ফিরে এসো ভালবাসা পর্ব-১৩

0
1338

#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৩

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রাহি রিল্যাক্স মুডে রুমে গেলো। রুমে গিয়ে নিজেই ডক্টরকে ফোন করলো। ডক্টর একটু অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করলো। ফোন রিসিভ করতেই রাহি বললো।”

—-” পরশুদিন সকাল ১০টায় আপনার ছেলেকে পেয়ে যাবেন,

ডক্টর খুশি হয়ে বললো।”

—-” থ্যাংক ইউ,

রাহি পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো।”

—-” আরে থ্যাংক ইউ দেয়ার কি আছে? আপনি আমার এত উপকার করলেন। শুভ্রর ব্রেইন ক্যান্সার বলেই ওকে আমি পাচ্ছি। আর ও ওর ওই রোজের সাথে এত নাটক করলো। ও যদি না জানতো ওর ব্রেইন ক্যান্সার। তাহলে ও জীবনেও আমার সাথে ভালবাসা। বা এই বিয়ের নাটক করতো না। এখন তো বিয়েটা সত্যিই হবে। এনিওয়ে আপনাকে এসব কেন বলছি? আপনি আপনার ছেলেকে পেয়ে যাবেন,

বিয়েরদিন সকাল থেকে সবাই কাজে বিজি। রাহি শুভ্রকে খুজে যাচ্ছে অনবরত। কিন্তুু কোথাও শুভ্র নেই। এদিকে সকাল থেকে রোজও গায়েব। রাহি রাগে ফোস ফোস করে নিজেই বললো।”

—-” কালকে রাতে ঘুমিয়ে গেলাম কি করে? ঝিনুকের দেয়া জুস খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। এরকম মরার মতো আগে কখনো ঘুমাইনি,

এরমাঝে ঝিনুক এসে বললো।”

—-” কাউকে খুজছো?”

রাহি মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বললো,

—-” হ্যা তোমার ভাইয়াকে খুজছি।”

ঝিনুক হেসে বললো,

—-” ভাইয়া বলে গেলো তোমার জন্য গিফট আনতে যাচ্ছে।”

রাহি অবাক হয়ে মনে, মনে বললো,

—-” শুভ্র আমার জন্য গিফট আনতে গিয়েছে?”

ঝিনুক রাহির কাঁধে হাত দিয়ে বললো।”

—-” কি ভাবছো?”

রাহি মুচকি হেসে বললো,

—-” কিছুনা ননদিনী।”

ঝিনুক হেসে চলে গেলো। ১১টার দিকে রোজ এলো। রোজ আসতেই রাহি বললো,

—-” রোজ তোমার ভাইয়া কোথায়?”

রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” ভাইয়াকে দিয়ে তুমি কি করবে?”

রাহি রোজের কাছে এসে বললো,

—-” তোমার শুভ্র ভাই।”

এবার রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো,

—-” শুভ্র ভাই কোথায় আমি কি জানি?”

বলে রোজ উপরে চলে গেলো। ১২টার সময় শুভ্র এলো। শার্টে ধুলোবালি লেগে আছে। চুলগুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে। রাহি শুভ্রকে দেখে বললো।”

—-” একি তোমার এই অবস্থা কেন?”

শুভ্র কথা কাটাতে বললো,

—-” তুমি এখনো রেডি হওনি?”

রাহি তবুও বললো।”

—-” তোমার এই অবস্থা কেন?”

শুভ্র শার্ট ঝাড়তে, ঝাড়তে বললো,

—-” আরে পড়ে গিয়েছিলাম।”

রাহি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে বললো,

—-” ওহ আমার গিফট?”

শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” পরে দেবো গিফট। এমন গিফট দেবো তোমার কল্পনারও বাহিরে,

বলে শুভ্রও চলে গেলো। রাহি ভাবলো কি গিফটই না জানি দেবে। রাহিকে সাজাতে মেয়েরা এসে গিয়েছে। রাহি নাচতে, নাচতে সাজতে গেলো। লাল লেহেঙ্গা সোনার গহনা গা ভর্তি। সাজা শেষে রাহি আয়নায় নিজেকে দেখে বললো।”

—-” এই সবকিছুর মালকিন হতে চলেছি,

শুভ্রকে ঈশান আর রিক রেডি করছে। খয়েরী আর গোল্ডেন কালার শেরওয়ানি। মাথায় খয়েরী কালার পাগড়ী। পায়ে নাগারা, হাতে খয়েরী বেল্টের ঘড়ি। রিক শুভ্রকে দেখে বললো।”

—-” ওএমজি,

শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” কি হলো?”

রিক দাত বের করে বললো,

—-” তোকে কি লাগছে রে শুভ্র।”

পাশ থেকে ঈশান বললো,

—-” মেয়ে হলে আমি ওকে বিয়ে করতাম।”

শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বললো,

—-” ইউ গাইস জাস্ট সাট আপ।”

ঈশান আর রিক মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বেডে বসে রইলো। শুভ্রর মাথায় কি চলছে সেটা শুভ্র জানে। রোজ রেডি হয়ে এসে দাড়ালো। শুভ্র রোজকে দেখে ঢোক গিললো। রোজ ভেতরে এসে বললো,

—-” শুভ্র ভাই আপনি রেডি?”

শুভ্র মুখে হাসি ফুটিয়ে মিনমিন করে বললো।”

—-” হ্যা রোজ,

রোজ মুচকি হেসে বললো।”

—-” তাহলে চলুন নিচে যাই,

শুভ্র আরো একবার শুকনো ঢোক গিললো। এরপর ওরা সবাই নিচে গেলো। স্টেজে নিয়ে শুভ্রকে বসিয়ে দিলো। একটুপর রাহিকে এনে শুভ্রর পাশে বসালো।”

_______________

রাহিকে শুভ্রর পাশে বসাতেই শুভ্র বললো,

—-” রাহি তোমাকে যা বলেছিলাম করো।”

রাহি না জানার ভান করে বললো,

—-” কি করবো?”

শুভ্র হালকা হেসে বললো।”

—-” আমাকে রিজেক্ট করো। আই মিন সবাইকে বলো তুমি এই বিয়ে করবো না,

রাহি মুচকি হেসে বললো।”

—-” কে বললো আমি বিয়ে করবো না?”

শুভ্র হালকা চেঁচিয়ে বললো,

—-” এসব কি বলছো?”

রাহি সামনের দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” কাজী আসছে চুপচাপ বিয়েটা করো। এমনিতেও কয়দিনই বা বাঁচবে? আমার সাথেই না হয় বাঁচো। অনেক ভালবাসি তোমাকে,

শুভ্র বাঁকা হেসে বললো।”

—-” তো তুমি এভাবে মানবে না? ভেবেছিলাম এতগুলো মানুষের সামনে তোমাকে ছাড় দেই। বাট তুমিতো সেটার যোগ্যই না। এতদিন তুমি মুভির ট্রেইলার দেখিয়েছো। এবার পুরো মুভিটা আমি সবাইকে দেখাবো,

রাহি ভীত চোখে তাকিয়ে বললো।”

—-” মমমানে?”

শুভ্র চট করে দাড়িয়ে বললো,

—-” এটেনশন, এটেনশন, এটেনশন। হেই গাইস সবাই এদিকে ফোকাস করো।”

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রোদ এদিকে এসে বললো,

—-” শুভ্র কি হয়েছে?”

শুভ্র রাহির দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” সো রাহি সত্যিটা তুমি বলবে? নাকি আমি আমার স্টাইলে বলবো?”

রাহি আমতা, আমতা করে বললো,

—-” কোন সত্যি?”

শুভ্র এবার একটানে রাহিকে দাড় করিয়ে। ঠাটিয়ে একটা চর মেরে দিলো। সবাই এমন ঘটনায় শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। রাহির বাবা এগিয়ে এসে বললো।”

—-” এসব কি হচ্ছে?”

শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

—-” হাতটা খুব চুলকাচ্ছিলো। তাই আপনার মেয়েকে চর মারলাম। এনিওয়ে সবাই কি জানো আমার ব্রেইন ক্যান্সার।”

পরিবেশটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। শুভ্রর মা আর বাবা এসে বললো,

—-” শুভ্র এসব কি বলছিস?”

ওনারা কেঁদেই ফেলেছে। শুভ্র ওনাদের থামিয়ে বললো।”

—-” আরে আগে সব শোনো। আমার ব্রেইন ক্যান্সার। আর ডক্টরি করেছে মিস রাহি। আই মিন এই রিপোর্ট উনি দিয়েছে,

কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। শুভ্র হেসে বললো।”

—-” কেউ কিছুই বুঝতে পারছো না তাই তো? ওকে আমি বুঝিয়ে বলছি। রোদের বিয়ের ২০দিন পর আমি ডক্টরের কাছে যাই। আসলে মাঝে, মাঝেই আমার মাথা ব্যথা হতো। তাই আমি গিয়েছিলাম টেস্ট করতে। ডক্টর আমার কয়েকটা টেস্ট করে। টেস্ট করে ডক্টর জানায় আমার ব্রেইন ক্যান্সার। এমনকি আমি লাস্ট স্টেজে আছি। যে কোন সময় আমার মৃত্যু হতে পারে। মাথা ব্যথাটা খুব বেশীই ছিলো। তাই আমিও ভাবি সত্যিই আমার ব্রেইন ক্যান্সার। বিকজ ব্রেইন ক্যান্সার বা ব্রেইম টিউমার। এই রোগের সিমটোমস হচ্ছে খুব মাথা ব্যথা করে। আর আমি ভেবেছি ডক্টর মিথ্যে বলবে কেন? ডক্টর আমাকে কয়েকটা মেডিসিন দেয়। এটা বলে ওগুলো খেলে আমার মাথা ব্যথা কমবে। বাট নো ওগুলো মাথা ব্যথা কমানোর জন্য না বরং বাড়ানোর জন্য ছিলো। মাথা ব্যথা হলে আমি ওই মেডিসিন খেতাম। এতে আমার মাথা ব্যথা বাড়তো। আমি তখনও বুঝিনি এটা ওই মেডিসিনে হয়। আমি ভাবতাম ব্রেইন ক্যান্সার তাই মাথা ব্যথা হয়। এতে আমি আরো সিওর হই সত্যিই আমার ক্যান্সার। আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। আমি চাইনি এটা কেউ জানুক। হ্যা আমি রোজকে ভালবাসি। কিন্তুু আমি চাইনি আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে ওকে জড়াতে। তাই রাহির সাথে এতদিন ভালবাসার নাটক করেছি। যাতে রোজ আমাকে ভুল বোঝে। আমাকে ঘৃনা করে নতুন করে নিজের সবটা শুরু করে। কিন্তুু কে জানতো? আসলে এই সব এই রাহিরই প্লান,

শুভ্রর মা অবাক হয়ে বললো।”

—-” কি বলছিস এসব?”

শুভ্র রাহির দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” আমার ব্রেইন ক্যান্সার না। এই সবটা রাহির বানানো প্লান। রোজকে আর আমাকে আলাদা করার। হ্যা প্রথমে আমার ওর সাথে রিলেশন ছিলো। কিন্তুু ও আমাকে না আমার টাকাকে ভালবাসতো। তাই আমি ওর সাথে সব শেষ করি। পরে আমিও বুঝতে পারি আমি ওকে কোনদিন ভালবাসিনি। এটাও বুঝতে পারি আমি রোজকে ভালবাসি। এরপর আমি আর রোজ রিলেশনে যাই। রোজ আর আমি দুজন দুজনকে ভালবাসি। কিন্তুু সেটা এই ডাইনির সহ্য হয়নি। ও একটা নোংরা খেলা খেললো। আর এরকম মিথ্যে একটা রিপোর্ট বানালো। যাতে আমি নিজেই রোজের থেকে দুরে সরে যাই।”

রিক হা করে থেকে বললো,

—-” তুই আর রোজ রিলেশনে ছিলিস? তাহলে যদি রাহির সাথে নাটকই করলি এতদিন। তাহলে এই বিয়ের মানে কি?”

শুভ্র বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বললো।”

—-” এটাও নাটক এই সব নাটক। আমি ওকে বলেছিলাম। বিয়ের লাস্ট মোমেন্টে এসে ও সবাইকে বলবে আমাকে বিয়ে করবে না,

রাহি এতক্ষণ ভেবেছে কি বলবে। এবার নেকামি করে বললো।”

—-” শুভ্র তোমার কি হয়েছে? তুমি এসব মিথ্যে কথা কেন বলছো? রোজকি তোমাকে বাধ্য করেছে মিথ্যে বলতে?”

শুভ্র রাহিকে আবারো চর মেরে বললো,

—-” নিজেকে খুব চালাক মনে করিস না? তুই গেমটা কিন্তুু দারুন খেলছিলিস। কিন্তুু এই গেমে তুই একটু ভুল করে ফেলেছিস। আর সেটা হচ্ছে নিজেকে চালাক ভেবে। তুই আমাকে বোকা ভেবে ফেলেছিস। আর এটাই তোর সবথেকে বড় ভুল। ডাউট তো আমার সেদিনই হয়েছিলো। যেদিন আমি হসপিটালে এটা জানতে গিয়েছিলাম। যে আমার যদি ব্রেইন ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাহলে আমার নাকমুখ দিয়ে ব্লাড কেন পড়ে না? কিন্তুু সেদিন ডক্টর ছিলো না। কিন্তুু তুই ঠিকই হসপিটালের বাইরে ছিলি। আর যেদিন ডক্টর আমাকে রিপোর্ট দিলো। সেদিনও হসপিটালের বাইরে তুই ছিলি। এতেই আমার সন্দেহ হয়। আমি ডক্টরের কাছে কেন এসেছি তোকে বললাম। আর আমি এটা তোকে বলাতে তুই ঘামছিলি। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম কোন ঘাপলা আছে। কিন্তুু তোকে বুঝতে দেইনি। আর এরপর যখন এই কথাটা ডক্টরকে বললাম। ও বেচারা ডক্টরও ঘাবড়ে গিয়েছিলো। তখন আমি পুরোপুরি সিওর হই গন্ডগোল একটা আছেই। তবুও আমি ইচ্ছে করে বুঝতে দেইনি। তুই ভেবেছিস তুই আমাকে নাচাচ্ছিস আর আমি নাচছি। কিন্তুু না লাস্ট কয়দিন সুযোগ আমিই তোকে দিয়েছি। আমি ইচ্ছে করে তোর সাথে ড্রামা করে গিয়েছি। তুই ভেবেছিস আমি এখনো কিছুই জানিনা। আর ড্রামা আমি এরজন্য করেছি জাস্ট বিকজ আমার প্রমানের দরকার ছিলো। কারণ আমি জানতাম আমি যখন সবাইকে এটা বলবো। সবার আগে তুই বলবি প্রমাণ দেখাতে। আর প্রমাণটা গতকাল রাতে আমি পেয়ে গিয়েছি।”

রাহি ঘামতে শুরু করেছে। ঢোক গিলে বললো,

—-” প্রমাণ মানে?”

শুভ্র বাঁকা হেসে ফোন বের করলো। একটা ভিডিও বের করে রাহির সামনে ধরলো। ভিডিও দেখে রাহির জান যায় অবস্থা। এটা গতকাল রাতের সেই ভিডিও। যেখানে রাহি ডক্টরের সাথে কথা বলছে। হ্যা তখনি শুভ্র সব শোনে আর ভিডিও করে। কিন্তুু এমন একটা ভাব নেয় যে কিছুই শোনেনি। ভিডিওটা সবাইকে দেখায় শুভ্র। রাহির বাবা, মা মাথা নিচু করে আছে। রাহির মাও রাহিকে এক চর মেরে বলে।”

—-” এত নিচ তুই?”

রাহি রোজকে বললো,

—-” রোজ শুভ্র তোমাকে ভালবাসে না। এসব মিথ্যে ও আমার সাথে এই প্লান করেছে। যাতে তোমাকে সরাতে পারে ওর জীবন থেকে।”

_______________

রোজ অগ্নিদৃষ্টিতে এগিয়ে আসে। রাহির দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে চর মেরে দেয়। রাহিও রেগে হাত ওঠালে রোজ হাত ধরে আরেক চর মেরে বলে,

—-” এটা শুভ্রর জীবন থেকে আমাকে সরানোর চেষ্টা করার জন্য।”

এরপর আরেক চর দিয়ে বললো,

—-” এটা দিনের পর দিন মিথ্যে বলে শুভ্রকে কষ্ট দেয়ার জন্য।”

আরেকটা চর দিয়ে বললো,

—-” আর এটা এত বড় নোংরা খেলা খেলার জন্য।”

রাহি রেগে ফোস, ফোস করে বললো,

—-” তোমার এত বড় সাহস?”

রোজ রাহির গাল চেপে ধরে বললো।”

—-” চুপ আর একটা কথা বললে তোর জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো। শুধু শুভ্র না হলুদের পর তুই যখন কথা বলেছিস। তোর সেই কথা আমিও শুনেছি,

রাতে রাহি যখন ফোনে কথা বললো। রোজ শুনতে পায় শুভ্রর ব্রেইন ক্যান্সার। আর রোজকে ওর জীবন থেকে সরাতে। শুভ্র রাহির সাথে নাটক করেছে। কারন শুভ্র চায় রোজ নতুন করে সব শুরু করুক। এতটুকু শুনে রোজ দৌড়ে শুভ্রর রুমে চলে যায়। শুভ্র তখন শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিলো। রোজ দৌড়ে গিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। শুভ্র বুঝতে পারেনা রোজ কাঁদছে কেন? শুভ্র গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে আসে। এরপর রোজকে বেডে বসিয়ে বলে।”

—-” রোজ কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?”

রোজ ফুপিয়ে কাঁদতে, কাঁদতে বলে,

—-” তোমার ব্রেইন ক্যান্সার? তুমি ইচ্ছে করে আমাকে দুরে সরিয়ে রেখেছো। যাতে আমি তোমাকে ভুলে নতুন করে সব শুরু করি? কেন আমাকে বলোনি শুভ্র? আমি কি তোমার কেউ না?”

শুভ্র রোজকে জড়িয়ে ধরে বলে।”

—-” রেড রোজ ডোন্ট ক্রাই। আমার কোন ব্রেইন ক্যান্সার না। এইসব রাহির প্লান আমাদের আলাদা করতে,

রোজ অবাক হয়ে বলে।”

—-” মানে কি শুভ্র?”

শুভ্র রোজকে সবটা বলে। সব শুনে রোজ রেগে বলে,

—-” ও এত খারাপ? ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো। নিজের স্বার্থর জন্য এত নিচে নামলো কি করে?”

শুভ্র গালে হাত দিয়ে ভেবে বলে।”

—-” আমাদের ওই বাচ্চাটাকে সেভ করতে হবে,

রোজ কপাল কুঁচকে বলে।”

—-” কিন্তুু কি করে?”

শুভ্র বেডে বসে বললো,

—-” ওর ফোন পেলেই হবে।”

রোজ মুচকি হেসে বলে,

—-” পেয়ে যাবো।”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কি করে?”

রোজ যেতে, যেতে বললো।”

—-” ওয়েট করো,

রোজ গিয়ে ঝিনুককে সব বললো। আর বললো জুসে ঘুমের মেডিসিন দিতে। এরপর ওই জুস ঝিনুক গিয়ে রাহিকে দিয়ে আসে। রাহি মোবাইল চাপতে, চাপতে বেডেই ঘুমিয়ে পড়ে। রোজ রাহির ফোন নিয়ে চলে আসে। রাহির ফোনে ইংরেজিতে কে দিয়ে একটা নাম্বার সেভ করা। শুভ্র কিছু একটা ভেবে ওই নাম্বারে ফোন করে। একটা লোক ফোন ধরে বললো।”

—-” ম্যাডাম বাচ্চাটা কাঁদছে,

শুভ্র ফোনটা কেটে দিয়ে একটা ম্যাসেজ করে।”

—-” বাচ্চাটাকে ওর বাড়িতে পৌছে দেবে কাল,

বলে ওই নাম্বার ব্লকলিস্ট করে রাখে। রোজ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে শুভ্র জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো।”

—-” কি হলো?”

রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” তুমি কি করে জানলে? এটা ওই কিডন্যাপারের নাম্বার?”

শুভ্র একটা ভাব নিয়ে বললো।”

—-” আমি তোমার মতো বোকা না। আমি বুঝতে পেরেছি কারণ। সব নাম্বার নাম দিয়ে সেভ করা হলেও। দুটো নাম্বার নাম দিয়ে সেভ করা না। একটা ওই ডক্টরের আরেকটা এটা। আর ম্যাডাম রেড রোজ কে তে কিডন্যাপার। রাহি সংক্ষেপে কে দিয়ে সেভ করেছে,

রোজ হা করে তাকিয়ে রইলো। এরপর গিয়ে আবার ফোনটা জায়গায় রেখে আসে।”

____এখন____

সব শুনে রাহি তাড়াতাড়ি ওই নাম্বারে কল দিয়ে বললো,

—-” বাচ্চাটা কোথায়?”

লোকটা অবাক হয়ে বললো।”

—-” আপনি তো বললেন ওকে বাড়ি দিয়ে আসতে,

রাহি একটা আছাড় দিয়ে ফোন ভেঙে বললো।”

—-” আমাকে ধোকা দিলে? আমি তোমাদের কাউকে ছাড়বো না,

এরমাঝে ডক্টরও সেখানে আসে। ডক্টরটা এসেই শুভ্রর পা ধরে বলে।”

—-” আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন। আমি যা করেছি ঠিক করিনি,

শুভ্র ওনাকে উঠিয়ে বললো।”

—-” আপনার কোন দোষ নেই। যার দোষ শাস্তি সে পাবে। ইন্সপেক্টর ভেতরে আসুন,

সাথে, সাথে কয়েকজন পুলিশ আসে। রাহি চেঁচিয়ে বলে ওঠে।”

—-” শুভ্র তুমি এটা করতে পারো না,

ডক্টর শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” আপনাকে আরো একটা সত্যি জানানোর আছে,

শুভ্র অবাক হয়ে বললো।”

—-” আরো একটা সত্যি মানে?”

ডক্টর বলার আগেই। রাহি পুলিশের কোমর থেকে গান নিয়ে। ডক্টরের মাথায় গুলি করে দেয়। হঠাৎ এমনকিছুর জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। ডক্টর ধপ করে নিচে পড়ে যায়। শুভ্র রাহিকে এক চর মেরে বলে,

—-” অফিসার ওকে নিয়ে যান।”

ডক্টরের জন্য সবার খারাপ লাগছে। শুভ্র ভাবছে ডক্টর কি বলতে চেয়েছিলো? রাহিকে পুলিশ টানতে, টানতে নিয়ে যায়। সাথে ডক্টরের লাশও নিয়ে যায়। যেতে, যেতে রাহি মনে, মনে বললো,

—-” আমি না পেলে শুভ্রকে তুমিও পাবে না রোজ। কারণ আসল সত্যি তোমরা কেউ জানো না।”

সন্ধ্যায় সবাই বসে আছে। কত বড় একটা ঝড় গেলো। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। নিস্তব্ধতা ভেঙে শুভ্রর নানুমনি বললো,

—-” রোজ আর শুভ্রতো দুজন দুজনকে ভালবাসে। তাই আমি চাই এই কমিউনিটি সেন্টারেই ওদের বিয়েটা দিয়ে দিতে। আর সেটাও ৩/৪দিনের ভেতর।”

সবাই সায় দিলো। শুভ্রর মা আর রোজের মা খুশিতে গদগদ। রোজ আর শুভ্র মুচকি, মুচকি হাসছে,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে