বউ চুরি
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব : ১
বাস্তব কখনো গল্পের মতো হয় না তুমি কখনো জানবে না আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।। হয়তো জানবে কিন্তু উপলব্ধি করতে পারবে না। বা উপলব্ধি করার ইচ্ছাটাও তোমার হবেনা। সত্যি কি তাই ষোল বছরের কষ্ট কি তাহলে বৃথা হবে আমার। আমিতো সেইভাবে চেষ্টাই করিনি। একবার তো চেষ্টা করে দেখতে পারি ভালবাসায় রাঙিয়ে দিতে পারি যে সুপ্ত প্রেম জমিয়ে রেখেছি সেটা উজার করে দিতে পারি। এখনোতো সে কিশোরিই রয়েছে এখন যদি আমি তাকে না জানাই তাহলে হয়তো খুব দেরী হয়ে যাবে। আর এক দুই বছর পরেই যৌবনে পদার্পণ করবে সে।তখন তার মনের মধ্যে যদি অন্যকেউ বাসা বাঁধে? আতকে ওঠলো ইমন। না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না । এখন সময় এসেছে আমার জিনিস আমাকেই বুঝে নিতে হবে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে ভেবে যাচ্ছে ইমন।
অতীতঃ
মোতালেব চৌধুরীর পাঁচ ছেলে পাঁচ জনই বিবাহিত, আল্লাহর রহমতে পাঁচ জনের ই সুখের সংসার তিন ছেলে গ্রামে থাকেন। দুই ছেলে শহড়ে থাকেন বড় ছেলেটা অনেক স্ট্রাগল করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন ছোটো ছেলেও সাথে যুক্ত হয়েছে। সব ছেলে বিয়ে করার পর বড় ছেলে বিয়ে করেছে। গ্রামে মোতালেব চৌধুরীর বেশ সুনাম জমিদার বংশের ছেলে তিনি পাঁচ ছেলে নিয়ে তার ভরা সংসার। দুঃখের লেশ মাএ নেই বললেই চলে। কিন্তু আসলেই কি তাই সয়ংসম্পূর্ন মানুষ কি এই পৃথিবীতে হয়। না হয় না। মোতালেব চৌধুরীর ও তাই বড় শখ ছিলো একটা কন্যা সন্তানের। কিন্তু সেই সৌভাগ্য তার হয়ে ওঠেনি। পাঁচ টা ছেলের পর যখন অধীর আগ্রহে ছিলেন একটা কন্যা সন্তানের তখনো তার আশা নিরাশে পরিনত হয়েছে। ছয় নম্বর ছেলে জন্ম নিলো। জন্মের পচিশ মিনিট পরেই তার মৃত্যু ঘটে। কন্যা সন্তান লাভ করতে পারেন নি। সেই আশা তার নিরাশাতেই রূপ নিয়েছে। চার ছেলে বিয়ে করানোর পর চার জনের ঘরেই প্রথম পুএ সন্তান জন্ম নেয়। অনেক আশা নিয়ে বড় ছেলে বিয়ে করানো হলো সবার অধীর আগ্রহ ছিলেন এইবার হয়তো বংশে লক্ষী আসবে না এবারেও আসেনি৷ পরপর আবারো চার ছেলে বাবা হলো নাহ ছেলেই হলো।
সমাজে কতো অহরহ পরিবার ছেলে ছেলে করে হায় হুতাশ পারছে৷ আর এনার পুরা বংশই যখন মেয়ে মেয়ে করে হতাশ হচ্ছে তখন কেউ ই একটা কন্যা সন্তান লাভ করতে পারছে না।
সাতবছর পর খুশির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। গ্রামেও খবড় পাঠানো হয়েছে। মোজাম্মেল চৌধুরী তার পিতা মোতালেব চৌধুরী কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তার বউ এর পেটে কন্যা সন্তান বেড়ে ওঠছে। আটমাস। আর দুমাস পরেই ঘরে লক্ষী আসবে। পুরো বংসের প্রদীপ। সবাই বলে ছেলেরা নাকি বংশের প্রদীপ। কিন্তু মোতালেব চৌধুরীর বংশে সবার ওলটোটা তার বংশের প্রদীপ একজন নারী। যে কিনা পৃথিবীতেই আসেনি। পুরো গ্রামে মিষ্টি খাওয়ানো হলো। মোজাম্মেল চৌধুরী ও তার সহপাঠী দের মিষ্টি খাওয়ালো। তার ছেলে ইমন কে নিয়ে মসজিদেও মিষ্টি দিয়ে আসলো। ইরাবতী ও আজ খুব খুশি ছেলে ইমন কে আর স্বামী মোজাম্মেল কে এতো খুশি দেখে তার চোখে পানি এসে গেছে । গ্রাম থেকে শশুর মোতালেবও এসেছে বউমার আদর যত্নে যেনো ত্রুটু না হয় সেটা দেখাশোনা করাই তার উদ্দেশ্য।
দের মাস পর –
হসপিটালে সুয়ে আছে ইরাবতী। মেয়ে হয়েছে তার মেয়েটা কে সবাই দেখতে এসেছে সবাই খুব খুশি ।
পনেরো দিন পর-
কান্নার ঢেউ বেজে ওঠলো চৌধুরী বাড়ি। তাদের বংশের প্রদীপ যে নিভে গেছে৷ নিউমোনিয়া হয়ে মারা গেছে ইরাবতী আর মোজাম্মেল চৌধুরীর মেয়ে। ডক্টর কে লাখ লাখ টাকা দেখিয়েও ফিরিয়ে আনতে পারেনি মেয়েকে৷ সবাই কষ্ট সামলে ওঠলেও সামলে ওঠলো না ইরাবতী৷ মেয়ে শকে পাগল প্রায়৷ ইমন সবটা দেখে স্তব্ধ প্রায় বোন হারানোর কষ্ট সেই সাথে মায়ের অস্বাভাবিক আচরন একদম থমকে গেছে ছেলেটা। এই বয়সে এতোটা সহ্য করার ক্ষমতা কি আদেও তার হয়েছে। হঠাৎ ই যেনো থমকে গেলো সব । ইমনের ওই ছোট্ট মনে মাকে খুশি রাখার চিন্তা ঢুকে গেলো। কীভাবে করবে মা কে খুশী৷
বাড়ির সবার কথাতে আবারো চেষ্টা করলো মোজাম্মেল চৌধুরী। বাবা হওয়ার নয়তো তার বউকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাবে না। কন্যা শকে ইরাবতী নির্বাক হয়ে গেছে৷ কয়েকমাস পর মোজাম্মেল চৌধুরী ডক্টরের কাছে যায় ইরাবতীকে নিয়ে। যাবতীয় টেষ্ট করে নাহ ফলাফল শূন্য। মা হতে পারছেনা ইরাবতী। কথাটা বাড়ির সবাই জেনে গেলো। ডক্টর তেমন আশা দিতে পারেনি।
বাড়ির সবাই আশে পাশের সবাই ইরাবতীকে সান্তনা দিতো৷ সবাই বলতো ইমন যখন বড় হয়ে বিয়ে করবে ওর বউই তোর মেয়ে হয়ে সারাজীবন কাছে থাকবে। আরেকটু বড় হলেই ছেলের বউ নিয়ে আসবি। ইমনকে ও সবাই বলতো তোর বউ ই তোর মায়ের মেয়ে হবে দেখিস৷ মোতালেব চৌধুরী ও বললেন এ বংশে মেয়ে নেই । নাতীদের বিয়ে করিয়েই ঘরে লক্ষী আনবো। যেমন পাঁচ ছেলেকে বিয়ে করিয়ে পাঁচ টা লক্ষী এনেছিলাম। এবারতো তাদের ঘরে জোরা জোরা ছেলে জোরা জোরা লক্ষী আসবে শুধু ইমন দাদাভাইয়ের একটা আসবে। তবে তারটা হবে স্পেশাল । ইরাবতীর নয়নের মনি হবে সে।
সবার বলা কথা ইমনের ঐ ছোট্ট মনে গভীরভাবে গেঁথে গেলো। সেই সাথে জেদ ও চেপে বসলো মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জেদ। এই বয়সেই ছেলেটা বড্ড বেশিই জেদী।
একবছর পর-
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যাচ্ছে ইমন। তার মেজো চাচার ছেলে রক্তিম ভাইয়ের সাথে। তার খালাম্মা নাকি অসুস্থ। তাকে দেখতেই যাচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন থাকলো।তারপর ময়মনসিংহ শহর ঘুরাফিরা করছিলে দুইভাই আগামিকাল ই চলে যাবে তারা। হঠাৎ ইমনের চোখ পড়লো রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে এক গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বৃদ্ধ মহিলা।