#বন্ধন
পর্ব-১
#tani_tass_ritt
“তুমি রাতবিরাতে তোমার খালাতো বোনের রুমে কি করো?”,বেশ চিৎকার করেই বললো রাইমা।
অভ্র কেবলই চায়ের কাপ টা হাতে নিয়েছিলো।রাইমার এমন প্রশ্নে সে চায়ের কাপ টা আবার টেবিলের উপর রেখে খুব শান্ত ভাবে বললো,” আমি কখন কোথায় যাবো তার কৈফিয়ত কি আমায় তোমাকে দিতে হবে?”
“আলবাদ দিতে হবে।আমি তোমার বিয়ে করা বউ।৬ মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।তোমার আমার দিকে কোনো নজর নেই। তোমার ঐ বোনের উপর কিসের এতো দরদ যে তোমার রাতবিরাতে ওর রুমে যেতে হবে?কি মনে করেছো আমি কিছু বুঝিনা।আসার পর থেকেই তোমাদের এই নোংরামি আমি লক্ষ্য করছি।”রাগে রাইমার ফর্সা মুখ টা লাল হয়ে গিয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে পুরো মুখ জুড়ে রক্ত জমে গিয়েছে।
অভ্র এবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”ইনাফ।তুমি কে আমাকে জিজ্ঞেস করার?আর ভুলে যেয়োনা আমি তোমার উপর দয়া করেছি।আসলে আমি না আমার বাবা তোমার উপর দয়া করে তোমাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।” বলেই অভ্র রুম থেকে হন হন করে বেড়িয়ে গেলো।
রাইমা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।ইচ্ছে করছে মরে যেতে।তার এখন মনে হচ্ছে জেনে শুনে সে কুয়ায় ঝাপ দিয়েছে।
রুম থেকে বেরুনোর সময় অভ্রের চোখ যায় রান্নাঘরের দিকে।খোলা চুলে তিতলি দাঁড়িয়ে আছে।খুব সম্ভবত কিছু ভাজছে।অভ্র তিতলির খোলাচুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
তিতলি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো অভ্র এসেছিলো।সে কিভাবে যেনো এই মানুষটার উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। অভ্রের রুম কিচেনের পাশে হওয়ায় তিতলি তাদের ঝগড়ার সবটা শুনতে পায়। এতো কিছু শুনার পর ও সে হযম করে নেয়।কেনোনা এখানে তার আসলেই কিছু করার নেই।তিতলি বেগুন ভাজিটা চুলো থেকে নামিয়ে একটি বাটিতে তুলে রাখে। তারপর তরকারি চুলোয় দিতে দিতে ভাবে এই রান্নার কাজ থেকে সে ছুটি নিবে।এতোদিন এই দায়িত্ব সে পালন করলেও এখন এই দায়িত্বের আসল মানুষটা তো এসে গিয়েছে।এখানে নিজেকে বড্ড বেমানান মনে হচ্ছে তার।কিন্তু কিভাবে যে বলবে এই কথাটা তার খালাকে সেটাও বুঝতে পারছে না সে।এইসব ভাবতে ভাবতে সে খেয়াল করলো রাইমা তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে।তিতলি রাইমার দিকে না তাকিয়েই বললো,”কিছু লাগবে তোমার?”
তিতলির কথা শুনে রাইমা যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।সে চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
“আমার কি লাগবে বা লাগবে না এটা আমার তোমার থেকে জানতে হবে নাকি?ভুলে যেয়োনা আমি এই বাড়ির বউ।এই বাড়িতে শুধু আমার অধিকার আছে।”
রাইমার কথায় তিতলি কষ্ট পেলেও তা প্রকাশ করলো না।সে হাসিমুখে বললো,”আমি জানিতো।বার বার মনে করিয়ে দেয়ার তো কিছু নেই।”
“এই মেয়ে এমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা আমার সাথে একদম বলবে না।”
তিতলি আর কথা বাড়ায় না।খামাখা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।রাইমার স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে তিতলিকে খোঁচা মেরে কথা বলার।আর বলবেই বা না কেনো নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের প্রতি দরদ দেখলে যে কারো ই লাগবে।ভাবতেই হাসি পায় তিতলির।নিজেকে বড্ড তুচ্ছ মনে হয়।
রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অভ্রের মা সালমা বেগম সবটা শুনতে পায়।সে এই ব্যাপারে কিছু না বলতে চাইলেও বলতে বাধ্য হয়।
“দেখো বউমা আমি তোমার কোনো বিষয়ে নাক গলাই না। কিন্তু এই ব্যাপারে না বলে পারছিনা।তুমি তিতলির সাথে এভাবে কথা বলবে না।”
সালমা বেগমের কথা শুনে তিতলি,রাইমা দুজনই পিছু ফিরে তাকায়।রাইমা কিছু বলতে যেয়েও বললো না।তার এখন এই বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।একটু আগেই অভ্রের সাথে এক দফা তার কথা কাটাকাটি হয়েছে।এখন সে চাচ্ছে না তার শাশুড়ীর সাথেও লাগাতে।রাইমা কিছু না বলেই সেখান থেকে রুমে চলে এলো।
সালমা বেগম তিতলির মাথায় হাত রেখে বললেন,”আমাকে মাফ করে দে রে মা।”
তিতলি মুচকি হাসি দিলো। এই হাসির পিছে যে কতটা ভয়ংকর কষ্ট লুকিয়ে আছে তা বুঝার সাধ্য কারো নেই।
রাত ১টা বেজে ২০ মিনিট।অভ্র কেবল বাসায় ফিরেছে।সে সোজা তিতলির রুমের দিকে পা বাড়ালো।তিতলি বরাবরের মতোই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।বেলকনিতে গ্রিল না থাকায় তিতলির বেশ ভালো লাগে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।
তিতলি পিছন না ফিরেই বললো,
“তুমি আবারো এলে যে!”
অভ্রের উপিস্থিতি তিতলি এমন টের পায় বলে অভ্র প্রথম প্রথম অবাক হলেও এখন আর অবাক হয়না।তার কাছে মনে হয় এটাই স্বাভাবিক।
অভ্র তিতলির রুমে রাখা সোফাটায় বসলো।
“এমনি এসেছি।”
দুজনই চুপ। কেউ কোনো কথা বলছে না।তিতলি নিরবতা ভেঙে বললো,”তুমি রোজ রোজ আমার রুমে এসে এমন বসে থেকে কি মজা টা পাও বলোতো?”
“সেটা তুই বুঝবিনা।”
“না বুঝলে আমাকে বুঝাও।তোমার আমার রুমে এই রাত করে আসাটা কতোটা দৃষ্টি কটু তুমি কি তা বুঝ না।”
“না।আমি বুঝিনা আর বুঝতেও চাইনা।”
তিতলি এবার চুপ হয়ে গেলো।অভ্রকে কিছু বলে লাভ নেই।ওর যা করার সে তাই করবে।গত ৬ মাস ধরে বলতে বলতে তিতলি হাপিয়ে উঠেছে।
অভ্র এখনো সোফায় বসে আছে।দৃষ্টি তিতলির চুলের দিকে।খোলা চুলে তিতলি বাহিরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।অভ্র যেনো এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করে।
এইদিকে রাইমা খুব ভালো করেই দেখেছে অভ্রকে তিতলির রুমে যেতে।রাইমার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।সে তিতলির রুমের দিকে পা বাড়ায় তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে।সে আবার রুমে এসে বেডের পাশে ছোট টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নেয়।মোবাইরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম টা দেখে সে রীতিমতো চমকে যায়।
চলবে…..