বউ চুরি
পর্বঃ ২
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা
মুসকান ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করলো। ইরাবতী দৌরে এলো।
কি হয়েছে মা কাঁদছো কেনো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে ইমনের দিকে ইশারা দিলো।
ইরাবতী চমকে ওঠলো।
ইমনের মাথায় হাত দিয়ে- বাবা কি হয়েছে?
ইমন আর কিছু না বলে চলে গেলো রুম থেকে।এখানে থাকলে মুসকানের কান্না সহ্য করতে পারবেনা আর মা কে ও এমন কথা বলতে পারবে না। যে তার বউ তার পুতুল মেয়ের মামা বানিয়ে দিয়েছে তাকে। রাগে গট গট করতে করতে বেরিয়ে গেলো ইমন।
ইরাবতী কিছু না বুঝে মুসকানকে জিগ্যাসা করলো কি হয়েছে?
মুসকান আল্হাদী স্বরে বললো- ইমন ভাইয়া ভয় দেখিয়েছে ।
কেনো মা কি করেছো?
কিছু করিনি বলেই কাঁদতে লাগলো।
বিকাল বেলা মুসকান ঘুম থেকে ওঠে দেখে তার পাশে তার আদরের পুতুল নেই। ইরাবতী পুরো বাড়ি খুজেও পেলো না পুতুল । দ্বিপান্বীতার কাছে যে পুতুল ছিলো সব ইমন সরিয়ে ফেলেছে। ইরাবতী মোজাম্মেল চৌধুরী কে নতুন পুতুল কিনে আনার জন্য ফোন করতেই সে জানালো ইমনের কড়া নিষেধ মুসকানকে পুতুল কিনে দেওয়া যাবে না।
ইরাবতীর মাথায় কিছু ঢুকছেনা। পুতুল কিনতে নিষেধ করেছে তার মানে পুতুল ইমনই সরিয়েছে।
মুসকান রাতে খাবেনা জেদ ধরেছে। তার পুতুল চাই পুতুল না পেলে সে খাবেনা। ইমন চুপচাপ রয়েছে কিছু বলছেনা। এদিকে মুসকান ও খাচ্ছে না। বাড়ির সবাই মুসকান কে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে পারেনি। ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছে ইমন। অপেক্ষা করছে তার বাবা কাকা চলে যাওয়ার। তারা চলে যাওয়ার পর ইমন ইরাবতীকে ডেকে মুসকান এর খাবাড় নিয়ে আসতে বললো।আর মুসকানকেও নিয়ে আসতে বললো।ইরাবতী খুব খুশি হলো সে ভাবলো ইমন মুসকানকে খাওয়িয়ে দিবে। ইরাবতী খাবাড় নিয়ে এসে ছোট ট্রি টেবিলে সোফার সামনে রাখলো মুসকানকেও নিয়ে আসলো। মুসকান খাবাড় দেখেই বললো-
আমি খাবনা মামনি, আমি একটুও খাবনা।
ইমন রাগি চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। এই মেয়ের এতো জেদ আসে কোথা থেকে।
মা তুমি রুমে যাও।আমি দেখছি বিষয় টা।
ইরাবতী মুসকানকে বসিয়ে চলে গেলো। মুসকান ও পেছন যাওয়ার জন্য ওঠতেই ইমন মুসকানের হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলো।
মুসকান আল্হাদী গলায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো- আমি খাবনা আমি মামনির কাছে যাবো।
হ্যাঁ তুমি মামনির কাছে যাবে তার আগে রাতের খাবাড়টা খেয়ে নিবে।
না আমার মেয়েকে ছাড়া আমি খাবনা। আমার পুতুল চাই। ইমন টিভিটা বন্ধ করলো একহাত দিয়ে মুসকানের পিচ্চি হাত ধরেই আছে। আচ্ছা তুমি খাবে নাকি আমি আমি তোমাকে কোলে নিয়ে বাসার বাইরে রেখো আসবো। মুসকান ইমনের দিকে তাকালো। ছোটো ছোটো গোল গোল চোখ দিয়ে দেখছে ইমন কে। ইমন এর হাসি পেলেও সেটা চেপে রেখে বললো- হয় ভাত খাবে নয় তো আজ বাসার বাইরে থাকবে। রাস্তায় শেয়াল, কুকুর তোমাকে ভয় দেখাবে। তোমার হাতে কামড়ে দিবে সেখান থেকে রক্ত বের হবে রক্ত বের হতে হতে তোমার সব রক্ত শেষ হয়ে পোকা বের হওয়া শুরু করবে। পোকা গুলো কুচকুচে কালো হবে। মুসকান ভয়ে ঢোক গিলে মামনি বলেই কাঁদতে লাগলো।দীপান্বিতা কান্না শুনে বের হবে এমন সময় ইরাবতী দীপান্বিতার রুমের সামনে গিয়ে বললো- ওকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে আমরা কেউ পারিনি ওদের ব্যাপার ওরাই বুঝে নিক। দীপান্বীতা বললো- তোমার ছেলের মতি গতি কিছু বুঝিনা বাচ্চা মেয়ে পুতুল খেলবে সেটা নিয়ে এতো কিসের সমস্যা। বউ তাতে কি এখন তো আমাদের ও মেয়ে তাইনা।
হুম কিন্তু ওর উপর ইমনের হকটাইতো বেশী । আর তুই চিন্তা করিস না মুসকানের প্রতি ইমন যথেষ্ট সেনসেটিভ। আর ও যা করছে অবশ্যই কোনো কারন আছে। বউ ওর। ছোটো থেকে আজ অবদি যা যা করেছে এতে তো এইটুকু বুঝেছিস মুসকান এর ভালোর জন্য ইমন ওর কলিজাটা কেটে খাওয়াতেও দ্বীধা করবে না।
হুম তাতো ঠিকি। তোমার ছেলের স্পেশাল বউ। একমাএ বউ। তোমার ছেলেও যে বাচ্চা সেটা তো আমরা সবাই ভুলেই গেছি।না না তোমার ছেলে বাচ্চা হবে কি করে সে তো এখন কারো স্বামী।
দুজনেই হেসে ওঠলো। ইরাবতী বললো- আমার সংসারটা যেনো এমনই থাকেরে এই খুশিটা যেনো সবসময় থাকে। ওরা বড় হোক ইমন কে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই তবে মুসকান কে নিয়ে খুব চিন্তা হয়।
চিন্তা করো না ভাবি মুসকান কে আমরা দুজন খুব ভালো ভাবে মানুষ করবো। আমাদের সবার ভালবাসা ইমনের ভালবাসা বৃথা যাবে না। ছেলেটা যে সেই বাচ্চা থেকেই মন দিয়ে বসে আছে তাকে। আর ইমনের উপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে। ওর ভালবাসা ঠিক বুঝে নিবে,ওর বউ কে ওর আয়ত্তে করে নিবে। আর মুসকান বড় হলে সবটা বুঝতে শিখলে ঠিকি সব মেনে নিবে।এতো ভালবাসার অবজ্ঞা করতে পারবেনা দেখো।
তাই যেনো হয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কান্না করলে চোখ দিয়েও পোকা পড়বে। কান্না বন্ধ করো।
আমার পুতুল চাই, আমার পুতুল চাই।
চুপপ….( ধমকে ওঠলো ইমন)
মুসকান ভয়ে চুপটি মেরে বসে রইলো। খাবে নাকি আমি বাসার বাইরে দিয়ে আসবো।
কাঁদো কাঁদো গলায়- খাওয়িয়ে দাও। (আল্হাদী স্বরে)
স্কুলে ভর্তি হয়েছো এখনো কেনো খাওয়িয়ে দিবো। নিজের হাতে খাও। আমি বসে বসে দেখি।
মুসকান অবাক হয়ে তাকালো। সে নিজের হাতে কখনো খায়নি দুই মায়ের আদরেই মানুষ হচ্ছে। তারা দুজনেই তাকে খাওয়িয়ে দেয়। নিজের হাতে খাওয়াটাও শেখায় নি কেউ তাহলে কিভাবে খাবে সে।
কি হলো খাও।
মুসকান ওর ছোটো হাত দিয়ে ভাতে হাত দিলো।ইমন বুঝতে পারছে সে নিজের হাতে খেতে পারবেনা। কিন্তু তাকে তো শিখতে হবে। তাই সে ভাত মেখে দিয়ে গোল গোল লাড্ডুর মতো করে লোকমা করে দিলো।মুসকান কে দেখিয়ে দিলো মুসকান ও খেতে শুরু করলো। সবটাই ভয় পেয়ে।অর্ধেক খেয়ে যখন আর খেতে চাইলো না ইমন তখন আবার ধমকে ভয় দেখিয়ে খাওয়ালো। খাওয়া শেষে মুসকান তার আম্মুর কাছে যেতে চাইলো ( দীপান্বিতা) কিন্তু ইমন বললো – না তুমি আমার পাশে বসে টিভি দেখো ছোট কাকি ঘুমিয়ে গেছে। তুমি আম্মুর সাথে ঘুমাবে। ( ইরাবতী )
না আমি টিভি দেখবো না। আমি মামনির কাছে যাবো।
বলছিতো এখানেই থাকো সময় হলে নিয়ে যাবো।
মুসকান ভয়ে চুপসে গেলো গুটিসুটি মেরে বসে রইলো।শীতের রাত বেশ ঠান্ডা ও। হালকা ফুপাচ্ছে মুসকান। এইভাবে এই বাড়ির কেউ তাকে ধমকায় না। জোর খাটায় না । তার চোখে ইমন খুবই খারাপ মানুষ। কারন ইমন তাকে আজ খুব বকেছে। একরাশ অভিমান নিয়ে চুপটি করে বসে রইলো মুসকান। ইমন মনের সুখে টিভি দেখছে। এদিকে মুসকান ঝিমুচ্ছে । একসময় সে সোফাতে কাত হয়েই ঘুমিয়ে গেলো।ইমন এই সময়েরই অপেক্ষায় ছিলো। টিভিটা বন্ধ করে মুসকানকে সে কোলে তুলে নিলো। কোলে নিয়ে মায়ের রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো। মায়ের রুমে ঢোকার আগে মুসকানের মুখের দিকে তাকালো।এক নিষ্পাপ বাচ্চা,অবুঝ শিশু তার কোলে ঘুমিয়ে আছে। এই মায়া ভরা মুখ টা দেখলেই তার কলিজা টা ঠান্ডা হয়ে যায়। যখনি এই মুখের দিকে তাকায় তখনি সেই প্রথম দিনের কথা তার মনে পড়ে যায়। সেই একি রকম অনুভূতি হয় তার। বয়সটা তারও কম। কিন্তু সে যে অল্প বয়সেই বেশ পেকে গেছে। সে যে সেই আটবছর বয়সেই তার জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পেয়েছে।নিজ বাড়িতে নিয়ে এসেছে। আট বছর বয়স থেকেই আগলে রাখছে তার এই পিচ্চি বউ, চুরি করা বউ কে। শান্তির এক নিঃশ্বাস ছেড়ে মুসকানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে তার কপালে, চোখের পাতায় চুমু দিলো। এতো শাসনের পর একটু আদর না করলে কি চলে??
মায়ের পাশে মুসকান কে শুইয়িয়ে দিয়ে সে চলে গেলো।ইরাবতী ছেলের কান্ডে এখন আর অবাক হয় না। সে যে ইচরে পাকা। অল্প বয়সেই বেশ পেকে গেছে। মুসকানকে বুকে জরিয়ে সে ঘুমিয়ে গেলো।
ইমন মুসকান কে ছোট থেকেই যথেষ্ট সেফ করে রাখছে। সেই সাথে বেড়ে ওঠছে দুজনেই। ইমনের এতো কেয়ার এতো যত্নে মুসকান ইমনের প্রতি খুবই বিরক্ত সেইসাথে ইমনের প্রতি তার বেশ ভয় ও তৈরী হচ্ছে।এ বাড়িতে যদি সব থেকে বেশী অপছন্দ কাউকে করে থাকে তাহলে সেটা ইমন।কিন্তু ইমন সেদিকে পাত্তা দিচ্ছেনা সে নিজের মতো করে তার জীবন গোছাচ্ছে সেই সাথে মুসকানের ও। বাড়িতে যেমন ইমন নিজের একরোখা জেদী, রাগী বাইরেও এর বিপরীত নয়। অল্প বয়সেই সে যথেষ্ট ম্যাচিওর। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। বাবার নাম ডাক থাকায় সব জায়গায় তার আলাদা এক সম্মান রয়েছে।সেই সাথে কলেজ লাইফে পলিটিকস এর প্রতি তার বেশ ঝোক তৈরী হয়ে যায়। বড় বড় নেতারা তার আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে যায় । স্টুডেন্ট ও বেশ ভালো সব দিক দিয়েই সে অনেক টা এগিয়ে। যতো দিন যাচ্ছে ততো তার মধ্যে জমিদার বংশের ত্যাজ ফুটে ওঠছে। সারাদিন বাইরে থাকে সে রাতে পড়ায় সময় দেয় সেই সাথে মুসকানের খবড় নিয়ে নেয়। দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছে। কিন্তু ইমন কি জানে সামনে তার জীবনটা বেশ জটিলতার মধ্যে পড়ে যাবে। সেই জটিলতা কি সে সামলে ওঠতে পারবে? নাকি তার ত্যাজ আরো আগুন হয়ে জালিয়ে ফেলবে সব কিছু?
আট বছর পর –
আজ মুসকানের কলেজের প্রথম দিন। ইমনের সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও ইমন সময় বের করতে পারেনি। ছাএ নেতাদের নির্বাচন চলছে তাই সে সকাল সকালেই বেরিয়ে গেছে।
মুসকান কে কলেজে রেখে মোজাম্মেল চৌধুরী প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে অফিসে চলে গেলেন।
মুসকান আর তার স্কুল ফ্রেন্ড রায়া একসাথে ক্যান্টিনে বসে আছে। এমন সময় দুটা ছেলে এসে ওদের সাথে পরিচিত হলো ওরাও ফার্স্ট ইয়ার। কথা শেষে একটা ছেলে মুসকানের কাছে ওর ফোন নাম্বার চাইছে। মুসকান বললো- আমার ফোন নেই।
ছেলেটা বললো- তাহলে আমার টা নিয়ে যাও। আমরা তো বন্ধু যে কোনো প্রয়োজনে, পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারবো। রায়া তো তার টা দিয়েই দিলো । আর মুসকান নাম্বার রেখে দিলো।
প্রথম দিন বেশ ভালোই কাটলো মুসকানের। কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার বড় বাবার জন্য। ( মোজাম্মেল চৌধুরী)
কিন্তু গাড়ি আসলো ইমনের। সাদা পান্জাবি, সাদা পাজামা, গোল্ডেন কালারের কোর্ট, কালো চশমা পড়া। তার পোশাকেই বোঝা যাচ্ছে বড় সড় একজন নেতা সে। কলেজের অধিকাংশ ছেলে তাকে সালাম দিলো, ভাই বলে সম্বোধন করলো। অধিকাংশ মেয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
মুসকান…. চলো।
মুসকান রায়ার সাথে কথা বলছিলো।
ইমন কে দেখে সে বিরক্ত হলো।আর নরম কন্ঠে বললো- তুমি? বড় বাবা কোথায়।
বাবা বিজি আছে চলো।তারাতারি সময় নেই।
মুসকান মনে মনে ইমন কে ভেঙচি কেটে রায়া কে বাই জানিয়ে গাড়িতে এসে বোসলো।
ইমন ও ওঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ইমন আবার চলে গেলো বাইরে। খাবাড়টাও খেয়ে যায়নি। কিসের মিটিং আছে বলেই বেরিয়েছে।
রাত এগারোটার দিকে ইমন বাড়ি ফিরে রাতের খাবাড় খেয়ে তার রুমে ঢোকার আগে তার ডানপাশের রুম এর সামনে গিয়ে দরজায় নক করবে এমন সময় গুনগুন গানের আওয়াজ ভেসে এলো রুম থেকে….
“এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই,
ডাইনে ও বায়ে আমি তোমাকে চাই,
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই,
না বলা কথায় আমি তোমাকে চাই…
ইমন দরজায় জোরে জোরে শব্দ করতে লাগলো।মুসকান গান স্টপ করে দৌড়ে দরজা খুলে ইমন কে দেখে ভয়ে ঢোক গিললো।আর মনে মনে বললো- ওরে আল্লাহ এখন যে এই কর্কশ টা কি জ্ঞানের ঝুড়ি খুলবে জ্ঞানদাতা হয়ে তুমিই ভালো জানো।
চলবে…………