#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৪.
সারারাত বর্ষণের পর সকালের আকাশটা বেশ পরিষ্কার। রোদের উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে। ব্যালকনির গ্লাস ভেদ করে সেই আলো এসে অনিমার চোখে পরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো ও। মাথা ভার ভার লাগছে ভীষণ। বিছানায় ভর করে উঠতে উঠতে বুঝতে পারল শরীর ভীষণ ব্যথা করছে। আস্তে করে উঠে বসে চারপাশে তাকাতেই বেশ অনেকটা অবাক হল। এখানে কীকরে এল ও? এরপর মাথায় আরেকটু চাপ দিতেই কালকে রাতের সবকিছুই মনে পরল। সামনের দেয়ালে আদ্রিয়ানের বড় ছবিটা দেখে নিশ্চিত হল যে সবই সত্যি। আশেপাশে ভালোকরে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চুপচাপ বসে রইল। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা শব্দে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান এসছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে ভালোভাবে দেখল। একটা গ্রে টিশার্ট আর কালো টাওজার পরে আছে, মসৃণ চুলগুলো কপালে পরে আছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে দেখে ওর সেই হাসি দিল। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো অনিমা। আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
” উঠে পরেছো?”
অনিমা কিছু বলল না। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে বসল। একটা প্যাকেট পাশে রেখে বলল,
” ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসো। ব্রেকফাস্ট করবে তো।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ার। আপাতত কিছু বলতে চায়না ও। ওর মনে এখন অনেক প্রশ্ন এসে জমেছে। সেই প্রশ্নগুলো আগে সাজিয়ে নিতে হবে। একটা লম্বা শাওয়ার খুব প্রয়োজন ওর। অনিমা চাদর ভালোভাবে জড়িয়ে উঠতে গিয়ে শরীরের ব্যাথায় আহ করে উঠল। আদ্রিয়ান চলে যেতে নিয়েও ফিরে তাকাল। উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” কী হয়েছে? প্রবলেম।”
অনিমা মাথা নাড়িয়ে না করে বলে প্যাকেটটা নিয়ে চলে গেল ওয়াসরুমে। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝল যে অনিমার শরীরে ব্যাথা করছে। ওর ই ভুল ছিল। কালকে ঘুমের ঔষধের সাথে একটা ব্যাথার ঔষধ খাওয়ালেও ভালো হতো। ওর মাথাতেই ছিলনা যে মেয়েটাকে এভাবে মারা হয়েছে। সময়ের সাথে ব্যাথাটার বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। ওর আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। একটা অসহায় মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে ও, এতো কেয়ারলেসনেস ওকে মানায় না। ব্রেকফাস্ট করিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেবে। খাবারটা ডাইনিং এ করানোই ভালো। খানিকটা ফ্রি হতে পারবে। আদ্রিয়ান একটু জোরে চেঁচিয়ে বলল,
” ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসো।”
অনিমা ভেতর থেকে কোন উত্তর দিলোনা। আদ্রিয়ান তবুও বুঝল যে অনিমা শুনতে পেয়েছে। তাই ও বেড়িয়ে ডাইনিং এ গিয়ে বসল। একটু পরপর সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর অনিমার নিচে নেমে আসার অপেক্ষা করছে। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল। আদ্রিয়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল ওর মা, মিসেস রিমা আবরার কল করেছে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,
” বাহবা, এই সকাল সকাল মিসেস আবরারের আমার কথা মনে পরল? কীকরে? মানে বর ছাড়লো?”
ওপাশ থেকে মিসেস রিমা বললেন,
” এক থাপ্পড় মারব অসভ্য ছেলে। মা হই আমি তোর।”
” হ্যাঁ জানিতো। কেন? তোমার সন্দেহ আছে সে বিষয়ে?”
” আয় একবার বাড়ি সত্যি আমি মারব।”
আদ্রিয়ান হেসে দিল, মিসেস রিমাও হাসলেন। দুজনের সম্পর্কটা এমনই। খুব বেশি ফ্রি। আর দুজন দুজনের সাথে সারাদিন হাসিমজা করে। আদ্রিয়ানের বাবার সাথেও আদ্রিয়ান একইরকম। বাবা-মায়ের সাথে সাথে আদ্রিয়ানের অন্যতম বন্ধুও হলেন তারা। আদ্রিয়ান হেসে বলল,
” কেমন আছো? বাবা কোথায়?”
” তোর বাবা বেড়িয়েছেন। তুই এভাবে দূরে থাকলে ভালো কীকরে থাকি বলতো?”
” আসবো তো। হাতে কিছু কাজ আছে সেড়ে আসব।”
মিসেস রিমা সন্দিহান কন্ঠে বললেন,
” এই তুই আবার বিয়ে-টিয়ে করে বৌ নিয়ে সংসার করছিস না তো? দেখ বাবা, এমন করলে তাড়াতাড়ি বলে ফেল। আমি আজই চলে আসছি। আমিও তো দেখি আমার মেয়েটা কেমন দেখতে। যদিও তোর পছন্দের ওপর আমার একশ ভাগ বিশ্বাস আছে।”
আদ্রিয়ান দুষ্টু কন্ঠে বলল,
” এখনও করিনি। কিন্তু তুমি পার্মিশন দিলে শুধূ বিয়ে কেন? সোজা বাচ্চার বাবা হয়ে, বউ বাচ্চা নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো।”
মিসেস রিমা হতাশকন্ঠে বলল,
” এমন করিস না। এমনিতেই তোর বাবা হার্টের রুগী। এত ঝটকা নিতে পারবে না।”
” ঝটকার কী হল? বিয়ে, রিসিপশন, ডেলিভারির সময় হসপিটালের টেনশন এইসব প্রেশার থেকে বেঁচে যাবে। এমনিতেও তোমার বরটা হেব্বি কিপটা।”
মিসেস রিমা হেসে বলল,
” আচ্ছা অনেক মজা হয়েছে। এবার শোন কবে আসতে পারবি বলত?”
” সেটাতো এখনও বলতে পারছিনা, একটু ব্যস্ত আছি তো। তবে চেষ্টা করব তাড়াতাড়ি আসার।”
” তোর মামা এসছিল আজ দেখা করতে।”
” হুম তো?”
” তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল।”
” দূর! তোমার ঐ ভাইয়ের কথা বলোনা তো। ওনাকে আমার কোনকালেই ভালো লাগেনা। একদম শকুনী মামা টাইপ।”
মিসেস রিমা কপাল কুচকে বলল,
” তুই আবার শুরু করলি?”
আদ্রিয়ান ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
” আরে মামুকে নিয়ে মজা করতে বেশ ভালো লাগে। একটামাত্র মামু আমার।”
” হ্যাঁ শোন সামনে মাসে তো লিমার ছেলেও আসছে ওর সাথেও তো দেখা করবি না-কি?”
আদ্রিয়ান বলল,
” হুম। এ-মাসের তো বেশিদিন বাকি নেই। একবারই এসে ওদের দুজনের সাথেই দেখা করে নেব।”
” আচ্ছা। রাখছি তাহলে এখন?”
” হ্যাঁ। আর শোন, টেনশন করোনা আমি মামুর সাথে কথা বলে নেব।”
” হুম ঠিকাছে।”
আদ্রিয়ান ফোন রেখে আরেকবার সিঁড়ির দিকে তাকাল অনিমা নামছে কি-না দেখতে। কিন্তু অনিমাকে দেখতে পেলোনা এখনও। এতক্ষণ কী করছে মেয়েটা? যাক গে! ও আসতে আসতে মামুর সাথে কথা বলা যাক। ফোনে ওর মামুর নম্বর বেড় করে ডায়ার করবে তখনই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ওর চোখ আটকে গেল। নেভি ব্লু রঙের লম্বা একটা কুর্তি, আর কালো প্লাজো পরে সিঁড়ির কোণে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা খোলা চুলে চোখেমুখে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে চোখ আটকে গেল ওর। এত মায়া কেন এই মেয়ের মধ্যে? আদ্রিয়ান বুঝতে পারল অপরিচিত একটা জায়গায় অপরিচিত একটা মানুষের কাছে যথেষ্ট সংকোচ বোধ করছে অনিমা। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব ওকে স্বাভাবিক করতে হবে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে হাতের ইশারায় ডাকল। অনিমা আদ্রিয়ানের অনুমতি পেয়ে গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে এসে দাঁড়াল। আদ্রিয়ান ফোন থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে অনিমা মাথা নিচু করে হাত কচলে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওর পাশে চেয়ার টেনে বলল,
” বসো।”
অনিমা একবার আদ্রিয়ান আর একবার চেয়ারের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বসল। আদ্রিয়ান অনিমার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলল,
” ব্যাথা আছে এখনও।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে অবাক চোখে তাকাল। ও তো আদ্রিয়ানকে বলেনি ওর ব্যাথা করছে। তাহলে কীকরে জানল? মনের প্রশ্ন মনে রেখেই নিচু কন্ঠে বলল,
” হুম।”
আদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” খাবার খেয়ে ঔষধ দেব খেয়ে নিও।”
” আচ্ছা।”
এরপর আর কোন কথা হলোনা দুজনের মধ্যে। দুজনেই চুপচাপ খাওয়া শেষ করল।আদ্রিয়ান মুখ মুছতে মুছতে বলল,
” ওপরে গিয়ে রেস্ট করো। আমি বেড়োবো।”
বলে উঠে যেতে নিলেই অনিমা আদ্রিয়ানের হাত খামচে ধরল। শরীরে মৃদু কম্পন হচ্ছে ওর। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। অনিমা মাথা নিচু করে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আদ্রিয়ান অনিমার পাশে বসে বলল,
” একা থাকতে ভয় করছে?”
অনিমা ধীর গতিতে মাথা উপর নিচ ঝাকালো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল,
“বিকেলের মধ্যে চলে আসবো। আর এই বাড়িতে বাইরের কেউ আসতে পারবে না। সো ইউ আর টোটালি সেভ।”
অনিমা আদ্রিয়ানের আশ্বস্ত হলো না। কিন্তু আদ্রিয়ানকে আটকে রাখার কোন অধিকার তো ওর নেই। এমন একজন মানুষ যে কারণ ছাড়াই ওকে থাকতে দিচ্ছে সেটাই অনেক। তারওপর ও আবার অধিকার কীকরে দেখাবে? যেখানে ও লোকটাকে চেনেই না ঠিক করে। তাই আস্তে করে আদ্রিয়ানের হাত ছেড়ে দিল। আদ্রিয়ান ঝট করেই বুঝতে পেরে গেল অনিমার মনের পরিস্থিতি। কীকরে বুঝল জানেনা, কিন্তু বুঝল। তাই ঠোঁট চেপে হাসি দিয়ে কাউকে একটা ফোন করে বলল, আজ ও আসতে পারবেনা। অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। ছেলেটা এত ইম্পর্টেন্স কেন দিচ্ছে ওকে? কে হয় ও? আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে বলল,
” চলো ওঠো। ওপরে যাবো।”
অনিমা উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল। নিজের বিছানায় বসিয়ে দিল। অনিমাও একেবারে ভদ্র মেয়ের মত চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ানের কিছু একটা মনে পরতেই ও উঠে গিয়ে একটা ঔষধের বক্স নিয়ে
এলো। সেখান থেকে একটা ঔষধের প্যাকেট খুঁজে প্যাকেট থেকে একটা ট্যাবলেট বেড় করে অনিমাকে দিয়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। অনিমাও কোনরকম প্রশ্ন না করে চুপচাপ খেয়ে নিল। আদ্রিয়ান গ্লাস রেখে বলল,
” এখন কী আরেকটু ঘুমোবে?”
অনিমা মাথা নেড়ে না করল। আদ্রিয়ান বিরক্ত হচ্ছে খুব। মেয়েটা প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর মাথা নেড়ে কেন দিচ্ছে? খুব দরকার ছাড়া কথাই বলছে না। ও কী বোঝেনা আদ্রিয়ানের ওর কন্ঠস্বর শুনতে বেশি বেশি ইচ্ছে করছে। না, এখন ওকেই কিছু করতে হবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে বলল,
” দেখ তোমার জন্যেই আমি আমার কাজে না গিয়ে থেকে গেলাম। কিন্তু তুমি যদি এভাবে চুপ করে বসে থাকো তাহলে আমার সময় কীকরে কাটবে বলো?”
অনিমা একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার চোখ সরিয়ে নিল। আদ্রিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আবার বলল,
” ছাদে যাবে? ওখানে একটা সুন্দর দোলনা রাখা আছে। ওখানে বসে কথা বলি?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে আরো একবার তাকাল। কী বলবে ও? কী বলা উচিত। কেন জানি নাও বলতে পারছেনা। তাই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ‘এসো’ বলে আদ্রিয়ান উঠে হাটা দিল। অনিমাও গুটিগুটি পায়ে আদ্রিয়ানকে অনুসরণ করে হাটতে লাগল।
ছাদে একেবারে চুপচাপ পরিবেশ। আকাশ হালকা মেঘলা হয়ে আছে। হালকা বাতাস বইছে চারপাশে। ছাদের দোলনায় অনিমা আর আদ্রিয়ান যথেষ্ট দূরত্ব রেখে বসে আসে। আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে অনিমার দিকে তাকাল। আদ্রিয়ানের এমন চাহনীতে ওর অস্বস্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওর পেটে অনেক কথা, অনেক প্রশ্ন জমে আছে ঠিকই কিন্তু মুখে কিছুতেই আনতে পারছেনা। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অনিমাকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখে বলল,
” কিছু বলার নেই?”
অনিমা এবার নিজেকে শক্ত করে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করল,
” ওখানে তো আরও অনেক মেয়ে ছিল। আপনি আমাকেই কেন নিজের কাছে নিয়ে এলেন? আমাকে তো ওখানেই রেখে আসতে পারতেন। বাকিটা পুলিশ বুঝে নিতো।”
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,
” তোমার সবটা মনে পরেছে ওখানকার কথা?”
” হ্যাঁ। ঘুম থেকে ওঠার পরেই। বলুন না। কেন নিয়ে এলেন? আপনার মত একজন মানুষ আমার মত একটা ঝামেলা নিজের বাড়িতে কেন আনবে?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
” ওখানে বাকি সব মেয়েই নিজের বাড়ির ঠিকানা বা নম্বর দিয়েছিল এবং তাদের পরিবারে মানুষের হাতে তাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তুমি এমন কারো কথাই বলোনি, আর না কোন ঠিকানা দিয়েছো। পুলিশ স্টেশনে রাখলে তোমাকে পাগল ভেবে তোমার ছবি ছেপে দিত খবরের কাগজে।”
অনিমা কৌতূহলী কন্ঠে বলল,
” দিলে দিত। তাতে আপনার কী যায় আসে?”
” তুমি নিজেই বলেছিলে তোমার যাওয়ার জায়গা নেই। তাই তোমাকে নিয়ে এত টানা হ্যাঁচড়া হোক আমি সেটা চাইনি। মানবিকতা বলে একটা বস্তু আছে তো।”
অনিমা আবার বলল,
” আপনি তো সিঙ্গার। তাহলে ওরকম একটা জায়গায় কীকরে পৌছালেন?”
আদ্রিয়ান এবার হেসে বলল,
” বাপড়ে বাপ। এতক্ষণ তো মুখে কথা ফুটছিল না। আর এখন প্রশ্ন করছ তো করেই চলেছ। এবার আমার কয়েটা প্রশ্নের উত্তর দেওতো।”
” কী প্রশ্ন?”
আদ্রিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” তুমি এটা কেন বললে যে তোমার যাওয়ার জায়গা নেই? তোমার বাবা-মা কোথায়?”
প্রশ্নটা শুনে অনিমা বেশ লম্বা সময় চুপ করে রইল। আদ্রিয়ানও সময় দিল ওকে। নিরবতা ভেঙ্গে অনিমা বলল,
” আম্মুর কথা মনে নেই আমার। আমি খুব ছোট থাকা অবস্থায় মারা গেছেন উনি। ব্রেন টিউমার ছিল শুনেছিলাম আব্বুর কাছ থেকে।”
” আর তোমার বাবা?”
” আব্বু জার্নালিস্ট ছিলেন। ওনার নিজস্ব কম্পানিও ছিল। আমি তখন ক্লাস নাইনের স্টুডেন্ট। আব্বুকে একটা কাজের জন্যে রাজশাহী যেতে হয়েছিল এক সপ্তাহের জন্যে। আমাকে মামা বাড়ি রেখে গেছিলেন উনি। কিন্তু আর ফিরে আসেন নি। একটা এক্সিডেন্টে উনি মারা যান। শুনেছিলাম ট্রাকের সাথে গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছিল।”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” তুমি দেখেছিলে ওনার লাশ?”
” হ্যাঁ। কিন্তু এক্সিডেন্টে আব্বুর শরীর খুব বাজেভাবে নষ্ট হয়েছিল। মুখটা তো পুরো থেতলে গেছিল। দুই সেকেন্ডও তাকাতে পারেনি ঐ মুখের দিকে।”
অনিমার কন্ঠস্বর ভারী হয়ে গেছিল। আদ্রিয়ান লম্বা একটা শ্বাস ফেলল। কিছক্ষণ আবার নিরব থাকল ওরা। আদ্রিয়ান বলল,
” এরপর কোথায় ছিলে তুমি? মানে কোথায় বড় হয়েছো?”
” এরপর আমি..”
একটু বলে অনিমা হঠাৎ করেই অস্হির হয়ে গেল। উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” এরপর কোথায় ছিলাম আমি? অাব্বুকে দাফন করার পরে আমি.. কী হয়েছিল তারপর? কিছু মনে কেন পরছে না আমার! বলুন না কী হয়েছিল?”
# চলবে…
[ রি-চেইক করা হয়নি। মূল কাহিনী এখনও শুরু হয়নি সবে ক্যারেক্টার গুলোর এন্ট্রি হচ্ছে। আর ক্যারেক্টারগুলো সব সিজন ১ এর গুলোই থাকবে। দুই একজন নতুন চরিত্র আসবে। তাই বিভ্রান্ত হবেন না। ]