“বখাটে বউ”(পর্ব-১২)

0
2219

“বখাটে বউ”(পর্ব-১২)

খোকাবাবু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাঁচকলার ভয়ে দৌড়ে ডায়নিংএ বসলো। আমি নাস্তা করতে না গিয়ে আড়ালে দাড়িয়ে থাকলাম। আড়ালে দাড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি একটু পরে ধেড়ে বাবু অখাদ্য গুলোকে কিভাবে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে। আর সেটাই এনজয় করার জন্য আমি অপেক্ষারত। কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের আগমন, খোকাবাবুকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। এই তো খোকাবাবু পরোটা ছিড়লো, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সে পরোটার সাথে ডিম ভাজি ছিড়ে নেবে। ওহ্! সে ডিম ছিড়ে পরোটাতে নিলো এবার খুব দ্রুত সে পরোটা আর ডিমের টুকরো মুখে নেবে। কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এসে গেছে, ধেড়ে খোকা খাবার মুখে নিয়েছে। ইয়াহু!
খাবার মুখে নিতেই বাবুটার চোখ মুখ বিস্বাদ হয়ে গেলো। উফ্ কি দারুণ দেখাচ্ছে তাকে! আই লাভ ইউর বিস্বাদ মুখ ধেড়ে বাবু। সে মুখ কাচুমুচু করে মাকে বললো-
__”নাস্তা কে বানিয়েছে?”
মা একটু চমকে উঠে বললেন-
__”কেনো?”
__”এমন কুখাদ্য আমি জীবনেও মুখে নিইনি।”
__”বাবু রোজ খাবার টেস্টি নাও হতে পারে তাই এভাবে বলতে নেই।”
__”আমি শিওর এটা তোমার রান্না নয়।” আমি খোকাবাবুর পেছন দিকে দাড়িয়ে আছি। মা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। বাবুর কথা শুনে মা আমার দিকে তাকালেন। আমি করুণ মুখ করে দাড়িয়ে আছি। মা আশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম মা আমাকে খুশি করতে চাইছেন। তারপর তিনি বেশ কড়া গলায় বললেন-
__”এত কথা বললে কিন্তু কাঁচকলার ভর্তা খাওয়াবো। এর চেয়ে এই খাবারটাই বেটার মনে হয়।”
বাবু মুখটা করুণ দুখী দুখী করে বললো-
__”আম্মু দেখো পরোটা লবণে বিষ হয়ে আছে, ডিম ভাজিতে লবণ এক ফোটাও দেয়নি ইভেন পেঁয়াজ না দিয়ে শুধু মরিচ কুচি দেয়া। এত ঝাল অথচ লবণ দেয়া নেই একটুও। আর সবজিতে দেখো হলুদ ছাড়া কিছুই দেয়া নেই। না জানি অন্য খাবার গুলো কেমন অখাদ্য হয়েছে! মাংস মুখে নেয়ার তো সাহসই পাচ্ছি না। তুমিই বলো এসব খাওয়া যায়?”
__”পরোটাতে লবণ বেশি ডিমে লবণ নেই। ভালোই তো, দুটো একসাথে খেলে লবণ ঠিক লাগবে। খেতে শুরু কর।”
__”ওহ নো! আমি নাস্তাই করবো না।”
মা আবার আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম তিনি খুব বিপদে পড়েছেন। একদিকে নিজের ছেলে, আরেক দিকে আমি। কার মন রক্ষা করবেন তিনি!
__”তুই নাস্তা না করলে আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাবো বাবু।”
মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে ধেড়ে বাবু ওসব কুখাদ্য খাওয়া শুরু করলো। ঝালে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। উফ্ ফর্সা ছেলেটাকে লাল লাল দেখতে হেব্বি লাগছে। এসো বাবু তোমার কপালের কোণে একটা নজর কাজল লাগিয়ে দিই। এমন টমেটো মার্কা লাল মুখ দেখে যেনো কারো নজর না লেগে যায়। ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি বের হচ্ছে। অবশেষে সে সব খাবার খেতে পারলো না। আসলে অমন কুখাদ্য সব খাওয়া পসিবলও নয়। আহ্ কি যে শান্তি লাগছে আমার যা প্রকাশ করতে পারছি না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ওর খাওয়া শেষ হবার আগেই আমি দৌড়ে রুমে এসে ব্যস্ত থাকার ভঙ্গিতে বেড গোছাতে শুরু করলাম। খাওয়া শেষে সে ঝালে হা করে রুমে ঢুকলো। সে হা করে মুখে হাওয়া নিতে নিতে আমার পেছনে দাড়িয়ে বললো-
__”আমার আম্মুকে পটিয়ে আমাকে জব্দ করছেন তাই না?”
আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে অবাক হবার ভান করলাম। যেনো এই সব কিচ্ছু আমি জানি না। অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম-
__”মানে?”
সে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো-
__”ওসব অখাদ্য কুখাদ্য আপনি ছাড়া যে কেউ রান্না করতে পারে না তা আমি খুব ভালো করেই জানি।”
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__”আমি ওসব রান্না করতে কেনো যাবো? আর আপনার জন্য রাঁধতে আমার বয়েই গেছে হুহ।”
__”দেখলাম তো যে কতটা বয়ে গেছে।”
__”নিজেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ কেনো ভাবছেন?”
__”উহু, আপনি বরং আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন তাই তো আমার পেছনে পড়ে আছেন। যাই করুন না কেনো, সীমান্ত আপনাকে পাত্তা দেবে না।”
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম-
__”আহা পাগলের সুখ মনে মনে। কে আপনার পাত্তা চাইছে হুম?”
সে আমার সামনে দাড়িয়ে তার মুখটা ঝুকিয়ে আমার মুখোমুখি এনে বললো-
__”অবর্ণিতা চাইছে।”
আমি হাহা করে হেসে বললাম-
__”আপনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে বর্ণিতা পাগলি হয়ে গাছে উঠে বলছে আই লাভ ইউ বাবুতা, আই লাভ ইউ বাবুতা।”
সে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো-
__”এ্যানি টাইম আপনি গাছে উঠতেই পারেন। আপনার মতো বখাটে গুন্ডীকে কোনো বিশ্বাস নেই।”
__”শুনুন ধেড়ে খোকা, এই সব প্রেম পীরিতি আমার আসে না তাই এসব হুদাই ভাববেন না।”
__”ভাবতে তো বাধ্য করছেন।”
মনে মনে কত কি ভেবে রেখেছে বান্দর ছেলে। ইফটিজিংকে অনায়াসে প্রেম ভেবে নিয়েছে, ভাবা যায়! আমি ওর কথাতে পাত্তা না দিয়ে গান গাইতে শুরু করলাম।
“ঝাল লেগেছে আমার ঝাল লেগেছে
ঝালে মরে যাই আমি ঝালে মরে যাই..”
উফ্ হারমোনিয়াম ছাড়া গান জমছে না তো। আমার গান শুনে সে খাইয়ালাইমু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি চোখ মেরে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। রুমে বসে বসে ঝাল খাইয়ালাও বাবু।

বিকেলে ছাদে উঠে হঠাৎ মনে হলো বাপের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসি। আর হারমোনিয়ামটাও নিয়ে আসি। ঘরে বসে একটু ইফটিজিং করবো। পাশাপাশি ছাদ তাই লাফ দিয়েই বাপের বাড়ির ছাদে চলে গেলাম। ছাদ থেকে ডায়নিংএ নামতেই দেখি আব্বু হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন করে তাকিয়ে আছে যেনো সে বর্ণিতার আত্মা দেখছে। আব্বুর সামনে দাড়িয়ে বললাম-
__”আব্বু এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো?”
__”তুই সদর দরজা দিয়ে না ঢুকে ছাদ দিয়ে এলি কেনো?”
__”পাশের বাড়িতে বিয়ে হলে এমন বিস্ময়কর ঘটনা তো ঘটবেই আব্বু।”
আব্বু হা হা করে হেসে বললেন-
__”তা বাবুটা কেমন আছে? লাঠি দিয়ে আবার তাকে পিটাসনি তো?”
গতরাতের ভুতের ঘটনা মনে পড়লো। মনে পড়ে লজ্জাও লাগলো আবার রাগও হলো। বললাম-
__”সে একটা মহাফাজিল ছেলে। উপরে নিরিহ সেজে থাকে। ভেতরে ভেতরে সেও বখাটে।”
আব্বু চোখ কপালে তুলে বললেন-
__”কেনো সে কি করেছে?”
সে যা করেছে, ওসব তো আর বলা যায় না। হালকা লজ্জা মেয়েদের রাখা উচিত। তাই ঢেকেই রাখলাম। বললাম-
__”সে অনেক কথা, পরে বলবো।”
আব্বু মুচকি হেসে বললেন-
__”হুম। গভীর ব্যাপার স্যাপার মনে হচ্ছে।”
আমি প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম-
__”আমি হারমোনিয়ামটা নিয়ে যাবো।”
আব্বু চোখ কপালে তুলে বললেন-
__”তুই শ্বশুরবাড়িতেও গান গাইবি?”
__”হ্যাঁ গাইবো। সঙ্গীত শীল্পিরা সবখানেই গান গাইতে পারে।”
আব্বু আমার কথা শুনে মুখ কাচুমুচু করে বললেন-
__”এটা তুই একদম ঠিক বলেছিস। কিন্তু অমন গান বিয়ের পরে আর না গাইলে হয় না মা?”
__”আব্বু তুমি নিজেও একজন সঙ্গীত শীল্পি হয়ে এমন কথা বলছো কি করে?”
আব্বু ভয়ে ভয়ে বললেন-
__”না মানে, আমার গান শুনে তোর মা তো বাপের বাড়ি চলে গেছিল যদি সীমান্তও নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তাই বলছিলাম…..”
__”আমি তো সেটাই চাই। ঐ বুইড়া বাবুটা আমাকে ছেড়ে চলে যাক। তাই গান গেয়ে ওর কান ঝাঝরা করবো।”
__”স্বামীর সাথে এমন করতে নেই মা।”
__”আমি তো এই বিয়েটাই মানি না। কিসের স্বামী সে? তুমি ওর হয়ে একদম উকালতি করবে না।”
__”আচ্ছা আর কিছু বলবো না।”
__”আমি গান গাওয়ার সময় তোমাকে ডাকবো। তুমি আমার ঘরের বেলকোণ বারান্দায় বসে তবলা বাজাবে।”
আব্বু চোখ কপালে তুলে বললেন-
__”আমি তবলা বাজাবো?”
__”তো কি আম্মু বাজাবে?”
__”বলে দেখ সে যদি বাজায় তাহলে তো আমি বেঁচে যাবো।”
আমি রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললাম-
__”জোর করে বিয়ে দিয়েছো আর এখন এসব বাহানা করছো? তবলা তোমাকেই বাজাতে হবে। নইলে দুই বাড়িতেই আমি প্রলয় ঘটাবো বলে দিলাম।”
আব্বু আমার কথা শুনে ভড়কে গিয়ে বললেন-
__”প্রলয় ঘটাতে হবে না। আমি তবলা বাজাবো তো। বুঝলি বর্ণ আমার তবলা বাজাতে কি যে ভালো লাগে!”
আব্বুর কথা শুনে খুব হাসি পেলো কিন্তু হাসি চাপিয়ে রাখলাম। এখন হাসলে সব গুবলেট হয়ে যাবে। আমি মুখটাকে গম্ভীর করে বললাম-
__”রেডি থেকো, আমি এখন যাচ্ছি।”
__”এক কাপ চা খেয়ে তো যেতে পারতি!”
হঠাৎ আমার মনে হলো, আমার আওয়াজ শুনেও আম্মু আসেনি। কেউ আমাকে সম্মান করে না। বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে। এসব ভেবে খুব রাগ হলো। বললাম-
__”এতক্ষণ ধরে বসে আছি, কেউ আমার খবর নিয়েছে? লাগবে না তোমাদের বাড়ির চা আমার।”
__”রাগ করিস না মা। কেউ হয়তো তোর আওয়াজ শুনতেই পায়নি।”
__”তুমি কবে থেকে আম্মুর উকিল হলে?”
__”হইনি তো! একদম উকিল হইনি। আমি তো কখনো ল্য পড়িইনি, উকিল কি করে হবো?”
আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-
__”ফাজলামি রাখো আব্বু। আসল কথা হলো আমাকে তোমরা তাড়িয়ে দিয়েছো। একটাই মেয়ে আমি তোমাদের আর তোমরা আমার গলায় একটা বান্দর ঝুলিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছো।”

আব্বু আসামীর মতো করুণ মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

পরের পর্ব আগামীকাল…
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১১
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=916697958760924

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে