বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
গান শেষ হওয়ার পর গিটারটা আশিসের হাতে দিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে শিশ বাজাতে বাজাতে অনিমার সামনে গিয়ে চুলগুলো নেড়ে ঠিক করে বলল
— “আজকে আমাকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে বুঝি?”
অনিমার কয়েক সেকেন্ড লাগল অাদ্রিয়ানের কথাটা বুঝতে, যখন বুঝতে পারলো যে ওভাবে তাকিয়ে আছে বলে আদ্রিয়ান এ কথা বলেছে ও সাথেসাথেই মাথা নিচু করে ফেলল, সেটা দেখে আদ্রিয়ান হেসে বলল
— ” ইউ নো তুমি আমার সামনে লজ্জা পেয়ে যখন মাথা নিচু করে ফেলোনা তখন খুব কিউট লাগে তোমাকে, গালগুলোতে লালচে ভাব আসে, চোখের এই ঘন পাপড়ি গুলো আরো সুন্দর লাগে, আই জাস্ট লাভ ইট।”
অনিমা অবাক হয়ে একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, সেটা দেখে ও হালকা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান হেসে আলতো করে অনিমার গালটা টিপে দিয়ে বলল
— “বাচ্চরা ডাকছে তোমাকে, গো এন্ড ইনজয়।”
অনিমা তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখের ইশারায় ওকে যেতে বলল। অনিমা মাথা নেড়ে চলে গেলো বাচ্চাদের কাছে। অনিমা বাচ্চাদের কাছে যেতেই ওরা সবাই অনিমাকে একে একে গিফট দিলো। ওরা সবাই অনাথ আশ্রমের অনাথ বাচ্চা, টাকা দিয়ে গিফট কিনে দেবার মতো সামর্থ ওদের নেই, তাই ওরা কাগজ, কাঠ, বোর্ড, মাটি দিয়ে নিজেদের হাতে ছোট ছোট গিফট তৈরী করে দিয়েছে। কিন্তু এই ছোট ছোট উপহারগুলো পেয়ে অনিমার খুশি দেখে মনে হচ্ছে যেনো ওকে অনেক এক্সপেন্সিভ কিছু দেয়া হয়েছে। আদ্রিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনিমার সেই হাসি দেখছে। সত্যিই মেয়েটা অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত ছোট ছোট বিষয়ে কতো খুশি হয়ে যায়, কতো ছোট ছোট ওর চাওয়া, কতো সহজ ওকে খুশি করা। সেইজন্যেই তো ও কোনো দামী কমিউনিটি সেন্টার বা রেস্টুরেন্টে বুক না করে এই আশ্রমে এসছে। এতে দুটো লাভ হলো, অনিমাও খুশি হলো আর বাচ্চারাও।
কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো, এরপর বাচ্চাদের খেলতে বলে ও আদ্রিয়ানের কাছে এসে দাড়ালো, আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কিছু বলবে?”
অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে ইতোস্তত করে বললো
— ” আসলে আমিতো জানতাম না এখানে আসার কথা, তাই বাচ্চাদের জন্যে কোনো কিছু আনতে পারিনি। কিন্তু..”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দুই কাধে হাত রেখে বলল
— ” আমাকে তোমার এতোটাই ইরেস্পন্সিবল মনে হয়?”
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় টোকা দিয়ে বলল
— “আমি সব বাচ্চাদের জন্যে, আশ্রমের সবার জন্যেই গিফট এনেছি। যাওয়ার আগে সবাইকে দিয়ে দিও।”
অনিমা একটু অবাক হলেও মুচকি হেসে বলল
— ” হুম। ওদের কী খাওয়ানো যায় বলুনতো?”
— ” সেই ব্যাবস্হাও করেছি, বাট তার জন্যে তোমাকে একটু কষ্ট করতে হবে।”
— ” সেটা কী?”
— ” রান্না করতে হবে সবার জন্যে বিরিয়ানী, পারবে?”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” অবশ্যই পারবো। বাট দু একজনের হেল্প লাগবে এতো মানুষের রান্না তো।”
— “ডোন্ট ওয়ারি দুই একজন থাকবে তোমার সাথে।”
— ” ওকে।”
অনিমা বিরিয়ানী রান্না করতে চলে গেলো, আদ্রিয়ান বাচ্চাদের সাথে খেলছে। আশিস অরুমিতাকে পেছন পেছন ঘুরছে আর বিরক্ত করছে, অরুমিতা বিরক্ত হওয়ার ভান করলেও মোটেও বিরক্ত হচ্ছে না বরং আশিসে আড়ালে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে। তীব্র আর স্নেহা দুজন দুদিকে বসে আছে তবে একে ওপরের আড়ালে একে ওপরকে দেখে যাচ্ছে, ভালোবাসাগুলো হয়তো এমনি হয় শত অভিমান থাকলেও একে ওপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা যায় না। আদিব আর রাইমাও আশ্রম সঞ্চালকদের সাথে কথা বলছে। আর জার্নালিস্টরা ওদের কাজ করেই যাচ্ছে।
__________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কোলকাতার ফ্লাটে ফ্লোরে বসে মোবাইল স্ক্রিণে অনিমার ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ড্রিংক করছে রিক। বোতলে একটা চুমুক দিয়ে বলল
— ” হ্যাপি বার্থ ডে সুইটহার্ট! আজ যদি এখানে আসতে না হতো তাহলে তোমাকে নিয়ে তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করতে পারতাম। কিন্তু সব ভেস্তে গেলো এই ড্যাডের জন্যে।”
এটুকু বলে ছবিটা সরিয়ে আরেকটা ছবি বার করল, সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ছুয়ে বলল
— ” আমার কাছে থাকা অবস্হায় তোমার লাস্ট বার্থ ডে তে তোমায় মেরেছিলাম আমি, একটু বেশিই মেরেছিলাম। কী করতাম? তোমার কলেজের বন্ধুরা কেক নিয়ে বার্থডে সেলিব্রেট করতে চলে এসছিলো ঐ বাড়িতে, সব মেয়ে বন্ধু হলেও মানা যেতে কিন্তু দুজন ছেলেও ছিলো, ছেলে কেনো থাকবে? হোয়াই? তাইতো রাগের মাথায় তোমাকে মেরেছি। ভূলটা কী করেছি? একবার জাস্ট একবার তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসি তারপর তোমাকে কোথাও বেড়োতেই দেবোনা, দরকারে শিকল পরিয়ে রুমে আটকে রাখব তোমাকে কিন্তু কোথাও যেতে দেবোনা, কোথাও না।”
এটুকু বলে বাকা হেসে বোতলে চুমুক দিতে দিতে একপর্যায়ে ফ্লোরেই বসেই খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরল ও।
__________
সব বাচ্চারা, আশ্রমের সঞ্চালকগন, আদিব, আশিস, তীব্র, রাইমা, অরুমিতা, স্নেহা সবাই দুই সারিতে লাইন ধরে কলাপাতা সামনে নিয়ে বসে আছে। জার্নালিস্টদের আগেই বিদায় দিয়ে দিয়েছে আদ্রিয়ান। অনিমা আর আদ্রিয়ান সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। অনিমা সবাইকে বিরিয়ানী দিচ্ছে আর আদ্রিয়ান সবাইকে শসা, টমেটো আর লেবু দিচ্ছে। সবাই বারণ করেছিলো ওদের এসব করতে কিন্তু ওদের জেদ ওরাই সার্ভ করবে, তাই সবাইকে মানতে হলো। খাবার সার্ভ করতে গিয়ে একে ওপরকে দেখছে বারবার আড়চোখে। সবাইকে খাবার সার্ভ করে আদ্রিয়ান আর অনিমাও খেতে বসল। খাওয়া দাওয়া শেষে এবার যাওয়ার পালা। আদ্রিয়ান অনিমার হাতে গিফ্টটের প্যাকেটগুলো দিলো, অনিমাও সবাইকে গিফটগুলো দিয়ে, সব বাচ্চাদের আদর করে বিদায় নিলো। আদিব, রাইমা আর আশিস একগাড়িতে চলে গেলো, তিব্র অরু আর স্নেহাকে ড্রপ করে দেবে। অনিমাকে এস ইউসিয়াল আদ্রিয়ানই ড্রপ করবে। গাড়ি আপন গতিতে চলছে অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল
— “অনিমা এবার বলোতো তীব্র আর স্নেহার ব্যাপারটা কী? যতটুকু দেখে বুঝলাম দে লাভ ইচ আদার, তাহলে এভাবে দুজন দুজনকে ইগনোর কেনো করে?”
অনিমা সামনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল
— ” আসলে ওদের সেই কলেজ লাইফ থেকেই প্রেম চলছে। কিন্তু স্টাডি কম্প্লিট হবার পর স্নেহার বাবা চেয়েছিলো যে ও ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে একটা কোর্স করুক এবরোট থেকে, আর বাবার জোরাজোরিতে রাজি হয়ে ও চলে গেছিলো এবরোট তীব্রকে না জানিয়েই।”
— ” এইজন্যেই রাগ করেছে?”
— ” আরে না ফোনে পরে বলেছে তীব্রকে, তীব্র একটু আলগা রাগ দেখালেও অতোটাও রাগ করেনি দুদিনেই ঠিক হয়ে যেতো সব।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল
— ” তাহলে সমস্যা কী ছিলো?”
— ” তার কয়েকদিন পরেই স্নেহা বাবা ওর এনগেইজমেন্ট করিয়ে দেয় অন্য একটা ছেলের সাথে, সেন্হাও ওর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারেনি। আর এটা শোনার পরেই তীব্র রেগে যায়।”
— ” সো ও এনগেইজড?”
— ” ছিলো বাট কোনো এক কারণে ছেলেটা এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছে, বেচারি তীব্রকে অনেকবার সরিও বলেছে কিন্তু তীব্রর অভিমান কমেনি।”
— ” হুম বুঝলাম।”
এরপর দুজনেই বেশ অনেক্ষণ চুপ করে ছিলো, কিন্তু অনিমা মুচকি হেসে বলল
— ” থ্যাংকস ”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হয়ে বলল
— ” কেনো?”
— ” এতো সুন্দর করে বার্থডে টা সেলিব্রেট করার জন্যে। আজ ছয় বছর পরে এভাবে নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করলো। এরঅাগে আব্বু করতো।”
— ” আমি জানি।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” কী?”
আদ্রিয়ান অনিমার প্রশ্নে একটু মুচকি হাসলো তারপর ড্রাইভ করতে করতে বলল
— ” এস পার আই নো, বন্ধুত্বে থাংক্স, সরি শব্দগুলো মানায় না। বাট তবুও থ্যাংক বলছো, নট ফেয়ার। ”
— ” সরি আর বলবোনা।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকাতেই অনিমা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তাই মাথা চুলকে বলল
— ” আই মিন ঠিকাছে আর বলবোনা।”
আদ্রিয়ান হেসে দিলো আদ্রিয়ানের হাসি দেখে অনিমাও হেসে দিলো।
____________
সকালে চা খেতে খেতে সবে পেপারটা খুলেছেন মিস্টির রঞ্জিত, আর পাশেই বসে আছেন কবির শেখ ও। ফ্রন্ট পেজে নিউসটা দেখে ওনার চোখ আটকে গেলো, বড়বড় করে লেখা, “আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের ইনকারেই ইকরার,কে এই তুরুণী?” অনিমা আদ্রিয়ান একে ওপরকে জরিয়ে ধরে আছে সেই ছবিও বড় করে ছাপা, তাড়াতাড়ি বিনোদন পেজে গিয়ে বিস্তারিত পড়ে অবাক হয়ে গেলেন, সেটা দেখে কবির শেখ বললেন
— ” কী হয়েছে জিজু?”
মিস্টার রঞ্জিত কিছু না বলে পেপারটা এগিয়ে দিলেন কবির শেখ এর কাছে। পেপারটা দেখে কবির শেখ চমকে গেলেন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
— ” মেয়েটার কী ভয় ডর সব উড়ে গেছে? একেই পালিয়েছে বলে বাবাই রেগে আছে তারওপর এখন এসব করে বেরাচ্ছে?”
