বউ চুরি
পর্ব : ৭
লেখিকা :জান্নাতুল নাঈমা
গালে হাত দিয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠলো মুসকান। ঠোটের কোনায় কেটে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে। যা দেখে ইমনের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠলো। কি করবে সে কিছু বুঝে ওঠতে পারছে না। দ্রুত সেখান থেকে সরে গেলো। মুসকানের কান্না সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। না আছে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা।
ছোট কাকি…………..
এক ডাকেই দৌড়ে এলো দীপান্বিতা পিছনে ইরাবতী ও।
ইরাবতী বললো- বাবা মাথা ঠান্ডা কর। কি হয়েছে বল আগে।
একদম চুপ মা কোনো কথা বলবে না।
ঠিক এই কারনেই আমি ওকে ফোন দিতে চাইনি আজ দেখতে পারছো কতোদূর চলে গেছে বিষয় টা।
দেখো ইমন আজ আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমি অনেক আগেই তোমাদের বলেছিলাম মুসকান কে আগেই জানাও বিষয় গুলা। কিন্তু তোমরা ছোট ছোট করে আর এ বিষয়ে ওকে জানাওনি আমাকেও জানাতে দাও নি। আইনগত ভাবে মুসকান আমার মেয়ে হলেও ওর সব দায়িত্ব তোমরাই পালন করেছো। এমনকি শাসনটাও তোমরা করেছো। কোন ভুল করলেও বকা দেওয়ার সুযোগই দাওনি। ভাবি সবসময় ওর ভুলটা আড়াল করে নিয়েছে। আমি জানি সবটা ভালবাসা থেকেই করেছো ভাবি তবুও অতি আদরে বাচ্চারা বাদর হয়ে যায়।
আমি চাইলেও পারিনি শাসন করতে কারন দূর্বলতাটা এক জায়গায় মুসকান আমার পেটের সন্তান না।আর ইমনের জন্যই আমরা ওকে পেয়েছি। সবার আগে ইমনের অধিকার মুসকানের উপর । দীপান্বিতা কে থামিয়ে দিয়ে ইমন বললো-
কাকি মুসকানের কাছে যাও ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে।
দীপান্বিতা বড় বড় করে তাকালো। যতোই বলুক শাসনের কথা ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছে তার কিছু হলে ইমনের পর সবার আগে তার কষ্ট হবে।
দীপান্বিতা আর দেরী না করে মুসকানের রুমে চলে গেলো।
ইরাবতী ছেলেকে সান্ত্বনা দিলো- বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না। এই বয়সে ভুল হয়েই থাকে বয়সটাইতো এমন আবেগের। কিন্তু সেটা থেকে বের করে আনতে হবে আমাদের ওকে।
যে পর্যন্ত বিয়েটা না হচ্ছে মুসকানের ফোনটা তোমার কাছে রাখবে। ভুলেও যেনো ফোন ও না পায়। তাহলে কি হবে সেটা সবার কল্পনার বাইরে। বলেই চলে গেলো ইমন। ইরাবতী মুসকানের রুমে গিয়ে দেখলো
দীপান্বিতা কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে মুসকান।
ইরাবতী গিয়ে ওদের পাশে বোসলো।
মুসকান…
ইরাবতীর ডাক শুনে মুসকান ডুকরে কেঁদে ওঠলো। এতো বছরে কেউ তার গায়ে হাত তুলে নি। আর আজকে দুবার গায়ে হাত তুলেছে ইমন।
ইরাবতী আর দীপান্বিতা মিলে মুসকান কে অনেক বুঝালো। ইরাবতী হাতজোর পর্যন্ত করলো তার ছেলেকে গ্রহন করার জন্য। কিন্তু না মুসকান তার জেদ থেকে সরলো না। সে কখনোই মানতে রাজি না। তার মনে তার প্রথম ভালোলাগা জয়ই রয়ে গেছে। কিশোরী বয়সের প্রথম আবেগ।
তার সেই আবেগের কাছে এতোগুলো মানুষের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই।
পরের দিন মুসকান কলেজ যেতে চাইলেও তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হলো না।
তার ফোন ও বন্ধ করে ইরাবতী তার কাছে রেখে দিয়েছে। রূপম আর তার বউ রিপা আর মেয়ে রূপকে এসেছে। সব শুনে তারা খুবই আহত সব থেকে বেশী আহত হয়েছে রূপম। কারন রূপমই প্রথম ব্যাক্তি যে কিনা ইমনের চোখে মুসকানের জন্য গভীর টান অনুভব করেছে। ছোট্ট মুসকানকে তার অসহায় মা আর নানীর থেকে কিভাবে কতো কষ্টে এই বিলাসবহুল বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে তার প্রথম শাক্ষি এই রূপমই।
বড় মা চিন্তা করো না আমি আর রিপা মিলে মুসকান কে বোঝাবো। ইমন কোথায় এখন?
