ফিরে এসো ভালবাসা পর্ব-০৩

0
1589

#ফিরে এসো ভালবাসা❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩

শুভ্র রেগে একেবারে ভার্সিটি থেকেই চলে গেলো। এদিকে রাহি রাগে জ্বলছে। রাহি রেগে মনে, মনে বললো।”

—-” এই রোজ এটা কি করলো? ভেবেছিলাম শুভ্রকে দিয়ে ওকে ইনসাল্ট করাবো। কিন্তুু আমার সব প্লান ফ্লপ হয়ে গেলো। রোজ যে শুভ্রর উপর চটে যাবে এটাতো ভাবতেই পারিনি,

রাহিও ধাপধুপ পা ফেলে চলে গেলো। এদিকে শুভ্র রেগে বাড়ি চলে এসেছে। বাড়ি এসে সোজা নিজের রুমে চলে এলো।”

—-” আমার এত রাগ লাগছে কেন? রোজ তো ঠিকই বলেছে। আমি ওকে কাজিন বলেও মানি না। আর না তো ও আমার জিএফ। সত্যিই তো ওর উপর আমার অধিকার নেই। তাহলে ও অধিকারের কথা বলাতে আমার কেন এত রাগ লাগছে?”

শুভ্র কথাগুলো ভেবে বেডে বসে পড়লো। নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ধরলো। আজকে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। বারবার রোজের বলা কথাগুলোই কানে বাজছে। শুভ্র রেগে ফ্লাওয়ার ভাসটা ফেলে দিলো। আওয়াজ শুনে শুভ্রর মা এসে বললো,

—-” শুভ্র কি হয়েছে তোর?”

শুভ্র রেগে বললো।”

—-” আম্মু তুমি জানো রোজ কি বলেছে?”

শুভ্রর মা চমকে বললো,

—-” কি বলেছে?”

শুভ্র রেগে ফোস ফোস করে বললো।”

—-” বলেছে ওর উপর আমার নাকি অধিকার নেই। তাহলে কার অধিকার আছে ওর উপর?”

শুভ্রর মা হা করে তাকিয়ে আছে। এবার শুভ্রর মাথায় এলো ও কি বলেছে। কথা পাল্টাতে আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আম্মু তুমি যাও এখন।”

বলে চুপচাপ বসে রইলো। শুভ্রর মা মুচকি হেসে চলে গেলো। উনি যেতেই শুভ্র নিজেই বললো,

—-” হোয়াটস রং উইথ মি? এসব কি বলছিলাম আমি?”

নিজে নিজেই বিরবির করলো শুভ্র। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিনে রাহির নাম ভেসে উঠেছে। শুভ্র ফোন রিসিভ করতে গিয়েও করলো না। ফোনটা কেটে ব্যালকনিতে চলে এলো। বাড়ির আশপাশ দিয়ে অনেক রকম গাছ লাগানো। তাই যখন বাতাস হয় তখন ব্যালকনিতে দাড়ালে। সম্পূর্ণ বাতাসটাই গায়ে এসে লাগে। শুভ্র ব্যালকনিতে এসে দাড়াতেই বাতাস বয়ে গেলো। শুভ্র চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ শুভ্র চট করে চোখ খুলে ফেললো। মুখে হাত দিয়ে বললো।”

—-” এটা কি হলো? আমি ওকে কেন দেখলাম?”

শুভ্র এই ঠান্ডায়ও ঘামছে। রুমে এসে এসির পাওয়ার ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বসে পড়লো। কেমন অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে নিজের। শুভ্র বসা থেকে উঠে পায়চারী করছে। না পেরে রাহিকে ফোন করলো। রাহির ফোন বিজি আসছে বারবার। শুভ্র কি মনে করে রোজকে ফোন দিলো। রোজ সবে বাড়ি এসেছে শুভ্রর ফোন দেখে অবাক হলো। এভাবে ফোনটা কেটে গেলো। শুভ্র আবারো ফোন দিলো এবার রোজ রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই শুভ্র বললো,

—-” রে সরি রোজ তুই কখনো আমার সামনে আসবি না। আর এলেও মুখ ঢেকে আসবি। আমি বুঝতে পারছি না আজকে কি হচ্ছে আমার। একটু আগে আমি ব্যালকনিতে গিয়েছিলাম। বাতাস ছিলো খুব আমি চোখ বন্ধ করে ব্যাপারটা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তুু চোখ বন্ধ করতেই তোর মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে হোয়াই? আমিতো রাহিকে ভালবাসি। আমার ওকে দেখা উচিত ছিলো। তাহলে আমি তোকে কেন দেখলাম?”

______________________

রোজ হা করে সব শুনছে। শুভ্র একা, একা বকবক করে ফোন কেটে দিলো। রোজ সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছে।”

—-” শুভ্র ভাই এগুলো কি বললো? চোখ বন্ধ করে আমাকে দেখেছে?”

রোদ ফোন টিপতে, টিপতে বাড়ি এলো। এসে রোজকে কোনকিছু নিয়ে ভাবতে দেখে বললো,

—-” এই ব্লাক রোজ কি ভাবছিস?”

রোজ আনমনেই বললো।”

—-” শুভ্রকে নিয়ে ভাবছি,

রোদ গোল, গোল চোখ করে বললো।”

—-” কি? শুভ্রকে নিয়ে কি ভাবছিস?”

রোজ আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আব না কিছুনা।”

রোদ রোজের পাশে বসে বললো,

—-” আমাকে বল নাহলে বলে দেবো।”

রোজ ভ্রু কুচকে বললো,

—-” কি বলবি? আর কাকে বলবি?”

রোদ দাত কেলিয়ে বললো।”

—-” আম্মুকে বলবো তুই তার ভাগ্নেকে নিয়ে ভাবছিস,

রোজ মুচকি হেসে বললো।”

—-” আচ্ছা তাহলে আম্মুকে ডাক। আমারও উপকার হবে,

রোদ কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” তোর কি উপকার হবে?”

রোজও এবার দাত কেলিয়ে বললো,

—-” তোর আর তনয়া আপুর কথা বলতে।”

রোদ মিনমিন করে বললো,

—-” আমার কাজ আছে রুমে যাই।”

বলে চলে গেলো। রোদ যাওয়ার পর রোজ একাই হাসলো। এরপর নিজেও রুমে চলে গেলো। এদিকে রোজকে ওসব বলে শুভ্র এখন ভাবছে,

—-” আমি এত বেকুব কেন? রোজ কি ভাববে আমাকে? যা ভাবার ভাবুক যা সত্যি তাই বললাম।”

আবারো রাহিকে ফোন করলো। রাহির ফোন এখনো বিজি আসছে। এবার শুভ্র ভাবলো,

—-” রাহি কার সাথে এত কথা বলছে? এতক্ষণ যাবত ওয়েটিং কেন দেখাচ্ছে?”

শুভ্র ফোনটা রেখে চুপচাপ বসে রইলো।”

২দিন পর, শুভ্র ক্যাম্পাসে বসে আছে। শুভ্রর ফ্রেন্ডরাও আছে আর রাহিও পাশে বসা। এরমাঝে সেখানে রোজও এলো। তবে রোজ একা না সাথে একটা ছেলেও আছে। দুজনেই হাসতে, হাসতে ক্যাম্পাসে ঢুকলো। ছেলেটাকে চিনতে শুভ্রর দেরী লাগলো না। কারন এটা শুভ্রর চাচাতো ভাই নিরব। নিরব মাঝে, মাঝে রোজের গাল টেনে দিচ্ছে। আর রোজও ওকে কিছু বলছে না। শুভ্র হাত মুঠো করে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোজও হেসে নিরবের গায়ে ঢলে পড়ছে। এবার আর শুভ্রর সহ্য হলো না। শুভ্র হনহন করে ওদের সামনে গেলো। নিরব শুভ্রকে দেখে বললো,

—-” ভাইয়া তুই?”

শুভ্র দাতে দাত চেপে বললো।”

—-” তুই এখানে কি করছিস?”

নিরব হেসে বললো,

—-” ক্যাম্পাসে মানুষ কি করে?”

শুভ্র দাত কিড়মিড় করে বললো।”

—-” এখান থেকে যা তুই,

রোজও এবার বললো।”

—-” শুভ্র ভাই তুমি এমন কেন? সবকিছুতে বেশী বাড়াবাড়ি করো। নিরব তো আর ছোট বাচ্চা না,

শুভ্র রেগে ওখান থেকে চলে গেলো। শুভ্র যেতেই নিরব রোজ হেসে দিলো। নিরব হাসতে, হাসতে বললো।”

—-” মেডিসিন কাজে দিলো তাহলে?”

রোজ হাসি থামিয়ে বললো,

—-” সব তোমার ক্রেডিট।”

নিরব মুচকি হেসে বললো,

—-” আমি জানি রোজ তুই ভাইয়াকে সত্যি ভালবাসিস। আর ওই রাহি সম্পতির লোভে। তাই ওর সত্যিটা ভাইয়ার সামনে আনতে হবে।”

রোজ একটু চুপ থেকে বললো,

—-” কিন্তুু কি করে?”

নিরব ভেবে বললো।”

—-” ওকে ওর ওই বিএফ সহ ভাইয়াকে দেখাতে হবে। রাহির উপর নজর রাখতে হবে। ও কখন ওই ছেলেটার সাথে মিট করে,

রোজ হালকা হেসে বললো।”

—-” হুম,

__________________

এভাবে ১৫দিন কেটে গিয়েছে। এই ১৫দিনে রোজ আর নিরব ক্যাম্পাসে একসাথেই থেকেছে। ওরা রাহিকে কি করে এক্সপোজ করবে সেটা নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তুু শুভ্রতো আর এসব জানেনা। শুভ্র রোজের উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে। কেন ক্ষেপে আছে নিজেও জানেনা। রোজকে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই রাগ লাগে ওর। এই ১৫দিনে রাহির বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায়নি ওরা। রাহি ওর সেকেন্ড বিএফের সাথে মিট করেনি। যার কারনে ওরাও শুভ্রকে দেখাতে পারেনি।”

রোজ আর নিরব আজকে একসাথে ভার্সিটি যাচ্ছে। রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো,

—-” কোন প্রমাণই তো পাচ্ছিনা।”

নিরব ড্রাইভ করতে, করতে বললো,

—-” ওকি আমাদের প্লান বুঝে গেলো?”

এরমাঝে রোজের চোখ পড়লো এক জায়গায়। রোজ নিরবকে গাড়ি থামাতে বললো। নিরব গাড়ি থামিয়ে বললো।”

—-” কি হলো?”

রোজ সেদিকে তাকিয়েই বললো,

—-” ওই দেখো রাহি আর একটা ছেলে।”

নিরব তাকিয়ে দেখলো রাহি আর সেই ছেলেটা রেস্টুরেন্টে ঢুকছে। নিরব হেসে বললো,

—-” আজকেই ও এক্সপোজ হবে। আমি আর তুই গিয়ে ভাইয়াকে এখানে নিয়ে আসবো।”

রোজ কিছু একটা ভেবে বললো,

—-” না তুমি এখানে থাকো। দেখো ওরা যাতে চলে না যায়। আর পারলে ভিতরে গিয়ে ভিডিও করো। আমি গিয়ে শুভ্রকে নিয়ে আসছি।”

নিরব গাড়ি থেকে নেমে গেলো। রোজ গাড়ি নিয়ে ভার্সিটিতে চলে এলো। এসেই শুভ্রকে পেয়ে গেলো। রোজ দৌড়ে শুভ্রর কাছে এসে বললো,

—-” শুভ্র ভাই আমার সাথে চলো।”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কোথায়?”

