বসন্তের আগমনে পর্ব-০৫

0
944

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মাসুমা বেগম দরজা খুলে দেখলেন ঈশা চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

“ঈশা কিছু কি হয়েছে?”

মাসুমা বেগমকে দেখে ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“না আম্মু কিছুই হয়নি।”

“তুই কি একা একা আসছিস নাকি?”

“আম্মু আগে ভিতরে তো ঢুকতে দেও তারপরে সব বলতেছি।”

“আচ্ছা ভিতরে আয়।”

মাসুমা বেগম ঈশাকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।

আরহান গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।আরহান রাগে ফুসছে।অনেক স্পিডে গাড়ি চালিয়ে বাসায় গেলো।আরহান বাড়ির ভিতরে ঢুকে সোজা তার রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখলো আলভি ঘুমিয়ে আছে।আলভির ঘুমন্ত চেহারা দেখে আরহানের মুখে হাসি ফুটলো।নিমিষেই সব রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।আরহান বিছানার বসে আলভির মাথায় হাত রাখলো।

“একমাত্র তোকে দেখলেই আমার রাগ কমে যায়।কি জাদু আছে তোর এই মিষ্টি মুখে!আমার বাবা তাহ্।”

আরহান আলভির কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো্।ফ্রেশ হয়ে এসে পকেটে হাত দিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।

“এই মেয়েটা বেশি বেড়ে গেছে!আমাকে থাপ্পড় মারলো।আমাকে কি উনার ফালতু ছেলে মনে হয়!”

আরহান কথাটা বলে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে আছে।কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।



“ঈশা তুই আরহান কে থাপ্পড় দিয়ে একদম ঠিক করিস নি!”

ঈশা বিছানায় শুতে শুতে বললো,

“আম্মু আমি তো আর ইচ্ছা করে থাপ্পড় দেইনি।এইটা একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং।”

“আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়।ওহ্ হ্যাঁ! আয়েশা আপা কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।তবে দেখলাম আন্টি অনেক সিম্পল হয়ে গেছেন।আগের তো সেজেগুজে থাকতেন।”

“হয়তো আরিফ সাহেব মারা যাওয়ার পরে এমন হয়ে গেছেন।”

“হ্যাঁ হতে পারে।আচ্ছা আম্মু তুমি এখন যাও।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।”

“বান্দরনি।”

“আম্মু কোনো মা তার মেয়েকে এভাবে বলে?”

“তোর মতো মেয়ে থাকলে বলে।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে শুয়ে পড়লো।মাসুমা বেগম মৃদু হেসে চলে গেলেন।

“🌻”

আরহান ঘুম থেকে উঠে দেখলো আলভি তার পাশে নেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বাজে।আরহান মাথায় হাত দিয়ে বললো,

“ওফ শিট! এতো বেলা হয়ে গেলো।আরিশা হয়তো আলভিকে স্কুলে নিয়ে গেছে!ফ্রেশ হয়ে এখনই অফিসে যেতে হবে।কত দেরি হয়ে গেল!ধ্যাত আমাকে কেউ ডাকও দিলো নাহ্।”

আরহান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো আলভি এবং আয়েশা বেগম বসে বসে টিভি দেখছে আর আরিশা ব্রেকফাস্ট করছে।

আয়েশা বেগম আরহানকে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখে অবাক হয়ে বললো,

“কিরে আরহান তুই ছুটির দিনেও কি অফিসে যাবি!”

আরহান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে হেসে দিলো।তারপরে আলভির পাশে গিয়ে বসে বললো,

“আমি মেইবি পাগল হয়ে গেছি আম্মু।আমার মনেই ছিলো না আজকে যে ছুটি।”

“যা গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নে।আমি আলভিকে খাইয়ে দিছি।”

“ওকে আম্মু।”

আয়েশা বেগম আরহানের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার গালের এক পাশ লাল হয়ে আছে।আরহান উঠে দাঁড়াতেই আয়েশা বেগম বললেন,

“আরহান তোর গালে কি হয়েছে?”

আরহান চমকে গিয়ে গালে হাত দিলো।তারপরে বললো,

“কেনো আম্মু আমার গালে আবার কি হবে!”

