বউ চুরি
পর্ব : ৬
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা
প্রচন্ড রাগ নিয়ে মুসকানের রুমে গিয়ে লাইট অন করে একটানে বিছানা থেকে তুলে ফেললো। দুগালে কঠোর করে চিপে প্রশ্ন করার কথা ছিলো তুই এতো সাহস কোথায় পেলি। কিন্তু তা হলো না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে এমন সময় ধরে ফেললো ইমন বুকের বা পাশটায় হেলে পড়ে আছে মুসকান । যতোটা রাগ ক্ষোপ নিয়ে এসেছিলো সবটা পানি হয়ে গেছে মুসকানের ঘুমন্ত মুখটা দেখে। ঘুমের তালেই আষ্টেপিষ্টে জরিয়ে ধরলো ইমন কে। ইমনের শরীরটা শীতল হয়ে গেলো। ভালবাসার মানুষের স্পর্শ পেয়ে তার পুরো শরীরে শীতল শীহরন বয়ে গেলো।
ধাও ধাও করে জ্বলে ওঠা আগুনে কেউ যেনো এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে। ইমনের অনুভূতি টা এখন ঠিক তেমনি। মুসকানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে সব ভুলে গেলো ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো। ঘুমন্ত মুসকান কে বরাবরই তার অপরূপ সুন্দরী লাগে। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ঐ মায়া ভরা মুখটার দিকে। আমার বউ, আমার মুসকান, আমার স্লিপিং বিউটি বলেই কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।
এতো ঘুম বর এসে আদর করে যাচ্ছে তবুও টের ই পাচ্ছে না মুচকি হেসে ভাবলো ইমন।
মুসকান কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিয়ে। আশে পাশে তাকালো হ্যাঁ যেটা খুঁজছে সেটা পেয়েছে। মুসকানের ফোন টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ইমন।
নিজের রুমে গিয়ে ভালো ভাবে ফোন চেক করলো। সবার সাথে মেসেজিং দেখলো সবটাই স্বাভাবিক। শুধু অস্বাভাবিক ছিলো জয়ের সাথে করা মেসেজিং।
ইমনের ইচ্ছে করছে জয়কে গিয়ে খুন করতে আর মুসকান কে কঠোর শাস্তি দিতে।
কিন্তু ভালবাসার মানুষের কাছে যে প্রত্যেকটা মানুষ ই দূর্বল। কি করে শাস্তি দিবে সে মুসকানকে। সেই ছোট্ট বাচ্চাটা যাকে কিনা সেই আট বছর বয়স থেকেই ভালোবেসে এসেছে। শুধু ভালবাসা নয় পরম স্নেহে মানুষ করেছে। ষোল বছর ধরে স্বপ্ন বুনেছে। ভালবাসার মাএা টা যে গভীর থেকেও গভীর। মুসকান তার সম্পত্তি নয় মুসকান তার সম্পদ।
বয়সটা তো অনেক কম এই বয়সে ভুল পথে যাবেই। কিন্তু সেই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার । সে আমার বউ। এই পৃথিবীতে সে শুধুই আমার জন্য এসেছে। তাইতো তার টানে আমি সেই দূরান্তে থেকে নিয়ে এসেছিলাম তাকে। সে যে শুধুই আমার, শুধুই আমার। আর আমার জিনিসে অন্য কেউ হাত দিলে সেই হাত আমি তুলে নিবো।
নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে বলতে মাঝরাতে মায়ের রুমে এসে দাঁড়ালো ইমন।
দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই ইরাবতী বেরিয়ে এলো। এতো রাতে তুই? কি হয়েছে বাবা? শরীর খারাপ?
না মা আমার রুমে চলো কথা আছে৷ বলেই মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো নিজের রুমে।
ইমন তার মা কে সবটা বললো। মুসকানের করা প্রত্যেকটা মেসেজ ও বললো।ইরাবতী ভাবতে পারছেনা এমনটা হবে। ছেলের মনের অবস্থার কথা ভেবে তার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো।
বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিস।
না মা তুমি ক্ষমা চাইছো কেনো। তোমার তো দোষ নেই। কিন্তু এখন আমি যা বলছি তুমি তাই করবে।
ইরাবতী ছেলের দিকে তাকালো।
ইমন তার দাদু কে গ্রাম থেকে আসতে বললো।রূপম তার বউ আর তার তিনবছরের মেয়েকেও আসতে বলার জন্য বললো।দীপান্বিতা কে সকালে সবটা জানাতে বললো।আর মুসকানকে বুঝানোর দায়িত্ব ইরাবতী কে আর দীপান্বিতা কে দিলো। এখনি যদি সবটা বুঝে না নেয় তাহলে বড্ড দেরী হয়ে যাবে । যা হয়েছে যতোটুকু এগিয়েছে আর এগোতে দিতে মোটেই রাজি না ইমন৷ তার জিনিস সে এবার বুঝে নিতে চায়। ইরাবতী আর কিছু বললো না । ছেলের কথা মেনে নিয়ে ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে গেলো। কারন তার আর কিছু বলার মুখ নেই।
বাচ্চা ছেলে হয়ে সেই আটবছর বয়সে যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছো । ছোট থেকে আগলে মানুষ করেছে। কোন বিপদ আসতে দেয় নি অসহায় পরিবারের মেয়েকে নাম করা পরিচয়ে বড় করেছে। সবটা তো তার ভালবাসার জন্যই। বাচ্চা থেকেই যাকে বউ মেনে এসেছে তাকে কি করে অন্যকারো হতে সহ্য করবে। সব টা ভেবেই ইরাবতীও সম্মতি দিলো। শুধু চিন্তা হলো মুসকান কে নিয়ে। মেয়েটাও যে বড্ড জেদী।
ইমন রাতেই জয়ের সব ডিটেইলস খুজে বের করলো। আর যা পেলো তাতে জয় এই দেশেই থাকেনা। দুবছর যাবত দেশের বাইরে আছে দেশে ফিরতে আরো একবছর। তাই ইমন জয়কে নিয়ে এখন আর ভাবলো না। এখন তার কাজ মুসকান কে নিজের করে পাওয়া। কিন্তু রাগ হলো একটা কথা ভেবেই সেই বিদেশি লোক ই খুজে বের করলো। এই একটা বিষয়ের জন্য ছোটবেলায় তোমার পুতুল খেলাই বন্ধ করে দিয়েছি। যে পর্যন্ত বিয়ে না হচ্ছে সে পর্যন্ত ফোন ইউস করাও বন্ধ করলাম। বিদেশি লোক এতোই পছন্দ।কিন্তু জয় তো বিদেশি না আচ্ছা যাও হানিমুনে দেশের বাইরেই নিয়ে যাবো। আর জয়ের ব্যবস্থাও নিবো দেশে ফিরুক।
ঘুম থেকে ওঠে মুসকান ফোন খুজে না পেয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। দীপান্বিতা কে ইরাবতী সবটা খুলে বলায় সে মুসকানের উপর বেশ রেগে আছে। মুসকানের চেচামেচি তে রুমে এসে বললো- কি হয়েছে চেচাচ্ছিস কেনো?
আমার ফোন কোথায় আম্মু??
ফোন নেই।
নেই মানে ফোন দাও আমার।
চুপ চিল্লাচ্ছিস কেনো? তোকে ফোন কে কিনে দিয়েছে জানিস?
মানে এখানে কে কিনে দিয়েছে এটা আসছে কেনো?
আসছে কারন ফোন টা ইমন কিনে দিয়েছে।
মুসকান রেগে গেলো । দীপান্বিতার সামনে গিয়ে বললো-
আমি তো ভাইয়াকে কিনে দিতে বলিনি। আমার বাবার কি টাকা কম পড়েছে আম্মু যে সব ভাইকে দিতে হবে। আর ফোন কিনে দিয়েছে বলে সেটা আবার নিয়েও নিয়েছে নাকি। তাহলে কিনে দিয়ে নিজেকে বড় দেখানোর মানে কি?
মুসকান ছি এতটা বেড়ে গেছিস তুই। ধমকে ওঠলো দীপান্বিতা।
মুসকান এতোদিন আমরা তোমাকে কিছু বলিনি কারন ইমন নিষেধ করেছিলো।ও চেয়েছিলো আরো কিছু বছর পর সব তোমায় জানানো হবে। কিন্তু তুমি এতটা বেড়ে যাবে আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। তাই আর সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।
মানে কি জানাওনি আম্মু? কি বলছো?
তুমি যখন অনেক ছোট তখনি আমরা ইমনের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। এমনকি তোমাদের সামাজিক রীতিতে বিয়েও হয়েছে সেই চার বছর বয়সে আর ইমনের বারো বছর বয়সে।
কিহ….. কি বলছো এসব । তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোমরা এটা কিভাবে করতে পারো। আর বিয়ে কিসের বিয়ে এগুলো আমি মানি না। বাচ্চা বয়সের এইসব কখনো সত্যি না।
মুসকান চুপ করো তোমাকে এটা মানতেই হবে । তোমার দাদীর শেষ ইচ্ছা এটা আর তোমার দাদু আজই আসছে তোমাদের আবার বিয়ে দেওয়া হবে। তখন ছোট হলেও এখন তোমরা কেউই ছোট না।
অসম্ভব আম্মু আমার পক্ষে এই বিয়ে সম্ভব না। আর ইমন ভাইয়া কে আমি ভাই হিসেবে দেখে এসেছি তার সাথে তো কখনোই পসিবল না।
তোমার নিজের ভাই না মুসকান। নিজের কি কোনো রক্তের সম্পর্কই তো নেই তোর এ বংশের সাথে সেটা কি করে বুঝাই তোকে। ( মনে মনে)
দেখ সামাজিক রীতি তে তুই ইমনের বউ। আর এ বাড়ির সবাই সবটা জানে। তুই মেনে নে সবটা এতেই মঙ্গল। আর চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো ভাই বোনদের বিয়ে হয় রূপম তো খালাতো বোনকে বিয়ে করেছে। এটা কোনো সমস্যা না।
কিসের মঙ্গল আমি কিছুতেই এটা মানতে পারবো না কিছুতেই না । বেরিয়ে যাও রুম থেকে বেরিয়ে যাও। চিৎকার করে বলতে বলতে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিলো দীপান্বিতা কে। দরজা লাগিয়ে পুরো রুম তছনছ করে ফেললো। কিছুতেই সে মেনে নিতে পারছে না এসব।সব কিছু আজ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো তার কাছে। তার মানে এটাই আসল কারন। সবাই জানতো শুধু আমি ছাড়া। আমার কথা কেউ ভাবলো না সবাই তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী সব ডিসিশন নিয়ে নিলো। ছোট বেলায়ই সবটা নিজেদের মতো করে সাজালো। একবারো ভাবলো না আমি কি চাই। সবাই এটা কি করে করতে পারলো কান্নায় ভেঙে পড়লো মুসকান।
দরজার বাইরে ইমন দাড়িয়ে সবটা শুনেছে। দুহাত মুঠ করে দেয়ালে শক্ত করে কয়েকটা ঘুষি দিলো। দীপান্বিতা বললো-
ইমন তুমি ও এমন শুরু করো না। দুজনই এমন করলে কেমন হবে। সময় দাও একটু মেয়েটাকেও তো একটু বুঝতে হবে।
ইমন কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
পুরো বাড়ি টা থমথমে হয়ে গেছে । মুসকান দরজা খুলার নাম করছে না। না করছে কোনো সারা শব্দ । বারোটা বেজে গেছে ইমন ও রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। সেও খুলছেনা দরজা সবাই টেনশনে পড়ে গেলো। কিন্তু কারো সাহস হলো না ইমনকে ডাকার। বেশকিছুক্ষন পর দিপু এসে ইমনের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল- ভাইয়া আপু দরজা খুলছে না কিছু বলছেওনা। তুমি দরজা খুলার ব্যবস্থা করো যদি আপুর কিছু হয়।
কিছুক্ষন পড়েই ইমন দরজা খুললো। দরজা খুলে সোজা মুসকানের রুমের দিকে গেলো । কাধ দিয়ে দুটা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। জিম করা বডি গায়ে বেশ জোর রয়েছে তাই আর কিছুর প্রয়োজন পড়লো না। দরজা খুলতেই দেখলো মুসকান ফ্লোরে পড়ে আছে। ইমন কাছে যেতেই দেখলো মুসকান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। আর কিছু না ভেবে মুসকান কে পাজাকোলে নিয়ে নিলো।
সাথে সাথে মুসকান রাগে ক্ষোপে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বললো- ছাড়ো তুমি ছুবেনা আমাকে ছাড়ো। কেউ ছুবে না আমায়। ইমন সেদিকে পাত্তা দিলো না তার মতো সে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো। মুসকান ধপ করে ওঠে দাঁড়ালো। ইমনের চোখে চোখ রেখে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ইমন মুসকানের চোখ দেখে অবাক হয়ে গেলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে। লাল টকটকে হয়ে গেছে চোখ দুটো।
আঙুল তুলে মুসকান বললো- আজকের পর আমার আশে পাশেও তুমি আসবে না। অনেক সহ্য করেছি আর না । স্বামী সাজতে এসেছো স্বামী? বিয়ে করবে বিয়ে? তোমার লজ্জা হওয়া উচিত ভাইয়া লজ্জা হওয়া উচিত তোমার ছি ঘেন্না হচ্ছে তোমাদের সবার প্রতি।
পুতুল খেলা পেয়েছো আমার জীবনকে তাইনা। এই মুসকান কোনোদিন ও তোমাকে বিয়ে করবে না।
ইমনের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। বড্ড বড় বড় কথা শিখেছে আঙুল তুলে কথা বলা। চোখ রাঙানো সবটা সহ্য করেছে ইমন। কিন্তু বিয়ে করবে না এটা সহ্য করতে না পেরে দু হাতে মুসকানের গাল দুটো শক্ত করে চেপে ধরলো। মুসকান উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে ইমন যে তার থেকে বেশ লম্বা।
বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে। আমার বউ তুমি, সেই কবেইতো বউ করে নিয়েছি তোমায়। সামাজিক রীতিতে তোমার উপর সব অধিকার আছে আমার সব।
ইমনের নিশ্বাস মুসকানের মুখের উপর পড়তেই মুসকান এক ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে দিলো।
ছাড়ো আমায় ছুবেনা আমাকে। গা ঘিনঘিন করছে আমার ঘেন্না লাগছে তুমি ছুলেই। ছুবে না আমাকে।
মুসকান তুমি মাথা ঠান্ডা করে সব কথা শুনো। আমাকে রাগিয়ে দিয়ো না।
কি করবে রাগালে কি করবে মারবে? কাটবে? যা ইচ্ছে করো তবুও তোমাকে আমি স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। সম্ভব না আমার পক্ষে কখনোই না তেড়ে এসে বললো মুসকান । আজ যেনো কারো কথাই সে শুনবে না। আগুনে ঘি ঢেলে দিলে যা হয় তেমনটাই হয়েছে আজ। মুসকানের রাগ জেদ যেনো হাজার গুন বেড়ে গেছে। ইমন নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুসকান এর কথায় সে তার কন্ট্রোল বার বার হারিয়ে ফেলছে।
আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে একমনে – করবোনা তোমাকে বিয়ে আমি৷ পৃথিবী ওলটে গেলেও না।
ইমন মুসকানের হাত শক্ত করে চেপে পিছন দিকে বাঁকিয়ে একদম তার কাছে নিয়ে নিলো।
একদম বুক বরাবর চেপে ধরে আছে মুসকানকে মুসকান ছুটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু ইমনের শক্তির সাথে সে পেরে ওঠলো না।
ছাড়ো আমায় ছাড়ো। আমার লাগছে ছাড়ো।
এক হাত পেটের কাছে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন । আরেক হাতে মুসকানের ডানহাত শক্ত করে চেপে আছে । কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর গলায় বললো- অনেক বলে ফেলেছো আর না। আঙুল তুলে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না । বার বার ভুল করলে তার শাস্তি তো পেতেই হবে বলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো হাত । মুসকান ব্যাথায় কুকঁড়িয়ে গেলো। চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়তে লাগলো। ইমন সেদিকে খেয়াল না করে বললো- স্বাধীনতা তাকেই দেওয়া হয় যে স্বাধীনতার সৎ ব্যবহার করতে জানে। স্বাধীনতার অপব্যবহার কারীর কাছ থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়াই শ্রেয় । আর রইলো বিয়ে বিয়ে করবে কি করবে না সেটা ঠিক করবো আমি না তুমি কিছু বলবে না আমি তোমার কথা শুনবো । আর এই ত্যাজ টা সবার সাথে দেখাও আমার সামনে একদম দেখাতে আসবে না।
বলেই ছেড়ে দিলো মুসকান কে। রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মুসকান হাতে ব্যাথায় হাত ধরেই বসে কাঁদতে থাকলো। ছি তুমি এতো জখন্য ছি। জোর করে কিছু পাওয়া যায় না ইমন চৌধুরী এটা মনে রেখো। এই মুসকান কিছুতেই তোমাকে মেনে নিবে না। মুসকানের রাগ যেনো আরো হাজার গুন বেড়ে গেলো।
আমি এতোটা কঠোর হতে চাইনি মুসকান।
তুমি আমাকে বাধ্য করেছো।
ইমন ইরাবতীকে মুসকানের খাবার আর ব্যাথার মলম নিয়ে যেতে বললো। তার বউ কতোটুকু ব্যাথা সহ্য করতে পারে সেটা তার খুব ভালো করেই জানা।
ফুলের টোকা পড়তে দেয়নি এতোবছর মুসকানের গায়ে কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই
তাকে এতুটুকু করতে হলো। মাথাটা তার যে ছোট থেকেই বেশ গরম। মুসকান ও এতোদিন তার সামনে এমন আচরন করতে পারেনি। কিন্তু আজ যা করেছে যা বলেছে এর পর ইমন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি।
ইরাবতী মুসকানের হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে – দেখ মুসকান ইমন সেই ছোট থেকে তোমাকে ভালোবাসে। আমরা সবাই তেমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। এ বংশে মেয়ে ছিলো না তুমি আসার পর সবাই তোমাকে আগলে মানুষ করেছে। আমাদের বংশের একমাএ মেয়ে তুমি। তাই ইমনের সাথে বিয়ে দিয়ে এ বাড়িতেই রাখতে চাই আমরা তোমাকে। আমার ছেলেকে কষ্ট দিওনা মা। এতটা অবাধ্যতা করোনা । দেখো পৃথিবীর সব সুখ তোমার পায়ের নিচে এনে দিবে। আর দেখো বিয়ের পর সারাজীবন আমাদের কাছেই থাকতে পারবে তুমি। এর পর ও তুমি না করবে।
তোমার ছেলের হয়ে তুমি বলছোতো।
কিন্তু দেখো আমার আম্মু ও আমার পাশে নেই বলেই মুসকান কাঁদতে লাগলো।
এটা কেমন কথা আমি কি তোমার মা না আর এ বাড়ির সবাই তোমার পাশে আছে। আর সব থেকে বেশী যে আছে সে হলো ইমন।
ব্যাস আর কিছু শুনতে চাই না । তোমার ছেলে আমাকে মেরেছে আজ এই দেখো হাতটা কি করেছে।
মলম দিয়েছিতো ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলেটা যে বড্ড রাগি মা কিন্তু ওর মন টা খুব ভালো। তুমি এমন কিছু বলো না যে রাগের মাথায় ও এইসব করে ফেলে।
তোমার ছেলের মতো করে থাকা সম্ভব না।
আমার গায়ে হাত তুলেছে আজ এর পর তোমার ছেলের মুখ ও দেখতে চাইনা আমি।
নিজের মা এমন শত্রুর মতো হয় জানা ছিলো না । বাবা নিশ্চয়ই এমন করতো না বলেই কাঁদতে লাগলো।ইরাবতী কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। মেয়েটার ও যে জেদ ষোল আনা।
জয়ের মেসেজে ভরে গেছে ইনবক্স ইমন ইচ্ছা মতো যা তা বলেছে জয়কে। অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছে আর বলেছে দেশে ফিরলে তোর অবস্থা এমন করবো যে রাস্তার কুকুর ও ভয় পাবে তোকে দেখে। জয়কে ব্লক করে দিয়েছে।
এদিকে মুসকান ফোন না পেয়ে সারাদিন পাগলের মতো ছটফট করেছে।
তবুও তাকে ফোন দেওয়া হয়নি।
বাধ্য হয়ে সাহস করে ইমনের রুমে পা বাড়িয়েছে মুসকান। তার ফোন চাই।
ইমন ল্যাপটবে কাজ করছে এমন সময় মুসকান রুমে ঢুকলো।ইমন একবার দেখে আবার কাজে মনোযোগ দিলো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে সাহস করে বললো- ভাইয়া…
ইমন ক্ষেপে চট করে ল্যাপটব অফ করে বিছানায় রেখে ওঠে দাঁড়ালো।
ভ্রু কুচকে মুসকানের মুখের দিকে তাকালো।এতো দিন জানতেনা তাই ভাই ভাই করেছো এখনতো জানো তবুও ভাই। এখন তো কিছু বলাও যাবে না এই বাঘিনি কে । ( মনে মনে )
আমতা আমতা করে বললো- আমার ফোন দাও।
ওহ এই কথা তাহলে । একটা দিন থাকতে পারলেনা ফোন ছাড়া। ( মনে মনে)
ফোন দিয়ে কি হবে??
আসলে……
জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো ইমন -হুম আসলে কি??
রায়াকে ফোন করবো একটু।
ওকে আমারটা দিয়ে করো।
মুসকানের রাগ ওঠে গেলো। কেনো তোমারটা দিয়ে কেনো আমার ফোন দাও।
যদি বলি ওটা তুমি আর পাবেনা।
কেনো পাবো না তেমাকে ওটা দিতে হবে। আমার বাবা মা তো তোমার কথায় ওঠে বসে। তারা তো দিবেনা তাই তোমাকেই দিতে হবে।
হুম দিবো শর্ত আছে।
কোনো শর্ত মানতে পারবো না আমি।
ইমন আরেকটু কাছে গিয়ে বললো- এততো ত্যাজ দেখাচ্ছো কেনো। কুল হয়ে কথা বলো আমার সাথে আমি হাইপার হয়ে গেলে কিন্তু সামলাতে পারবে না।
মুসকান আর কিছু না বলে শান্ত ভাবেই বললো- ফোন দাও ভাইয়া প্লিজ।
ইমন আর কিছু না বলে পকেট থেকে ফোন বের করে দিলো। আর বললো-
যথার্থ ব্যবহার করবে ফোনের নয়তো কপালে দুঃখ আছে।
মুসকান ফোন দেখে ইমনের কোনো কথায় কান না দিয়ে ফোনটা নিয়ে তারাহুরো করে চলে গেলো। যেনো তার অমূল্য রত্ন সে পেয়ে গেছে। কিন্তু ইমন বাঁকা হাসলো কারন মুসকানের ফোন ট্র্যাক করা হয়েছে। যাই করুক না কেনো সব সে জানতে পারবে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মোতালেব চৌধুরী আজ আসতে পারেনি কাল আসবে। এদিকে সব ব্যবস্থা করা শেষ। মুসকান কারো সাথেই ঠিকভাবে কথা বলে না। সবার উপর তার খুব রাগ। এদিকে সে অনেক চেষ্টা করেও জয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না । করবে কি করে জয়কে যে ব্লক করা হয়েছে। জয়ের এক বন্ধু ঢাকাতেই থাকে মুসকান তার আইডিতে মেসেজ করে বললো- ভাইয়া জয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন প্লিজ প্লিজ সেই বন্ধু জয়কে বলার পর জয় সাথে সাথেই মুসকান কে কল করলো।
হ্যালো মুসু কেমন আছো??
একদম ভালো নেই একদম না।
জানি বলেই জয় মুসকান কে সব খুলে বললো।
কিহ ইমন ভাইয়া তোমাকে এসব বলেছে। আমি কিছু জানতাম না জয় কিছু না।
হুম জানি মুসু তুমি কেঁদো না। আমি খুব তারাতারি ফিরবো আর তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
কিন্তু এরা তো আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে জয়।
মুসু তুমি যে করেই হোক বিয়েটা আটকাও। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না মুসু রানী প্লিজ তুমি আটকাও সব ।
আমিও পারবো না জয় । আমিও তোমাকে ছারা থাকতে পারবো না।
দরজা খোলার শব্দে চমকে ওঠলো মুসকান। তারাতারি ফোনটা কেটে দিলো।মুসকান ফোন বালিসের নিচে রেখে দাঁড়িয়ে বললো- কে?
ইমন লাইট অন করে দু পকেটে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো ইমন যেই হাসিটা দেখে মুসকানের বুকটা কেমন ধক করে ওঠলো।
মুসকান পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে আর তার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিললো।
ভাইয়া আম্মু মনে হয় ডাকছিলো তখন যাই আমি। বলেই ইমন কে পাশ কাটাতে যাবে তখনি ইমন মুসকানের হাতে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
মুসকান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইমনের চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে । রাগে তার কপালের রগ গুলে নীল হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এক দুমাসেই এতো ভালবাসা যে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেই পারবেনা। তাহলে আমার এতগুলো বছরের কি হবে। শান্ত গলায় বললো ইমন।
মুসকান চোখ তুলে তাকালো। ইমনের চোখ দুটো দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠলো ।
বলো আমার ভালবাসার কি হবে চিৎকার করে বলে ওঠলো ইমন। মুসকান কেঁপে ওঠলো।
ইরাবতী দিপান্বীতা চিৎকার শুনে দৌড়ে এলো। কিন্তু রুমে ঢুকার সাহস পেলো না।
আল্লাহ এ পরিবারে কি অশান্তি শুরু হলো। রক্ষা করো আল্লাহ। ইরাবতী কথা গুলো বলতে বলতে চলে গেলো সাথে দীপান্বিতা ও।
প্লিজ ছাড়ো আমাকে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো মুসকান।
ছাড়ার জন্য তো তোমায় ধরিনি আমি । এই বলো কিভাবে ভালবাসা হয় এক মাসে কি বোঝ তুমি ভালবাসার বলো ( ধমকের সুরে )
মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে বলে ফেললো – জয় কে ভালবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই আমি।
ঠাশশ…………
চলবে………………….