#বর্ষন_ছোঁয়ায়_মিষ্টি_রোদ💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
পর্ব-১৮(শেষ পর্ব)
ছোঁয়া রান্না করছে বর্ষন এর জন্য খুব যত্ন করে।
দুপুর ২ টা।
বর্ষন বাসায় এসেছে।
ছোঁয়া গোসলে ছিল তাই খেয়াল করে নি।
গোসল শেষে চুল মুছতে মুছতে বা হয়ে দেখতে পায় ক্লান্ত বর্ষন কে।
টাই টাকে ঢিল করে ব্লেজার টা খুলে ছোফায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভিশন ক্লান্ত সে।
বর্ষন কে দেখে ছোঁয়া বর্ষন এর পাশে দাঁড়িয়ে কোর্ট টা হাতে নেয়,
–গোসল করে আসুন আজকে আমি রান্না করেছি।
ছোঁয়ার কথায় চোখ খুলে তাকায় বর্ষন।
–তুমি রান্না করেছো?
–হুম আমি রান্না করেছি।
বর্ষন উঠে ওয়ারুমে চলে গেল।
বর্ষন চলে যাবার পরেই ছোঁয়া নিচে চলে আসে,
–মা।
–হ্যাঁ মা বল,
–আসুন এক সাথে খাবো।
–হ্যাঁ আসছি।
ছোঁয়ার সব গুছানো শেষ হতে বর্ষন নামে নিচে।
অন্তরা বেগম ছেলে আর বউ এর সাথে টেবিলে বসে,
–আজকে আমার ছোঁয়া রান্না করেছে কিন্ত বর্ষন।
-/কি রান্না করেছে তোমার ছোঁয়া।
–বিরিয়ানি।
বর্ষন এর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
–আপনি না পছন্দ করেন এটা।
–করতাম এখন আর না।
–প্লিজ খেয়ে দেখুন।
ছোঁয়ার কথায় বর্ষন খাওয়া শুরু করে।
সত্যি অসাধারণ রান্না করে মেয়েটা।
খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে আসে।
বর্ষন খাবার খেয়ে নামাজ আদায় করে নেয়।বর্ষন এর নামাজ শেষে,
ছোঁয়া রুমে থাকা টিভি টা অন করে,
।
সংবাদ দেখতে দেখতে হটাৎ একটা নিউজ সামনে আসে,
(অতিরিক্ত মাদক দ্রব্য পাচার করার কারনে অর্কন চৌধুরী সহ তার ছেলে বর্ষন চৌধুরী গ্রেফতার।
শুধু এটা নয় তার এতো দিন সবার অগোচরে অনেক বেয়াইনি কাজ করে গেছে যার প্রমান সহ সাক্ষী মজুদ করা হয়েছে)
ছোঁয়া কিছুটা থমকে যায়।
বর্ষন এসে ছোঁয়ার পাশে বসে,
–কি হয়েছে।
–এটা আমার খালাতো ভাই।
–হুম জানি।
–কি করে জানেন?
–কারন এদের ধরিয়ে দেবাট জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করছি আমি অনেক বাড়িঘর অনেক গরিব লোকের পেটে লাথি মেরে চলত এদের জীবন।
বর্ষন চৌধুরী পেশায় একজন ভার্সিটির শিক্ষক যার জন্য ওকে পদচ্যুত করতে পারি নি।
নাহলে ওর চাকরি টা আগে নিয়ে নিতাম।
–আপনি আমায় কি শুনাচ্ছেন এগুলো।
–যা সত্যি তাই।
বর্ষন চৌধুরী মেয়েদের সাথে রিলেশন করে ওদের কে ড্রাগ দিয়ে পাচার করে।
–কি বলছেন!
–আরও আছে তোমার বাবার সাথে অর্কন চৌধুরীর শত্রুতা এই জন্য ই।
–আল্লাহ আমারে কেউ ধরো এগুলা কি হচ্ছে টা কি।
–কি বলব বলো ওদের কুকর্ম আরও আছে বলতে শুরু করলে শেষ হবে না।
–(ইয়া আল্লাহ বর্ষন এতোটা নিচু ভাবতে অবাক লাগছে আমার আমি কখনো।
ছি! জঘন্য তম অনুভুতি হচ্ছে আমার) ছোঁয়া মনে মনে,
–কি হলো কি ভাবছো।
–ভাবছি আজ বাসায় যাবো নিয়ে যাবেন আমায়।
–হুম যাবো
বর্ষন এর কথায় ছোঁয়া খুশি হলো।
বিকালে বর্ষন আর ছোঁয়া রওনা হলো ছোঁয়া দের বাসার উদ্দেশ্যে,
রাস্তায় দু’জনের তেমন কথা হয়নি।
ছোঁয়া দের বাসায় পৌঁছে ছোঁয়া মাকে জড়িয়ে ধরে।
যেন কতো দিন দেখে নি।
মেয়েকে পেয়ে নয়লা বেগম খুশি।
–বাবা বর্ষন এসো ভেরতে এসো।
–জি মা।
বর্ষন ভেতরে আসে,
বর্ষন ছোঁয়ার বাবার সাথে কথা বলছে।
ছোঁয়া তার মাকে নিয়ে নিজের রুমে আসে,
–মা শুধু খালামনির কি অবস্থা।
–তুই সংবাদ দেখেছিস।
–হ্যাঁ।
–তোর শুধু খালামনি ত শুধু কান্না করছে বললাম আপু আমাদের বাসায় আয় কিন্তু এলো না।
–কি বলব।
–তাহলে আজ বুঝতে পারলি মা বাবা যা করে সব ভালোর জন্য করে,
–তুমি জানতে বর্ষন ভাই এমন?
–আমি জানতাম না তোর বাবা জানত৷
তোর বাবা ত খুন শিকার তোর আর বর্ষন এর বিয়েতে রাজি না।
— হ্যাঁ সত্যি বলেছো।
–বর্ষন এর সাথে সম্পর্ক ঠিকঠাক ত।
ছোঁয়া কথাটা শুনে চুপ হয়ে যায়।
ওর যে ঠিক নেই সম্পর্ক।
আসলে যে ঠিক নেই বর্ষন এর সাথে যে ছোঁয়া অন্যয় করছে তা ছোঁয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
–কিরে ছোঁয়া!
–কিছু না মা,
রাত ১০ টা,
রাতের খাবার শেষ করে বর্ষন আর ছোঁয়া রওনা হয়।
যদিও নয়লা বেগম আর আজিজ রহমান ছেয়েছিল জামাই মেয়েকে রেখে দিতে কিন্তু ওদিকে অন্তরা বেগম একা ছিল যার জন্য তারা চলে এসেছে,
,
,
,
বেশ খানিকটা সময় ড্রাইভ করার পর ছোঁয়া আর বর্ষন পৌঁছে যায় বাসায়।
বাসায় পৌঁছে অন্তরা বেগম কে দেখা দিয়ে দু’জন ই বেডরুমে চলে যায়।
ছোঁয়া ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে চুল বাঁধতে বসে,
আর বর্ষন ওয়াসরুমের দিকে যায়,
,
,
,
,
,
টিভিতে বর্ষন (০১) এর নিউজ দেখার পরে রোদের ভিশন শান্তি অনুভব হচ্ছে।
জীবনের অনেকগুলো দিন যে মানুষ টার জন্য নষ্ট হয়েছে সে এখন বন্দি ভেবেই ভালো লাগছে।
এই কয় দিনে মিষখুব চেষ্টা করেছে রোদের সাথে কথা বলার রোদের রাগ ভাঙানোর কিন্তু মিষ্টি ব্যার্থ হয়েছে
অভিমান টা যে একটু বেশি গ্রাস করে নিয়েছিল তাকে।
কোন মতে মিষ্টির দেওয়া ধোঁকা টা বর্ষন নিতে পারছে না।
সব সুন্দর মুখের পেছনে কি এসব লুকিয়ে থাকে।
কিন্তু কোথাও না কোথাও রোদের মনের গহিন কোনে মিষ্টি জন্য বড়ো একটা জায়গা তৈরি করা আছে।
,
,
,
,
চুল বেঁধে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
চাঁদটাকে আজ বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।
হটাৎ কারোর স্পর্শ ছোঁয়া তার কোমড়ে অনুভব করলো,
তার শরীরে একটা সুগন্ধি আছে যা ছোঁয়া কে জানান দিচ্ছে সে কে।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে নেয়,
বর্ষন ছোঁয়ার ঘাড় থেকে বেনিটা সরিয়ে কোমল ভালোবাসা একে দেয়।
ছোঁয়া কেঁপে ওঠে।
–মে আই।
বর্ষন এর প্রশ্নে ছোঁয়ার নিরবতা ভরা সম্মতি পেয়েছে বর্ষন।
চোখ বন্ধ করে এই দুনিয়ার খুশিটাকে উপোভগ করছে সে।
সত্যি ভালোবাসার মানুষ টার থেকে ভালোবাসা পাওয়া টা খুব বড়ো অর্জন।
আজ চাঁদের জোছনায় গা ভিজিয়েছে দু’জন।
পারি দিয়েছে এক মহাসাগর
ভালোবাসার সঠিক পরিনতি।
ভালোবাসায় বর্ষন ছোঁয়া 💖
,
,
,
,
রোদের থেকে পাওয়া কষ্ট মিষ্টি কে দিন দিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
মিষ্টির মুখে আগের মতো আর মিষ্টি হাসি থাকে না৷
না সেই চনচল সভাব টা থাকে।
মিষ্টি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।
,
,
একটা পুকুরের কাছে বসে আছে মিষ্টি।
দাদী বাড়ি এসেছে।
মিষ্টি সাতার জানে না ভালো ইচ্ছে হচ্ছে এই পুকুরে ডুবে মরতে।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে।
দিন গুলো একটুও ভালো কাটছে না।
রোদের থেকে এই দুরত্ব সহ্য হচ্ছে না মিষ্টির।
,
–মিষ্টি।
হটাৎ রোদের কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠে মিষ্টি।
এখনে রোদ কোথা থেকে এলো
পেছনে ফিরে দেখে সাদা সার্ট পরে ছেলেটা পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।
–ভালোবাসবে আগের মতো আমায়?
রোদের এর মুখে এ কথা শুনে মিষ্টি উঠে দৌড় দিয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে।
রোদ ও প্রিয়কে হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয়,
–থাকতে পারছি না তোমায় ছাড়া কষ্ট হচ্ছে প্রচুর। —
–আমারো।
–ভালোবাসি মিষ্টি।
–আমিও ভালোবাসি রোদ।
#বর্ষন_ছোঁয়ায়_মিষ্টি_রোদ💖
সমাপ্ত