#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৭+৮
“বাইরে চলে এসেছি তাতে আপনার কি হয়েছে পঁচা ডিম ভাই। ”
“হুয়াট! কাকে কি বলছো তুমি রাত্রি। পঁচা ডিম ভাই আবার কে।”
“কে আবার আপনি।”
“খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”
“ধুর মিয়া যান তো। খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঢং করতে আসছে ন্যাকা। ভেঙিয়ে বললাম।”
“আচ্ছা আমি পঁচা ডিম মেনে নিলাম। কিন্তু তাও প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করে নাও। ফয়সাল ভাইয়া আমার কানে কানে বলল রায়াফ যেনো না শুনে।”
“এই এই একদম আমার আপুর কাছে আসবেন না। কি বলছেন ফিস ফিস করে হুম। আমি কিন্তু রাত ভাইয়া কে নিয়ে এসে বিচার দিবো।”
“ওফ সালা বাবু এতো জেদি কেনো তুমি। দেখছোনা তোমার আপুর সাথে গল্প করছি। এর মধ্যে বড় ভাই দের টানছো কেনো। ”
“এই এই কি বললেন আমার ভাই আপনার সালা হলো কবে থেকে হুম। দুই হাত কোমরে রেখে রাগ দেখিয়ে বললাম। ”
“য’বে থেকে তোমাকে দেখেছি তবে থেকেই ও আমার সালা। আর কি জানো তো ভাগ্য করে দুইটা ভাই পাইছো মাইরি। দুইটাই মাঝ খানে দেয়াল হয়ে থাকে। ”
“একদম আমার ভাই দের নিয়ে কথা বলবেন না কিন্তু মে’রে নাক ফাটিয়ে দিবো। নাক ফুলিয়ে বললাম।”
“অনেক্ষন ঝগড়া করলাম। তারপর রায়াফ কে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলাম। দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। সবাই ডাইনিং টেবিল এ বসলো। আবির ভাইয়া দের ডাইনিং টেবিল টা বেশ বড় তাই একসাথে সবার বসা হয়ে গেছে। ”
“রাত্রি মামনী তুমি মাছ নিচ্ছোনা কেনো? মমতাজ বেগম বলল। আবির ভাইয়ার আম্মু।”
“আসলে আন্টি আমি কাটা ছাড়াতে পারিনা তো ভয় লাগে যদি গলায় বিধে যায়। তাই নিচ্ছিনা। ”
“আগে বলবে তো। দাঁড়াও আমি দিচ্ছি কাটা ছাড়িয়ে৷ এদিকে দাও প্লেট টা। তারপর আন্টি কাতলা মাছের বড় বড় দুইটা পিছ এর কাটা ছাড়িয়ে দিলো। আমি তাও ভয়ে ভয়ে খেতে লাগলাম। যদি কাটা থেকে যায়। ”
“মাথা একটু উঁচু করতেই দেখি আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই আমি নজর সড়িয়ে ফেললাম। কিছুক্ষন আগের দৃশ্য টা স্মরণে আসতেই লজ্জায় এখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। ইশ কি বাজে রকম ভাবে ফেসে গেছি বাবা। এখন তো আবির ভাইয়ার দিকে তাকাতেই পারছিনা। আমি কি আদোও এমন ছিলাম। কই আমিতো কখনো এমন লজ্জা পাইনি কাওকে। আহ! কি যে করি। ধ্যাত ভালো লাগেনা কিছু। এসব ভাবতে ভাবতে ধ্যানে চলে গেলাম। আস্তে আস্তে সবার খাওয়া প্রায় শেষ। টেবিলে মাত্র আমিই বসে আছি। আমার খাবার খেতে অনেক লেইট হয়। ভাত হলে তো সময়ের শেষই নেই। আবির ভাইয়া পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, কি হলো খাচ্ছোনা কেনো। ”
“আবির ভাইয়ার কন্ঠ শুনে মাথা টা আরও নিচু করে ফেললাম। আর বললাম, ক কই খাচ্ছি তো। ”
“মমতাজ বেগম এসে বললেন, কিরে তুই কি করছিস এখানে হুম। ”
“আমিতো তোমাদের এই কন্যা কে দেখছিলাম খেয়েছে কিনা সে তো খেতেই পারছেনা৷ তাইতো এতো মোটা বুঝোনা। ”
“হয়েছে তোকে আর দরদ দেখাতে হবেনা কটাক্ষ করে৷ যা রাত এর কাছে যা তুই। ”
“আবির ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।”
“মামনী খাওয়া হয়েছে। ”
“জ্বি আন্টি মাত্রই হলো। ”
“তারপর লিভিং রুমে সবাই বসে পড়লো আড্ডা দিতে। তখন আব্বু বলল, খান সাহেব এবার আমি চাই আমার মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যেতে। যদি আপনি তার অনুমতি দেন। ”
“তাতো অবশ্যই। সেই এতো বছর আগের প্রতিশ্রুতি কি আর ভুলতে পারি। অবশ্যই আপনাদের মেয়েকে আপনারা নিয়ে যাবেন। তার আগে তাদের৷ মতামত টুকু জেনে নেই স্ব-ম্মুখে কি বলেন। দুলাল খান বলল আব্বুকে। ”
“হুম তা ঠিক। রাত আব্বু তোমার অনুমতি ব্যতীতই আমরা তোমার আর আভার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম। এখন তুমি কি চাও বলো। তুমি আর আভা যদি রাজি থাকো তাহলে আমরা অতি শিঘ্রই ফরজ কাজ আদায় করতে চাই।”
“সবার মাথায় যেনো আকাশ থেকে পড়লো এই কথায়। আসলে আমার আব্বু আর আভা আপুর আব্বু ছাড়া বিষয় টা কেও হইতো জানতোনা। কিন্তু আমি মনে মনে বললাম, যাক ভালোই হয়েছে। এইভাবে তাদের প্রেমলীলা চললে হবেনা বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো অন্তত যেখানে সেখানে চুরি করে রোমান্স করতে হবেনা। আর মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হবেনা।”
“মমতাজ বেগম বললেন, ভাই জান তাহলে আমাদের ওই ব্যাপার টার কথা কি ভুলে গেলেন।”
“না না তা আমি ভুলিনি রাত এর বিয়েটা হয়ে যাক তারপর না হয় ওই বিষয় টা নিয়ে কথা বলবো। তার আগে যদি বলি অনেক দিকে সমস্যা হতে পারে। আশা করি দ্বিমত পোষণ করবেন না। আমার আব্বু বলল। কিন্তু কিসের ব্যাপারের কথা বলল, আমি কিছু বুঝলাম না। যাই হোক আমার এতো বুঝে লাভ নেই। আমি আমার মতো বিন্দাস সামনে ভাইয়ার বিয়ে জাস্ট ইঞ্জয় করবো। এনাফ।”
“এই আপু ব্যাপার টা কি হলো বলো তো। এইভাবে সব ভেস্তে গেলো নাকি। কত্ত করে ভেবেছিলাম রাত ভাইয়াকে বাগে পেয়েছি। ইচ্ছা মতো জ্বালাবো। কিন্তু আব্বু তো বিয়েই দিয়ে দিচ্ছে। এখন তো কিছু করতে পারবোনা। বলেই রায়াফ মন খারাপ করলো।”
“তুই কিসের কথা বলছিস ভাই। ওহ তুই তো আবার সব জানিস তাই না আভা আপুর আর ভাইয়ার রিলেশনের কথা। কিন্তু আমাকে বলিস নি। আমিও আর তোকে কিছু বলবোনা দেখে নিস হুহ।”
“এই না না সরি আসলে আমাকে না আভা আপু প্রমিজ করিয়ে ছিলো যেনো না বলি কাওকে কিছু। তাইতো বলিনি। আর তুমি না বলেছো কারও প্রমিজ ভাঙতে নেই। কিন্তু আপু তুমি জানলে কি করে ভাইয়ার রিলেশনের কথা। ব্রু কুচকে বলল রায়াফ।”
“আমার তখনকার কথা মনে পড়ে গেলো। আ আমি জেনেছি কোনোভাবে। তোকে বলতে হবে কেনো সব কিছু। তুই তো আমাকে বলিস নি আমিও বলবো না।”
“আচ্ছা তাই না! যাও না বললে নাই এখন আমরা দুজনেই জানি কাটিং কাটিং সব।”
“অনেক্ষন যাবৎ আমি আর রায়াফ সবার অগোচরে ফিস ফিস করে কথা বলেই যাচ্ছি। ”
“রাত্রি মামনী চুপ করে আছো কেনো। রায়াফ বাবা কি ব্যাপার এতো চুপচাপ কেনো দুজনে। দুলাল খান বললেন। ”
“না আংকেল এমনিতেই। আমি বললাম।”
“আবির ভাইয়ার খালা বলল, ছোট বেলায় ও যেমন মিষ্টি মেয়ে ছিলো এখন ও তেমনই আছে রাত্রি। তবে ছোট বেলায় জেদ টা একটু বেশি ছিলো। এখন হইতো কমে আছে। বলেই সবাই হু হা করে হেসে দিলো। আমিও মুচকি হাসলাম।”
“তারপর গুরুজন রা সবাই কথা বলছিলো। মমতাজ বেগম বললেন, আভা মা তুই রাত বাবা কে নিয়ে তোর রুমে যা। কিছুক্ষন কথা বলে নে। তোদের ও তো একটু মানিয়ে নেওয়ার দরকার আছে।”
“আম্মু তোমাদের বলার সময় লাগেনি। আমি নিজেই আগে মানিয়ে নিয়েছি। শুধু জানতাম না যে তোমরা বিয়ে ঠিক করে রেখেছো। মনে মনে বলল আভা আপু। তারপর মাথা নাড়িয়ে রাত ভাইয়া কে নিয়ে চলে গেলো।”
“আপু চলো এখানে ভালো লাগছেনা। ”
“কোথায় যাবো ভাই। আর কারও বাসায় এসে এভাবে ঘুরাঘুরি ঠিক না চুপচাপ বসে থাক। আমি রায়াফ কে বললাম।”
“উফ তুমিও না। এই আবির ভাইয়া। ”
“হুম রায়াফ বলো। ”
“এটা কি আমার বাসা নাকি তোমার বাসা। নাকি আমাদের বাসা নাকি তোমাদের বাসা। কোনটা। কোমরে হাত রেখে বলল রায়াফ।”
“অবশ্যই এটা তোমার বাসা আমার আমাদের তোমাদের কারও না। অনলি ওয়ান চ্যাম্পিয়ন বয় রায়াফ এর বাসা এটা। ”
“তাহলে রাত্রি আপু আমাকে বলে কেনো যে এটা অন্য কারও বাসা। আমি নাকি এই বাসায় এসে ঘুরাঘুরি করতে পারবোনা। গাল দুইটা আপেল এর মতো ফুলিয়ে বলল।”
“ওহ তোমার রাত্রি আপু বোকা তাই এমন বলেছে।”
“দেখেছো তো এটা আমার বাসা। তাই আমি যা খুশি করবো ইচ্ছে হলে আমার সাথে এসো নইলে বুড়িগঙ্গায় যাও। এই আবির ভাইয়া চলো। আমাকে তোমার রুমে নিয়ে চলো। আমি আর তুমি এখন খেলবো। বলেই ভাব নিলো রায়াফ শার্ট এর কলার টেনে। ওর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে সবাই অটঠাসিতে ফেটে পড়লো।”
“হুম চলো।”
“রাত্রি তুমিও যাও তুমি বসে থেকে কি করবে যাও আবিরের রুমে তোমার খুব ভালো লাগবে। মমতাজ বেগম বললেন।”
“এই রে সেরেছে! এখন কি হবে ওনাদের তো আর বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে কাহিনী হয়ে গেছে। মনে মনে বললাম। তারপর বললাম, না আ আন্টি আমি এখানেই ঠিক আছি। ”
“আরে যাও তো সবাই যাচ্ছে ওই তো ফয়সাল ফারিয়া ও যাচ্ছে যাও।”
“না পেরে উঠে গেলাম। তারপর আমরা সবাই মিলে আবির ভাইয়ার রুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ফারিয়া আপু বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে ভাইয়া আমি যাই একটু ঘুমিয়ে নেই। বলেই চলে গেলো।”
“ফয়সাল ভাইয়ার কল আসলো ওনিও চলে গেলো।”
“এইরে এখন কি হবে না বাবা আমিও চলে যাই। রায়াফ ভাই তুই থাক আমি আসছি। উঠতে নিলেই আবির ভাইয়া বলল, কি হয়েছে। যাচ্ছো কোথায়।”
“ওনার দিকে তাকানোর মতো দৃষ্টি এখন আমার নেই। তাই মাথা নিচু করে বললাম নি নিচে যাচ্ছি।”
“আরে আপু বসো না। কি হয়েছে তোমার এতো যায়গায় যেতে হবেনা তোমাকে বসে থাকো এখানে। আর সবাই বিজি আছে তুমি তাদের কাছে গিয়ে কি করবে হুম। কাবাব মে হাড্ডি না হওয়ায় ভালো। শেষের কথাটা রায়াফ আমার কানে ফিস ফিস করে বলল।”
“হুম কোথায় যাবে। যাওয়ার দরকার নেই। বসে থাকো এখানে। আর ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো এখানে আমি রায়াফ কে নিয়ে অন্য রুমে চলে যাচ্ছি।”
“না না ঠিক আছি আমি ঘুম পাইনি। তারপর আর কি করার বসে রইলাম। ”
“আবির ভাইয়া রায়াফ এর সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে। ল্যাপটপ এ কি যেনো দেখাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে বসে নোখ দিয়ে নোখ এ ঠোকা দিচ্ছি।”
“বেচারি ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। তাকাচ্ছেই না একবারের জন্য। এতো লজ্জা পেলে হবে নাকি। দাঁড়াও একবার নিজের করে নেই তারপর দেখে নিবো তোমার এই লজ্জা কোথায় থাকে। মনে মনে কথাগুলো বলেই আবির ভাইয়া রাত্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ”
“রায়াফ আবির ভাইয়ার ফোন স্ক্রল করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো। আমি পড়লাম এখন মহা বিপদে। তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলাম বেড থেকে। দরজার কাছে আসতেই হাতে টান অনুভব করলাম। ভেবেই নিলাম এটা আবির ভাইয়া তাই আর পেছন ফিরে না তাকিয়েই চুপ করে রইলাম।”
“কোথায় যাচ্ছ? ”
“নি নিচে যাচ্ছি। ছা ছাড়ুন দরজা খুলা আছে কেও চলে আসবে।”
“উহুম কেও আসবেনা। আমার অনুমতি ছাড়া আমার বোন ও রুম এ আসেনা। সেখানে অন্য কেও ভাবা তো বৃথা। এদিকে ফিরো কোথাও যাবেনা এখন। ”
“আমি ফিরতে না চাইলে আবির ভাইয়া এক টান দিয়ে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে নিলো। তাল সামলাতে না পেরে আবির ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে পড়ে রইলাম চোখ খিচে। আবির ভাইয়ার ট শার্ট এ খামছে ধরে রাখলাম।”
“আবির ভাইয়া মুচকি হেসে বলল, লুক এট মি। ”
“নিশ্চুপ। ”
“লুক এট মি রাত্রি। কিছুটা জোরেই বলল।”
“আমি চোখ দুটো আস্তে আস্তে পিটপিট করে খুললাম। ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পরক্ষনে লজ্জায় আবারও মাথা নিচু করে বললাম, ভা ভাইয়া ছাড়ুন আমাকে। আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো। এখানে রায়াফ আছে জেগে যাবে ৷ প্লীজ ছাড়ুন বলছি।”
“প্রথমত ছাড়বোনা, দ্বিতীয়ত রায়াফ উঠবেনা। তৃতীয়ত কেনো এমন করছি সেটা বলবোনা। আপাতত এটাই জানো যে তুমি এখন আমার কাছে আমার রুমেই বসে থাকবে বের হবেনা যতক্ষন না বাসায় যাওয়া হচ্ছে। ”
“কে কেনো! আপনি কি আমার প্রেমিক নাকি হাব্বি লাগেন যে আমি এখন আপনার বেড রুমে বসে থাকবো। যদিও ভয়ে ছিলাম তাও সাহস করে কথাটা বলে ফেলেছি।”
“উম কোনোটাই না। তবে হলে তো দোষের কিছু নয় তাই না!”
“ম মানে! কি বলছেন এসব।”
“তোমাকে এতো মানে বুঝতে হবেনা। এখনো বাচ্চা মেয়ে আছো তাই এতোকিছু তোমার না জানাই ভালো৷ বলেই আমার কপালে একটা ঠোকা দিলো। তাও আমাকে ছাড়লোনা।”
“চলো বেলকনিতে যাই যাবে? রুদ্রের তাপ ও কম চলো।”
“না আমি কোথাও যাবোনা। আমি আম্মুর কাছে যাবো। ছাড়ুন আমাকে।”
“আর একবার যদি বলেছো তাহলে তোমাকে বেললকনি থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দিবো।”
“এইরে কি বলে। যদি সত্যি সত্যি ফেলে দেই। না বাবা আমি এতো তাড়াতাড়ি ম’রতে চাইনা। মনে মনে বললাম। তারপর আর কিছু বলিনি। আবির ভাইয়া হাত ধরেই আমাকে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন। ”
“আচ্ছা ভাইয়া আপনি তো এমন ছিলেন না। হটাৎ কি হলো যে আপনি আমার সাথে এমন করছেন। শুকনো ঢুক গিলে কথাটা বললাম।”
“একমনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বলেছি না তোমাকে সব কিছু বলতে বাধ্য নয়। তাই এসব জানার ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখো। বড় হও নিজেই জেনে যাবে।”
“আমিও আর কথা বাড়ালাম না। অনেক্ষন এটা ওটা নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছে। বেশ কিছুক্ষন পর প্রশ্ন করলাম আমি, আচ্ছা একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন।”
“হুম বলো..
“হুম বলো।”
“আচ্ছা আপনার তো জি এফ আছে তাই না! তো আমার সাথে এমন করলেন যে এখন এসব যদি ওনি জানেন তখন কি হবে। ”
“ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। ”
“আচ্ছা তাই। ঠিক আছে নেক্সট প্রশ্ন? আপনি প্রায় সময় আমাদের বাসার নিচে রাতের বেলা দাঁড়িয়ে থাকেন কেনো।”
“বলতে চাইছিনা আপাতত।”
“চোখ পাকিয়ে চাইলাম আবির ভাইয়ার দিকে। ঠিক আছে বলতে হবেনা। যাচ্ছি আমি বসে থাকেন এখানে। রাগ হলো খুব। কোনোকিছুই বলতে চাইনা। এতোই পর মনে করে আমাকে। মনে মনে কথা গুলো বলেই বেলকনি থেকে রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। আবারও পেছন থেকে টান পরলো হাতে।”
“এই টুকু মেয়ের এতো রাগ অভিমান থাকে কোথায় হুম।”
“পেছন ঘুরে বললাম, আমার একটা পকেট আছে সেখানে থাকে। ছাড়ুন হাত ছাড়ুন বলছি। যে ব্যক্তি আমাকে এতোটা পর মনে করে তার সাথে এক মুহূর্ত আমি থাকতে চাইনা। আমিও আর কিছু জানতে চাইবো না আপনার কাছে। আমাদের বাসার নিচে গেলে উপর থেকে পানি ছুঁড়ে মারবো। ঠোঁট ভেংচি কে’টে বললাম।”
“হালকা সুরে হাসলো আবির ভাইয়া। আর বলল, পাগলি মেয়ে বললাম না বুঝার বয়স হলে তুমি নিজেই সব কিছু বুঝে যাবে। তাই এখন কোনোকিছু বুঝে নিজের ফোকাস গুলো দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছিনা। আর তাই তোমার প্রশ্নের উত্তর গুলো আমি এখন দিতে চাইছিনা।”
“ছাতার মাথা এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা তাও আমাকে এসব বলেন বিরক্তিকর। ব্রু কুচকে ফেললাম বলে।”
“এদিকে এসো। বলেই আবির ভাইয়া আমাকে হালকা টানে নিজের কাছে নিয়ে বলল, এতো জেদ করোনা। পরে কিন্তু এই জেদ থাকবেনা। আর এখনকার অজানা কথা গুলো যখন পরে জানতে পারবে তখন তুমিই সব চেয়ে বেশি খুশি হবে। এখন জেনে গেলে আর পরে সেই খুশিটা অনুভব করতে পারবেনা। পাগলি! ”
“আবির ভাইয়ার ফিস ফিস করে বলা কথা গুলো শুনে আমার শরীরের লোম গুলো কা’টার মতো দাঁড়িয়ে গেলো। অস্ফুট সুরে বললাম, মানে কি বলতে চাইছেন।”
“কিছুনা। এরকম নুইয়ে যাচ্ছো কেনো? আমি কি তোমাকে আদর করছি নাকি যে এভাবে লজ্জা রাঙা বউ এর মতো নুইয়ে যাচ্ছো।”
“আবির ভাইয়ার এমন তরফা কথা আমি চমকে উঠলাম। লজ্জাও পেলাম ভীষন। আর এক মুহূর্ত ও সেখানে রইলাম না ছুঁটে চলে এলাম।”
“ইশ! ভালোই তো লাগছিলো কেনো বলতে গেলাম এই কথা গুলো। মেয়েটা তো এখন আর আমার সামনেই আসবেনা এখন তো খুব বেশি লজ্জা দিয়ে ফেলেছি আমার পিচ্চি পাগলি টা কে। মাথা চুলকে বলল আবির ভাইয়া। না না আবির তোকে কন্ট্রোল এ থাকতে হবে। নইতো এই পাগলির ফোকাস টা নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে সেটা আবার আমাকেই ঘাড়ে চেপে নিতে হবে। পরক্ষনে মুচকি হেসে রায়াফ এর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। ”
“আচ্ছা রাত তুমি কি জানতে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে। আভা বলল।”
“মোটেও না! জানলে তো তোমাকে বলতামই। আর তারা কখন এসব ঠিক করলো আমার তো কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা। ”
“হয়েছে বাদ দাও। এখন তো আমরা তাহলে পার্মানেন্টলি এক হয়ে যাবো তাইনা। আভা রাতের শার্ট এর কলার ধরে বলল।”
“রাত আভা কে এক ঝটকায় বুকের সাথে মিশিয়ে বলল, হুম। ”
“বিকাল ৫ টা বেজে গেলো আবির ভাইয়া দের বাসায় আব্বু বলল, এবার আমরা আসি খান সাহেব। কোনো একদিন সুযোগ করে না হয় ওদের বিয়ের ডেট টা ফাইনাল করে ফেলবো কি বলেন।”
“জ্বি জ্বি নিশ্চয়।”
“তারপর আমরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। ”
“চলে যাচ্ছো। পাশ থেকে ফয়সাল বলল।”
“হুম।”
“ঠিক আছে কলেজে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। মুচকি হাসলো।”
“তারপর আমরা গাড়ি করে বাসায় চলে এলাম। ৩০ মিনিট এর পথ। ওই সময়ের পর আর আবির ভাইয়ার সম্মুখে যায়নি। কি পেয়েছে টা কি যখন যা খুশি বলবে। আর আমাকে লজ্জা দিবে। এটার কোনো মানে হয়। আর যাবোনা কোনোদিন ওনার সামনে। বাসায় আসলেও না। কথাও বলবোনা হুহ।নির্ঘাত ভাইয়ার বন্ধু বলে কথা নইলে একবারে আচ্ছা করে মুখ ধুলাই করে দিতাম। রুমে বসে কথা গুলো বলছি রাত ১১ টার সময়। ঠিক তখনই একটা মেসেজ আসলো ফোন এ। ‘ এইযে আমার #বক্ষ_পিঞ্জর এর পাখি করছো৷ রাত জেগোনা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ো সামনে এক্সাম আছে।’ মেসেজ টা পড়ে সাথে সাথে কল দিলাম নাম্বার টায়। আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন সেটি এই মুহুর্তে বন্ধ আচ্ছে৷ যাক বাবা এবারও বন্ধ। কে এই হতচ্ছাড়া। দাঁত কিরমির করে বললাম। তারপর মোবাইল টা ছুঁড়ে ফেললাম খাটে৷ ”
“৩ দিন পর কলেজে গিয়ে ইতিকে সব কিছু বললাম আবির ভাইয়া আর ফয়সাল এর কথা। ইতি বলল, দেখ রাত্রি আমিতো আগেই বলেছি তোকে আবির ভাইয়া তোকে পছন্দ করে নাহলে এমন করতোনা।”
“ধুর তুই যে কি বলিস না ইতু। ভাইয়ার জি এফ আছে আমাকে বলেছে। আমাকে কেনো পছন্দ করতে যাবে। তাহলে তো আমাকে সামনেই বলতো।”
“তুই হাতে পায়ে বড় হয়েছিস কিন্তু রায়াফ ঠিকি বলে তোর মাথায় গো’বর পোড়া আছে। ”
“ইতু! ধমক দিয়ে বললাম। চুপ করবি নাকি। এখন কি তুই আমাকে সব কিছু শিখাতে আসবি।”
“আরে রাগিস কেনো দুস্ত যা বলেছি ঠিকি বলেছি তো। সত্যি কথা বলছি দেখ এমনই হবে। আর ভাইয়ার জি এফ আছে যদিও বলে থাকে সেটা মিথ্যে কথা।”
“যাক গে বাবা বাদ দে আমার এসব বোধগম্য হচ্ছেনা। চল খুদা পেয়েছে ক্যান্টিনে যাই। তারপর দুজনে গিয়ে ক্যান্টিন এ বসলাম। তারপর কিছু খেয়ে ক্লাস এ চলে এলাম।”
“এভাবে অনেক দিন কেটে গেলো। এর ভিতর আমি আবির ভাইয়ার কথা ভুলেই গেছি। ওইদিন পর আর আবির সাথে দেখা হয়নি। কথা তী দূরে থাক। ”
“১৫ দিন পর কোনো এক সকালে ধরনীর বুকে সূর্য মামা উঁকি দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে ভোরের আলোর সন্ধান। পাখিরা কিচিরমিচির করছে নিজ মহিমায়। কৃষ্ণচূড়ার রাঙা পথে লাল রঙা কৃষ্ণচূড়া গুলো সারি হীন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। শহরের অলিগলিতে লোকজন হাক ডাক দিচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙলো রাত্রির। উফ এই এলার্ম টা আর বাজার সময় পেলোনা। এক হ্রাস বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে দেখি লিভিং রুমে আম্মু বসে আছে। আম্মু রুমা আপু কোথায় বলো নাস্তা দিতে। পরে আবার কলেজে যাওয়া লেট হয়ে যাবে। আর রায়াফ কোথায় ও নাস্তা করবেনা। ভাইয়া আব্বু উঠেনি ঘুম থেকে এখনো? ”
“তোর আব্বু রাত রায়াফ বাজারে গেছে নাস্তা করে। আর আজকে তোর কলেজ যেতে হবেনা। আজকে আবিরদের বাসার সবাই আসবে আমাদের বাসায় আমরা রাত আর আভার বিয়ের তারিখ টা আমাদের বাসায় ঠিক করবো বলেছি। তাই ওদের রাতে আসতে বলেছি।”
“ও ওহ। তাহলে তো আবির ভাইয়া ও আসবে। না না আমি কিছুতেই আর ওনার মুখোমুখি হবোনা কিছুইতেই না। আমি কলেজে চলে যাবো। মনে মনে বললাম। তারপর গলা ঝেরে বললাম আম্মু তাহলে আমি থেকে কি করবো বাসায় আমি কলেজে চলে যাই প্লীজ। আমার আজকে ক্লাস আছে ইম্পর্ট্যান্ট। প্লীজ আম্মু মানা করোনা।”
“শুনো মেয়ের কথা। এই তুই কি সমাজ চুর নাকি হুম। মেহমান আসবে বাসায় আর তুই পালানোর চেষ্টা করছিস। কই ভাববি যে তাদের কিভাবে আপ্যায়ন করা যায়৷ তা না করে ওনি আসছে কলেজ যাবেন৷ উদ্ধার করেছে আমাকে লেখা পড়া করে। রাত আসলে বলিস যে কলেজ যাবি। আম্মু রাগ দেখিয়ে কথা গুলো বলে চলে গেলো।”
“যাক! কি মহা বিপদে পড়লাম গো আল্লাহ বাঁচাও । তারপর রুমা আপু পরোটা আর ডিম ভাজি দিয়ে গেলো টেবিল এ আমি নাস্তা ফিনিশ করে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। মোটু পাতলু দেখা শুরু করলাম।পেছন থেকে আম্মু বলে উঠলো দুইদিন পরে বিয়ে দিলে বুড়ি হয়ে যাবে আসছে এখনো কার্টুন দেখতে। বলছি কি পা দুটো কে’টে বেটে করেই দেই রায়াফ এর চেয়েই ছোট হয়ে যাবি।”
“উফ আম্মু চুপ করবে তুমি। সামান্য কলেজ যাবো বলেছি তাই বলে এতো কথা শুনাবে আমায়। যাও যাবোনা কলেজে৷ রুম থেকেও বের হবোনা আজ। যদি আমাকে কেও ডেকেছো তাহলে খবর আছে বলে দিলা। কথা গুলো বলেই রিমোট টা ঢিল ম’রে ডিভানে ফেলে দিয়ে রুমে এসে স্বজোরে শব্দ করে দরজা টা লক করে দিলাম।”
“সময় গড়িয়ে চলছে তার গতীতে বেলা ১২ টা বেজে গেছে। ২ ঘন্টা ঘুমিয়ে হাত পা আরও অবশ করে ফেলেছি। তখন রাগ করে এসে কিছুক্ষন পড়ালেখা করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কেও ডেকেছে কিনা তাও জানিনা। উঠে গিয়ে একদম শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে রুমের বাইরে বের হলাম। লিভিং রুমে যেতেই আবির ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। চোখ সরিয়ে আংকেল আন্টি আর আভা আপুর সাথে কথা বললাম সালাম দিয়ে। কিন্তু আবির ভাইয়ার সাথে বলিনি। তারপর আবার নিজের রুমে চলে এলাম। এ মা রে আমার তো মনেই ছিলোনা ওনারা যে আমাদের বাসায় আসবেন আজকে। ধ্যাত! ঘোড়ার ডিম মন আমার।”
“আভা আপু আমার রুমে আসলো সাথে আবির ভাইয়া রায়াফ আর রাত ভাইয়াও আসলো। এদের একসাথে আসার কারন বুঝলাম না। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দরজা লক করতে ভুলে গেছিলাম তাইতো রায়াফ আগে ভাগেই রুমে ঢুকে পড়েছে।”
“কিরে সকাল থেকে নাকি রাগ করে রুমে বসে আছিস। ডেকে গেলাম যে শুনিস নি। রাত ভাইয়া বলল।”
“মাথা নিচু করেই বললাম , আসলে ভাইয়া পড়া শেষ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই ডাক শুনতে পাইনি। আর কে বললো রাগ করেছি। রাগ করিনি। ”
“তো সবার সাথে কথা বলেছিস ওখানে গিয়ে।”
“হুম বলেছি তো।”
“আচ্ছা তাহলে তোরা আড্ডা দে আমি আসছি। তারপর রাত ভাইয়া চলে গেলো।”
“আভা আপু রাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো এক ধ্যানে তারপর বলল, আ আমি আসছি একটু কেমন তুমি ভাইয়ার সাথে কথা বলো। কানে কানে কথা টা বলেই আভা আপু চলে গেলো৷ একটা জিনিস এখন খেয়াল করলাম আভা আপুকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে৷ ক্রিম কালার থ্রি পিছ টা দারুন মানিয়েছে আপুকে। এইসব ভেবে ভুলেই গেছিলাম রুমে যে আরও দুজন ব্যক্তি আছে। যখন মনে হলো তখন আমি মাথা নিচু করে নোখ খুড়াতে লাগলাম আঙুলের।”
“আপু চুপ করে আছো কেনো আবির ভাইয়া আসছে কথা বলো। আমি চলে যাচ্ছি আমার কার্টুন দেখার সময় হয়ে গেছে।”
“দাঁড়া আমিও যাবো কার্টুন দেখবি একা একা সেটা হতে দিবোনা আমি। তুই আগে আগে নতুন পর্ব দেখে মজা নিবি কেন।”
“আমাদের দুই ভাই বোনের কথা শুনে আবির ভাইয়া হাসলো। খুবই স্মিত হাসি। যার কোনো বাক নেই। আর বলল, তোমার কি এখন কার্টুন দেখার বয়স আছে।”
“আমি নিশ্চুপ মুখ ভেঙছি দিয়ে ট্যারা চোখে আবির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে।”
“এই পাগলির এতো টা অভিমান হয়েছে। বাহ খুব ভালো! রাগ অভিমান এখন করে শেষ করে নাও পরে না হয় আমি ভাঙিয়ে নিবো সব। খুব শীঘ্রই নিজের করে নিবো তোমায় প্রমিজ ইউ মাই কুইন।” বলেই আবির ভাইয়া আমার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।”
“দুপুরের খাবার শেষে রাত ভাইয়া আর আভা আপুর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। দুইদিন পর আমার ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে তাই তারা আগামী ২০ জুন এ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। মূলত আমার জন্যই পিছানো হয়েছে। ”
“দুইদিন পর আমার এক্সাম শুরু হলো। পড়াশুনার চাপ এ আধমরা অবস্থা হয়ে গেছে। দিন দুনিয়ার খবর ভুলে গেছি। লাস্ট এক্সাম এর দিন এক্সাম শেষে গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। রায়াফ দের ক্লাস নেই তাই ও প্রতিটা পরিক্ষায় আমার সাথে ছিলোনা। গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা দেখলাম আবির ভাইয়ার গাড়ি। গাড়ি থামিয়ে ওনি নেমে এলেন। ওনার মুখ পানে তাকিয়ে দেখলাম মুখ টা লাল হয়ে আছে ফর্সা হওয়ায় সেটা বেশি বোঝা যাচ্ছে। কপালে ঘামের রেশে চুল গুলো লেপ্টে গেছে কপালে। অতিরিক্ত গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। পারপল কালার শার্ট টা লেপ্টে আছে গায়ে। ওনি বললেন, কি হয়েছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? ”
“ওনার কথা হুশে ফিরে থতমত খেয়ে গেলাম। ক কই তাকিয়ে আছি। আপনি এখানে কেনো এসেছেন সেটা আগে বলুন।”
“তোমাকে নিতে এসেছি।”
“নিতে এসেছেন মানে! ভাইয়া কোথায়?”
“রাত একটা ডিল ফাইনাল করতে গেছেন। বর্তমানে কুমিল্লা সেক্টরের মিটিং এ আছে। ওই ডিল টা ওর আন্ডারে হবে তাই ওকে যেতে হয়েছে। আব্বু রাত কে নিয়ে আরও ২ ঘন্টা আগেই চলে গেছেন। তাদের আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাত যাবার সময় বলে গেলো যেনো টাইম মতো তোমাকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেই। তাই আমি এসেছি। নাও এবার গাড়িতে উঠো। এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলেন। আর লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিলেন।”
“ওহ আচ্ছা। চলুন তাহলে। তারপর আবির ভাইয়া সামনের সিটের দরজা টা খুলে দিলো। আমি গিয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পরলাম।আর আবির ভাইয়া ঘুরে এসে গাড়ির ভিতর থেকে ওয়াটার বটল টা নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিলো। তারপর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ”
“আমি এক ধ্যানে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব ক্লান্তির রেশ এর দেখা মিলছে তার চোখে মুখে।হইতো অফিসের কাজের খুব চাপ তার উপর এতো গরম। ২ টা বাজে দুপুর প্রখর রোদ তখন মাথার উপর গরম লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বললাম, ভাইয়া আপনি দুপুরে খেয়েছেন? ”
“নিঃসংকোচে উত্তর দিলো, নাহ খাওয়া হয়নি। কাজের চাপ খুব বেশি খাবার সময় হয়ে উঠে নি। ভাবলাম আগে তোমাকে নিতে আসি তারপর না হয় খাওয়া যাবে। ”
“ওহ! আগে খেয়ে নিতেন তারপর না হয় আসতেন।”
“তা হয় নাকি। আগে ডিউটি তারপর খাওয়া।”
“মানে কী!”
“কিছুনা তোমাকে বুঝতে হবেনা। ”
“তারপর আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম। আম্মু আবির ভাইয়া কে জোর করে বাসার ভিতর নিয়ে গেলো খাবার খাওয়ানোর জন্য । আবির ভাইয়া এক প্রকার অনিচ্ছাকৃতই আম্মুর আবদার রাখলো। তারপর আবির ভাইয়া কে ফ্রেশ হতে বলল। এরই মধ্যে আমি ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম। আমি আবির ভাইয়া রায়াফ আম্মু একসাথে খেতে বসেছি। তবে রায়াফ খেতে নয় আবির ভাইয়ার সাথে ফটফট করতে বসেছে। রায়াফ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পাই আবির ভাইয়া কে কাছে পেলে।”
#চলবে