বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৪৯.
আজ সকাল থেকে আকাশে মেঘ করে আছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। মেঘে মেঘে আকাশ ঢেকে আছে। কেমন মন খারাপ করা বিষন্ন একটা দিন। এমন দিনে না চাইতেও ভালো মন খারাপ হয়ে যায়, কিন্তু আজ মীরার মন অসম্ভব ভালো। তা সে বৃষ্টির জন্যই হোক বা অন্য কারনে। বোধহয় অন্য কারণটাই আসল।
আজ এক সপ্তাহ ধরে ওর জীবনটা কেমন বদলে গেছে। ঘটনাটা শুরু হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারির দিন। মীরা সকালে তৈরি হয়ে আশিকের সঙ্গে বেরিয়েছিল। রাত থেকে আশিকর আর জ্বর আসেনি, তবু মিরা ওকে জ্বরের ওষুধ খাইয়েছে। রাতে বেশ কবার জেগে উঠে পরীক্ষা ও করেছে, আবার জ্বর এলো কিনা। শেষ রাতের দিকে নিশ্চিন্ত হয়ে তবে ঘুমিয়েছে।
পুরো অনুষ্ঠান খুব চমৎকার হয়েছে। ছাত্র শিক্ষক সকলেই মহা খুশি। মীরার অবশ্য একটু মন খারাপ হয়েছিল, আশিক আবৃত্তি করতে পারিনি বলে। ওর গলা ভেঙে আছে, উপস্থাপনাই করেছে বহু কষ্টে।
আশিক একটা কালো পাঞ্জাবি পরেছে। কদিনের অসুস্থতার কারণে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ যেমন আছে, তেমনি যত্নের চিহ্ন ও আছে। ওর অসুস্থতার কথা সবাই জানে বলে কেউই ওকে তেমন একটা কাজ করতে দিচ্ছে না। মারুফ, সুমন, রিপন সবাই অনেক পরিশ্রম করছে।
ভোরবেলা স্টেজের কাজ হয়ে যাবার পর মীরার আর কোন কাজ নেই। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর আফসিন এসেছে। টুম্পা এসেছে আরো আগেই। স্টেজ থেকে একটু দূরেই টেবিলের উপর স্ন্যাকস রাখা আছে। মিরা সবার জন্য খাবার নিচ্ছিল, তখনই শুনতে পেল দুটো ছেলে ওকে নিয়ে কথা বলছে। মীরার পেছনে তাকাতে রুচি হল না। এতদিন হয়ে গেছে এখনো সবাই এগুলো নিয়ে খিস্তি করে মজা পায়।
মীরা তাকালো না। একটু আড়ালে সরে গেল। আর তখনই টের পেল পেছন থেকে আশিক এসে ছেলে দুটোর কাঁধে হাত রেখেছে। আশিক ঠান্ডা গলায় বলল
– তোরা কোন ডিপার্টমেন্ট রে?
ছেলে গুলো একটু ঘাবড়ে গেল। আশিককে মোটামুটি সবাই চেনে। তৌহিদের সঙ্গে মারামারির ঘটনাটাও জানে। ছেলে গুলো ডিপার্টমেন্টর নাম বলল। আশিক ঠাণ্ডা গলায় বলল
– এতক্ষণ তোরা যাকে নিয়ে কথা বলছিলি, সে আমার বউ।
মীরা আর আশিকেকে নিয়ে রটনাটা সবাই জানে, কিন্তু ওদের বিয়ের খবরটা এখনো সেভাবে কেউ জানেনা। ছেলেগুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। আশিক আগের চেয়ে ও শীতল গলায় বলল
-আর একবার আমার বউয়ের দিকে তাকাবি, কি আর একটা বাজে কথা বলবি তো তোদের চোখ তুলে নেব। প্রগ্রাম দেখতে এসেছিস দেখ, তা না হলে বিদায় হ।
ছেলে গুলো সুরসুর করে অডিয়েন্সের মধ্যে ঢুকে বসে পরল।আশিক আর কিছু বলল না। ভাবলেশহীন মুখ করে আবার স্টেজে ফিরে গেলো।
আড়ালে দাঁড়িয়ে মীরা পুরো ঘটনাটাই দেখল। মিরার কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। এমন করে কেউ কখনো ওর জন্য বলেনি। আগের দিনও আশিক প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু সেটা যে কোন মেয়ের ক্ষেত্রেই করত। আজ যেটা করেছে সেটা শুধুমাত্র ওর জন্য। “আমার বউ” কথাটা কেমন ওর মনের মধ্যে গেঁথে গেল। মীরা চোখ তুলে স্টেজের দিকে তাকালো। দুরে আশিরকে দেখা যাচ্ছে। মীরার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে সূক্ষ্ম একটা যন্ত্রণা অনুভব করছে। এরকম তো আগে কখনো হয়নি। কাল টুম্পা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল
– তুই কি আশিক ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিস?
মীরা জবাব দেয়নি। চোখ তুলে তাকাতেও সাহস হচ্ছিল না। টুম্পা চিৎ হয়ে ঘাসের উপর উপর শুয়ে হাসতে হাসতে বলেছিল
– মীরা, শেষ পর্যন্ত তুইও পড়লি? অবশ্য তোর দোষ নেই, তুই এমন লৌহমানবী বলে। তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে আরো আগেই পড়তো।
তারপর উঠে বসে বলল
– তবে আমি যদি উনার জায়গায় হতাম তবে তোর উপর তিতি বিরক্ত হয়ে যেতাম
– কেন আমি কি করেছি?
– কি করেছিস বুঝিস না? প্রথম দিন খারাপ ব্যবহার করলি, তারপর থেকে খিটখিটে মায়ের মতন আচরণ করছিস। ওষুধ খান, ভাত খান রুটি খান। যত্তসব! একটু রোমান্টিক হতে পারিস না?
মিরার মনে হয়েছিল সত্যিই ও হয়তো একটু বেশি বেশি করছে। যতক্ষণ আশিকের কাছাকাছি থাকে ততক্ষণ শুধু খিটখিট করতে থাকে। কিন্তু এরপরে ও যতবার আশিকের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেছে আশিক ততটাই দূরে সরে গেছে। জ্বর সেরে যাবার পর আবার লাইব্রেরীতে ঘুমানো শুরু করেছে। জিজ্ঞেস করলে বলে পড়তে পড়তে ঘুম এসে যায়। মীরা অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর কখনো ঘুমিয়ে পড়ে নিজেই টের পায়না। তবে সকালবেলায় লাইব্রেরীর সাইডটেবিলে একটা কবিতা পায়। এ যেন একটা খেলা আশিকের। এতসব কঠিন কঠিন কবিতা মীরার মাথায় ঢোকে না। ও শুধু একটা কথাই জানে যে আশিকের আশেপাশে থাকতে ওর ভালো লাগে।ওর কথা শুনলে কেমন ঘোর লাগে। মনে হয় হাজার প্রজাপতিরা ডানা মেলছে।
গতরাতেও যখন আশিক লাইব্রেরীতে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো , মীরা উঠে দাঁড়িয়ে বলল
– আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি চলে যাচ্ছি
– মানে?
– মানে আমার কারনেই তো আপনাকে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। আপনি এখানেই থাকুন। আমি চলে যাচ্ছি।
আমি তোমার কারনে যাচ্ছি কথাটা ঠিক, তবে তার মানে এই নয় যে তোমাকে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। তুমি আলোতে ঘুমাতে পারো না তাই আমি ওখানে থাকি। তুমি ঘুমিয়ে পড়লে আবার চলে আসি।
– কোথায়? আপনি তো আর আসেন না।
– আসি, তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর।
– আমি তো সকালেও আপনাকে দেখি না।
– কি করে দেখবে? আমি তো তার আগেই উঠে পড়ি।
– তাহলে আপনি আমার জন্য যান না?
– না
– তাহলে এখানেই থাকুন। আমার আলোতে কোন সমস্যা হবে না
আশিক জবাব দিল না, তবে ও লাইট বন্ধ করে এসে বিছানায় বসলো। তারপর আস্তে আস্তে বলল
– ঘুমিয়ে পড় মীরা।
মীরার মনটাই ভালো হয়ে গেল। সেই মন ভালো থাকার রেশটা সকালবেলাতে রয়ে গেল। নিচে নেমে দেখল সবাই বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আফসিন রোজিনাকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে এডমিট কার্ড আনতে। রোজিনা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। হাসান সাহেবের সাথেই গাড়ি করে যাচ্ছে সবাই। যেহেতু আকাশের অবস্থা ভালো নেই , তাই একসঙ্গেই যাবে সবাই।মীরা রোজিনাকে বলল আজ দুপুরের খাবার ওই রান্না করবে ওরা যেন নিশ্চিন্তে ঘুরে আসে।
মীরা ব্রেকফাস্ট তৈরি করে টেবিলে রাখল। দুপুরে খিচুড়ি, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি করবে ঠিক করল। দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে করতেই টের পেলো ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। মিরা এক ছুটে ছাদে চলে গেল। কতদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। ছাদের এই পাশটা অনেক সুন্দর। একপাশে একটা বাগান বিলাস গাছ। বাইরে থেকে খুব একটা দেখা যায় না।মীরা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলো। আজ যেন ওর মনের সব কষ্ট এই বৃষ্টির জলের সঙ্গে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। খুব গান গাইতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ও গান গাইতে পারে না। মিরা আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বুজেই বলল
বৃষ্টি বৃষ্টি
জলে জলে জোনাকি
আমি সুখ যার মনে
তার নাম জানো কী ?
