম্মু?”

“ঈশার।”

“মিস.বকবকানির বিয়ে?ওয়াও!যাক উনার বকবকের হাত থেকে তাহলে বাঁচতে পারবো।”

আরিশা ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“ভাইয়া তুই তো ভালোই চেঞ্জ হয়েছিস দেখছি।এতো হেসে হেসে কথা বলতেছিস আবার ঈশা আপুকে এমন অদ্ভুত নামে ডাকতেছিস।”

“মাঝে মাঝে একটু হাসতে হয়।নাহলে তো হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবো।”

আরহানের কথায় সবাই হেসে দিলো।আরহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা আমি একটু বাইরে যাবো।তোমরা আলভির খেয়াল রেখো।”

“কোথায় যাবি তুই?”

“আম্মু আমার একটা কাজ আছে।এসে জানাবো সবটা।”

আরহান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।আরহান গাড়ি নিয়ে হিয়ার ফ্লার্টে গেলো।আরহান কলিংবেল বাজাতেই হিয়া এসে দরজা খুলে দিলো।তারপরে হাসি দিয়ে বললো,

“ভিতরে আসো আরহান।”

আরহান হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হিয়া একটা টাওয়াল গায়ে প্যাঁচিয়ে রেখেছে।আরহান চোয়াল শক্ত করে বললো,

“কাপড়চোপড় নাই নাকি?এইসব কি পড়ে দরজা খুলতে আসছেন?নিজেই আমাকে ডেকে আবার এইসব করছেন।”

“কেনো তোমার ভালো লাগেনি?”

“জাস্ট সার্ট-আপ।আপনি আসলেই একটা বেহায়া মেয়ে।”

হিয়া জোরে হেসে বললো,

“ভিতরে আসবে নাহ্।”

“নাহ্।”

“একটু ওয়েট করো আমি চেঞ্জ করে আসতেছি।”

আরহান দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতেছে।একটু পরে হিয়া একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আসলো।

“এবার ঠিক আছে?”

আরহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“এইসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে কেনো ডেকেছে তা বলেন।”

“আগে বাড়ির ভিতরে তো আসো।”

আরহান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বাড়ির ভিতরে গেলো।

“দেখো আরহান’ আফিন তো মারা গেছে।এখন আমি চাচ্ছি আলভি আমার কাছে থাকুক।শুধু আমার কাছে না তোমার কাছেও থাকুক।বিকজ আই লাভ ইউ।আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

হিয়া কথাটা বলে আরহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।

“আগে যা হয়েছে প্লিজ ভুলে যাও।আর আমাকে গ্রহণ করে নেও।”

আরহান চোখ রাঙিয়ে ধাক্কা দিয়ে হিয়াকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।ধাক্কা দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে হিয়া নিচে পড়ে গেলো।”

“লজ্জা করে নাহ্ আপনার!আমার ভাইয়ার জীবনটা শেষ করে আমাকে ভালোবাসা দেখাতে আসছেন।আপনার জন্য আজকে আমার বড় ভাই এই পৃথিবীতে নাই।আর ওই নিষ্পাপ শিশুটা বাপ হারা হয়েছে।তবে আমি চাই না আপনার মতো একটা মেয়ের কাছে আলভি থাকুক।ওর জন্য আমিই ঠিক আছি।ওর আর কারোর প্রয়োজন নেই।ও আমার ছেলে।আর নেক্সট টাইম আমাকে ডেকে এমন অসভ্যতা করলে এই পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলো দিবো।গট ইট।”

আরহান কথাগুলো বলে রাগে ফুসতে ফুসতে হিয়ার বাড়ি থেকে চলে গেলো।হিয়া মেঝেতে বসে রাগে কাঁপছে।”

“আমাকে অপমান করা।তোর জীবন আমি নরক বানিয়ে ফেলবো।”

/✨/

আরহান গাড়ি চালিয়ে সোজা নদীর পাড়ে চলে গেলো।গাড়ির উপর বসে বসে নদীতে ঢিল ছুড়ছে।আর তার চোখ বেয়ে দুই-এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

“ভাইয়া কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলি!বাবা না হয় চলে গেছে।তাই বলে তুইও চলে যাবি।কতবার বারন করেছিলাম এই মেয়েটাকে বিয়ে করিস নাহ্।শুধুমাত্র এই হিয়ার জন্য তুই আর বাবা আমাদের মাঝে নেই।আমি তোদের অনেক মিস করি।আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে আমি তোমাদের দুজনকে ছাড়া ভালো নেই।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে