“বখাটে বউ”(পর্ব-২০ তথা অন্তিম পর্ব)
অনেকক্ষণ খামটা হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। সময় দিয়ে ছিল এক ঘন্টা। তার মধ্যে ২৫ মিনিট কেটে গেছে। এখনো খামটা খোলার সাহস পাইনি।
অবশেষে চোখ বন্ধ করে খামটা খুললাম। ভেতর থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বের করলাম। কাগজের ভাজ খুলতেও ভয় লাগছে। বর্ণিতার এমন ভীতো রূপ দেখে আমি সত্যিই হতবাক। মনটাকে খুব করে শক্ত করতে গিয়ে দেখি আমার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। আমি দৌড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। কারণ আমার চোখের জল আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। যখন মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ হয় না তখন মায়া কাটাতে হয়। ভালোবাসার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করা গেলেও ভালোবাসাহীন একটা মানুষের জন্য এক ফোটা ছাড় দেওয়াটা শুধু বোকামী নয় পাগলামিও। তাই হৃদয়হীন একটা মানুষের বিরুদ্ধে আমার মনটা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। সে পারলে আমি পারবো না কেনো? চোখ মুছে কাগজের ভাজ খুললাম।
___________________________________
বর্ণিতা
প্রথম যেদিন তোমাকে দেখে ছিলাম সেদিনই একটা ভালো লাগার ধাক্কা এসে লেগে ছিল আমার বুকের ঠিক বাম পাশে। আমি কিছুক্ষণ হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে নিশ্চুপ দাড়িয়ে ছিলাম। বেসুরো গান গাওয়া বখাটে মেয়েটা এমন করে হৃদয়ে ধাক্কা মারতে পারে সেটা ভেবেই আমি অবাক হয়ে ছিলাম, কিন্তু বুঝতে দিইনি তোমায়। এরপরেও অনেক বার তোমার সাথে আমার দেখা হয় কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি তোমাকে আমার এই ভালোলাগার কথা। তোমার এই দিন রাত আমার পেছনে লেগে থাকাটা আমার মনে খুশির স্রোত বইয়ে দিতো। চুপচাপ এই আমিটা হঠাৎ কোলাহল এর প্রতি আসক্ত হয়ে যাই। নিজের অগোচরে আমার অন্ত:করণ তোমাকে বার বার চেয়েছে। অথচ আমি যখনই তোমার সামনে দাড়িয়েছি তখনই বিরক্তি ছাড়া কিছুই বুঝাতে পারিনি। এক সময় বিয়ের কথা শুরু হলো। আমি মনে মনে এটাই চেয়ে ছিলাম। আম্মু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলো তোমাকে বউ বানাবে। এ খবর শুনে আমি সারারাত জেগে বসে ছিলাম। তারপর থেকে বারান্দায় ছাদে কত তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। শুধু মাত্র তোমাকে এক পলক দেখার জন্য কিন্তু তুমি আসোনি। এই বিয়েতে তোমার ঘোর আপত্তি ছিল। সেটা জেনেও আমি তোমাকে চেয়েছি। ভালোবাসা যে কতটা অবুঝ হয় তা নিজেকে দিয়েই বুঝেছি।
চেয়ে ছিলাম তোমার মতো একটা বখাটে বউ, যে আমার নিশ্চুপ জীবনটাকে হৈ হুল্লোড়ে ভরিয়ে রাখবে। সেদিন বলতে পারিনি আমি তোমাকে খুব করে চাই। বলতে পারিনি আমার এই এলোমেলো জীবনটাকে তুমি গুছিয়ে দেবে? বলতে পারিনি, আমার প্রতিটা রাতের ঘুম হবে তুমি? বলতে পারিনি আমি শুধু তোমাকেই চাই, খুব করে ভীষণ ভাবে চাই…
বিয়ের পর তোমাকে একটু একটু করে সামলে নিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু সেদিন ট্রান্সফারের কাগজটা হাতে পাবার পর আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছিল। আমি ট্রান্সফারের জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। তারপর কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে বসলাম। তারপর স্যরি বলার জন্য তোমার কাছে আসতে চেয়েও সাহস পাইনি।
এখন বুঝতে পারছি যে, আমার নার্ভাস ভালোবাসা আসলেই স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নয়। তবুও বলছি আমার সাথে যাবে তুমি বর্ণিতা?
আমি তোমাকে ভালোবাসি বর্ণিতা, খুব খুব ভালোবাসি…….
সীমান্ত
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
চিঠির শেষ লাইনটা ঝাপসা চোখে পড়ে শেষ করলাম। চিঠি বুকে আঁকড়ে আবার ফ্লোরে বসে গেলাম। কঠোর হৃদয়হীনা বর্ণিতার চোখে আজ অশ্রুস্রোত বইছে। জানি না আমি তাকে ভালোবাসি কি না। আমি চিঠি হাতে বসেই রইলাম। এই কাঠের মতো রসহীন মানুষটা নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমার কাছে সব কিছুই অবিশ্বাস্য লাগছে। এক ঘন্টা শেষ হতেই সীমান্ত আবার এলো। আমি নির্বাক তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার অশ্রুসিক্ত নয়ন হয়তো তাকে বিস্মিত করলো। কিন্তু আমি কাঁন্না আটকে রাখতে পারছি না। আমি চাইছি না সে আমার ভেজা চোখ দেখুক। তার সামনে কাঁদতে আমার খুব আপত্তি।
সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো-
__”সিদ্ধান্তটা জানতে এসেছি। বেশি কিছু বলতে হবে না। হ্যাঁ অথবা না বলো।”
আমার গলা দিয়ে এখনো স্বর বের হচ্ছে না। সে উৎকন্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর বললাম-
__”হ্যাঁ।”
__”আর এক ঘন্টা সময় দিলাম রেডি হবার জন্য। জানি মেয়েদের রেডি হতে আরো বেশি সময় লাগে কিন্তু আমার হাতে সময় নেই।”
কথাটা বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ওরা গাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি রেডি হয়ে নিলাম। তারপর আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিতে গেলাম। আমাকে দেখে তারা অবাক হলেও খুব খুশি হলো। যদিও আমি দূরে চলে যাচ্ছি বলে তারা এক রকম কষ্ট পাচ্ছে।
বিদায় লগ্নে আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁদলেন। আমিও নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। আব্বু চোখ মুছে বললেন-
__”দেখিস সীমান্ত তোকে খুব সুখে রাখবে।”
এই টুকু বলে আব্বু আর কথা বলতে পারলেন না। আমি আম্মুর সামনে দাড়াতেই সে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো-
__”যাবার আগে আম্মুর সাথে একটু ঝগড়া করবি না?”
কথা টুকু বলতেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো। কোথাও যুথীকে দেখতে পেলাম না। আম্মুকে বললাম-
__”যুথী কোথায়? তাকে তো দেখছি না?”
__”যুথী রুমে দরজা আটকে বসে আছে। কত করে ডাকলাম কিন্তু সে এলো না।”
__”কেনো?”
__”হয়তো তোর বিদায় মানতে পারছে না তাই।”
যুথীর ঘরের দরজা নক করলাম কিন্তু কোনো সাড়া নেই। জোরে জোরে ডাকলাম-
__”এই যুথী দরজা খোল। আমি চলে যাচ্ছি তো। ”
তবুও কোনো আওয়াজ নেই। আবার দরজা ধাক্কিয়ে ডাকলাম। তারপর সে ভেতর থেকেই জবাব দিলো-
__”আমি কিছুতেই আপ্নের সন্মুখে খারামু না বন্ন আফা।”
__”কেনো?”
__”আমার কইলজ্যা কাঁনা হইয়া যাইতাছে।”
এরপর শুধু যুথীর কাঁন্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
__”কি হয়েছে তোর? দরজা খোল বলছি।”
__”খুলুম না।”
আমি চেচিয়ে বললাম-
__”এবার কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।”
সে দরজা খুলে মাথা নিচু করে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
__”কি হয়েছে তোর?”
__”আপ্নেরে না দেইখা থাকুম ক্যাম্নে আফা?”
কথাটা বলেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। আমি ওর কাঁন্নায় হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই মেয়েটা ভেতর ভেতর যে আমাকে এতটা ভালোবাসে সেটা আমি টেরই পাইনি। আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম-
__”আমি কি চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি? আবার আসবো তো।”
সে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__”পাশের বাসায় থাকবেন বইলা সবার লগে হাত মিলাই ছিলাম। যেন যখন তখন আপ্নেরে দ্যাখতে পাই। বিশ্বাস করেন আফা যদি আগে জাইনতাম ঐ ব্যাডা আপ্নেরে নিয়া চইলা যাইবো তাইলে তার লগে আপ্নের বিয়া হইতে দিতাম না। যেমন কইরাই হোক বিয়া ভাইঙ্গা দিতাম।”
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম-
__”কি করে ভাঙতি?”
সে মুখ বাকিয়ে বললো-
__”ঐ ব্যাডার নামে কলংক দিতাম।”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম-
__”ভালো মানুষের নামে কলংক দিতি?”
সে গভীর মমতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
__”আপ্নেরে চোখের সন্মুখে রাখার লাইগা আমি সব করতে পারি গো বন্ন আফা।”
__”যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন শান্ত হ। হাতে সময় বেশি নেই, ওরা আমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে। এরপর যখন আসবো তখন তোকে সাথে নিয়ে যাবো। মন খারাপ করিস না সোনা।”
যুথী আর কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদতে শুরু করলো। তাকে খুব কষ্টে ছাড়িয়ে বাহিরে গেলাম। দেখলাম লাট সাহেব দাড়িয়ে আছে।
ট্রাকে সব ফার্নিচার উঠানো হয়েছে কি না সেটা দেখছে সে। দেখলাম সব ফার্নিচারের সাথে আমার হারমোনিয়ামটাও আছে। বেশ অবাক হলাম।
__”হারমোনিয়াম এখানে কেনো?
সে আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলো-
__”যৌতুক ওটা আমার।”
__”কিহ?”
__”যাও তবলা নিয়ে এসো।”
__”কেনো? ওটাও যৌতুক নাকি?”
সে দুষ্টুমির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
__”হ্যাঁ। যখন তুমি আমাকে ইফটিজিং করবে তখন আমি তবলা বাজাবো।”
__”কেনো?”
__”ইফটিজিং এর জবাব দেবো তাই।”
__”আপনি তো বখাটে নন।”
__”বখাটের বর তো আমি।”
__”আপনি আমার বর?”
__”তো কি পাড়া পড়শীর বর আমি?”
__”হতেই পারেন।”
হুট করে সে মাথা নিচু করে আমার কানের কাছে তার মুখ এনে ফিসফিস করে বললো-
__”ভালোবাসো আমায়?”
আমিও ফিসফিস করে বললাম-
__”বাসি তো, একটু একটু হালকা হালকা এক চিমটি।”
সে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো-
__”এটা আবার কেমন ভালোবাসা?”
আমি ভাব নিয়ে বললাম-
__”এটা বখাটে ভালোবাসা।”
সে হাহা করে হেসে বললো-
__”বখাটে বউ আমার!”
এই প্রথম আমি সীমান্তকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখছি। আমি বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
গাড়িতে বসলাম, সে আমার পাশে এসে বসলো। আমি জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে আজ প্রকৃতি প্রেমের রঙে সেজেছে। আমি আলাদা একটা অনুভূতি অনুভব করছি। আমার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ে বার বার আমার চোখ মুখ ঢেকে দিচ্ছে। হঠাৎ সে আমার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বললো-
__”বাতাসটাও তোমার মতো বখাটে একদম।”
আমি ওর দিকে তাকালাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
“এই যে ভেজা চোখের মেয়ে
আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে
তোমার অশ্রু পানে চেয়ে।”
আমি ওর কথা শুনে হতবাক হলাম। কখন বর্ষার জলের মতো আমার চোখে জল জমেছে তা বুঝতেই পারিনি। সে হাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে আমার মাথা হেলিয়ে ওর কাঁধে রাখলো। তারপর হঠাৎ সে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো-
__”আমি তোমায় ভালোবাসি মেয়ে!”
ওমাগো! এই ছেলে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলবে নাকি? আমি মাথা উচু করে চোখ মেরে বললাম-
__”আমি তোমাকে বখাটে টাইপের ভালোবাসি।”
সে লাজুক মুখভঙ্গিমায় বললো-
__”এমন ভালোবাসার নাম এই প্রথম শুনলাম।”
__”এই নতুন অনুভূতি সমেত ভালোবাসা তোমার জীবনকে তেজপাতা আর তোমার হৃদয়কে কয়লা বানিয়ে দেবে।”
__”এ তো দেখছি জ্বলাতঙ্কময় ভালোবাসা।”
আমি ওর চুলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে সব চুল এলোমেলো করে দিলাম। ওর চোখ ঢেকে গেলো চুলে। সে চুল গুলো চোখ থেকে সরিয়ে তার মুখটা আমার মুখের দিকে ঝুকিয়ে এনে বললো-
__”এটা কি হলো?”
__”এটা বখাটে বউয়ের ইফটিজিং হলো।”
সে বিমুগ্ধ চোখে আমার দিকে চেয়ে রইলো। এই রে এই ছেলের চোখ দুটো তো ভয়ানক সুন্দর! অথচ এতো দিনেও আমি তা খেয়াল করেই দেখিনি। কি সাংঘাতিক ঘটনা!
___________________________________
গল্পের কোনো শেষ নেই তবুও ইতি টানতেই হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে। ভালোবাসারও কোনো সীমান্ত নেই। ভালোবাসা চলে অন্তহীন, বিরামহীন ভাবে। বর্ণিতা আর সীমান্তর ভালোবাসা যেন চলতে থাকে অনন্তকাল ধরে। শত সহস্র জনম ধরে তারা ভালোবেসে যাক অবিরাম…….
#শুভ_সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-১৯
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=925434404553946