বর্ষণের সেই রাতে- ২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
২.
অনিমার শরীরের আঘাতের দাগগুলো জ্বলজ্বল করছে। ঠোঁটের কোণে হালকা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মেয়েটার শ্যামবর্ণের শরীরেও কিছু কিছু জায়গা লাল রঙ ধারণ করেছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর মারা হয়েছিল। অনিমা আদ্রিয়ানের বুকে ঢলে পরতেই আদ্রিয়ান দ্রুত নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছিল ওকে। গালে আলতো করে হাত রেখে বুঝল অনিমা অজ্ঞান হয়ে গেছে। এটা কী হল? ওকে দেখতে কী এতটাই খারাপ না-কী? যে মেয়েটা ওকে দেখে ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে গেল? পরে ও বুঝতে পারল যে ওর শরীর দুর্বল। হয়ত অনেকক্ষণ যাবত খাওয়াও হয়না। তারওপর যেই জায়গা থেকে ওকে নিয়ে এসছে, ওখানে ওর সাথে কী ব্যবহার করা হয়েছে সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা আছে আদ্রিয়ানের। তাই ওকে কোলে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটা মোমবাতি এনে অনিমার মুখ বরাবর টি-টেবিলে রাখতেই অনিমার শরীরের আঘাত গুলো চোখে পরল ওর। যদিও মহিলা সার্ভেন্ট ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই তাজা আঘাতগুলো দেখে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। প্রচন্ড রাগ লাগছে। সেই রাগটা ঠিক কার ওপর হচ্ছে বুঝতে পারছেনা ও। মেয়েটার বয়স উনিশ-বিশ এর বেশি হবেনা। এই বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে কেউ মারতে পারে? এই মুখের দিকে তাকিয়েই তো ওর সব গুলিয়ে যাচ্ছে। অথচ এরা আঘাত কীকরে করল? দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত এক’টা পনেরো বাজে। না, এখন মেয়েটাকে জাগাতে হবে। কতক্ষণ যাবত কিছু খায়নি তারতো কোন ঠিক নেই। কিছু একটা খাওয়াতে হবে। টি-টেবিলে রাখা পানির গ্লাস থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে অনিমার মুখে হালকা করে ছিটিয়ে দিতে দিতে গালে আলতো করে থাপ্পড় দিতে দিতে আলতো কন্ঠে নাম ধরে ডাকল। প্রথমে রেসপন্স না করলেও পরে দুই-তিনবার করাতে ভ্রু কুচকে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল। অনিমা চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে দেখে ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে পুরো ব্যপারটা ওর বোধগম্য হতেই ও তাড়াহুড়ো করে উঠতে গেলে আদ্রিয়ান ওকে বাঁধা দিয়ে বলল,
” আস্তে উঠুন। আমি হেল্প করছি।”
আদ্রিয়ান আস্তে করে ধরে ওঠালো ওকে। অনিমা এখনও বোকার মত আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে ওর কাছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের কাছে আছে ও? তারই বাড়িতে? কীভাবে সম্ভব? ও এখানে কীকরে এল? আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিল অনিমা। হঠাৎ আদ্রিয়ান ওর মুখের সামনে তুরি বাজাতেই ওর হুস এল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
” আমায় দেখা হয়ে গেছে? তাহলে আমি কিছু বলতাম আরকি।”
অনিমা এবারও চুপ। বিগত কিছুদিন যাবত ওর সাথে যা যা হয়ে আসছে তারমধ্যে এখন আবার এসব? কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান বিছানায় বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কিছুতো বলুন?”
অনিমা অাসেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,
” আপনি রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের? মানে সিঙ্গার? এডি?”
আদ্রিয়ান হাসল। মোমের আলোতে আদ্রিয়ানের এই হাসিটা সোজা অনিমার বুকে গিয়ে লাগল। এত সুন্দর করে হাসে কীকরে ছেলেটা? বাঁকা প্রিমোলার দাত, আর লম্বালম্বি অর্ধচন্দ্রাকার টোল পরা ওই হাসি যেকারো নজর কাড়তে বাদ্ধ। এই হাসি ও টিভিতে, ছবিতে কয়েকবার দেখলেও সরাসরি এই প্রথম দেখল। হাসি মুখেই আদ্রিয়ান বলল,
” আমি তো সেটাই জানি। এখন তুমি যদি আমাকে নতুন কোন পরিচয় দিতে চাও, দিতে পারো। আমি কিছু মনে করব না।”
অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল। পরিচয় দেবে মানে কী? ও কীকরে পরিচয় দেবে? আর কী পরিচয় দেবে? কী বলছে লোকটা? অনিমার মনে মনে খুব ভয় লাগছে। এই বাড়িতে এই লোকটা একাই থাকে নিশ্চয়ই? অচেনা একটা জায়গায়, অচেনা একটা পুরুষের কাছে আছে ও। যেখান থেকে ও চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না। এরকম পরিস্থিতিতে যেকোন মেয়ে ভয় পাবে। তাই একটা শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলল,
” আমি এখানে কীকরে এলাম?”.