“ডান পাশের গালটা লাল হয়ে আছে।”

আরহানের কালকে রাতের ঘটনা মনে পড়তেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

“কিছু নাহ্ আম্মু মনে হয় এলার্জি হয়েছে।ব্রেকফাস্ট করে আমি ওষুধ খেয়ে নিবো।”

আরহান আর কিছু না বলে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।তারপরে মনে মনে বললো,

“মেয়েরা হাতে জোর আছে বলতে হবে!”

/🌸/

ঈশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ড্রেস ট্রাইল করছে।তবে তার কোনোটাই ভালো লাগছে নাহ্।মাসুমা বেগম ঈশার রুমে এসে বললো,

“কিরে তুই এতোগুলো ড্রেস নামিয়ে কি করছিস?”

“আম্মু আজকে আমরা ফ্রেন্ডরা ঘুরতে যাবো।তাই কোনটা পড়বো বুঝতে পারছি নাহ্!”

মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে এক কালো রঙের সেলোয়ার-কামিজ ঈশার হাতে দিয়ে বললো,

“এটা পড় তোকে অনেক সুন্দর লাগবে।”

ড্রেসটা হাতে নিয়ে ঈশার মুখে হাসি ফুটলো।ঈশা মাসুমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তুমিই আমার সব মুশকিল আশান।”

“হয়েছে।এখন বল তোর পায়ের কি অবস্থা?”

“আজকে অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে।দৌড়াতেও পারতেছি।”

“হ্যাঁ না দৌড়ালে তো তোর আবার পেটের ভাত হজম হয় নাহ্।”

“তুমি একদম ঠিক বলেছো আম্মু।”

ঈশা দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো।কালো সেলোয়ার-কামিজ,সঙ্গে চোখে কাজল,হাতে কালো চুড়ি,খোলা চুল!

ঈশা ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে রুম থেকে হলো।ড্রয়িং রুমে গিয়ে সে কিছুটা অবাক হলো তার সঙ্গে রাগও হলো।কারণ ড্রয়িং রুমে বসে আছে তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষটা।ঈশা মাসুমা বেগমের সামনে গিয়ে বললো,

“আম্মু এই ছেলেকে তুমি আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছো কেনো?”

“দেখ ঈশা ও তো এখন আগে মতো নেই।আর তখন অল্প বয়স ছিলো!”

“ব্যাস মা!এমন একটা লম্পটকে নিয়ে তুমি অন্তত সালিশি করো নাহ্।ওইদিন যদি মির্জা আঙ্কেল না আসতো তাহলে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো আম্মু।”

রুশান ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ঈশা আমাকে মাফ করে দে।আমি এখন আর আগেী মতো নেই।তোর সাথে ওমন একটা কাজ আমি করতে চেয়েছিলাম ভাবতেই আমার ঘৃণা হয়!দেখ তখন আমি ছোট ছিলাম তাই এতোকিছু বুঝতাম নাহ্।”

ঈশা চিৎকার করে বললো,

“জাস্ট স্টপ।এই বাড়ি থেকে এই মূহুর্তে তুই বের হয়ে যা।তোর এই নোংরা চেহারাটা আমি আর দেখতে চাই নাহ্।”

মাসুমা বেগম বুঝতে পেরেছেন ঈশা খুব রেগে গেছে।উনি রুশানকে বললেন,

“রুশান তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।নাহলে ঈশা অসুস্থ হয়ে যাবে।”

“কিন্তু কাকি……”

রুশানকে থামিয়ে মাসুমা বেগম বললেন,

“আর কোনো কথা নাহ্।তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”

“কিন্তু রাগ হওয়ার সাথে অসুস্থ হওয়ার কি সম্পর্ক?”

“তোমার জন্যই সবটা হয়েছে।তুমি তো সেদিন মার খেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।আর আমার মেয়ে ভয় পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো।এক বছর লেগেছে ওর ঠিক হতে।এখনও অতিরিক্ত রেগে গেলে ও অসুস্থ হয়ে যায়।সেন্সলেস হয়ে যায়।তুমি চলে যাও।”

রুশান আর কিছু না বলে ঈশাদের বাড়ি থেকে চলে গেলো।ঈশা চুপ করে সোফা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মাসুমা বেগম ঈশার সামনে গিয়ে বললো,

“আমার ভুলে হয়ে গেছে মা।ও-কে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হয়নি।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“ঠিক আছে আম্মু।আমি এখন যাই নাহলে আবার দেরি হয়ে যাবে।”

“মা তোর আবার শরীর অসুস্থ লাগছে না তো?”

“না আম্মু আমি এখন রাগ কন্ট্রোল করতে শিখে গেছি।তবে এটা মি.অভদ্রের থেকেই শেখা।”

“মি.অভদ্র আবার কে?”

“আরে আরহান সাহেব।কালকে আমি যখন থাপ্পড় দিয়েছিলাম উনি কিন্তু প্রচুর রেগে গিয়েছিলেন।যা আমি উনার মুখ দেখে বুঝেছি।তবে উনি আমাকে একটা কথাও না বলে সোজা হেঁটে চলে গিয়েছেন।”

“দেখেছিস ছেলেটা কত ভালো!আর তুই খালি কি সব বলিস।”

“হয়েছে ওই লোকের এতো গুণগান গাইতে হবে নাহ্।”

ঈশা কথাটা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

—❤️—

আরহান আলভিকে নিয়ে শপিং করতে এসেছে।হঠাৎ আয়নার দিকে চোখ যেতে আরহান দেখলো ঈশা তার বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে।ঈশাকে দেখেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।আরহান বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বললো,

“আমি যেখানেই যাই এই মেয়ে এসে হাজির হয়।”

ঈশা তার সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকাতেই আরহানকে দেখতে পেলো।সে পিছন থেকে ডাক দিলো।

“এই যে মি.অভদ্র।”

ঈশার ডাকে আরহান পিছনে তাকালো।এমনি তো তাকে দেখেই মাথা গরম হয়ে গেছে।তার উপর পাব্লিক প্লেসে এই নাম ধরে ডাকছে।ঈশার দিকে আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে।ঈশা বুঝতে পারলো এমন করে ডাকার কারণে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরহান রাগে ফুসছে।ঈশা আশেপাশের সবাইকে উদ্দেশ্য কে বললো,

“আমার পরিচিত মানুষকে আমি যা ইচ্ছা বলে ডাকতে পারি।আপনাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে কে বলছে!”

ঈশার কথা শুনে যে যার কাছে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ঈশা হাসি দিয়ে এসে আরহানের সামনে দাঁড়ালো।ঈশাকে হাসতে দেখে আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আপনার কি চব্বিশ ঘন্টাই এমন দাঁত ক্যালানো লাগে?”

আরহান কথায় ঈশা আরো জোরে হেসে দিলো।আরহান হা হয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা হাসি থামিয়ে বললো,

“আপনি একদম ঠিক বলেছেন।না হাসলে আমার মোটেই ভালো লাগে নাহ্।”

আরহান মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বললো,

“ডিশকাস্টিং।”

ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে তার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আলভি বাচ্চু কেমন আছে?”

“অনেক ভালো আছি।তোমাকে দেখে আরো ভালো লাগছে।”

“তার মানে আলভি সাহেব আমাকে পছন্দ করে্?”

“হ্যাঁ অনেক বেশি।”

আরহান ঈশা আর আলভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকাতেই আরহান চোয়াল শক্ত করে ফেললো।

“মি.অভদ্র কালকে জন্য সরি।আসলে আমি না বুঝেই ওমনটা করে ফেলেছি।”

“সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায় নাকি?”

“তাহলে আমার এখন কি করতে হবে!”

“একটা শাস্তি তো পেতে হবে।”

“কি শাস্তি?”

“আলভি মেইবি আপনাকে অনেক লাইক করে।আপনি যদি পারেন মাঝে মাঝে একটু আলভির সাথে দেখা করবেন।এতে আলভির অনেক ভালো লাগবে।আর আলভির ভালো লাগবে মানে আমারও ভালো লাগবে।তাহলে আপনার শাস্তিও পেয়ে যাবেন।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“বাহ্!এটা তো অনেক ইজি পানিশমেন্ট।”

“আপনার মতো বাচালকে এটা ছাড়া আর কি বা পানিশমেন্ট দেওয়া যায়!”

“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করতেছেন।”

“আপনার আবার অপমান গায়ে লাগে নাকি?”

“তা লাগে নাহ্।”

ঈশার কথায় আরহান হেসে দিলো।ঈশাও তার সাথে হাসলো।

#চলবে………………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে