#বসন্তের_আগমনে💛🌸
#পর্ব_০৩
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
“কেমন আছিস আরহান?”
আরহান ভ্রু কুচকে বললো,
“কে আপনি?”
“আমাকে চিনতে পারছিস না?”
“আপনি কি আমার সামনে বসে আছেন নাকি যে আপনাকে চিনতে পারবো?”
মেয়েটা হালকা হেসে বললো,
“তুই এক রকমই রয়ে গেলি।”
“সকাল সকাল এতো কথা না বলে আসল কথা বলেন আপনি কে?”
“আমি মিষ্টি।”
আরহান কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলো।তার মুখে অজান্তেই হাসি ফুটলো।তারপরে সে বললো,
“মিষ্টি কেমন আছিস তুই?তোর হাসব্যান্ড কেমন আছে?”
“আমরা ভালোই আছি।তবে জানিস আমি এখনো কিন্তু তোকেই ভালোবাসি।”
মিষ্টির কথা শুনে আরহানের হাসি মিলিয়ে গেলো।
“মিষ্টি তুই বিবাহিত।আগে যা বলতি সেগুলো মানা যেতো কিন্তু এইসব মানা যায় নাহ্।”
“আই এম সিরিয়াস আরহান।আমি আগেও সিরিয়াস ছিলাম।এখনি আমি সিরিয়াসই।খালি তুই বুঝলি নাহ্।”
“আমি বুঝতেও চাই না।ফোন রাখ।এইসব বাজে কথা বলতে আমাকে কখনো কল করবি।”
কথাটা বলে আরহান কলটা কেটে দিলো।তারপরে মোবাইলটা সুইচ অফ করে রেখে দিলো।রাগে তার মুখ লাল হয়ে গেছো।
“এই মেয়ে কখনোই ঠিক হবে নাহ্।”
//🌼//
“এই ঈশা ঘুম থেকে উঠ!”
ঈশা চোখ টিপটিপ করে তাকালো।তারপরে মুখ গোমড়া করে বললো,
“আপু এতো সকালে ডাকছো কেনো?”
“আজকে যে শশির গায়ে হলুদ ভুলে গেলি নাকি!আবার রাতে তো বিয়েও আছে।তোকে কত বার কল করতেছে।”
ঈশা এক লাফে উঠে বসে বললো,
“আরে আমি তো ভুলেই গেছিলাম আম্মু।তবে এই খোঁড়া পা নিয়ে আমি কিভাবে যাবো?আর তোমরা যাবে না?”
“তোর বাবা গিয়ে তোকে দিয়ে আসবে।তারপরে উনার আবার কুমিল্লা যেতে হবে কি কাজে জানি!আর আমার শরীরটা ভালো না।তাই যাবো নাহ্।আর তুই আসার সময় না হয় তোর বান্ধবীদের বলিস একটু পৌঁছে দিতে।”
“ওকে আম্মু।”
ঈশা আস্তে আস্তে হেঁটে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুন থেকে বের হয়ে একটা হলুদ লেহেঙ্গা পড়লো।চুলগুলো খোলা,চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক আর হালকা মেকআপ।সাজা শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে ঈশা।
“হায় মে কিতনি সুন্দার হু!”
কথাটা বলেই ঈশা ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকলো।তারপরে বিয়েতে পড়ার জন্য শাড়ি প্যাকিং করে নিলো।তৈয়ব সাহেব ঈশাকে নিয়ে বের হলো শশিেদর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
||🌼||
আরহান নিজে ব্রেকফাস্ট করছে আর আলভিকে খাইয়ে দিচ্ছে।আয়েশা বেগম এসে আরহানের পাশের চেয়ারে বসলো।
“আম্মু তুমি নাস্তা করেছো?”
“না রে বাবা এখন করবো।আজকে আমার বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে।আমাদের সবাইকে দাওয়াত করেছে।”
“তোমরা চলে যাও।জানোই তো আমি এইসবে যাই না।”
“একদিনই তো বাবা চল না!মিতা অনেক বার বলেছে তোর যাওয়ার কথা।”
আরহান কি যেন ভেবো বললো,
“কখন যাবে তোমরা?”
“সকালে গায়ে হলুদ।আমরা ভেবেছি সন্ধ্যায় একেবারে বিয়েতে যাবো।আরিশা তো পরীক্ষা দিতে গিয়েছে।”
“আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে থেকো।আমি অফিস থেকে এসে নিয়ে যাবো।”
আরহান ব্রেকফাস্ট করা শেষ করে আলভির গালে একটা চুমু দিয়ে অফিসে চলে গেলো।
আরহান অফিসে গিয়ে দেখলো হিয়া তার কেবিনে বসে আছে।আরহান হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“হাউ ডেয়ার ইউ?আপনি আমার কেবিনে ঢুকার সাহস পেলেন কিভাবে?কেবিনে কেনো আপনি এই অফিসে আসার সাহস পেলেন কিভাবে?”
“ইউ নো আরহান আমার সাহস একটু বেশি বুঝলে।আর আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে কিছু বলিনি কারণ সেখানে আলভি ছিলো।কিন্তু এখানে আলভি নেই।সো তোমার সাথে আমি গলাবাজি করতেই পারি।”
আরহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আপনি কি সিনক্রিয়েট করতে আসছেন?”
“আরে নাহ্।জাস্ট তোমাকে এটা বলতে এসেছি যে হিয়া চৌধুরীর সাথে একটু বুঝে শুনে কথা বলবে।নাহলে এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবে নাহ্।”
আরহান মৃদু হেসে বললো,
“আপনার এইসব ব্রেইনলেস কথা কথাবার্তা শুনে আমিও মোটেও ভয় পাই নাহ্।তবে প্রচুর হাসি পায়।”
হিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
“আরহান আমার সাথে অ্যাটিটিউড দেখানো বন্ধ করো।”
“তাহলে আপনিও আমার চোখের সামনে আসা বন্ধ করুন।”
হিয়া আর কিছু নাহ্ বলে আরহানের কেবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আরহান টেবিলে রাখা পানি গ্লাস থেকে পানি খেলো।তারপরে চেয়ারে বসে অফিসের কাজ মন দিলো।
—🧡—
তৈয়ব সাহেব ঈশাকে শশিদের বাড়িতে দিয়ে চলে গেলেন।হিয়া শশির গালে হলুদ লাগিয়ে বললো,
“শিশু আমাকে বিয়ের পরে যদি ভুলে যাস তাহলে তোর খবর আছে!”
“বইন এখন যা ইচ্ছা ডাক।আমার জামাইয়ের সামনে এভাবে শিশু ডাকিস নাহ্।মানসম্মান থাকবে নাহ্।”
“একশো বার ডাকবো!কেনো রে তোর জামাই কি গুন্ডা নাকি যে তার সামনে এইসব ডাকা যাবে নাহ্।”
“গুন্ডা হবে কেনো আমার জামাই তো ডাক্তার।তবে এইসব ডাকলে আমার প্রেস্টিজ শেষ হয়ে যাবে।”
পাশে থেকে রুমকি বললো,
“ইশ্!নিজেট বরকে আবার কেউ এতো লজ্জা পায় নাকি?”
শশি মুখ গোমড়া করে বললো,
“সবাই কি তোর মতো নাকি?”
“আমি আবার কি করলাম?”
এই যে একের পর এক বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করিস।”
শশির কথায় সবাই হেসে দিলো।শশি আর রুমকির মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো।
ঈশা চিৎকার করে বললো,
“চুপপপপপপপ…….”
ঈশার চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে গেলো।ঈশা তারপরে বললো,
“এখন কি ঝগড়া করার সময়!এখন হলো এনজয় করার সময়।So let’s start!”
নিহা বললো,
“কি আর শুরু করবো!তুই তো নাচতেই পারবি নাহ্।”
“আসলেই এটাই কষ্ট।আচ্ছা সমস্যা নাই।তোরা নাচ আমি বসে বসে দেখি।”
–
–
–
সন্ধ্যাবেলা,
আরহান বাসায় এসে দেখে সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।আরহান তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা ব্লাক শার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়ে রেডি হলে নিচে নামলো।আরহানকে এই কাপড়ে দেখে আরিশা বললো,
“ভাইয়া আজকে অন্তত একটা পাঞ্জাবি পড়তি।”
“তুই ভালো করেই জানিস আমি ওইসব লাইক করি না।সো বেশি কথা বলবি নাহ্।”
আরহানের কথা শুনে আরিশা মুখ ভেঙচি দিলো।আয়েশা বেগম আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আরে ওই ছেলেকে বলে লাভ নেই।ও কথা শোনার পাত্র নাহ্।”
আরহান মুচকি হেসে বললো,
“হ্যাঁ আম্মু তুমি একমাত্র ঠিক বুঝেছো।আচ্ছা এখন চলো সবাই।”
আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।তারপরে শশিদের বাড়িতে গেলো।আলভি আরিশার সাথে শশিদের কাছে গেলো।আয়েশা বেগম মিতা বেগমের সাথে গল্পে বসেছেন।আর এদিকে আরহান একা।আরহান এদিক-ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ করে আরহান একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো।মেয়েটা পড়ে যেতে গেলে আরহান ধরে ফেললো।মেয়েটাকে দেখে আরহান হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ এটা ঈশা।ঈশারও এক অবস্থা।সেও অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান ঈশাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,
“আমি বুঝি না।আমি যেখানে যাই আপনি সেখানে এসে কিভাবে হাজির হোন!”
“আমারও তো একই প্রশ্ন!আমাদের দুজনের কেনো এভাবে দেখা হয়ে যায়।আর শুনেন আমি এখানেই থাকবো।কারণ বিয়েটা আমার বেস্টফ্রেন্ডের।আপনি এখানে কি করছেন মশাই?”
“আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে।অনেক দূরের সম্পর্ক।আর শুনেন আমি যদি জানতাম আপনি এখানে আছেন আমি জীবনেও আসতাম নাহ্।এমন একটা বাচাল মেয়ের সাথে দেখা হওয়ার আমার একদমই ইচ্ছা নেই।”
আরহান কথাটা বলে চলে যাচ্ছিলো।ঈশা পিছন দিয়ে বললো,
“আমি যদি বাচাল হই আপনি তাহলে মি.অভদ্র।
ঈশার কথায় আরহান পিছনে ফিরে তাকালো।তারপরে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি কি অভদ্রতা করেছি?”
“সেটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
ঈশা কথাটা বলে চলে যেতে গিয়ে শাড়ি প্যাঁচিয়ে নিচে পড়ে গেলো।ঈশা কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,
“একদিকে পা তো খোঁড়া হয়েছে।আরেক দিকে কোমরটাও গেলো!”
ঈশার অবস্থা দেখো আরহান জোরে হেসে দিলো।আরহানের হাসির দিকে ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঈশা মুখ গোমড়া করে বললো,
“একটা মানুষ পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে আর আপনি হাসছেন!”
আরহান হাসি থামিয়ে ঈশার হাত ধরে উঠালো।তারপরে বললো,
“পড়ে যাওয়া মনে হয় আপনার হবি!”
“আপনাকে কে বলেছে এই কথা?আমি শাড়ি সামলাতে পারি না।তাই পড়ে যেতে যাচ্ছিলাম।”
“আমার তো মনে হয় না আপনি কালকে শাড়ি পড়ে ছিলেন!”
“কালকে তো শাড়ি পড়িনি।তবে কালকে তো আমার পায়ের উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেছিলো।”
“হয়েছে এখন এতো কথা বাদ দিয়ে আপনার বান্ধবীর কাছে যান।একটু পরেই তো বিয়ে।”
“ভাবি আসেনি?”
আরহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“ভাবিকে দিয়ে আপনি কি করবেন?”
“একটু পরিচিত হতাম।”
“আপনার পরিচিত হওয়ার দরকার নেই।”
আরহান কথাটা বলে হেঁটে চলে গেলো।ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,
“এতোক্ষণ মুড তো ঠিক ছিলো।যেই ভাবির কথা জিজ্ঞেস করলাম হনহন করে ভাব দেখিয়ে চলে গেলো।”
#চলবে…………………………
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন!]