ইরাবতী বললো- ছেলেটা আমার একবারে ভেঙে পড়েছে। বাইরে থেকে যতোই নিজেকে শক্ত রাখুক না কেনো ওর ভিতরে কি হচ্ছে সেটা আমি ঠিকি বুঝতে পারছি। ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করেনা। রাতে ঘুমায় না বলেই মুখ চেপে কেঁদে ওঠলো।
বড় মা কাঁদবেন না আমরা সবাই মিলে মুসকান কে ঠিক বুঝিয়ে নিবো। আর দাদু তো এক ঘন্টার মধ্যেই এসে পড়বে।
হ্যাঁ। যাও তোমরা উপরে।
দীপান্বিতা কাকি কে দেখছি না যে?? ( রিপা )
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে – একি রূপ আপুন এসেছে নাকি??
রিপা আর রূপম বললো- কেমন আছো কাকি?
এই তো ভালো তোমরা?? এই যে রূপ আপুন এদিকে আসো।
ভালো। রূপ যাও মাম্মাম তোমার ছোট আপুন।
রূপ গুটি গুটি পায়ে দীপান্বিতার কাছে গেলো। রূপ খুবই শান্ত স্বভাবের । দীপান্বিতা রূপ কে কোলে তুলে নিলো। তাদের বংশে রূপমের ঘরেই প্রথম কন্যা সন্তান। তাই রূপ কে সবাই খুব আদর করে। সবাই জানে মুসকান প্রথম মেয়ে সন্তান মোতালেব চৌধুরীর বংশে। কিন্তু ইমনের পরিবার, রূপমের পরিবার আর দাদু ছাড়া কেউ আসল সত্যিটা জানে না।
রিপার সাথে মুসকান বেশ কিছু ক্ষন গল্প করলো। কিন্তু মুসকানের মনটা সেখানে নেই তাকে বেশ উদাসীন লাগছে। রিপা বুঝতে পারলো। রূপম কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে গেলো ইমনের রুমে ইমন এইমাএই ফিরেছে। রিপা মুসকান কে অনেক বুঝালো প্রথমে মুসকান মানতে না চাইলেও পরে চুপ করে রইলো।কারন সে বুঝে গেছে ইমন কে না মানলেও সবাই মিলে তাকে বাধ্য করবে। তাই সে আর কিছু না বলে চুপ থাকলো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে এসব থেকে বের হওয়া যায়।
জয় যদি দেশে থাকতো তাহলে সে জয়ের সাথে পালিয়ে যেতো তবুও ইমনকে সে মানতে পারবেনা। কিন্তু সে উপায় ও তার নেই তাই সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লো।
রূপ কে ঘুম পাড়ানোর জন্য রিপা চলে গেলো মুসকানের রুম থেকে।
ইমন আর রূপম বেশ কিছুক্ষন আলোচনা করলো। মুসকান কে তো মানতেই হবে ভাইয়া। যতো যাই হয়ে যাক মুসকান আমার ওকে আমি হারাতে পারবো না। যে কোন মূল্যে আমার ওকে চাই। ওকে চাই কি ও তো আমারই। সেই কোন ছোট বয়সেই ওকে আমার করে নিয়েছি আমি। সেই বয়স থেকেই একটা একটা করে স্বপ্ন বুনেছি। ঐ সময় যদি আমি ওকে ঐভাবে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আজ আমি কেনো পারবোনা ওকে আমার করে নিতে। যতোটা কঠিন হওয়া দরকার হবো। ভালোবেসে যদি নিজের করতে না পারি আজ যা হয়েছে এর থেকে কঠোরতর অবস্থা করে আমি ওকে নিজের করে নিবো। এক উপরওয়ালার ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে।
এতো হাইপার হোস না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দাদু তো আসছেই দেখ না কি হয় আজ রাতে।
কই বাড়ির সবাই কই গো?? আমার গিন্নি কোথায়……..। বউ মা…..। মোতালেব চৌধুরীর ডাকে সবাই নিচে নেমে এলো। দিপু গিয়ে জরিয়ে ধরলো। সবার সাথে কথা শেষে রূপম আর ইমনের সাথে কথা বললো।
কি দাদু ভাই আমার গিন্নি কোথায়??? ইমনের দিকে তাকিয়ে বললো মোতালেব চৌধুরী।
তোমার গিন্নির তোমার শোকে আর কোনোদিকে খেয়াল নেই। গিয়ে দেখে আসো তোমার গিন্নি কে। বলেই গট গট করে বেরিয়ে গেলো ইমন।
মোতালেব চৌধুরী চশমাটা ভালো করে চোখে লাগিয়ে রূপমের দিকে তাকালেন।
সব বলছি তুমি আগে রেষ্ট নিয়ে নাও কতো দূর থেকে এসেছো।
হ্যা বাবা আপনি আপনার রুমে যান সব গুছিয়েই রাখা হয়েছে। দিপা তুই বাবার ব্যাগটা নিয়ে রাখ। ইরাবতী কথাটা বলেই শ্বশুরের জন্য খাবাড় তৈরী করতে লাগলেন সাথে রিপা সাহায্য করছে।
মুসকানের রুমে রূপ ঘুমাচ্ছে। মুসকান দাদু আসার খবড় শুনে বরাবরের মতো খুশি হয়নি। কারন এবার দাদু এসেছে তার আর ইমনের বিয়ে উপলক্ষে। তাই সে রাগে দাদুর সাথে দেখা করতেও যায় নি।
কই আমার গিন্নি কোথায়? বলতে বলতেই রুমে ঢুকলেন মোতালেব চৌধুরী। মুসকান ওঠে বললো- কেমন আছো দাদু ভাই।
মোতালেব চৌধুরী দুকাধে ধরে মুসকানের কপালে চুমু খেলো।
কেমন আর থাকি গিন্নি আমার আসার খবড় শুনেও একবারের জন্য ও বাইরে আসে নি। কি আর থাকি বলো। বিছানায় বসলো মোতালেব চৌধুরী রূপ কে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো – দেখো একদম তোমার মতো হয়েছে দেখতে। সেই গুলগাল মুখটাই বসানো। ঠিক যেনো ছোট্ট মুসকান।
মুসকান চাপা হাসলো। বরাবরের থেকে পুরোই আলাদা আচরন । মোতালেব চৌধুরী ও বুঝতে পারলো। রূপম সবটাই খুলে বলেছে তাকে। তাই সে মুসকান কে কাছে ডেকে তার পাশে বসিয়ে তার একহাত চেপে বললো- এই যে গিন্নি সাহেবা আমার দাদু ভাই টা কি এতোই অপছন্দের পাএ নাকি? যে তাকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছো।
মুসকানের প্রচুর রাগ হলো কিন্তু এই বয়স্ক মানুষটার সামনে সেটা প্রকাশ করলো না। হাত ছাড়িয়ে বললো- কিছু খেয়েছো দাদু ভাই চলো খাবে।
কথা ঘুরাচ্ছো?? বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো মোতালেব চৌধুরী।
মুসকান ইতস্ততভাবে বললো- না মানে আসলে।
না মানে আসলে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে তাইতো গিন্নি।
মুসকান কিছু বললো না বড্ড চুপসে গেছে মেয়েটা। সত্যি কি তাই নাকি মনের ভেতর অন্য কিছু চলছে?
মোতালেব চৌধুরী ও বেশ বোঝালো মুসকান কে মুসকান শুধু হু হা করলো । কিছুক্ষন পর কি যেনো ভেবে মুসকান বললো- দাদু বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া যায় না? আমার আব্বুও তো এখানে নেই বড় ভাইয়াও নেই। তাদের ছাড়া কিভাবে…..
আরে গিন্নি চিন্তা করছো কেনো? এখন তো শুধু পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হবে। মইন আর দ্বিপক আসলে বড় অনুষ্ঠান করবো। ইমন দাদু ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
হায় আল্লাহ কোনোভাবেই কি সম্ভব না এই বিয়ে আটকানো। কেউ আমার কথা শুনছে না কেউ ভাবছে না আমার কথা সবাই ইমন ইমন করছে। আমি যেনো এ বাড়ির কেউ না।
কি হলো গিন্নি সাহেবা চলুন। খেতে ডাকছে তো।
ভাবনা থেকে বেরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে – হুম চলো।
সবাই একসাথে খেতে বসেছে । ইমন মুসকান মুখোমুখি মুসকান নিচের দিকে মুখ করেই খেয়ে যাচ্ছে। ইমন, রূপম, মোতালেব চৌধুরী, মোজাম্মেল চৌধুরী কথা বলছে। ইমনের কন্ঠ মুসকানের কানে বিষের ছুরির মতো আঘাত করছে। গলা দিয়ে তার খাবাড় যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে – প্রত্যেকটা মানুষ ই যেনো জোর করে ভালবাসবে জোর করে সব চাপিয়ে দিবে। আমার জীবনটাই এমন যে সবার জোরের উপর চলতে হয়। নিজের মা ও কেমন পর হয়ে গেছে। চোখ দুটো টলমল করছে পানিতে। কেউ খেয়াল না করলেও ইমন ঠিকি খেয়াল করছে। সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে এদিকে মুসকান ওর ফোন খুঁজে হয়রান। কোথাও পেলো না তার ফোন। অবশেষে তার মায়ের কাছে জিগ্যাস করতেই তার মা তাকে ইচ্ছে মতো অপমান করে দিলো জয়ের কথা বলে খুব অপমান করলো। আর বললো ইমনকে মেনে নিতে নয়তো নিজের ভাগ্য নিজে খাবি। মুসকান রাগে ক্ষোপে নিজের রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো।
মা মেয়ের এই কথোপকথন আর কেউ না জানলেও ইমন ঠিকি জানলো।
পরের দিন সকালে –
ছোট খাটো অনুষ্ঠানের আয়জন করা হয়েছে। বাড়ির লোক ছাড়া বাইরের আর কাউকেই আনা হয়নি। শুধু রায়া কে আনা হয়েছে ইমনই খবড় দিয়ে এনেছে রায়া কে। মুসকান কে ঘুম থেকে ওঠিয়ে গোসল করতে বলা হলো। কিন্তু না সে জেদ করে বসে রইলো সে কিছু করবে না। রায়া তাকে একঘন্টা বুঝিয়েছে না কোনো লাভ হয়নি। সবার সাথেই বাজে আচরন করেছে মুসকান। মোজাম্মেল চৌধুরী একদম চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। কিন্তু সে রেগে গেলে আর কারো উপায় থাকবে না। সেও যথেষ্ট বিরক্ত – কি বেয়াদবী পুরো বাড়ির মানুষ কে নাচাচ্ছে মেয়েটা। সবাই এতো এতো রিকোয়েস্ট করছে তবুও কাজ হচ্ছে না । রেগে গিয়ে বললো মোজাম্মেল চৌধুরী। কথাটা ইমনের কানে যেতেই ইমন প্রচন্ড রেগে গেলো।
ইরাবতী মোজাম্মেল চৌধুরী কে চুপ করতে বলছেন না চুপ করছেনা বলেই যাচ্ছে । ছোট থেকে এতো আদরে মানুষ করা হলো আর সেই মেয়ে কিনা আমাদের উপর দিয়ে যায়।
আমার ছেলে কে তার মানতে এতো অসুবিধা আবার বাইরের ছেলের জন্য তার মন কাঁদে। কি পেয়েছে টা কি মেয়েটা। এতোটা বেয়াদবী আমার বাড়িতে কেউ করে পাড় পেয়ে যাবে এটা কিন্তু ভেবো না কেউ।
তুমি চুপ করবে কেউ শুনে ফেলবে তো। বাড়ির সবাই কাজে ব্যাস্ত থাকায় মোজাম্মেল চৌধুরীর কথা গুলো ইরাবতী আর ইমন ছাড়া কেউ শুনতে পায় নি।
ইমন তার বাবার বলা কথা গুলো শুনে রাগে সেখান থেকে দ্রূত উপরে চলে গেলো।ছেলের এভাবে চলে যাওয়ায় মোজাম্মেল চৌধুরী চুপ হয়ে গেলো।
বার বার বলছিলাম চুপ থাকো চুপ থাকো। আমার ছেলেটাকে সবাই মিলে আর কতো কষ্ট দিবে তোমরা রেগে গিয়ে বললো ইরাবতী।
মোজাম্মেল চৌধুরী ও সেখান থেকে চলে গেলেন। রাগ এবার তার ও ওঠেছে। চৌধুরী বাড়ির সব হাসি যেনো মিইয়ে গেছে। অশান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে এ বাড়িতে। ইরাবতী অশান্তি মনেই কাজে মন দিলেন।
