ফুলশয্যা(সিজন-০২)
পর্ব-১৫
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
” ভালোবাসার অপরাধে আঙুলটা কেটে নেয়া হয়েছে…..।”
শেষ কথাটা শুনে মোচড় দিয়ে উঠে আবিরের ভিতরে। চোখের কোণায় অশ্রুরা এসে ভিড় জমায়। কিন্তু অশ্রুগুলো কেন যেন বাঁধা মানছিল না, বাহিরে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের ভেতর সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে এরা বাহিরে বের হয়ে আসবে। নিজেকে শক্ত করে আবির কিন্তু আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। আচমকা জাপটে ধরে নীলিমার একটা হাত। প্রশ্ন করে, কি করে, কবে, কখন এ অবস্থা হলো? আমায় বলো নি কেন এতদিন? কে করল এত বড় সর্বনাশ? আমায় শুধু একটা বার বলো….
নীলিমা নিরব। আবিরের একটা প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি। এদিকে আবির?!
প্রায় কেঁদে দিবে এরকম অবস্থা। নীলিমার হাতটা ছেড়ে দু’গাল স্পর্শ করে নীলিমাকে নাড়া দেয়। প্রশ্ন করে-
” কি হলো? উত্তর দাও…..”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলিমা।
আবিরের হাত দুটো গাল থেকে সরিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর অত্যন্ত নরম স্বরে বলে-
” আসি…….”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবির। ততক্ষণে হাতের ব্যাগটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে যায় নীলিমা। নীলিমা চলে যাচ্ছে, যাওয়ার আগে সিড়ির প্রত্যেকটা ধাপে ধাপে ওর অশ্রুকণা দিয়ে ওর কষ্টের,ওর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি এঁকে দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আবির?!!!
‘ থ’ হয়ে পূর্বের ন্যায় সে স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। যেন সে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। ঘোর কাটে সাইমার ডাকে।
” ভাইয়া! তোমার বউ চলে যাচ্ছে তো, আটকাও ওকে। ভাইয়া, ঐ ভাইয়া….”
ঘোর কাটে আবিরের। দৌঁড়ে বেডরুম থেকে বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকায়। ততক্ষণে নীলিমা রিক্সায় উঠে পরছে। রিক্সা তার আপনগতিতে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একটা সময় রিক্সাটা আবির সাইমার চোখের আড়াল হয়ে যায়।
হাঁহাকার দিয়ে উঠে আবিরের ভেতরটা। তাড়াতাড়ি ডায়াল করে নীলিমার মায়ের নাম্বার। রিসিভ করে নীলিমার ছোট বোন লিমা। প্রশ্ন করে লিমা,
” ভাইয়া ভালো আছেন?”
প্রতিউত্তরে আবির বলে, নীলিমার হাত কিভাবে কেটেছে? ‘থ’ হয়ে যায় লিমা। এ ধরনের প্রশ্নের জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ওপাশে ঘোর নিরবতা বিরাজ করে। আবারো আবিরের তাড়া, কি হলো? বলছ না কেন? ভাইয়া আজকে কলেজে যাননি?কথা ঘুরানোর বৃথা চেষ্টা লিমার। ঝাঁঝালো কন্ঠে আবিরের উত্তর, একদম কথা ঘুরাবেনা। ওর হাত কিভাবে কেটেছে সেটা বলো। ঢোক গিলে লিমা। অস্পষ্ট গলায় জবাব দেয়- কাটেনি, কাটা হয়েছে…..
কিহ?!!!
চমকে উঠে আবির। উত্তর দেয় লিমা, “সেদিন আপনার ওখান থেকে ফিরে আপু সরাসরি নরসিংদী আমাদের বাসায় আসে। পরদিন ভোরের ট্রেনে আমরা চিটাগাং মামার বাসায় পৌঁছি। ইন্টার্নির জন্য আপু মামাকে সেখানকার কোনো এক হসপিটালের পাশেই বাসা ভাড়া রেখে দিতে বলছিল। তারপর দিন আংকেল(আপনার বাবা) কল করে। ওনার থেকেই জানতে পারি আমরা, আপু আপনাকে যা নয় তা বলে চলে আসছে। সেদিন আমার মা কৌশলে আপুর থেকে জেনে নিতে চেয়েছিল কি হয়েছে আপনাদের মাঝে? কিন্তু আপু নাছোড়বান্দা। ও কিচ্ছু বলেনি, উল্টো মাকে তুই-তুকারি করে কান্নায় ভাসিয়ে দিয়েছে চোখ। পরদিন আংকেল(আপনার বাবা) আবার কল করে। আমাদের জানানো হয়, আপুর শোকে আপনি অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমরা যেন যত শিঘ্রয় সম্ভব আপনাকে দেখতে যায়। সেদিন রাত্রে আপুকে আপনার কথাটা জানানো হয়। কি জানি কি কারণে আপু রাগে গর্জে উঠে। মায়ের সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলে। রেগে যায় মা। কাছেই ড্রেসিংটেবিলে পরে থাকা চাকুটা আপুর হাতে চেপে ধরে। চিৎকার দিয়ে উঠে আপু।মা এতবেশী রেগে ছিল যে আপুর চিৎকার মায়ের কানে পৌঁছায়নি। মা তখনো আপুকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, কি করেছে জামাই সেটা বল। ও কোনো ভুল করলে সেটাও বল। আপু কিছুতেই আপনার কোনো দোষ স্বীকার করে নি। রাগে দিশেহারা মা শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে আপুর হাতে চাকুটা চেপে ধরে। মুহূর্তেই আপুর হাত থেকে আঙুলটাই আলাদা হয়ে যায়। আমরা তখন’ই ঐ রুমে পৌঁছি। আমাদের সবার চোখের সামনে আপু চিতল মাছের মতো তড়পাতে তড়পাতে জ্ঞান হারায়।”
এটুকু বলে লিমা হাপিয়ে উঠে। এ প্রান্তে দু’চোখের নোনাজলে গাল ভিঁজে যায় আবিরের। লিমারও চোখটা ভিঁজে আসছিল। অশ্রু মুছে আবারো বলা শুরু করে লিমা-
” পরদিন ভোরে আপুকে রেখে মা আমাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আসার আগে মামা-মামিকে আপুর সম্পর্কে যা যা বলার সব বলে এসেছে। প্রথম প্রথম কয়েকমাস ওরা আপুকে ভালো ভাবে রাখলেও পরে আপুর উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। মামি আপুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। শারীরিক ভাবে না হলেও আপুকে প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে হতো। মামা এসবের কিছুই জানতো না, কারণ ওনি দিনের বেশীর ভাগ সময় বাইরে কাজ করে কাটাতেন। তিনমাস পর আপু ঐ বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। তাও আসত না। আমার আপু’টা না মাটির মানুষ ভাইয়া। খুব সরল মনের মানুষ। শত কষ্ট, শত অপমানের পরও কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আপুর। মামি যদি ওকে কিচেনের এককোণেও জায়গা দিত, তবুও সে পরে থাকত। কিন্তু মামি তা না করে আপুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। অচেনা শহর। অসংখ্য ছেলেদের অসংখ্য বাজে ভাষা, বাজে ইঙ্গিত শুনে বহু সংগ্রাম করে কপালগুনে আপু হিয়া’পুকে খুঁজে পায়। বাকি ৯মাস ওর সাথেই ছিল। ইন্টার্নি শেষে হিয়া’পু চলে যায় ঢাকায় আর…..(……)….???”
এটুকু বলে লিমা থামে।
উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করে আবির-
” আর কি?”
বলতে শুরু করে লিমা-
” আপু চলে যায় আপনার গ্রামের বাড়িতে।আপনার বাবা মায়ের কাছে। সেদিন আপনার বাবা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল আপুর থেকে। পা ধরে মাফ চাইতে গিয়েছিল আপু ওর শাশুড়ি মানে আপনার মায়ের। আপনার অসুস্থ মা শুয়ে থেকেই আপুকে লাথি মারে।”
হু, হু করে কেঁদে উঠে লিমা।
আবির লিমাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে,
কাঁদছ কেন? তারপর বলো না…..
বলতে শুরু করে লিমা-
” আপু সেদিন ঢাকায় ফিরে যায়। হসপিটালে জয়েন করে। শুনেছি আপনার বাসার আশেপাশে’ই থাকত, আপনাকে ফলো করত, দুর থেকে দেখত। কখনো আপনার কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারেনি ডায়েরীর ঐ রাত্রি মেয়েটা কে? কি হয় ও আপনার?”
চমকে যায় আবির।
– ডায়েরী, রাত্রি???
উত্তর দেয় লিমা,
হ্যা! আপনার ডায়েরী,
আর সেই ডায়েরীতে লিখা রাত্রির কথায় বলছি আমি। হোস্টেল থেকে ছুটিতে আপু যখন আমাদের বাসায় আসত, তখন আপুকে প্রায় লুকিয়ে একটা ডায়েরী পড়তে দেখতাম। কাঁদতে দেখতাম একেলা ঘরে। আপুর বদলে যাওয়ার শুরু তখন থেকেই। সেদিনও আপু ছুটিতে এসেছিল। শীতের দিন। আপু তখন বাইরে সবার সাথে আগুন পোহাচ্ছিল। সেই সুযোগে আমি আপুর ডায়েরীতে হাত দেই। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না ভাইয়া, ডায়েরীটা পড়ে আমার বুকটা কেঁপে উঠেছিল সেদিন। আমার আপু একটু বেশীই চাপা স্বভাবের ছিল। শত কষ্টের পরও চিৎকার করে কাঁদতে পারতো না আবার কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ারও করত না। শুধু নিরবে চোখের জল ফেলত। তখন জানতাম না ডায়েরীর ঐ রাত্রি মেয়েটা কে ছিল, তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম মেয়েটা যেই হোক, মেয়েটাকে আপনি ভালোবাসেন। এতটা ভালো যতটা ভালো আমার আপু আপনাকে বেসেছিল। আর ঠিক এই কারণেই অভিমানে চুপটি করে আমার আপু একটু একটু করে আপনার জীবন থেকে দুরে সরে আসে। সেদিন আপুর ডায়েরীতে আপনি যা পড়েছিলেন সেগুলোও ঠিক আছে। ফুলশয্যার রাত্রের ঘটনাটা মেনে নিতে পারেনি আপু। ভিষণ জেদি আমার এই আপু, বিয়ের পর দিনই নিজের সাথে নিজেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে যে, যেভাবেই হোক ও আপনাকে ওর মায়ায় ফেলবে। আর সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য’ই ও ছোট ছোট অভিনয় করতে শুরু করে। এই ধরুন- বাচ্চা, শাঁড়ি, কান্না এসব….
কিন্তু সত্যি কথা কি জানেন?
আপনার মায়াবী চেহারা আপুকে খুব টানতো। অভিনয় করতে গিয়ে ধীরে ধীরে আপু আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ আপুও যে রক্ত-মাংসের মানুষ। কোনো অভিনেত্রী তো নয়। আর তাছাড়া আপনার অকৃত্রিম ভালোবাসা আপুকে পাকা অভিনেত্রী বানাতে পারিনি।
কোথায় সেই ডায়েরী?
আলমারি’তে তো দেখিনি, প্রশ্ন করে আবির।
পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে, এইতো….!!!
কলটা কেটে পিছনে ফিরে তাকায় আবির। ডায়েরী হাতে সাইমা ডায়েরী। সেই ডায়েরী, যে ডায়েরীকে কেন্দ্র করে এতকিছু হয়ে গেল। চমকে উঠে আবির,
” তুই? এ ডায়েরী তোর কাছে এলো কিভাবে?”
বলতে শুরু করে সাইমা,
” তুমি জানো নিশ্চয়। আজ থেকে ১বছর আগেকার ঘটনা এটা। আমার মা তখন কিশোরগঞ্জ সদরে হসপিটালে ভর্তি ছিল। ওনার শরীর এতটাই দুর্বল ছিল যে জরুরী ভিত্তিতে ৫ব্যাগ রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তোমার পরিচিত বন্ধুদের মধ্যে ১জনের রক্তের গ্রুপ মায়ের সাথে মিল ছিল। কিন্তু একজনের পক্ষে তো আর ৫ব্যাগ রক্ত দেয়া সম্ভব না। ডাক্তার তোমার বন্ধুর থেকে ২ব্যাগ রক্ত নেয়। বাকি রইল ৩ব্যাগ। ভেবেছিলাম ২ব্যাগ যেহেতু দেয়া হয়েছে সেহেতু পরে দিলেও সমস্যা নাই। কিন্তু হঠাৎ’ই মায়ের শরীর আগের চেয়ে আরো বেশী খারাপ হয়ে পরে। ডাক্তার জানাই রক্ত খুব শিঘ্রয়ই দরকার এবং সেটা ২দিনের ভিতর। উপয়ান্তর না পেয়ে দিশেহারা আমি সেদিন ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ পেইজে রক্তের বিজ্ঞাপনটা দিয়ে দেই। সেদিন হিয়া নামের একটা মেয়ে ফোন করে জানায়, তার বান্ধবীর রক্তের গ্রুপ “O নেগেটিভ”, আর ওর বান্ধবী রক্ত দিতে ইচ্ছুক। আমি হিয়াকে বলে দিলাম, আপনার বান্ধবীকে বলবেন এই নাম্বারে কল দিতে আর ও যদি কালকে আসে তাহলে যেন সকাল ১১টায় গুরুদয়াল কলেজে আসে, আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। সকাল ১০টার ভিতর হিয়ার বান্ধবী চলে আসে। কল করে আমাকে। জানতে পারলাম মেয়েটার নাম নীলিমা। সেদিনের সেই নীলিমা ছিল তোমার বউ। বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলাম না তো, তাই চিনতে পারিনি। সেদিন নীলিমা ৩ব্যাগ রক্ত দিয়েছিল। ডাক্তার বলছিল ২ব্যাগ নিতে পারবে ওর শরীর থেকে, কিন্তু ও জানায়- ৩ব্যাগ নিলে ওর কোনো ক্ষতি’ই হবে না। শুধু নাকি একটু মাথা ঘুরবে। নাছোড়বান্দা নীলিমার কথায় সেদিন ডাক্তার ওর শরীর থেকে ৩ব্যাগ রক্ত নিতে বাধ্য হয়। একদিন কোনো রকম ধরে বেঁধে ওকে হসপিটালে রেখে ফলমূল খাইয়ে দিয়েছিলাম। পরদিন বিদায় কালে মায়ের মুখোমুখি হয়। মা ওকে চিনে ফেলে। তারপর আমরা দু’জনে পরিচিত হই। খালার মুখ থেকে নীলিমার সম্পর্কে শুনে যে বিরূপ ধারনা আমার মনে জন্ম নিয়েছিল, নিমিষেই তা আমূল পাল্টে যায়। মাত্র একদিনের পরিচয়ে যে মানুষকে এতটা আপন করে নিতে পারে, চেনাজানাহীন মানুষের বিপদে যে এভাবে সুদুর থেকে ছুটে আসতে পারে, সে আর যায় হোক কারো সাথে প্রতারণা করতে পারে না। নিশ্চয় এখানে আমাদের কোথাও ভুল হয়েছে। সত্যি’ই ভুল’ই হয়েছিল। আমার মনের ধারনাটায় ঠিক হলো। সেদিন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নীলিমা এই ডায়েরী কিভাবে যেন সেখানে ফেলে চলে আসে। ডায়েরী পড়ে পুরো ঘটনা বুঝতে না পারলেও কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আদিবা আপুর সাথে দেখা করলাম। পুরো ঘটনা খুলে বললাম। আদিবা আপু ডায়েরী ফেরত দিতে নিষেধ করল। অভিমানিকে ফিরিয়ে আনার অন্য পথ বেছে নিল। সেদিন বসন্ত বরন অনুষ্ঠান চলছিল তোমাদের কলেজে। আমরা খুঁজ নিয়ে জেনেছিলাম নীলিমাও ঐদিন অনুষ্ঠানে আসছে। অনুষ্ঠান শেষের ঠিক আগ মুহূর্তে আদিবা আপু কল দেয় নীলিমার ফোনে। কথা বলার একপর্যায়ে জানায়-
” আবিরের কোনো খবর নিস? শুনলাম ও নাকি সাইমা নামের কোনো মেয়েকে ওর বাসায় জায়গা দিয়েছে। ওর সাথে নাকি রঙ তামাশা করে?”
ঘুমন্ত ভালোবাসা জেগে উঠে। ভুলে যায় ভয়। প্রতিহিংসায় দগ্ধ নীলিমা সেদিন’ই তোমার গাড়ির সামনে পথ আগলে দাঁড়ায়। তারপরের ঘটনা তো তুমি জানো’ই।
গর্জে উঠে আবির, তোরা সব জেনেও আমার থেকে এতকিছু গোপন কেন করলি? উত্তর দেয় সাইমা-
” তুমি তো ওকে পাগলের মতই ভালোবাসো। আমরা ভেবেছিলাম ওকে পেলে প্রথম প্রথম হয়তো রাগ দেখাইবা পরে ঠিক বুকে টেনে নিবা। তারপর না হয় সব খুলে বলা যাবে….”
কান্নাজড়িত কন্ঠে আবিরের জবাব,
” আর আমি ওকে বুকে নয় পায়েও জায়গা দিতে পারলাম না। লাথি মেরে তাড়িয়ে দিলাম ওকে।”
চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে সাইমার দিকে ফিরে তাকায়, আচ্ছা পুরো ঘটনা শুনে যে কেউ তো বলবে অপরাধী আমি, তাইনা?
উত্তর দেয় সাইমা, শুধু অপরাধী বললে ভুল হবে। মস্তবড় অপরাধী।
প্রশ্ন করে আবির, তবে ও কেন ওর হাতের আঙুলটা হারালো? ও তো অপরাধী নয়! তবে কেন সেদিন ও সত্যি’টা প্রকাশ করেনি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাইমার জবাব,
খুব ভালোবাসে তো! তাই ভালোবাসার মানুষটিকে অপমানিত হতে দিতে চায়নি। নিজে ছোট হয়েও ভালোবাসার মানুষটিকে সম্মানের আসনে, সবচেয়ে উঁচুতে বসাতে চেয়েছে। তাইতো আঙুলটা কেটে যাচ্ছে এটা টের পাওয়া সত্ত্বেও মুখ খুলেনি।
এটুকু বলেই দৌঁড়ে রুম ছেড়ে চলে যায় সাইমা। কেঁদে দেয় আবির। চোখ থেকে অনর্গল পানি ঝরছে ওর।
” এ আমি কি করলাম? এতটাই ঠুনকো আমার ভালোবাসা? আঘাতের বদৌলতে আঘাত করলাম, এই আমার ভালোবাসা? সামান্য কষ্টের বিনিময়ে দ্বিগুন কষ্ট ফিরিয়ে দিলাম ওকে?”
কল করে হিয়া,
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম স্যার।
জবাব দেয় আবির, নীলিমা কি তোমাদের বাসায়? উতলা কন্ঠে হিয়ার জবাব,
আমি তো সেটাই বলতে ফোন দিয়েছি। এই ভরদুপুরে রৌদ্রের মধ্যে হেঁটে হেঁটে বাসা কেন খুঁজছে ও? আপনার এত বড় ফ্ল্যাটের কোনো কোণায়’ই কি খালি ছিল না নাকি? কিংবা আপনার কিচেন, বারান্দা সেগুলোও কি ফাঁকা ছিল না? ও তো এমনিতেও শুকনো, বাচ্চাদের মতই দেখতে, ওর তো একটু জায়গাতেই চলে যায়। সেই একটু জায়গাও কি স্যার আপনার বাসায় হয়নি???
অত্যন্ত দুঃখে হেসে দেয় আবির-
” লজ্জা দিচ্ছ?”
উত্তেজিত কন্ঠে হিয়ার জবাব,
” তওবা! তওবা! লজ্জা কেন দিব স্যার?”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবির, আচ্ছা বাদ দাও।
এখন বলো ও কোন এলাকায় আছে?
জবাব দেয় হিয়া,
ওকে বলছিলাম আমার সাথে আসার জন্য, আসেনি। এদিকে আপনার সাথেও তো মিথ্যে বলা যাবে না। কারণ আপনি তো আমার গুরুজন। আচ্ছা, বলেই দেই। ও সম্ভবত এখন ওর আগে যেখানে ভাড়া থাকত, সেই এলাকায় যাবে। আমি এসএমএসে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি, একটু অপেক্ষা করুন স্যার।
—- ওকে, তুমি এসএমএসে পাঠিয়ে দাও। আমি গাড়ি বের করছি।
হিয়ার দেয়া ঠিকানা মতেই ঐ এলাকার অলিতে গলিতে নীলিমাকে খুঁজছে আবির। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে, নীলিমার সন্ধান মেলাতে পারেনি। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আবিরের কিন্তু পারছে না। চোখদুটো বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবির।
এদিকে নীলিমা?!!!
বাসা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। সবশেষে ফোন করে কলেজ বান্ধবি রিমিকে। অনুরোধ করে বলে-
” প্লিজ, আমার এই উপকারটুকু কর। আমার জরুরী ভিত্তিতে একটা বাসা দরকার। যত টাকায় লাগে দিব। প্লিজ হেল্প মি। কথা বলে দেখ, বাসা খালি আছে কি না। বিপরীতমুখী হয়ে ফোনে কথা বলছিল নীলিমা। হঠাৎ’ই পিছন থেকে কেউ একজন বলে কেউ –
” মনজমিনের সবটুকু জায়গা ফাঁকা পরে আছে, নিবে কি ভাড়া? করবে কি বসত সেখানে?”