রোজ একদমে বললো।”

—-” রাহি তোমাকে ভালবাসে না। ওর আরো একটা বিএফ আছে। ও একটা খারাপ মেয়ে। ও তোমাকে ঠকাচ্ছে শুভ্র,

এরমাঝে রোজের গাল থাপ্পর পড়লো। রোজ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোজকে থাপ্পর দিয়ে বললো।”

—-” তোর সাহস তো কম না রোজ। আমার সামনে দাড়িয়ে তুই রাহিকে ইনডাইরেক্টলি নষ্টা বলছিস? তুই কি করে ভাবলি তোর এসব কথা আমি বিশ্বাস করবো?লজ্জা করলো না এসব বলতে? আসল নষ্টা আর খারাপ তো তুই। রাহি আমাকেই ভালবাসে,

—-” না বাসে না।”

নিরব এসে বললো। আর রোজ তো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আসল নষ্টা আর খারাপ তো তুই। কথাটা যেন ওর কানে বাজছে। রোজ দৌড়ে চলে গেলো। শুভ্র নিরবের সামনে গিয়ে বললো,

—-” কি বললি তুই?”

নিরব তাচ্ছিল্য হেসে বললো।”

—-” বলবো না দেখাবো,

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিরব একটা ভিডিও দেখালো শুভ্রকে। যেখানে রাহি একটা ছেলের হাত ধরে বসে আছে। নিরব এবার শুভ্রকে নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে এলো। রাহি ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো কেবল। শুভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাহি হেসে বললো।”

—-” আর কয়েকদিন বেবি। শুভ্র চৌধুরীর সব সম্পতি একবার আমার হাতে আসুক। তারপর তুমি আর আমি,

—-” রাহি।”

শুভ্রর হুংকারে রাহি পিছনে তাকালো। আর তাকিয়ে রাহির আত্মা কেঁপে উঠলো। শুভ্রর চোখগুলো রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। শুভ্র এসে রাহিকে ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পর মেরে বললো,

—-” ইউ চিট তুই এত নিচ? তোর মতো মেয়েকে আমি ভালবেসেছি ভাবলেও ঘৃনা হচ্ছে। আমার সম্পতি চাই না তোর? তুই জানিস এর জন্য তোকে আমি পুলিশে দিতে পারি।”

রাহি নেকামি করে বললো,

—-” বেবি আমার কথা শোনো।”

শুভ্র রাহিকে আরেক থাপ্পর মেরে বললো,

—-” তোর সাথে আমার সব শেষ।”

বলে ওখান থেকে চলে এলো। শুভ্র একটা জিনিষ ভেবে অবাক হচ্ছে। রাহিকে এভাবে দেখে ওর কষ্ট পাওয়ার কথা ছিলো। খুব রাগ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তুু ওর রাগ লাগেনি ওর রাগ লেগেছে রাহি চিট করেছে তাই। ওর একফোটাও কষ্ট লাগছে না,

—-” রোজকে নিরবের সাথে দেখে আমার রাগ লাগছিলো। ইনফ্যাক্ট আমি জেলাস ফিল করেছিলাম। তাহলে রাহিকে একটা ছেলের সাথে দেখে আমার রাগ হলো না কেন? ওর সাথে সব শেষ করলাম তবুও কষ্ট হচ্ছেনা কেন? বরং অদ্ভুত এক প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে মনের মাঝে বাট হোয়াই?”

আরো ১সপ্তাহ পর। এই ১সপ্তাহ রোজ ভার্সিটিতে আসেনি। শুভ্র রোজকে দেখেনি। আজকে রোজ ভার্সিটিতে এসেছে। রোজকে দেখে শুভ্র চমকে গেলো। রোজের চোখ, মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। চোখের নিচেও কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। রোজকে এভাবে দেখে শুভ্রর কলিজা মোচর দিয়ে উঠলো।”

—-” আমার রোজকে এভাবে দেখে এত কষ্ট হচ্ছে কেন? তাহলে কি নিরব ঠিক বলেছিলো। আই এম ইন লাভ উইথ রোজ?”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে