#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৯+১০
“খাওয়া দাওয়া শেষে আবির ভাইয়া চলে গেলো অফিসে।”
“রাত ১১ টাই আব্বু আর রাত ভাইয়া বাসায় ফিরলো। ভাইয়া এসেই আমাকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো এক্সাম কেমন হলো? ঠিক ভাবে বাসায় এসেছি কিনা। খেয়েছি কিনা। আমার একটাই উত্তর হ্যাঁ। ”
“৪ দিন পর এক্সাম শেষ তাই কলেজ বন্ধ দিয়েছে ৬ দিনের। তাই আমি আজ সোমবার দিনেও বাসায় রয়ে গেলাম। আব্বু ভাইয়া অফিস এ যাইনি আজ।কিন্তু কেনো যাইনি সেটা আমি জানিনা। তো ওইদিন ১১ টার দিকে রায়াফ টিভিতে কার্টুন এর পরে গান ছেড়ে দিলো। মে বি ভুলে চ্যানেল চলে এসেছে ও গান বাজানোর ছেলে না। তাই আমি গানের তালে তালে নাচতে নাচতে রুম থেকে বের হলাম। নাচতেই আছি আমি, আমার চারদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে। তার খেয়াল নেই। আমি আমার মতো হেলেদুলে গুনগুন করছি আর নাচছি। যখন লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে নাচছিলাম হটাৎ চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে সোফায় বসে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে কে দেখে আমি রীতি মতো অবাক হয়ে গেলাম। হ্যাঁ সে আর কেও নয় আমাদের আবির ভাইয়া। আমি আর এক মুহূর্ত ও সেখানে দাঁড়ালাম না। এক দৌড়ে রুমে এসে হাঁপাতে থাকলাম দরজা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পরলাম। ”
“১০ মিনিট পর আম্মু ডাক দিলো। কিরে রাত্রি এদিকে আই তোর ভাইয়া ডাকছে।”
“আসছি আম্মু। বলেই তাড়াতাড়ি লিভিং রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আভা আপু আবির ভাইয়া রাত ভাইয়া বসে আছে। হুম ভাইয়া ডাকছিলে তুমি আমায়।”
“হ্যাঁ দ্রুত রেডি হয়ে নে। আমার দিকে তাকিয়ে খুব তাড়া দিয়ে বলল রাত ভাইয়া।”
“কিন্তু কেনো কোথায় যাবো এই সময়ে। ব্রু কুচকে ঝুকে বললাম।”
“শপিং এ যাবি। আভা আর রাত এর বিয়ের শপিং হবে আজ। তাই তোরা যাবি। রায়াফ ও যাবে। আম্মু বলল।”
“আমি গিয়ে কি করবো আম্মু থাক না। ”
“তোকে এতো কথা বলতে বলেছে কে হুম! যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। গো ফাস্ট। ধমক দিয়ে বলল রাত ভাইয়া। এটা কি মানা যায়। সবার সামনে ধমক দিলো যে ! আমার কি একটু সম্মান বোধ আছেনা নাকি! ”
“আর কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে চট করে ফ্রেশ হয়ে একটা রেড কালার গাউন পড়ে নিলাম। চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। ব্যস! হয়ে গেলো আমার সাজগুজ। স্নো পাউডার লিপস্টিক কাজল এসব আমার ভালো লাগেনা একদম। তারপর উড়না টা মাথায় দিয়ে গায়ে দিলাম। লিভিং রুমে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম তারপর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম শপিং এর উদ্দেশ্যে। ”
“একটা দোকানে গিয়ে সবাই বসলাম। আভা আপু দোকানী কে বলল, লেহেঙ্গা দেখাতে + শাড়ি। তারপর লোকটা অনেক ক্যাটালক দেখালো সেখান থেকে ৫ টা লেহেঙ্গা আর ৩ টা শাড়ি বের করা হলো। এই রাত্রি দেখো তোমার কাছে কোনটা ভালো লাগে। আভা আপ্য বলল।”
“আপু তোমার চয়েজ বেস্ট। তাই তুমিই পছন্দ করো। যেহেতু এটা তোমার তাই তোমার পছন্দ টাই শ্রেয়। আর রাত ভাইয়া আছে আবির ভাইয়া আছে তাদের জিজ্ঞাসা করে নিতে পারো। ”
“তারপর আভা আপুর পছন্দ অনুযায়ী হ’ট মেরুন কালার লেহেঙ্গা নিলো বিয়ের জন্য আর রিসেপশন এর জন্য শাড়ি নিলো। ”
“রাত্রি এবার তোমার পালা চয়েজ করো কি নিবে। আভা আপু বলল।”
“হুম পছন্দ হলে এখান থেকেই নিয়ে নে। না হলে বল অন্য কোথাও যাই। রাত ভাইয়া বলল।”
“ভ ভাইয়া আমার কিছু লাগবেনা। আমার তো সব কিছুই আছে বাসায়। এতো কেনাকাটা করে আমি কি করবো।”
“আরে আপু নিয়ে নাও তো। দেরি করবেনা একদম তোমাদের মেয়েদের নিয়ে শপিং এ আসলেই ড্রামা কুইন এর মতো নাটক শুরু করো। রায়াফ বলল।”
“রেগে রায়াফ এর দিকে তাকিয়ে বললাম নিবোনা কিছু আমি। বাসায় যাবো এক্ষুনি নিয়ে যাও বাসায় নইলে আমি চলে যাই৷ হটাৎ রাগ কেনো হলো আমার জানা নেই। ”
“রাত্রি রায়াফ একদম সিনক্রিয়েট করবিনা এটা শপিংমল। তোদের বাসা নয় ঠিক আছে। রাত ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলল।”
“তারপর আমি একটা হ’ট পিংক কালার এর স্টোন ওয়ার্ক এর পার্টি লেহেঙ্গা নিলাম। আর হলুদ প্রোগ্রাম এর জন্য একটা শাড়ি নিয়েছি। ২ টা গাউন নিয়েছি সিম্পল। ”
“তারপর রাত ভাইয়া আবির ভাইয়া আর রায়াফ এর কেনাকাটাও হলো। দেন আমরা জুয়েলারি শপ এ গেলাম। গোল্ড এর কিছু নেওয়া হবেনা কারন আম্মু তার বউমার জন্য আগেই কিনে নিয়েছে। তারপর আমরা ব্রাইডাল কিছু জুয়েলারি কিনে নিলাম৷ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। আবির ভাইয়া বলল, রাত আমি একটু আসছি তুই ওদের নিয়ে লাস্ট ফ্লোর এ রেস্টুরেন্টে যা। বলেই আবির ভাইয়া কোথায় একটা গেলো। ”
“বিকাল ৪ঃ২৫ মিনিট বেজে গেছে। একেই বলে মেয়ে জাতি আর কি। শপিং এ গেলে কয়েক ঘন্টা তো লাগাবেই। দুপুরের সময় পেরিয়ে গেছে খুব খুদাও লেগেছে তাই আমরা আবির ভাইয়ার কথা মতো লাস্ট ফ্লোর এ রেস্টুরেন্টে গিয়ে ৬ নাম্বার টেবিল এর বসলাম। বেশ খানিক্ষন পর আবির ভাইয়া এলো। তারপর রাত ভাইয়া ওয়েটার কে ডেকে বিরিয়ানি অর্ডার দিলো। খাবার শেষে বাসায় পৌঁছে গেলাম সবাই। তারপর কিছুক্ষন রেস্ট নিলো সবাই। আভা আপুরা চলে যাবে বলছে। আবির ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার রুমে আসলো তারপর আমার হাতে ৩ টা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল, সরি! নাও এগুলো তোমার জন্য। জানিনা তোমার পছন্দ হবে কিনা। ইচ্ছে হলে পড়বে নইতো রেখে দিয়ো বা ফেলে দিও তোমার ইচ্ছা। ”
“আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি। বলে কি। আমার জন্য গিফট তাও আবির ভাইয়া দিচ্ছে৷ এটা তো মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি এমন অবস্থা। ভেবেই মনে মনে হাসলাম। তাই ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে বললাম, ধন্যবাদ! আর হ্যাঁ বড় ভাইয়া হিসেবে ছোট বোন কে নিজ পছন্দ করে দিয়েছেন যদিও এটা খা’রাপ বা বা’জে কিছু হয় তাও এটা সুন্দর এবং ভালো আমার জন্য। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না।”
“কি?”
“আপনি যে আমায় গিফট গুলো দিলেন সেটা কি আপনার জি এফ জানে? না মানে ওনি তো জানলে রাগ করবেন তাই না। ”
“সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। তারপর ক্ষীন সুরে বললেন স্টুপিড গার্ল।”
“ভাইয়া কিছু বললেন।”
“না কিছু বলিনি আসছি। ভালো থেকো আবার দেখা হবে। বলেই ভাইয়া প্রস্থান করলেন।”
“আমি আর কিছু বলার সময় পেলাম না তার আগেই হাওয়া হয়ে গেলো।”
“দেখতে দেখতে চলে এলো ভাইয়ার হলুদ সন্ধ্যা। আস্তে আস্তে বাসায় মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে। আমার কাজিনরা সবাই এসেছে। সবার সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছি। ”
“দুই পরিবার এর সিদ্ধান্ত হয়েছে একই কমিউনিটি সেন্টার এ অনুষ্ঠান হবে দুজনের। তাই আমার সব কাজিনরা মিলে পার্লারে চলে গেছে। কিন্তু আমি যাইনি কারন আমি নিজেই সাজবো। পার্লার এর এতো ঘি মাখন আমি মুখে দিতে পারবোনা। তাই নিজেই সাজতে বসে গেলাম। এখন বাসায় শুধু আমি আম্মু আর খালামনি আছি। বাকিরা সবাই হইতো সেন্টারে চলে গেছে। শাড়ি পড়তে পারিনা তাই খালামনি পড়িয়ে দিয়েছে। তারপর একদম সিম্পল সাজে সজ্জিত হলাম। স্নো পাউডার আর লিপস্টিক। হাতে হলুদ শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ব্রাইডাল চুরি পড়েছি। গলায় কানে স্টোন ওয়ার্ক জুয়েলারি সিম্পল । চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। সাজ কমপ্লিট। তারপর লিভিং রুমে আসলাম। খালামনি আম্মু আমাকে দেখে চুমু দিলো দুইজন এ। তারপর আমরা গাড়িতে করে রওনা দিলাম সেন্টার এর উদ্দেশ্যে। ২০ মিনিট এর পথ।”
“ওইদিকে আবির, এই মেয়ে এতো কিসের সাজ গুজ করছে। দেখায় পাচ্ছিনা, ভাবা যায় কতোটা সাজতেছে। এতোক্ষন লাগে আসতে। একাধারে কথা গুলো বলেই চলেছে আবির ভাইয়া। ”
“এরই মাঝে পার্লার থেকে আগমন ঘটলো রাত্রির কাজিন এর সাথে রাত্রি বেস্টু ইতি ও আছে।আভা আপুর কাজিনরাও চলে এসেছে ইতিমধ্যে। সবাই হাসি খুশি হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদেরই বিয়ে। ”
“ওইদিকে ফয়সাল, এই রাত্রি টা আবার কই গেলো। সবাই এলো ও এখনো এলোনা যে৷ না জানি কত খানি আটা ময়দা মাখিয়ে আসছে। ”
“এরই মাঝে রাত্রি সেন্টারে প্রবেশ করলো। হুট করে রাত্রিকে কেও অন্যদিকে নিয়ে গেলো। রাত্রি চিৎকার করার আগেই বলে উঠলো, চুপ করো চিৎকার করবেনা। আমি ভূ’ত বা গু’ন্ডা মাস্তান নয় যে তোমাকে নিয়ে যাবো স্টুপিড মেয়ে। ”
“আবির ভাইয়া আপনি এভাবে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো আমাকে। কেও দেখলে কি ভাববে৷ কতো লোকজন এখানে দেখেছেনই তো ছাড়ুন প্লীজ।আমাকে যেতে দিন। ”
“যেতে তো দিবোই। তার আগে বলো এতো লেইট করলে কেনো। কতক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম খেয়াল আছে তোমার।”
“আশ্চর্য! আপনি অপেক্ষা করতে যাবেন কেনো। আচ্ছা আপনার জি এফ আসে নাই। তাকে ইনভাইট করেন নাই।”
“স্টপ ননসেন্স! সব সময় এতো জি এফ জি এফ কেনো করো হুম! ”
“রেগে যান কেনো ভুল কিছু বলেছি?”
“না তুমি একদম ভুল করতেই পারোনা। আচ্ছা সরি ফর ইউ। নাও গো টু সেন্টার স্টেজ রুম। বাই দ্যা ওয়ে। খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। ”
“এতোক্ষনে রাত্রি আবিরকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত। হাতা ফোল্ড করা। হাতে ঘড়ি। চুল গুলো স্পাইক করা। বেশ হ্যান্ডসাল লাগছে আজ আবিরকে। রাত্রি নিম্ন সুরে বলল, ভাইয়া আপনাকেও খুব সুন্দর লাগছে। আপনার জি এফ আজ আপনাকে দেখলে সত্যি সত্যি হার্ট অ্যাটাক করবে। বলেই ঠোঁট চওড়া করে হাসলাম৷ তারপর সেখান থেকে চলে এলাম।”
“হুহ! আসছে বলতে জি এফ হার্ট অ্যাটাক করবে। ও যে নিজেই সেটা করেছে সেটা আমি জানিনা। যতই লুকানোর চেষ্টা করো পাখি আমার থেকে লুকাতে পারবেনা। আমি যে তোমার মনের ভাষা গুলো পড়তে পারি। আর তোমার চোখে আমার প্রতি মায়া ভরা আকর্ষণ টা যে আমি দেখতে পাই। কথা গুলো বলেই আবির ভাইয়া স্টেজ এর কাছে চলে গেলো।”
“আভা আপু আর রাত ভাইয়া কে একসাথে স্টেজে বসানো হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে দুজনকে। তাদের দুজনের ঠোঁটেই লেগে আছে মিষ্টি হাসি। হ্যাঁ এটা পরিপূর্ণতার হাসি। তাদের ভালোবাসা সারা জীবনের জন্য পরিপূর্ণতা পাবে কাল। তাদের তো খুশি থাকারই কথা তাই না। ”
“রায়াফ কে দেখছিনা অনেক্ষন যাবৎ। খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখি রায়াফ আবির ভাইয়া এক কাজিন এর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা ছোটই বেশি বড় না। ৭-৮ বছর হবে মনে হয়। এই ভাই তুই এখানে কি করছিস। চল আমার সাথে। ”
“আরে আপু তুমি কখন এলে। যাও আমি আসছি এক্ষুনি। দেখছোনা ভাইয়ার মতো সেটিং করার চেষ্টা করছি। দাঁত বের করে হাসলো রায়াফ।”
“ভাইয়ার থাপ্পর খাওয়ার শখ হয়েছে তাই না। তার আগে আমার টা খেয়ে নে দাঁড়া। বলেই দৌড়াতে লাগলাম রায়াফ ও ছুটতে লাগলো।”
“একটা সময় হাপিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।”
❝হেই রাত্রি হাউ আর ইউ? ”
“পেছন ঘুরে দেখি ফয়সাল ভাইয়া। জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?”
“হুম ভালো তো কোথায় ছিলে এতোক্ষন। ”
“বাসা থেকে আসছি।”
“রাত্রি এইদিকে কি করছিস চল না ওইদিকে। ইতি এসে বলল।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ চল। বলেই ইতির হাত ধরে রাত্রি চলে গেলো।”
“হাড্ডি আর আসার সময় পেলিনা। ফয়সাল বলল। ”
“ইতি হটাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে হা করে রইলো। যেনো এই মুহূর্তে একে আশা করেনি।”
“কিরে ইতি কি হয়েছে। ”
“ইতি বলল, ইরফান তুমি এখানে। ব্রু কুচকে বলল।”
“হুম বন্ধুর বোনের হলুদ সন্ধ্যা আর আমি আসবোনা তাই কখনো হয় নাকি। কিন্তু তুমি এখানে।”
“সেইম টু ইউর এন্সার।”
“ওহ রিয়েলি। কই আগে জানাওনি কেনো। ”
“এমনি। ”
“কিরে ইতি ওনি কে। ”
“এটাই ইরফান আমার বি এফ।”
“তারপর রাত্রি ইরফান এর সাথে কথা বলল কিছুক্ষন। এরই মাঝে সেখানে আবির এলো। কি হয়েছে তুই এখানে কি করছিস ইরফান। আর তোমরা কি করছো। এনি প্রবলেম।”
“না ভাইয়া আসলে ওনি আমার বেস্টুর বি এফ এই মাত্র পরিচিত হইলাম তাই কথা বলছি আর কি। রাত্রি বলল।”
“অবাক হয়ে আবির কিছুক্ষন তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝার চেষ্টা করলো। তারপর বলল, ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। আচ্ছা দেট’স ফাইন চলো।”
“তারপর স্টেজে এর সামনে চলে এলাম। স্পিকারে ডি যে গান বাজছে কয়েকটা ছেলে মেয়ে নাচ করছে বিভিন্ন গানে। রায়াফ ও নাচছে। আমি যখনই নাচতে যাবো কেও একজন আমার হাত ধরে হেচকা টান দিলো। কিছুটা ব্যথা অনুভব করে বলে উঠলাম আহ। কে রে এইভাবে টানে।”
“হেই স্টপ দিজ স্টুপিড গার্ল! কোথায় যাচ্ছিলে।”
“আবির ভাইয়া আবারও আপনি! মুখ টা চুপসে বললাম। আমিতো নাচতে যাচ্ছিলাম। দেখি ছাড়ুন আমি নাচবো এভাবে হুট করে আমাকে ধরবেন না তো আমি ভয় পাই। আর এখানে কেও দেখে ফেলবে তো ছাড়ুন।”
“এখানে বিভিন্ন রঙে রঙ্গিন লাইটিং ডিজে লাইটিং চলছে এখানে যে যার মতো চলাফেরা করছে তাই কেও আমাদের দেখায় ব্যস্ত নয়। আর হ্যাঁ কি বললে তুমি নাচবে! হবেনা! তুমি নাচতে পারবেনা। ”
“কিন্তু কেনো। মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললাম।”
“আবির ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে বলল, নাচবেনা বলেছি নাচবেনা। ইট’স মাই অর্ডার। নেক্সট আবার জিজ্ঞাসা কেনো কেনো করলে ছুঁড়ে ফেলে দিবো নিচ ফ্লোর এ।”
“ভাইয়া! আপনি এমন করতে পারেন না। অভি’শাপ দিলাম আপনার বউ আন রোমান্টিক হবে। বেশ জোরেই বললাম।”
“আবির ভাইয়া ঘাড় বাকিয়ে তাকালো আমার দিকে আর বলল, কী বললে।”
“যা শুনেছেন তাই বলেছি। দামি কথা দুইবার বলা যায়না। ”
“আমার কথা আমাকেই শুনাচ্ছো বাহ বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি। একদম চুপ চাপ এখানে দাঁড়িয়ে সব কিছু উপভোগ করো। ”
“আমি আর কি করবো। কারও কথার অবাধ্য একটু কমই হয় তাই চুপ চাপ আবির ভাইয়ার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলাম। আর সবার নাচ দেখতে দেখতে মনটা খারাপ করতে লাগলাম।”
“পাগলি মেয়ে দেখো মুখটা কি রকম করে রেখেছে। এতো শখ কেনো সবাইকে নেচে দেখানোর। আগে বিয়ে করে নেই তারপর আমাকে দেখিয়ে নেচো। দেখবো কত নাচতে পারো। মনে মনে কথা গুলো বলল আবির রাত্রির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে।”
“খাবার সময় হয়ে গেছে সবাই খাবার খেতে চলে যাচ্ছে এক গুচ্ছ করে। অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পর্যায়ে চলে এসেছে তাও আমার আর আভা আপুর কাজিনদের নাচা নাচি শেষ হচ্ছেনা। ”
“অনেক রাতে আমরা বাসায় ফিরেছি। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।”
“সকাল বেলা আবারও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো বিয়ের। চারিদিকে হই হুল্লোর পড়ে গেছে। ছোট ছেলে মেয়ে গুলো খেলছে। রায়াফ ও তাদের সাথে খেলছে। আমাকে ভুলেই গেছে আমার ভাই টা। ”
“আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নাস্তা করে নিলাম। তারপর কাজিনদের সাথে লিভিং রুমে বসে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম। তারপর শাওয়ার নিয়ে এলাম। এতোক্ষনে ১২ টা বেজে গেছে। সেন্টার এ আমাদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই মেয়েরা এক এক করে রেডি হয়ে গাড়ি করে সেন্টারে চলে যাচ্ছে। আমিও রেডি হয়ে নিবো আলমিরা খুলে দেখছি কি পড়বো। তখনই আবির ভাইয়ার দেওয়া গিফট গুলোর কথা মনে হলো ওনি কি দিয়েছেন সেটাই তো আমার দেখা হয়নি। আগে দেখে নেই এগুলো কি। যেই ভাবা সেই কাজ ব্যাগ গুলো খুলে বেডে রাখলাম। তারপর ব্যাগ থেকে জিনিস গুলো খুলে খুব খুশি হলাম। অনেক সুন্দর একটা শাড়ি বেবি পিংক কালার জামদানী শাড়ি। আরেকটা ব্যাগ এ পার্টি শাড়ি অরগাঞ্জা। আরেকটা তে কিছু অর্নামেন্টস। বেশ ভালো লাগলো এগুলো দেখে। ঠোঁট আনমনেই হাসি খেলে গেলো আমার। তাই আর বেশি দেরি না করে খালামনিকে ডেকে জামদানী শাড়িটা পড়ে নিলাম। তারপর মেচিং সেজে গুজে অর্নামেন্টস গুলো পড়ে নিলাম। চুল গুলো খোপা করে নিলাম। আবির ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। কিন্তু এই পছন্দ করা জিনিস গুলো যদি সব সময় পাওয়ার অধিকার থাকতো কতোই না ভালো হতো। কিন্তু এগুলো তো এখন অন্য কেও পাবে। ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এরই মাঝে আম্মু ডাকলো কিরে রাত্রি তোর হলো।”
“হ্যাঁ আম্মু আসছি। একটু দাঁড়াও। বলেই তাড়াতাড়ি চলে গেলাম। তারপর একটু দেরি হলো গাড়ি আসতে। অবশেষে সেন্টারে পৌঁছাতে পারলাম। চোখ দুটো আজ বড্ড অস্থির আর বেহায়া হয়ে যাচ্ছে, কাওকে দেখার জন্য, কিন্তু তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিনা কোথায় আছে। ভাবছেন কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। হ্যাঁ অন্য কেও নয় আবির ভাইয়া কে খুঁজে বেড়াচ্ছি। তখনই পেছন থেকে কেও বলে উঠলো, কি এদিক ওদিক কি দেখছো কাওকে খুঁজছিলে নাকি।”
“চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালাম। আ আবির ভাইয়া আপনি! ক কই কাওকে খুঁজছিনা তো। এমনিতেই হাঁটছি আর কি।”
“ওহ আচ্ছা তাই বলো। খুব সুন্দর লাগছে। এতোটা না সাজলেও পারতে। অন্য দিকে তাকিয়ে বলল আবির ভাইয়া।”
“ম মানে। কই আমি সেজেছি এতো টুকু তেই বলছেন বেশি সেজে ফেলেছি আর বাকীদের মতো সাজলে কি বলতেন।”
“যেটা বলার সেটাই বলতাম। সাদা বিড়াল আর কি। এমনিতেই তুমি সাদা বিড়াল তার উপর যদি আটা ময়দা মাখাও আরও বেশি লাগবে আর কি।”
“এইভাবে অপমান করা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু।”
“আচ্ছা বাবা সরি। শুনো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আমি যাবো আর আসবো। জাস্ট ৫ মিনিট দাঁড়াও।তারপর আবির ভাইয়া কোথায় যেনো একটা চলে গেলো। ”
“আজকেও আবির ভাইয়া কে সুন্দর লাগছে আমার থেকেও বেশি। গোল্ডেন কালার পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে। আমার যে লু’চ্চা কাজিনরা আছে ওরা তো আবির ভাইয়া কে নিয়ে অলরেডি মাতাল হয়ে পড়েছে কালই। এটা ওটা অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। কিন্তু আমি না শুনার ভান করে এড়িয়ে গেছি। ”
“দীর্ঘ ১০ মিনিট পর ফিরে আসলো। সরি সরি একটু লেইট হয়ে গেলো। দেখি ওদিক ফিরো। ”
“কেনো।”
“এতো কেনো কেনো করো কে সব কিছুতে। ফিরো ওদিকে স্টুপিড মেয়ে। ”
“সব সময় খালি স্টুপিড বলেন। আপনার বউ স্টুপিড আপনি স্টুপিড আপনার দাদা দাদী স্টুপিড। ”
“আচ্ছা বাবা সব কিছু আমার এবার তো ফিরো।”
“তারপর আমি ওদিকে ফিরে দাঁড়ালাম। আবির ভাইয়া আমার খোপায় একটা বেলী ফুলের গাজরা পড়িয়ে দিলো। আমার চুল থেকে একটা ক্লিপ খুলে সেটা আটকে দিলো। ”
“ব্যস এবার আমার দিকে তাকাও।”
“ওনার দিকে ফিরে তাকালাম ওনি বললেন, হুম এখন পার্ফেক্ট লাগছে। যাও এবার কোথায় যাচ্ছিলে। আর হ্যাঁ এদিক ওদিক বেশি হাঁটা হাঁটি করবেনা। এক যায়গায় বসে থাকবে। নইলে পা ভেঙ্গে দিবো।”
“আমি আর কথা বাড়ায়নি। জানি এসব রাত ভাইয়া শিখিয়ে দিয়েছে। যদি না শুনি আমাকে আবার ধোলাই করবে।”
#চলবে