— ” আরে আমি ভাবছি এই রকস্টারের কথা।”
কবির শেখ হেসে বললেন
— “সেই, এই ছেলের মরণ তো নিশ্চিত হয়ে গেলো, আর মেয়েটার কী হাল হবে রিক বাবাই ভালো জানে।”
মিস্টার রঞ্জিত রেগে বললেন
— ” তুমি এসব ভাবছো? আমি ভাবছি এতো বড় একজন রকস্টার খুন করলে সেটা ধামাচাপা দেবো কীকরে? ওর এতো ফ্যান, সবাই ক্ষেপে উঠবে।”
কবির শেখ হেসে বললেন
— ” টেনশন নিচ্ছেন কেনো জিজু? কিচ্ছু হবেনা। এমনিতেও একে তো অনেকেই মারতে চায়, কাউকে ফাসিয়ে দেবো। আর রিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ তো তখন পাবে না যখন ঐ সিংগারের ডেড বডিটা কেউ খুজে পাবে।”
বলেই হেসে দিলো কবির শেখ, মিস্টার রঞ্জিত ও হাসলো। অন্তত ভয়ংকর সেই হাসি যেখানে না আছে দয়া আর না আছে কোনো সহানুভূতি আছে শুধু হিংস্রতা আর অমানবিকতা।
____________
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে অনিমা, আদ্রিয়ান, আদিব, আশিস, রাইমা,তিব্র, অরুমিতা, স্নেহা। অনিমা বার্থডে উপলক্ষেই আদ্রিয়ান ওদের সবাইকে স্পেশাল ট্রিট দিচ্ছে। সবাই নানারকম কথা বলছে কিন্তু তীব্র আর স্নেহা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। হঠাৎ আদ্রিয়ান
তীব্র স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ” তীব্র, স্নেহা তোমাদের আমার কিছু বলার আছে।”
তীব্র আর স্নেহা তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” অনির কাছে তোমাদের সমস্যাটা অনেকটা শুনেছি, দেখো জীবণটা খেলা নয়, গোলাপের বিছানাও না যে সব আমাদের মন মতো ইচ্ছে মতো হবে। অনেক সময় অনেক কিছু হয় যেটা আমাদের হাতে থাকেনা, না চাইতেও অনেককিছু মেনে নিতে হয়। আর কাছের মানুষকে ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে রাখাটা বোকামী। আমি বলবোনা সব ভূলে এক হয়ে যাও, সেটা তোমাদের সিদ্ধান্ত, আমার কোনো উপদেশই কাজে লাগবেনা যদি তোমরা নিজে থেকে ব্যাপারটা না বোঝো। সো টেইক ইউর টাইম এন্ড থিংক। জীবণ একটাই সেটা নিজের মতো বাচো..”
হঠাৎই ওর ফোন এলোও রিসিভ করে কথা বলতে গেলো। এতোক্ষণ সবাই মুগ্ধ হয়ে আদ্রিয়ানের কথা শুনছিলো। তীব্র স্নেহা ও ভাবনায় পরে গেলো। অনিমা ভাবছে এই ছেলেটা সত্যিই অসাধারণ যার কোনো তুলনা হয়না। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান এসে বলল
— ” গাইস আই হ্যাভ টু গো, কাজ পরে গেছে তোরা থাক। তীব্র অনিকে ড্রপ করে দিও।”
তীব্র মাথা নাড়লো, আদ্রিয়ান চলে গেলো। সবাই কথা বলছে তার কিছুক্ষণ পরেই অনিমার ওয়াসরুমে যাবার দরকার হলো তাই বলল
— ” তোরা বস আমি একটু আসছি।”
সবাই মাথা নাড়তেই অনিমা চলে গেলো ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেশ অনেক্ষণ পর এলো অনিমা। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে চোখ লাল হয়ে আছে, ফুলেও আছে খানিকটা, সারা মুখে বিন্দু বিন্দু পানি বোঝাই যাচ্ছে অনেক কেদেছে তারপর মুখে পানি দিয়েছে, অরুমিতা এসে ওকে ধরে বলল
— ” কি হয়েছে তোর।”
অনিমা উত্তর না দিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
— “আমাকে একটু বাড়িতে ড্রপ করে দে প্লিজ।”
সবাই বুঝতে পারলো অনিমা এখন কারো কথার উত্তর দেবেনা তাই এখন না জিজ্ঞেস করাই ভালো পরে জেনে নেবে এখন আপাদত ওকে বাড়ি পৌছে দিক।
____________
কাজ করে এসে ল্যাপটপে ইন্টারনেটে নিউস পেপার পড়ছে রিক। সবে গ্লাসে পানি খেতে নিয়েছিলো কিন্তু একটা নিউস দেখে ওর মাথা হ্যাং হয়ে গেলো, হেডলাইনটা যতোটা না পোড়াচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে ছবিটা। রাগে চোখ লাল হয়ে উঠেছে ওর, শরীর থরথর করে কাপছে। হাতের চাপে গ্লাসটাও ভেঙ্গে গেলো, মুহুর্তেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলো ওর হাত, টপটপ করে রক্ত পরতে লাগল। রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— “কাজটা তুমি ঠিক করোনি সুইটহার্ট। খুব বড় ভূল করে ফেলেছো। খুব সাহস হয়ে গেছে তোমার তাইনা? ডানা গজিয়ে গেছে, আমাকে আর ভয় পাওনা? সাজতে শিখেছো, অন্য ছেলেটা জরিয়ে ধরেছো? বুক কাপলোনা তোমার? কোনো ব্যাপারনা এবার কাপবে। তোমার ঐ আশিক কে তো তোমার চোখের সামনে ওপরে পাঠাবো, তোমাকে তো তারপর পরে দেখবো। এই কাজের অনেক বড় দাম দিতে হবে তোমায় বেইবি এমন দাম যে তুমি সারাজীবণ কেদেও কূল পাবেনা। জাস্ট ওয়েট।”
বলেই পাগলের মতো হাসতে শুরু ওও হাসতে হাসতেই একপর্যায়ে রাগে রুম কাঁপিয়ে গর্জন করে উঠল। রাগে ল্যাপটপটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো। বদ্ধ এক উন্মাদ লাগছে ওকে।
_____________
গরম লোহার রড কেউ ওর জামার ওপর দিয়েই পিঠে চেপে ধরেছে এমন সপ্ন দেখেই চিৎকার করে উঠে বসল অনিমা, সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। অনেকদিন এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত ছিলো ও কিন্তু আজ আবার দেখলো। থরথর করে কাপছে ওর শরীর বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে। মাথা এতোটাই ব্যাথা করছে যে সহ্য করতে না পেরে ওয়াসরুমে শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পরল অনিমা, চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কান্না জেনো সব গলায় আটকে আছে। একটা বাথরোব পরে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো ও তারপর উল্টো ঘুরে বাথরোবটা সরিয়ে নিজের পিঠের দিকে তাকালো দাগগুলো এখোনো পুরোপুরি যায়নি আবছা রয়ে গেছে। কিছু ওর মামীর দেয়া কিছু রিকের। এই দাগগুলোই ওর ওপর হওয়া প্রতিটা অন্যায়ের সাক্ষি। আস্তে করে ড্রেসিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠল ওও। কেনো এমন হয় ওর সাথে, ও তো ভূলতে চায় সব কেনো পারছেনা? কেনো ওর অতীত ওর পিছু ছাড়েনা? কেনো? আচ্ছা দুপুরে ওয়াসরুমে ও যা বলে গেলো সেটাই হবে না তো? নাহ ও পারবেনা সহ্য করতে এসব আর পারবেনা, ও চায়না ওই নরকে আবার ফিরে যেতে। ও বাঁচতে চায় জীবন্ত লাশ হয়ে বাচতে পারবেনা ওও। এসব ভাবতে ভাবতে ওর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।
____________
আসলে তখন ও ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে বেসিনে মুখ ধুতে যাবে, হঠাৎ ওর কোমরে কেউ খুব বাজে ভাবে টাচ করলো। অনিমা রেগে পেছন ঘুরে থাপ্পড় মারতে গেলেই লোকটা ওর হাত ধরে ফেলল। লোকটাকে দেখে চরম অবাক হলো অনিমা, রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো অনিমার, এই লোকটাকে ও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। রিক কেও এতোটা ঘৃণা করেনা ও যতটা এই লোকটাকে করে। এখনও সেই একি বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেভাবে আগে দেখতো, কিন্তু ও এখানে কীকরে এলো? এসব ভেবে অনিমা অবাক হয়ে বলল
— “ভাইয়া?”
.
#চলবে…
.
( শেষের এই ক্যারেক্টার না নতুন কোনো ক্যারেক্টার না। এই ক্যারেক্টার সম্পর্কে পর্ব-৪ থেকেই বলা হয়েছে। আজকে এন্ট্রি দিলাম আরকি। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং?)