মহিলা টির বয়স সাতাশ কি আটাশ। পাশের বৃদ্ধ মহিলাটি হয়তো মহিলাটির মা। ইমন ওর ভাইকে কিছু না বলেই ঐ ভ্যান গাড়ির পিছন যেতে লাগলো।রক্তিম ও ডাকতে লাগলো কই যাস। না তার কোনো খেয়াল নেই। কে জানে কীসের টানে যাচ্ছে সে একেই হয়তো বলে ভাগ্য চক্র।ভ্যানটা বেশ এগিয়ে গেছে ইমন তাই একটা রিকশা ডাক দিলো। রিকশাওয়ালা পিছনে একজন বড় ছেলে দেখতে পেয়ে থামলো ইমন ওঠে বললো ঐ ভ্যানের পিছন পিছন নিয়ে যাবেন।রক্তিম বড় বড় করে তাকিয়ে রিকশায় ওঠে বোসলো। তার খুব কৌতুহল হলো ইমন কেনো এতো ছটফট করছে। ছোটো মানুষ একাতো ছাড়া যাবে না। তাই রক্তিম ও বললো যাও। রক্তিম এর কথায় রিকশা যেতে শুরু করলো। কোথায় যাবি?? আর ঐ ভ্যান ফোলো করছিস কেনো কাহিনি কি? কিসের পাকনামো হচ্ছে??
ইমন কিছু বললো না সে তার দৃষ্টি স্থির রেখেছে সামনের দিকে। রক্তিম কিছু বললো না আর দেখা যাক। বাচ্চা পোলাপান কি উদয় হয়েছে মনে কে জানে। তার তো আবার জেদ ষোল আনা।
ভ্যানটা ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালের সামনে থামলো।রিকশাটাও থামলো। রক্তিম ভাড়া দিলো এইদিকে ইমন ভিতরে চলে গেছে। রক্তিম পেছন তাকিয়ে দেখে ইমন নেই। এই যা কই গেলো পাজিটা। রিকশাওয়ালা বললো- ভিতরে গেছে।
রক্তিম একটা সস্থির শ্বাস ফেলে ভিতরে গিয়ে খুঁজতে লাগলো। এইদিকে ইমন ঐ মহিলাদের ফোলো করে বৃদ্ধ মহিলাটার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। রক্তিম ইমন কে খুজতে লাগলো কিন্তু পাচ্ছে না।
কিছুক্ষন পর একজন নার্স এসে একটা ফুটফুটে বাচ্চা কে দিয়ে গেলো বৃদ্ধ মহিলাটির কাছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে ইমন বৃদ্ধ মহিলাটির সামনে এসে দাঁড়ালে। বৃদ্ধ মহিলাটি কাদছিলো আর বলছিলো হ্যা আল্লাহ কেনো আবার এমন ফুটফুটে বাচ্চা আনলে পৃথিবীতে । একটা ছেলে সন্তান কি দিতে পারলে না।আমার মেয়েটার কপালে কি সুখ লিখোনি তুমি। তিনবার কন্যাসন্তানের জননী হলো। এইবার ও যদি ওর স্বামী শুনে মেয়ে হয়েছে তাহলে যে মা মেয়ে কাউকে বাঁচতে দিবেনা । বলেই আরো কাঁদতে লাগলো। বাচ্চাটাও কাঁদছে। ইমন গিয়ে বললো- দাদু বাবুটাকে একটু দাওতো কোলে নেই।বৃদ্ধ মহিলাটি ভাবলো হয়তো ছোটো বাবু দেখে ভালো লেগেছে তাই কোলে নিতে চাচ্ছে সেওতো বাচ্চা ছেলেই। তাই কোলে দিলো ইমনের ইমন কোলে নিতেই বাচ্চাটা একদম চুপ হয়ে গেলো।বৃদ্ধ মহিলাটি অবাক হলো একটু। তারপর সে বললো দাদুভাই আমি ভিতর থেকে আসি তুমি এখানেই থাকো।
ইমন বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর ভাবলো এইটা যদি আমার বউ হয়?? আমি বড় হলে তো এই বাবুটাও বড় হবে তখন তো বিয়ে করা যাবে। হুম এটাই আমার বউ। আমি আজি ওকে বাড়ি নিয়ে যাবো আম্মুর ও মেয়ে হবে আমারো বউ হবে। আম্মুর আর কষ্ট হবেনা৷
এই পিচ্চি তুই কি আমার মায়ের বউ মা হবি??
রঙিন শাড়ী চুরি কিনে দিবো।।
বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো ইমন।
কি ব্যাপার এখানে দাড়িয়ে হাসছিস। তোকে খুজতে খুজতে পাগল হলাম।এখানে কি তোর চল এখান থেকে।
সাথে সাথেই বাচ্চটা কেঁদে ওঠলো। রক্তিমও খেয়াল করলো ইমনের কোলে সদ্য জন্মানো এক ফুটফুটে বাচ্চা।
একি এটা কে??
এটা আমার বউ।
কিহ বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো রক্তিম।
কি হচ্ছে এখানে চুপ করুন আপনারা এটা একটা হাসপাতাল।(একজন নার্স এসে চোখ রাঙিয়ে বললো রক্তিম চুপ হয়ে গেলো)
আস্তে করে বললো- কার বাচ্চা এটা??
জানিনা।
তাহলে তোর কোলে কে দিলো।
ওর নানী।
তোকে দিলো কেনো?
আমার বউ আমাকে দিবেনা তো কাকে দিবে?
রক্তিম ইমনের কথা শুনে হা হয়ে গেলো। বিশ বছরের জীবনে আমি একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না আর আট বছর বয়সেই বউ জুটিয়ে ফেললি?
হুম আমার বউ এটা।
পাগলামো না করে যার বাচ্চা তাকে দিয়ে চল এখান থেকে৷
না যাবোনা
দাও দাদুভাই আমাকে।
ইমনের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। মলিন মুখ করে দিয়ে দিলো বাচ্চাটাকে।
রক্তিম ও বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে গেলো ইমন কে।
পরেরদিন তাদের ফেরার কথা হলেও ইমনের জেদের কারনে সেটা হয়নি। নিয়ম করে চারদিন ধরে ইমন হাসপাতালে রয়েছে। বাচ্চার মা আর বৃদ্ধ মহিলাটি বাচ্চার বায়না ভেবে কিছু বলেনি। তারাও ইমনকে এই কদিনে আপন করে নিয়েছে।পাঁচ দিনের দিন বৃদ্ধ মহিলাটি আবারো কান্না কাটি করছিলো এমন সময় ইমন হসপিটাল যায়। রক্তিম হাসপাতালের বাইরে ঘুরাঘুরি করছে। কারন সে জানে আজ ইমন কি করবে৷ আর কারো সাধ্য নেই তাকে আটকানোর সে যে এক রোঘা ছেলে।এই বয়সেই তার ব্যাপক ত্যাজ। তার মধ্যেই জমিদার বংশের আসল ত্যাজ ফুটে ওঠেছে এই বয়সেই।
হাসপাতাল গিয়ে বৃদ্ধ মহিলাটির কাছে ইমন জানতে পারলো বাচ্চাটাকে তার বাবা মেনে নিবেন না। টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিবেন। নয়তো ঠিক ভাবে মানুষ করবেন না। খাওয়ার অভাব বা কাপড়ের অভাবে বড় হবে।তাই ইমন বললো- আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। বিয়ে করবো ওকে।
বৃদ্ধ মহিলাটি প্রথমে ইমনের কথা পাত্তা না দিলেও পরে বুঝতে পারলো এই ছেলে বড্ড জেদী। আর ভালো পরিবারের ছেলে। তাই সে ইমনকে জিগ্যাসা বাদ শুরু করলো। ইমন ও সব বললো পরিবারের বিষয়ে। তার মায়ের বিষয়ে সব শুনে মনে হলো তার যে বাচ্চাটাকে দিয়ে দিলে কেমন হয়। কিন্তু আমার মেয়েতো রাজি হবেনা৷ তাই মহিলাটি সিদ্ধান্ত নিলো গোপনে দিয়ে দিবে৷ আর মেয়েকে বলবে হারিয়ে গেছে। এতে ওর অত্যাচার ও কমবে আর বাচ্চাটাও একটা সুন্দর জীবন পাবে।
ইমন তার কথা শুনে খুব খুশি হলো আর তার সহায়তায় ই বাচ্চাটাকে রক্তিম আর ইমনে হাতে তুলে দিলো।ইমন বাচ্চা তাই রক্তিমকে বুঝিয়ে দিয়ে দিলো। দুধের শিশু ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী প্যাকেট দুধ ও সাথে দিয়ে দিলো।রক্তিম তার বাবার একাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা বৃদ্ধ মহিলাটিকে জোর করে দিয়ে দিলো।তবে সেটা বাচ্চার জন্য না। তার মায়ের জন্য।
এদিকে হাসপাতালে গুঞ্জন ছরিয়ে পড়লো বাচ্চা চুরি হয়েছে।বাচ্চার মা কান্নায় ভেঙে পড়লো। বৃদ্ধ মহিলাটি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। গরীব মানুষ থানা পুলিশ হবে না যেখানে বাচ্চার বাবাই আসেনি। এ নিয়েও কতো লোকের কৌতুহল বাচ্চার মা ভাবলো হয়তো এটার পিছনেও বড় কোনো কারন রেখেছে আল্লাহ। আমার মেয়েটা যেখানে থাকুক ভালো থাকুক। দূর্ভাগ্য নিয়ে আমার কোলে এসেছিলো। আবার চলেও গেলো।
ইমন আর রক্তিম আজি ঢাকা ফিরছে। তারা ট্রেনে করে যাচ্ছে । হঠাৎ রক্তিম বলে ওঠলো-তুই কি জিনিস ভাই কি করে পারলি এটা করতে। এতো সাহস কই থেকে এলো তোর। চুরি করলি।
অনেক চোর দেখেছি তোর মতো এমন হাই লেভেলের চোর জীবনে প্রথম দেখলাম। শেষ মেষ চুরি করলি তাও বউ চুরি। কিভাবে পারলি ভাই।
মানুষ টাকা -পয়সা চুরি করে, গয়না চুরি করে। মোবাইল চুরি করে, গাছের আম,লিচু,জাম সব চুরি করে। কতো রকমের চুরি দেখেছি ভাই কিন্তু মাইয়া চুরি দেখিনাই। তাও বউ করার জন্য চুরি, মাইয়া চুরি। ভাই আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। এই বয়সেই তুই কি করলিরে ভাই। জানিনা ভবিষ্যতে কি করবি তুই।
কিন্তু মাইয়াতো মইরা যাইবো। দুধের শিশু নাড়ই পড়ে নাই। কেমনে কি করবি ভাই।
এতো বক বক করেও কাজ হচ্ছিল না৷
কোনো কিছুতেই যেনো আর খেয়াল নেই তার। কিন্তু যখনি পাঁচদিনের বাচ্চার কান্নার আওয়াজ গেলো কানে হুশ ফিরলো ইমনের চমকে ওঠলো সে। এই কান্নারত গলাটা তার কানে তীরের মতো বাজলো।
সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে ইমন আর রূপমের রাত আটটা বেজেছিলো।বাচ্চা মেয়েটা ইমনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। পাঁচ দিনের বাচ্চাকে ফিটারের দুধ খাওয়ানো খুবই কষ্টকর তবুও তারা দুইভাই মিলে সামলেছে পিচ্চিটাকে।বাড়ি ফেরার পর মোজাম্মেল চৌধুরী ইরাবতী প্রশ্নের পাহাড় বসিয়ে দিয়েছে রূপম ধীরে সুস্থে সবটা বুঝিয়ে বললো।ইরাবতী বাচ্চা মেয়েটা কে বুকে জরিয়ে দুচোখ বন্ধ করে ফেললো। তার বুকের ভিতর যে আগুন জলছিল নিমিষেই সব ঠান্ডা হয়ে গেলো। ইমন কে কাছে টেনে কপালে চুমু একে দিলো।মোজাম্মেল চৌধুরী ও ছেলের কাজে সমর্থন করলেন। তাছারা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। এই পরিবারে অনেক ভালো ভাবেই মানুষ হবে। এটাই ভাবলো তার এই বাচ্চা ছেলের এতো সাহস দেখে সে ভারী খুশি সেই সাথে অবাক ও। ইরাবতী বাচ্চার জন্য যাবতীয় যা লাগবে সব তার স্বামী কে বলে দিলেন হঠাৎ ই ইরাবতী অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেছেন।যা দেখে ইমন খুবই খুশি হলো। বাড়িতে যেনো খুশির ঢেউ খেলে গেলো।
ছোট চাচা মইন চৌধুরীর বউ দীপান্বিতা বেরিয়ে আসলো।ইরাবতীর কোলে বাচ্চা দেখে সে অবাক হয়ে জিগ্যাস করলো কার বাচ্চা?
রূপম তাকেও সব খুলে বললো।সে তো অবাকের চরম পর্যায়ে। ইমনের দিকে একবার আবার বাচ্চার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর ইমনের কাছে গিয়ে ঝুকে বললো-
বা বা এই বয়সেই মেয়ে ওঠিয়ে আনলি বড় হলে কি করবি রে তুই । ইমন শুধু মুখভরা হাসি উপহার দিলো।
বাড়ির সবাই বাচ্চাটাকে খবই সন্তুষ্ট মনে মেনে নিলো।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সে বড় হলে ইমনেরই বউ হবে।
ইরাবতী বাচ্চাটা কে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
এদিকে ইমন তার বাবাকে বললো-
বাবা আমার আলাদা রুম চাই । আম্মুর সাথে তো পিচ্চি থাকবে তাহলে আমার এখন আলাদা রুম দরকার।
মোজাম্মেল চৌধুরী ছেলের কথায় হাহা করে হেসে ওঠলেন । আর বললেন বউ আসতে না আসতেই আলাদা রুম চাই। কথাটা শুনে সবাই হেসে ওঠলো।
বাড়িটা অনেকদিন পর খুশির আমেজে ভরে ওঠলো।
দীপান্বিতা চাচীর ছেলে দ্বিপক ইমনের একবছরের ছোট সেও ভীষন খুশি ছোট একটা বোন পেলো।
রাতে ইমন আর ইরাবতীর মাঝখানে রাখা হলো বাচ্চাটাকে। মোজাম্মেল চৌধুরীর আজ আর জায়গা হলো না এই রুমে সে পাশের রুমে চলে গেলো।
পরেরদিন বাচ্চার যা যা লাগে সব আনা হলো। ইমনের আলাদা রুম করা হলো।পুরো বাড়িতেই খুশির ঢেউ খেলে গেলো।বাড়িতে যে লক্ষীর পা পড়েছে। মোতালেব চৌধুরী ও ঘটনা শুনে গ্রাম থেকে চলে আসলেন। বাচ্চা দেখে ভারী খুশি হলেন। সে তো এক দেখাতেই গিন্নী বলে সম্বোধন করলেন।সেই শুনে ইমন দাদুকে চোখ রাঙালো। সেই নিয়ে পুরো বাড়ি হাসি তামাসায় মেতে ওঠলো।
বাচ্চার নাম ও রাখা হলো- মুসকান জান্নাত।
নামটা ইমনেরই দেওয়া।
সেই থেকে শুরু হয়ে গেলো চৌধুরী বাড়ির সুখের জীবন। ইমন ও তার পিচ্চি বউকে নিয়ে সময় কাটায় পড়াশোনার ফাকে বউকে সময় দেয়। মা কে সময় দেয়।মুসকানকে ছোট চাচী আইনি ভাবে এডপ্ট নেন।আশে পাশের সবাই জানে মুসকান মইন চৌধুরী আর দীপান্বিতা চৌধুরীর মেয়ে। ইরাবতী ই মুসকানের সব কিছু সামলায় দীপান্বিতা ও নিজের মেয়ের মতোই তাকে ভালোবাসেন । এক কথায় বাড়ির সকলের চোখের মনি সে। আর ইমন তার তো শুধু চোখের মনি না৷ তার হৃদপিন্ড সে।
আজ মুসকানের চতুর্থ তম জন্ম দিন। সামাজিক রীতি তে ইমন মুসকানের বিয়ে হয়ে গেলো৷ মুসকান ও তিন কবুল বলেছে ইমনও তিন কবুল বলেছে । পিচ্চি বউ কে কোলে নিয়ে বসে আছে সে। স্কুলে ভর্তি করানোর আগে ইমন বিয়েটা সেরে নিলো এই বাচ্চা মস্তিষ্কে যে এতো গভীর চিন্তা তার কীভাবে আসে বাড়ির লোকেরা সেটাই ভেবে পায় না।
স্কুলে ভর্তি করানো হলো মুসকানকে। ক্লাস এইটে পড়ছে ইমন পড়াশোনার পাশাপাশি তার বউ এর দিকে বেশ নজর তার দুটাই দর্বলতা এক তার মা দুই মুসকান।
রাগি, জেদী,ঘারত্যারা,বদমেজাজী, রোমায়েন্টিক, দুষ্ট সব উপমাই তার জন্য দেওয়া যায়। বাড়ির সকলে তাকে যেমন ভালোবাসে সেই সাথে ভয় ও পায়। রাগ তার ১৬আনা।
একদিন স্কুল থেকে ফিরে মুসকান খাচ্ছে আর পুতুল খেলছে ইরাবতী তাকে খাওয়িয়ে। হাত ধুতে চলে গেলো।ইমন বাইরে থেকে এসে মুসকানকে দেখতে মায়ের রুমে ঢুকেছে । মুসকান পিছন ফিরে তার মেয়ে পুতুলের সাথে কথা বলছে –
বাবু কাঁদো কেনো? তোমার বাবা তো বিদেষ থাকে । বাবার কোলে তো ওঠতে পারবেনা। কিন্তু তোমার তো তিনটা মামা আছে বড় মামা এসে তোমাকে কোলে নিবে নি তাও কেঁদো না।
ইমন ভ্রু কুচকে মুসকানের সামনে গেলো।
কি করছো মুসকান??
মুসকানের মুখে খুশির ঝলক দিয়ে ওঠলো।
আর পুতুলের দিকে তাকিয়ে বললো- এইতো তোমার মামা এসে গেছে।
ইমন তো অবাক দাড়িয়ে চোখ গরম করে জিগ্যাস করলো কে মামা কিসের মামা??
মুসকান ও খাটের উপর দাঁড়িয়ে বললো-
এটা আমার মেয়ে।(পুতুল দেখিয়ে)
তাহলে তুমিতো ওর মামাই। দেখোনা আম্মুর ভাইয়া আমার মামা। (দীপান্বিতার ভাই) এই বাবু যাও মামার কোলে যাও বলেই পুতুল এগিয়ে দিলো ইমনের দিকে।
ইমনের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো কথা শুনে বড় বড় করে তাকালো মুসকানের দিকে । তার বউ তাকে পুতুল বাচ্চার মামা বানিয়ে দিলো।তার মানে বিদেশে পুতুলের বাবা থাকে বাহ দারুন তো। এই বয়সেই বিদেশী বরের সপ্ন দেখছে। সামনে সত্যিকারের বর রেখে বিদেশী বর । তোমার বিদেশী বরের সপ্ন আমি দেখাচ্ছি দাঁড়াও।
চলবে…