আদ্রিয়ান থুতনিতে হাত রেখে একটু ভাবার ভান করে বলল,
” কীকরে এলে বলোতো? আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার খাটে একটা মেয়ে শুয়ে আছে। আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম। যে আমার বাড়িতে এটা কে এসে টপকালো। কোথায় আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করব তুমি এখানে কী করছ? তা-না তুমি উল্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছ?”
হঠাৎ করে তুমি বলাতে অনিমা একটু অবাক হল। এতক্ষণ তো আপনি করেই বলছিল। হঠাৎ তুমি করে বলল যে? তবুও সেসবে পাত্তা না দিয়ে আদ্রিয়ানের ওপর খুব বিরক্ত হলো ও। ওর এটুকু বোঝার বুদ্ধি আছে যে এখানে ও এমনি এমনি বা আদ্রিয়ানের অজান্তে আসে নি। তবুও লোকটা ওর সাথে মজা করছে। ওকে দেখে কী জোকার মনে হচ্ছে না কী? এরমধ্যেই আদ্রিয়ান বলল,
” এই তুমি আত্মা-ফাত্মা নও তো? আমার বাড়িতে তো তালা লাগানো ছিল। তাহলে ভেতরে কীকরে এলে? ওহ শিট! আমার বাড়িতে আত্মা? এটাতো ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে।”
অনিমা এখনও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। ওর মানসিক পরিস্থিতি ভীষণরকম খারাপ এই মুহূর্তে। তারওপয এই লোকটার এসব মজা। সেলিব্রিটি বলে কী যা ইচ্ছে করবে। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আবার বলল,
” আচ্ছা? হেডলাইন টা কী হবে তাহলে? রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের এর বাড়িতে পেত্নীর আক্রমণ?”
বলে খানিকটা শব্দ করে হাসলো আদ্রিয়ান। অনিমার এবার ভীষণ রাগ হল এবার। গায়ের ওপর থাকা চাদরটা এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
” মজা করছেন আপনি আমার সাথে?”
আদ্রিয়ান বিছানায় বসে বসেই থুতনিতে হাত রেখে অনিমাকে স্কান করে নিল ঠোঁট চেপে হাসতে লাগল। অনিমা আদ্রিয়ানের হাসির কারণ বুঝতে না পেরে সেটা অনুসন্ধান করতে নিজের দিকে তাকাতেই কেঁপে উঠল। ও প্রচন্ড ঢিলেঢালা আকাশি রঙের একটা শার্ট পরে আছে, যেটা ওর হাটু অবধি গিয়ে পরে। ও চোখ বড়বড় করে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে, তারপর আবারও নিজের দিকে একবার তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড দ্রুত এপ্রকার লাফিয়ে বিছানায় উঠে চাদর দিয়ে বুক অবধি ঢেকে বসে রইল। আদ্রিয়ান এবার আরেকদফা আওয়াজ করে হাসল। অনিমা বলল,
” আমার পোশাক কোথায়?”
আদ্রিয়ান এখনও একই ভঙ্গিতে হাসছে। অনিমা এবার চেঁচিয়ে বলল,
” আমার গায়ে এটা কীকরে এলো? কে পড়িয়েছে? কী করেছেন আপনি আমার সাথে?”
এতক্ষণ আদ্রিয়ান এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার ওর মেজাজ একটু খারাপ হল। ও ধমক দিয়ে বলল,
” ড্রেস পুরো ভিজে ছিল তোমার। একজন সার্ভেন্ট চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে গেছে, এবং সে অবশ্যই মহিলা।”
অনিমা এবার মাথা নিচু করে ফেলল। বুঝতে পারল ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। ও একটু গুটিয়ে বসে অসহায় আর কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
” আমি এখানে কেন?”
আদ্রিয়ান বুঝল একটু বেশিই রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছে। মেয়েটার ওপর দিয়ে এমনিতেই অনেক কিছু গেছে। ওর এসব ব্যবহার ঠিক হয়নি। তাই ও ঠান্ডা গলায় আস্তে করে বলল,
” তো কোথায় থাকার কথা ছিল?”
অনিমা এবার চুপ হয়ে গেল। সত্যিই তো ওর কোথায় থাকার কথা ছিল? ওর জায়গা কোথায়? ওর তো যাওয়ার মত নিরাপদ কোন জায়গা নেই। কোন নিরাপদ আশ্রয় নেই এই জগতে। আদ্রিয়ান অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
” কী হলো বল?”
” না আমিতো, আমি.. আমি কোথায় ছিলাম?”
আদ্রিয়ান চমকে তাকাল অনিমার দিকে। কয়েক ঘন্টা আগে পুলিশ স্টেশনে তো ওর জ্ঞান ছিল। সেই কথাও ভুলে গেছে? আদ্রিয়ান অনিমার দিকে আরেকটু এগিয়ে বসে বলল,
” তোমার মনে নেই এখানে আসার আগে তুমি লাস্ট কোথায় ছিলে?”
অনিমা কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,
” আমাকে ওরা বেঁধে রেখেছিল, আমি পালানোর চেষ্টা করছিলাম তাই, আমাকে মারছিল এরপর, এরপর..। আমার মাথা ব্যথা করছে।”
বলে দুইহাতে নিজের মাথা চেপে ধরল অনিমা। আদ্রিয়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল অনিমার দিকে। এবার ওর দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,
” আচ্ছা কিছু মনে করতে হবে না। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই।”
অনিমার সত্যিই খিদে পেয়েছে। শেষ কখন খেয়েছে খেয়াল নেই, তবে সময়টা দীর্ঘ হয়েছে। আর এতক্ষণ এত উত্তেজনায় খাওয়ার কথা মাথায় না এলেও আদ্রিয়ানের কথায় ওর খিদের উপলব্ধি আরো ভালোভাবে হলো। ও অসহায় এক চাহনী দিয়েই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান কাউকে একটা ফোন করে বলল খাবার আনতে। এরপর অনিমার দিকে তাকাতেই অনিমা এক ঢোক গিলে কাঠ গলায় বলল,
” একটু পানি খাবো।”
আদ্রিয়ান দ্রুত উঠে গ্লাসে রাখা পানিটা ফেলে দিয়ে জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে অনিমার দিকে এগিয়ে দিল। অনিমা গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে লম্বা শ্বাস ফেলল। আদ্রিয়ান নরম গলায় বলল,
” তুমি ঠিক আছো?”
” হুম।”
এরমধ্যেই খাবার চলে এল। আদ্রিয়ান গিয়ে খাবারটা নিয়ে এল। অনিমা গায়ে এখনও চাদর জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে। আদ্রিয়ান বলল,
” খেতে পারবে নিজের হাতে?”
অনিমা ওপর নিচে মাথা ঝাকালো অর্থাৎ হ্যাঁ পারব। আদ্রিয়ান ট্রে থেকে একটা প্রেট অনিমার দিকে এগিয়ে দিল। আরেকটা নিজে নিল। ওরও খাওয়া হয়নি আজ এসবের চক্করে। অনিমা এদিক ওদিক না তাকিয়ে খেতে শুরু করে দিল। আদ্রিয়ান একটু একটু করে খাচ্ছে আর অনিমাকে দেখছে। যদিও অনিমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই, ও ওর মত করে খেয়ে যাচ্ছে। খেতে খেতেই একপর্যায়ে আদ্রিয়ানের দিকে চোখ পরতেই অনিমা দেখল আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও একটু ইতস্তত করে নড়েচড়ে বসল, আদ্রিয়ানও নিজেকে সামলে খাওয়ার মনোযোগ দিল।
বৃষ্টি থামার নামও নিচ্ছে না। অবিরাম ধারায় ঝরেই চলেছে। আজ কী হল বর্ষণের? থামতে কেন চাইছে না? বাইরে থেকে আসা হাওয়ায় গোটা রুম জুরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সেই বাতাসের তালেতালে মোমের আগুনের শিখার নৃত্য তো আছেই। খাওয়া-দাওয়া শেষে করে সবকিছু গুছিয়ে আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখে অনিমা গুটিয়ে বসে আছে আর চারপাশটা দেখছে। মনে মনে যে খুব ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝতেই পারছে ও। আদ্রিয়ান অনিমার কাছে গিয়ে ডাকতেই ও চমকে উঠল। আদ্রিয়ান অনিমাকে আশ্বস্ত করে বলল,
” কুল, আমি।”
অনিমা কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,
” আপনি আমার নাম কীকরে জানলেন?”
আদ্রিয়ান আবার অবাক হল। তবুও স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” তুমি নিজেই বলেছো আমাকে।”
অনিমা হতাশ কন্ঠে বলল,
” ওহ।”
আদ্রিয়ান সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে অনিমাকে। অনিমা দৃষ্টি উদাস, কিছু ভাবছে, কিছু বুঝতে চাইছে, ভেতর থেকে ছটফট করছে। কিছু একটা ভেবে অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে টানা টানা কন্ঠে বলল,
” আপনি আমাকে কোথা থেকে নিয়ে এসছেন?”
আদ্রিয়ান ভাবল এখন ওকে কিছু না বললে ও মস্তিষ্কে আরও বেশি চাপ দেবে। যেটা ওর মস্তিষ্কের জন্যে ঠিক নয়। এখন ওকে বলে দেওয়াই শ্রেয়। তাই আদ্রিয়ান একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” তোমাকে একটা গ্যাং এর লোকেরা কিছু লোকের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিল। যারা তোমাকে বিদেশে পাচার করে দিত, কাল রাত বারোটায়।”
অনিমা চমকে তাকাল। নিচের ঠোঁট হালকা কাঁপছে। দম আটকে আসতে চাইছে। কিছুটা মনে পরছে ওর। কিন্তু সবটা না। কিছু কিছু অংশ ঝপসা লাগছে। আগের সবটাই মনে পরছে কিন্তু এরপরের কিছু কিছু অংশ গুলিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে অনিমার কাধে হাত রেখে বলল,
” ক্লান্ত লাগছে? ঘুমাবে?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে ছলছলে চোখে তাকাল। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেল। কাঁদছে কেন এই মেয়ে। আদ্রিয়ান ওপর হাত অনিমার অন্যকাধে রেখে বলল,
” কী হয়েছে? কষ্ট হচ্ছে কোথাও?”
অনিমা চোখের জল ছেড়ে দিল কিন্তু কিছু বলল না। আদ্রিয়ান বেশ অবাক হল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবল এখন কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো। পরে মেয়েটা নরমাল হলে আস্তে ধীরে জিজ্ঞেস করা যাবে। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” কান্না বন্ধ করো, আর ঘুমিয়ে পরো। আমি একটু আসছি।”
বলে চলে যেতে নিলেই অনিমা আদ্রিয়ানের হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। আদ্রিয়ান ঘুরে তাকিয়ে দেখে অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হয়ত ভয় পাচ্ছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আবার ওর মাথায় হাত রেখে বলল,
” এখানেই আছি। ভয় পেওনা।”
কথাটা বলে আদ্রিয়ান অনিমাকে ছাড়িয়ে রুমের বাইরে চলে গেল। এরপর সোহাগ কে ফোন করল, ফোন রিসিভ করতেই ও বলল,
” মেয়েগুলো সব পৌছেছে ঠিকমত?”
” হ্যাঁ পৌছেছে। ঐ মেয়েটার কী খবর?”
” আছে ভয় পেয়ে আছে খুব। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হয়েছিল ওর সাথে। এখনও ভীষণ শকের মধ্যে আছে।”
” আচ্ছা খেয়াল রাখিস ওর। যাক, বাই তাহলে? জানিনা আবার কবে দেখা হবে।”
” হুম রাখছি। দেখা যাক ভাগ্য আবার কবে দেখা করায়। বাই।”
বলে ফোনটা রেখে দিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে রুমের ভেতরে ডুকলো আদ্রিয়ান। রুমে ঢুকে চমকে উঠল ও কারণ অনিমা বিছানায় নেই। বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। একটু আগে গায়ে শুধু শার্ট ছিল বলে তো মেয়েটা লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল। অথচ এখন এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? হুটহাট কী হয় এই মেয়ের? মাথায় সমস্যা না কী? আদ্রিয়ান ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে অনিমার পাশে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
” কী দেখছ?”
অনিমা ধীর কন্ঠে বলল,
” বৃষ্টিকে। এই বৃষ্টির সাথে আমার কী শত্রুতা সেটাই ভাবছি আমি। যখনই আসে কিছু না কিছু কেড়ে নেয় আমার কাছ থেকে। একেবারে নিঃস্ব করে দেয়। সবাইকে দিলেও আমাকে বর্ষণ কিছুই দেয় না। শুধু নেয়, সব কেড়ে নেয়। বর্ষণের আমাকে দেওয়ার মত কী কিছুই নেই?”
#চলবে..