মেঘ মেঘ চুল তার
অভ্রের গয়না
নদী পাতা জল চোখ
ফুলসাজ আয়না।
বৃষ্টি বৃষ্টি
কঁচুপাতা কাঁচ নথ
মন ভার জানালায়
রাতদিন দিনরাত।
ঘুম নেই ঘুম নেই
ছাপজল বালিশে
হাঁটুভাঙা নোনা ঝিল
দুচোখের নালিশে।
বৃষ্টি বৃষ্টি
জলেদের চাঁদনি
দে সোনা এনে দে
মন সুখ রোশনি।
চলবে …….
বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৫০.
ছাদে উঠে আশিক থমকে গেল। ছাদের এক কোণ দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে মীরা। বাগান বিলাসের ঝাড়ের পেছনে ওর ছিপছিপে দেহাবয়ব নজরে পড়ছে। গোলাপি ফুল গুলোর আড়ালে ওর বৃষ্টিস্নাত মুখটায় চোখ আটকে গেল আশিকের। এর আগে ওকে দেখেছে অন্ধকারের অবনীলে। কখনো কোন শরীরী আকর্ষণ অনুভব করেনি ওর প্রতি , কিন্তু আজ ওকে এই অবস্থায় দেখে কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি হল। দুদিকে হাত প্রসারিত করা আকাশের দিকে মুখ করা ওর এই প্রতিচ্ছবিটা কেমন অপার্থিব ঠেকছে। আশিক অপলক চেয়ে রইল।
মীরা চোখ মেলে ওকে দেখে তাকিয়ে রইল দু এক মুহূর্ত, তারপর লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে পাশ কাটিয়ে নেমে গেল। মীরা চলে যাবার পর আশিক কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটলো। বৃষ্টির পর গাছগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে। মনে হয় যেন আজ ওদের মনে অনেক আনন্দ। কিছুক্ষণ ভেজা ফুলগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল, তারপর রেলিং এর কাছে এসে দাঁড়ালো। বৃষ্টির পর শহর জুড়ে ব্যস্ততা নেমেছে। যে যার কাজে ছুটে যাচ্ছে। ভাড়ী বর্ষনের পর এই শহর জোড়া ব্যস্ততা দেখতে খুব ভালো লাগে আশিকের, কিন্তু আজ মন বসছে না। কেমন অস্থির লাগছে। আশিক ধীরপায়ে নিচে নেমে গেল।
ঘরে ঢুকে মোটামুটি একটা ধাক্কার মতন খেলো। মীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।ওর পরনে আকাশী নীল শাড়ী। মীরা কি গান গাইছে গুনগুন করে? মীরা পেছন ফিরে আছে। চুলগুলো একপাশে সরানো। ওর সরু কোমরের অনেকটা দৃশ্যমান। আশিকের বুকে কাপন ধরল। ও চোখ সরিয়ে নিয়ে ওয়াটার হিটারে চায়ের জন্য জল চাপালো। শব্দ শুনে মীরা পেছন ফিরে দেখল, হাতের তোয়ালে বারান্দার রেলিংয়ে মেলে দিয়ে ঘরে ঢুকে বলল
– কফি বানাচ্ছেন ?
– হ্যাঁ, তুমি খাবে?
– আপনার কষ্ট না হলে দিন
– এ কেমন কথা? তুমি আমার জন্য এত কষ্ট করলে আর আমি তোমাকে সামান্য কফি খাওয়াতে পারব না?
– আমি আবার কি করলাম?
– এই যে আমার জ্বরের সময় এত কষ্ট করলে
– তাহলে আপনিও আমার জন্য কিছু করুন
– কি করব বল
– আমাকে একটা কবিতা শোনান
আশিক অবাক হলেও সেটা প্রকাশ করল না। মীরার হাতে কফির মগ দিয়ে চেয়ারে বসলো, তারপর বলল
– কি কবিতা শুনবে বলো
– এক মিনিট দাঁড়ান, আমি এনে দিচ্ছি
মিরা আলমারির ভেতর থেকে একটা বই বের করে নিয়ে এলো, তারপর আশিকের হাতে দিয়ে কফির মগ নিয়ে বিছানার উপর বসলো। কফিতে চুমুক দিয়ে বলল
– বুকমার্ক দেয়া আছে
আশিক একবার চোখ বুলিয়ে পড়া শুরু করল
“মেয়েটা পাখি হতে চাইল
আমি বুকের বাঁদিকে আকাশ পেতে দিলাম।
দু-চার দিন ইচ্ছে মতো ওড়াওড়ি করে বলল,
তার একটা গাছ চাই।
মাটিতে পা পুঁতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
এ ডাল সে ডাল ঘুরে ঘুরে ,
সে আমাকে শোনালো অরণ্য বিষাদ।
তারপর টানতে টানতে
একটা পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে নিয়ে এসে বলল,
তারও এমন একটা পাহাড় ছিল।
সেও কখনো পাহারের জন্য নদী হোতো।
আমি ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে মেয়েটিকে বললাম,
নদী আর নারীর বয়ে যাওয়ায় কোনও পাপ থাকে না।
সে কিছু ফুটে থাকা ফুলের দিকে দেখিয়ে
জানতে চাইল,
কি নাম ?
বললাম গোলাপ।
দুটি তরুণ তরুণীকে দেখিয়ে বলল,
কি নাম ?
বললাম প্রেম।
তারপর একটা ছাউনির দিকে দেখিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
কি নাম ?
বললাম ঘর।
এবার সে আমাকে বলল,
তুমি সকাল হতে জানো ?
আমি বুকের বাঁদিকে তাকে সূর্য দেখালাম”।
কবিতা শেষ করে আশিক মুখ তুলে তাকালো। মীরা মুগ্ধ দৃষ্টতে তাকিয়ে আছে। আশিক বই বন্ধ করে বলল
– ভালো হয়েছে?
– অনেক সুন্দর হয়েছে। এটা আমার প্রিয় কবিতা
– তুমি বোধ হয় রুদ্র গোস্বামীর ভক্ত
– হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।
– কেন বলতো?
– উনার কবিতা আমার সহজ লাগে
– সিরিয়াসলি মিরা? তোমার কবিতা এজন্য ভালো লাগে যে সেটা সহজ?
– বুঝতে না পারলে ভালো লাগবে কি করে?
– কবিতা শুধু বোঝার ব্যাপার নয়। অনুধাবন করারও একটা ব্যাপার আছে। তুমি জীবনানন্দ, তারাপদ রায়, মাইকেল মধুসূদন পড়ে দেখো। সমন্বয়ের একটা ব্যাপার আছে। ছন্দ নিয়েও অনেক খেলা যায়।
মীরার মেজাজ খারাপ লাগছে। এত সুন্দর একটা কবিতা পড়ার পর কি সব খটমটে ব্যাপার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। মীরা এড়িয়ে যেতে বলল
– কেন এই কবিতা আপনার ভালো লাগে না?
– লাগে, কিন্তু এতসব কবিতা থাকতে তুমি এটা কেন পড়তে বললে সেটা বুঝলাম না
মীরা উঠে দাঁড়িয়ে বলল
– আপনি তো কিছুই বোঝেন না
তারপর ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আশিক কিছুক্ষণ ওর যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর হাসতে হাসতে আনমনে মাথা নাড়ল। কদিন থেকে ও লক্ষ করছে মিরা অকারনেই ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ওর ঘোর লাগা দৃষ্টি নজর এড়ায় না আশিকের। মেয়েদের এরকম মুগ্ধতা দেখে ও অভ্যস্ত। এটা নতুন কিছু নয়। প্রথম ওকে দেখে সবার মধ্যেই এক ধরনের মুগ্ধতা জন্মায়। ওর বলিষ্ঠ গড়ন, ঝকঝকে হাসি , আন্তরিক ব্যবহার, পুরুষালী ব্যক্তিত্ব মেয়েদেরকে মুগ্ধ করে; কিন্তু আশিক জানে ওকে গভীরভাবে জানলে এই মুগ্ধতা বেশী দিন থাকবে না। ওর মনের ভেতরকার অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত আলোকিত করার মতো গভীরতা এসব হালকা ধরনের মেয়েদের মধ্যে নেই। তাই সেসব মেয়েদের ও সযত্নে এড়িয়ে গেছে।
মীরাকে ওর অন্যরকম মনে হয়েছিল। সেই মিরার চোখেও ঘোর লাগলো। একি শুধু সাময়িক মুগ্ধতা, নাকি আরো গভীর কিছু? আশিক জানে না। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না। মীরা যেরকম ওকে ঠিক সেই রকম ভাবেই ভালোবাসে ও। হয়তো এটাই ওর নিয়তি। তা নাহলে এই পৃথিবীতে এত মেয়ে থাকতে কেন মীরার মধ্যেই তাকে খুঁজে পেল যাকে ও আজন্ম খুঁজছিল।
কতদিন জ্বরের ঘোরে টের পেয়েছে মীরার শীতল আঙুলের স্পর্শ। কতদিন ইচ্ছে করে ওষুধ খায়নি, যেন আবার জ্বর আসে। যেন আবার মীরা ওর কাছে এসে বসে। ওর সেই উৎসুক চিন্তিত দৃষ্টি অন্তরের অন্তস্থল পর্যন্ত শীতল করে দিত। মনে হতো সব উত্তপ চলে যাচ্ছে। মীরা ওকে এই কবিতা কেন পড়তে দিয়েছে ? ও কি চাইছে, আশিক ওকে এরকম কিছু বলুক? ও কি জানে এর চেয়ে আরো অনেক গভীর অনেক আবেগময় কবিতা ও লিখেছে মীরার জন্য। কোনদিন কি বলতে পারবে সেটা? ঠিক জানে না । জানে না মিরার এই ঘোর কতদিন থাকবে। হয়তো কদিন পর আর ভালো লাগবে না। আবার ফিরে যেতে মন চাইবে নিজের সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে। কেউ কি জানে এই চিন্তাটা কতটা কাঁপিয়ে দেয় ওকে? আশিক চায় না মীরা ওর অভ্যাসে পরিণত হোক। ভালোবাসা ছেড়ে তবু থাকা যায় অভ্যাস ছেড়ে থাকা মুশকিল।
আশিক নিচে নেমে গেল। দ্বিধাবিভক্ত মনটাকে খুব কষ্ট করে একত্রিত করার চেষ্টা করল। মনের একটা অংশ বলে মিরাকে কাছে আসতে না দিতে, যেন চলে গেলেও মনটা ভেঙে না পড়ে। আর মনের অন্য অংশ সারাক্ষণ শুধু ওর কাছে থাকতে চায়। কাকে ফেলে যে কে জিতে যায় বোঝা মুশকিল।
আশিক রান্নাঘরের দরজা ধরে দাঁড়ালো। মীরা একমনে কাজ করে যাচ্ছে। কোমরে আঁচল গুঁজে দিয়েছে। পাক্কা গিন্নি লাগছে ওকে। এরকম একটা দৃশ্য ও কল্পনায় দেখেছিল। সত্যি সত্যি কখনো দেখবে ভাবতে পারেনি। মীরা চমকে তাকাল। বুকের মধ্যে ফু দিয়ে বলল
– আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। এই রকম করে কেউ?
আশিক জবাব দিল না। হাসলো একটু। কি অদ্ভুত মাদকতা সেই হাসিতে। মীরা চোখ ফেরাতে পারে না। বুক ধরফর করে।
চলবে…….
বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৫১.
মীরা টের পাচ্ছে ওর চোখ জলে ভরে উঠছে। এভাবে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে হয়তো কেঁদেই ফেলবে। চট করে উল্টোদিকে ঘুরে ও ব্যস্তসমস্ত হয়ে কড়াইতে খুন্তি নাড়তে লাগলো। সেই অবস্থাতেই বলল
– কিছু লাগবে আপনার?
– একটু লাগবে।
– কি?
– তোমাকে।
মীরা ভীষণভাবে চমকে উঠল। আশিক নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
– আমার বইগুলো খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি বোধহয় কোথাও গুছিয়ে রেখেছো। একটু পড়াশোনা করতাম, পরীক্ষা তো প্রায় এসে গেছে।
– তাই বলুন। চলুন আমি বের করে দিচ্ছি।
মীরা চপল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। গুছিয়ে রাখা বইপত্র বের করে দিল, আশিক সেসব নিয়ে শোবার ঘরের টেবিলেই বসলো। মীরার কাজ শেষ, তবু যেতে ইচ্ছা করছে না। কি অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসেছে ওকে। কোন মানুষের প্রতি এই ধরনের তীব্র আকর্ষণ ওর জীবনে এই প্রথম। এ যেন ঠিক পরিণত বয়সের প্রেম নয়, যেন সেই কিশোর বয়সের বাঁধভাঙ্গা উথাল পাথাল প্রেম। মীরার জীবনে আশিক প্রথম পুরুষ নয়, তবে অনুভূতিটা নতুন। শুভর প্রতি ওর একটা ভালো লাগা ছিল, কিন্তু যত দিন গেছে, যতটা ও শুভকে জানতে পেরেছে, সেই ভালো লাগা দিনকে দিন তলানিতে এসে ঠেকেছে। পক্ষান্তরে আশিকের প্রতি ছিল ওর গভীর বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধ; কিন্তু যত ও আশিকের কাছাকাছি এসেছে, কবে-কখন-কি করে যে ওর অনুভূতিগুলো আকার বদলেছে, ও নিজেও জানে না। যে ভালোবাসায় শুধু তীব্র আকর্ষণই থাকে না, তার সঙ্গে মিশে থাকে গভীর শ্রদ্ধাবোধ সেই ভালোবাসার শেকড় বোধহয় হৃদয়ের অনেক গভীরে যায়। এত সহজে ঝরো বাতাসে সেটা উপড়ে ফেলা যায় না।
– কিছু বলবে?
মীরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশিক প্রশ্ন করল। মীরা একটু চমকে গেল, হঠাৎ করে বলার মত কিছু খুঁজে পেল না। আমতা আমতা করে বলল,
– বলছিলাম যে, চা খাবেন? না একবারে খাবার দেবো?
– এখন কিছু লাগবে না।
মীরা আর কিছু বলল না। নিচে নেমে গেল। কেমন মন খারাপ লাগছে। রান্নাবান্না শেষ হয়ে গেছে। মীরা ঝটপট ডিম ভেজে ফেলল। টেবিলে খাবার সাজিয়ে একবার চট করে বাকিদের খোঁজ নিয়ে নিল। জানতে পারল ওদের ফিরতে দেরি হবে।
খাবারের আয়োজন দেখে আশিক একটু অবাক হয়ে গেল।
– তুমি কি বৃষ্টি বলে খিচুড়ি করেছ?
– এমনি করলাম।
– ভালো করেছো। আমার খিচুড়ি ভীষণ প্রিয়।
– খিচুড়ির সঙ্গে কি খেতে ভালো লাগে? গরুর মাংস?
– সেটা হলে বেস্ট হয়, তবে ডিম ভাজিও ভালো লাগে, আর আলু ভর্তাটা বোনাস।
খেতে খেতে গল্প হল অনেক। আবার সেই আগের মতন সহজ সাবলীল গল্প। কিন্তু কোথায় যেন একটা আড়াল রয়ে যাচ্ছে। মীরা টের পায় যেন একই টেবিলের পাশাপাশি দুটি চেয়ারের মাঝখানেও তাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। যেন একটা বিশাল সমুদ্রের দুটো ছোট ছোট দ্বীপ, যারা চাইলেও কাছাকাছি আসতে পারেনা।
মীরা খাবার পর চা করলো। তারপর বলল, -চলুন ছাদে গিয়ে চা খাই।
সকালের বৃষ্টির পর কেমন একটা স্নিগ্ধ আবহাওয়া। মৃদু হাওয়া দিচ্ছে। বসবার মতন শুকনো কিছু নেই ছাদে। চেয়ারগুলো সবই ভেজা। আশিক রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। অনতি দূরত্বে মীরাও দাড়িয়ে রইল চায়ের মগ হাতে। কোন অদ্ভুত কারণে ও আশিকের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।
ছাদেও গল্প হল অনেকক্ষণ। এক পর্যায়ে মীরা ওর সেই প্রশ্নটা করেই ফেলল। মুখ নামিয়ে অনুচ্চ স্বরে বলল,
– আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– হ্যাঁ কর।
– আপনি আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?
অনেকক্ষণ পর্যন্ত জবাব না পেয়ে মীরা মুখ তুলে চাইল। ও ভেবেছিল আশিক হয়ত রাগ করবে। তাকিয়ে দেখল আশিকের ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। ও বলল,
– তোমার এই প্রশ্নের জবাবটা আমি কাল দেব।
মীরা সারা বিকেল ছটফট করল। কতবার ভাবল গিয়ে বলবে কাল নয়, এখনই বলতে হবে। কিন্তু আশিক ছাদ থেকে নামছেই না। অনেক রাত করে ঘরে এল, তারপর বইপত্র নিয়ে লাইব্রেরীতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। মীরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে অপেক্ষা করল। তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত করে ঘুমানোর দরুন ভোরে ঘুমও ভাঙলো না। যতক্ষনে ঘুম ভাঙলো, ঘরের মধ্যে রোদের হুটোপুটি। ও এক ছুটে ঘর বারান্দা এক করেও আশিকেকে কোথাও খুঁজে পেল না। ছুটতে ছুটতে ছাদে গেল, সেখানেও নেই। নিচে নেমে জানতে পারল আশিক বেরিয়ে গেছে। মীরা একটু ধাক্কা খেলো। তারপরেই মনে পড়ল, ও জানে কোথায় ওর জবাব লুকিয়ে আছে।ইশ! এতক্ষণ কেন মনে পড়েনি? মীরা দৌড়ে লাইব্রেরী ঘরে ঢুকে গেল। প্রতিদিনের মতো আজও সাইড টেবিলে খাতাটা খোলা পড়ে আছে; শুধু আজ অন্যান্য দিনের মতন কোন কবিতা নেই সেখানে। মীরার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। পুরো পাতা জুড়ে শুধু একটি শব্দ
“মাহাল কিতা”
মীরা চেয়ারের হাতল ধরে হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। এসবের মানে কি ?
চলবে …………
বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৫১.
মীরা টের পাচ্ছে ওর চোখ জলে ভরে উঠছে। এভাবে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে হয়তো কেঁদেই ফেলবে। চট করে উল্টোদিকে ঘুরে ও ব্যস্তসমস্ত হয়ে কড়াইতে খুন্তি নাড়তে লাগলো। সেই অবস্থাতেই বলল
– কিছু লাগবে আপনার?
– একটু লাগবে।
– কি?
– তোমাকে।
মীরা ভীষণভাবে চমকে উঠল। আশিক নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
– আমার বইগুলো খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি বোধহয় কোথাও গুছিয়ে রেখেছো। একটু পড়াশোনা করতাম, পরীক্ষা তো প্রায় এসে গেছে।
– তাই বলুন। চলুন আমি বের করে দিচ্ছি।
মীরা চপল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। গুছিয়ে রাখা বইপত্র বের করে দিল, আশিক সেসব নিয়ে শোবার ঘরের টেবিলেই বসলো। মীরার কাজ শেষ, তবু যেতে ইচ্ছা করছে না। কি অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসেছে ওকে। কোন মানুষের প্রতি এই ধরনের তীব্র আকর্ষণ ওর জীবনে এই প্রথম। এ যেন ঠিক পরিণত বয়সের প্রেম নয়, যেন সেই কিশোর বয়সের বাঁধভাঙ্গা উথাল পাথাল প্রেম। মীরার জীবনে আশিক প্রথম পুরুষ নয়, তবে অনুভূতিটা নতুন। শুভর প্রতি ওর একটা ভালো লাগা ছিল, কিন্তু যত দিন গেছে, যতটা ও শুভকে জানতে পেরেছে, সেই ভালো লাগা দিনকে দিন তলানিতে এসে ঠেকেছে। পক্ষান্তরে আশিকের প্রতি ছিল ওর গভীর বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধ; কিন্তু যত ও আশিকের কাছাকাছি এসেছে, কবে-কখন-কি করে যে ওর অনুভূতিগুলো আকার বদলেছে, ও নিজেও জানে না। যে ভালোবাসায় শুধু তীব্র আকর্ষণই থাকে না, তার সঙ্গে মিশে থাকে গভীর শ্রদ্ধাবোধ সেই ভালোবাসার শেকড় বোধহয় হৃদয়ের অনেক গভীরে যায়। এত সহজে ঝরো বাতাসে সেটা উপড়ে ফেলা যায় না।
– কিছু বলবে?
মীরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশিক প্রশ্ন করল। মীরা একটু চমকে গেল, হঠাৎ করে বলার মত কিছু খুঁজে পেল না। আমতা আমতা করে বলল,
– বলছিলাম যে, চা খাবেন? না একবারে খাবার দেবো?
– এখন কিছু লাগবে না।
মীরা আর কিছু বলল না। নিচে নেমে গেল। কেমন মন খারাপ লাগছে। রান্নাবান্না শেষ হয়ে গেছে। মীরা ঝটপট ডিম ভেজে ফেলল। টেবিলে খাবার সাজিয়ে একবার চট করে বাকিদের খোঁজ নিয়ে নিল। জানতে পারল ওদের ফিরতে দেরি হবে।
খাবারের আয়োজন দেখে আশিক একটু অবাক হয়ে গেল।
– তুমি কি বৃষ্টি বলে খিচুড়ি করেছ?
– এমনি করলাম।
– ভালো করেছো। আমার খিচুড়ি ভীষণ প্রিয়।
– খিচুড়ির সঙ্গে কি খেতে ভালো লাগে? গরুর মাংস?
– সেটা হলে বেস্ট হয়, তবে ডিম ভাজিও ভালো লাগে, আর আলু ভর্তাটা বোনাস।
খেতে খেতে গল্প হল অনেক। আবার সেই আগের মতন সহজ সাবলীল গল্প। কিন্তু কোথায় যেন একটা আড়াল রয়ে যাচ্ছে। মীরা টের পায় যেন একই টেবিলের পাশাপাশি দুটি চেয়ারের মাঝখানেও তাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। যেন একটা বিশাল সমুদ্রের দুটো ছোট ছোট দ্বীপ, যারা চাইলেও কাছাকাছি আসতে পারেনা।
মীরা খাবার পর চা করলো। তারপর বলল, -চলুন ছাদে গিয়ে চা খাই।
সকালের বৃষ্টির পর কেমন একটা স্নিগ্ধ আবহাওয়া। মৃদু হাওয়া দিচ্ছে। বসবার মতন শুকনো কিছু নেই ছাদে। চেয়ারগুলো সবই ভেজা। আশিক রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। অনতি দূরত্বে মীরাও দাড়িয়ে রইল চায়ের মগ হাতে। কোন অদ্ভুত কারণে ও আশিকের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।
ছাদেও গল্প হল অনেকক্ষণ। এক পর্যায়ে মীরা ওর সেই প্রশ্নটা করেই ফেলল। মুখ নামিয়ে অনুচ্চ স্বরে বলল,
– আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– হ্যাঁ কর।
– আপনি আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?
অনেকক্ষণ পর্যন্ত জবাব না পেয়ে মীরা মুখ তুলে চাইল। ও ভেবেছিল আশিক হয়ত রাগ করবে। তাকিয়ে দেখল আশিকের ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। ও বলল,
– তোমার এই প্রশ্নের জবাবটা আমি কাল দেব।
মীরা সারা বিকেল ছটফট করল। কতবার ভাবল গিয়ে বলবে কাল নয়, এখনই বলতে হবে। কিন্তু আশিক ছাদ থেকে নামছেই না। অনেক রাত করে ঘরে এল, তারপর বইপত্র নিয়ে লাইব্রেরীতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। মীরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে অপেক্ষা করল। তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত করে ঘুমানোর দরুন ভোরে ঘুমও ভাঙলো না। যতক্ষনে ঘুম ভাঙলো, ঘরের মধ্যে রোদের হুটোপুটি। ও এক ছুটে ঘর বারান্দা এক করেও আশিকেকে কোথাও খুঁজে পেল না। ছুটতে ছুটতে ছাদে গেল, সেখানেও নেই। নিচে নেমে জানতে পারল আশিক বেরিয়ে গেছে। মীরা একটু ধাক্কা খেলো। তারপরেই মনে পড়ল, ও জানে কোথায় ওর জবাব লুকিয়ে আছে।ইশ! এতক্ষণ কেন মনে পড়েনি? মীরা দৌড়ে লাইব্রেরী ঘরে ঢুকে গেল। প্রতিদিনের মতো আজও সাইড টেবিলে খাতাটা খোলা পড়ে আছে; শুধু আজ অন্যান্য দিনের মতন কোন কবিতা নেই সেখানে। মীরার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। পুরো পাতা জুড়ে শুধু একটি শব্দ
“মাহাল কিতা”
মীরা চেয়ারের হাতল ধরে হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। এসবের মানে কি ?
চলবে …………