বউ চুরি
পর্ব : ৮
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা
বিয়ে কমপ্লিট। বিয়ে শেষে দুজনকেই নামাজ পড়তে বলা হলো। মুসকানকে ইমনের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। যেটা মোটেই মুসকানের ভালো লাগলো না। কিন্তু তার প্ল্যান অনুযায়ী সব চুপচাপ মানতে হবে। কিন্তু দুজনে একসাথে থাকতে হবে এটা ভেবেই ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেলো। কি করবে এখন তার মাথায় কিছু আসছে না। ভারী সাজ ছেড়ে সেলোয়ার কামিজ পড়ে নিলো। ইমন চেয়েছিলো রুমে এসে প্রানভরে তার বউ কে দেখবে। বধূর সাজে তাকে অপ্সরীর মতো লাগছিলো ইমনের কাছে। কিন্তু তার আর সে ভাগ্য হলো না। রুমে এসে দেখলো কোন সাজের ছিটে ফোটাও নেই। গাড় খয়েরি রং এর একটা সেলোয়ার পড়ে আছে । তাতেও বেশ সুন্দর লাগছে। সবেমাএ বিয়ে হয়েছে বউ বউ লাগছে তাকে। শুধু যে শাড়িতেই বউ বউ লাগবে তা নয়। এই সেলোয়ারেই মুসকানকে তার দ্বিগুণ সুন্দরী আর বউ বউ লাগছে।
অযূ করেছো ?
না।
যাও অযূ করে আসো। আমি করে এসেছি।
মুসকান কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেলো। অযূ করে মাথায় এড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে এলো মুসকান।
ইমন দেখে মুচকি হাসলো একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। বাচ্চা বউ। হাসিটা চেপেই দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে মুসকান কে নামাজে দাঁড়াতে বললো।
মুসকান ও বাধ্য মেয়ের মতো নামাজে দাঁড়ালো। দুজনেই তাদের নামাজ সম্পন্ন করলো। ইমন পাঞ্জাবি টা খুলবে এমন সময় মুসকান বলে ওঠলো-
আমার একটা কথা ছিলো।
ইমন পান্জাবিটা খুলে ফেললো। সাদা গেন্জি পড়া ছিলো বুকের লোম গুলোও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
হুম বলো বাধা কিসের।
মুসকান একটু ইতস্ততভাবে বললো- আমার পরিক্ষা যে অবদি শেষ না হচ্ছে……..
ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কিছু না বলে একটা শর্ট প্যান্ট আর টি শার্ট নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।
মুসকাম পুরো রুম জুরে পাইচারী করতে লাগলো। তার মন শরীর কোনোটাই স্থির রাখতে পারছে না।
তুমি কি বলতে চাইছো খুব ভালো করেই বুঝেছি মুসকান। বলেই বাঁকা হাসলো ইমন। বুকের ভিতর চাপা কষ্ট অনুভব করলো তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বেরিয়ে এলো ইমন।
এভাবে পাইচারি করছো কেনো যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
মুসকান অবাক চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ফেলে বিছানার এক কোনায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
ইমন এর বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠলো। এই মেয়েটা আর কতো ভাবে ইগনোর করবে আমাকে।
কেনো বুঝতে পারছে না আমার কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় বিছানায় ঐ জায়গাটাই পেলো ঘুমানোর জন্য। কি করে বুঝাবো একে আমি। ওর মাথায় যে কিছুই কাজ করছে না। খুব জেদ এই জেদটাই না ওর কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইমন লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়লো। চোখে তার ঘুম নেই তবুও চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুসকান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।
রাত দুটায় মুসকান ঘুমের তালে নড়তে গিয়ে ধপাশ করে পড়ে গেলো বিছানা থেকে। ঘুমের মধ্যে ওভাবে পড়ায় বেশ লেগেছে সেই সাথে ঘুম ও ভেঙে গেছে। আহ করে আর্তনাদ করে ওঠলো মুসকান।
ইমন শব্দ পেয়ে দ্রুত লাইট অন করলো। ছুটে গিয়ে মুসকান কে ধরে ওঠালো। ব্যাথা পেয়েছো কোথায় লেগেছে??
মুসকান কাঁদো কাঁদো গলায় বললো – আমি এখানে থাকবো না। আমার রুমে যাবো। বলেই কেঁদে ওঠলো।
ইমন বুঝেছে বেশ লেগেছে।
কোথায় লোগেছে বলো।
না কোথাও না। আমি এখানে ঘুমাবো না। আবার যদি পড়ে যাই। প্লিজ আমার রুম যেতে দাও।
ইমন বেশ বুঝতে পারলো মুসকান তার সাথে এক রুমে থাকতে চাচ্ছে না। আর পরে যাওয়ায় এটাকে ইশু করে চলে যেতে চাইছে।
তুমি চলো ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায় মিসেস চৌধুরী ভেবেই বাঁকা হাসলো ইমন।
এটাই তোমার রুম মাঝরাতে বিরক্ত করো না। আর যাতে না পড়ো সেই ব্যাবস্থাই করছি। বলেই লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো।
কি করছো ছাড়ো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো মুসকানের।
ইমন তার কথার উওর না দিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো। নিজেও শুয়ে পড়লো।মুসকান ওঠতে যাবে ঠিক তখনি একটানে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলো। নিজের সাথে জাবটে ধরলো মুসকানের মাথাটা ঠিক তার বুকে ঠেকে আছে। মুসকান ছুটতে চেষ্টা করছে কিন্তু ইমন তাকে সম্পূর্ণভাবে তার সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। তার দুপা দিয়ে মুসকানের পা আঁকড়ে রেখেছে। হাত দিয়ে মুসকানের পিঠ চেপে রেখেছে। তবুও মুসকান ওঠার চেষ্টা করছে।
এই একদম চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। এবার আর পড়বে না কারন পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গায় আছো এখন তুমি। মুসকান তবুও চেষ্টা করলো। কিন্তু না পাড়লো না অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ইমনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো। মুসকানের ঘুমন্ত নিশ্বাস ইমনের বুকে পড়ছে। প্রচন্ড সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে তার। বাসর রাত টা তার স্বার্থক মনে হচ্ছে।
এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। মুসকানও পড়াশোনায় মনোযোগ দিলো।সারাদিন ইমনের আশে পাশেও ভিড়ে না মুসকান। কিন্তু রাত হলে যতোই ছলচাতুরি করুক ইমনের বুকেই তার ঘুমাতে হয়। এতোটা স্নেহ ভালবাসা যেনো মুসকানের গায়েই লাগে না। কোন অনুভূতিই কাজ করে না তার। বরং এর থেকে রেহাই পেতে ওঠে পড়ে লেগেছে সে।
ইমন ও বাবার ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। মন দিয়ে বিজনেস সামলাচ্ছে।
মুসকানের এইচ.এস. সি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
তাই ইমন তাকে একটু বেশী সময় দিচ্ছে। এই বেশী সময় দেওয়াটা মুসকানের সহ্য হচ্ছে না। খুবই বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে তার কোন বড় সড় কাজ হাসিলে বাঁধা হয়েছে ইমন।
দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ আজ মুসকানের শেষ পরীক্ষা। মুসকান কে হলে বসিয়ে ইমন বেরিয়ে এসেছে । গাড়িতে ওঠবে এমন সময় রায়া ডাকছে – ইমন ভাইয়া দাঁড়াও তোমার সাথে কথা আছে।
একি তুমি পরীক্ষা তো শুরু হয়ে যাবে।
হোক এখনো বিশ মিনিট আছে আমি এই সময়ে তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলতে চাই।
ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কি এমন জরুরী যে এক্সাম বাদ দিয়ে এখানে এসেছে এতো তারাহুরো নিয়ে। ( মনে মনে)
আচ্ছা তারাতারি বলো এক্সাম শুরু হয়ে যাবে।
রায়ার কথা শুনে ইমনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ছিঃ এতোটা নিচ মনের মেয়েকে আমি ভালোবেসেছি ছি ঃ। ইমন আর এক মূহুর্ত সেখানে দেরী করলো না। রায়াকে ধন্যবাদ দিয়ে ভালো ভাবে পরীক্ষা দিতে বলে চলে গেলো।
পরীক্ষা শেষে ইমন এর আসার কথা ছিলো তাই মুসকান পিছনের গেইট দিয়ে বেরিয়েছে। আর সেখানে তার অপেক্ষায় ছিলো জয়। জয়কে দেখে মুসকানের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো। জয় ও তাকে দেখে হাসি দিলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই জয় আসে মুসকান কে দেখতে। দেশে এসেছে দুমাস হলো। কিন্তু মুসকানের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি কারন সবসময় ইমন থাকতো সাথে। ইমনের ব্যাপারে সব জানে জয় সেই সাথে মুসকানের বিয়ের ব্যাপারেও। প্রথমে ভেবেছিলো এই সম্পর্ক থেকে সরে যাবে। যেহেতু ইমন একজন নাম করা নেতা সেহেতু তার যে বেশ বিপদ হবে মুসকানের জন্য বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু ঐ যে সুন্দরী নারীর প্রতি যে কোন পুরুষেরই একটা আকর্ষণ থাকে। মুখে যতোই বলুক চেহেরা সব না মনই আসল। কিন্তু ১০০ ভাগের ৯৫ ভাগ পুরুষ ই সুন্দরের পূজারী। জয়ের ক্ষেএেও সেটাই ঘটেছে মুসকানের রূপ এর কাছে তার বিবেক হেরে গেছে। চেহেরার প্রেমে পড়ে সব ভুলে গেছে সে । সে যে পরের বিয়ে করা বউ এইটুকুও তার মাথায় খেলছে না তার শুধু মুসকানকে চাই। আর যেখানে মুসকানই ইমন কে মানতে পারছে না সেখানে আর অন্য কিছু ভাবতে পারেনি জয় । মুসকানের সাথে যে ইমনের শারীরিক সম্পর্কও হয়নি সে বিষয়েও জয় জেনেছে। সবটা মুসকান আর হেনার মাধ্যমেই । আর এতোদিন মুসকানের সাথে যোগাযোগ হেনার মাধ্যমেই করেছে জয়। মুসকান ও তার ফোন বা ইমনের বাড়ির কারো ফোন থেকে জয়ের সাথে যোগাযোগ করেনি। যার ফলে এ বিষয়টা সম্পূর্ণই ইমনের অজানা ছিলো।
বাইকে ওঠো মুসকানের উদ্দেশ্য বললো- জয়।
মুসকান বাইকে ওঠার আগে একবার ইমনের কথা ভাবলো- কাজটা আমি ঠিক করছিতো।
না আমি কোন ভুল করছিনা। ঐ বাড়ির কেউ আমার কথা ভাবেনি সবাই সবার ইচ্ছে চাপিয়ে দিয়েছে। যাকে ভাই হিসেবে মেনেছি তাকে কি করে স্বামী হিসেবে মানবো। জোর করে কারো মন পাওয়া যায় না মি.ইমন চৌধুরী। ( মনে মনে )
কিহলো তারাতারি করো অনেক পথ যেতে হবে।
হ্যা করছি বলেই বাইকে চেপে বোসলো মুসকান। আর ঠিক সেই সময়ই দূর থেকে তাদের একটা পিকচার তুলে নিলো হেনা। সাথে সাথে পিকচারটা ফেসবুকে আপলোড করে দিলো।
দশমিনিটের মাথায় মোজাম্মেল চৌধুরীর বাড়ির সব ফোন বেজে ওঠলো। মোজাম্মেল চৌধুরী কে পিকচার ও পাঠিয়ে দেওয়া হলো। অফিস সহ পুরো বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। চৌধুরী বাড়ির মেয়ে সেই সাথে চৌধুরী বাড়ির বউ। ইমনের বউ এসব করে বেরাচ্ছে বাইরে বউ পরোকিয়া করছে। পালিয়ে গেছে সমাজের মানুষের ছিঃ ছিঃ পড়ে গেলো। ঘরে বাইরে কোথায় মুখ দেখানোর জো রাখলো না মুসকান। মোজাম্মেল চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো৷ কিন্তু ইমন সে কোথায় এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ তাকে কেউ দেখতে পারছে না। তার জন্যই আজ চৌধুরী বাড়ির এতো ক্ষতি হয়ে গেলো। কি করে মুখ দেখাবে তারা মানুষ কে। ইরাবতী কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়লো।তারপর যা হলো সেটা সবার ধারনার বাইরে।
মোতালেব চৌধুরী সব শুনে স্ট্রোক করলেন। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে হসপিটাল ছুটে গেলো। রূপম ও খবড় পেয়ে চলে এসেছে সবাই হসপিটালে। গ্রাম থেকে তিন ছেলেও চলে এসেছে বাবার খবড় শুনে। দিপু, দীপান্বিতা ইরাবতী সবাই কেঁদে চলেছে।
মোজাম্মেল চৌধুরী বলে দিয়েছেন ঐ মেয়েকে আর তার বাড়িতে জায়গা দিবে না। আর তার ছেলে তার ও এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু মাএ তার জেদের কারনে আজ মোতালেব চৌধুরীর এই অবস্থা। ছেলে ছেলের বউ কারো ক্ষমা নেই।
দু’ঘন্টা পর –
ইমন তার বাবাকে ফোন করলো আর শুধু একটা কথাই বললো- বাবা তোমরা দাদুর ভালো চিকিৎসা নাও সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এই শেষবার তোমার ছেলের উপর ভরসা করো। আমাদের পরিবারের মান সম্মান যে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে তাকে আমি ছাড়বো না। আর যার জন্য দাদুর এই অবস্থা তাকেও এবার কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর আজ কেউ বাড়ি আসবে না। হসপিটালের কাছে আমাদের যে ফ্ল্যাট আছে সেখানে থাকবে। আলেয়া চাচীকে পাঠিয়ে দিয়েছি সেখানে। ইমন তার সব কথা বলে ফোন কেটে দিলো। যতোই হোক মোজাম্মেল চৌধুরী আর ইরাবতীর একমাএ ছেলে ইমন। তার কথা ফেলতে পারেনা কেউ। আর তার ছেলে কোন অন্যায় করার মতো ছেলে না। শুধু মাএ মুসকানের প্রতি দূর্বল থাকায় মুসকান কে বেশ ছাড় দিয়েছে। তবে এবার ইমন চুপ করে থাকবে না সেটা মোজাম্মেল চৌধুরী ভালো ভাবেই টের পেলো। একদিকে মুসকানের প্রতি রাগ অপর দিকে করুনা হলো।
জয় আর মুসকান ঢাকার বাইরে এসে গেছে। মুসকানের পানি পিপাসা লাগাতে জয় পানির বোতল কিনতে গেছে মুসকান কে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে।
মুসকানের কেমন অস্থিরতা লাগছে। জীবনে প্রথম পরিবার ছাড়া একা কোথাও যাচ্ছে। আপনজনদের ছেড়ে এসে তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। তবে এই খারাপ লাগার মাঝে যে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করলো সেটার বিষেসত্ব কারন সে খুজে পেলো না।
আরেকটা জিনিস ও সে অনুভব করলো রাস্তায় জয় তাকে একা ছেড়ে পানি আনতে চলে গেলো। কিন্তু আজ জয়ের জায়গায় ইমন থাকলে সে সেটা কখনোই করতো না । কারন ছোট থেকে যেভাবে দেখেছে ইমন কে তাতে এভাবে খোলা রাস্তায় একা দাঁড় করিয়ে রাখার মতো ছেলে ইমন না । মনের অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে।
মানুষ তার ভুল গুলো তখনি বুঝতে পারে যখন তার একটা ভুলের কারনে জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায় । কিন্তু মুসকান ভুল বুঝতে পেরেছে কিনা সেটা তেমন বোঝা গেলো না । তবে তার বুকের ভিতর যে শূন্যতা অনুভব হচ্ছে সেটা ঠিক বোঝা গেলো।
আমিতো জয় কে ভালোবাসি তাহলে কেনো জয়ের সাথে একসাথে থেকেও আমার মনে শান্তি আসছে না। কেনো আমি খুশি হতে পারছিনা। কেনো এমন অশান্তি লাগছে। কেনো ইমন ভাইয়া কে বার বার মনে পড়ছে। মনে মনে ভাবতে ভাবতে তার খেয়াল হলো আশে পাশে অনেক মানুষ তাকে লক্ষ করছে। কানাকানি করছে। মুসকান একটু ইতস্ততভাবে গুটিশুটি মেড়ে দাঁড়ালো।
জয় এখনো আসছে না কেনো সন্ধ্যা নেমে এলো কোথায় জয় । কয়েকটা বখাটে ছেলে মুসকান কে দেখে মুসকানের দিকে এগোতে লাগলো। মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। হঠাৎ ই ছেলে গুলো পিছিয়ে গেলো আর এগুলো না মুসকান পিছন ফিরে তাকাতেই বেশ কয়েকজন ছেলে দেখতে পেলো। এদের দেখেই ঐ ছেলেগুলো চলে গেলো। ভয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো মুসকান।
ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে একটা ফোন এগিয়ে দিলো। একটা ভিডিও অন করে মুসকানের দিকে এগিয়ে দিতেই মুসকানের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠলো। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো । থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ভিডিওতে স্পষ্ট জয় কে ইমন গাছের সাথে বেঁধে মারছে। মারতে মারতে আধ মরা করে এম্বুলেন্স করে পাঠিয়ে দিলো।
মুসকান ভয়ে কেঁদে ওঠলো। একজন ছেলে বললো- দোষ আপনার বেশী তাই জয় জানে বেঁচে গেলো। নয়তো ওর জান এখানেই খতম করে দিতাম আজ । মুসকানের নাকের কাছে একটা স্প্রে করতেই মুসকান জ্ঞান হারিয়ে ঢোলে পড়লো।
রাত এগারোটা বেজে গেছে। ইমনের রুমে মুসকান বেঘোরে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আর ইমন একের পর এক সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। সাতাশ বছরের জীবনে এই প্রথম সিগারেট খাচ্ছে ইমন। শুধু সিগারেট নয় মদ ও পান করে চলেছে সমান তালে। চোখ দুটো তার রক্তবর্ণ ধারন করেছে। হিংস্র বাঘের থেকেও ভয়ংকর লাগছে তার চোখ দুটো।
এক বোতল মদ শেষ করে ছুঁড়ে ফেললো। ঢোলতে ঢোলতে ওঠে দাঁড়ালো ইমন বিছানা থেকে একটানে মুসকান কে তুলে বাথরুম নিয়ে ছিটকে ফেললো।ঝর্ণা জুরে দিলো। পানি গায়ে পড়তেই মুসকান হালকা জেগে ওঠলো । তার শরীর যেনো অবশ হয়ে আছে মুসকানের জ্ঞান ফিরতে দেখেই ইমন তার শরীর থেকে শার্ট খুলে ফেললো।
মুসকান হুহু করে কেঁদে ওঠলো। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে আর ইমন কে এমন ভয়ংকর রূপে দেখে সে আঁতকে ওঠলো। একটু পিছুতেই দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলো। ইমন একদম এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে।
মুসকান দুহাত জোর করে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও আমায়। ইমন মুসকানের দুগালে শক্ত হাতে চেপে ধরলো। এই কিসের ক্ষমা তোকে তোর মতো চরিএহীনা কে কখনো ক্ষমা করা যায় না।
ততুমি নেশা করেছো…….
মুসকানের গাল ছেড়ে দিলো। হ্যা করেছি নেশা আজ তোর এমন অবস্থা করবো যে তুই কল্পনাও করতে পারবি না। এই ইমন কতোটা ভয়ংকর হতে পারে
আজকের পর দেখবি তুই। দেখবি আমার রূপ কতো ভয়ংকর। তোকে ভালবেসেছি বলে এতোদিন তোকে আমি কিছু বলিনি কিন্তু আজ তুই কি করলি। তুই আমার পুরো পরিবারটাকেই শেষ করে দিলি।
মানে। ( তুতলাতে তুতলাতে বললো মুসকান )
এই চুপ একদম ন্যাকামি করবি না। তোর জন্য আমার দাদু হসপিটালে রয়েছে স্ট্রোক করেছে। তোর জন্য আমার বাবার মান সম্মান আমার মান সম্মান ধূলোয় মিশে গেছে । ইমন আর কিছু না বলে মুসকান কে টেনে বাথরুম থেকে বের করলো।
কি হয়েছে দাদুর?? আমি দাদুর কাছে যাবো।
এই চুপ সব ছেড়ে চলে গিয়েছিলি আর কোন অধিকার নেই তোর এই বাড়িতে। তোকে এনেছি একটাই কারনে সেটা কি জানিস। তোর মতো মেয়ের সাথে ঠিক যা করা দরকার তার জন্যই এনেছি। ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য তুই না। যা পাওয়ার যোগ্য সেটাই পাবি আজ তুই। বলেই মুসকানের ওড়নাটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো।পিছন দিকে ঘুরিয়ে জামার চেইন খুলে ফেললো।
মুসকান ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্লিজ আমাকে দাদুর কাছে যেতে দাও। এমন করো না প্লিজ। ইমনের পায়ের কাছে বসে পায়ে ধরে অঝরে কাঁদতে লাগলো মুসকান। ইমন আরো দ্বিগুন রেগে গেলো একটানে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। রাগে ক্ষোপে ঝাপিয়ে পড়লো মুসকানের উপর। মুসকান ছটফট করতে লাগলো। ইমনের শক্তির সাথে সে পেরে ওঠছে না। ইমন হুশে নেই নেশায় উন্মাদ হয়ে গেছে আজ সে । মুসকানের আর্তনাদ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না।
মুসকানের চিৎকার রুমের চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকলো। বাড়িতে একটা পিপড়াও নেই যে মুসকান কে ইমনের থেকে রক্ষা করবে।
সারারাত ইমন মুসকানের শরীরের উপর তার সমস্ত রাগ ক্ষোপ ঝাড়লো। মুসকান আর্তনাথ করতে করতে এক সময় চুপ হয়ে গেলো। তবুও ইমনের কোন খেয়াল নেই সেদিকে। এই একটা কারনেই আজ সে নেশা করেছে কারন হুশে থাকলে মুসকানের আর্তনাদ সে সহ্য করতে পারতো না।
শেষরাতের দিকে ইমন ছেড়ে দিলো মুসকান কে। মুসকান এখন আর চিৎকার করছেনা। কান্নার শব্দ ও পাওয়া যাচ্ছে না। ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে বাইরে চলে গেলো। মুসকান শরীর ব্যাথায় ওঠার সাহস পেলো না বিছানায়ই নেতিয়ে পড়লো। আজানের সময় মুসকান ওঠে বোসলো বিছানার চাদর গায়ে চেপেই বাথরুম চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। আয়নার সামনে তাকাতেই বিবস্ত্র অবস্থায় নিজেকে দেখে ডুকড়ে কেঁদে ওঠলো।
ঠোঁটে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে , ঘারে জখম হয়ে আছে কামিজ ওঠিয়ে পেটে তাকাতেই নোখের আচ দেখতে পেলো। গলার নিচে কামড়ের দাগ স্পষ্ট। চোখ বেয়ে পানি পড়েই চলেছে। ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালো ভাবে ঢেকে বাইরে বেরিয়ে এলো মুসকান। পুরো বাড়িটা শুনশান নিরবতা। কেউ নেই বাড়িতে ইরাবতীর রুমে যেতেই ইমন কে দেখতে পেলো ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে । আজি প্রথম ইমনের চোখে পানি দেখলো মুসকান। ছেলেরা নাকি সহজে কাঁদে না । তাহলে ইমন ভাইয়া কাদছে কেনো? আমাকে শাস্তি দিয়েও কি তার শান্তি হয় নি। মুসকান ভিতরে না গিয়ে চলে যাবে এমন সময় ইমন ওঠে দাঁড়িয়ে বললো-
তুই এখানে কেনো এসেছিস আর তুই এখনো এ বাড়িতে কি করছিস। বেরিয়ে যা আর কোন কাজ নেই তোর এ বাড়িতে । যা তোর জয়ের কাছে যা হসপিটালে গিয়ে বল তোর স্বামী তোর দেহ ভোগ করে তোকে বিদায় জানিয়েছে। দেখ তোর নাগর তোকে এক্সেপ্ট করে কিনা। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। মুসকান আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ালো না। দৌড়ে ইমনের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো। কি করে যাবে সে তার সব কিছু যে এখন ইমনের দখলে। একটা রাতেই যেনো সব বদলে গেছে। স্বামীর ছোঁয়া যে পবিএ ছোয়া সেই ছোয়া কি করে সে ওপেক্ষা করবে সে । আর কাল সে বুঝতে পেরেছে জয়ের সাথে তার ভালবাসার সম্পর্ক নয় যে টুকু সেটা শুধুই ভাললাগার সম্পর্ক ছিলো। যতটা টান সে ইমনের থেকে দূরে গিয়ে ইমনের প্রতি অনুভব করেছে ততোটা জয়ের সাথে থেকেও জয়ের প্রতি অনুভব করেনি। বরং সর্বক্ষন তার মনে ইমনই ঘুরছিলো। কিন্তু এখন কি করবে সে বাড়ির সবার কাছে কি করে মুখ দেখাবে।
রুমে কারো আসার শব্দ শুনে ওঠে তাকালো মুসকান।
রূপম ভাইয়া তুমি?
হ্যাঁ আমি। এই তুমি কেমন মেয়ে হ্যাঁ যে একটা ছেলের মন নিয়ে খেলা করো। একজন না এ বাড়ির প্রত্যেককেই নিয়ে খেলেছো তুমি ছিঃ।
ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে বলেই কেঁদে ওঠলো মুসকান৷ রূপম মুসকানের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তার সাথে কি ঘটেছে। তাই আর বাড়তি কথা না বলে বললো-
মুসকান আজ তোমাকে আমি অনেক বড় একটা সত্যি জানাতে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে আজ সবটা তোমার সামনে আসা উচিত। আর কতো বড় বেইমানী করেছো এই পরিবারের সাথে সেটাও জানা উচিত।
মমানে…………..
ইয়েস মুসকান। তাহলে শুনো আজ থেকে আঠারো বছর আগের ঘটনা………….. ( সব ঘটনা খুলে বললো রূপম )
সব শুনে ধপ করে বসে পড়লো মুসকান। তার মানে আমি এবাড়ির কেউ নই। আমার মা, আমার বাবা,আমার ভাই এরা কেউ আমার নয়।
না মুসকান এই বাড়িতে যদি আপন কেউ থেকে থাকে তোমার সেটা ইমন। আর মা বাবা যা পেয়েছো সবটাই তোমার ই কিন্তু এদের পেয়েছো ইমনের জন্যই। একবার ভেবে দেখো ঐটুকু বয়সে ইমন তোমার প্রতি কতটা টান অনুভব করে এখানে নিয়ে এসেছে। এ বাড়িতে সবাই তোমাকে এতো আদর স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছে শুধু মাএ ইমনের জন্য। ইমনের মতো করে এই পৃথিবীতে কেউ তোমাকে এতো আগলে রাখতে পারবেনা এতে ভালোবাসতে পারবেনা। এমন কি যে ছেলের জন্য তুমি এতো বড় অন্যায় করলে আজ সেও তোমায় মেনে নিবে না।
মুসকান রূপমের দিকে তাকালো।
হ্যাঁ মুসকান হ্যাঁ। জয় কখনোই তোমাকে নিখূত ভালোবাসেনি ও যা করেছে সবটা তোমার রূপের জন্য মন থেকে কোনদিনই তোমায় ভালোবাসেনি।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা জয় কে ফোন করো এই নাও ফোন। ফোন করে একবার জানাও যে ইমনের সাথে তোমার বৈবাহিক সব সম্পর্ক হয়েছে এটাও বলো সবটা জোর করে করা হয়েছে। সব শুনে জয় তোমায় মেনে নিতে পারবে কিনা শুনে নাও।
মুসকান নিজেও জানে সে জয় কে ভালোবাসেনা । আর ইমনকে ছেড়ে যাওয়া এখন আর সম্ভব না কারন মুসকান এখন সম্পূর্ণই ইমনের হয়ে গেছে । তবুও কি যেনো ভেবে জয়কে কল করলো । কাল রাতে যা হয়েছে সব বললো ।
দেখো মুসকান তুমি বিবাহিতো। আর তোমার জন্য এখন আমি হসপিটালে ভর্তি। দয়া করে আর আমাকে ফোন করো না । স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো । আর একটা সত্যি কথা আজ বলি তোমায় আমিও বিবাহিত বিদেশে আমার বউ রয়েছে। তোমাকে দেখে আমি লোভ সামলাতে পারিনি । তাই ভেবেছিলাম তোমাকে এক রাতের জন্য হলেও আমার কাছে নিয়ে আসবো। কিন্তু তুমি ইমন চৌধুরীর খুবই মূল্যবান সম্পদ তাই তোমার গায়ে আমি কেনো কেউ ই আচঁ লাগাতে পারবে না ।
মুসকান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ফোন রূপমের কাছে দিয়ে দিলো ।
আমি এতোটা জখন্য আমি কি করে ইমনকে এতো আঘাত দিতে পারলাম। যার দয়ায় বেঁচে আছি এতো সাম্ভ্রান্ত পরিবার পেয়েছি সেই তাকেই আমি ঠকালাম। এই পরিবারের এতো বড় ক্ষতি করে ফেললাম আমি।
অপরাধ বোধে মুসকান ভেঙে পড়লো।
রূপম আরো কিছু বলতে যাবে তখনি……. জ্ঞান হারায় মুসকান। জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই বার বার বলছিলো –
না এটা হতে পারে না এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
সারারাত শারীরিক যন্ত্রনা, রূপমের বলা কথাতে মানসিক ভাবেও বেশ আঘাত পায় মুসকান। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় তার শরীর অবশ হয়ে আসে । শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়েই জ্ঞান হারায় সে ।
চলবে…………………