#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৮
রোজকে মেডিসিন খাইয়ে দুজনে একসাথেই নিচে গেলো। রোজের নানুমনি শুভ্র আর রোজকে একসাথে আসতে দেখে। রোজের আর শুভ্রর মাকে বললো।”
—-” দেখ রাজিয়া, সাজিয়া। ওদের দুটোকে একসাথে কত ভাল লাগছে,
দুই বোনই অবাক হয়ে বললো।”
—-” মা তুমিও এটা ভাবছো?”
এবার নানুমনিও অবাক হয়ে বললো,
—-” তোরাও এটা ভাবছিস বুঝি?”
দুই বোন হেসে দিয়ে বললো।”
—-” হ্যা মা,
তখনি রোজ আর শুভ্র এসে বললো।”
—-” কি কথা হচ্ছে শুনি?”
নানুমনি মুচকি হেসে বললো,
—-” তোরা আয় তো আমার পাশে বস।”
দুজনেই বসে পড়লো। তখন বাকি কাজিনরা এসে বললো,
—-” এটা কি হচ্ছে?”
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি হচ্ছে শুনি?”
ইশান মুখ কালো করে বললো,
—-” দিদা তুমি ওদেরই আদর করছো কেন? আমরা কি বন্যার জলে ভেসে এসেছি?”
দিদা বললো কারন ইশান আর রিক রোজ আর শুভ্রর মামাতো ভাই। নুসরাত আর ঝিনুক মামাতো বোন। ইশানের সাথে রিকও তাল মিলিয়ে বললো।”
—-” একদম এটা ঠিক না,
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” ছোট বোনের সাথে হিংসা করছো? তোমাদের কি লজ্জা করছে না?”
রোদ ভেংচি কেটে বললো,
—-” তুই আর ছোট?”
শুভ্র এবার কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” কেন ওকি বড় হয়ে গিয়েছে? ও এখনো বাচ্চাই আছে,
রোজ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো।”
—-” আপনার আমাকে বাচ্চা লাগে? তা কোন দিক দিয়ে বাচ্চা লাগে?”
শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। রোদ আর রিক দাত কেলিয়ে বললো,
—-” আরো নে রোজের পক্ষ।”
শুভ্র দাত কিড়মিড় করে বললো,
—-” রোজের বাচ্চা।”
রোজ গাল ফুলিয়ে বললো,
—-” আমার বাচ্চা নেই হু।”
বলে হনহন করে চলে গেলো। রোজ যেতেই সবাই হেসে দিলো। শুভ্র দাতে দাত চেপে বললো,
—-” চুপ কর ফাজিলের দল।”
সবাই মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে গেলো,
________________
১দিন পর সবাই কমিউনিটি সেন্টারে চলে এলো। সম্পূর্ণ কমিউনিটি সেন্টার ওদের পছন্দ মতো সাজিয়েছে। মোট ৩দিনের জন্য বুক করেছে। মেহেন্দি, গায়ে হলুদ, বিয়ে। সবাই যে যার ড্রেস দেখতে ব্যস্ত। এখান থেকেই মেহেন্দি আর গায়ে হলুদের ড্রেস দিতো। কিন্তুু রোদ আর তনয়ার বাড়ির লোক না বলেছে। ওরা নিজেরাই সবার ড্রেস কিনে এনেছে। আপাতত সবাই রেস্ট নিচ্ছে। রোজও তার রুমে রেস্ট নিতে ব্যস্ত। শুভ্র রুমে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আগামীকাল মেহেন্দি বড়রা সেটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ওনারা ঘোষণা দিয়েছে মেহেন্দিতে ছেলেরা নট এলাও। ছেলেদের কানে এখনো এই ঘোষণা পৌছায়নি। সবাই রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে নিচে গেলো। বড়রা কথা বলছে ছেলেরা এলাও না। রোদ কান খাড়া করে কথাটা শুনলো। ব্যাস সে গিয়ে সবাইকে এই নিউজ পৌছে দিলে। ছেলেরাতো দল বেধে নিচে নেমে এলো। শুভ্র, রোদ, রিক, ইশান। আর ওদের বাবারাও এসে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে। মহিলারা সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি চাই শুনি?”
শুভ্রর বাবা শুভ্রর মাকে বললো,
—-” এত বড় অবিচার কেন করতে চাইছো?”
শুভ্রর মা কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” মানে? আমি আবার কি করলাম?”
শুভ্র ওর বাবাকে সরিয়ে নিজে সামনে এসে বললো,
—-” করোনি আম্মু করতে চাইছো। তোমরা নাকি ঘোষণা দিয়েছো। মেহেন্দিতে ছেলেরা নট এলাও?”
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” শুনেছেন যখন তাহলে আবার জিগ্যেস করছেন কেন?”
শুভ্র এক ধমক দিয়ে বললো,
—-” এই কুটনি বুড়ী তুমি চুপ করো। এই আইডিয়া তুমি দিয়েছো তাই না?”
রোজ রেগে বললো।”
—-” কি আমি কুটনি বুড়ী? আর আপনি কি হ্যা? আপনি কুটনা বুড়ো হু,
রিক দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” ওকে বুড়ো, বুড়ী চুপ কর। আর শোনো মহিলা পার্টি। আমরা মেহেন্দিতে থাকছি ব্যাস,
রোজের আম্মু এগিয়ে এসে বললো।”
—-” তোরা থাকছিস না ব্যাস,
শুভ্র নাক মুখ কুঁচকে বললো।”
—-” মামনি তাহলে আমাদের এনেছো কেন? আমরা কি কুতকুত খেলতে এসেছি?”
তনয়া হেসে বললো,
—-” তোমরা বরং কুতকুতই খেলো।”
বেচারা রোদ নাক ফুলিয়ে বললো,
—-” তোমরা বরং কুতকুত খেলো। আমরা মেহেন্দিতে থাকবো। আমরাও দেখি আমাদের কে আটকায়।”
সব ছেলেরা একসাথে বললো,
—-” ইয়েস এটাই ফাইনাল।”
এবার সব মেয়েরাও একসাথে বললো,
—-” আমরাও দেখি তোমরা কি করে থাকো।”
ছেলে-মেয়ে দুই দলে ভাগ হয়ে গেলো। রোদ আর শুভ্র অসহায় ফেস করে চলে গেলো। রোজ আর তনয়া মুচকি, মুচকি হাসছে। ছাদে মুখ কালো করে ছেলেরা বসে আছে। হঠাৎ রোদ মুখ ফসকে বললো,
—-” আমার বউ আমাকে সাপোর্ট করলো না।”
রোদের বাবা ছেলের সুরে বললো,
—-” বিয়ে করা বউই সাপোর্ট করলো না। আর তোর তো বিয়ে হয়নি।”
তনয়ার বাবা এসে বললো,
—-” যা বলেছেন বেয়াই।”
শুভ্রর বাবা দুঃখি ফেস করে বললো,
—-” কি দিনকাল চলে এলো।”
রিক, ইশান, রোদ, শুভ্র এতক্ষণ হা করে ছিলো। এবার ৪ভাই একসাথে বললো,
—-” ঠিক কি দিনকাল চলে এলো। বাবারা আজকাল ছেলেদের সামনে এসব বলছে।”
এবার সবার বাবাদের মুখ চুপসে গেলো। তাড়াতাড়ি সবাই মান সম্মান নিয়ে কেটে পড়লো। ওনারা যেতেই ওরা ৪জন হেসে দিলো,
_________________
পরেরদিন, আজকে মেহেন্দি। সকাল থেকে ছেলেরা প্লান করছে। তারা এখন খুব ব্যস্ত কি করে মেহেন্দিতে যাবে সেটা নিয়ে। শেষে রিক আনন্দে বলে উঠলো।”
—-” পেয়েছি,
সবাই একসাথে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি পেয়েছিস?”
রিক খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
—-” আইডিয়া পেয়েছি।”
এবার সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো,
—-” কি আইডিয়া? আরে তাড়াতাড়ি বল। প্লান করতে, করতে বিকেল হয়ে গেলো।”
আসলেই এখন ৪টা বাজে। সকাল থেকে ওরা প্লান খুজছে। কিন্তুু কোন প্লানই খুজে পায়নি। রিক লাফাতে, লাফাতে বললো,
—-” আমরা মেয়ে সেজে যাবো।”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো,
—-” হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি?”
রোদ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” তুই তো কোন প্লান খুজে পাসনি। এখন রিক যখন পেয়েছে ওরটা শুনতে দে,
শুভ্র গাল ফুলিয়ে বললো।”
—-” বল শুনি কি প্লান?”
রিক আমতা, আমতা করে বললো,
—-” আমরা যদি থ্রি পিচ পড়ে ঘোমটা দিয়ে যাই। তাহলে কিন্তুু ওরা আমাদের চিনতে পারবে না।”
শুভ্র এবার চেঁচিয়ে বললো,
—-” হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ সেয়িং? মানে শুভ্র চৌধুরী এখন থ্রি পিচ পড়বে? নো ওয়ে এই প্লান ক্যান্সেল।”
সবাই তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকালো। সেটা দেখে শুভ্র মিনমিন করে বললো,
—-” তোমরা ওভাবে গেলে যাও। আমি এভাবেই যাবো দেখবো মহিলারা আমার কি করে।”
বলে শুভ্র বিছানায় বসে পড়লো। সন্ধ্যায় সবাই রেডি হয়ে নিচে এলো। সবাই সবুজ কালার লেহেঙ্গা পড়েছে। শুধু তনয়াকে সবুজ আর লাল লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। সব মেয়েরা নিচে হৈ চৈ করছে। রোজ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
—-” কি ব্যাপার বলো তো ভাবী?”
তনয়া ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” কি?”
রোজ ভাবুক ভাবে বললো,
—-” ছেলেরা কি হার মেনে নিলো?”
এরমাঝে শুভ্র ছাড়া সব ছেলেরা থ্রি পিচ পড়ে হাজির হলো। এত ভীড়ের মাঝে কেউ ওদের চিনলো না। ওরা তো সেই লেভেলের মজা করছে। উপর থেকে শুভ্র সবটা দেখে বললো।”
—-” আমাকে রেখে গিয়েছো না? ওয়েট আমি আসছি তোমাদের হাটের হাড়ি ভাঙতে,
শুভ্র হেলে দুলে নিচে গেলো। শুভ্রকে দেখে সব মেয়েরা ঘিরে ধরলো। রোজ কোমরে হাত দিয়ে বললো।”
—-” কি চাই?”
শুভ্র একটা ভাব নিয়ে বললো,
—-” তোমাদের গোপন খবর দিতে এসেছি।”
মেয়েরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এদিকে ছেলেরা ঘোমটার নিচে কাঁপছে। বেচারারা ভয়ে, ভয়ে আছে। শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো,
—-” আমিতো আমার ভাইদের। বাবাই, মামা আর আঙ্কেলদের খুজছি।”
রোদরা ঘোমটার নিচে কেশে উঠলো। মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে। রোজ গিয়ে সবার ঘোমটা ওঠালো। সবাই চোরের মতো তাকিয়ে আছে। রোদ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” এটা কি হলো?”
শুভ্র মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” সত্যের পথে চলা ফরজ। আর আমি সেটাই করলাম,
মেয়েরা ওদের শাস্তি দিলো সাকি, সাকি গানে ডান্স করতে হবে। বেচারারা অসহায় ফেস করে ডান্স করলো। শুভ্র খুব মজা নিয়েছে। ছেলেরা ঠিক করলো শুভ্রকে শাস্তি দেবে। কিন্তুু শুভ্রতো শুভ্রই সেও ভয় দেখিয়েছে। তাকে কিছু বললে সে ওদের ডান্সের ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। ব্যাস ছেলেরা কুপোকাত হয়ে গেলো। মেহেন্দি আর হলুদ ভাল মতোই শেষ হলো। আজকে রোদ আর তনয়ার বিয়ে। দেখতে, দেখতে বিয়েটাও শেষ হয়ে গেলো ভাল মতো। তনয়াকে রোদদের বাড়ি নিয়ে এসেছে। বেচারী সারা পথ কাঁদতে, কাঁদতে এসেছে। তনয়াকে রোদের রুমে দিয়ে এসেছে সবাই। রোদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তবেই রোদকে রুমে যেতে দিয়েছে। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। রোজ আর শুভ্ররও সবকিছু ভালই চলছে। দেখতে, দেখতে ১মাস কেটে গিয়েছে। রোজ আর শুভ্রর মাঝে কোন ঝামেলা হয়নি। রোজ ভার্সিটিতে এসে লাইব্রেরিতে গেলো বই আনতে। কিন্তুু এখানে এসে ওর একটা কথাই মনে হচ্ছে। এখানে না আসাটাই মেবি ভাল ছিলো। কারন লাইব্রেরির একপাশে শুভ্র রাহির কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর রাহি শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে বলছে।”
—-” ফাইনালি তুমি আমার কাছে ফিরে এলে,
শুভ্র রাহির কপালে স্লাইড করে বললো।”
—-” ফিরে তো আসতেই হতো। এত ভাল যে বাসি তোমাকে,
রাহি হেসে বললো।”
—-” রোজকে কি বলবে?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” সত্যিটা বলবো এতদিন ওর সাথে নাটক করেছি। কারণ আমি জানি ও সেদিন তোমার নামে মিথ্যে বলেছিলো। ও আর নিরব দুজনেই ওই সব মিথ্যে বলেছিলো। ওকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে এই প্রেম ভালবাসার নাটক করলাম। কারণ আমি এটা জানি এই তীরেই ও কুপোকাত হবে। আমি তো তোমাকে ভালবাসি। আর খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে বিয়ে করবো।”
রোজের আর শোনার শক্তি নেই। দৌড়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলো,
#চলবে…