বউ চুরি
পর্ব : ৩
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা
ইমন রুমের ভেতর গিয়ে পুরো রুমটায় চোখ বুলালো।পুরো রুমটা অগুছালো।
রাত এগারোটা বাজে হয় তুমি চেয়ার টেবিলে বসে পড়া শুনা করবে নয়তো ঘুমাবে। কিন্তু সেসব না করে গান গাইছো। আর কিসব গান ধমকে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো আমতা আমতা করে বললো- আমিতো ঘুমুতেই যাচ্ছিলাম।
চুপপ, একদম মিথ্যা বলবে না। রুমের চেহেরা দেখে কি মনে হয় তুমি ঘুমাতে যাচ্ছিলে? রাত এগারোটা বাজে এতো রাতে কিসের লাফালাফি। দিন দিন বড় হচ্ছো না ছোট হচ্ছো??
মুসকান ঢোক গিললো। কি করে বুঝলো আমি এসব করছিলাম। হায় খোদা এর জন্য কি নিজের রুমেও স্বাধীন ভাবে কিছু করতে পারবো না। সেই ছোটো থেকে যখনি আমার একটু নাচতে ইচ্ছা করে গাইতে ইচ্ছা করে এই কর্কশ ভাই টা বাইরে গেলে করতাম। কখনোতো সামনে করিনি তাহলে আজ বুঝলো কি করে। মনে মনে ভাবতে লাগলো আর ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে।
হাতে তুরি বাজিয়ে – কিহলো সমস্যা কি?
না মানে আসলে ভাইয়া……
চুপপ,একদম চুপপ, যাও রুম ঠিক করে ঘুমাতে যাও।
মুসকানের চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়লো। সে একটু ধমক ও সহ্য করতে পারে না। কিন্তু একমাএ ইমনই তাকে অল্পতেই বেশ ধমকা ধমকি করে। সবাই যতোটা আদরে রাখে ইমন ততোটাই শাসনে রাখে।একজন তো লাগবেই শাসনের জন্য নয়তো বয়সের দোষে পড়া শোনা, আরো অনেক বিষয়েই বেঁকে যাবে। তবে এই শাসনের পেছনে যে মহাসমুদ্রের ভালবাসা লুকিয়ে আছে তা কি মুসকান কখনো বুঝতে পারবে?
মুসকান ধীর পায়ে গিয়ে পুরো রুম টা গুছালো। ইমনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাতে ফোন ইউস করছে। ইমন একটু মাথা উঁচু করে মুসকানের দিকে তাকাতেই মুসকান চুপটি মেরে সুয়ে পড়লো। ইমন মুচকি একটা হাসি দিলো। ধীরে ধীরে তার বিছানার পাশে এগিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মুসকান চোখ পিটপিট করে ঘুমের অভিনয় করে চলেছে। ইমন তার মুখের পানে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে চলে গেলো রুমের বাইরে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে।তার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় মুসকানের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেই। তার মুখের মায়াতে যে সেই বাচ্চা কালেই পড়ে গেছে৷ সেই মায়াতে ডুবে ডুবেই আজ এতো বছর পার করেছে সে। আরো বহুবছর পার করতে চায়। তার বাচ্চা বউ এর সাথে।
সকাল আটটা বাজে। দিপান্বীতা মুসকানকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য রুমে ঢুকলো।ইরাবতী খাবাড় তৈরী করছে ছেলে মেয়ের জন্য। ইমন আর দিপু ( দিপান্বীতার ছোটো ছেলে) কথা বলছে। দিপু মুসকানের দুবছরের ছোটো । তার বড় ভাই দিপক পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে গেছে। ৬বছর হলো। আর কয়েকমাস পরেই ফিরে আসবে। মুসকানের জন্য ইমন দেশের বাইরে যায় নি। দেশেই পড়াশোনা করেছে।
মুসকান, ওঠো মা সকাল হয়ে গেছে, ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে। কলেজ আছেতো। বলতে বলতেই তার কোলবালিশ সরিয়ে তাকে ওঠিয়ে বসালো। মুসকান ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো চোখ দুটো কচলে – আরেকটু ঘুমাই আম্মু।
দীপান্বিতা চুল গুলো ঠিক করে বেঁধে দিয়ে ব্রাশ নিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলো। প্রতিদিনই এভাবেই তাকে ঘুম থেকে ওঠানো হয়। ক্লাস নাইনেই তাকে আলাদা রুমে থাকতে দেওয়া হয়। মুসকান ওঠে বাথরুম চলে গেলো।দীপান্বিতা বিছানা গুছিয়ে নিচে চলে গেলো।
মুসকান রেডি হয়েই নিচে নেমে আসলো।
ইমন, দিপু খেতে শুরু করেছে। মুসকান এসে ডায়নিং টেবিলে বোসলো। পড়নে তার কলেজ ড্রেস। চুল গুলো উপরে বাধা। চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ইমন এক নজর মুসকান কে দেখলো । হালকা লিপস্টিক, কাজল দেওয়াটা ইমনের কাছে খুব একটা ভালো লাগলো না।
কলেজ যাচ্ছে পড়াশোনা করতে সাজগোজের কি আছে? এমনিতেই তো সুন্দর এতো কিছুর কি প্রয়োজন? ইমন আর না খেয়ে ওঠে পড়লো। উপরে গিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হলো। বেরোনোর সময় মুসকানকে বলে গেলো দশ মিনিটের মধ্যেই বের হবে।
মুসকান একটা ভেঙচি কেটে দিলো দিপু হাসতে হাসতে টেবিলে লুটিয়ে পড়ছে।
এই চুপ একদম হাসবি না । চুপচাপ খা।
আপু তুমি ইমন ভাইয়া কে অনেক ভয় পাও তাইনা??
কেনো তুই পাসনা??
হুম পাইতো বাড়ির সবাইতো পায়।
হ্যা সে তো পাবেই এমন গুনোধর ছেলে, গুনোধর ভাই থাকলে ভয় না পেয়ে কি আর থাকা যায়।
কিহলো এতো কথা কিসের তারাতারি খেয়ে নাও। মুসকান, ইমন কিন্তু রাগারাগি করবে।
হ্যা মামনি তোমার ছেলে তো সব কিছুতেই রাগারাগি করে। বলেই মুসকান ওঠে গেলো।বের হওয়ার সময় বলে গেলো- মামনি কাল যেটা বলেছি বড় বাবাকে বলেছোতো৷ আম্মু,আব্বু তো রাজি হচ্ছে না আমার কিন্তু চাই ওটা চাই ই।
ইরাবতী চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ইমন যদি রাগারাগি করে কিন্তু মুসকানের তো দরকার হতেই পারে তাই ভেবে সে ছেলে কে জানাবে ভাবলো।
এতো সাজগোজ করে কেউ কলেজে যায় এতো কিসের সাজগোজ??ড্রাইভ করতে করতে বললো ইমন।
মুসকান মনে মনে গালি দিতে লাগলো।এখন এটা নিয়েও তোর সমস্যা তুই কেমন ভাইরে….
কিহলো আমি কিছু বলছি।
না আসলে ঐ একটু আর কি।
একটু না বেশি সেটা আমি জানতে চাইনা। পড়াশোনা করবে পড়াশোনার মতো। সেজেগুজে কলেজ যাওয়া একদম পছন্দ করিনা। সিম্পল ভাবেই কলেজ যাবে কাল থেকে। সাজার সময় সাজ, পড়ার সময় পড়া। যখন যেটা মানান সই সেটাই করবে ওকে।
মুসকান মাথা ঝাকালো।
ইমন মুসকান কে কলেজ পৌঁছে দিয়ে আবার বাড়ি ফিরলো তার মায়ের জরুরি তলব।
না মা এখনি না ইন্টার এক্সামটা দিক তারপর। এখনো কিন্তু মুসকান ছোটোই । আর ওর দরকার হলে তোমার ফোন আছে, ছোট কাকির আছে, আমার আছে সমস্যা কি।
আসলে বাবা ও বলছিলো ওর সব ফ্রেন্ড দের আছে। ওর ও নিজের জন্য…
না এখন সময় হয় নি ফোন দেওয়ার সময় হলে ঠিক দিবো৷
মুসকান মন খারাপ করবে। আর ওর ও তো একটা শখ আল্হাদ বলে কিছু কথা আছে। আর তুই যেভাবে ওকে কড়া শাসনে রাখছিস এভাবে কিন্তু আরো বেঁকে যাবে। কিছু কিছু জিনিস ছাড় দিতে হয় বাবা। বাচ্চা মেয়েতো।
যা চায় সব ই তো পায় মা। আর যা দেইনা অবশ্যই সেখানে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে। ওর ভালোটাই তো আগে দেখছি।
ইমন আর কোনো কথা না। তুই ওকে ফোন দিবি। ডিজিটা যুগ এ ফোন ছাড়া সত্যি চলে না পার্সোনাল ফোন রাখা উচিত।
মা ছেলের বেশ কথা হলো। মায়ের কথায় বাধ্য হয়েই ইমন মুসকানের জন্য ফোন কিনলো। মন তার সায় দিচ্ছিলো না তবুও কিনলো মা আর বউ এর আবদার কি ফেলা যায়।
মুসকান ফোন পেয়ে খুব খুশি বিকাল থেকে খুব লাফালাফি করছে। দিপু আর মুসকান মিলে রুমে দরজা দিয়ে বেশ কিছুক্ষন নাচানাচি করলো। মেয়েটা বড্ড পাগলি টাইপের। কিছু চাইলে সেটা পেলে খুবই খুশি হয় । ছোটো থেকে নাচ খুব ভালোবাসে, নাচ গান এ ডুবে থাকে। আজ তো পুরো বাড়ি মাথায় করে রেখেছে খুশিতে।
সন্ধ্যার পর ইমন বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরে রুমে যেতেই পাশের রুম থেকে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ ভেসে এলো।
ইমন শার্ট, প্যান্ট চেন্জ করে টি শার্ট আর শর্ট প্যান্ট পড়ে তার পাগলি কে দেখার জন্য তার রুমের দরজা ধাক্কা দিলো কিন্তু ভেতর থেকে আটকানো।
বেশ কিছুক্ষন টোকা দিয়েও কাজ হচ্ছিল না কোনো সারা নেই। দরজা ছেড়ে জানালা দিয়ে ওকি দিতেই যা দেখলো তাতে তার জান যায় যায় অবস্থা।
এতো দিন মায়ের কাছে শুনেছে এই পাগলামির কথা আজ নিজের চোখে দেখছে। ছোটো বেলায়ও দেখেছে। কিন্তু এখনো সেই স্বভাবটা রয়েছে ইমন ভাবতেই পারছে না। সে হাসবে না রাগবে বুঝতে পারছে না। অবশ্য কতটুকুই বা বড় হয়েছে এখনো তো বাচ্চা মাএ ষোল বছর বয়স কিশোরী বয়স বাচ্চামোটা কাটেনি তেমন।
ইমনের পুরো শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে। এইভাবে নিজের বউ কে দেখে কি কন্ট্রোল করা যায়। ফর্সা পেট টা বার বার ওকি দিচ্ছে। তার বউ যে এতো বাচ্চা এতো পাগলি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। নিজেতো পাগলি আমাকেও পাগল করে ছাড়বে। এতো মনের আনন্দে নাচ করছে।
মনে মনে ভাবছে আর এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে ইমন। লাল লং স্কার্টের সাথে লাল ব্লাউজ পড়া, ওড়নাটা একপাশে দিয়ে মনের আনন্দে সে নাচ করে যাচ্ছে। সে আবার নায়িকাদের মতো পেট বের করে না নাচলে আনন্দ পায় না। যে গানে নাচবে সে গানে তেমন স্টাইল করেই নাচবে। নাচ শেষে গান বন্ধ করে ব্লাউজের চেইন খোলার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ালো পেছন হাত দিয়ে খুলে ফেললো পুরো পিঠটা দেখা যাচ্ছে ইমন থমকে গেলো। মুসকানের পিঠের তিলটাতে আটকে গেলো তার চোখ।
তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে সেখান থেকে এক পা ও নড়ার শক্তি নেই। কেমন একটা আকর্ষণ অনুভব হচ্ছে তার। কিন্তু এখন কি এখানে থাকা ঠিক হবে। মুসকান পিছন ফিরে ঘুরবে এমন সময়ই ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে সরে গেলো সেখান থেকে। মনের সাথে যুদ্ধ করে ইমন সেখান থেকে চলে গেলো।মাথায় তার হাজারো চিন্তা। এক বাড়িতে নিজের বউ আছে সময় তো পার ই হচ্ছে না। সময় যেনো থেমে রয়েছে। বউটা বোধ হয় বেশিই পিচ্চি হয়ে গেছে। বউ এর বড় হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে আমি আবার বুড়ো না হয়ে যাই। সাদে পাইচারী করছে ইমন।
বর্তমান –
অতীত ভাবতে ভাবতে বেশ রাত হয়ে গেছে।
নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইমন।
আজ রাতে আর তার খাওয়া হলো না। তার মা খেতে বললেও না করলো পেট ভরা বলে কাটিয়ে দিলো।ছেলে যে বউয়ের চিন্তায় চিন্তায় খাওয়ার কথা ভুলে গেছে তা ইরাবতী খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।তার ছেলের মনে কি চলছে সেটাও সে বেশ টের পাচ্ছে। কিন্তু মুসকান তো এখনো অনেকটাই ছোটো আরেকটু সময় তো ওকে দিতেই হবে। সেটা ভেবেই ইরাবতী তার ছেলের ইচ্ছেটার গুরুত্ব দিলোনা। আর কয়েকটা বছর থাকুক দুজন দুজনের মতো করে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সকাল বেলা ইরাবতী, দীপান্বিতা, মোজাম্মেল চৌধুরী আর দিপু চলে গেলো দীপান্বিতার বাবার বাড়ি। দীপান্বিতার বাবা মারা গেছেন। মইন চৌধুরী দেশের বাইরে আছেন কাজের জন্য। ইমন যাবেনা কারন মুসকান কে সেখানে পাঠানো হয় নি। দীপান্বিতার বাবার বাড়ি মুসকান কে যেতে দেওয়া হয় না। সবাই জানে মুসকান দীপান্বিতার মেয়ে। কিন্তু দীপান্বিতার বাবার বাড়ি এটা মানলেও পাড়া প্রতিবেশি বেশ সন্দেহ প্রকাশ করে নানারকম প্রশ্ন করে। মুসকান এখন বড় হয়েছে সেইসব প্রশ্নে সে বিব্রত হবে। তার মনেও যদি সন্দেহ ঢুকে যায় তাই ইমন কোনো প্রকার রিস্ক নিতে চায় না। এছাড়া প্রতিবেশীরা সব সময় খোঁচানোর ধান্দায় ই থাকে হোক না শোকের বাড়ি।
মুসকান খুব মন খারাপ করলো কিন্তু কি আর করার তাকে তো নিয়ে যাওয়া হলো না।
ইশ এই কর্কশ ভাইয়ার সাথে আমায় থাকতে হবে। আলেয়া চাচীর কাছে গিয়ে গল্প করি যাই। ( এ বাড়ির কাজের লোক) আবার ভাইয়া এসে কি না কি ভুল পেয়ে বকা শুরু করবে। ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে আসলো মুসকান।
আলেয়া চাচী রান্না বসিয়েছে। কি আর করার আবার নিজের রুমে চলে গেলো। ফোন টা বের করতেই দেখলো দুটা মিসড কল।অচেনা নাম্বার তাই সে আর ব্যাক করলো না। হেডফোন কানে দিয়ে মনের সুখে গান শুনতে লাগলো।
দুবার ফোন বাজার পর রিসিফ করলো ইমন।
ভাই সামনে নির্বাচন। সেই নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করার দরকার ছিলো। আর আপনার বাবা তো আজ নেই আপনি আসলে ভালো হতো।
আমি আজ যেতে পারবো না আলোচনা সভা টা কাল এগারোটার দিকে করে নিবো সবাই কে জানিয়ে দাও। কাল করলে কোনো সমস্যা নেই একমাস টাইম আছে। মনোযোগ দিয়ে তেমাদের দায়িত্ব পালন করো।
ওকে ভাই।
ফোন কেটে দিলো ইমন। আজ সে বাড়িতেই থাকবে দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করবে মুসকানের সাথে। রাতে একসাথে ডিনার। সন্ধ্যায় ফুসকা খেতেও নিয়ে যাবে। সব প্ল্যান করা শেষ ইমনের।
দুটা বাজে আলেয়া খাবাড় গুছিয়ে রেখে বাড়ি চলে গেছে। বিকালে এসে রাতের খাবাড় তৈরী করে দিয়ে যাবে।
ইমন মুসকান কে খেতে ডাকতে গেছে। গিয়ে যা দেখলো তাতে ইমন বেশ ঘাবড়ে গেলো।
বিছানায় গুটিশুটি মেরে সুয়ে আছে মুসকান।
পেটের দিকে বালিশ চেপে রেখেছে। ইমন এগিয়ে গিয়ে বললো- মুসকান কি হয়েছে? এইভাবে শুয়ে আছো কেনো? শরীর খারাপ লাগছে?
মুসকান,মুসকান, কাঁদছো কেনো? দেখি ওঠে বসো।
মুসকানের কাঁধে ধরে ওঠাতেই যাবে এমন সময় মুসকান ধমকে ওঠলো।
চলে যাও ভাইয়া, আমি খাবনা এখন।
ইমন অবাক হলো এইভাবে তো মুসকান তার সাথে কখনোই কথা বলে না। কি হলো হঠাৎ। কপালে হাত দিতেই বুঝলো শরীর টা হালকা গরম। জ্বর এসেছে ভেবেই ওঠে যাবে এমন সময় চোখ পড়লো ওয়ারড্রব এর সামনে। সব অগুছালো রুমটা এলোমেলো। তাই আবার মুসকানের দিকে তাকালো। অনেকক্ষন পর্যবেক্ষণ করলো কি হতে পারে জ্বর হলে মুড এতো খারাপ হবে কেনো?
মুসকান অল্প করে খেয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়ে এসে ঘুমাও।
বলছিতো ভালো লাগছেনা। প্লিজ যাও এখন আর মামনিকে তারাতারি আসতে বলো।
আচ্ছা কিন্তু কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো।
তুমি এখন যাও ভালো লাগছেনা।
তুমি ঘামছো কেনো? এসি চলছে তবুও ঘামছো। তোমার শরীর কি অনেক খারাপ লাগছে।
মুসকান আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।
হঠাৎ ইমনের চোখ পড়লো বিছানার চাদরে। আকাশি আর সাদা মিক্স করা চাদরটায় লাল রঙে ছেয়ে আছে।
ইমন দেখে বেশ বুঝতে পারলো সমস্যা টা কি। মুসকান যে লজ্জায় তাকে কিছু বলতে পারছেনা এটাও বেশ বুঝতে পারলো। এতো কমন একটা বিষয়ে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে মাথায় আসছে না ইমনের। এদিকে তার মা কাকিও বাসায় নেই। আলেয়া চাচীও চলে গেছে যা করতে হবে তাকেই করতে হবে।
সত্যি আমার বউটা বাচ্চা প্রতিটা পদে পদে সেটা টের পাচ্ছি। কিন্তু ওর তো অনেক কষ্ট হচ্ছে ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান পেটের যন্ত্রনায় নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছে। এই সময় টা একটা মেয়ের জন্য কতটা কঠিন সেটা একটা মেয়েই বুঝতে পারে। কোনো ছেলের পক্ষেই সেটা অনুভব করা সম্ভব না। তারা বুঝবে যে এমন অবস্থায় একটা মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু সেই তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করতে পারবেনা। এটা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা যতটা ধৈর্য্য নারীদের দিয়েছেন ততোটা পুরুষ দের দেননি।নারীদের প্রত্যেকটা ক্ষেএেই লড়াই করে বাঁচতে হয়। কখনো শারীরিক লড়াই কখনো মানসিক লড়াই। নারীদের পুরো জীবনটাই চলে লড়াইয়ের মধ্যে। জন্মের পর থেকেই তাদের জীবন চালিত হয় প্রত্যেকটা ধাপে।আর সেই ধাপগুলোর মধ্যে প্রথম ধাপেই আছে মুসকান।
পনের মিনিট পর রুমে আসলো ইমন। হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে মুসকান কে ডাকলো। মুসকান ওঠে বললো- আম্মু, মামনি এসেছে?
না আসেনি এটা নাও।
মুসকান ইমনের হাতের দিকে তাকালো।।
চলবে…….