এতোদিন একটা বেয়াদব মানুষ হয়েছে এবাড়িতে। বাবার চোখে কতোটা ছোট হয়ে গেলে মুসকান ছি। সবকয়েকটা মানুষ আজ বিরক্ত তোমার উপর। তোমার ত্যাজ যদি আজ এই ইমন নাভেঙেছে।ভাবতে ভাবতেই মুসকানের রুমে ঢুকলো ইমন।
মুসকান চুপ করে বসে আছে আশে পাশে কিচ্ছু খেয়াল রাখছে না। রায়া একাই বক বক করে যাচ্ছে বুঝাচ্ছে তাকে।
ইমন বললো- রায়া নিচে যাও মায়ের কাছে।
রায়া ওঠে বললো- আচ্ছা ভাইয়া যাচ্ছি।
মুসকান ইমনের কথা শুনে চমকে ওঠলো।
রায়া বের হতেই সেও বের হতে যাবে এমন সময় তার আগেই ইমন গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
দরজা লাগাচ্ছ কেনো? আমি বাইরে যাবো বলেই সিটকেরি খুলতে যাবে এমন সময় ইমন তাকে পাজাকোল করে নিলো।
কি করছো ছাড়ো আমায়। ছুবে না আমায় তুমি।
ছাড়ো বলেই ধস্তাধস্তি করতে লাগলো।
চুপপ…ধমকে ওঠলো ইমন। একদম কোনো কথা নয় বলেই বাথরুম গিয়ে বাথরুমের দরজা চাপিয়ে দিলো।
এখানে কেনো আনলে ছাড়ো আমায়।
ইমন কোল থেকে নামিয়ে দিলো মুসকানকে।
এতো ছুটাছুটি করে কি লাভ ছুটার ক্ষমতা টা তো আল্লাহ তায়ালা দেয় নি তোমায় । বলেই বাঁকা হাসলো ইমন। মুসকান বাথরুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই ইমন মুসকানের কোমড় শক্ত করে চেপে একদম নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
মুসকান নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো ইমনকে । কিন্তু তার শক্তির সাথে সে পেড়ে ওঠলো না।
একদম নিজের কাছে নিয়ে মুসকানের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো- সবাই যেটা পারেনি এই ইমন সেটা করে দেখাবো এখন।
মুসকান ভয়ে ঢোক গিললো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো- আমাকে যেতে দাও। আমি বাইরে যাবো। ইমনের একহাতই ছাড়াতে পারছে না মুসকান এতোটা শক্ত ভাবেই ধরে আছে তাকে।
মুসকান আর কোন উপায় না পেয়ে ইমনের বুক বরাবর জোরে কামড় দিলো। তবুও ইমন তার হাতের বাঁধন আলগা করলো না। বাঁকা হাসলো।
মুসকান খুনের আসামির মতো ভয়ে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে ইমনের মুখের দিকে তাকালো মুসকান। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।
ইমন তার বুকের দিকে তাকিয়ে বললো- ভালবাসার প্রথম চিহ্ন টা দিয়েই দিলে। ( বাঁকা হেসে)
মুসকানের প্রচন্ড রাগ হলো। গন্ডারের চামড়া ( মনে মনে)
ছাড়ো আমায় প্লিজ।
ইমন দরজায় হেলান দিয়ে ছেড়ে দিলো মুসকান কে। প্লিজ যেতে দাও আমায়।
চুপপ ছাড়তে বলেছো ছেড়েছি। কিন্তু যেতে দেবো সেটা ভেবো না।
এই কি শুরু করেছো সকাল থেকে প্রত্যেকটা মানুষ কে হয়রান করেছো। অনেক সময় দিয়েছি। কিন্তু না সোজা কথার মানুষ তুমি না। সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে আঙুল বাঁকা করতে এই ইমন চৌধুরী খুব ভালো করেই জানে। বলেই একটানে গায়ে থেকে ওড়না নিয়ে ছুড়ে ফেললো।
মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। পিছন ফিরে দাঁড়ালো। ভয়ে তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।
ইমন ঝড়নাটা জুরে দিলো মুসকানের পিছনে একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনেই একসাথে ভিজছে।
ইমনের বেশ ভালোই লাগছে বিয়ের দিন একসাথে বর বউ গোসল করছে । যার মাঝে আলাদা এক অনুভূতি আছে। কিন্তু মুসকানের অনুভূতি টা খুবই বাজে ছিলো । রাগে, ক্ষোপে লজ্জায় সে ইমনের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
এটাই তো চেয়েছিলে তুমি তাইতো সবার অবাধ্য হচ্ছিলে তাইনা । বলেই দুহাতে ধরে মুসকানকে তার দিকে ফেরালো।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। ভয়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়ালো। ভেজা শরীরে খুব অসস্থিতে ভুগছে সে। একহাত দিয়ে ভেজা চুল গুলো বুকের উপর এনে ফেললো।
ইমন বাকা হাসলো । ভেজা শরীরে তার বউ কে খুবই স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো ইমনের। ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিচ্ছে সে। মুসকান ভয়ে এক পা পিছতেই ইমন শক্ত করে এক হাতে কোমড়ে চেপে একদম তার কাছে নিয়ে নিলো।
মুসকান হাত দিয়ে তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর ইমন এক ধ্যানে তার ভেজা মাতাল করা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইমনের ঘন নিশ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই সে ছটফট করতে লাগলো। হাত দিয়ে বার বার ধাক্কাতে লাগলো। কার জেদ কতোটা সেটার যেনো পাল্লা চলছে। একজন কাছে আসতে চাইছে আরেক জন দূরে সরতে চাইছে। আজ যেনো তাদের জেদের ওজন মাপা হবে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে। ইমন বিরক্ত হয়ে মনে মনে বললো- এই মেয়েটার কি কোনো অনুভূতি নেই। একে তো আজ আমি মনে মনে বলেই রাগ থেকেই সে জোর করে মুসকানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মুসকান হাত দিয়ে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করছে তবুও পারছে না। দুজনেই ভিজে চলেছে সমান তালে। যতোই মুসকান ইমনকে ছাড়ানোর জন্য তার নোখের আচ লাগাচ্ছে ততোই ইমন ক্ষেপে যাচ্ছে ভালবাসা রাগ সবটাই যেনো তার ঠোঁটের উপর ঝারছে আজ। সাথে শক্ত করে চেপে আছে তার কোমড়। মুসকান এর চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। দম যেনো তার আটকে যাচ্ছে।
বেশ সময় পর ছেড়ে দিলো মুসকান কে। একবার মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
নিজের রুমে পা ফেললো সে । আজ যেনো কোন কিছুই কন্ট্রোলে ছিলো না তার।
মুসকান সেখানেই বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। গলা ফাটিয়ে কাঁদছে সে। কতোটা রাগ ঘৃনা যে হচ্ছে তার কান্নার মাঝেই ফুটিয়ে তুলছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট দেখছে আর কাঁদছে। গোলাপি ঠোঁট টা রক্ত জমাট বেঁধে কালচে বর্ন ধারন করেছে। নিজেকে দেখে দেখে কেঁদেই চলেছে সে।
বিয়ে করবে আমায় তুমি বিয়ে। আচ্ছা ইমন চৌধুরী বিয়ে করার শখ যদি না মিটিয়েছি আমি।তোমার সম্মান যদি ধূলোয় মিশিয়ে না দিয়েছি তাহলে আমার নাম ও মুসকান না। এই মুসকান কি করতে পারে এবার হারে হারে টের পাবে তুমি।
তোমার মান সম্মান নিয়ে যদি আমি না খেলা করেছি তো আমি ও এই চৌধুরী বাড়ির মেয়ে না । জেদ শুধু তোমার না আমারো আছে। বিয়েটা আমি করবো কিন্তু সংসার আমি যাকে ভালবাসি তার সাথেই করবো। আজ হোক বা কাল হোক শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমার জীবনটা নরক করে তুলবো আমি।
আর সব শেষে এমন খেলা দেখাবো যেটা এ বাড়ির কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
সবাই যদি স্বার্থপর হতে পারে আমি কেনো পারবো না।
এ বাড়ির কেউ যখন আমার কথা চিন্তা করেনি আমি কেনো করবো ।
না কখনোই না বিয়েটা আজ আমি করবো। কিন্তু এর পরিনতি কতোটা ভয়াবহ হবে তুমি ভাবতেও পারছো না। মি. ইমন চৌধুরী । চোখের পানি মুছে বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো মুসকান। রুমে এসে এসে দেখলো বিছানায় বেনারশী গয়না রাখা আছে। সেই সাথে রিপা আর রায়াকেও দেখতে পেলো।
একদম বউ এর সাঝে সাজিয়েছে মুসকান কে। দেখতে অপরূপ লাগছে। মুসকান ও বেশ শান্ত হয়েই রয়েছে । সবাই যা বলছে সব শুনছে। বেশ অবাক হলো সবাই।
ইমনও বেশ অবাক এতো শান্ত যে? ওষুধ টা কি কাজে লাগলো?? নাকি পেটে কোন শয়তানি বুদ্ধি আঁকছে।
চলবে……………..