“বখাটে বউ”(পর্ব-১৭)

1
2300

“বখাটে বউ”(পর্ব-১৭)

বিয়ের প্রায় এক মাস হলো। আমি খাই দাই গান গাই, আর তাইরে নাইরে করে তাকে ইফটিজিং করি। মাঝরাতে তার ঘুম ভাঙিয়ে দিই অকারণেই। সে রেগে যায় আবার ঘুমায়। ওর খাবারে লবণ ঝাল মিশিয়ে খাওয়ার বারোটা বাজাই। এসবে আমি পৈশাচিক আনন্দ পাই। কিন্তু আজকাল গানে আমার মন নেই। ভালো লাগে না গান গাইতে। নিজেকে আর গায়িকা গায়িকা মনে হয় না। যা একটু গানের ইচ্ছে ছিল তা আব্বুর জন্য আর হয় না। আব্বুকে কোনো ভাবেই ডেকে বেলকোণে আনতেও পারি না। আব্বুটাও আর কথা শোনে না। একলা গান গাওয়ার সাহস পাই না আমি। ঐ লাট সাহেবকে যতোটা সহজ সরল ভেবে ছিলাম সে আসলে ততোটা সহজ সরল নয়। ততোটাই বা বলছি কেনো? সে একদম সহজ সরল নয়, সে একটা জটিল মানুষ। যতোবার তাকে ফাঁসাতে গেছি ততোবারই আমি নিজেই ফেঁসে গেছি। বাধ্য হয়ে বাদ দিয়েছি আমার ইফটিজিং অভিযান। সে আমাকে সাবধান করেছে যদি আমি বেসুরো হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাই তবে সে আমার হারমোনিয়াম ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে। তাই ভাবলাম হারমোনিয়ামটা অন্য রুমে রেখে আসবো। হারমোনিয়ামটা বিছানায় রেখে দেখছি আর ভাবছি প্রথম দিন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাওয়ার স্মৃতি। যেদিন খোকাবাবু প্রথম বারান্দায় এসে দাড়িয়ে ছিল। আমিও সেদিন তাকে প্রথম দেখে ছিলাম। হাবলির মতো হা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি আর সে খাইয়ালাইমু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ভাগ্যিস সেদিন সে হারমোনিয়ামসহ আমাকে খেয়ে ফেলেনি। আজকাল আমি এই সব ভেবে আনন্দ পাই কেনো সেটাই আমার মাথায় ঢুকে না। ছাদে বসে যেদিন গান গেয়ে ছিলাম সেদিন ঐ লাট সাহেবের যে মুখের করুণ হাল হয়ে ছিল তা চোখে ভেসে উঠছে। উফ্ এখনো তার মুখটা করুণ আকার ধারণ করলে আমার খুব খুশি লাগে। হারমোনিয়ামটা মুছতে মুছতে এসব ভেবে আমি একাই হাসছি। হঠাৎ দেখি লাট সাহেব অফিস থেকে ফিরে এসে রুমে ঢুকলো। আমার দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়লো হারমোনিয়ামের দিকে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ সে চিৎকার করে বললো-
__”তোমার আর কোনো কাজ নেই কা কা করা ছাড়া? দিন রাত আমাকে জ্বালানোর চুক্তি তোমাকে কে দিয়েছে? বলো কে দিয়েছে? কি চাও তুমি? আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাই এটাই চাও তো? ওকে।”
আমি হতবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলম। সে চিৎকার করে মাকে রুমে ডেকে আনলো। মা এ রুমে এসে ওর সামনে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। সীমান্ত বললো-
__”দেখো ভর সন্ধ্যে বেলায় এই মেয়েটা গান নিয়ে বসে আছে। যেনো অফিস থেকে ফিরে এসেই আমার মাইগ্রেন শুরু হয়। একটা সংসারী মেয়ে দেখে তো বিয়ে দিতে পারতে। আমি তো বলিনি যে আমি কখনো বিয়েই করবো না। বিয়ে তো করতামই। একটা ভালো মেয়ের সাথে তো বিয়ে দিতে পারতে। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে তুমি আম্মু। এই বাড়িটাকে আমার নরক মনে হয়। একদিন ঠিক আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কোথায় যাবো সে হদিস কেউ পাবে না, মনে রেখো।”
কথাটা গুলো একদমে বলে সে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। মা পিছু পিছু বাবু বাবু বলে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজা পর্যন্ত গেলেন। সীমান্ত পিছু ফিরে থাকালো না। আমি হা করে চেয়ে রইলাম। এমন একটা ঘটনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। আজকে কেনো জানি সীমান্তর এই রাগ দেখে আমার ঈদ ঈদ লাগছে না। তার কথা গুলো বার বার আমার কানে বাজছে আর কলিজাতে আঘাত লাগছে। আমি বুঝেই উঠতে পারছি না যে আমার এমন কেনো লাগছে।
এগারোটা পার হয়ে গেলেও সীমান্ত বাড়ি ফিরলো না। ওর ফোন বন্ধ, মা সেই থেকেই তাকে ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছেন। আজ নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে। এমন আসামী হয়ে এবাড়িতে থাকতে নিজের কাছেই ইতস্তত লাগছে। আমি মায়ের রুমে গিয়ে বললাম-
__”মা আমি আসছি।”
মা অবাক হয়ে বললেন-
__”আসছি মানে?”
__”আমি চাই না কেউ আমার জন্য নিজের ঘর ছাড়ুক,আমি এতটাও খারাপ মেয়ে নই। আমি চলে গেলেই সে ঘরে ফিরবে। তুমি আমাকে বাঁধা দিও না প্লিজ!”
__”আমার কথা শোন বর্ণ। যাসনা প্লিজ!”
মা পিছু ডাকলেন কিন্তু আমি পিছু ফিরে দেখলাম না। মায়া একটু একটু করে কেটে যাক।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


এত রাতে বেল বাজাচ্ছি, যুথী দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হলো। আমি কিছু না বলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু দরজায় নক করে বর্ণ বর্ণ বলে চিৎকার করতে শুরু করলো। আমি জানি যে আমার আম্মু পরিস্থিতি বুঝবে না। কোনো কালেও সে এসব বুঝেনি। এসব বুঝার অভ্যেস নেই তার। আমার যে কখনো কখনো একলা থাকতে ইচ্ছে করতে পারে সেই সাধারণ নলেজ টুকু তার নেই। দরজা না খোলা পর্যন্ত ননস্টপ সে দরজা ধাক্কিয়েই যাবে। এতে দরজা ভেঙে যায় যাক। নিরুপায় হয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখি আব্বু আর আম্মু উৎকন্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আম্মু বললো-
__”এত রাতে তুই একা এসেছিস, কি হয়েছে? সীমান্ত কোথায়?”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”সীমান্ত সীমান্তে গেছে। আমি কি লন্ডন থেকে আসছি যে একা আসা যাবে না? নাকি বডি গার্ড লাগবে আমাকে পৌছে দিতে? বিয়ে তো দিয়েছো পাশের বাড়িতে তাহলে একলা আসা নিয়ে এত দাফাদাফি করছো কেনো? নাকি আমাকে বাচ্চা মনে করছো? দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
__” এ ভাবে রিয়্যাক্ট করছিস কেনো? কি এমন বলেছি আমি? কি হয়েছে বলবি তো?”
__”বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলে বিয়ে দিয়েছো। এবার আমাকে একটু শান্তি দাও। নইলে কিন্তু গলায় ফাঁস দেবো। দোহাই লাগে যাও এখন।”
আম্মু আব্বু দাড়িয়েই থাকলো, আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম। নষ্ট এই পৃথিবীতে, নষ্ট সব কিছু। নষ্ট এই অনুভূতিও।

পরের দিন সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। দরজায় নক শুনে দরজা খুলেই দেখি মা দাড়িয়ে। আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলেন তিনি। তারপর বললেন-
__”বাড়ি ফিরে চল মা।”
__”মা আমায় তুমি ফিরতে বলো না। কেনো ফিরবো না তা আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না।”
__”বলতে হবে না। আমি সব বুঝি। এবার ফিরে চল।”
__”মা তুমি আমায় ক্ষমা করো প্লিজ! এই বিয়ের দায় আমি আর বহন করতে পারছি না। আমাদের আলাদা থাকাই বেটার।”
__”এসব তুই কি বলছিস বর্ণ?”
__”এটাই বাস্তব।”
অনেকক্ষণ ধরে নানা ভাবে মা আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মন খারাপ করে চলে গেলেন। মাকে এভাবে ফিরিয়ে দিতে সত্যিই আমার খুব কষ্ট হলো কিন্তু আমি তার ছেলের সামনে যেতে চাই না। চাই না আমার কারণে তার ঘর নরক হোক। সে ভালো থাকুক আমাকে ছাড়া। বিয়ে একটা মেয়ের ভেতর বাহিরটা বিস্ময়কর ভাবে বদলে দেয় যার হদিস কোনো পুরুষ জানতেই পারে না। হয়তো ঐ লাট সাহেবটাও কখনো এটা উপলব্ধি করতে পারবে না।

সীমান্তর উপর রাগ করে দু’দিন কেটে গেলো । তারপর রাগ পড়তে শুরু করলো। রাগ পড়ে যেতেই বিপত্তি ঘটলো। এর মধ্যে লাট সাহেব কোনো রকম যোগাযোগ করলো না আমার সাথে। সে হয়তো খুব শান্তিতেই আছে। তাকে জ্বালানোর জন্য তো বর্ণিতা নেই, শান্তিতে থাকারই কথা। কিন্তু রাগ পড়ে যাবার পর থেকে আমি তো শান্তিতে নেই। আমার আজকাল আর কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমার মন বেলকোণে পড়ে থাকে। কিন্তু আমি মনটাকে আটকে ঘরে রাখি। ছুটির দিনের বিকেলে আমার মনটা ছাদে যেতে চায়। হয়ত দেখতে চায় সেখানে কেউ একজন বই খুলে চেয়ার পেতে বসে আছে। আমি মনটাকে শেকলে আটকাই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা একটু সরিয়ে কারো অফিস যাওয়া দেখি। নিজের এমন ছ্যাচড়ামী দেখে নিজেই হতবাক হয়ে তাজ্জব বনে যাচ্ছি। অথচ সেই মানুষটার মনের কোনো হেলদোল নেই। স্বার্থপর একটা! আর এই মানুষটার সাথেই আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। এদের সবাইকে জেলে দেয়া উচিত।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১৬
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=923152611448792

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে