#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪২
জীবন চলার পথে পড়ালেখা করতে গিয়ে বা কাজের ক্ষেত্রেই হোক না কেন অনেক মেয়ের সঙ্গে ই দেখা হয়েছে, ওঠাবসা হয়েছে।তাদের কে ঘিরে মনে কখনোই কোনো অনুভূতি জন্মায় নি। কিন্তু কখনো ভাবিনি কোনো একদিন ১৬ বছরের একটা কিশোরী মেয়ের জন্য হুট করেই নিষিদ্ধ এক অনুভূতির জন্ম হবে।নিজের অজান্তে ই করে ফেলা ঘোর অপরাধের জন্য নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানাতাম।কারণ ততক্ষণে মেয়েটার জীবনে স্বামী নামক ব্যক্তিটির আগমন ঘটে গিয়েছিল।মেয়ে টার ঠিক বিয়ের দিনই তাকে প্রথম দেখি।
তার প্রশস্ত ললাটের জোড়া ভ্রুযুগলের নিচে থাকা ঘন লম্বাটে পল্লব বিশিষ্ট আঁখিদ্বয় দেখে তার মোহে পরে গিয়েছিলাম।তার ভরাট আর ফোলা ফোলা গাল দুটোর সঙ্গে গজ দাঁতের হাসিটা আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দনকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠে পরে লেগেছিল। তারার হাসি কেবল একটাই পরিচয় বহন করে যাচ্ছিল আর তা হলো গজদন্তিনী।তার থুতনিতে থাকা গর্তটা তাকে দ্বিতীয় বার দেখার জন্য আমাকে বাধ্য করেছিল।তাকে দেখার পরমুহূর্ত থেকেই যে ভয়ংকর আর তীব্র অনুভূতি টা জাগ্রত হয়েছিল তা ঠিক সেই সময়ই নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়ে যায়। কারণ সেই দিনই আল্লাহ প্রদত্ত বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধে সে নিজেকে মুড়ে নেয়।
এরপর তার প্রতি জন্মানো অনুভূতিগুলো কে ধীরে ধীরে নিংড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি।নিজের জীবনে টাকে ব্যস্ততার আঙ্গিনায় সপে দেই।হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেও দিনশেষে তন্দ্রা-নিদ্রার খেলায় মত্ত হওয়ার আগে একবার করে নিষিদ্ধ অনুভুতির দাড়ে গিয়ে অনুভূতি গুলোকে নেড়েচেড়ে দেখে নিতাম।নিরব মনে অনুভূতি গুলোকে নিজের বোবা খাঁচায় পুড়ে রাখতাম।
তার প্রতি জন্মানো আমার অনুভূতির বয়স যখন এক বর্ষা পেড়িয়ে অন্য বর্ষায় পদার্পণ করে তখন আধো ইতিবাচক আর আধো নেতিবাচক এক সংবাদ এসে আমার অনুভূতি গুলোকে বোবা খাঁচা থেকে বের করে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়।আমার অনুভূতিগুলোর ছাড়া পাওয়ার জন্য একটা কাগজই যথেষ্ট ছিল আর তা হলো তালাক নামা। যাকে ইংরেজিতে বলে ডিভোর্স পেপার। ডিভোর্স পেপার এর মাধ্যমে আমার সেই গজদন্তিনী আবার বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের বড় খুশির দিন ছিল সেই দিনটা। যেদিন জানতে পারি আমার গজদন্তিনী চিরতরে মুক্ত হয়ে গিয়েছে।
ফ্রান্সে সব কাজ শেষ করে তার কয়েকদিন পরেই দেশে চলে আসি নিজের গজদন্তিনী কে একান্ত ভাবে আপন করে নেয়ার জন্য। দেশে ফিরে যেদিন প্রথম দেখায় তার মাথা আমার বুকে এসে স্থান পায় সেদিন মনে হয়েছিল আমার শতশত রাতের তৃষ্ণা এক মুহূর্তেই কর্পূর এর ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।
আমার দেশে ফিরে আসার কারণ শুধুমাত্র আমার মা বাবা আর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু নিয়াজ ছাড়া কেউ জানত না।আমার গজদন্তিনী কে দেখার পর মনে হয়েছিল আমার গজদন্তিনীর মনে কি রয়েছে তা জানতে হবে আর সেই সাথে আমাকেও তার মনের আঙিনায় প্রবেশ করতে হবে। তার মনেও কেবল আর কেবলমাত্র আমার নামের ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে।তাই ওকে আরো সময় দিচ্ছিলাম।
এরই মাঝে ই একদিন গজদন্তিনীর সাথে একটা পাবলিক যাত্রী ছাউনিতে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু তাকে দেখার পর মুহুর্তেই তার ভয়ার্ত মুখখানা দেখে আমি নিজেই ভয়ে পড়ে যাই। কারণ যে কোন পুরুষই অগোচরে তার প্রিয়তমার কান্নায় কাঁদবে, তার প্রিয়তমার হাসিতে হাসবে, তার প্রিয়তমার দুঃখে ব্যথিত হবে আর তার প্রিয়তমার ভয়ে নিজে ই ভয়ের সমমুখীন হবে। তাই আমার ক্ষেত্রেও ওই মুহূর্তে ব্যতিক্রম হয়নি।
আমার গজদন্তিনীর ভয়ের কারণ আচঁ করতে পেরে দ্রুত তাকে আমার বাইকে চড়িয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বৃষ্টিস্নাত রাত আর পিছনে ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি।আহা!সে কি যে সুখের অনুভূতি তা বলে প্রকাশ করার মতো নয়।ওই মুহূর্ত থেকে ই ভেবে নিলাম সারাজীবনের জন্য তাকে এই ভাবেই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনী বানিয়ে রাখব।যদিও আমার বৃষ্টির ফোঁটা সহ্য হয় না কিন্তু তবুও এইভাবেই সারা জীবন তাকে #বর্ষণ_সঙ্গিনী করে বর্ষণের জল ফোঁটায় নিজেকে ভেজাতে চাই।
যত দিন অতিবাহিত হতে লাগল ততই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনীর প্রতি ভালবাসার মাদকতা বাড়তেই লাগলো।চিঠি দিয়ে আমার সুপ্ত অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে লাগলাম। আমাদের দুজনের সব ঠিকঠাক ই চলছিল।তাকে কথা দিয়েছিলাম তার ১৯ বছর পূর্ণ হলে তার সামনে এসে তাকে দেখা দিব।
তার ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন মা বাবা, ভাইয়া ভাবি সকলে মিলে প্ল্যান করেছিলাম সেদিন তার বাড়িতে গিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব।নিয়াজ কে আগে থেকে ই বলে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই দিন বাবার একটা জরুরি কাজ এসে পরে বিধায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা পাল্টে ফেলি।সিদ্ধান্ত নেই তার জন্মদিনের পরের দিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেবল মা আর বাবাকে পাঠাব।
আলআবি ভাইয়া একটানে কথা গুলো বলে চুপ হলেন।আমি স্তব্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।আলআবি ভাইয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারও বললেন,,,
–কিন্তু প্রকৃতি তো আর আমাদের নিয়মে চলে না বরং আমরাই চলি প্রকৃতির নিয়মে।
আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে পরলেন।আমি তখনে টুলের উপরই বসা।আমি কিছু করার বা বলার আগেই উনি আমার সামনে আরাম করে আসামপেতে বসে আমার কোলে তার মাথা ঠেকিয়ে দিলেন।তার কাজে আমি হকচকিয়ে তাকে বলে উঠলাম,,,
–একি! আপনি এখানে মাথা রাখলেন কেন?
আলআবি ভাইয়া বিরক্তের সহিত মুখ দিয়ে “চ” মূলক শব্দ করে আমাকে জবাব দিলেন,,,
–ডোন্ট নয়েস।
আমার দুই হাত নিয়ে তার মসৃণ চুলগুলোর মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন আর বললেন,,,
–একটু টেনে দেও তো।অনেক ঘুম পাচ্ছে।
তার কথা শেষ হতেই আমি ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলাম,,,
— আরে! আরে! আপনি এখানে ঘুমাবেন নাকি? আপনি ঘুমালে আমি কি করব? সারারাত মশার সাথে পিনপিন করে গল্প করবো নাকি?আর আপনাকে এখন আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি…..
হঠাৎ করে আমার হাত তার কপালে ছোয়া লাগতেই অনুভব করলাম তার কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় উষ্ণ। আমি আরো ভালো ভাবে তার কপালে গালে হাত বুলাতেই নিশ্চিত হলাম তার জ্বর এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,
— আপনার তো জ্বর এসেছে। চলুন তাড়াতাড়ি চলুন আমরা ঘরে যাই।কি ব্যাপার শুনতে ছেন না আপনি?
আলআবি ভাইয়া ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,,
–এখন আমি নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে এখান থেকে যেতে পারব না।সো প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
তার কথায় তাকে আর ডাকাডাকি করলাম না। কিন্তু এভাবে তো থাকলে ও হবে না। কিছু একটা করতে হবে। ভাবতে ভাবতে আমি সন্তর্পণে আলআবি ভাইয়াকে নিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম। তার মাথাটা আমার কোলে রেখে ধীরে ধীরে চুল টানতে লাগলাম, মাথা টিপে দিতে লাগলাম।
ওভাবে কতো সময় ছিলাম তা ঠিক বলতে পারবো না।কিন্ত সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ মেলে অনেক অবাক হয়ে যাই।
চলবে…………
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]