বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৪২.
– রাসেল কি তোর বাপ?
মীরা অপ্রতিভ মুখে তাকিয়ে রইল। টুম্পার কথার কোন লাইসেন্স নেই। কি থেকে কি বলে বসে তার ঠিক নেই। ও কোনমতে বলল
– উফ! এসব কি বলছিস?
– ঠিকই বলছি। রাসেল কি তোর বাপ, তোর চাচা নাকি তোর ভাই? তাহলে কি বুঝে ওর কথা বিশ্বাস করতে গেলি?
– বিশ্বাস করিনি তো।
– বিশ্বাস না করলে ঐরকম একটা কথা আশিক ভাইকে কেন বলেছিস? তোর কি মনে হয়েছে আশিক ভাই তোর কাছে আসার জন্য মরে যাচ্ছে?
– উফ! কি বলছিস এসব? তোকে সব কিছু বলাই আমার ভুল হয়েছে।
– তোর আরো অনেক ভুল হয়েছে
– আমি জানি আমার অনেক ভুল হয়েছে। আমার মাথা ঠিক ছিল না। সকাল থেকে এতসব ঝামেলা গেছে। একদিকে সৌরভ ভাই তারপরে শুভর ওইরকম ব্যবহার। হুট করেই আশিক ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে। তারপর আবার ফোন করে রাসেলের এসব বলা। আমি আর মাথায় আর নিতে পারছিলাম না।
– আর সেই ঝালটা তুই দেখালি আশিক ভাইয়ের সঙ্গে?
– না, সেটা না। ওহ! আমি তোকে বোঝাতে পারছি না। আমি ভেবেছিলাম উনি কিছু বলবেন। কিন্তু আমি ভাবতেও পারিনি যে উনি কিছু না বলে আমার সঙ্গে কথা না বলে এভাবে থাকবেন। বাসাতেও আসছে না।
– ভালো করেছে। আমি হলেও আসতাম না।
– তুই যে খুব ওকালতি করছিস? তোর প্রেম এখনো যায়নি?
– ফালতু কথা বলবি না। বান্ধবীর জামাইয়ের সঙ্গে প্রেম করবো এমন দিন আমার আসেনি। তাছাড়া তুই জানিস আমি এঙ্গেজড। তুই ভুল করেছিস তোর এটা ফিক্স করা উচিত। তাই বলছি।
– বুঝতে পারছি না আমার কি করা উচিত। উনি তো আমার সঙ্গে কথাই বলছেন না।
– আমি বলছি কি করবি
– কি?
-সোজা গিয়ে পা চেপে ধর
– ফালতু কথা কম বল
টুম্পা হাসতে হাসতে বললো
– তাহলে এক কাজ কর বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়
– অসহ্য! তুই ঠিকমতো কথা বলতে পারিস না?
– আরে আমি তো আরেক কাঠি বেশি বলতে চেয়েছিলাম। ঝাঁপিয়ে পড়ে কি করবি সেটা তো বললামই না
– মুখ বন্ধ রাখ। তোর সঙ্গে কথা বলতে আসাই আমার ভুল হয়েছে।
টুম্পা হটাৎ অন্যরকম গলায় বলল
– আমাকে একটা কথা বল মীরা, আশিক ভাই এর ব্যাপারে তুই এতটা রিয়াক্ট করলি কেন? এতটা তো তুই তখনও করিসনি যখন শুভ তোর সঙ্গে বেইমানি করল।
– কারন আমি ওনাকে অসম্ভব বিশ্বাস করি। অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি।
– কি অদ্ভুত ব্যাপার। যাকে আমরা ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি, বিশ্বাস করি তার সামান্য ভুল আমরা ক্ষমা করতে পারি না, অথচ খারাপ মানুষগুলো যা ইচ্ছা করছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসেই না
– তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না
টুম্পা একটু ম্লান হাসলো, তারপর বলল -আশিক ভাইকে তুই এত পছন্দ করিস, তোর কারনে উনি কষ্ট পাচ্ছে ভেবে তুইও কষ্ট পাচ্ছিস। ওনার সঙ্গে কথা বল।
মীরা জবাব দিল না। তবে ওর মনের অস্থিরতা কমলো না।
মীরা ঘড়ি দেখল। বেলা আড়াইটা বাজে। কাল আশিকের অফিস থেকে ফিরে সারা দুপুর সারা বিকেল ওর জন্য অপেক্ষা করেছে। সন্ধ্যে থেকে অনেক বৃষ্টি নেমেছিল, রাতের দিকে তুমুল ঝড় শুরু হয়। মীরার খুব ভয় করছিল ও আশিককে ফোন করেছিল। ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল বলে আরিফ সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিল। আরিফ সাহেব ওকে নিশ্চিন্ত করে বলেছিলেন যে আশিক প্রেসে আছে। আজকে রাতেই কাজগুলো শেষ করতে হবে, তাই দেরি হচ্ছে। তবু মীরার অস্থিরতা কমেনি। সারারাত ঘুমাতে পারেনি। টুম্পাকে মেসেজ করে বলেছে এগারোটার বদলে নটায় আসতে ওর সঙ্গে জরুরী কথা আছে। মীরা ভেবেছিল কারো সঙ্গে কথা বললে হয়তো মনের অস্থিরতা কমবে কিন্তু এতক্ষণ ধরে টুম্পার সাথে কথা বলার পরও অস্থিরতা একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। একটা সময় ও বুঝতে পারল ওর মনের ঝড় থামবে শুধুমাত্র আশিকের সঙ্গে কথা বললে, তার আগে নয়।
৪৩.
ঘরে ঢুকে মিরা চমকে গেল। কম্বলমুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আশিক। ওর সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। মীরা হাতের ব্যাগ ফেলে দৌড়ে গেল। কপালে হাত রেখে চমকে উঠলো। শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেশি । মীরা ভীত কন্ঠে হলো
-কি হয়েছে আপনার ?
আশিক জবাব দিল না মিরা দৌড়ে সিঁড়ির কাছে গিয়ে রোজিনা আর আফসিনকে ডাকলো। দ্রুতই এলো দুজন। মীরা ভয় পাওয়া কন্ঠে বলল
-আফসিন তোমার ভাইয়ার অনেক জ্বর। উনি এরকম করছেন কেন?
রোজিনা কিংবা আফসিনকে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হলো না। আফসিন বলল
– ভাইয়ার জ্বর উঠলে এরকমই হয় ভাবী। তুমি চিন্তা করো না
মিরা এক মুহূর্ত থমকালো, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আত্নবিশ্বাসী কণ্ঠে বললো
-আফসিন তুমি ডাক্তারকে ফোন করো আর রোজিনা বাটিতে ঠান্ডা পানি আর একটা গ্লাসে বরফ নিয়ে আসো।
দুজনেই একটু অবাক হল, তবে কেউ কিছু বলল না। যে যার কাজে চলে গেল। মীরা বাড়ির বড় মেয়ে। এই কাজগুলো ওর মধ্যে সহজাতভাবেই আসে। বাড়িতেও কারো জ্বর হলে ওই সামলাত। মা কেমন যেন দিশাহারা হয়ে যেত সে সময়।
মীরা দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে আশিকের কপালে হাত রাখল, তারপর আস্তে আস্তে বলল -শুনুন
আশিক চোখ মেলে তাকালো। ওর চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে। এক মুহূর্ত চোখ মেলেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। আলোটা খুব ঝাঁঝালো। মিরা ঘরের পর্দাগুলো টেনে দিল। তারপর ফিরে এসে আবার ওর কপালে হাত রেখে বলল
এখন ঠিক আছে?
আশিক একটা হাত দিয়ে কপালের উপর রাখা মীরার হাতটা ধরে বলল
– তুমি কোথায় চলে গেছিলে?
মীরার বুকের ভেতরটা ছলকে উঠল। শিওরের কাছে বসে বলল
-কোথাও যাইনি। এই তো আমি।
আশিক হঠাৎ অদ্ভুত একটা কাজ করলো, মীরার কোলের মধ্যে মাথাটা তুলে দিয়ে বলল
– আর কখনো কোথাও চলে যেও না
মীরা একটু দিশেহারা বোধ করল। কিছু বলল না। আশিক বলেই যাচ্ছে
-আমি, আমি আর কখনো এরকম করবো না। এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবো। তবু চলে যেও না। তুমি না থাকলে আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না মা।
মীরা চমকে উঠলো। আশিক ওকে চিনতে পারেনি। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলছে।
চলবে……….
বইছে আবার চৈতি হাওয়া
৪৪.
দরজার দিকে তাকিয়ে মীরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। রোজিনা বরফ ভর্তি গ্লাস আর বাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢুকছেনা। ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মীরা বিরক্ত হয়ে বলল
-ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে এনে দাও
রোজিনা এগিয়ে এসে গ্লাস আর বাটি সাইড টেবিলের উপর রাখল, তারপর বলল
– ভাবি আপনি কি খাইবেন?
-এখন কিছু খাব না, আগে তোমার ভাইয়ার জ্বর কমুক, তারপর খাব
রোজিনা আর কিছু বলল না। মীরা আবারও বলল
একটু দেখতো আফসিন ডাক্তারকে ফোন করেছে কিনা। আর থার্মোমিটার থাকলে নিয়ে আস।
রোজিনা বেরিয়ে গেল। মীরা বাটির পানিতে রুমাল ভিজিয়ে আশিকের কপালে ছোঁয়ালো। দ্রুতই বাটির পানি গরম হয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে বরফ মিশিয়ে নিতে হচ্ছে। আশিক কেমন কেপে কেঁপে উঠছে। প্রথমে মীরার খুব ভয় করছিল, আস্তে আস্তে ও বুঝতে পারলো তাপমাত্রা নেমে আসছে। রোজিনা থার্মোমিটার নিয়ে এসেছে। ডিজিটাল থার্মোমিটার। আগেকার দিনের মতো নয় যে মুখে দিয়ে বসে থাকতে হয়। মীরা জ্বর মেপে দেখল ১০৩। অদ্ভুত! এতক্ষণ জলপট্টি দেয়ার পরও ১০৩! তারমানে আগে কত ছিল? মীরা একটু অবাক হল। সব সময় এমনই হয় নাকি? আফসিনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আফসিন হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো, তারপর বলল
– ভাবি, ডাক্তারকে ফোন করেছিলাম। বলেছে..
– কি বলেছে? মীরা মুখ তুলে জানতে চাইলো
– বলেছে জলপট্টি দিতে। কিন্তু তুমি তো সেটা আগেই দিয়ে দিয়েছো। মীরা কিছু বলল না। আফসিন এগিয়ে এসে ভাইয়ের গায়ে হাত রাখল, তারপর বলল
– জ্বর নেমেছে তো
– আগের চেয়ে কমেছে। ডাক্তার কখন আসবে?
– বলল সন্ধ্যার পর আসবে। বাবা নিয়ে আসবে সঙ্গে করে। তুমি ভয় পেয়ো না ভাবি। ভাইয়ার জ্বর উঠলে এরকমই হয়। ভাবি একটু বসি?
– হ্যাঁ বস না, জিজ্ঞেস করার কি আছে?
আফসিন চেয়ার ট্রেনে বসলো, তারপর বলল
– জ্বর আসলে তো ভাইয়া কাউকে কাছে আসতেই দেয় না। বলেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। মীরার এতক্ষণে খেয়াল হলো আশিক এখনো ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মীরা একটু লজ্জা পেল কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।
– ভাবি
– হ্যাঁ বলো
– আমি তো তোমাদের বিয়েতে যেতে পারিনি গেলে হয়তো অনেক ছবি তুলতাম, এখন তোমাদের দুটো ছবি তুলি?
মিরার মনে হল, সত্যিই তো। ওদের বিয়েতে কোন ছবি তোলা হয়নি, অবশ্য যে পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে ছবি তোলার কথা কারো মনেই পড়েনি। মীরা বলল
– আচ্ছা তুলে দাও
আফসিন অনেকগুলো ছবি তুলল, তারপর বলল
– তোমাকে আর ভাইয়াকে পাঠিয়ে দেবো
– আচ্ছা দিও। তোমার কি কালকে পরীক্ষা?
– হ্যাঁ কালকে শেষ পরীক্ষা
– তাহলে পড়াশোনা করো। আমি আছি এখানে।
– এখন পড়বো না। রাত জেগে পড়বো, এখন একটু ঘুমাবো।
– তাহলে ঘুমাও
– তুমি খাবে না? চেঞ্জ ও তো করনি
– সমস্যা নেই। তোমার ভাইয়ার জ্বর কমলে আমি চেঞ্জ করে খেয়ে নেব। তুমি যাও ঘুমাও।
– থ্যাঙ্ক ইউ ভাবি
মীরা কিছু বলল না একটু হাসলো শুধু।
আশিকের জ্বর নেমেছে। এ কদিনের অনিদ্রা আর অযত্ন, অবহেলায় শরীরের কাহিল অবস্থা। কেমন নেতিয়ে পড়েছে। মীরা জ্বর মেপে দেখল ১০১। আশিককে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। মীরার খুব অবাক লাগছে। এমন ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ অথচ জ্বরে কেমন শিশুদের মতন আচরণ করছে। সকাল থেকে কিছু খেয়েছে কিনা কে জানে? মিরা ঝুঁকে পড়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল
– খিদে পেয়েছে?
– হু
– কি খেতে ইচ্ছা করছে?
আশিক ঘুমের ঘোরেই বলল
– পিয়াজু
– আর?
– আর ডালপুরি
মিরা হেসে ফেলল, তারপর বলল
– তাহলে একটু বালিশে নেমে ঘুমান, আমি বানিয়ে আনছি
আশিক কিছু বলল না, তবে বাধ্য ছেলের মতন বালিশে মাথা নামিয়ে ঘুমিয়ে পরল।
আশিকের ঘুম ভাঙলো অনেক সকালে। সারা শরীর জুড়ে রাজ্যের আলস্য। আশিক ঘুম জড়ানো চোখে তাকালো। নিজের ঘরটাই কেমন অচেনা লাগছে। পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলো। বিছানার এক কোণে গুটি সুজি মেরে শুয়ে আছে মীরা। রাতের কথা আবছা মনে পড়ছে। কারো আঙ্গুলের শীতল স্পর্শ ওর ললাট ছুঁয়ে গিয়েছিল। সে কি তবে মীরা ছিল ? আশিক কম্বলটা মীরার গায়ে জড়িয়ে দিল। কাল সারাদিন ঘুমিয়েছে বলে এখন আর ঘুম পাচ্ছে না। জ্বর ছেড়ে গেছে কিন্তু তার রেশ রেখে গেছে। শরীর জুড়ে ক্লান্তি। উঠে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে ছাদে চলে গেল। ভোরের নরম বাতাসটা খুব ভালো লাগছে। আশিক রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়াল। এই আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠা সকালটা দেখতে বেশ লাগে।
মোড়ের হোটেলটা সবে খুলেছে। গরম গরম পরোটা ভাজছে। খিদেটা পেটের মধ্যে জানান দিচ্ছে। পরোটা আর মালাই চা খেতে ইচ্ছা করছে। মা বেঁচে থাকলে এখন কত কিছু করে খাওয়াতো। অনেক বছর পর কাল রাতে মাকে স্বপ্নে দেখেছে। মা যেন এসে ওর শিওরের কাছে বসে জানতে চাইছে কি খেতে মন চায়।
মিরা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আশিককে দেখলো। কেমন উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। এই শীতের মধ্যে পাতলা একটা পাঞ্জাবি পরে আছে। কি দরকার ছিল এখন ছাদে আসার? অসুখটা না বাধিয়েই ছাড়বে না। নিশ্চয়ই নিজের মাকেও এভাবেই জ্বালাতন করতো। মীরার মনে হল আশিক যেন একটু একটু কাঁপছে শীতে। ও আবার নিচে নেমে গেল। একটা পাতলা চাদর নিয়ে ফিরে এসে দেখল আশিক তখনো ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। মীরা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে চাদরটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিল। আশিক চমকে তাকালো। মীরা খুব নরম গলায় বলল
– এখন কেমন লাগছে? জ্বর আছে?
আশিক অস্বস্তি নিয়ে বলল
– না
আশিককে অবাক করে দিয়ে মীরা ওর কপালে হাত রাখল, তারপর চিন্তিত মুখে বললো
– জ্বর আছে তো। এই ঠাণ্ডা হাওয়ায় আপনার ছাদে আসা ঠিক হয়নি। নিচে চলুন, নাস্তা করে ওষুধ খেতে হবে।
আশিক জবাব দিল না, তাকিয়ে রইল। মীরাকে কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। হয়তো ঘুমায়নি সারারাত। নিশ্চয়ই ওকে খুব বিরক্ত করেছে কাল। জ্বর উঠলে সাধারণত ও একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। পরে আর কিছু মনে থাকে না। ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মীরা বলল
– কি হলো? নিচে চলুন, নাকি এখানেই খাবার নিয়ে আসবো?
– না এখানে আনতে হবে না। আমি আসছি তুমি যাও।
মীরা চলে যাচ্ছে। আশিক ওর যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে রইল। কাল সারাদিন ওর ফোন সাইলেন্ট ছিল। অনেক ফোন এসেছে, এই ভেবে ফোনটা সকালে ছাদে নিয়ে এসেছিল। ফোন খুলে দেখল সত্যি সত্যিই অনেক ফোন এসেছিল। এত সকালে কাউকে ফোন করা উচিত হবে না, তাই মেসেজ পাঠিয়ে দিল। আফসিন ও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। আশিক একটু অবাক হলো। বাসার মধ্যে থেকে মেসেজ পাঠানোর কি হলো? মেসেজ ওপেন করে ও হতভম্ব হয়ে গেল। দুটো ছবি পাঠিয়েছে আফসিন। দুটো ছবিতেই দেখা যাচ্ছে আশিক মিরার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কি অদ্ভুত! এই ছবি কোত্থেকে এলো। তার মানে কালকে জ্বরে ঘোরে আশিক এইসব কান্ড করেছে? এমনিতেই মীরা বলেছে ওর কাছে না আসছে, আর এখন ওইসব কান্ড করলে মীরা নিঃসন্দেহে চলে যাবে। হয়তো এতদিনে চলেও যেত, শুধু ওর জ্বর বলে যেতে পারেনি। মানবিকতা বলেও তো একটা কথা আছে। তাই না? তেমনটা হলে তো ওর জ্বর থাকাই ভালো। এতে করে অন্তত আর কটা দিন মিরা ওর কাছে তো থাকবে। এই জ্বরটাকে এখন ভীষণ কাছের, ভীষণ আপন মনে হচ্ছে। বলতে ইচ্ছা করছে
প্রিয় জ্বর আর কিছুদিন থাকো
অন্তত এই বাহানায় আর কিছুদিন সে আসুক
আমার কপাল হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
সে যদি আমার ভিতরের অসুখ বুঝতে পারে
যদি সে বুঝতে পারে আমার চোখে কতটা অসুখ
তাকে চোখের দেখা দেখতে চেয়ে
যদি সে বুঝতে পারে আমার হাতে কতটা অসুখ
তার হাতের আঙ্গুল ধরতে চেয়ে
প্রিয় জ্বর আর কিছুদিন থাকো
অন্তত এই বাহানায় আর কিছুদিন তাকে দেখি
তার দু’চোখ হাতের আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আমার না বলা অসুখ যদি তাকে বলতে পারি।
চলবে………
আজকের কবিতাটা রুদ্র গোস্বামীর লেখা