#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪]
” আমাকে না জানিয়ে আমার মেয়ের জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত তুমি নিজে থেকে নিলে। না না তুমি তো একা নাওনি তোমার ভাইয়েরা মিলে নিয়েছে।এখন তারা কই?সেই ছেলে কোথায়?কোথাকার কোন ইতালির ছেলে এদের কেউ খোঁজ খবর না নিয়ে বিশ্বাস করে?এই মেয়ের ভবিষ্যৎ কি আমি জানি না।অনিমা তোমার বাড়াবাড়িতে মেয়েটার জীবন আজ ছন্ন ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।তুমি ওর দিকে তাকাও?ওর চোখের ভাষা বুঝ তুমি?সে কি চায় সে যে চিন্তায় চিন্তায় পুড়ে মরছে বুঝতে পারছো না তুমি?”
বাহারুল হক আজ ভীষণ রেগে গেলেন।খুশবুর ভিসা এসেছে আজ ষোল তম দিন।এই ষোল দিনে অনিমার সাথে আরশাদের কথা হয়েছে যতবার তত জানতে চেয়েছে সে কবে আসবে।কিন্তু আরশাদ তালবাহানা জুড়েছে।আরশাদের ব্যপারে অনিমার পূর্ণ বিশ্বাস জমে আছে। ছেলেটা আসবে সে ঠকায়নি।কিন্তু বাহারুল হক তাকে তো মানানো যাচ্ছে না।দিনের পর দিন উঠতে বসতে প্রতিটা কথার মাঝে আরশাদকে জুড়ে দিয়ে ঝামেলা করছেন তিনি।
মা বাবার তর্কতর্কি সবটাই শুনলো খুশবু।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে গলা ধরে আসছে বার বার।তার সাজানো গোছানো জীবনে এক পশলা প্রেমের বৃষ্টি নেমে আচমকাই সব মরুভূমি গড়ে উঠেছে।সেদিনের পর আরশাদের সাথে খুশবু আর কথা বলেনি দূরত্ব বাড়ালে হয়তো নিকটে আসা হবে ভেবে নিজের মনকে শক্ত করেছে।
ভ্যানেটি ব্যাগ কাধে তুলে চট জলদি বাসা থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটা।অনিমা মেয়ের যাওয়া দেখে পিছু হাটলেন সাত সকালে না খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মানে কি।
সারাটা রাস্তায় খুশবু কেঁদেছে কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।উদ্দেশ্যহীন হাটতে হাটতে মাথায় এলো ভার্সিটি যাওয়া যাক।
.
শীতল হাওয়া গায়ে মেখে আরশাদের ঘুম ভাঙে।খোলা জানলায় দাঁড়িয়ে অপরূপ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে সে বারবার।ইতালিতে বসন্ত আসতে চলেছে।তাই তো প্রকৃতি শীতল মনোমুগ্ধকর রূপে ধরা দিতে চাইছে।রাতে বৃষ্টি হয়েছে বিধায় চারিদিকে স্বচ্ছতা বিরাজ করছে।
খালি গায়ে আরশাদ আয়নার সম্মুখে দাঁড়ালো।বাদামি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে নিজেকে নিয়ে হাজারটা অভিযোগ জানাল।কতদিন হয়ে গেল ফ্লুজির সাথে তার কথা হচ্ছে না মেয়েটার এড়িয়ে যাওয়া যে আরশাদকে আঘাত করে মেয়েটাকি বুঝতে পারে না?বেডের পাশে ফ্লুজির ছবিটা ছুঁয়ে চুমে খেল সে।আর কতদিন!কতটা দিন অপেক্ষা করবে সে।গায়ে জামা জড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে আরশাদ চলে গেল তার বাবার ভিলায়।আরিব কফি মগ হাতে মাত্র বের হচ্ছিল রান্না ঘর থেকে, আরশাদকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,
” শুভ সকাল।”
” শুভ সকাল।”
আরশাদ আরিবের হাতের কফির মগটা টেনে নিল ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” চুমুক দিয়েছিলে?”
” না না।”
” ওকে ফাইন তাহলে আমি দিচ্ছি।”
” কেন আমি চুমুক দিলে কি খেতে না?”
” এঁটোতে মুখ দেওয়ার স্বভাব আমার নেই জানিস না।”
” ওহ, তোমার ফ্লুজি চুমুক দিলে তো হুমড়ি খেয়ে পড়তে।”
আরিবের পানে সরু চোখে তাকালো আরশাদ।ইদানীং ভাইটা কোন কথাতেই ছাড় দিচ্ছে না।
” আরিব ভালো হয়ে যা।”
” সেম টু ইয়ু ব্রো।”
” আমি ভালো হলেও আমার ফ্লুজির খারাপ হলেও আমার ফ্লুজির।তোর তো কেউ নেই,কাউকে পেতে হলে তোকে আগে ভালো হতে হবে।”
” এভাবে না বললেও পারতে ছ্যাকা লাগে।”
” তোর পরিক্ষা কবে শেষ?”
” আর দুটো দিন অপেক্ষা করো তারপর আমার এক্সাম শেষ হবে তুমিও তোমার ফ্লুজির কাছে উড়াল দিও।”
আরশাদ কফির মগ হাতে চলে গেল গ্র্যানির কক্ষে।
.
ক্লাস রুমে খুশবুর উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত ছিল মায়া এবং রিয়ার জন্য।এই মেয়ে ভার্সিটি আসার আগে জানিয়ে আসে কিন্তু আজ হঠাৎ করে এলো যে?রিয়া খুশবুর ফোলা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” তোর কি হয়েছে খুশবু?কাঁদছিলি কেন?”
” কিছু হয়নি।”
” ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
” ঝগড়া ছাড়া থেকেছি কবে?”
খুশবু বরাবরি চাপা স্বভাবের মেয়ে।কাউকে কিছু বলতে আগ্রহ পায় না।নিজের ঝামেলা তার নিজের কাছে। ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে আড়ালে রাখতে সে অভ্যস্ত।কিন্তু আজ তার নিজের ধৈর্যর সীমা ভেঙে গেছে আরশাদের ব্যপারে সবটাই বন্ধুদের মাঝে সেয়ার করেছে সে।রিয়া,মায়া দুজনেই আরশাদের ব্যপারে অবগত আরশাদ খুশবুকে কতটা ভালোবাসে সেই ব্যপারেও অবগত কিন্তু আরশাদের এমন কূটকচালে মানে কী?মায়া খুশবুর গালে হাত দিয়ে বলে,
” কাঁদিস না সুন্দরী।ওই বিদেশী মালটা তোকে বাজাই দেখতে চাচ্ছে।শুধু তুই একবার বল দেশে আসো দেখবি উড়ে উড়ে আসবে।”
” এই মাল কি?আমার বর হয়।”
” ওহ সরি দুলাভাই।ধলা দুলাভাই।”
রিয়া খুশবুর হাত টেনে বলে,
” শুন তুই পালটা খেলা দেখা বিদেশী নেকড়েটাকে।তুই আজ থেকে প্রেম শুরু কর।”
” প…প্রেম কিসব বলছিস আরশাদ জানলে আমার পা ভেঙে ফেলবে।”
” আরে পা ভাঙার জন্য হলেও তো তাকে দেশে আসতে হবে।শুন আমি যা বলছি তাই করবি।আমার দেওয়া ওষুধ তোদের দাম্পত্য জীবনে সুখ বয়ে আনবে।তবে হ্যাঁ এই ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।পার্শপ্রক্রিয়া হজম করে নিলে ফলাফল নিশ্চিত পাবি।”
” তোর ভিজিট কত? ”
” ভিজিট হিসেবে আপনার দেওর আমার।”
.
একটা পার্কে বসে ইতস্তত মুখে হাসছে খুশবু।তার নকল হাসি অতি সহজে ধরা যাচ্ছে বলে রিয়া কিড়মিড় চোখে তাকালো মেয়েটার দিকে।খুশবুর মুখোমুখি বসে আছে একটি ছেলে।দেখতে শুনতে এই ছেলেকে কেউ বলবে না খুশবু মায়া রিয়ার জুনিয়র।ছেলেটা সবে মাত্র এইচএইচি পরিক্ষা দিয়েছে ছেলেটির নাম রিদ।ছেলেটি মায়ার কাজিন।খুশবুর টুকটাক সমস্যার কথা জানিয়ে রিদকে এখানে আনা হয়েছে।দুপুরের কড়া রোদে খুশবুর মাথা ধরে এসেছে তার উপর এসব নাটক যদি আরশাদের কানে যায় তবে যে কি কেলেঙ্কারি হবে।
রিয়া এবং মায়া গপাগপ একের পর এক ফুসকা মুখে পুরছে।এই ফুসকার বিল আজ খুশবুকেই দিতে হবে।রিদ দাঁত কেলিয়ে হেসে তাকালো খুশবুর পানে।
” নকল গার্লফ্রেন্ড আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
” না, আমি ভয় পাচ্ছি তোমার জন্য ছোট ভাই।”
” এত চিন্তা কিসের?আগামীকাল রাতে আমি ট্যুরে যাচ্ছি আপনার হাজবেন্ড আর আমার নাগাল পাবে না।”
রিয়া পাশ থেকে খুশবুকে ইশারা করে রিদকে ফুসকা খাইয়ে দিতে।বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে বেচারির যে আর কি কি করতে হবে কে জানে।কাঁপা কাঁপা হাতে খুশবু চামচের সাহায্যে রিদের মুখে ফুসকা দিতে গেলে মায়া দ্রুত তাদের ছবি তোলে।সারাটা বিকাল খুশবু আর রিদ একসাথে সময় কাটায় যদিও তারা বন্ধু বেশে ছিল কিন্তু আরশাদ কি মানবে?
.
রেস্টুরেন্টে বসে হিসাব কষছে আরশাদ।টুকটাক কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে অনন্য কর্মচারিদের।হোয়াটসঅ্যাপে রনির মেসেজ পেয়ে মনোযোগ ভঙ্গ হলো তার এই ছেলেটা প্রয়োজন ছাড়া কখনো মেসেজ করে না।ছেলেটার মূল দায়িত্ব খুশবুর পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকা।রনি কিছু ছবি পাঠালো আরশাদকে যেখানে দেখা যাচ্ছে খুশবু একটি ছেলেকে ঝালমুড়ি খাইয়ে দিচ্ছে,আরেকটি ছবিতে তারা পাশাপাশি হাটছে।অন্য আরেকটি ছবিতে ছেলেটি আর খুশবু মুখোমুখি বসে তাদের দুজনের হাতে ফুসকার প্লেট।
চটজলদি আরশাদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো রেস্টুরেন্টের এক কোনে নিরিবিলি স্থানে বসে ফোন করলো রনিকে।ছেলেটার কাছ থেকে সব আপডেট নিয়ে নিজের মাথা আর ঠিক রাখতে পারলো না।ঠিক এই কারণেই কি ফ্লুজি এতটা দিন তাকে এড়িয়ে গেছে?
দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইল আরশাদ।তার শরীর থেকে থেকে কাঁপছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সঞ্চয় হয়েছে।আরশাদ নিজেও জানে না সে নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
” আবার,আবার তুমি আমায় ঠকাতে চাইছো ফ্লুজি।যা করেছো এসব ভালো হবে না।ভালো হবে না।জানে মে রে ফেলবো আমি তোমায়।যতক্ষণ আরশাদ আছে ততক্ষণ তোমার শ্বাস আছে।এই আরশাদকে বাদ দিয়ে তুমি বাঁচতে পারবে না।আমি বাঁচতে দেব না।”
আরশাদ ফ্লুজিকে ফোন করলো প্রতিবারের ন্যায় ফ্লুজি ফোন ধরলো না।সেচ্ছায় এড়িয়ে গেল আরশাদকে।
সে সবটাই বুঝে যার ফলে রাগটা আরো প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়।সময় ব্যয় না করে সে দ্রুত ফোন করে অনিমাকে।আরশাদের গম্ভীর স্বরে অনিমা ভীষণ অবাক হন।এই ছেলে তো কখনো এতটা রেষ নিয়ে কথা বলে না।
অনিমা দ্রুত পায়ে ছুটে গেলেন খুশবুর কক্ষে।
” আরশাদ ফোন করেছে নে কথা বল।”
” আম্মু আমি পড়ছি এখন কথা বলতে পারবো না।”
” খুশবু বেয়াদবি করিস না।নে কথা বল।”
খুশবু না চাইতেও ভয় নিয়ে ফোন ধরলো। অনিমা চলে যেতে দরজা বন্ধ করে বসলো বিছানায়।
” বলুন।”
” কি বলবো আমি?তুমি বলো কি শুরু করেছো।”
” আমি আবার কি শুরু করলাম?”
” এই কথা ঘুরাবে না ছেলেটা কে?”
” কোন ছেলে?”
” যার হাতে হাত ধরে…. উফফ আমি ভাবতেও পারছি না।”
” আবার বয়ফ্রেন্ড সুন্দর না?”
“তোমার চো খ দুটো খুলে নিয়ে শোপিস বানিয়ে আমার কাছে রেখে দেব।এত সাহস তুমি পেলে কি করে?”
” আপনি ওইদিন কি বললেন মনে নেই আপনার?”
” কি বলেছি আমি?”
” আমার যা খুশি আমি যেন তাই করি।তাই আমার যা খুশি আমি তাই করছি।”
” যা খুশি তাই করো… হা হা হা আমার হুশিয়ারি তুমি বুঝতে পারলে না বোকা ফ্লুজি।যা খুশি তাই করো মানে তুমি একবার শুধু করে দেখ তারপর তুমি ফিনিশ।”
খুশবুর ধপ করে নিভে গেল।হাত পা গুটিয়ে বসে পড়লো বিছানায়।আরশাদের ধমকগুলো একের পর এক গিলে যাচ্ছে সে একটু পর নিশ্চয়ই বদহজম হয়ে সব উগড়ে দেবে।
খুশবুকে চুপ থাকতে দেখে আরশাদ ধমকে বলে,
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
” কী বলবো?”
” বলো ভালোবাসি।”
” ভালোবাসি।”
” বলো, আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
“আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
” ওকে জান আমি আসছি আরেকটু অপেক্ষা করো।এবার আসলে তোমার কপালে সুখ দুঃখ দুটোই আছে।”
খুশবু চুপসে গেল।শেষ পর্যন্ত জিত হলো আরশাদের।তাকে ধমক দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য অনুরোধ করিয়ে ছাড়লো!
” জান। ”
” হুহ।”
” ইউর লিপ’স মাই লিপ’স,এপোক্যালিপ।”
” কিহ!”
” সি ইউ সুন জান।”
চলবে…..
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪ বাকি অংশ]
সাত সকালে হসপিটালে এসে উপস্থিত খুশবু।তার ভীত চাহনিতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে মায়া।অপরাধীর চোখে আড় তাকাচ্ছে রিয়া।তার বুদ্ধিতেই তো আজ এত অঘটন ঘটলো।রিদ হসপিটালে ভর্তি।গত রাতে বাসায় ফেরার পথে তাকে নাকি ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করে একটা পর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অচেনা এক গুদাম ঘরে।সেই ছিনতাইকারীরা ছিল অদ্ভুত তাদের টাকাও চাই না মোবাইলও চাই না তাদের আসলে কী চাই তারা হয়তো নিজেরাও জানে না।
রিদ প্রথম প্রথম ভীষণ ভয় পেল।সিমসাম গড়নের একটি ছেলে তাকে জানায় ভোর ভোর তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়া হবে তবে এই দীর্ঘরাত তাকে ফুসকা এবং ঝাল মুড়ি খেতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যেও থামা যাবে না তাকে আনলিমিটেড খেতে হবে।রিদের বুঝতে আর বাকি নেই এসব কার চাল।
মায়ার কথা মতো কাজ করে সে বিশ্রি ভাবে ফেঁসে গেছে আরশাদ ইহসান যে তার আজ আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়ে ছাড়বেন বলে মনে হচ্ছে।
রিদ প্রথমে রাজি না হলে রড তুলে মারতে যায় ছিনতাইকারীদের দলের একজন।ছেলেটা ভয়ে কুঁকড়ে যায় মার খাওয়ার চেয়েও ফুসকা খাওয়া অনেক ভালো।ফুসকা এবং ঝালমুড়ি খেতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি, উভয়তে নাগা মরিচ দেওয়া।রিদ ঝাল খোর,ঝাল খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের মাঝে কম্পিটিশন হলে প্রতিবারি সে জিতে।তাই ব্যপারটা এত গায়ে লাগলো না তার।প্রথম ধাপ গুলো সহজ হলেও ক্রমশ তার অবস্থা খারাপের দিকে যায়।পরবর্তীতে নাগা মরিচ ছাড়াই তাকে ভোর পর্যন্ত ফুসকা আর ঝালমুড়ি খেতে হয়েছে।
এর মাঝে বেশ কয়েকবার উগড়ে দিয়েছে সবকিছু।এত বিশ্রি একটা রাত তার জীবনে আগে কখনো আসেনি।
সকালে বাড়ি ফিরতে তার ডায়রিয়া শুরু হলো সেই সাথে বুমি।কাউকে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না সে।বললেই তো বিপদ পরের বার নাগামরিচ কাচামরিচ উভয় থেরাপি দিয়ে ছাড়বে।রিদের এই হালচালের অবস্থা কে করেছে মায়া বুঝতে পারে তাই তো দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে সে।মায়া ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,
” ছেলেটা বেড টু টয়লেট,টয়লেট টু বেড।তোদেরকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে মন চাইছে।”
মায়ার ধমকে রিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
” ওর পুক্কি জ্বলে যাচ্ছে তাই না দোস্ত?”
সিরিয়াস মুহূর্তে ফিক করে হেসে ফেললো খুশবু।তার হাসিতে বাকিরাও চুপ থাকতে পারেনি।খুশবু রিয়ার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,
” রিয়া এসব বুদ্ধি যে তোর আরশাদ যদি একবার জানে তবে তোর অবস্থা যে কি হবে।”
” বলিস না দোস্ত বলিস না।তোর দাম্পত্য জীবনের কোন প্রবলেম আর সলভ করবো না প্রমিস।আমি ভেবেছিলাম আমার ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া তোর হবে এখন যে রিদের হবে কে জানতো।”
মায়ার মা এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন।উনার চিন্তিত মুখখানী দেখে রিয়া বলে,
” আন্টি আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না ডাক্তার তো বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।”
” মায়ার বাবা দেশের বাইরে আমি কি এই বয়সে একা সব সামলাতে পারি?ছেলেটা ভালোয় ভালোয় সুস্থ হয়ে যাক।আমার যে কতটা টেনশন হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না।”
খুশবু বাড়ি ফিরলো দুপুরে।রিদের জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে এতটা অমানুষিক কাজ কেউ করতে পারে?খুশবু ফোন করলো আরশাদকে।আরশাদ তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ছিল খুশবুর ফোন পেয়ে আড়ালে আসলো সে,
” জান আজ হঠাৎ নিজে থেকে ফোন করলে?”
” রিদের সাথে কাজটা আপনি ভালো করলেন না।আপনি নিশ্চয়ই জানতেন রিদ আমার জুনিয়র তারপরেও…”
” খাইয়ে দিয়েছে তো।আবার পাশাপাশিও হেটেছে আমি এসব কি করে সহ্য করবো বলো?”
” আপনি মানসিক রোগী নাকি?স্বাভাবিককে অস্বাভাবিক করে তুলছেন।”
” আরেহ তুমি জানতে না?গতকাল ডাক্তারের চেকাপ ছিল।রোগী বানিয়েছে কে?তুমিই তো বানালে।”
আরশাদের সাথে কথায় পেরে উঠে না খুশবু।এই ছেলেটা হাড় মাংস সব জ্বালিয়ে খাচ্ছে।আরশাদের হঠাৎ কি যেন হলো।গম্ভীর স্বরে খুশবুকে বলে,
” তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না।তোমার মতো মেয়ের সাথে টেকা যায় না।”
” এখন তো এসব বলবেন কারন বিয়ে করা তো শেষ যখনি আপনার আদর আদর কথায় আমি ফেসেছি তখনি তো পালটি নিয়েছেন।”
” সে যাই হোক।আমার আর এসব ভালো লাগছে না।ফোন রাখছি।”
আরশাদ ফোন কেটে দিল।
সেদিনের পর আর খুশবুকে ফোন করেনি আরশাদ।খুশবু অবাক হয় ভীষণ অবাক হয় যেই ছেলের ফ্লুজি ফ্লুজি করে শ্বাস আটকে আসতো সেই ছেলে কি না তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এসব মানতে পারে না খুশবুর সরল মন।আজ দুইদিন হয়ে গেল আরশাদের সাথে তার যোগাযোগ নেই।মূলত আরশাদ যোগাযোগ করেনি তার সাথে।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার বেহাল দশা।অনিমা সবটাই দেখছেন বুঝতেও পারেন কিন্তু কিছুই বলার নেই তার।বাহারুল হক প্রতিদিন ঘরে অশান্তি করে যাচ্ছেন।মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা তিনি কিছুতেই মানবেন না।
সকাল ছয়টায় বাহারুল হক হাটতে বেরিয়েছেন।অনিমা নিজের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ছুটে গেলেন দরজার কাছে।আরশাদ এসেছে একটি ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা।অনিমাকে দেখে খুশিতে আধখানা হয়ে আলগোছে জড়িয়ে ধরেছে ছেলেটা।খুশিতে অনিমার চোখে পানি এসে গেছে।
” আম্মু ভালো আছেন?”
‘আম্মু’ শব্দটা আরশাদের কাছে বেশ কঠিন।তবুও আদর মেখে ডাকছে সে।
” ভালো বাবা।খুব ভালো।কখন এলে?”
” এই তো দুই ঘন্টা আগে।মম ড্যাডকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সব বুঝিয়ে আমি এদিকে আসলাম।এখনো ফ্রেশ হয়নি।”
” তুমি মেয়েটার সাথে কি শুরু করেছো বলতো।গত দুইদিন থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। তুমি আসবে আমি সব জেনেও চুপচাপ হজম করছি।”
” আমি আসবো বলেই তো তার সাথে এমন একটা নাটক করলাম।ব্যপারটা সারপ্রাইজ।”
” যাও বাবা ফ্রেশ হও আমি খুশবুকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”
” না না আমি এখন ঘুমাবো।আমি যাচ্ছি তার রুমে এই ট্রলিটা রাখুন এখানে যা যা আছে সব আপনাদের।”
অনিমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরশাদ চলে গেল তার ফ্লুজির রুমে।মেয়েটা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা বিছানা জুড়ে ঘুমিয়ে আছে।আরশাদ বসলো তার ফ্লুজির মুখোমুখি।কত মাস পর,কত মুহূর্ত পর আবার দেখা,আবার ছুঁইয়ে দেওয়ার লোভ পূরণ হতে চলেছে।
আরশাদ হাতের ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখলো।পকেট থেকে একে একে দরকারি সব বের করে ওয়ারুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো।আয়নায় নিজেকে দেখে নিল একবার ক্লান্ত হলেও আজ তাকে ক্লান্ত লাগছে না।ফুরফুরে মেজাজে শুয়ে পড়লো তার ফ্লুজির পাশে।আরশাদের মনে কোন দ্বিধা নেই সন্দিহান নেই।ক্লান্ত দু’চোখ নিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল তার ফ্লুজির পানে।ফ্লজিকে বুকে টেনে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সে।একটা সুন্দর স্মৃতি,উষ্ণ মুহূর্তে কেটে গেল দুজনের মাঝে অথচ তাদের কারো হুশ জ্ঞান নেই।আরশাদের ক্লান্ত শরীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে অপরদিকে খুশবু উষ্ণতা পেয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে ঘুমকে সঙ্গ দিয়েছে।
বেলা বারোটায় আচমকা খুশবুর ঘুম ভাঙলো।শরীরে প্যাচানো ভারী বস্তুটার ওজন তার ছোট্ট দেহখানী নিতে ব্যর্থ।ঘুমের ঘোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে খুশবু।ড্যাবড্যাব চোখে তাকাতে বুঝতে পারে আরশাদ!আরশাদ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এই সময়ে আরশাদ কোথা থেকে আসবে?তাও তার বিছানায়!এলোমেলো হয়ে যায় মেয়েটার ভাবনা চিন্তা থরথর করে কাঁপতে থাকে দেহখানী।খুশবু ফুঁপিয়ে উঠতে আরশাদের ঘুম ভেঙে যায়।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে বলে,
” কি হয়েছে জান কাঁদছো কেন?”
আরশাদ অস্থির হয়।নিজে কোন ভুল করেছে কি না ভেবে পাচ্ছে না সে।
” ফ্লুজি কাঁদছো কেন?”
খুশবু আরশাদের বুকে ঢলে পড়ে।বড় বড় নখের সাহায্যে খামছে দেয় আরশাদের বুক গলা।আরশাদ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না কান্নার সাথে সাথে যে খুশবু রাগ ঝারছে তার আর বুঝতে বাকি নেই।
” এবার তো থামো।”
” আর কতটা অনিশ্চয়তায় রাখবেন আমায়?আই হেট ইউ আরশাদ।আই হেট ইউ।”
” বাট আই লাভ ইউ।”
” এসব কথা বলবেন না খবরদার মে রে মুখ ভেঙে ফেলবো।আমায় কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনি?আমি কি দোষ করেছিলাম।জানেন বাবা মায়ের সাথে কতটা রাগারাগি করেছে, আমার সাথে মন খুলে কথাও বলে না।”
” সব ঠিক হয়ে যাবে আমি এসেছি তো।”
খুশবু সরে বসলো।গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল অন্য দিকে।আরশাদ কিঞ্চিৎ হেসে খুশবুর হাত টেনে বলে,
” তুমি দেখতে পারছো?”
” কি?”
” আমার তৃষ্ণার্ত দু’ঠোঁট।”
আরশার খুশবুর চুলে হাত বুলায়।রৌদ্রময় দুপুরে খা খা করছে তখন দু’টি হৃদয়।দু’ঠোটের মাঝে অচিরেই যেন খরার সৃষ্টি হয়েছে।প্রেমের বর্ষণ নামানো যে দায়, আরশাদ খুশবুকে বাঁধ্য করতে চায় না অপরদিকে খুশবু লজ্জায় কাছে আসেনা।খুশবুর ফোলা গাল চেপে ধরে আরশাদ,ভদ্রতার মুখোশ ছাড়িয়ে প্রেমের জোয়ারে ভেসে যায় উদ্দেশ্যহীন।খুশবু বাঁধা দেয় না।আরশাদের প্রতিটা ছোয়া তার খরা হৃদয়ের প্রাণ ফেরায়।আরশাদ ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।ভালোবাসার প্রতিটা স্পর্শ ব্যথার সঞ্চার করতে কুঁকড়ে উঠে ফ্লুজি।
ফ্লুজির ছটফটে ভাব দেখে আরশাদ ছেড়ে দেয় তাকে।বুকের কোণে আগলে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
” সরি জান সরি। আমি একটু বেশি এগ্রোসিভ হয়ে পড়েছি।”
খুশবু চোখে জল এসে যায়।তিরতির করে কাঁপছে তার ঠোঁট,
” আমি বোধহয় আপনার হাতেই ম রবো।”
আরশাদ হাসে খুশবুর রক্তিম ঠোঁটে হাত বুলায়।খুশবুকে আরো কাছে টেনে বলে,
” মা রতে মা রতে বাঁচিয়ে দেব অভ্যস হয়ে যাবে।”
” না না লাগবে না আমার অভ্যস।আমার ঠোঁট… ”
আরশাদ খুশবুর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে।ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় গালে এলিয়ে থাকা চুল।
” এবার তোমাকে মা র তেই এসেছি।আরশাদের প্রতিটি স্পর্শে জেগে উঠার আগেই লুটিয়ে পড়বে বক্ষে।”
চলবে…..