বউ চুরি
পর্বঃ ৪
লেখিকাঃ জান্নাতুল নাঈমা
ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে নিয়ে মুসকান স্তব্ধ হয়ে গেলো।এমনিতেই শরীরের অবস্থা ভালো না। তার ওপর ইমন, তার চাচাতো ভাই এসে তাকে ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে দিচ্ছে। শরীরটা আরো দ্বিগুন অবশ হয়ে গেলো।লজ্জায় তার ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কি করবে এখন কিছু বুঝতে পারছে না। পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। চোখ দুটো পানিতে চিক চিক করছে। মামনি আর আম্মুর কাছে শুনেছে পুরুষ মানুষ দের থেকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে এসব বিষয় একান্তই মেয়েদের বিষয়। কিন্তু আজ যা হলো এতে মুসকানের মরে যেতে ইচ্ছে করছে বিষয়টা সে হজম করতে পারছে না। হাজার হলেও ইমন কে সে বড় ভাই হিসেবে অনেক সম্মান করে, ভয় পায়। তাদের দুজনের সম্পর্কের যে বিশেষায়িত গভীরতা সেটা তো আর সে জানে না।
ইমন একটু ইতস্ততভাবে বললো- আমি যাচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। বলেই বেরিয়ে গেলো।এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়বে সেও ভাবে নি। মুসকান এর অমন চাহনি অমন বিব্রত মুখ দেখে খুব কষ্ট হলো তার। বড্ড আফসোস হলো নিজের বউ এর সামনে কতোটা ফর্মালিটি করে চলতে হচ্ছে। সামাজিক রিতীতে তো মুসকান ইমনের বিয়ে করা বউ। সেই বারো বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা। মুসকান হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু ইমন তো ভুলে নি। নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। সময় যেনো পারই হচ্ছে না বড্ড অধৈর্য হয়ে পড়েছে ইমন।
মুসকান বাথরুম গিয়ে খুব কান্না করলো। পিরিয়ডের সময়টা তার খুব কষ্টে কাটে। এমন সময় তার জ্বর ও এসে যায়। তার মামনি আর আম্মু খুব যত্ন নেয় ব্যাথার ওষুধ খাওয়ায়। কিন্তু আজ কে করবে এসব। মুসকানের বড্ড অসহায় লাগলো নিজেকে। ফ্রেশ হয়ে এসে তার আম্মু কে ফোন দিয়ে জানালো। কিন্তু তার তো বাবা মারা গেছে। মোজাম্মেল চৌধুরী ফিরলেও ইরাবতী আর দীপান্বিতা ফিরতে পারবে না।
মুসকান কেঁদে কেঁদে সব বললো।ইরাবতী শুনে মুসকানকে সান্ত্বনা দিলো আর বললো- এমন করো না মা এতে এতো কষ্ট লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আর ইমন তো বাইরের ছেলে না। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় তুমি এতোটা লজ্জা পেওনা৷ ভাত খেয়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে সুয়ে থাকো কেমন।
মুসকান তবু স্বাভাবিক হতে পারলো না। কিছুতেই সে স্বাভাবিক হতে পারলো না।
ইমন বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো। মুসকান তবুও খেতে গেলো না। ইমন বুঝতে পারলো মুসকান লজ্জায় বের হচ্ছে না। তাই সে বাধ্য হয়েই মুসকানের রুমে গেলো গিয়ে দেখলো মুসকান চুপ করে বসে আছে চোখ মুখ লাল বালিশটা পেটে চেপে বসে আছে। ইমন একটু কঠিন স্বরে কথা বলে মুসকান কে খেতে নিয়ে গেলো। মুসকান চুপচাপ খাচ্ছে কিন্তু ইমন খাচ্ছে না। সে আবার মুসকানের রুমে গিয়ে বিছানার চাদর চেন্জ করলো। চাদর টা বাথরুমে রেখে আবার মুসকানের কাছে গেলো।
ব্যাথার ওষুধ সাথে একটা গ্যাসট্রিক এর ওষুধ দিয়ে ইমন চলে গেলো।মুসকানের যেনো আর খাবাড় গলা দিয়ে নামছে না। তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। বড্ড কান্না পাচ্ছে তার। কিন্তু কি আর করার উপায় নেই তাই সে খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলো।
ইমন কখনো নিজের জামা কাপড় ও নিজে পরিষ্কার করে নি। কিন্তু আজ তার বউ এর বিছানারচাদর তাকেই পরিষ্কার করতে হবে। কারন সে চায় না বাড়ির কাজের লোক রা তার বউ এর ব্যাক্তিগতো বিষয় জানুক। তাছাড়া তার বাবা রাতেই ফিরবে শশুড় এর চোখে পড়লে মুসকান আরো বেশী লজ্জা পেয়ে যাবে তাই সে তারাহুড়ো করে চাদরটা পরিষ্কার করলো।মুসকান রুমে এসে একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে সুয়ে পড়লো কুলবালিশটা জরিয়ে। সে খেয়ালই করলো না তার বাথরুমে কেউ আছে।
ইমন চাদর নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো।মুসকান ধরপরিয়ে ওঠে বোসলো বড় বড় করে তাকালো ইমনের দিকে।
ইমন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।
মুসকান তো অবাক হওয়ার সীমা ছাড়িয়ে গেলো।যে ছেলে কিনা এক গ্লাস পানি ও নিজের হাতে খায় না সে আমার বিছানার চাদর পরিষ্কার করলো তাও ঐ টা ছি ছি আল্লাহ আজ আমার সাথে কি হচ্ছে এসব। তার বিছানায় তাকিয়ে খেয়াল করলো অন্য চাদর সে বুঝতে পারলো ইমন ই করেছে এসব। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সুয়ে পড়লো।
ইমন দুপুরের খাবাড়টা খেয়ে মুসকানের রুমে গেলো।
মুসকান ঘুমাচ্ছো??
সাথে সাথেই মুসকান ওঠে বোসলো ওড়নাটা ঠিক করে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো।
কিছু বলবে ভাইয়া???
এখন কেমন লাগছে।
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। আমতা আমতা করে আস্তে করে বললো- ঠিকআছি।
ইমন আর চুপ করে থাকতে পারলো না মোড়াটা টেনে বিছানার পাশে বসে পড়লো।
এতোটা ইতস্তত বোধ করার কোনো মানে হয় না মুসকান।
না মানে আসলে……
আসলে বিষয়টা কিছুই না। তুমি যতোটা হাইড করতে চাইছো এটা ততোটা হাইড করার বিষয়ই না । তুমি একটু বেশিই লজ্জা আর ভয় পাচ্ছো। এটা কি আদেও লজ্জা কর বিষয়?? নাকি মেয়ে হিসেবে গর্ব করার বিষয়। একটু ভেবে দেখোতো??
মুসকান অবাক হয়ে তাকালো ইমন মুসকানের মুখ পানে চেয়ে রয়েছে। মুসকান ইমনের চাহনি দেখে মাথা আবারো নিচু করে ফেললো। ইমন তার কথা গুলো বলতে থাকলো। মুসকানের হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছিলো।
আচ্ছা দেখো দিপক যখন জানতে পারলো দীপান্বিতা কাকি মা হতে চলেছে। তখন কি দিপক বা কাকি লজ্জা পেয়েছে?? বা আমার আব্বু যখন জানতে পারলো কাকি মা হতে চলেছে তখন কি কাকি লজ্জা পেয়েছে যে তার ভাসুর জেনে গেছে সে সন্তান সম্ভবা। কাকি কিন্তু লজ্জা পায় নি বরং কাকি সহ বাড়ির সবাই খুশি হয়েছে । কাকির ভাই যখন জানতে পারলো তার বোন মা হতে চলেছে তখন ও কিন্তু কেউ লজ্জা পায়নি। ইভেন প্রত্যেকটা মানুষ জেনে খুশি হয়েছে। হোক পুরুষ হোক নারী প্রত্যেকেই খুশি হয়েছে খবড় টা শুনে। কারন এটা প্রকৃতির নিয়ম। ঠিক তেমনি প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনেই পিরিয়ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু মেয়ে না ছেলেদের জন্য ও। কারন একটা মেয়ের যদি পিরিয়ড না হতো একজন স্ত্রীর যদি পিরিয়ড না হতো একজন স্বামী,পুরুষ কখনোই বাবা হতে পারতো না। যে বিষয়টা মানুষের জীবনে এতো সুখকর এতো আনন্দ দায়ক জীবন উপহার দেয় সে বিষয়টা কখনোই লজ্জা জনক বিষয় হতে পারে না। একজন পুরুষের উচিত প্রত্যেকটা নারীকে রেসপেক্ট করা। নারীদের এসব বিষয় নিয়ে পুরুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। একটা নারীর যতোটা কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আছে একজন পুরুষের তা নেই। পিরিয়ডের যন্ত্রনা থেকে শুরু করে মা হওয়ার তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করতে পাড়ার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা একজন নারীকেই দিয়েছেন। তাই পিরিয়ডের জন্য লজ্জা নয় গর্ব করা উচিত। যেসব নারীরা এটা নিয়ে লজ্জা ভয় পায় তারা বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়।আর যেসব পুরুষ রা এটা নিয়ে পজিটিভ মেন্টালিটি না রেখে নেগেটিভ মেন্টালিটি রাখে এটা কে নিয়ে হাসাহাসি করে, রাস্তা ঘাটে বাজে মন্তব্য করে তারা সত্যিকারের অর্থে পুরুষ ই নয়। তারা কাপুরষ। মানুষ হয়েও পশুর সমতুল্য কারন তারা ভুলে যায় তারাও কোনো মায়ের, নারীর সন্তান । আর সেই মা, নারীর যদি পিরিয়ড না হতো তাহলে সে পৃথিবীর আলোই দেখতে পারতো না। তাই সব সময় একটা কথা মাথায় রাখবে পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা বা ভয় নয় গর্ব করা উচিত ?।
মুসকান অবাক চোখে দেখছে ইমন কে। তার কথার মাঝেই হারিয়ে গেছে৷ সত্যিতো তার কথা গুলো ঠিক। একধ্যানে তাকিয়ে আছে মুসকান। ভয় লজ্জা দুটোই কেটে গেছে। লজ্জা কেটে গেছে বললে ভুল হবে। তবে কোনো ভয় বা অসস্থি লাগছে না আর তার।
আচ্ছা তুমি সুয়ে রেষ্ট নাও আমি এিশ মিনিট পর আসছি।
মুসকান মাথা ঝাকালো।
ইমন চলে গেলো বাইরে। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে শান্তি তে চোখ বুঝলো।আর ইমনের কথা গুলো ভাবতে লাগলো।যতোটা কর্রশ ভেবেছিলাম ততোটা কর্কশ নয়। বেশ জ্ঞান আছে কতো সুন্দর কথা বলতে পারে কতো আদর করলো আজ। ভাইয়া সত্যি খুব ভালো মনের আনন্দে চোখ বুঝে শান্তি তে রেষ্ট নিতে লাগলো সে।
পাঁচটার দিকে ইমন মুসকানের রুমে আসলো ভেবেছিলো আজ তাকে নিয়ে বেরোবে। কিন্তু তা আর হলো না তাই বাইরে থেকে খাবাড় আনিয়েছে। আর আলেয়া চাচী কে রাতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে। কারন রাতের খাবাড়ের ব্যবস্থা করেছে সে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মুসকান….
কাধে হাত দিতেই বুঝলে শরীরটা বেশ,গরম। কপালে হাত দিতেই দেখলো বেশ,জ্বর । মুসকান গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ঠান্ডা লাগছে দেখেই বুঝতে পারলো।তারাতারি ওঠে গিয়ে একটা কম্বল নিয়ে এসে গায়ে দিয়ে দিলো। ইরাবতী কে ফোন করে সবটা জানালো।
তুই ওকে একটা প্যারাসিটামল খাওয়িয়ে দে আর রাতে একা রাখিস না বমিও হতে পারে।
কিন্তু মা….
কোনো কিন্তু নয় এখন বিপদের সময় এতো কিছু ভাবার টাইম নেই। আর ওর ভালোটা আগে দেখ। আর নিজের বউ এর বিপদে নিজে ছাড়া আর কাকে পাশে রাখতে চাস? এখন তো আমরা কেউ নেই এদিকের অবস্থা ভালো না রাখছি।তোর বাবাও ফিরতে পারবেনা আজ কে। বলেই কেটে দিলো ইরাবতী শোকের বাড়ি তাই অতো ভাবার টাইম নেই তার । ইমন বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলো এক রুমে সারারাত কাটাতে হবে তাকে মুসকানের সাথে। তার থাকার অধিকার আছে স্বামী হিসেবে সব অধিকারই আছে তার তবুও যে একটা কিন্তু রয়ে গেছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে মুসকানের মুখের দিকে তাকালো। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। নাক টা বেশিই লালচে বর্ন ধারন করেছে। মনে হয় ঠান্ডা ও লেগে গেছে। তার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এসে মুসকানের রুমে বসে কাজ করছে। দু’ঘন্টা পর মুসকান নড়াচড়া করে ওঠতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ইমন বুঝতে পারলে হয়তো মাথা তুলতে পারছে না জ্বর ঠান্ডার কারনে মাথা ভারী হয়ে আছে। তাই সে কাছে গিয়ে দুকাধে ধরে ওঠে বসালো। মুসকানকে স্পর্শ করতেই তার বুকের ভেতর শিহরন বয়ে গেলো। মেয়েটা একবারেই নেতিয়ে পড়েছে। শরীরটাও নেতিয়ে গেছে কেমন। মুসকান চোখ দুটো বন্ধ ই রেখেছে । ওর মুখের দুকে তাকিয়ে বন্ধ চোখ দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠলো ইমনের । ইচ্ছে করলো গাল দুটো টেনে দিতে , কপালে ভালবাসার পরস একে দিতে, কিন্তু এখন সেসব কিছুই করা যাবে না।
গায়ে বেশ জ্বর তারাতারি খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে ভেবেই ইমন ওঠতে নিলো কিন্তু মুসকান মামনি বলেই কাঁদতে শুরু করলো। ইমন আবারো বিছানায় বসে পড়লো মুসকানের গালে হাত দিয়ে বললো- এই কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? কিছু হবেনা।
মুসকান ইমনের বুকে মাথা রেখেই কাঁদতে লাগলো।
ইমনের বুকে মুসকানের শরীরের সমস্ত তাপ অনুভব হতে লাগলো।সেই সাথে অনুভব করলো মুসকানকেও। পুরো শরীর জুরে শিহরন বয়ে গেলো তার কোনো কিছু না ভেবেই সেও বুকে জরিয়ে নিলো ।
জ্বরের ঘোরে মুসকানের কথা গুলো যেনো মাতাল করে দিলো ইমন কে । মুসকানের শরীরের ঘ্রান তার নাকে পৌঁছাতেই তার বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
মামনি আমার খুব শীত করছে। ভালো করে বুকে নাও না । বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমন আরো গভীর ভাবে বুকে জরিয়ে নিলো । সে যেনো হারিয়ে গেছে। ডুবে গেছে তার পিচ্চি বউ এর শরীরের ঘ্রানে, মাতাল করা কন্ঠে। সত্যি মেয়েটার শরীরের ঘ্রানটা বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ তুলে দেয়। বাচ্চা কালে ছিলো একরকম বহুবছর পর আবারো পেলাম আরেক রকম তবে এটা সত্যি মারাত্মক। কেমন যেনো লাগছে আমার। এমন অস্থিরতা এমন সুখ যেনো আগে কখনো লাগেনি। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের উক্তি টা সত্যি ফিল করতে পারলাম আজকে –
অল্প বয়সী মেয়েদের শরীরের
গন্ধ খুব খারাপ…
এই গন্ধে মহাপুরুষেরা যেন
কেমন হয়ে যায়…!
আমি কি সত্যি আজ আমার মাঝে আছি। আমার বউ টা কি আমাকে আজকে আমার মাঝে রেখেছে। নাকি তার মাঝেই হারিয়ে গেছি। তার মাঝেই ডুবিয়ে নিতে চাচ্ছে আমাকে। আমি কেমন হয়ে গেলাম?
বেশকিছু ক্ষন পর – মুসকান কে শুইয়িয়ে দিলো। সে আবারো ঘুমিয়ে গেছে। ইমন তারাতারি গিয়ে খাবাড়গুলো গরম করে মুসকানের রুমে নিয়ে আসলো।তাকে তারাতারি খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। বউ কোথায় স্বামীর সেবা করবে তা না সংসার শুরু হওয়ার আগেই তার সেবা করতে হচ্ছে । সব সুদে আসলে ফেরত নিবো। ( মুচকি হেসে )।
মুসকান কে ওঠিয়ে খুব যত্ন সহকারে খাওয়িয়ে দিলো। কয়েক লোকমা খেতেই বমি বমি ভাব করলো তাই আর না খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো।মুসকান আবারো সুয়ে পড়লো।
ইমন নিজেও খেয়ে নিলো।
মুসকানের রুমে এসে দেখলো সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ধীর পায়ে তার কাছে গিয়ে বেশ,কিছুক্ষন তার মুখপানে চেয়ে রইলো। ষোল বছর আগের সেই পিচ্চি মুখটা আর এই মুখটা ভেবেই তার হাসি পায়।
বউ আমার বউ, আমার পিচ্চি বউ, আমার আদরের বউ, আমার চুরি করা বউ, আমার বউ মনে মনে বলতে বলতে মুখ এগিয়ে নিলো মুসকানের মুখের দিকে। তার গভীর ঘুমন্ত নিঃশ্বাস ইমনের মুখে পড়তেই ইমন তারাহুরো করে কপালে একটা কিস করেই ওঠে বাইরে চলে গেলো।
না এক রুমে সম্ভব না থাকা। আরো বেশী দূর্বল হয়ে পড়ছি আমি। অসুস্থ বলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি নয়তো আজ কি হতো আল্লাহ ভালো জানে।
ফোনের শব্দে আবারো রুমে আসলো ইমন। পড়ার টেবিলে ফোন বাজছে।
কাছে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই আননোন নাম্বার দেখতে পেলো।
ওর ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কে কল দিবে। ভ্রু কুচকে তাকালো মুসকানের দিকে। আবারো ফোনের দিকে তাকালো বেজেই চলেছে। রিসিফ করে –
হ্যালো কে বলছেন??
আমি আবির এটা মুসকানের নাম্বার না??
হ্যা। ( রাগে গট গট করতে করতে বললো – ফোন হাতে পেতে না পেতেই ছেলেরা ফোন দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে তুলে দেই কয়েকটা লাগিয়ে।)
ওকে কি দেওয়া যাবে??
কি দরকার আমাকে বলো। আর কে তুমি?
আমি ওর সাথেই পড়ি। আজ কলেজ যায়নি তাই আর কি খোজ নিচ্ছিলাম৷ আমি ওর বন্ধু।
ওহ। আজ যায় নি। তো কি হয়েছে কলেজ তো যাবেই। একদিনেই এতো খোঁজ নেওয়ার কিছু হয় নি।
আচ্ছা ওকে বলবেন আবির ফোন দিয়েছিলো।
ইমন আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।
তারপর নিজের ফোন বের করে কাকে যেনো ফোন দিয়ে বললো- মুসকানের সাথে পড়ে ছেলেটার নাম আবির কাল ওর সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিবি।
ওকে ভাই ওকে।
ইমন মুসকানের ফোন বেশ ঘাটাঘাটি করলো। তার মধ্যে দুটা অচেনা নাম্বার পেলো। তার মধ্যে একটা আবিরের আরেকটা নিজের ফোনে সেফ করে রাখলো।
ফেসবুক অ্যাপ ও দেখতে পেলো।
বাহ ফেসবুক একাউন্ট ও খোলা হয়েছে। আর আমি জানিও না । এইসবের জন্যই এতো আগেই ফোন দিতে চাইনি।
ফেসবুকে ঢুকেই দেখতে পেলো একাউন্ট দুদিন আগের খোলা । বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ফ্রেন্ড ও রয়েছে। আইডিটা নিজের ফোনেও লগ ইন করে রাখলো। ইমেইল আইডি তাই সে তার ফোনে আইডি টা জিমেইল করে রাখলো। মুসকানের থেকে আইডি হাত ছাড়া হলেও তার থেকে হবে না।
রাগে সে সারারাত ঘুমাতে পারলো না। কেনো জানি ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।
সকালের দিকে জ্বর ছেরে গেছে মুসকানের। আজানের সময়ই মুসকানের জর আছে কিনা দেখে রুম থেকে চলে গেছে ইমন । মুসকান ঘুম থেকে ওঠেই ইরাবতীকে ফোন করে জানলো সে বিকালেই এসে পড়বে।
মুসকান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।
আলেয়া এসে ব্রেকফাস্ট করে রেখেছে। মুসকান গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বের হবে এমন সময় ইমন নিচে নেমে এলো।
কেথায় যাচ্ছো??
কলেজে ভাইয়া।
বাসায় কেউ নেই তুমি কলেজ যাচ্ছো। আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করোনি?
মুসকান নিচের দিকে তাকিয়েই বললো- আসলে তারাহুরো করে। ( মুসকান কখনোই ইমনের চোখে চোখ রেখে কথা বলে না)
চুপপ কিসের তারাহুরো ক্লাশ শুরু হতে আরো দু’ঘন্টা বাকি। এতো তারাহুরো কিসের? কাল জ্বর ছিলো জ্বর কমতে না কমতেই ছুটাছুটি করতে হবে।
আসলে রায়ার জন্মদিন আজ তাই একটু আগেই যাওয়ার কথা ছিলো।
রায়া মুসকানের বেষ্ট ফ্রেন্ড। ইমন রায়াকে খুব ভালো করেই চিনে তাই আর কিছু বললো না। কি যেনো একটা ভেবে বললো-
ওহ। যাও তবে গাড়ি নিয়ে যাবে তোমাকে কলেজ ছেড়ে দিয়ে আসবে।
ঠিক আছে বলেই বেরিয়ে গেলো মুসকান।
ইমন কাকে যেনো ফোন করে কথা বলে। রেডি হয়ে সেও বেরিয়ে পড়লো।
আজ যে মুসকানের কপালে কি আছে তা সে নিজেও জানে না।
চলবে………