বন্ধন পর্ব-২

0
1758

#বন্ধন
পর্ব-২
#tani_tass_ritt

রাইমা ফোনটা রিসিভ না করে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে।রাগ,অভিমান সব মিলিয়ে এক মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে।ফোনটা বাজতে বাজতে একাই অফ হয়ে গেলো।এভার রাইমা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কিন্তু তা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। আবার ফোনটা বাজতে শুরু করলো।রাইমা বিছানার থেকে ফোনটা তুলে কিছু একটা ভেবে রিসিভ করলো।
কিন্তু রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কোনো সারাশব্দ নেই।রাইমার ঠোঁট রীতিমতো কাঁপছে।
“হ্যালো” ওপাশ থেকে সেই চিরচেনা কন্ঠটা শুনে রাইমা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।হুহু করে কেঁদে ফেললো।কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আমার সাথে এমন টা কেনো করলে মাহাদি?
রাইমার এমন কান্নামাখা কন্ঠ শুনে মাহাদির ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।নিজেকে কোনো রকমে সামলে মাহদি বললো,”আমি আবার কি করেছি?”
রাইমা দাঁতেদাঁত চেপে বললো,”তুমি কি করেছো তুমি জানোনা? আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো।”

মাহাদি এবার হো হো করে হেসে ফেললো।রাইমা বেশ অবাক হলো।
“তুমি হাসছো কেনো?”
মাহাদি হাসি থামিয়ে বললো,”বাহ রে! এমন মজার কথা শুনলে হাসি পাবেনা বুঝি!আমি যদি বলি তুমি আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তাহলে?”

“তুমি কি বলতে চাচ্ছো?এমন ভনিতা না করে সরাসরি বললেই পারো।”
“ভনিতা করা তো আমি তোমার থেকেই শিখেছি। ”
রাইমার মেজাজ এবার প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো।সে কিছুটা চিৎকার করে বললো,”আমার সাথে মজা নিচ্ছো তুমি? ৬ মাস পর এতো রাতে কল দিয়ে আমার সাথে তামাশা করছো?”
মাহাদি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো,”তামাশা তো তুমি করেছো আমার সাথে।সেটার ফল যে তোমায় ভোগ করতেই হবে।তামাশা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি আমি তোমাকে বুঝিয়ে ছাড়বো। ” বলেই মাহাদি ফোনটা কেটে দিলো।
ফোনটা টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ের থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বের করলো। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে সেখানে রাখা দোলনাটায় বসলো।দোলনার পাশেই টুলের উপর লাইটার রাখা। সিগারেট টা জ্বালাবে নাকি জ্বালাবেনা ভাবতে ভাবতে বেশ দোটানায় পরে গেলো।

এইদিকে রাইমা এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।মাহাদির প্রতিটা কথা তার কানে বাজছে।সে ভাবতে চেষ্টা করছে মাহাদি তার সাথে এমনটা কেনো করলো।তাহলে মাহাদি কি সত্যিটা জেনে গিয়েছিলো।ভাবতেই রাইমার বুকে ছ্যাত করে উঠলো।কিন্তু সে তো কখনো মাহাদিকে বলেনি তাহলে কিভাবে জানলো! ভাবনার মাঝে কখন যে অভ্র রুমে এসেছে রাইমা খেয়াল ই করেনি।ওয়াশ রুম থেকে ট্যাপ ছাড়ার আওয়াজ পেয়ে তার ধ্যান ভাংলো।
রাইমা টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিলো তখনি অভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরুলো।রাইমার দিকে এক নজর দিয়ে খাটের উপর থেকে বালিশ নিয়ে সোফার দিকে পা বাড়ালো।মাহাদির রুমে বেলকনির কাছাকাছি একটা সোফা রাখা।বিয়ের পর থেকে এখানে ঘুমানো তার ডেইলি রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে।রাইমা গ্লাশটা টেবিলের উপর রেখে অভ্রের পথ আটকে দাড়ালো।
অভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে? এমন সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
“তুমি সোফায় ঘুমোতে পারবে না।”
“আমি কোথায় ঘুমোবো তা কি তুমি ঠিক করবে নাকি?”
“আলবাদ ঠিক করবো।আমি তোমার বউ।তোমার উপর আমার অধিকার আছে।”
অভ্র খানিকটা হেসে বললো,”তুমি আমার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া বউ।ভুলেও আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবে না।”
রাইমা আর কিছু বললো না।সরে দাড়ালো।আসলেই তো অভ্রতো তাকে বিয়ে করতে চায়নি।সে ই তো ইচ্ছে করে অভ্রের গলায় ঝুলে পরেছে বেহায়ার মতো।
রাইমা সরে দাড়াতেই অভ্র সোফায় শুতে শুতে বললো,”তোমার নাটক শেষ হলে লাইট টা অফ করে দিও।”
রাইমা লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।

ভোরের আলো ফুটেছে।আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।মাহাদি আরো একটা নির্ঘুম রাত পার করলো।দোলনা থেকে উঠে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নিলো।নামায পরে বিছানায় শুয়ে পরলো।এই সময়টা তার খুব ঘুম পায়।

সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট।সবাই একসাথে নাস্তার টেবিলে উপস্থিত।সালমা বেগম সবাকে নাস্তা সার্ভ করছে।রাইমা এ বাড়ির বউ হলেও এই কাজ টা সালমা বেগম ই করে থাকেন।কেনোনা অভ্র একদম পছন্দ করে না যে রাইমা তাকে নাস্তা সার্ভ করুক।অভ্রের পাশের চেয়ার টায় আগে তিতলি বসলেও এখন আর বসে না।সেখানে রাইমার বসার ও অনুমতি নেই। তাই বরারবরের মতো তার পাশের চেয়ারে অফিসের ব্যাগ রাখা।

পরটা ছিড়তে ছিড়তে আফজাল সাহেব অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হয়ে গেলো।কোথাও থেকে ঘুরে আসো বউমাকে নিয়ে। আমি তোমাদের টিকেট কেটে দিচ্ছি।কোথায় যাবে বলো।”

আফজাল সাহেবের কথা শেষ না হতেই অভ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো।এক মূহুর্ত দেড়ি না করে ব্যাগটা নিয়ে হনহন করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।সবাই এখন থম মেরে বসে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।রাইমা কেবলই খাবার মুখে দিয়েছিলো এর মাঝেই এমন কান্ড ঘটে গেলো।সে না পারছে গিলতে আর না পারছে ফালাতে।তার ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে চলে যেতে।

রাইমা আস্তে করে বললো,”মা আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে।আমি রুমে যাচ্ছি।” বলেই যত জলদি সম্ভব রুমে চলে এলো।এতো অপমান যে সে আর নিতে পারছে না।

সালমা বেগম তিতলি কে ইশারা করলেন রুমে যেতে।তিতলি ও উঠে গেলো।

“সকাল সকাল ছেলেটার সাথে এব্যাপারে কথা না বললে কি হতোনা?”
“তোমার এই বেয়াদপ ছেলেকে বলো ঠিক হয়ে যেতে।”
“অভ্র আমার একার ছেলে না। আপনার ও ছেলে।”
“তোমার ছেলে আমার কোনো মর্যাদা রেখে।ও কি ভুলে গিয়েছে আমি ওর বাবা হই?”
সালমা বেগম উঠতে উঠতে বললেন,”ও ভুলেনি দেখেই তো ওর জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত আপনি ওর উপর চাপাতে পেরেছেন।”
আফজাল সাহেব ঝিম মেরে বসে রইলেন। সে কিছু একটা নিয়ে যে চিন্তা করছে তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

★★★★★★
অভ্রের কাজ আজ জলদি শেষ হয়েছে।বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার।প্রতিদিন এই রাইমার চেহারা দেখতে দেখতে সে বিরক্ত।কিন্তু কি করার বাসায় তো যেতেই হবে।ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে সে একটা সিগারেট ধরালো।এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ সে দেখতে পেলো মাহাদিকে। মাহাদিকে দেখেই তার রাগ আসমানে উঠে গেলো।সে দ্রুত পায়ে মাহাদির কাছে যেতে লাগলো।মাহাদি অভ্রকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে পাশে থাকা সিএনজি টায় উঠে পরলো।অভ্র মাহাদি বলে চিৎকার করলেও মাহাদি দাড়ালো না।

রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে।গাড়ির হর্নের আওয়াজে পাশে তাকিয়ে দেখলো ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে।সে মাহাদির কথা ভাবতে ভাবতেই গাড়িতে উঠে পরলো।এতোদিন ধরে সে মনে যে অংকটা কষেছে তা তাকে মেলাতেই হবে যে করেই হোক না কেনো।

অভ্র বাসার সামনে এসে দেখতে পেলো বেশ কয়েকটা জুতো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাসায় মেহমান এসেছে।কিন্তু এই সময় কে এসেছে সেটাই বুঝতে পারছে না।কলিং বেল বাজাতেই রাইমা দরজা খুলে দিলো।ব্যাপারটা এমন যেনো রাইমা দরজার খোলার জন্যই দাড়িয়ে ছিলো।রাইমাকে দেখেই তার বিরক্ত আরো বেরে গেলো।ঘরে ঢুকে বোঝার চেষ্টা করলো কাহিনি কি!ভালো করে খেয়াল করতেই তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।

(কেমন হয়েছে জানাবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে