#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৯
রোজের আর শোনার শক্তি নেই কিছু। কাঁদতে, কাঁদতে লাইব্রেরি থেকে চলে গেলো। রাস্তা দিয়ে আনমনে হাটছে রোজ। ওড়নাটা রাস্তা দিয়ে ডলে যাচ্ছে। রোজের চোখের কাজল লেপ্টে মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। এরমাঝে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসতে লাগলো। কিন্তুুু রোজের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। গাড়িটা রোজের খুব কাছে চলে আসতেই। কেউ একজন টেনে রোজকে সরিয়ে নিলো। রোজ তাকিয়ে দেখলো এটা নিরব। রোজ হাউ, মাউ করে কেঁদে দিলো। নিরব অবাক হয়ে বললো।”
—-” রোজ কি হয়েছে? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”
রোজ কাঁদতে, কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলেছে। আর কাঁদার জন্য কথাই বলতে পারছে না। নিরব বুঝলো বড় কোনকিছু হয়েছে। নিরব ফোন করে শুভ্রকে ফোন দিলো। শুভ্র তখন রাহির সাথে কথা বলছিলো। শুভ্র ফোন রিসিভ করে বললো,
—-” কি হয়েছে?”
নিরব একটু পাশে গিয়ে বললো।”
—-” ভাইয়া রোজের কি হয়েছে?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন রোজের কি হবে?”
নিরব রোজের দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন ওকে দেখলাম কাঁদতে, কাঁদতে রাস্তা দিয়ে হাটছে। এরমাঝে ওর দিকে একটা গাড়ি ছুটে আসছিলো,
শুভ্র কিছুটা নড়ে চড়ে বললো।”
—-” রোজ কোথায়?”
নিরব হালকা হেসে বললো,
—-” রোজ ঠিক আছে ডোন্ট ওয়ারী। কিন্তুু ও এভাবে কাঁদছে কেন?”
শুভ্র অবাক হয়ে বললো।”
—-” কাঁদছে মানে?”
নিরব এবার রোজের কাছে গেলো। রোজের কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট শুভ্র শুনতে পারছে। রাহি শুভ্রর কাছে এসে কিছু একটা বললো। সাথে, সাথে শুভ্র ফোনটা রেখে দিলো। নিরব কিছুটা অবাক হলো। নিরব এবার রোজকে বললো,
—-” রোজ কেন কাঁদছিস?”
রোজ নিরবকে সব বললো। সব শুনে নিরব স্তব্ধ হয়ে বললো।”
—-” এসব কি বলছিস তুই?”
রোজ চোখ মুছে বললো,
—-” ঠিকই বলেছি সেদিন নাকি তুমি আর আমি মিথ্যে বলেছি।”
নিরব বাকরুদ্ধ হয়ে বললো,
—-” ভাইয়া এটা কি করে বলতে পারে? রোজ তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।”
রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—-” হ্যা ঠিক বলেছো ভুল হয়েছে আমার। তবে ভুল আমি এতদিন করেছি। তাই তো ও আমার বিশ্বাসের ফায়দা ওঠালো। দিনের পর দিন আমাকে ঠকালো। আর আমি এতটাই বোকা। যে ওর নাটকটা ধরতেই পারিনি। এভাবে কেন অভিনয় করলো? আমিতো শুভ্রকে সত্যি ভালবেসেছি।”
শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে রোজ আবার কেঁদে দিলো। নিরব কি বলবে বুঝতে পারছে না। রোজকে একটু শান্ত করে ওকে বাড়ি পৌছে দিলো। রোজ বাড়ি এসে প্রতিদিন দুষ্টুমি করে। আজকে রোদ কিছু বললেও রোজ উত্তর দিলো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে রুমে চলে গেলো। রুমে এসে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। শুভ্র আর রাহির কাছাকাছি থাকাটা যেন চোখে ভাসছে। আর ওদের কথাগুলো কানে বাজছে। রোজ মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। মাথা ব্যথার জন্য একাই ডক্টরের কাছে গিয়েছিলো। ডক্টর বলেছে রিপোর্ট ভাল আছে। টেনশন করার ফলে মাথা ব্যথা করে। রোজ ভেবেছিলো আর টেনশন করবে না। কিন্তুু সেই শুভ্র আজকে ওকে এভাবে ঠকালো। আজকেই শুভ্রর সত্যিটা জানতে পারলো। এখন তো না চাইলেও টেনশন চলে আসবে। মাথায় খুব বেশীই চাপ পড়বে। রোজ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো,
________________
এদিকে শুভ্র রিল্যাক্স মুডে বাড়ি এলো। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশী। শুভ্রর মা ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি রে এত খুশী লাগছে যে তোকে?”
শুভ্র একটা ভাব নিয়ে বললো,
—-” ইয়েস মা অনেক খুশী আজকে আমি।”
এরমাঝে শুভ্রর মায়ের ফোনে ফোন এলো। শুভ্র ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কে আম্মু?”
শুভ্রর মা ফোন রিসিভ করে বললো।”
—-” রোজ,
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” ডিজগাসটিং,
বলে হনহন করে রুমে চলে গেলো। রুমে এসে ফুল সাউন্ড দিয়ে সাউন্ড বক্স চালিয়ে দিলো। সাউন্ড বক্সে আভি তো পার্টি শুরু হুয়িহে গান চলছে।”
🎶দারওয়াজে কো কুন্ডি মারো🎶
🎶কই না বাঁচকে যানে পায়ে🎶
🎶ডিজে কো সামঝাদো মিউজিক🎶
🎶গালতি সে ভি রুকনা জায়ে🎶
গানের তালে শুভ্র উড়াধুরা ডান্স করছে,
🎶থাকা, থাকা জো ফিল কারে ও🎶
🎶জাকে দো রেডবুল গাটাক লে🎶
🎶অর জিসকো ডান্স নেহি কার না🎶
🎶ও জাকে আপনা ভ্যাস চারায়ে🎶
রোজ ফোনে মিউজিক শুনতে পেয়ে জিগ্যেস করলো।”
—-” মামনি এই মিউজিক?”
শুভ্রর মা তো আর কিছু জানেনা। তাই উনি হাসতে, হাসতেই বললো,
—-” আরে শুভ্র ভার্সিটি থেকে মাএ এলো। ওকে দেখেই মনে হলো আজকে অনেক খুশী। আমি জানতে চাইলাম খুশী, খুশী লাগছে আজকে? সেও বললো সে নাকি অনেক খুশী আজকে।”
রোজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রোজ কাঁপা, কাঁপা গলায় বললো,
—-” আর কি বললো?”
শুভ্রর মা মুখ কালো করে বললো।”
—-” তোরা কি আবার ঝগড়া করেছিস?”
রোজ চোখ মুছে বললো,
—-” কেন মামনি?”
শুভ্রর মা একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” তোর নাম শুনে আগের মতো রেগে গেলো শুভ্র,
রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”
—-” আচ্ছা আমি আম্মুর কাছে দিচ্ছি। আম্মু কি যেন বলবে শোনো,
রোজ ফোন দিয়ে রুমে ফেরত এলো। দরজা দিয়ে বিছানায় উবুর হয়ে শুয়ে। বালিশে মুখ চেপে হাউ, মাউ করে কাঁদতে লাগলো। রোজের চিৎকার কারো কানেই যাচ্ছে না। কাঁদতে, কাঁদতে চোখমুখ ফুলে গিয়েছে একেবারে। এদিকে রোদ আর তনয়া নিচে কথা বলছে।”
—-” রোদ মনে হচ্ছে রোজের কিছু হয়েছে,
রোদ চিন্তিত ভাবে বললো।”
—-” হুম আমারও তাই মনে হচ্ছে,
তনয়া মন খারাপ করে বললো।”
—-” ওর মন খারাপ থাকলে আমার ভাল লাগে না। প্রতিদিন ভার্সিটি থেকে এসে কত মজা করে। আর আজকে চুপচাপ রুমে চলে গেলো,
রোদ হালকা হেসে বললো।”
—-” আরে তুমি মন খারাপ করো না। আমি দেখছি আমি রোজের সাথে কথা বলছি,
তনয়াও হালকা হেসে বললো।”
—-” আচ্ছা চলো আমিও যাই,
_______________
এরপর ওরা দুজন একসাথে উপরে এলো। উপরে এসে রোজকে ডাকতে লাগলো। ওদের ডাক শুনে রোজ তাড়াতাড়ি উঠলো। এরপর ওয়াসরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে দরজা খুলে বললো।”
—-” তোমরা একসাথে?”
রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তোর কি হয়েছে ব্লাক রোজ?”
রোজ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো।”
—-” আমার আবার কি হবে?”
তনয়া সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—-” সত্যিই কিছু হয়নি?”
রোজ জোড়পূর্বক হেসে বললো।”
—-” না ভাবী আমার কি হবে?”
রোদ রোজের গালে হাত রেখে বললো,
—-” তাহলে তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন?”
রোজ আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” আসলে মাথা ব্যথা করছিলো তাই,
রোদ আর তনয়া ভাবলো সত্যিই হয়তো। তনয়া মুচকি হেসে বললো।”
—-” আচ্ছা তাহলে রেস্ট নে তুই,
রোজ স্লান হেসে বললো।”
—-” হু আচ্ছা,
ওরা দুজন নিচে চলে গেলো। রোজের আম্মু এসে ফোন দিয়ে গেলো। রোজ আবার দরজা দিয়ে বসে রইলো।”
২দিন পর রোজ ভার্সিটিতে এলো। এই ২দিন রোজ রুমেই ছিলো বেশীক্ষণ। তবে কাউকে বুঝতে দেয়নি ও ভাল নেই। রোজ নিজের ক্লাসে যাওয়ার সময় থমকে গেলো। এদিক, ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কি না? রোজের চোখ ছলছল করছে। রাহির ক্লাসের পাশে করিডোর সিস্টেম আছে। সেখানে রাহি আর শুভ্র দাড়ানো। শুভ্রর হাত রাহির কোমরে। দুজনকে দেখে বোঝা যাচ্ছে শুভ্র রাহির ঠোট স্পর্শ করে আছে। শুভ্র রাহিকে ছেড়ে মুচকি হেসে বললো।”
—-” আই লাভ ইউ,
রাহিও হেসে বললো।”
—-” আই লাভ ইউ টু,
রোজ হনহন করে ওদের সামনে এগিয়ে গেলো। রোজকে দেখে শুভ্র ভয় পেয়ে বললো।”
—-” তততুমি এখানে? তুমি সব দেখে ফেলেছো? বাট ট্রাস্ট মি রোজ এইসব মিথ্যে। আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি,
বলে শুভ্র হু হা করে হেসে দিলো। রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র কোনরকম হাসি থামিয়ে বললো।”
—-” কি ভেবেছিলে এটা বলবো? হাহা নো ওয়ে তুমি যা দেখেছো সেটাই সত্যি। ইয়েস আমি তোমাকে ভালবাসি না। আমি এতদিন সব নাটক করেছি। আমি জানি একমাএ এই নাটকেই তুমি আমার লাইফ থেকে সরবে। আমি আর রাহি শান্তিতে থাকতে পারবো,
রোজ ঠাটিয়ে শুভ্রকে থাপ্পর মেরে দিলো। শুভ্র অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।”
—-” হাউ ডেয়ার ইউ?”
রোজ তার তিনগুণ চেঁচিয়ে আর রাগ নিয়ে বললো,
—-” জাস্ট সাট আপ শুভ্র চৌধুরী। কি মনে করেন আপনি নিজেকে? আপনি এভাবে আমাকে ছেড়ে দিলে আপনার শোকে আমি মরে যাবো? নো নেভার মিস্টার শুভ্র ঠকবাজ চৌধুরী। আজ একটা কথা আমি আপনাকে বলছি। আমি আপনাকে ভালবেসে কেঁদেছি। আর আপনি আমাকে ঠকিয়ে হেসেছেন। একদিন আপনি আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য কাঁদবেন। কিন্তুু সেদিন আমি অন্য কারোর সাথে হাসবো।”
বলে রোজ ওখান থেকে চলে গেলো। রাহি এগিয়ে এসে বললো,
—-” তুমি ওকে কেন কিছু বললে না?”
শুভ্র গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।”
#চলবে…